ক্লাশ নাইনে পড়ার সময় আমার বন্ধু তৌহিদের বাবা মারা যায়। সম্ভবত থার্ড সেমেস্টার চলছিলো তখন। লাঞ্চের পরে নিয়মিত আড্ডার জন্যে তৌহিদের রুমে গিয়ে শুনি, ও হঠাৎ ছুটিতে চলে গেছে, সম্ভবত ওর চাচা এসে নিয়ে গিয়েছিলো ওকে।
পরে খবর পেলাম, ওর বাবা আর নেই।
ছুটি থেকে তৌহিদ ফিরে এলে, আমি শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াই। কি বলবো বুঝে পাই না।
আমার রুমমেট তানভীরের বাবা মারা গেলেন, তখনো আমরা কলেজেই ছিলাম। তানভীরও ছুটিতে গেলো, ফিরে এলে আমি আবারো লুকিয়ে বেড়াই।
এরকম অনেক হলো। পরিচিত মানুষদের মৃত্যুর খবর আমরা প্রত্যেকেই শুনি, বন্ধুদের বাবা-মায়েদের মৃত্যুর খবর। তবু নিজের বাবা-মা কে কেন জানি অমর মনে হয়। আমার বাবা- মা মরে যাবে? এটা যেন কখনো হতেই পারে না! আর সবার বাবা-মা'ই হয়তো মানুষ। আমার বাবা-মা মানুষ নয়, ওরা শুধুই বাবা মা, তাহলে ওরা মরবে কেন?
তবু, এ তো আর সত্যি নয়। নয়ই তো। তাই না?
কদিন আগে আরো একটা খবর পাই। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো...। ঠিক এতখানি কষ্ট সত্যিই বুঝি অপেক্ষা করে মানুষের জন্যে?
সচলায়তনের চামেলী হাতে মানুষ, আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ, ওনার বাবা মারা গেছেন। বাবাকে দাফন করে এসে ওনার বাড়ির লোকেরা দেখেন, মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মা-কে হাসপাতালে নিতে না নিতেই তিনিও চলে গেলেন! একই দিনে।
বুকের ভেতরে যাদের অমর করে রাখা হয়, তাদের মৃত্যুর ব্যথার পরিমাণ আমি জানি, আর জানি বলেই স্বান্তনা দিতে পারি না।
তৌহিদের সাথে দেখা হলে পরে, ওর কাঁধে হাত রেখে দাঁড়িয়েছিলাম। কোন কথা না বলে হাত ধরে বসেছিলাম তানভীরেরও। চামেলী হাতের মানুষটার সাথে দেখা হলে কি করবো জানি না। হয়তো লুকিয়ে বেড়াবো কিছুদিন তারপরে দেখা হয়ে গেলে, আমি জানি, মুখ ফুটে বলতে পারবো না কিছুই।
শুধু, হাত বাড়িয়ে চামেলী ধরা হাতটা চেপে ধরে পাশে বসে থাকবো চুপচাপ। অনেকক্ষণ।
মন্তব্য
....................................................................................
আমিও কোনো সান্ত্বনা বাণী শুধাতে পারিনা। শুধু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
আর নয় অকারণ দুঃখ দুঃখ খেলা
এবার হাসিমুখ নিশিদিন সারাবেলা
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
কি বলব! কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না। শুধুই সমবেদনা জানিয়ে গেলাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
হাঁটুপানির জলদস্যু
কিছু বলার নেই, এ বছর আমিও আমার মাকে হারিয়েছি - তাই কিছুটা বুঝি।
স্নিগ্ধা
চামেলী হাতের মানুষ-- অনুচচারিত সমবেদনা ।
এই শোক ধারনা করতে পারে এমন কোন শব্দ কিংবা বাক্য জানা নেই আমার ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সমবেদনা রইলো।
মাই গড!
চা হা নি মা'র জন্য সমবেদনা।
কনফু,আপনার এ লুকিয়ে বেড়ানোর ব্যাপারটা আমার মাঝেও প্রবল। তাও এক বন্ধুর বাবা চলে যাওয়ার পর। কারণটাও একই - কিছু বলার থাকে না।
চামেলিহাতেনিম্নমানেরমানুষ এর জনক-জননীর জন্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা।
----
এলাম অনেকদিন পরে সচলায়তনে
দেশ থেকে ফিরলাম চার ঘন্টা আগে।
দেশে যেতে হয়েছিলো এক মুহুর্তের সিদ্ধান্তে, গত শুক্রবার সকালে। অনেক খুঁজেপেতে আগের রাতে কোনওভাবে, টিকেট যোগাড় করে। সেদিন সকালে আমি প্লেনে ওঠার আগে, ফোনও দিয়েছিলেন "চামেলি হাতে উঁচুমানের মানুষ"। আমার জনক অসুস্থ, সেই খবর নিতে। খুব স্বাভাবিক রকমভাবে।
অনেক ঝড়-ঝঞ্ঝার এক সপ্তাহ এবং দুঃস্বপ্নের এক বৃহস্পতিবার পার করার পরে আজ আবার প্লেন থেকে নামতেই দেখি সেলফোনে মেসেজ এসে বসে আছে এইসব কষ্টের খবর নিয়ে। কে জানতো, তাকেও দেশে যেতে হবে দুটো দিন পরে এইভাবে!
আমি জানি না এইসব পরিস্থিতিতে কী করতে হয়, তাই "উঁচুমানের মানুষ"টির সাথে সাতপাঁকে বাঁধা পড়া আমার বন্ধুকে ফোন দিয়ে কিছুক্ষণ - কালকের দিনটা ঢাকার ইটপাথরের জঙ্গলে কীভাবে মাথাপাগল করে ছুটে বেড়াচ্ছিলাম - সেই বর্ণনা দিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টানোর ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। বেশিক্ষণ কথা আগালোনা, ফোন রেখে দিতে হলো।
এইসব সময়ে, গলা বন্ধ হয়ে আসে।
---
আমার খবর চেয়েছো, তাই যোগ করি।
১. আমি ভালো নেই বোধহয়। অনেককিছু নিয়ে।
২. আমি যেজন্যে দেশে গিয়েছিলাম, সেই কারণ প্রসঙ্গে - আমার বাবা এখন ভালো আছেন, হয়তো ভালো থাকবেন আরো কিছু দিন।
৩. আমি গতকাল নিজের দোষে ঢাকা-কেএল ফ্লাইট মিস করার পর, আমাকে জানানো হয় যে, কেএল-টোকিও কানেক্টিং ফ্লাইটের টিকেটটি ইনভ্যালিড হয়ে গেছে।
এরপর আমি নতুন করে টিকেট কিনতে গিয়ে আবিষ্কার করি, আমার ক্রেডিট কার্ডটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
এবং আমার বোকাসোকা ও ইদানিংকালে অন্যমনস্ক মাথায় হঠাৎ খেয়াল হতে থাকে যে, কালকের মধ্যে আমি যদি ফ্লাই করতে না পারি, তাহলে আমি চাকরগিরির একটা ইন্টারভ্যু ধরতে পারবো না!
আমি কোনওভাবে, আজকে ফিরতে পেরেছি। সৌভাগ্যজনকভাবে এবং সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায়। অজানা অচেনা মানুষের ভালোবাসা যে কতো তীব্র হতে পারে - আমি গত এক সপ্তায় নতুন করে বুঝতে পেরেছি। আমি যে এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটটি মিস করেছিলাম, তার স্থানীয় প্রধানের কালকের সারাদিনটি আমার জন্যে যথাসাধ্য করতে গেছে। আমি কোনদিনই চিনতাম না, এরকম একজন শুভাকাঙ্খীর ভালোবাসায় আমি কেঁদে ফেলেছি বেশ কয়েকবার]
শুক্রবার, ডিসেম্বর ০৭
সৌরভ,
তোমার উপর দিয়ে যে এতবেশি ঝড়-ঝাপটা যাচ্ছে বুঝি নি।
তোমার বাবা ভাল আছেন, এটা শুনে খুশি হলাম। আর তোমার ঐ জবটা হলো তো? যেটার জন্যে এই তাড়াহুড়া?
ঢাকার ঘটনার বিস্তারিত অবশ্যই জানিয়ো কোন একটা পোস্টে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
মুখ ফুটে ধন্যবাদ দিতে দেরী হয়ে গেল...
--- --- --- --- --- --- --- --- --- --- --- ---
মন, সহজে কি সই হবা?
চিরদিন ইচ্ছা মনে আল ডাঙ্গায়ে ঘাস খাবা।
নতুন মন্তব্য করুন