ইংরেজি মাধ্যম নিয়ে অল্প দু'চারটে কথা

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৩/২০০৮ - ৬:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবজান্তার পোস্ট -একুশের কোপাকুপি- পড়ে অনেক পুরনো কথা মাথার ভেতরে ভীড় করে এলো।

ঢা-বির ছাত্র হবার পর পর মনের ভেতর বেশ জোশ নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। কার্জন হলে আমাদের ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের অফিসে নাম রেজিস্ট্রি করতে গিয়ে অফিসের ক্লার্ক যখন আবেদন পত্রটা আমার দিকে বাড়িয়ে ধরে বললেন, 'এইখানে একটা সাইন করেন।' আমি বেশ অনেকক্ষণ বুঝতেই পারি নি যে কথাটা আমাকে বলা হচ্ছে। এর আগে কে আমাকে সম্মান করে 'আপনি' সম্বোধন করেছিলো- অনেক ভেবেও মনে করতে পারলাম না।
তো, ঐ কাগজে স্বাক্ষর করতে করতেই বুঝলাম বড় হয়ে গেছি।

কিন্তু এই আনন্দদায়ক ব্যাপারটা একা বুঝলে তো চলবে না, বাসার লোকজনকেও জানান দিতে হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমি একদিন হুট করে ঘোষণা দিয়ে দিলাম, ঢাকায় আমি নিজেই নিজের খরচা-পাতি চালাবো। এরকম ঘোষণার সাহস অবশ্য পেয়েছিলাম টিউশানীর কল্যাণে।

সেই সময় অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে আমি দুটা টিউশানী শুরু করি।
টিউশানী-করুয়াদের কাছে ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রদের বেশ সুনাম রয়েছে। পকেটের স্বাস্থ্য দ্রুত বাড়ানোর জন্যে বাংলার চেয়ে ইংরেজী মাধ্যমের অবদান বেশি থাকে, সাধারণত।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর এই দুই ছাত্রের বাসা কাছাকাছি। একজনের গুলশান ও অন্যজনের কাকলী- ডিওএইচএস। আমার জন্যে বেশ সুবিধে হলো। ক্লাশের পরে টিএসসিতে ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে তারপরে শাহবাগ থেকে ছয় নাম্বার অথবা শাপলা ধরে চলে যেতাম কাকলী। ওখানে পড়ানো শেষে গুলশান।
এই দুই ছাত্রকে পড়ানোর ব্যাপারটা বেশ এনজয় করেছি সবসময়েই।

একজন একটু বেশি মেধাবী ছিলো- খুব সহজে সব পড়া বুঝে যেত, আগ বাড়িয়ে হোমওয়ার্ক নিয়ে নিতো- ওর রেজাল্টও ছিল ক্লাশের প্রথম দিকে।
অন্যজন সেই তুলনায় একটু কম মেধাবী- রেজাল্টের অবস্থা করুণ, এবং আলসেমীতেও জুড়ি নেই।
তবে একটা বিষয়ে দুজনের মধ্যেই বেশ মিল ছিলো- দুজনের কেউই বাংলায় ভালো নয়!

প্রথম যখন একজন থার্টিনাইনকে কোন ভাবেই ঊনচল্লিশ বলে চিনতে পারছিলো না- আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। এবং মজার ব্যাপার হলো- দু'জনের মা-ই আমাকে বলেছিলেন, 'বাবা, সব সাবজেক্ট যেমন তেমন, কিন্তু বাংলায় ওরা খুবই উইক। তুমি ওটাতেই বেশি জোর দিও।'

এটা বোধহয় বছর ছয় আগের কথা। তখনও দেশে ডিজ্যুস জমানা আসে নি। আমরা, মানে ম্যাংগো-জনতার বাংলা তখনও সাধারণই ছিলো, কোন কিছুর মিলমিশে এখনকার মতন জগাখিচুড়ী হয়ে যায় নি। কিন্তু সেই সময়েই আমার একজন ছাত্রের স্বপ্নের নায়ক ছিলো মাইকেল জর্ডান, অন্যজনের, ওয়েল, শাহরুখ খান।

আমি ওদের সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখলাম বাংলা বা বাংলাদেশ নিয়ে ইতিহাস বা অন্য যে কোন সাধারণ জ্ঞানের জায়গাটায় বিশাল ফাঁক রয়ে গেছে।
এই আবিষ্কারটা আমার জন্যে বেশ পীড়াদায়ক ছিল।
তবে বেশ বুঝতে পেরেছিলাম, এর পেছনে ওদের কোনই দোষ নেই। ওদের পড়ানোর বইপত্র, সিলেবাস, স্কুলের পরিবেশ ও আরো নানান হাবিজাবি এর জন্যে দায়ী- পুরোমাত্রায়। ওরা নিজেরা একেবারেই দায়ী নয়।
আমার মনে হয়েছিলো- যদি সেরকম সাপোর্ট ওদের দেয়া যায়- ব্যাপারটা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব নয়।

আমি খুব অল্প কিছু পদক্ষেপ নিয়ে ছিলাম।
পড়ানোর বাইরের সময়টুকুতে ওদের সাথে আমাদের ভাষা আর দেশ নিয়ে অনেক গল্প করতাম। একদম স্বতস্ফূর্ত বাংলায়। অথবা ওদের বাংলার বিষয়গুলোকেও বেশ সহজ করে গল্পের মত করেই বুঝিয়ে দিতাম। এটা অনেক কাজে লেগেছিলো।
সেই সময় আমি চন্দ্রিলের বেশ ভক্ত ছিলাম। তখন সদ্যই হাতে এসেছিলো চন্দ্রবিন্দুর এলবাম- ত্বকের যত্ন নিন। খুব মজার আর সুন্দর সব গান। একটা গানের নাম ছিলো- বাথরুম। একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এক সকালের গল্প। যেখানে ছোট এক ছেলের খুব বাথরুম চেপে যায়, কিন্তু থার্ড পিরিয়ডে বাথরুমে যাবার নিয়ম নেই বলে টিচার তাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছে না।

এই দারুন মজার গানটা আমি দুজনকেই শোনালাম।
খুব মজা পেয়ে গেলো ওরা। এই এলবামের অন্য গানগুলোও শুনতে বেশ উৎসাহ দিলাম। ওরা ক্রমশ বাংলা গান শুনতে চাইছে- এই পরিবর্তনটাই তখন বেশ আনন্দদায়ক ছিলো।

বাংলা পড়বার অভ্যেসের জন্যে অনেক ভেবে চিন্তে দু'জনের হাতে তুলে দিলাম সত্যজিৎ রায়ের বই। আমার মনে হচ্ছিলো- এই বয়সের মানসিকতার জন্যে সত্যজিৎই সবচে ভালো সংগী হতে পারবেন।
আমি গল্প বেছে বেছে দিতাম ওদের, পড়বার উৎসাহ দিতাম অনেক। ওরাও বেশ মজা পেয়ে গিয়েছিলো।
আরো মজার ব্যপার হলো- এদের একজন গান শুনতে আগ্রহ পেত বেশি, আর অন্যজন বই পড়তে।
সব মিলিয়ে বছর দুয়েক পড়িয়েছিলাম আমি ওদের। বাংলায় দু'জনের কেউই 'খারাপ' ছিলো না আর।
ওরা বাংলা গান শুনতো, বই পড়তো, সে সব নিয়ে আমার সাথে আলোচনাও করতো! পরীক্ষার খাতায় নম্বরও আসতো বেশ ভালো। একুশ নিয়ে জানতো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলতো, বাংলাদেশের জার্সি পরে টিভিতে খেলা দেখতে বসতো।

পুনশ্চঃ
একদিন পড়াতে গিয়েছি; আমার ছাত্র চকচকে চোখে এসে আমাকে বলছে, 'ভাইয়া, বিরাট জিনিস জোগাড় করে ফেলেছি!'
আমি বললাম, 'কি?'
ও তার কম্পিউটার খুলে দেখালো- তখন পর্যন্ত বের হওয়া চন্দ্রবিন্দুর সবগুলো এলবামের গান একটা ফোল্ডারে।
আমাকে বলে, ' সব শুনে ফেলবো! আর কার কার গান শোনা যায় বলুনতো?"

পুনশ্চ ২:
আমার অন্য ছাত্রের অবস্থাও তথৈবচ। ওর মা এসে একদিন আমাকে বললেন, 'আজ বইমেলায় গিয়ে ও ঘুরে ঘুরে সত্যজিতের সব কালেকশন কিনে ফেললো। ফেলুদা, প্রোফেসর শংকু- সব।'
বেচারা নিজে এসে আমাকে বলতে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলো। আন্টির কথার পরে এক এক করে সবগুলো বই এনে আমাকে উল্টে পালটে দেখালো।
নতুন বই পেলেই আমি নাকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুঁকি। তাই করতে করতে আমি অনেক কিছু ভাবছিলাম সেদিন।

ঠিকঠাক পরিবেশ আর যত্ন পেলে মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনা যায়- এটা বুঝেছিলাম বেশ ভালমতন।
আরো বুঝেছিলাম- ভালোবাসাকেও মাঝে মাঝে হাতের আঙুল ধরে পথ চলা শুরু করিয়ে দিতে হয়- সেটা দেশের জন্যেই হোক কি ভাষার প্রতি।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

কথা সত্য। তবে শুধু টিউটরের উৎসাহে কাজ হয় না, বাসায় বাবা মায়ের উৎসাহ খুব জরুরি।

ইংরেজি মাধ্যমের প্রাথমিক পর্যায়ের বইগুলির উপাদান সম্পর্কে কেউ একটা রিভিউ দিতে পারেন?


হাঁটুপানির জলদস্যু

গৌতম এর ছবি

আমাদের দেশে একমুখী শিক্ষা নিয়ে কথাবার্তা হয় বেশ। কিন্তু এককেন্দ্রীক শিক্ষা নিয়ে কাউকেই কিছু বলতে দেখি না। তা হলে এই সমস্যাটা হয়তো থাকতো না। আপনার মতো শিক্ষক কয়জন শিক্ষার্থীই বা পায়! সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমেও বাংলার কোনো ব্যবহার ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বাপমা বিরুদ্ধে থাকলে কনফুর চাকরি যাইতো। আংলিশ মাদামের পোলাপানের ভাষাবিপর্যয়ের জন্য মূখ্যত তাগো ডোনাররাই দায়ী....



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

কনফুসিয়াস এর ছবি

বদ্দা, কথা সইত্য। এইটারে আমার সৌভাগ্য বলতে পারেন। একজনের মা ছিলেন লালমাটিয়া কলেজের টিচার, আর অন্যজনের বাবা পুরোদমে ব্যবসায়ী। এবং দুইজনই আমার 'মিশনঃ বাংলা' কে শতভাগ সমর্থন দিয়েছিলেন। তা নইলে এই কাহিনি সম্ভব ছিলো না।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

কনফু ভাই, আপনার লেখাটা অণুপ্রানিত করার মত। এমন কিছু চেষ্টা আমিও করে যাচ্ছি। কিন্তু আমার আসলে ২টা মৌলিক সমস্যা সামাল দিতে হচ্ছে।

সমস্যা একঃ আমার ছাত্রের পড়াশোনার অবস্থা এতই খারাপ যে তাকে সহি সালামতে পুলসিরাত পার করাতে গেলে আমাকে ১ সেকেন্ডও নষ্ট করা যাবেনা। সেখানে তার বৃহত্তর ভালোর জন্য হয়ত বাংলা বই ধরানো যেতে পারে, কিন্তু সেটা তার ক্ষুদ্রতর ভালো ওরফে তার ও লেভেল পাস করা তথা আমার অন্ন সংস্থানের দিকে বিশাল লাথি মারার সামিল। অতএব, রয়ে সয়ে।

সমস্যা দুইঃ আমার ছাত্রের পরিবার যথেষ্ট স্বচ্ছল ঠিকই কিন্তু তারা সে অর্থে শিক্ষিত নন। তাদের মধ্যে বিন্দু মাত্র মাথা ব্যথা নেই যে সে বাংলাদেশ কিংবা ভাষা নিয়ে এত কম জানে। তাই পরিবারের সমর্থনটাও সেভাবে পাবো না আমি।

দেখি বিকল্প কিছু বের করা যায় নাকি !

-----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

নিঘাত তিথি এর ছবি

আহারে, তবু ভালো কিছু হয় মাঝে মাঝে...

কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে চেষ্টার চাইতে কত ভালো হত যদি ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষা ব্যবস্থাতেই বাংলার গুরুত্বপূর্ণ প্রচলন থাকতো। অথবা পুরো দেশে একটি শিক্ষাব্যবস্থা থাকত যেখানে মূল বাংলা ভাষার পাশাপাশি গুরুত্বের সাথে ইংরেজী চালু থাকতো। একই সাথে আন্তর্জাতিক এবং মাতৃভাষায় তাহলে শিক্ষিত হবার সুযোগ পেত সবাই।

বাংলাদেশে কি করে বাংলা বিবর্জিত শিক্ষা চালু হয় আমার ছোট মাথায় সেটা ধরে না!

কেউ কি বলতে পারবেন ভারতের ইংরেজী মাধ্যমে ঠিক কি উপায়ে পড়ানো হয়? কেন তারা ইংরেজী শিখতে গিয়ে হিন্দী ভুলে যায় না? বরং হিন্দী ভাষা-গান-সিনেমা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব করে? এই বিষয়ে আমি কেবল আমার দেখা ভারতীয়দের কথাই বলছি, খুব বেশি জানি না।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

হিমু এর ছবি

ইংরেজি মাধ্যমের পাঠ্যসূচীর ওপর এ কারণেই একটা রিভিউ দিতে অনুরোধ করছি সচলদের। সবজান্তা কিছুটা পারবেন বোধহয়।

ইংরেজি মাধ্যমের ওপর বিরাগ থাকার কোন কারণ নেই, কিন্তু সে মাধ্যমে যা ভেসে চলছে, তাতে বাংলাদেশের নামগন্ধ কম। যতদূর জানি, বইগুলো আসে ভারত আর যুক্তরাজ্য থেকে। স্বাভাবিকভাবেই তার পাঠ্যসূচীতে বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য কম থাকবে বা থাকবে না। ক্লাসে হয়তো বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ আসবে, আমরা যেভাবে বার্মার বনজ সম্পদ পড়েছি ভূগোলে, সেভাবেই ছেলেমেয়েরা জিনিসগুলো পরীক্ষার খাতায় উগড়ে দেবার জন্যে শিখবে, তারপর ভুলে যাবে।

আর শুধু বইতে থাকলেই তো শেখা হয় না। বাংলা মাধ্যমেও তো সবকিছু গুছিয়ে উপস্থাপন করা নেই। বাংলা মাধ্যমের ছাগুরাম তো কম দেখলাম না। এই মূর্খতা, এই তাচ্ছিল্য তো সচেতনভাবেই রোপণ করা হচ্ছে বাচ্চাগুলোর মধ্যে।

তবে ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়ে যদি বাবামা বাচ্চাগুলোকে রপ্তানি করে দেবেন বলেই মনস্থির করে থাকেন, তাহলে আসলে পাঠ্যসূচীর কথা ভেবে কোন লাভ নেই। তারা বাংলাদেশে কষ্টকর সতেরো আঠারো বছর কাটিয়ে চলে যাবে তাদের স্বপ্নের দেশে, সেখানে মানিয়ে চলার জন্যে যা কিছু শেখা বলে তাদের কাছে জরুরি মনে হয়, তারা তা-ই শিখবে, আমরা চেঁচালেও কোন লাভ নেই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নিঘাত তিথি এর ছবি

সতেরো-আঠারো বছর পরে অন্য দেশে চলে যাবে বলে যারা কষ্ট করে বাংলাদেশে পড়ে থাকে, এবং দেশের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা যাদের নেই তারা চলে যাক স্বপ্নের দেশে কোন সমস্যা নেই। তবে এই সতেরো-আঠারো বছর ধরে যে বাংলাদেশের হাওয়া-বাতাস আর জলপানি খেয়েছে তা যেন ওই দেশে গিয়ে পরবর্তী সতেরো-আঠারো বছর টানা বমি করে পরিষ্কার করে নেয়। কোন বিরতি দেয়া যাবে না বমিতে, একটানা খেয়েছিস, এবার একটানা বমি কর।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

"তারা চলে যাক স্বপ্নের দেশে কোন সমস্যা নেই"

শেষমেষ যায় সবাই-ই -- খালি বদনামটা হয় বোধ হয় অল্প কয়েকজনের।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

দেশের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা যাদের নেই

বদনাম বোধহয় এ কারণে হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ইংলিশ মিডিয়ামদের ভালোবাসা মাপার দায়িত্ব বোধ হয় তাইলে অন্যের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

ইংরেজি, বাংলা বা আরবী মাধ্যমের ভালোবাসা কেউ যদি হঠাৎ মাপা শুরু করে, তাহলে ফল কী দাঁড়াবে আমি সত্যিই জানি না। তবে ভালোবাসার প্রকাশগুলি অনেক স্বতস্ফূর্ত হওয়া উচিত বলেই মনে হয়। এই পোস্ট যে প্রসঙ্গে করা হয়েছে, সেখানে ইংরেজি মাধ্যমের একজন ছাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে তার নিরীহ অজ্ঞতা আর এই ইতিহাস জানাকে অপ্রয়োজনীয় বলে তার মত প্রকাশ করেছে। হয়তো ঐ ছেলে বাংলাদেশকে আপনার বা আমার চেয়ে কম ভালোবাসে না, কিন্তু আমরা ধরে নিই সাধারণত, কিছু তথ্য আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন। এ কথাও সত্যি যে নিজের বাপকে শ্রদ্ধা করার জন্যে বাপের নাম না জানলেও চলে, কিন্তু তবুও আমরা নিজের বাপের নাম শিখে রাখি, নিজের পরিচয় দেয়ার জন্যেই। নিজের দেশের ইতিহাস অনেকটা এই বাপের নামের মতোই তো। কেউ যদি এই অজ্ঞতা এবং এই অজ্ঞতা সম্পর্কে সন্তুষ্টিকে ভালোবাসার অভাব বলে চিহ্নিত করে, তাকে দোষ দেয়া যাবে না। যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়, তা হচ্ছে সরলীকরণ। ইংরেজি মাধ্যমের একজন ছাত্র জানে না মানেই বাকিরা সব চুৎমারানি, এই মনোভাব হচ্ছে নাৎসীসুলভ। বার বার এই অভিযোগ উঠে আসে, তার কারণ হচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্রদের কাছ থেকে এই ছোট ছোট কমপ্ল্যাসেন্ট ইগনোরেন্স মেলে বলে। একই জিনিস বাংলা মাধ্যমের ছাত্রদের ক্ষেত্রেও পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি, খুব ইন্টারেস্টিং হয় যদি ইংরেজি মাধ্যমের কোন ছাত্র এ নিয়ে কোন ইংরেজি ব্লগে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন যে বাংলা মাধ্যমের ছাত্ররা নিজের দেশ সম্পর্কে এতো সুযোগ থাকার পরও এতো কম জানে।

আপনি হয়তো আহত বোধ করছেন ইংরেজি মাধ্যমকে আক্রমণ করা হচ্ছে ভেবে। আপনার কাছেই জানতে চাই, আপনি যখন ছাত্র ছিলেন, তখন পাঠ্যসূচী কেমন ছিলো? বাংলাদেশ সম্পর্কে কতটা বিশদ তথ্য ছিলো তাতে? আমাদের একটু ধারণা দিন। অনেকের মনেই হয়তো অকারণ একটা সংস্কার কাজ করে, সেটা হয়তো কেটে যাবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
কনফুসিয়াস এর ছবি

প্রিয় সুবিনয় মুস্তফী,
এই পোস্ট বা মন্তব্যগুলো থেকে একটা বা দু'টা লাইন কোট করে বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই। আমার ধারণা, পোস্ট ও মন্তব্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আপনি ভুল বুঝছেন। ঢালাওভাবে কেউ কাউকে দোষারোপ করছি না আসলে। কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছি আমরা, সে সব নিয়েই খোলামনে আলোচনা করছি।
আমার খানিকটা খারাপ লাগলো এই ভেবে, আলোচনার সুযোগে আপনি হয়তো আপনার বক্তব্যগুলো পরিষ্কার করে বলতে পারতেন। এই-ই।
ভালো থাকুন।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নিঘাত তিথি এর ছবি

আলোচনা এত দূর গড়িয়েছে খেয়ালই করি নি! তাও আমার মন্তব্য ধরে...!
প্রিয় সুবিনয় মুস্তফী, আমার করা দু'টো মন্তব্যর মাঝে একটি মন্তব্যর একটি লাইনের অর্ধেকটি কোট করে দুঃখ প্রকাশ করলেন, বাকি কথাগুলো বোধহয় কোন কারনে আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। সেটা কেমন করে হলো ভেবে পাচ্ছি না। এমনকি যেই লাইনটার অর্ধেক আপনি কোট করেছেন সেটা পুরোটা পড়লেও তো অর্থটা এমন দাঁড়ায় না। আমি বলেছিলাম,

সতেরো-আঠারো বছর পরে অন্য দেশে চলে যাবে বলে যারা কষ্ট করে বাংলাদেশে পড়ে থাকে, এবং দেশের প্রতি এতটুকু ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা যাদের নেই তারা চলে যাক স্বপ্নের দেশে কোন সমস্যা নেই।
এই "তারা"তে যাদের বাংলাদেশের প্রতি "এতটুকু ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা নেই" তাদের সবার কথাই কিন্তু বলা হয়েছে। এমন কোন ইংগিত কি আছে যাতে মনে হতে পারে আমি শুধু ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রদের কথা বলেছি বা বাংলা মিডিয়ামের যারা দেশকে ভালোবাসে না তাদের কথা বলি নি? সেরকম কিছু যদি প্রকাশ পেয়ে থাকে তাহলে মনে হয় সেটা আমার লেখার দুর্বলতা। আমি খুব সহজ ভাষায় সবার কথাই লিখতে চেয়েছিলাম, মনে হয় ব্যার্থ হয়েছি। ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রদের প্রতি আলাদা আক্রোশ থাকলে মনে হয় প্রথম মন্তব্যটি করতাম না।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

রাবাব এর ছবি

আসলে ঢালাও ভাবে সকল ইংলিশ মিডিয়ামকে গালি দেয়াটা বোধহয় ঠিক নয়। এই যে বাংলা মিডিয়াম নিয়ে অবহেলা তার পেছনে আমাদের মা, বাবা, টিচার থেকে শুরু করে হালের মিডিয়াগুলোও দায়ী। ব্যক্তিগত experience থেকে বলতে পারি একদা কোন এক নামকরা ইংরেজি পেপারে কলেজের অনুষ্ঠানের জন্যে স্পনসর জোগাড় করতে গেলে তারা বেশ চাঁছাছোলা ভাবে জানালো কোন বাংলা মিডিয়াম স্কুলে তারা স্পনসর দেন না। আক্কেল গুড়ুম তখনই হয় যখন কিনা বুঝলাম ঐ ভদ্রলোকটি এ ব্যাপারটির মাধ্যমে তাদের এলিটিস্ট মানসিকতার প্রকাশ দেখাচ্ছেন বলে মনে করছেন!
আরেকটি ব্যাপার না বল্লেই না, এই তথাকথিত ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলোর টিচারও আশি শতাংশ বাংলা মিডিয়াম থেকেই আসা। তারাই বা কি করে বাংলা ভাষা কিংবা বাংলা মিডিয়ামকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন বুঝে পাইনা।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি সাউথ ব্রীজ নামক স্কুলটির ছেলেমেয়েরা আর দশটা ইংরেজি মিডিয়ামের ছেলেমেয়েদের থেকে বিদ্যা বুদ্ধি তো বটেই বাংলা চর্চ্চার দিক থেকেও এগিয়ে। তবে সবাই না, কেউ কেউ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আলোচনা অনেক পথ এগিয়েছে। নিজের দুটো কথা রেখে যাই:
দেশ প্রেমের জন্য শিক্ষার-মাধ্যম কতো বড় পরিমাপক সেটা জানতে ইচ্ছে করছে খুব।
'বিদেশে চলে যাবো'/'এদেশে কী হবে?' এ জাতীয় স্বপ্নগুলোর দায়ভার এককভাবে ইংরেজী মাধ্যমের ছাত্রদের ওপর চাপানোর পক্ষে আমি নই।

'ভাষা শেখা'/'ভাষায় শেখা' নিয়ে আগে কোনও এক পোস্টে আলাপ হয়েছিল। তাই সে প্রসংগে যাচ্ছি না। উভয় পক্ষেই মেধাবী, কম মেধাবী, সাদামাটা এবং 'নামকাওয়াস্তেছাত্র'র মিশ্রণ আছে।

যারা এক নি:শ্বাসে বলে ফেলেন - ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলেরা দেশে থাকতে চায় না, থাকবে না; তাদের বলি - বাইরে ছুটে যাবার এ প্রবণতা শিক্ষা মাধ্যম ভিত্তিতে দেখবেন না, প্লিজ। বিদেশে ছাত্র পাঠানোর সেন্টারগুলোয় গেলেই দেখা যায় বাংলা মিডিয়ামের কমতি নেই। টোফেল/আইইএলটিএস আর ইমিগ্রেশনের পয়েন্ট আঙুলের কড়ে গুনে কোন স্বপ্নের টানে তারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আলাপ হতে পারে, তবে দেশপ্রেম পরিমাপে শিক্ষা মাধ্যমের ঘাঁড়ে দায় চাপালে - ভেবে দেখতে হবে, বাংলা মাধ্যমে প্রতিদিন সকালে স্কুলের এসেমব্লীতে দাঁড়িয়ে "আমি শপথ করিতেছি যে, দেশের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়েজিত রাখিবো" শপথগুলো শেষতক কতটুকু টিকে থাকছে?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।