আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা ০১

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: শনি, ০৪/১০/২০০৮ - ১০:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের বারোটি ছোটগল্প নিয়ে একটা সংকলন, ইংরেজি নাম স্ট্রেইন্জ পিলগ্রিমস
পিলগ্রিমসের দুইটা মানে করা যায়। এক হলো পর্যটক, বা অভিযাত্রীও বলা যায়। অন্যটা হলো তীর্থযাত্রী। আমি ভাবছিলাম, এই বইয়ের বাংলানুবাদ কেউ যদি করতে চায়, কোন মানেটা বেছে নেবে?
ঠিক এই নামে বইয়ে কোন গল্প থাকলে খানিকটা সুবিধা হতো। তখন গল্পের গল্প বা ভাবগতিক দেখে বুঝে নেয়া যেত, অভিযাত্রা নাকি তীর্থযাত্রা, কোনটা আসল উদ্দেশ্য।

আমি অবশ্য ভেবে নিলাম, তীর্থযাত্রা-ই ভাল শোনাবে। কল্পনাটা এরকম যে, গল্পগুলো নানান চরিত্র, তাদের বর্ণনা এবং এইসব বিবরণের প্রয়োজনে একগাদা বাক্যের সমষ্টি- এই পুরো ব্যাপারটা শেষ-মেষ যেখানে যেতে চাইছে, সেটা হলো- একটা গল্প হয়ে ওঠা। অনেকটা তীর্থ-দর্শনের প্রতিজ্ঞা নিয়েই যেন গল্পগুলোর এগিয়ে যাওয়া। এইরকম ভাবনা মাথায় এনে আমি নিজের মনেই রায় দিলাম- স্ট্রেইন্জ পিলগ্রিমসের ঠিকঠাক বাংলা করতে বললে, আমি এটাই বলবো- আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা

বইয়ের গল্পগুলো পড়তে গিয়ে ভাল-মন্দ দুইই লাগছিলো। তবে সে সব নিয়ে আলাপ করা আমার উদ্দেশ্য নয় এখন। ঘটনা হলো, বইয়ের শুরুতে লেখক কর্তৃক লিখিত ভূমিকাটুকু পড়ে চমৎকার লেগেছিলো, এবং পড়তে পড়তেই ভাবছিলাম এটাকে বাংলা করে ফেললে কেমন হয়?

কেমন যে হয়, সেটা আসলেই চিন্তার বিষয়। অনুবাদ কখনো করিনি, অবশ্যই ইশকুলের ব্যাকরণ পরীক্ষার খাতা বাদে। আর, মার্কেজের লেখা বা এ জাতীয় ভাবগম্ভীর লেখা-পত্র নিয়ে এই দুঃসাহস দেখাতে গেলে আমার অল্পবিদ্যা ফাঁস হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে। পিস অব কেইক-কে আমি সত্যিই পিঠার টুকরো লিখে বসতে পারি। এইসব ভেবে টেবে বুঝে নিলাম, অনুবাদ আসলে আমাকে দিয়ে হবে না মনে হয়, যেটা হবে, তা হলো, এই যে পড়লাম, এই পড়া নিয়েই খানিক্ষণ বসে বসে গ্যাজানো আর কি!

যা বলছিলাম, এই বইটির মোট বারোটি গল্পের অন্তত তিনটি আমার কাছে চমৎকার লেগেছে, দুইটি একেবারেই ভাল লাগেনি আর বাকি সাতটি মোটামুটি। এইরকম নানান স্বাদ পাবার পেছনের কারণগুলি নিয়ে লিখতে পারলে খুব ভাল হতো, আলস্য কাটিয়ে কখনো যদি সময় পাই, লিখে ফেলবো বলে আশা করি, তবে আপাতত সেই প্রসংগ থাক, ভূমিকায় ফিরে আসি।

লেখক ভূমিকারও একটা শিরোনাম দিয়েছেন, এবং সেটাও বেশ কৌতুহলদ্দীপক। শিরোনাম হলো- কেন বারোটি, কেন গল্প, আর কেনই বা তীর্থযাত্রী?
এই শিরোনাম নিয়ে ভাবতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়লাম। সম্ভবত এই প্রথম আবিষ্কার করলাম, বাংলা আর ইংরেজি এই দুই ভিন্ন ভাষায় বহুবচনের আচরণ বেশ আলাদা। ঠিকঠাক অর্থ বুঝে নেয়া যায়, কিন্তু লিখতে গেলে বেশ ভাবনায় ফেলে দেয়। যেমন - গল্পের বইয়ের নাম আমি "আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা" ভেবে নিয়েছি, পিলগ্রিমস এর বঙ্গানুবাদ হিসেবে, কিন্তু ভূমিকার শিরোনামে ওই একই পিলগ্রিমস-এর বিপরীতে তীর্থযাত্রীরা লিখতে মনে সায় দিলো না। এখানে মনে হলো, বহুবচনের বদলে একবচন ব্যবহার করাই ভাল হবে। তাই ঠিক করলাম, শিরোনামের বাংলা এভাবেই পড়বো- কেন বারোটি, কেন গল্প, কেনই বা তীর্থযাত্রী?

ভূমিকার শুরুতে লেখক সরল কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের রীতি অনুযায়ী ব্যাপারটা কি এরকম "নামকরণের স্বার্থকতা" জাতীয় কিছু দাঁড়ায়? হয়তোবা। শুরুটুকু এরকম-

এই বইয়ের বারোটি গল্প লেখা হয়েছে গত আঠারো বছর ধরে। বর্তমান অবস্থায় পৌঁছবার আগে এদের পাঁচটি ছিলো জার্নালিস্টিক নোট ও চিত্রনাট্য, এবং একটি ছিলো টেলিভিশনের ধারাবাহিক। বছর পনের আগে একটি সাক্ষাৎকার রেকর্ডের সময় আমি আরেকটি গল্পের বর্ণনা দিয়েছিলাম, পরে যেটি আমার বন্ধু অনুলিখন করে ছাপিয়েছিলো, এবং এবারে আমি সেটিকে তার বর্ণনা অনুসারেই পুনর্লিখন করেছি। এই পুরো প্রক্রিয়াটাই আমার জন্যে একটা আশ্চর্য সৃজনশীল অভিজ্ঞতা, যেটা ব্যাখ্যা করা দরকার। দরকার একারণেই যে, আজকের শিশু-কিশোররা যারা লেখক হতে চায়, তারা বড় হয়ে জানতে পারবে লেখার অভ্যাসে কতখানি অতৃপ্তি ভর করে থাকে আর কতখানি ঘষা-মাজার প্রয়োজন হয় তাতে।

এইটুকু পর্যন্ত বাংলা করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার সীমালংঘন করে ফেললাম। মার্কেজ প্রায়শই দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করেন, গল্পেতো বটেই, এমনকি ভূমিকাতেও তার ব্যাতিক্রম নয়। সেই দীর্ঘ বাক্যের সঠিক অনুভুতি বাংলায় আনতে গিয়ে আমি একটা বাক্যের মাঝখানে একটা দাড়ি বসিয়েছি, এবং ইংরেজিতে যেখানে পাশাপাশি দুটি শব্দ বসিয়েই একটা বিষয়কে বর্ননা করা হয়েছে, আমি সেখানে আলাদা ভাবে দুটি শব্দের তরজমা করে একটা দীর্ঘ বাক্যে রূপান্তর ঘটিয়েছি। এইরকম রকম কারিগরি অনুবাদে জায়েজ আছে কিনা কে জানে। যাকগে, আরেকটু এগুই, দেখা যাক কি হয়।

প্রথম গল্পটির পরিকল্পনা আমার মাথায় আসে সত্তরের দশকের শুরুতে, একটা প্রদীপ্ত স্বপ্নের ফলাফল হিসেবে, যেটি আমি দেখেছিলাম বার্সেলোনায় পাঁচ বছর থাকার পর।

এই লাইন নিয়ে একটু গোলমালে পড়েছিলাম। প্রথমবার পড়ছিলাম এভাবে যে, গল্পের পরিকল্পনা মাথায় আসে বার্সেলোনায় পাঁচ বছর থাকার পর একটা স্বপ্নের ফল হিসেবে। কিন্তু এভাবে পড়তে গিয়ে দেখি, গল্প আর স্বপ্নের মধ্যবর্তী দুরত্ব অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে, যেটা ভাবটাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তখন এদের দুরত্ব কমিয়ে আনলাম, একটার বদলে দুটি কমা দিলাম, এবং এইবার এই বাক্যের চেহারা আমার বেশ পছন্দ হলো।

আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম যে আমি আমার নিজের শেষকৃত্যে অংশ নিচ্ছি, গম্ভীর শোকাবহের পোষাকে বন্ধুদের সাথে হেঁটে বেড়াচ্ছি কিন্তু খানিকটা যেন উৎসবের মেজাজে। একত্র হতে পেরে আমাদের সবাইকেই খুব খুশী দেখাচ্ছিলো। এবং অন্য যে কারো চেয়ে বেশী খুশী ছিলাম আমিই, কারণ মৃত্যু আমাকে আমার ল্যাটিন আমেরিকার বন্ধুদের সাথে মিলিত হবার সুযোগ করে দিয়েছিলো, আমার সবচেয়ে পুরনো আর সবচেয়ে ভালো বন্ধুরা, যাদের আমি বহুদিন ধরে দেখি না। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে সবাই যখন বিদায় নিচ্ছিলো, আমিও চলে যেতে উদ্যত হলাম, কিন্তু তখন তাদের একজন আমাকে চূড়ান্তভাবে বুঝিয়ে দিলো যে আমার আনন্দ-অনুষ্ঠান ওখানেই শেষ। সে আমাকে বললো, " তুমিই একমাত্র ব্যক্তি যে এখান থেকে যেতে পারবে না।" আর কেবল তখুনি আমি বুঝতে পারলাম যে মরে যাওয়া মানে আর কখনোই বন্ধুদের সাথে একত্র হতে না পারা।

এই প্যারাটা বেশ তরতরিয়ে এগুলো দেখা যাচ্ছে, যদিও এবারই প্রথম আমি কমা দেবার পরিবর্তে মূল লাইন থেকে একটা কমা তুলে দিয়েছি। এবং এবারই প্রথম আমার খানিকটা সন্দেহ হলো, আমি কি এই লেখাটার অর্থ ঠিকঠাক ধরতে পারছি?

(ক্রমশঃ )


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

তাহলে এটা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন? গল্পগুলোও অনুবাদ করে ফেলেন। খুব ভাল হবে তাহলে। শুভকামনা থাকল। আর কাজটাতে যে হাত দিছেন, তাতে সাধুবাদ চলুক

বইটা পড়ব অবশ্যই। বুঝতেই পারতেছেন এর পরের প্রশ্নটা কি করতে যাচ্ছি! চোখ টিপি

কনফুসিয়াস এর ছবি

না বস, ব্যস্ত ছিলাম যেটা নিয়ে সেটা আর হয়ে উঠলো না। এটা আজই হুট করে শুরু করা।
গল্প অনুবাদে যাবো না। শুধু এই ভূমিকাটুকু করবো আপাতত। কারণ-

আজকের শিশু-কিশোররা যারা লেখক হতে চায়, তারা বড় হয়ে জানতে পারবে লেখার অভ্যাসে কতখানি অতৃপ্তি ভর করে থাকে আর কতখানি ঘষা-মাজার প্রয়োজন হয় তাতে।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সবজান্তা এর ছবি

কনফু ভাই, ধুন ফুন বাদ। আগে গল্প অনুবাদ করেন, বাকি কথা পরে।

তবে এটুকু পড়ে মজা পাইছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

কনফুসিয়াস এর ছবি

না রে ভাই, গল্প অনুবাদের ইচ্ছা নাই, অন্তত এখুনি। মন খারাপ
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ফারুক হাসান এর ছবি

লেখাটি আপনার ব্লগে আজকেই পড়লাম, এখন আবার সচলায়তনে এসে। এরকম লেখা সচলে আশা করছিলাম অনেকদিন ধরে। অনুবাদ করতে গিয়ে দুটি ভাষার মধ্যেকার সংবেদনশীল ঝিল্লিকে দোলা দিয়ে যাওয়ার প্রতিটি ডিটেইল তুলে ধরতে আপনি যে কষ্ট করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা।
আর অনুবাদ (যেটুকুই দিয়েছেন) চলুক

কনফুসিয়াস এর ছবি

হু, এটা আমার জন্যেও মজার একটা অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। অনুবাদটা তেমন একটা সুবিধার হয় নাই মনে হচ্ছে, আমি অবশ্য বার বার পড়ে অনেক বদলাচ্ছি। ফাইনালটা একবারে কোথাও তুলে দেবো।
কষ্ট করে পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। হাসি
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এর স্পেনীয় নাম

Doce Cuentos Pregrinos

সন্দেশ এইটার একটা বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করছে। পাওয়া যায় ঢাকার বাজারে। আজীজে। অনুবাদ করছে আলী আহমদ।

বাংলায় তিনি বইয়ের নাম রাখছেন 'বারো অভিযাত্রীর কাহিনী'। তার নিজের ভাষ্যে-

'আমরা অনুবাদে ইংরেজির অনুকরণ না করে মূলের কাছাকাছি বারো অভিযাত্রীর কাহিনী নামকরণ করেছি।'

আর মুখবন্ধ'র শীরোনাম অনুবাদে আসছে-

'কেন বারো, কেন কাহিনী, কেন অভিযাত্রী'।

আমার কাছে তীর্থযাত্রীর চেয়ে অভিযাত্রীটাই ভালো লাগছে।

আপনে অনুবাদ নিয়া বেশ খাটতেছেন এবং ভাবতেছেন মনে হইলো। চালায়া যান। আপনার অনুবাদ পড়ার আগ্রহ রইলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কনফুসিয়াস এর ছবি

নজরুল ভাই,
খাটতেছি আর ভাবতেছি। কিন্তু সুবিধা করতে পারতেছি না।
আলী আহমেদের অনুবাদ অলরেডি আছে শুনে মাথার মধ্যকার অলস শয়তানটা জেগে গেলো, ভাবতেছে বাকিটুকু না করলেই তো হয়! হাসি

তবে, বারো অভিযাত্রীর কাহিনি নামটা পছন্দ হয় নাই। অভিযাত্রী ঠিকাছে, এটায় আপত্তি নাই, কিন্তু স্ট্রেইন্জ শব্দটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা যায় কি না এই নিয়ে দ্বিধায় আছি।
অবশ্য মূল স্প্যানিশের খবর জানি না। মন খারাপ

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

বিপ্লব রহমান এর ছবি

কনফুদা,

পছন্দসই গল্পগুলোর ভাবানুবাদ শুরু করে দিন না প্লিজ।

সেই কোন আমলে পড়েছিলাম মার্কেসের 'ভালোবেসো একশ বছর'। সেই থেকে আমি তাকে খুঁজে ফিরছি!...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

কনফুসিয়াস এর ছবি

বিপ্লবদা,
বেশ সময়সাপেক্ষ কাজ। আপাতত ইচ্ছে নেই। আর ভবিষ্যতের কথা জানি না।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

খেকশিয়াল এর ছবি

কনফুদা শুরু করেন

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

কনফুসিয়াস এর ছবি

আপনে রেডি-স্টার্ট-গো না বললে তো পারছি না!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

পলাশ দত্ত এর ছবি

ভূমিকাটা পুরোটা কবে নাগাদ হবে?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

কনফুসিয়াস এর ছবি

চারভাগের তিনভাগ হয়ে গেছে প্রায়। সব মিলিয়ে বেশিদিন লাগার কথা না, যদি না এর মাঝে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

মুজিব মেহদী এর ছবি

চমৎকার পোস্ট। অনুবাদ কেমন হয়েছে তা মূল না পড়েও বলে দেয়া যায় ব্যবহৃত শব্দাদির যোগাযোগসক্ষমতা দেখে। আপনি যোগাযোগে সক্ষম হয়েছেন, অতএব বলা চলে আপনার অনুবাদ ভালো হয়েছে। সবচে ভালো হয়েছে, অনুবাদ চলাকালীন আপনার দোটানার সদ্বর্ণনাটি।

লেখালেখিতে শিশু আমার যে পরিমাণ কাটাঘষামাজা লাগে একটা লেখাকে ঠিকঠাক দাঁড় করাতে তা অস্বাভাবিক প্রায়। এমনকি বইয়ের লেখাও পরে ছাপার সময় বদলে যায়, বদলাতে বাধ্য হই, নইলে স্বস্তি লাগে না। একটা লেখার খসড়া হবার পর সেটাতে কাজ চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। যখন দেখা যায় যে, লেখাটি মাজায় কিছু শক্তি ধারণ করেছে তখন হয়ত প্রকাশের চিন্তা। আর প্রকাশ হলেও রেহাই নেই, পুনর্প্রকাশে পুনরায় বদল। অবশ্য কোনো কোনো লেখা লিখবার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই চূড়ান্ত মনে হয়।

এই স্বভাবের কারণে কিছু লেখার খসড়া অবস্থা আর কোনোকালেই ঘুচে না। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ পর্যন্ত অজস্র খসড়ার সঙ্গে আমি বসবাস করে চলেছি। এসব খসড়ার ভিড়েই একদিন দমবন্ধ হয়ে আমাকে মরতে হবে ভাবি। এই অবস্থায় যখন মার্কেজের এই ভূমিকাংশ পড়ি, তখন শিরদাঁড়ায় বল পাওয়া যায়।
আজকের শিশু-কিশোররা যারা লেখক হতে চায়, তারা বড় হয়ে জানতে পারবে লেখার অভ্যাসে কতখানি অতৃপ্তি ভর করে থাকে আর কতখানি ঘষা-মাজার প্রয়োজন হয় তাতে।
................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

মুজিব মেহদী এর ছবি

আমার কাছে স্ট্রেইন্জ পিলগ্রিমসকে বাংলায় 'আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা' বলা 'বারো অভিযাত্রীর কাহিনী'র চেয়ে অজস্র গুণ শ্রুতিসার্থক ও মূলানুগ মনে হলো।

................................................................
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার পকেটে আমি আছি যতটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই আমার করুণ ছায়া

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

কনফুসিয়াস এর ছবি

আপনার দারুণ মন্তব্য পড়ে সত্যিই ভীষণ উৎসাহ পেলাম।
শুধু ভূমিকাটুকু লিখবার কারণ এটাই আসলে, আমার ইচ্ছে ছিল সবার সাথে শেয়ার করা।
তবে আমি এই মুহুর্তে দ্বিধাবিভক্ত মন নিয়ে চলছি, একবার ভাবছি মূলের কাছাকাছি থাকি, আরেকবার ভাবছি পুরোপুরি বাংলায়ন করে ফেলি। কোনদিকে যে যাবো এখনো জানি না। শেষমেষ মনে যেটা ভাল লাগে তাই করতে পারি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ আবারো।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মুজিব ভাই যা বললেন, ঠিক তাই বলতে চাইছিলাম । 'আশ্চর্য তীর্থযাত্রীরা' শুনতে ভাল্লাগছে ।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ধন্যবাদ, হাসান ভাই।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

স্বপ্নাহত এর ছবি

সবাই বলতেসে শুরু করেন। আমি কই তাড়াতাড়ি শেষ করেন। অপেক্ষায় থাকলাম।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

কনফুসিয়াস এর ছবি

তুমারে কোন কথা দিতে ডর লাগে, ইতিমধ্যেই বহুৎ কথাখেলাপী হয়ে গেছি। তবু কই, তাড়াতাড়ি শেষ করার চেষ্টা করমু।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

রানা মেহের এর ছবি

দারুন দারুন।
তবে অনুরোধ করবো মূলের কাছাকাছি থাকতে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

কনফুসিয়াস এর ছবি

মূলের কাছাকাছি থাকলে বাংলা বাক্যের গঠন থেকে একটু দুরে যেতে হয় বলে মনে হচ্ছে। আমি আপাতত এক্স-ওয়াই অক্ষে বসিয়ে মাঝামাঝি থাকার চেষ্টার আছি।
পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অমিত আহমেদ এর ছবি

দুর্দান্ত অনুবাদ। লেখাতে কোনো ছেদ পড়েনি একটানা পড়ে যাওয়া গেছে। লেখার মুড বা স্টাইল একই রকম আছে পুরো অনুবাদ জুড়ে। খুব ভালো হচ্ছে। এই ধরণের লেখা আমাদের মতো নয়া লেখকদের পড়া দরকার।

আরেকটা ব্যাপার, যারা লিখতে পারে তারা সাধারণত অনুবাদ করতে চায় না। করলে যে কি দুর্দান্ত জিনিস হতো তার প্রমান এই লেখাটা।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

কনফুসিয়াস এর ছবি

অমিত, অনেক ধন্যবাদ এত প্রশংসার জন্যে। তবে কানে কানে বলি, এইটা বাংলা করতেছি একান্তই নিজের স্বার্থে। লেখাটা বাংলায় নিজের কাছে রাখার ইচ্ছা থেকে।
আরেকটা মজার কথা বলি, মার্কেজের গল্পের খসড়া, নোটখাতা, চৌষট্টিটি গল্প- এগুলা পড়তে গিয়ে আমার সবার প্রথমে আপনার সেই বিখ্যাত নোটবুকটার কথা মনে পড়ে গেছে! হাসি

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

বেশ কিছু ইস্যুতে কথা বলতে হয়।

প্রথমতঃ অনুবাদ। ইংরেজীটা না পড়েও বুঝে যাচ্ছি অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা কমা তুলে দিয়ে কিংবা যোগ করে কিভাবে পাঠকের চোখ মন বা পড়ার গতি সাবলীল করা যায়, সেই চেষ্টা স্পষ্ট। আর এখানেই আমার মুগ্ধতা।

দ্বিতীয়তঃ কনফু নিজের পড়ার 'মেন্টাল ম্যাপিং ' (এইটার বাংলা কী হবে?) সুন্দর করে লেখায় তুলে ধরেছে। বলতে চাচ্ছি, আমি যখন পড়ি তখন ভাবি না, এইটা নিয়ে আমি লিখবো। "পড়তে গিয়ে কী কী ভাবছি এটা নোট করে রাখি" এমনটি কিন্তু হয় না। অথবা ভাবতে গেলে পড়াটা মজা হয় না।

এবং, এই যে কথকী ভঙ্গিতে গল্প নিয়ে গল্প করে যাওয়া, সেটা মার্কেজ নিজের গল্প নিয়ে করেছে, আর কনফু করছে মার্কেজ নিজের গল্প নিয়ে কী বললো সেটা নিয়ে। ব্যাপারটা লিখতে গেলে জটিল হয়ে যাবে বলেই অনুমান করি।

এই জটিলতা একদম টের পেলাম না। তাই লেখাটার ১ম পর্বকেই বলি - দূর্দান্ত!

কনফু, আপনার জন্য দুই প্লেট মক্কা বিরিয়ানী। সাথে সালাদ, বুরহানী ফ্রি।

কনফুসিয়াস এর ছবি

বিরিয়ানী কিন্তু মিস নাই! চাহিবামাত্র দিতে বাধ্য থাকিবেন!

মেন্টাল ম্যাপিং-এর বাংলা হইতে পারে মানসিক গতিপথ, বা মানসিক গতিপ্রকৃতি, বা মনের গতিবিধি ... হা হা হা, অনুবাদ ভাবতে ভাবতে অভ্যাস খারাপ হয়ে গ্যাছে!
আপনার সদয় মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ!

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।