আগেও বলেছি, স্বভাবে আমি কুনো ব্যাঙের মামাতো ভাই। ঘুরতে যাবার কথা শুনলেই আমি হাই তুলতে শুরু করি। জানি, অনেক শিশির বিন্দুই আমার দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া..., আমি তবু চোখ বুজে ঘুমোতেই বেশি ভালবাসি।
দেশে থাকতে বন্ধুদের টানা হ্যাচড়ায় নিরূপায় হয়ে যে কোন ট্যুরে গেলে, সবাই যখন যাত্রাপথের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে আহা উহু করছে, আমি তখন নির্দ্বিধায় হাল্কার উপর নাসিকা-ধ্বনি-সহযোগে ঘুমে কাদা হয়ে আছি। যাত্রা শেষে সবাই সবাই যখন এতক্ষণের সৌন্দর্য দর্শনে বাকরূদ্ধ, আমি তখন আ-আ-আ- শব্দ করে বিশাল একটা আড়মোড়া ভাঙছি।
মেলবোর্ণের আশপাশে নাকি অনেক সুন্দর জায়গা আছে দেখবার মতন। নিজের আলস্য ত্যাগ করতে পারি নি, তাই তার বেশিরভাগই আমার দেখা হয় নি। গত সোমবার একেবারেই আচমকাই একটা ছুটি পেয়ে গেলাম- অস্ট্রেলিয়া ডে। লম্বা দিন এখন, ভোর হয় পাঁচটায়, আর সন্ধ্যা নামে নয়টায়। এরকম লম্বা একটা দিন একদম বিফলে যাবে, এরকমটা ভেবে মন সায় দিচ্ছিলো না। তাই ঘুরতে চলে গেলাম আটলান্টিক মহাসাগরের পাড় ঘেঁষে ছুটে চলা রাস্তায়- এখানে বলে গ্রেট ওশেন রোড।
খুব ভোরে, প্রায় সাড়ে ছয়টায় যাত্রা শুরু করলাম আমরা, যীশুর সংগী সাথী ১২ জন এপস্টলদের দেখবার জন্যে।
মূল রাস্তায় ঢুকবার আগে জিলং-এ রয়েছে ইনফরমেশন সেন্টার। ওখানে গিয়ে থামলাম ব্রেকফাস্টের জন্যে।
ইনফরমেশন সেন্টারের পাশেই হুট করে এটাকে দেখে মনে হলো, ভুল করে কোন দৈত্য দানো নিশ্চয়ই তার পাইপ ফেলে গেছে এখানে!
কলেজ ছাড়বার প্রায় বছর সাতেক বাদে এইরকম "ধ্যান" করার সুযোগ পেলাম। তাই সেটা ছাড়তে ইচ্ছে করলো না।
আবারও পথ চলা শুরু। এ যাত্রায় আমি নিজেই গাড়িয়াল ভাই, তাই ইচ্ছে থাকা সত্তেও ঘুমোবার কোন উপায় নাই!
আরও খানিকটা দূর যেতেই চোখে পড়লো সাগরের নীল। তবে পুরোপুরি নয়, খানিকটা উঁকিঝুকি দিয়ে যা দেখা যায় আর কি!
এই রাস্তাটা অসাধারণ। এক পাশে সাগর আরেকপাশে... উহু, বালি শুধু নয়, জলজ্যান্ত পাহাড়।
এই আজব রঙা গাছগুলোকে দেখে সত্যি মনে হচ্ছিলো, ভিনগ্রহী গাছ নয় তো এরা?
আবারও দু'জনায় একসাথে। পাহাড় আর সাগরের এই মিল মোহব্বত চলেছে একদম পথের শেষ পর্যন্ত!
আমাদের রাস্তা, চলে বাঁকে বাঁকে-
... তাহার উপরে... ভাবছিলাম সত্যি সত্যি একটা মানুষ ওখানে বসে থাকলে কেমন হতো?
মিশন কাশ্মীর সিনেমাটার এই গানটা খুব প্রিয় আমার, সোচোকে ঝিলোকা শহর হো... ঠিক যেন এই বাড়িটাই!
ঐ নীল নীল চোখে চেয়ে থেকো না...
এই ছবি দিবো না ভেবেছিলাম, যদি আবার ধূসর গোধুলি মনে দুস্কু পায়!
কেউ না আসে, তবে একলা ফুটো রে...
এইবার বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটে উন্নতি না করার কোন কারণ আছে?
এইবার পাওয়া গেলো যীশুর সংগী সাথীদের। মুশকিল হলো এদের সবাইকে একসাথে দেখা যায় না। কিছু আছে পাহাড়ের ওপাশে। তবে সংখ্যায় সব মিলিয়ে বারোটি পাথরের স্তম্ভ, তাই নামকরনটাও আসলেই চমৎকার হয়েছে- টুয়েলভ এপস্টলস।
এই দু'জন একটু খানি আলাদা হয়ে আছেন।
বিদায় জানাতে ভীষণই খারাপ লাগছিলো। এরকম অদ্ভুত সুন্দর জায়গা আমি খুব বেশি দেখি নি! সকাল থেকে রাত বারটা পর্যন্ত একটানা ঘুরেছি, সবমিলিয়ে প্রায় সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটারের ধকল, তবু মনে হয়েছে, পুরো কষ্টটাই সুদে আসলে উসুল হয়ে গেছে।
এরকম জায়গায় বার বার ফিরে যাওয়া যায়...।
-------------
তিথি'র উপুর্যুপরি হুমকির ফলস্বরূপ এই লেখার শেষে নিন্মোক্ত ডিসক্লেইমার যোগ করিতে বাধ্য হইলামঃ
" পোস্টকৃত ২৪ টি ছবির ২ টি বাদে বাকি ২২ টিই তিথির তোলা, আমার নহে।"
মন্তব্য
ছবিগুলি পছন্দ হইছে, লেখাটা ভালো হইতে পারতো তয় কনফু আইলসামি কইরা ল্যাখে নাই
পঞ্চতারকা ছবির জন্যে
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
ঠিক কথা। অবশ্য ছবি দেয়াটাই মূল উদ্দেশ্য ছিলো।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
একমত@ শ্যাজাদি। ছবির জন্য (বিপ্লব)
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
দুর্দান্ত সুন্দর জায়গা। (বিপ্লব) দেওয়ার মতই।
- আটলান্টিক না বস, প্রশান্ত।
শুধু ১২ জন সঙ্গীকে দেখেই ফিরে এলেন? লন্ডন ব্রীজের পাশটায় যে কাঠের রেলিং আছে ওটার ঐপাশে পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে একটা ফটুক না নিলে কি আর জমে? পেছনে সবুজ জলরাশি তার উপর মাটির ব্রীজটা আর এপাশে আপনি।
পার্কিং লটে গাড়ি রেখে যে কাঠের একটা টানেল পেরিয়ে আসতে হয়, ওটা কি এখনো আছে?
এই গ্রেট ওশেন ড্রাইভ আর পোর্ট ক্যাম্পবেল ন্যাশনাল পার্ক আমার জীবনে দুইটা ফ্লাইট মিসের একটার দায় বহন করে চলেছে এখন পর্যন্ত। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবার সময় স্পিডলিমিটের তারতম্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে অ্যাভিস থেকে নেয়া গাড়িটি প্রায় ছিঁটকে পড়ে যাচ্ছিলো কয়েকশ ফুট উপর থেকে। ড্রাইভিং সীটে এই গরীব পরবর্তী কয়েক মিনিট কোন কথাই বলতে পারেনি।
ম্যান, মনে পড়ে যাচ্ছে সব!!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঐ টানেলটা আছে এখনো, তবে কাঠ নেই আর, দেয়ালে পাথর বসিয়ে দিয়েছে।
কিছু রাস্তা আসলেই মারাত্মক ছিলো, প্রায় সারাক্ষণই মনোযোগ রাখতে হয়েছে, ফাঁকিবাজির সুযোগ পাই নি।
আপনার অভিজ্ঞতা শুনে শিউরে উঠলাম, বিস্তারিত লিখুন সময় পেলে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বাঃ!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
তিথি'র উপুর্যুপরি হুমকির ফলস্বরূপ এই লেখার শেষে নিন্মোক্ত ডিসক্লেইমার যোগ করিতে বাধ্য হইলামঃ
" পোস্টকৃত ২৪ টি ছবির ২ টি বাদে বাকি ২২ টিই তিথির তোলা, আমার নহে।"
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আপনি অনেক সাহসী ব্যক্তি। আমি হলে একবারেই ....
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
হা হা হা! আপনার কমেন্টে উত্তম জাঝা।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ভ্রমণছবি ভালো লেগেছে।
নতুন মন্তব্য করুন