মাত্র তিনখানা গল্প পড়ে কোন গল্পকার সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া মুশকিল। সেরকম চেষ্টাও আমার ছিলো না। সবচেয়ে বড় কথা সেলিম আল দীন গল্পকার হিসেবে পরিচিত নন, বিশুদ্ধ নাট্যকার হিসেবেই তিনি খ্যাত। তাঁর রচনা সমগ্র পড়তে গিয়ে দেখি, অনেকগুলো নাটকের সাথে সেখানে বেশ কিছু কবিতা, গান ও গল্প সংযুক্ত করা আছে। সাধারণত যেটা হয়, খানিকটা ব্যাতিক্রম দেখলেই আগ্রহ বেড়ে যায়, প্রায় সমমানের কারণে আমি জীবনানন্দ দাশের গদ্য গোগ্রাসে পড়েছিলাম। নাট্যকার সেলিম আল দীনের গল্পের প্রতি আকর্ষন বোধ করার কারণও বোধ করি এই 'ব্যাতিক্রমপ্রিয়তা'।
মোট তিনটি গল্প। প্রথমটির নাম আহত বিহগ। বিহগ = বিহঙ্গ।
মাত্তর তিনপাতার গল্পটা এক নি:শ্বাসে পড়া যায়। একটা নাটকের খন্ড দৃশ্যের মত করে বর্ণিত গল্পটি মূলত সংলাপ-নির্ভর। মূল চরিত্রের নাম সেকেন্দ্রা। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম পৌরাণিক কোন চরিত্র হবে হয়তো। সত্যিই তাই কিনা আমার জানা নেই। পরে সেকেনদ্রা শব্দটিকেও নানাভাবে ভেংগে চুরে উচ্চারণ করে দেখলাম বাংলা কোন শব্দের সাথে মিলে কিনা। পেলাম না তেমন কিছু।
সেকেনদ্রার অবস্খান এখানে তিনজন পুরুষের মাঝখানে। একজন তাকে সেক্সুয়ালি হ্যারাস করে, সম্ভবত প্রায় নিয়মিত। অন্যজন তার দেবর সম্পর্কিত। যার প্রতি তার ( অথবা - পরস্পরের প্রতি দু'জনের) শারিরীক আকর্ষন আছে। তৃতীয়জন বড়-ভাই-সুলভ-সম্পর্কের-সম্ভাব্য-প্রেমিক-প্রজাতির মানুষ।
প্রায় একভাবে বলে যাওয়া বিক্ষিপ্ত সংলাপের মত করে পুরো গল্পটাতেই তিনজন পুরুষের সাথে সেকেনদ্রার আচরণ ও মনোভাব নিয়ে গল্পটি লেখা। আবছায়ার মত করে এক ফাঁকে তার স্বামীর কথাও এসেছে বটে, তবে সেটুকু ধর্তব্য নয়।
দ্বিতীয় গল্পের নাম- রেডিয়াম থেকে বিদায়: একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।
এটি আসলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়। স্বর্গ থেকে গন্ধম ফল খেয়ে অ্যাডাম এবং ইভের বিদায়ের যে প্রচলিত ধারণা, সেটিকে নির্ভর করে এবং এ কাহিনিতে প্রায় কোনরকম পরিবর্তন না করেই গল্পটি লেখা। স্বর্গের নাম তিনি এখানে দিয়েছেন রেডিয়াম! বিজ্ঞানের ছাত্র বলেই খানিকটা হাস্যাস্পদ মনে হয়েছে এটা আমার কাছে। এই ইচ্ছাকৃত ( ধরে নিলাম) নামকরণের পেছনে নিগুঢ় কোন কারণ আছে বলেই মনে হয়।
এই গল্পটিকেও প্রায় বিনাশ্রমে নাটক বানিয়ে ফেলা যাবে। আরো ভালো করে বলা যায়, লেখার ( অথবা ছাপার) ফরম্যাট খানিকটা বদলে দিলে এটা আসলে একটি নাটকই।
গল্পের একটা অংশই আমার ভালো লেগেছে- এখানে শয়তান-রূপী যে চরিত্র ( এখানে, নাম- আফতাব) তাঁকে দেখানো হয়েছে মূল চরিত্র, মানে অ্যাডাম ( এখানে - আখতার) এর বন্ধু হিসেবে।
গল্পের এই আইডিয়াটুকুকে আমাদের জানাশোনা মূল কাহিনির সাথে সমন্বয় ঘটালে খানিকটা নতুনত্বের আমেজ পাওয়া যায়।
তৃতীয় গল্পের নাম- “লেসার রশ্মি নয়: একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি' এবং এটিও মূলত কোন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি নয়। একজন ক্যানসার আক্রান্ত মানুষের বিচ্ছিন্ন প্রলাপ গল্পের প্রতিপাদ্য। যার নিম্নাঙ্গে গুটির মত করে ক্যানসারের প্রকাশ ঘটে। এবং সে এটি টের পায় 'একজন বেশ্যা'র কাছ থেকে ফিরে আসবার পরে।
এইখানে এসে মনে হয় রোগটি ক্যানসার না হয়ে সিফিলিস, এইডস অথবা অন্য কোন যৌন-বাহিত-রোগ হলে আরো মানানসই হোত। যদিও মনে হচ্ছে এইরকম অনাকাংক্ষিত ব্যাপারগুলোকেই সেলিম আল দীনের গল্পের মূল বৈশিষ্ঠ বলে চিহ্ণিত করা যায়।
ছোটগল্পের স্বাভাবিক সুরটুকু প্রায় তিনটি গল্পেই তিনি ব্যাহত করেছেন। 'হয়েছে' না বলে “করেছেন' বললাম, কারণ এটুকু তাঁর ইচ্ছাকৃত কিনা আমার জানা নেই। তাঁর লেখা আবার কোন গল্প চোখে পড়লে হয়ত সেটা পড়বো, কিন্তু সেটা 'গল্প' পড়ার ইচ্ছা থেকে হবে না, বরং সেলিম আল দীনের গল্পের বর্তমান প্যাটার্ণ জানবার ইচ্ছা থেকেই হবে বলে মনে হয়।
মন্তব্য
উত্তম লেখনী
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...
কই পেলেন তাঁর বই? PDF হলে ইমেইল লাগান একটা
লেখাটা চমৎকার হয়েছে এটা আপনাকে বলতে বলতে ক্লান্ত।
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
দেশ থেকে আনিয়েছিলাম। আয়েশ করে নাটক পড়বো বলে, সাথে সাথে ফাও হিসেবে পেয়ে গেলাম গল্পগুলো।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বনপাংশুল প্রথমে মনে হয় উপন্যাস হিসাবে লিখেছিলেন। পরে নাটক হিসাবে রূপ দেন। পাইলে পইড়েন। শিকল দিয়া বাইন্ধা রাখবে। শেষ না করে ছাড়ান নাই।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আচ্ছা আমি দেখবো তো ঐ বইটায় বনপাংশুল নাটকটা আছে কি না!
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমি মুখ্যু সুখ্যু মানুষ, আমার ওপর খুব বেশি ভরসা কইরেন না। নিজে পইড়া দেইখেন, হয়ত অন্য কিছু মনে হতে পারে।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
একটি ছোটো মন্তব্য, ইমরুল হাসান। কনফুসিয়াস সেলিম আল দীনের ৩টি গল্প নিয়ে মতামত দিয়েছেন। এই লেখকের মূল পরিচয় কিন্তু নাট্যকার হিসেবে। বস্তুত, এই মুহূর্তে তাঁকে বাংলাভাষার প্রধান নাট্যকারদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁকে না পড়ে কোনো ক্ষতি হয়নি, এখানে আমার দ্বিমতটা জানিয়ে রাখছি। প্রশ্ন উঠতে পারে, নাটক পড়ার বিষয় নাকি দেখার। তা আলাদা তর্কের বিষয়।
গত বছর কিংবা তার আগের বছর ঈদ সংখ্যা ২০০০-এ সেলিম আল দীনের ডায়েরির (বা ব্যক্তিগত ভাবনা) কিছু অংশ ছাপা হয়েছিলো। মুগ্ধ করার মতো রচনা।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
লেখাটা বেশ ভাল লেগেছে। একটানে পড়ে গেছি।
পড়ার পর:লেখাটা খুব ভাল লেগেছে ।
-----------------------
এই বেশ ভাল আছি
লেখাটায় কিছুই নেই। যদিও বেশি কিছুও আশাও করিনি, তবুও।
না ভাল লাগেনি,লেখাটার সাথে অনেক কিছুই।
অথচ, স্বর্গের নাম রেডিয়াম! গল্প না পড়েই মাথায় ঝাঁকি লেগে গেল।পড়ব।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
সুমেরু দা,
আবোল তাবোল মাথায় যা আসে তাই লিখে যাই, ভাল না-ই লাগতে পারে। বেশি আশা না করাই ভাল।
মাঝে মাঝে খারাপ লেখা পড়তে চাইলে বরং উঁকি মেরে যেও।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
----------------------
বিড়ালে ইঁদুরে হলে মিল, মুদির কিন্তু মুশকিল ।
নতুন মন্তব্য করুন