মন্তব্য-পোষ্টঃ বদরুদ্দীন উমরের কলাম পড়ার পরে-

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ১৯/০২/২০০৮ - ৭:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জুবায়ের ভাইয়ের লিংক থেকে গিয়ে সমকালে ছাপা হওয়া জনাব উমরের লেখাটি পড়লাম। সোজা বাংলায় বললে বেশ আক্রমণাত্মক একটা লেখা, বিষয় এবং লেখার ভাষা- দু দিক থেকেই।
পড়া শেষ করে কিছু ব্যাপারে কনফিউশান রয়ে গেছে। যেমন, উমর বললেন, ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত কোন স্মৃতিচারণ করা হয় নি, কারণ ব্যাক্তিগত প্রচার কেউ চাইতেন না।
স্মৃতিচারণ না করাটা সাধুবাদের যোগ্য কি না এই নিয়ে আমি খানিকটা দ্বিধায় আছি। এবং আন্দোলনের পরের বছর থেকেই এই নিয়ে 'বিরাট কিছু করে ফেলেছি' জাতীয় মনোভাব আসাটাও বাস্তবসম্মত নয়। আমার ধারণা, এরকম বড় ঘটনাগুলোর মুল মর্ম ঠিকঠাক উপলব্ধিতে আসে অনেকটুকু সময় পেরিয়ে গিয়ে যখন পেছনে ফিরে তাকানো হয়, তখন। তার আগে খুব নিকট সময়ে হয়তো ভালো মতন আলো ফেলাটা দুরুহ হয়ে ওঠে।
সে সময়ের ফেব্রুয়ারির সাথে এ সময়ের ফেব্রুয়ারির পার্থক্যের জন্যে ওনার খারাপ লাগাটা বুঝতে পারি, কিন্তু এটাও কি বাস্তবসম্মত নয়? তখন আর এখনকার পরিপ্রেক্ষিত কি মানুষের কাছ থেকে একই আচরণ দাবী করে? সেই সময় আমাদের নিজের একটা দেশ ছিল না, নিজেদের মৌলিক অধিকারগুলোও বাস্তবায়িত হচ্ছিলো না ঠিকমত, সেই সময়ে আমাদের অন্যতম সাফল্য ছিলো ভাষা আন্দোলন, এবং তাই সেটাকে সামনে রেখে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরো মাসটাতেই প্রতিরোধ ধরণের মনোভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই স্বাভাবিকতা এখনো আশা করা যায় কি না, সেই নিয়েও দ্বিধায় আছি।

অবশ্য, রাত বারোটায় শহীদ মিনারে যাওয়াটা আমারও পছন্দ নয়। জনাব উমরের সাথে একমত এক্ষেত্রে, প্রভাত ফেরীর আবেদনটাই আলাদা। যেটা এখন একদমই পোশাকি হয়ে গেছে রাজনৈতিক দল আর টিভি ক্যামেরার বদৌলতে।

জনাব উমর লেখার এক পর্যায়ে বলেছেন- ভাষাসৈনিকদের সংখ্যাবৃদ্ধির কথা। উনি লিখেছেন, প্রাকৃতিক ভাবে ভাষাসৈনিকদের সংখ্যা কমে যাবার কথা ছিলো, কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা।
আমার ধারণা, এটার কারণ অন্যরকম হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ঢাকা মেডিকেলের পাশেই আটকে ছিলো- আমাদের সব লেখালেখি, গল্প প্রবন্ধ ইতিহাস সবই ছিলো শহীদ মিনার কেন্দ্রিক। এখন পত্রিকাগুলোর চেষ্টায় কিছুটা তার বাইরে বেরিয়ে আসার উদ্যোগ চলছে। এ কারণেই এতদিন পর্যন্ত যারা ফোকাসে ছিলেন না, তাদের অবদানগুলো উঠে আসছে।
এই উঠে আসার ক্ষেত্রে কিছু মিথ্যের মিশেল ঘটে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, এ কথা সত্যি। জনাব বদরুদ্দীন উমরও তার কলামে এই নিয়েই আক্ষেপ করেছেন।
তবে আমার কথা হলো- এই মিথ্যেগুলোকে তো আলাদা করবার সুযোগ রয়েইছে আমাদের হাতে। সে সময়ে অন্য যারা ছিলেন, তারা তো এই ব্যপারগুলো জাস্টিফাই করতে পারেন। মিথ্যে হবার সুযোগ আছে বলেই যে আমরা সে দিনের ঘটনাগুলো আর কারো কাছ থেকে জানতে চাইবো না- এরকম অভিমত ভালো লাগে নি। দ্বার বন্ধ করে ভ্রমটাকে রুখতে গিয়ে সত্যটাকে আটকে দেবার সেই সরল সিধা ভাবসম্প্রসারণই মনে পড়ে গেলো।

প্রাসঙ্গিক এক অংশে উমর লিখেছেন, সেই সময়ের পোষ্টার মারা লোক, এমনকি পোষ্টার পড়া লোকও ভাষা সৈনিকদের কাতারে!
শেষোক্ত কথাটি (পোষ্টার পড়া লোক) শ্লেষ আর বিরক্তি থেকে বলা ধরে নিয়ে বলি, সেই সময়ে সরকারী বাঁধা পাত্তা না দিয়ে দেয়ালে পোষ্টার মারাটা কি খুব সহজ কাজ ছিলো? আমি জানি না। কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাপারটিকেও খুব ছোট কিছু বলে মনে হয় নি। সে সময়ে চেতনা থেকে নয়, পেশাগত কারণেও যদি কেউ পোষ্টার মেরে থাকেন, তাহলেঅ তার সাহসের তারিফ করতে হয়। অন্তত আমার মত সাধারণ মানুষেরা এটাকে অনেক বড় করেই দেখি। জনাব উমরের কাছে এ ব্যাপারটি গুরুত্ব পায় নি কেন বুঝতে পারি নি। শুধু গুরুত্বহীন নয়, লেখার ভাষা বলে, অনেক বেশি অবজ্ঞাও করেছেন তিনি।

সর্বশেষ, ভাষাসৈনিক শব্দের সৈনিক নিয়ে আপত্তি।
উমর দেখিয়েছেন এ ব্যপারটির শুরু সামরিক শাসনের সময় থেকে। বাকিটা বলেন নি, কিন্তু আমরা ধারণা করতে পারি তিনি বুঝিয়েছেন- ওই সময়ে কিছু চাটুকারশ্রেণীর লোকজনের উদ্যোগেই এ ধরণের শব্দের উৎপত্তি ঘটেছে।
এইখানে আমি যেটা বুঝি, এ ধরণের যে কোন উপাধি-র সাথে আবেগ জড়িত থাকে। সেই আবেগটা কতটুকু আসল বা নকল এটা আমাদের 'বুঝে' নিতে হয়। এ কারণেই বিদ্যাসাগর, শেরে বাংলা বা বঙ্গবন্ধু এক কাতারে থাকে, আর অন্যদিকে থাকে পল্লী-বন্ধু, ভাষা কন্যা এই জাতীয় উপাধিগুলো। স্পষ্টতঃ উনি ভাষাসৈনিক শব্দটাকে দ্বিতীয় কাতারে ফেলেছেন। এইখানে আমার প্রশ্ন, আমাদের অন্য বুদ্ধিজীবিদেরও তাই মত? নাকি শুধু বদরুদ্দীন উমর সাহেবই এমনটা ভাবেন? এটা জানা দরকার এ কারণে যে, চাটুকারদের দেয়া উপাধি সময়ের সাথে সাথে লোকে আপনা থেকেই ঝেড়ে ফেলে দেয়, কারও আর মনে থাকে না, ব্যবহার তো দুরে থাক। সেই দিক থেকে বলা যায় ভাষাসৈনিক শব্দটা তবে বিরাট ব্যতিক্রম? নাকি এটা সত্যিই মানুষের মন থেকে দেয়া উপাধি ছিলো? নইলে এতদিন পরে এখনো কেন লোকে অবলীলায় সেই শব্দ ব্যবহার করে চলছে? এক সামরিক শাসন থেকে আরেকটায় এসে পড়বার আগে আমরা মধ্যিখানে লম্বা সময় 'গণতান্ত্রিক দেশ' ছিলাম, এটা ভুলে গেলে চলবে না।
আরেকটা সংশয় যেখানে, সৈনিক কথাটা ব্যবহারে এত আপত্তির কারণ কি হবে? সৈনিক শব্দটা কি শুধুই আমাদের দেশের সামরিক বাহিনীর ড়্যাংক হিসেবে ব্যবহৃত কোন শব্দ? আমার তো মনে হয় না। সৈনিক শব্দটা আমাদের জীবনের প্রেক্ষিতে, অথবা জীবন সংগ্রামের প্রেক্ষিতে আমাদের প্রত্যেকের জন্যেই গুরুত্ব রাখে অনেক। সে তুলনায় ভাষা নিয়ে আন্দোলন তো এক ধরণের যুদ্ধই ছিলো বলা চলে। তাহলে সেই যুদ্ধের যোদ্ধারা ভাষাসৈনিক হলে দোষ কোথায়? নাকি ভাষাযোদ্ধা হলে ঠিক হত? আমার ধারণা শ্রুতিমধুরতারও একটা ব্যাপার আছে। এ কারণেই মুক্তিসৈনিক না হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে, আর ভাষাযোদ্ধা না হয়ে ভাষা সৈনিক।
এটাই স্বাভাবিকতা। সামরিক বাহিনী প্রিয় নয় বলেই যেখানেই সৈনিক শব্দটির উল্লেখ পাবো, সেখানেই তাদের গন্ধ খুঁজে বেড়াবো- এরকম মানসিকতা বাড়ির আড্ডায় বসে চা খেতে খেতে শুনলে ঠিক শোনায়, কিন্তু পত্রিকায় কোন বুদ্ধিজীবির কলামে এ কথা পড়লে ঠিক যেন হজম হয় না। পুরো কলামটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, উনি খুব বেশি একপেশে মনোভাব নিয়ে লিখেছেন। সবকিছুকে সরলীকরণ-অথবা আরো ভালো বলা যায়-খারাপীকরণ করে ফেলেছেন তিনি। এই সব ব্যাপারগুলোরই ভাল মন্দের ভারসাম্য বজায় রেখে একটা সুন্দর কলাম লেখার সুযোগ ছিলো, কিন্তু তিনি শুধুই মন্দটুকুই তুলে ধরেছেন, ভালো দিকগুলো ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয়- হয়েছে পুরোপুরি উপেক্ষিত।

বদরুদ্দীন উমরের কলাম পড়ে এত এত প্রশ্ন আর সংশয় মনে আসতেই একটা দুঃখবোধও জাগ্রত হলো- কেন যে ভদ্রলোক সচলায়তনে ব্লগিং করেন না! এখন এই প্রশ্নগুলোর উত্তর কেমনে পাবো?


মন্তব্য

তীরন্দাজ এর ছবি

ওনার লেখাটি আমিও পড়েছি।

তবে সহমত আপনার সাথে। অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ কনফুসিয়াস, এতটা গভীর ও আত্মিক ও সত বিশ্লেষনে বিষয়টি খোলাসা জন্যে।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

উনার লেখাটা পুরাটাই আবেগনির্ভর মনে হয়েছে। আপনি যেমন আপনার নিজের যুক্তি দিয়ে একটা ব্যালান্সড মন্তব্য লিখলেন, সেরকম হয়তো আপনি আশা করেছিলেন। দুইজনের লেখাই পড়ার সুযোগ হল এবং ভালোও লাগল।

উমর সাহেবকে সচলায়তনে যোগদানের অফার পাঠানো যেতে পারে।

আপনার বিষয় নির্বাচন ও চমতকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

হিমু এর ছবি

আমি সমকালের লিঙ্ক ধরে গিয়ে দেখি শুধু মহেঞ্জোদাড়ো ... কিচ্ছু পড়া যায় না। তবে কনফুর এই ঝরঝরে রিভিউ পড়ে খুবই ভালো লাগলো।

কেন যেন মনে হচ্ছে, প্রতিরোধ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের জন্যে একটি নতুন শব্দ উদ্ভাবন প্রয়োজন। এ ঠিক যুদ্ধ নয়, যে যোদ্ধা বলা যাবে, এ কোন নিয়মিত বাহিনীর সদস্যও নয় যে সেনা বলা যাবে, এ কোন হঠাৎ বিক্ষোভও নয়। লম্বা সময় ধরে চলা সাধারণ মানুষের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীকে কী বলা যেতে পারে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনি যে 'গুহাচিত্র' দেখবেন তাতে আশ্চর্য কি? চোখ টিপি

আমার পোস্টের সঙ্গে লেখাটির পিডিএফ জুড়ে দিয়েছি।

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের 'ভাষাসংগ্রামী' বলা যায়?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

কনফুসিয়াস এর লজিক গুলো ঠিক আছে... একমত!
তবে লেখকের আবেগের ব্যাপারটাও আমি বুঝি।
আর শুধু পোস্টার লাগানো লোকগুলোকে নয়, অস্ত্রহাতে না নিয়ে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছেন তাঁদের প্রতিও লেখকের একটা অবজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

অল্পকিছু তাত্ত্বিক লেখ বাদে উমর সাহেবের বেশীরভাগ লেখাই শ্লেষাত্মক। নিজ প্রজন্মের উপর তীব্র ক্ষোভ নিয়ে লেখেন বরাবর, যেই ক্ষোভ উড়িয়ে দেওয়া যায় না চট করে। ভাষা আন্দোলন নিয়ে তাঁর ক্ষোভের একটা বাড়তি কারণ বোধ হয় "পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন এবং তৎকালীন রাজনীতি" নামের গবেষণা গ্রন্থে দেওয়া শ্রম। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের অংশটুকু নিয়ে বাটপারি কম হয় নি। সেদিনের অনেক যোদ্ধাই পরে নানা রকম ডিগবাজী দিয়েছেন। তাতে তো ইতিহাস বদলে যায় না। অলি আহাদ ডিগবাজী দিয়েছেন সত্য, তাই বলে তাকে ইতিহাস থেকে গাপ করে সেখানে (নাম বলবো না) কিছু চিহ্নিত অসৎ আওয়ামী ইতিহাসবেত্তার নাম পাঞ্চ করা অবশ্যই শাস্তি যোগ্য অপরাধ। পাকিস্থানী সেনাবাহিনিকে মুরগী সাপ্লাই আর এরশাদের রাস্তা ঝাঁট দেবার পরেও ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর প্রধাণ সংগঠকদের মধ্যে আনোয়ার জাহিদের নাম উল্লেখ করতে বাঁধে না, হালে নিজামীর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁত কেলিয়ে ছবি তোলা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বঙ্গবীর থেকে যান,তাহলে তৎকালীন আধা নিষিদ্ধ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা অলি আহাদের নাম বলতে কোথায় বাধে? ১৯৭১ থেকে ১৯৫২ তে আত্মপ্রচার অর্থে স্মৃতিচারণের বিষয়টি ছিল না। আত্মপ্রচারের জবরজং আয়োজনগুলো করেছে সামরিক সরকারেরা। বারে বারে সৈনিক শব্দটা মগজে ঠেসে দেবার একটা পায়তারা তো থাকেই। প্রবন্ধটি পড়ে অনেকদিন পরে জেনারেল ওভান্দের নামটি দেখলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম তাঁর অধীনে ট্রেনিং প্রাপ্তদের কথা। যাদের প্রায় কেউই মুক্তিযুদ্ধ করেন নি........



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ফেব্রুয়ারীতে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিরোধ উদযাপন করা, মার্চে রাস্তায় আগুন জ্বেলে 'অগ্নিঝরা মার্চ উদযাপন', ডিসেম্বরে ট্রাকের পর ট্রাক রাইফেল হাতে জনগণ ভর্তি করে 'বিজয় উদযাপন করা'- যদি হয় আজকের দিনে সেই দিনগুলোর মহিমা ধরে রাখা তাহলে কোনটা পোশাকি উদযাপন দাঁড়াবে? সময়ের প্রয়োজন কিংবা সিচুয়েশন ডিমান্ডস ব্যাপারটা কি উঠেই যাবে তাহলে! ৫২ পরবর্তী উদযাপন গুলোর সাথে ৭১ পরবর্তী উদযাপনগুলোর বেশ ভালো এবং বড়সড় রকমের তফাৎ থাকাটাই কি স্বাভাবিক না? তবে হ্যাঁ, উমর সাহেব আজকের যে পোশাকী উদযাপনের কথা বললেন সে ব্যাপারে তাঁর সাথে একমত, কিন্তু সরকার প্রধাণ সর্বাগ্রে সম্মান দেখাবেন, এতে আমার ব্যক্তিগতভাবে অমত নেই। কারণটা খুব স্বাভাবিক। রাস্ট্রের যে মাথা তাঁকে পছন্দ করি বা না করি, দেশের প্রতি- দেশের আইনের প্রতি নিজেকে শ্রদ্ধাশীল ভাবি বলেই তাঁর পেছনে হাঁটতে আমার দ্বিধা নেই। আমাদের আজকের জেনারেশনের উদযাপনকে যদি জনাব উমর কটুক্তি করে থাকেন, তাহলে কিছু বলার নেই। এখানে আমি বাকরুদ্ধ। চোখের সামনে অশ্লীল উচ্চারণে বাংলা বলে কেউ যখন পাংকী-লুক নিয়ে প্রভাত ফেরীতে যায় তাহলে জনাব উমরের আগে এমন একটি জেনারেশনের সদস্য হওয়ায় আমার নিজেরই মাথা কাটা যায় লজ্জায়, তিনি আর কী বলবেন!

বাকী রইল মীটিং-সিম্পোজিয়াম-সেমিনার-স্মৃতিচারণ। দেখুন, এইযে পাংকু স্টাইলের বাঁদরেরা শহীদ মিনারে গিয়ে হাজির হয় একুশে ফেব্রুয়ারীর 'সকালে'। এর কারণ কি, বিস্মৃতি নয় কি? এই মর্কটের দলকে বিস্মৃতির আঁধার থেকে বের করার জন্যই বেশি বেশি স্মৃতিচারণ দরকার। একটু লক্ষ্য করুন, ভাষাসৈনিক বলেন আর ভাষাযোদ্ধাই বলেন কিংবা ভাষাআন্দোলনকারী- প্রাকৃতিক নিয়মে এঁরা একসময় হারিয়ে যাবেন। তখন কী থাকবে আমাদের হাতে? না তাদের স্মৃতিচারণ, না তাদের সংগ্রামী ইতিহাস, না তাদের প্রতিরোধের রোমহর্ষক প্রত্যয়ী মনোভাব। তখন বিস্মৃত নব-প্রজন্মকে বিগড়ে যাওয়া থেকে ফেরাবেন কী করে? কী করে ধ্বসে যাওয়া একটা সংস্কৃতিবিমূখ প্রজন্মকে ফেরাবেন ভাষাআন্দোলনের গৌরবময় সময়ের পানে?

জনাব উমরের লেখার বাকি অংশ গুলোর সাথে একাত্বতা আছে। কনফুসিয়াসের যুক্তিপূর্ণ লেখাটির সংগেও একমত। আলাদা পোস্টে গেলাম না সেজন্যই। তবে উমর সাহেব সচলায়তনে লেখালেখি করলে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো। তাঁকে সরাসরি পেতাম নিজের মনের অনেক অজানা তৃষ্ণা মিটিয়ে নেবার জন্য।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অতিথি লেখক এর ছবি

যুক্তিনির্ভর সমালোচনা। সমালোচনা এমনই হওয়া উচিৎ।
- শামীম হক

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

লেখায় আবেগ কম, যুক্তি বেশি। ঠিক যা প্রয়োজন এমন লেখায়।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

মুহম্মদ জুবায়ের লিখেছেন:

ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের 'ভাষাসংগ্রামী' বলা যায়?

আমি প্রস্তাবে একমত।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সুমন চৌধুরী লিখেছেন:
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের অংশটুকু নিয়ে বাটপারি কম হয় নি। সেদিনের অনেক যোদ্ধাই পরে নানা রকম ডিগবাজী দিয়েছেন। তাতে তো ইতিহাস বদলে যায় না। অলি আহাদ ডিগবাজী দিয়েছেন সত্য, তাই বলে তাকে ইতিহাস থেকে গাপ করে সেখানে (নাম বলবো না) কিছু চিহ্নিত অসৎ আওয়ামী ইতিহাসবেত্তার নাম পাঞ্চ করা অবশ্যই শাস্তি যোগ্য অপরাধ। পাকিস্থানী সেনাবাহিনিকে মুরগী সাপ্লাই আর এরশাদের রাস্তা ঝাঁট দেবার পরেও ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকীর প্রধাণ সংগঠকদের মধ্যে আনোয়ার জাহিদের নাম উল্লেখ করতে বাঁধে না, হালে নিজামীর কাঁধে হাত দিয়ে দাঁত কেলিয়ে ছবি তোলা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি বঙ্গবীর থেকে যান,তাহলে তৎকালীন আধা নিষিদ্ধ ছাত্র ফেডারেশনের নেতা অলি আহাদের নাম বলতে কোথায় বাধে?

১০০% একমত।

কে জি মুস্তফা কে বি বি সি প্রশ্ন করেছিল , যদি তাকে একজন ভাষা আন্দোলনের নেতা নির্বাচন করতে বলা হয় , তবে তিনি কাকে বেছে নিবেন ,তিনি উত্তর দেন -অলি আহাদ ।

ভাষা মতিন বলে পরিচিত আব্দূল মতিন অনুরুপ মত দিয়েছেন তার বই এ ।

অথ্চ সেই আন্দোলনের প্রান্তিক নেতাদের কাছ থেকে আমাদের গাল -গল্প শুনতে হই এখন । চামরাদের কথা না হয় থাক।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

হিমু এর ছবি

ভাষাসংগ্রামী আব্দুল মতিনকে "ভাষা মতিন" ডাকা এক ধরনের অভদ্রতা আর ধৃষ্টতা বলেই আমার মনে হয়। যিনি এই শব্দচয়ন মিডিয়াতে প্রথম ব্যবহার করেছেন, আমি তাঁর রুচির প্রশংসা করতে পারবো না।

বদরুদ্দিন উমর সচলায়তনে ব্লগিং কি আদৌ চালিয়ে যেতে পারবেন? ব্লগে তাঁর মুখের ওপর যদি কেউ পাল্টা যুক্তি দেয়, তিনি কি তা মেনে নিয়ে তর্ক চালিয়ে যেতে পারবেন? আমাদের কলামিস্টরা পত্রিকায় কলাম লেখেন, এবং তর্কযুদ্ধ চলতে থাকে কলাম থেকে কলামে, মানে এর মাঝে এক থেকে দুই সপ্তাহ বিরতি, এই সময়ের মধ্যে রয়েসয়ে পরের উত্তরের জন্যে মালমশলা সংগ্রহ করা যায়। এদিকে ব্লগে যে গতির সাথে তর্ক গড়াতে থাকে, তার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া বেশ কঠিন কাজ, বিশেষ করে মূলধারার লেখকদের জন্যে। সর্বোপরি, সচলায়তনের কণ্ঠস্বর, লেখার ধরন, শব্দচয়ন, এর কোনটির সাথেই তিনি একমত হবেন বলে মনে হয় না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

একমত!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আমার মনে হয় আমরা নিজেরা বুড়া হওয়ার আগে আর কোন বুড়া মানুষরে ব্লগে না আনাই ভালো। ব্লগিং বিষয়টা তাঁদের হজম হইবো না।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তাহলে আমার কি হবে? মন খারাপ

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আপনারা ঠিকাছেন দেঁতো হাসি



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

সহমত । ভাষাসংগ্রামী আব্দুল মতিনকে "ভাষা মতিন" ডাকা যে "এক ধরনের অভদ্রতা আর ধৃষ্টতা " এই মত আমরা মিডিয়াতে প্রকাশ করতে পারি সচলায়তনের ব্যনারে , কি বলেন? কিন্‌তু , স্বয়ং আব্দুল মতিন যদি এটাকে " এক ধরনের অভদ্রতা আর ধৃষ্টতা " না মনে করেন (তাঁকে এ যাবত প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি ) তখন আমাদের কি করার থাকবে ?

আমি যেহেতু হিমু'র সাথে সহমত তাই নিজে এখন থেকে "ভাষা মতিন" ব্যবহার থেকে বিরত থাকব ।

কিন্‌তু কোন উপাধি "অভদ্রতা আর ধৃষ্টতা " আর কোন উপাধি নয় , তা বিচার করে মুশকিল বৈকি ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

বজলুর রহমান এর ছবি

বদরুদ্দিন সাহেবের খুব বেশি লেখা আমি পড়িনি। বহুদিন আগে একটি লেখাতে অযথাই আমার এক অতি নিকট আত্মীয়কে আপত্তিকর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বলে খুব ছোটবেলাতেই আমার কাছে তাঁকে অতিরিক্ত আত্মম্ভরী ও পক্ষপাতদুষ্ট মনে হয়েছিল। বহু বছর পরে সাম্প্রতিক কালে আবার আমার আরেক নিকট আত্মীয়ের স্মরণিকা গ্রন্থে তাঁর লেখাতে একটু চোখ বুলিয়ে দেখি ৫ পাতার ৪ পাতাই তিনি নিজের সম্বন্ধে কথা বলেছেন।
তবে ভাষাসৈনিক, নারী নেত্রী (আত্মাভিহিত) এই জাতীয় শব্দে আমার খুব আপত্তি আছে। আমি নিজেও প্রয়োজন হলে ভাষা-সংগ্রামী বা নারীবাদী ব্যবহার করি (শেষেরটি অসাচ্ছন্দের সাথে)।
ভাষাসৈনিকের সংখ্যাবৃদ্ধি সত্যিই আশঙ্কাজনক। গতকালই একটি আমন্ত্রণলিপি পেলাম তাতে এমন একজনকে প্রধান অতিথি ঘোষণা করা হয়েছে, যাঁকে আমি প্রথম বর্ষের ছাত্রাবস্থা থেকে ভালো করে চিনি, কিন্তু তাঁর ভাষা আন্দোলনের সাথে যোগসূত্র আগে কখনো জানতে পারি নি!
আজাদ চৌধুরী ঢা,বি,র উপাচার্য হয়ে মুক্তি্যোদ্ধা কোটায় ভর্তির ব্যবস্থা করেন। শিক্ষকরা বলেন যে, দেখা যায় বহু ছাত্র তাদের পিতার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ভর্তির বছরে সংগৃহীত বা প্রস্তুত "সাময়িক" সনদ নিয়ে উপস্থিত। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলি সম্মানিত হয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় এই যে গোলাম আজমকে এখনো ভাষাসৈনিক উপাধি বা একুশে পদক দেওয়া হয় নি।

হিমু এর ছবি

আশ্চর্যের বিষয় এই যে গোলাম আজমকে এখনো ভাষাসৈনিক উপাধি বা একুশে পদক দেওয়া হয় নি।

আপনি কি বলতে চাইছেন, গোলাম আজমের ইয়ারদোস্ত চ্যালাচামুন্ডারা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তাকে এই উপাধি বা পদক দিয়ে হালালের চেষ্টা করা হয়নি, এটা আশ্চর্যজনক? নাকি এটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছেন, এবং তা করা হয়নি বলে আশ্চর্য লাগছে?


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।