ভাল লেখা আসলে-যাকে বলে-খানিকটা বিটকেলে গন্ধের মত। সুগন্ধর আবেদন খুব বেশিক্ষণ থাকে না, নাকে হয়তো রয়ে যায় বেশ কিছু সময়, কিন্তু মাথা থেকে দুরে সরে যেতে সময় নেয় না একটুও। গোলাপ বা রজনীগন্ধা শুঁকলে পরে খানিক পরেই ভুলে যাই, তুলনায় খানিক...ভাল লেখা আসলে-যাকে বলে-খানিকটা বিটকেলে গন্ধের মত। সুগন্ধর আবেদন খুব বেশিক্ষণ থাকে না, নাকে হয়তো রয়ে যায় বেশ কিছু সময়, কিন্তু মাথা থেকে দুরে সরে যেতে সময় নেয় না একটুও। গোলাপ বা রজনীগন্ধা শুঁকলে পরে খানিক পরেই ভুলে যাই, তুলনায় খানিকটা পেট্রোল পোড়া গন্ধ, অথবা সদ্য জ্বালানো দিয়াশলাই কাঠি বা না জ্বালানো বারুদ- এই সব অদ্ভুত কিসিমের গন্ধই মাথায় রয়ে যায় অনেকক্ষণ। ধুপ বা ধুনোর ধোঁয়ার মত মাথায় ঘুরতে থাকে, চুলের গোড়া ঘিরে ঘিরে থাকে।
ক'দিন, বেশ ক'দিন ধরেই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসে ডুবে আছি। পড়তে পড়তে অদ্ভুত সব অনুভুতি হয়, মনে ও মাথায়। দরজা জানালা আটকে লুকিয়ে গাঁজা টানার মত একটা নিষিদ্ধ উত্তাপে ভরা আনন্দ লাগে, যতক্ষণ ইলিয়াস পড়তে থাকি। একদম প্রথম গাঁজা খাবার দিনটার কথা মনে আছে বেশ। নাখালপাড়ার রেললাইনের পাশের কোন একটা ঝুপড়ি ঘর থেকে কিনে এনে ওখানকারই কোন একটা দালানের একটা ঘরে আমি আর আমার প্রতাপশালী গাঁজাখোর বন্ধু যখন আমার ডেব্যু করছিলাম, আমি শুরুতেই বেশ কিছু লম্বা টান দিয়ে ফেলেছিলাম। আর বারে বারেই বলছিলাম, দেখিস, ওসব নেশা টেশা আমার হবে না। তারপর ক্রমশ টান দেবার ঘনত্ব বেড়ে বেড়ে যায়। আমি কথা বলতেই থাকি বলতেই থাকি, আমার কথা বলার নেশা পেয়ে বসে, আমার বন্ধু হাসতে থাকে আমার কান্ড দেখে, আমি টান দিয়ে চলি, আর রেগে উঠি তার ওপর। বিশ্বাস হয় না তোর, সত্যিই দেখ আমার কিছুই হয় নি, তারপর আমার কথা বলা আরও বেড়ে যায়, আমার নেশা হয় নি, প্রমাণস্বরূপ নিউটনের তিনটা সুত্রই আমি এক এক করে আউড়ে যাই, প্রথমে বাংলায় আর তারপরে ইংরেজিতে, নির্ভুলভাবে। আমার বন্ধু তবু হাসে, আমি ক্ষেপে উঠি, হাতে কাগজ কলম নিয়ে তেড়ে গিয়ে ওকে সুত্রের প্রমাণ বোঝাতে যাই, কিন্তু আমার হাত টলে যায়, আমি কথা বলতেই থাকি, একসময় মেঝেতে বিছানো তোষকের ভেতরে ডুবে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুমিয়ে পড়তে পড়তে পড়তে পড়তে হয়ত আমি সুত্র গুলিয়ে ফেলি।
ইলিয়াস পড়ার সময় এরকম টলটলে একটা অনুভূতি হয় মনে। এরকম গদ্যের আলাদা একটা বিটকেলে গন্ধ আছে, খুব গভীর মনে পড়লে বইয়ের হরফ থেকে ছেলেবেলার সমান দুরত্ব পেরিয়ে সেই গন্ধ চোখের সামনে মায়াবতী কোন পর্দা দুলিয়ে দেয়।
আবার একটানা পড়ে গেলে মনের ভেতরে চাপও পড়ে বেশ। অসময়ে জ্বরে পড়লে যখন মা জোর করে গায়ের উপর ভারী কোন কাঁথা চাপিয়ে দিতেন, ঠিক সেরকম একটা চাপ। একেকটা গল্পের একেকটা লাইন পেরিয়ে গেলে, সীমান্তজয়ী বীরের মতন আনন্দে বুকটা ভরে ভরে ওঠে।
কোন কোন সময় থাকতো, যখন এই ঘোর লাগা জ্বরকেই বড় বেশি আপন মনে হতো, ইচ্ছে হতো, এরকম ঘোর নিয়েই কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকি দিনের পর দিন। কোন কোন মাথাব্যথা ভাল লেগে যায়, ঠিক ইলিয়াসের গল্পেরই মতন।
যখন মাঝে মাঝে বুড়ো মানুষের মতন ভাবি, জীবনের স্বার্থকতা কিসে? রোমান সাম্রাজ্যের পুরোটা জিতে নেয়া, অথবা গোঁয়ারের মতন একটা পতাকা গেঁড়ে দেয়া হিমালয়ের চূড়ায়?জানি না।
শুধু প্রার্থনা এই, হে প্রভু, যদি অনাবাদী দুঃখে মরে না যাই, তাহলে ইলিয়াসের ভাষার মত বলশালী এরকম ২৩ টি গল্প যেন আমি লিখে যেতে পারি।
মন্তব্য
আপনার এ লেখা যদি তিনি পড়তেন, তাহলে বগুড়ার ভাই পাগলা মাজার গোরস্থান থেকে অট্টহাসি দিয়ে বেরিয়ে দেড়খানা পা নিয়ে দৌড়ে এসে আপনাকে ঝাড়তেন, 'ছোকরা, পাকনা হয়েছ। আমাকে নিয়ে লেখার কী হল?'
আর আমাকে যদি অনুমতি দেন তো বলি,
ইলিয়াসের আস্বাদন এরকমই। মিষ্টি নয়, মায়াবি নয়, দোলা দেয় না_ঝাঁকায়। সেই তিখা স্বরের লোকটাই কিনা আবার লিখল খোয়াবনামা! বগুড়ার সীমান্তের যমুনার মতোই অথৈ, ঘোলা ও ঘূর্ণিপাকের নীচে শান্ত এক মায়ার সমুদ্র যেন তা। ইলিয়াস আমাদের সাহিত্যের এক বিরাট কুলপতি। নতুন এক ঐতিহ্য তিনি সৃষ্টি করেছেন, যাকে হয়তো আমাদের আমলে নিতেই হবে।
আপনার লেখাটায় ওস্তাদি আছে।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ঠিক তাই। আমি তাজ্জব হয়ে এক লেখা হাজারবার করে পড়তেছি, তবু তাজ্জব হওয়া থামে না!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফুর গদ্য নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না। বরাবরের মতই ভাললাগাটুকু জানিয়ে গেলাম। শুরুটুকু সেইরকম!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
দস্যু বীরাপ্পনের সাট্টিফিকেট শিরোধার্য।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আমিও তাই করলাম!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
দুর্দান্ত লেখা। উপমাগুলো কাঁপানিয়া।
কমেন্টও বেশ কাঁপানিয়াই দিলেন। ধন্যবাদ।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফুসিয়াস - 'সেরকম' ২৮ টা লেখার ক্ষমতা আপনার আছে, যেটা সবার থাকে না - এখন লিখলেই হয়ে যায়......
আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
তবে শুরু হোক। বিষু্যদবার রাতেই রচিত হোক দুটি। তারপর সাতাশ সপ্তাহ মাত্র। মানুষের আশা বৃথা যায় না। স্বপ্নটাকে কেবল ধরে রাখতে হবে শক্ত করে। শুভ কামনায়।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
খুব ভাল লাগল। অবশ্যই লিখবেন।
(এখানে আমার আছে একটাই - চিলেকোঠার সেপাই)
ধন্যবাদ।
( সেপাই- আমার কাছে নেই। গল্পগুলো আছে। মাউন্ট ওয়েভারলির লাইব্রেরিতে বাংলা বই রাখে। আগে যাওয়া হতো, এখন ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। )
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
- গাঞ্জাও তাইলে খাইছেন? তা এখন খান না?
লেখা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। ফারুক ভাই বলে গেছেন আগে। আমি বললে একই কথা আউরে যাওয়া হবে।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এমনে জিগান ক্যান বস, মাদক নিয়ন্ত্রণের কারো সাথে লাইন ঘাট আছে নিহি?
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
- বস, লাইনঘাট আমার নাই, আপনের বাড়িতেই আছে!
মওলানা সাব কয়, মেম্বার সাবের লাহান চেলাকাঠের নিয়ন্ত্রণ নাকি আপনাকেও লাইনে নিয়াশছে। এই বক্তব্য নাকি আবার হিরোশিমার দেশ হৈতেও সত্যায়িত হৈয়া আসছে।
আল্লায় বাঁচাইছে, আপনার শালীর লগে আমার কিছু হয় নাই। তাইলে আমার গাঞ্জাপ্রেমও পটল তুইলা ফেলতো গো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এক।
মন্তব্য লিখতেই সাইন ইন করলাম কিন্তু সবার মন্তব্য দেখে ভয় পাচ্ছি কি বলতে কি বলে ফেলি
তয় গদ্য দুর্দান্ত হইছে
এ কথা কইতে পারি
দুই।
২৮ খানা গল্প , ২ খানা উপন্যাস আর ১ খানা প্রবন্ধ সংকলনগ্রন্থ এই লিখেছেন ইলিয়াস
এত কম কেন লিখলেন
এ ব্যাপারে ফারুক সঠিক বলতে পারবে
কমল কুমার মজুমদারের মত (আমার ১২ জন পাঠক চাই ) তিনি গো ধরে ছিলেন কিনা জানি না তবে তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক হবার খায়েশে বা নিছ্ক সাহিত্যিক শখে তিনি লিখেন নি বলেই আমার মনে হয়।
তিন ।
সবার সাথে একমত হয়ে কনফু কে অনুরোধ করছি ঝটপট লিখে ফেলুন আমরাও আরেকজন শক্তিশালী ইলিয়াসীয় কথা সাহিত্যিক পাই
সাহিত্যের বন্ধাত্ম কিছুটা ঘুচুক ।
চার ।
ফারুকের সাথে একমত "ইলিয়াস আমাদের সাহিত্যের এক বিরাট কুলপতি। নতুন এক ঐতিহ্য তিনি সৃষ্টি করেছেন, যাকে হয়তো আমাদের আমলে নিতেই হবে।"
পাঁচ ।
আপনার গদ্য এর মুন্সিয়ানা আর কাব্যময়তা আমাকে বাধ্য করেছে কয়েকবার পড়তে এই ব্লগটি ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
যখন সময় ছিল তখন পয়সা ছিল না। চুরি-দারী করে পড়তে হতো। সেভাবে চিলেকোঠার সেপাই পড়েছিলাম। অনেক বছর পর দুধে ভাতে উৎপাত পড়লাম।
আপনার মত এমন করে সে অনুভূতি প্রকাশের ক্ষমতা আমার নেই। তবে একটা ঘোরের মধ্যে পড়ার সময়টা কাঁটে। পড়ে মনে হয় যদি শেষ না হতো!
অসাধারণ!
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
ইলিয়াসরে নিয়া বলার মত কোন তাকতই নাই আমার। আমি কনফুর কথা বলি, অসাধারণ হইছে। দারুণ।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কলেজ লাইফে খোয়াবনামা পড়ছিলাম। একটু পড়ে থামি, হজম করি, আবার পড়ি। কিন্তু ঘোর আর কাটেনা। আবার একদম যে না পড়ে থাকবো তাও পারিনা। যে এই উপন্যাস পড়েছে সে হয়তো বুঝবে আমার অবস্থা।
সেই থেকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর প্রতি মাথা নত করে আছি। আজীবন থাকবো।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
আমারও সেইম কথা, কুংফু ভাই
( ভালো কথা মনে করায়ে দিছেন। আমার খোয়াবনামা (মানে আমার কেনা!) কে জানি নিয়া গেছিলো আর তো ফেরত দিলো না! কে জানি নিল? #-o )
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এককথায় চমৎকার লেখা !
অবশ্যই আপনার ইচ্ছেকে সহমত জানাচ্ছি। আপনার সে ক্ষমতা আছে, এটা আমি বিশ্বাস করি।
এবং ফলবান সুখে যেন আমরা আপনার সে লেখাগুলো উপভোগ করে যেতে পারি সেই ঐকান্তিক আশা ও শুভকামনা রাখছি।
ধন্যবাদ কনফুসিয়াস আপনাকে।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
সবার মন্তব্য পড়ে সত্যিই খুব ভাল লাগলো।
শুভকামনার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাদের।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
অসাধারণ হয়েছে।পড়তে পড়তে আমিও মনেহয় নেশায় ডুবে যাচ্ছিলাম কিনা জানিনা ! বানান ভুল-ভাল করলে ক্ষমা করে দেবেন।আপনার জন্য আন্তরিক শুভকামনা।
নতুন মন্তব্য করুন