লাঞ্চ আওয়ারের ঠিক আগে আগে অফিসঘরটা ছেলেবেলার ইশকুল হয়ে যায় প্রতিদিন। বাম দিকের দেয়ালে ঝোলানো একটা বুড়োমতন ঘড়ি, দুপুরবেলায় জবুথবু ভঙ্গিতে সে ক্রমশ এগুতে থাকে বারোটা থেকে একটার দিকে। গন্তব্যে পৌঁছে জ্বরগ্রস্ত একটা কাশি দিলে শব্দ হয়- ঢং। এতক্ষণ অধীর আগ্রহে এই শব্দের জন্যেই অপেক্ষা করে ছিলো বেশ ক'জন বয়স্ক মানুষ। ইশকুল বালকদের ক্ষিপ্রতায় তারা সবাই চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়ালো তখন। লাঞ্চে যাবে। একা, স্থির বসে থেকে, তাদের দিকে তাকিয়ে কেবল মনজুরই আনমনে হেসে যায়।
মনজুরের কোন তাড়া নেই, কোনদিনই ছিলো না। এর অন্যতম কারণ বোধহয়, সে কখনোই লাঞ্চের জন্যে টিফিন বাক্স বয়ে নিয়ে আসে না।
অফিসে তাদের ঘরটার পাশেই বারান্দা আকৃতির আরেকটা ছোট ঘর। সেখানে মিনি-ফ্রিজ রাখা একটা। অফিস থেকেই দেয়া। প্রতিদিন সকালে কাজের সময় শুরু হলে- তার ভেতরে লাল-নীল-হলুদ টিফিন বাক্সের দালান দাঁড়িয়ে যায় সপাসপ। কিন্তু সেই দালানে মনজুরের কোন ইট থাকে না। কারণ, তার আসলে কোন টিফিন বাক্সই নেই। সবসময়েই দুপুরবেলা খাওয়ার সময় হলে সোজা গিয়ে অফিসের ক্যান্টিনে বসে খেয়ে নিয়েছে। প্রতিদিনের একই গন্ধওলা খাবার খেতে মাঝে মাঝে অবশ্য বিরক্ত লাগে- তখনও উপায় আছে। রাস্তার উল্টোপাশেই একটা একচালা টিনের পরোটা-ভাজির দোকান। সেখানে ঢুকে পড়ে দুনিয়া ভুলে ইচ্ছেমতন খাওয়া যায় অমৃত স্বাদের পরোটা।
অবশ্য একটা টিফিন বাক্স এতদিনে হয়েও যেতে পারতো তার, রুমা সেদিন ভীষণই জোর করছিলো। বলেছিলো, দরকার হলে বেশি দেবে না, অল্প এই একটুখানি শুধু ভাত, সাথে আরও অল্প ঝোল-তরকারী। মনজুর রাজি হয়নি। টিফিনে সমস্যা নেই তার, যত গন্ডগোল ওই টিফিন বাক্সেই।
ছোটবেলায় ইশকুলে রোজ টিফিন নিয়ে যেত সে। মামী প্রতিদিনি দিয়ে দিতো কিছু না কিছু, মনজুর আর মামাতো বোন শাহানাকে। বাপ-মা মরা ছেলে, আদরের কোথাও যেন কম না হয়, সেদিকে টনটনে দৃষ্টি ছিলো মামীর। কিন্তু ঝামেলা বাঁধালো ইশকুলের উঁচু ক্লাশের তিন চারটে গুণ্ডাটাইপ ছেলেপিলে। একদিন লেইজার পিরিয়ডে আচমকাই ল্যাং মেরে ফেলে দিল তাকে, একদম শুধু শুধু। মনজুর অভিমানী ছিলো, সাধারণত কোন কিছুতেই তেমন ভাবান্তর ঘটতো না তার। তবু সেদিন কী হলো, পড়ে গিয়ে দমে গেলো না সে, হঠাৎই পা ছুঁড়ে মারল ওদের একজনের দিকে। একটু হকচকিয়ে গিয়েছিলো ঠিক, ছেলেগুলো, কিন্তু পরক্ষণেই প্রবল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়লো আবার তার উপর। ওর হাতে ধরে থাকা টিফিন বাক্সটা কেড়ে নিলো একজন। মারামারির এক ফাঁকে ওর মাথায় বাক্সটা দিয়ে মেরে বসলো একটা ছেলে। মনজুরের চারপাশের জগত একটু সময়ের জন্যে নড়ে চড়ে গিয়েছিলো। চোখে অন্ধকার নেমে এসেছিলো তৎক্ষনাৎ। মনজুরের মাথায় রক্ত দেখে ছেলেগুলোও পালিয়ে গিয়েছিলো ছুটে। সপ্তাখানেক বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিলো মনজুরকে সেবার। সেরে উঠে যেদিন প্রথম ইশকুলে গেলো আবার, মামী ভরে দিলেও ব্যাগ খুলে টিফিনের বাক্সটা রেখে এসেছিলো সে। এবং তারপরে আর কখনোই নয়।
'তুমি সব কিছু বড্ড বেশি মনে রাখো।'- সব শুনে হেসেছিলো রুমা।
হ্যাঁ, তা রাখে মনজুর। এই এক দোষ বা গুণ খুব আছে তার। খুব মনে রাখতে পারে সে সবকিছু।
একটা ময়ূরকণ্ঠী রঙের মাউথ অর্গানের কথা খুব মনে পড়ে তার সবসময়। ওটায় ঠোঁট লাগিয়ে পরপর বাজিয়ে চলতো সে আর শাহানা। প্রায় অনন্তকাল ধরে, প্রতিদিন বিকেলে। ওদের বাড়ির সামনের ছোট্ট আমড়া গাছটার কথাও খুব মনে পড়ে, এক দুপুরে আশ্চর্য হয়ে দেখেছিলো- তার গা বেয়ে কেমন তরতর করে নেমে যাচ্ছে একটা ধূসর কাঠবিড়ালী। এখন, প্রায়শই নির্জনে ওর মনে পড়ে শান্ত, স্বচ্ছ আর বাঙ্ময় একজোড়া চোখ, সে চোখ শাহানার।
পাশের টেবিলেই বসে আফসারউদ্দীন। বিয়ে বাড়ির মাংশের হাঁড়ির আকারের বিশাল একটা টাক তার মাথায় জ্বলজ্বল করে। সিলিংএর বিজলি বাতির আলো মাথায় ধরে রেখে ঘোরাফেরা করার আশ্চর্য পারদর্শিতা আছে তার। আফসারউদ্দীন গল্পপ্রিয় মানুষ। অফিসে থাকাকালীন পুরোটা সময় মৌমাছির মত গুনগুন করে এ টেবিলে সে টেবিলে ঘুরতে থাকে, আর রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয় সবার সাথে। আফসারউদ্দীন নাকি একসময় খুব ভাল দৌঁড় ঝাঁপ জানতো। সবই শোনা কথা অবশ্যই, সেও তার মুখেই। কেউ দেখেনি কোনদিন। তারচেয়ে বড় কথা, তাকে দেখলেও এখন সেরকম কিছু আন্দাজ করা মুশকিল। শরীরের মাঝামাঝি মেদ জমে গেছে ভীষণ। আফসারউদ্দীনের প্রবল প্রচেষ্টা থাকে, ঢিলেঢালা শার্ট পরে ভুঁড়ি ঢেকে রাখার, কিন্তু সবসময় সফল হয় না।
আজ লাঞ্চের ঘন্টা বাজতেই চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে আফসারউদ্দীন শরীর মুচড়ে একটা দীর্ঘ আড়মোড়া ভাঙলো। মনজুর আড় চোখে চেয়ে দেখলো, খানিকটা সুযোগ পেয়ে আফসারউদ্দীনের ক্রমবর্ধমান ভুঁড়িটা বেশ তেড়ে ফুঁড়ে উঠছে। সে হেসে ফেললো দেখেই। শরীর সোজা করতে করতেই হাসিটা ধরা পড়ে গেলো আফসারউদ্দীনের চোখে। তার মুখ খানিকটা বিমর্ষ হলো।
কোমর জলে ডুবে সাঁতার কাটার মত হাঁচড়েপাচড়ে হেঁটে এসে আফসারউদ্দীন দাঁড়ালো মনজুরের টেবিলের সামনে। তারপরে প্রতিদিনের অভ্যস্ত স্বরে মনজুরকে বললো, 'চলেন যাই, লাঞ্চ সাইরা আসি।'
মনজুর বললো, যেমন রোজই বলে, 'নাহ, আপনি যান, আমি লাঞ্চ আনিনি।'
আফসারউদ্দীন লম্বা শ্বাস ফেলে। মুখে একটা বেশ বুঝদারের মত ভাব ঝুলিয়ে মাথা ঝাঁকায়, 'ভাইরে, কত বলি একটা বিয়া করেন। বউ না থাকলে লাঞ্চ বাইন্ধা দিবো কেডা?'
মনজুর মনে মনে হাসে। রুমার কথা এখনো জানে না আফসারউদ্দীন। মনজুর বলেনি তাকে। বস্তুত মনজুরের বউয়ের কথা অফিসের কাউকেই এখনো বলে ওঠেনি সে। একটা ঘরোয়া আয়োজন করবে ভেবেছিলো, কিন্তু রুমার তেমন সায় পাওয়া যায়নি তাতে। রুমার কেবলই ভয় লোক জানাতে।
বিয়ে নিয়ে এই যে ফোঁড়ন কাটা আফসারউদ্দীনের, সেটার পেছনের কার্যকারণ নিয়ে শুধু শুধুই মনে মনে কিছুক্ষণ লারেলাপ্পা খেলে মনজুর। হতে পারে, লাঞ্চের ক্ষুদ্র সময়কালীনও আফসারউদ্দীন গল্প করার জন্যে একান্ত মনোযোগী কোন শ্রোতা খোঁজে। সে জন্যেই মনজুরকে একই স্বরে প্রতিদিন এসে সাধাসাধি করে। অথবা, হতে পারে, এর পেছনে দায়ী আসলে আফসারউদ্দীনের বিবাহযোগ্যা প্রায়-সুন্দরী শ্যালিকা। মনজুরের তেমন কোন ইচ্ছে না থাকলেও বহুদিন আগেই এর কথা জানতে হয়েছে। অথবা বলা ভাল, জানতে বাধ্য হয়েছে আফসারউদ্দীনের গল্পের ঠেলায়। সে জেনেছে যে আফসারউদ্দীনের এই প্রায়-সুন্দরী শ্যালিকা আদতে বিশ্ব-সুন্দরীর চেয়ে কম না। স্বভাবে অত্যন্ত লক্ষ্মী, অন্তত আফসারউদ্দীনের নিজের স্ত্রীর মতো ঝগড়াটে নয়। রন্ধন শিল্পে তার দক্ষতা প্রশ্নাতীত, অর্থাৎ পিতৃ-মাতৃহীন মনজুরের জন্যে সবমিলিয়ে একেবারে সোনায় সোহাগা যাকে বলে।
কিন্তু মনজুর কখনোই তেমন করে আগ্রহ দেখায়নি। বেশ ক'মাস আগে কোন একদিন আফসারউদ্দীন সবচেয়ে মরিয়া চেষ্টাটা চালিয়েছিলো। সেদিন অফিসের পরে সিনেমা দেখতে যাবে বলে ওয়েটিং রুমে এসে বসেছিলো তার স্ত্রী ও শ্যালিকা। মনজুরকে ডেকে নিয়ে শ্যালিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো সে। শ্যালিকা অবুঝ নয়, মনজুরের কথা শুনেছে সে আগেই, তার হাসিতে সেরকম একটা ছাপ ছিলো। এবং পরবর্তী দৃষ্টিতে সে বুঝিয়ে দিয়েছিল মনজুরকে তার অপছন্দ হয়নি। যদি ঠিকঠাক সব চলে, তবে হয়তো মনজুরকে বিয়ে করতে সে সাগ্রহে রাজী হয়ে যাবে।
মনজুরের মনে কেন জানি সেরকম কোন ভাবনা আসেনি। বয়েস বাড়ছে আড়ালে আবডালে, মাঝে মাঝে সশব্দেও। ওর একাকীত্বের জীবনে একজন কেউ এলে মন্দ হয় না, একথাও বোঝে সে। কিন্তু আফসারউদ্দীনের শ্যালিকার হরিণী চোখে মনের অজান্তেই খুঁজছিল সে ছলোছলো দিঘীর মত ছায়াওলা চোখের কোন তরুণীকে, যার নাম শাহানা।
বলপয়েন্ট কলমের মুখে টুপি পরাতে পরাতে সে ভাবলো, আফসারউদ্দীনকে আজ বলেই দেবে নাকি রুমার কথা? বেচারা শুধু শুধুই আশা করে আছে, হয়ত মিথ্যে আশায় অপেক্ষায় রেখেছে আর কাউকেও। কিন্তু পরক্ষণেই রুমার ভীত-সন্ত্রস্ত মুখের কথা নজরে এলো তার। কাল রাতেও মনজুরের হাত জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলেছিলো, 'কাউকে এখুনি জানিয়োনা প্লিজ, যদি হারিয়ে ফেলো আমাকে?'
সেরকম একটা ভয়, একটা বিশ্রী আশংকা মনজুরের মনেও ঘুরপাক খায়। শেষ মেষ কাউকে কিছুই জানালো না সে আর।
রুমার পুরো নাম জানতে পেরে খুব মজা পেয়েছিলো মনজুর। সে বলেছিলো, ' সাবিনা ইয়াসমীন? কেন বলো তো?'
' একটু পুরনো, না?' রুমা দুঃখ গলায় জানতে চাইতেই কাছে টেনে নিয়ে মনজুর বললো, ' তা একটু, কিন্তু খুব সুন্দর তো, শিল্পীর নামে নাম।'
রুমা হেসে বললো, 'সেই তো মুশকিল। আব্বা সারাদিন কলেজে পড়িয়ে বাসায় ফিরতো বিকেলে। তারপরে শুরু হত তার রেডিও চালিয়ে গান শোনা। একদম রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত। সেই থেকে তার প্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। তাই আমি জন্মাবার সাথে সাথেই বাবা চোখ বুজে এই নাম রেখে দিলো।'
মনজুর হাহা করে হাসলো কিছুক্ষণ, 'তো, গান শিখেছিলে তুমি?'
'হু তো, শিখেছি অনেক দূর। ছায়ানটে ভর্তি হবারও কথা ছিলো, কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আর হলো না।' ঠোঁট উলটে জানালো রুমা।
মনজুর রুমার এক মাথা চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কেটে দিতে দিতে বললো, 'নাহ, হবে না কেন? অবশ্যই হবে, আমি ভর্তি করিয়ে দেবো তোমাকে ছায়ানটে।'
এ কথা শুনে রুমার সে কি হাসি।
রুমা যখন হাসে, মনজুর দেখতে পায়, সে হাসি মুখের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় তার চোখে, চোখের পাতায় এবং আরও গভীরে। রুমার দিঘীর মত শান্ত চোখে আলোড়ন তুলে জল। সেদিকে তাকিয়ে মনজুরের বুকের ভেতর অন্য কোন বেদনা হু হু করে ওঠে।
মামী জানতো ওদের কথা। যদিও শাহানা অথবা মনজুর কেউ কাউকে মুখ ফুটে বলেনি কিছুই। তবু, না বলেও ওরা জেনে গিয়েছিলো সবই। মামা যেদিন বিলেত ফেরত এক পাত্রের সন্ধান নিয়ে এলো শাহানার জন্যে- মনজুরের মনের ভেতর বিমর্ষ এক তুফান সেদিন হুটোপুটি করে বেড়ালো সারাদিন। ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতাবোধ, এই দুই অনুভূতির মধ্যে তখন চলছে তলোয়ার যুদ্ধ।
মামী কেঁদেছিলো খুব ওদের দুজনের জন্যে। যদিও রগচটা মামাকে কিছু বলার সাহস ছিলো না তার। বিয়ের আগের রাতে শুধু শাহানা এসে হাত ধরে বলেছিলো একবার, 'আমাকে চলে যেতে দেবে এভাবে, আটকাবে না তুমি?'
মনজুর শাহানাকে পারেনি আটকাতে। সেই ব্যর্থ হাতে এখন কোত্থেকে এসে ভর করে অসুরের শক্তি, সেই জোরে রুমাকে আঁকড়ে ধরে রাখে সে বুকের ভেতর।
লাঞ্চের সময় যখন প্রায় ফুরিয়ে এলো, বুড়ো ঘড়িটা সবার অলক্ষ্যে দম নিয়ে আবার পথ চলা শুরু করেছিলো। পরবর্তী গন্তব্যের অর্ধেকে সে যখন পৌঁছে গেছে প্রায়, ঠিক তখুনি টেবিলের উপরে রাখা মোবাইল ফোন শব্দ করে বাজতে শুরু করলো। রুমা নাকি? খানিক দ্রুততায় ফোন হাতে নিয়েই সে দেখতে পেল রুমা নয়, ফোন করেছে বিল্লাল ঘটক। তার মুখটা বিস্বাদ হয়ে গেল মুহুর্তে। হাতের মুঠোয় ক্ষ্যাপা চড়ুইয়ের মত তারস্বরে ডেকে যাচ্ছে মোবাইলটা, ধরবে কি ধরবে না ভাবতে গিয়ে আরও খানিক দেরি করে ফেললো সে। খানিক জিরিয়ে নিয়ে অবশেষে রিসিভ করলো কলটা, মুখের কাছে নিয়ে 'হ্যালো' বলতেই ওপাশ থেকে প্রায় খেঁকিয়ে উঠলো বিল্লাল, 'কাহিনী কী আপনার? য়্যাঁ? আসেন না ক্যান আমার অফিসে?'
মনজুর বিব্রত হয়ে পড়লো সহসাই। ওর মুখে রক্ত ভীড় করে এলো। এক ফাঁকে সে বলে, ' আসবো তো, সময় করে উঠতে পারছি না বলেই তো...'। বিল্লাল কথা শেষ করতে দিলো না। ফোনের ওপাশ দিয়ে মাথা গলিয়ে যেন এপাশে বের হয়ে এসে মনজুরের কানের কাছে চিৎকার করে উঠলো, 'না, আইজ, আইজই আসা লাগবো আপনের। কোন কথা নাই!'
চেঁচামেচি মনজুরের স্বভাবে নেই, সে নিজেও তা খুব ভাল করে জানে। বিল্লালের চিৎকারের জবাব তার কাছে নেই। মনজুর বরং ভাবতে শুরু করে, আজ কি সত্যিই তাহলে সে যাবে বিল্লালের ওখানে? রুমা শুনলে খুশি হবে না। খুশি দূরে থাক বরং ভয়ে আধমরা হয়ে যাবে একদম। কিন্তু আজ সম্ভবত নিস্তার নেই কোনমতে। রুমাকে জানানো চলবে না, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো মনজুর। কিন্তু ওর ভয় হলো, রুমা আপনাতেই জেনে যেতে পারে, যেমন করে সব কিছু ইদানিং জেনে যাচ্ছে সে। অফিসের নানান গল্প রাতে বাসায় ফিরে সে যখুনি বলতে যায় রুমাকে, রুমা তার বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে বলে, 'জানি জানি, ওসব বলতে হবে না আমাকে।'
মনজুর খুবই অবাক হয়, 'কেমন করে জানো বলো দেখি?'
রুমা ফিচলে হাসি দেয় তখন, ওর বুকপকেটে চাপড় দিয়ে বলে, 'আমি তো সারাক্ষণ এখানেই থাকি, তোমার বুকের ভেতর, জানো না? আমি সব শুনতে পাই, দেখতে পাই।'
কিন্তু বিল্লালকে আজ মনে হচ্ছে কিছুতেই এড়ানো যাবে না। এই ঘটকের সাথে তার পরিচয় বন্ধু সোহেলের সূত্র ধরে। বছরখানেক আগে সোহেল নিজে বিয়ে করার পরে তার মাথায় ভূত চেপেছিলো বন্ধু বান্ধব সবারই সে বিয়ে দিয়ে ছাড়বে। বন্ধুরা বুঝতে পারছিলো না এটা কি প্রতিহিংসা কি না, এ নিয়ে কথা শুনিয়েছিলো প্রচুর সোহেলকে, কিন্তু সোহেল তাতে দমবার পাত্র নয়। দেখা হলেই পরে কানের কাছে প্রতিবার একই ঘ্যান ঘ্যান, 'বিয়ে করে ফেল একটা, করে ফেল।'
মনজুর অনেকদিন নিরস্ত করেছে তাকে। মাসদুয়েক আগে একদিন কোনভাবেই থামানো গেলো না আর। সে জোর করে মনজুরকে ধরে নিয়ে যায় ঘটক বিল্লালের আস্তানায়।
বিল্লাল প্রথমে মনজুরকে পাত্তাই দিতে চায়নি, ওর বাবা-মা নেই শুনে। বিয়ের বাজারে এরকম পাত্রের নাকি কোন দাম নেই। মেয়ের মা-বাবা চায় ছোট পরিবারে যাক তাদের মেয়ে, কিন্তু কোন এতিমের কাছে বিয়ে দিতে আগ্রহী নয় কেউই। বাবা-মা বেঁচে থাকলে অন্তত আদরে থাকে মেয়ে। সুতরাং বিল্লাল ঘোষণা দিয়ে দিলো, মনজুরের কোন আশা নেই।
মনজুর চুপ করেই ছিলো শুরু থেকে। কিন্তু সোহেল নাছোড়বান্দা। মনজুরের মোটামুটি ভালো বেতনের চাকরিরি দোহাই দিলো সে, এবং ততোধিক ভাল চরিত্রেরও। কিন্তু বিল্লালকে পটানো সহজ হলো না। প্রায় অনেকক্ষণ বাদে যখন সোহেল ক্লান্ত হয়ে এলো, এবং মনজুরের মনে হচ্ছিলো এই সাঙ্ঘাতিক জায়গা থেকে বেরুতে পারলে সে বাঁচে, তখুনি হঠাৎ কী মনে করে ওদের দিকে একটা খাকী রঙের খাম বাড়িয়ে ধরে বিল্লাল, নিতান্ত অবহেলায় ঠেলে দিয়ে ওদের দিকে না তাকিয়েই বলে, 'আইচ্ছা, ঠিকাছে, এই ছবিটা নেন, দেখেন।'
সোহেলই হাত বাড়িয়েছিলো প্রথম, কিন্তু তার আগেই অন্যমনস্ক ভাবে খামটা হাতে নিয়ে নেয় মনজুর। তারপরে ধীরে সুস্থে মুখ খুলে বের করে নিয়ে আসে ভেতরের ছবিটাকে। সে ছবির দিকে তাকিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত স্থানু হয়ে পড়ে মনজুর।
একটা খুব মিষ্টি মেয়ের ছবি উঠে আসে তার হাতে। সে মেয়ের মাথায় মেঘের মত ঘন চুল, আর ছিলো আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মত ক্ষমতাশালী এক জোড়া চোখ, যে চোখ দিঘীর মত গভীর আর শান্ত, যে চোখ শাহানার মতো।
আজ অফিস শেষ হবার ঘন্টাখানেক বাদে মনজুরকে দেখা গেল বিল্লালের অফিসঘরে, তার মুখোমুখি চুপ করে বসে থাকতে।
বিল্লালের বিশ্রি ভঙ্গিতে পান চিবুনোর অভ্যাস আছে। পায়ের কাছে রাখা একটা নোংরা পাত্রে পিক ফেলতে ফেলতে সে বললো, 'ভাই আপনে একটা জিনিস! একটা মেয়ের ফটুক নিয়া গেলেন দুই মাস হইয়া গেলো, একটা কিছু বলবেন না আমারে?'
মনজুর অনভ্যস্ত ভঙ্গিতে হাসে কেবল, কিছু বলে না।
কিন্তু বিল্লাল আজ হাসিতে ভুলবার নয়, ও বললো, 'হাসেন ক্যান? আপনি জানেন মেয়ের বাপ কী করে? সে একজন পুলিশ অফিসার! আমার অফিসে তিনবার আইসা হুমকি দিয়া গেছে তার মেয়ের ছবি ফেরত দেই না দেইখা!'
আচ্ছা, তার মানে রুমার বাবা তাহলে কলেজের শিক্ষক নয়। এইখানে একটু থমকায় মনজুর, তার আন্দাজ তাহলে ঠিক হলো না। অবশ্য একটা মাত্র ছবি থেকে আর কতদূরই বা সে কল্পনা করতে পারে? কিন্তু কে জানে, পুলিশ হলেও, মনজুর যেমনটা ভেবেছিল, ভদ্রলোক হয়তো আসলেই সঙ্গীত অনুরাগী। নইলে মেয়ের নাম সাবিনা ইয়াসমীন রাখবেন কেন? সত্যিকারের রুমাও কি তবে ছায়ানটে ভর্তি হতে চায়, মনজুরের রুমার মতই? কে জানে!
মনজুর গলা খাঁকারি দিল, 'না আসলে, ছবিটা...।'
'আমি কিচ্ছু বুঝি না, ছবি ফেরত দ্যান এখনি। মেয়ের বাবারে আপনার কথা বলছি, সে মোটেও ইন্টারেস্টেড না আপনার ব্যাপারে। বাপ মা কেউ নাই, এমন পোলার সাথে মেয়ে বিয়া দেবে না সে।' বিল্লাল সখেদে বলে চললো।
একটু খানি বুক জ্বালা করে উঠলো মনজুরের। নিজের প্রতি আকস্মিক করুণায় হেসে ফেললো সে। মনজুর জানতো, বুঝেছিলো আগেই যে এমনটাই হবে। তাইতো ছবি নিয়ে ডুব দিয়েছে একদম।
'ছবিটা দিয়া দ্যান, তাছাড়া মেয়ের বিয়াও ঠিক হয়া গেছে, ঐ ছবির আর কোন দরকার নাই আপনার।' বিল্লাল সমাপ্তি টানলো।
একটা নিঃশ্বাস এবারে বেরুবার রাস্তা হারিয়ে ফেলে তার বুকের ভেতরেই। ফুসফুসে হাজিরা দিয়ে সেখানেই আটকে থাকে যেন সেটা। মনজুরের গলার কাছটায় আপেলের টুকরার মত আটকে থাকে এক গুচ্ছ কষ্ট। সে বুঝতে পারে ছেলেবেলার কাঠবিড়ালীটা যেমন করে একবার দেখা দিয়েই হারিয়ে গিয়েছিলো তার কাছ থেকে। অথবা ঠোঁট বদলে ময়ুরকণ্ঠী রঙের মাউথ অর্গান বাজিয়ে দেয়া নেয়া হতো যে বোবা ভালোবাসার, মনজুর বুঝলো আরও একবার কিছু হারিয়ে ফেলার অসহনীয় বেদনার মুখোমুখি হতে হবে তাকে।
কিন্তু অকস্মাৎই বাদ সাধলো রুমা। মনজুর শুনতে পায়, ওর বুকের পাশ থেকে রুমা হঠাৎই ডুকরে কেঁদে ওঠে, ' আমাকে যেতে দিও না ওর কাছে তুমি, প্লিজ, আমাকে আটকাও।'
রুমার কান্না একদম চুলের গোড়া ভিজিয়ে দেয় মনজুরের। সে সম্বিত ফিরে পায় যেন হঠাৎ। বিল্লাল তখন আরেকটা পান গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত। মনজুর হাত বাড়িয়ে বুকপকেটটা ছুঁয়ে দিলো একবার। তারপর গলা পরিষ্কার করে সোজা বিল্লালের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ' ছবি তো আমার কাছে নেই।'
বিল্লাল বিষম খায়, 'নাই মানে?'
মনজুর হাসে, ' নেই মানে নেই, ছবি আমি হারিয়ে ফেলেছি।'
একমুহুর্ত শুধু চুপ মেরে থাকে বিল্লাল, তারপর হড়বড় করে একগাদা কথা বলতে শুরু করে সে। কিন্তু কোন কথাই মনজুরের কান পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। সে আস্তে আস্তে হেলে দুলে উঠে দাঁড়ালো। একবার আড়চোখে বিল্লালের দিকে তাকালো শুধু, বিল্লাল উত্তেজিত ভঙ্গীতে অবিরাম বকেই যাচ্ছে কেবল। পাত্তা না দিয়ে মনজুর সিঁড়ি বেয়ে সোজা নেমে আসে নিচে। আকাশে মেঘ জমেছে বেশ কিছু, মনজুর সেদিকে নির্নিমেষ চেয়ে থাকে কিছুক্ষণ। মেঘ পেরিয়ে গিয়ে আরও কোন সুদূরের ছেলেবেলায় দৃষ্টি পড়ে তার। মনজুর দেখতে পায়, ছেলেবেলার আমড়া গাছটায় গুটিগুটি পায়ে এসে অপেক্ষা করছে একটা ধূসর রঙের কাঠবিড়ালী। বুকপকেটের ভেতর থেকে কে যেন খিলখিল করে হেসে ওঠে। মনজুর দু'আঙুলে তুলে আনে একটা খাকী রঙের খাম। তার ভেতরের ছবিটা বের করে আনতেই সে দেখতে পায় একটা অনিন্দ্য সুন্দর মুখ। যে মুখ ধরে রেখেছে দিঘীর মত শান্ত ও গভীর এক জোড়া চোখ, যে চোখ দুটো আলাদীনের জ্বীনের প্রাসাদের মতই ঐশ্বর্যমণ্ডিত।
ছবিটা উলটে নিয়ে একবার দেখে শুধু মনজুর। গোটা গোটা হরফে সেখানে লেখা, মোসাম্মৎ সাবিনা ইয়াসমীন, তারপর ছোট্ট দু'টো ব্র্যাকেটের ভেতর যত্ন করে লেখা- রুমা।
---------------------
জানুয়ারি ২০১০ (গল্পগ্রন্থ "কাঠের সেনাপতি"র অন্তর্ভুক্ত)
মন্তব্য
ঘড়ির বর্ণনাতেই তবদা খেয়ে গেলাম!
বহুদিন পরে কনফুর একটা নতুন লেখা পড়লাম (আমার জন্য নতুন)।
ঘড়ি পর্যন্তই পড়ছেন, নাকি পুরাটা? ;P
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ভাল লেগেছে। চালিয়ে যান।
ধন্যবাদ।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
খুব ভাল লাগলো কনফুসিয়াস, দারুন লেখেন আপনি।
-----------------------------------
"ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে"
ছুটলে কথা থামায় কে/আজকে ঠেকায় আমায় কে
অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ভালো লাগলো, বর্ণনাটা আরেকটু পরিমিত হলে জমতো; বোধ করি।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
আলোকবাজি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
ধন্যবাদ। বর্ণনা নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলবেন? যেমন কোথায় বাহুল্য মনে হয়েছে বা আর কিছু...।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বর্ণনা মেদবহুল হয় নি, তবে আরেকটু পরিমিত হলে টান টান হতো আরকি। যেমন ধরুন, ঘটকের অফিসে মনজুরের অবস্থানকালীন সময়ে কিছুটা এদিক সেদিক হয়েছে বর্ণনা। ছবির জন্য ঘটকের ধমকানোটা অস্বাভাবিক নয়, তবে ধমকানোর ভঙ্গিটা কৃত্রিম লাগলো। অবশ্য এটা নিতান্ত আমার পাঠ, অন্যরা হয়তো ঠিকভাবেই নিয়েছে।
গল্পটা পড়ে বিস্মিত হয়েছি, অসাধারণ লেগেছে, এররকম গল্প টান টান হলে চমৎকার লাগে।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
আলোকবাজি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
আপাতত তারা দিয়ে ঘুমাইতে গেলাম। সকালে উঠে মন্দিয়ে পড়ে সমালোচনা করে যাব
আচ্ছা, দেখা যাক।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
- অসাধারণ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
থ্যাংক্স ধুগো।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আগেই পড়া, আগেই বলেছি...
আপনার লেখা নিয়ে নতুন করে আর কী বলবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নজ্রুলিস্লাম ভাইয়ের সাথে সহমতাইলাম...
_________________________________________
সেরিওজা
কনফুসিয়াসের লেখা নিয়ে আর কী বলবো? একেবারে দক্ষ বাজীকরের মতন বুঁদ করে রাখে, এমন আশ্চর্য বর্ণনাশক্তি! শব্দগুলো যেন বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে তালে তালে নাচছে!
শুভেচ্ছা হে জন্মসিদ্ধ লেখক।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
গল্পটা পড়া ছিলো, তারপরও আবার পড়লাম...কনফুসিয়াসের গল্প বারবার পড়া যায়।
উদ্ধৃতি
"কনফুসিয়াসের গল্প বারবার পড়া যায়"
পূর্ণ সহমত!
====================================
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
=====================================
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
অসাধারণ।
গল্প পড়ে 'রব দে বানায়া জোড়ি'-র টিফিন বাক্সের কথা মনে পড়ল।
--------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
"রাব নে বানাদি জোড়ি" মুক্তি পাবার পর ইউনিভার্সিটির অন্যান্য বাঙ্গালীদের মুখে কেবল প্রশংসা আর প্রশংসা শুনি। উইকএন্ডের দাওয়াতগুলোতে সবাই রাব নে বানাদি জোড়ি'র প্রশংসা করে। আমি আর আমার বউ হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। নিজেদের বড় বোকা, বড় সেকেলে মনে হয়।
তারপর আমাদেরও দিন আসে। সেমেস্টার ব্রেক চলছে। ২৫ ডিসেম্বর ২০০৮-সবাই ক্রিসমাস পালনে ব্যস্ত। আমরা দুজন ল্যাবের সোফায় কম্বল মুড়ি দিয়ে কফির মগ হাতে প্রজেক্টরের বিশাল পর্দায় রাব নে বানাদি জোড়ি দেখি।
পরদিন থেকে যখন যাকে (বাঙ্গালী ছাত্রদের যারা ছবিটির প্রশংসা করেছিলো) হাতের কাছে পাই তাকেই একপ্রস্থ করে ঔষধ দিই। এভাবে সপ্তাহ দুয়েক ঔষধ দেবার পর শহরবাসীরা তাদের ভুল বুঝতে পারে। এরপর থেকে তারা আর সাপ্তাহিক দাওয়াতগুলোতে হিন্দি ছবির আলাপ তুলতে সাহস পেতো না।
এই সিনেমাটা দেখা শুরু করেছিলাম, তবে সম্ভবত টিফিন বাক্স পর্যন্ত যেতে পারি নাই, কারণ সেরকম কিছু মনে পড়ছে না।
যাগগে, তাপ্পরেও আপনাকে ধন্যবাদ।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আগেই পড়া,খুব ভাল লেগেছিলো তখনি কনফুসিয়াস, দারুন লেখেন আপনি।
আপনার না পড়ে উপায় কী? ;P
বাসা ভর্তি আমার বই!
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
চমৎকার লাগলো কনফু। মানবিক গল্প। লেখার ছত্রে ছত্রে ফুটে ওঠা সংযমটা খুব টানে। একজন সত্যিকারের গল্পকারের মুন্সিয়ানার ছাপ আগাগোড়া।
না পড়েই পাঁচতারা দিয়ে একটুও ভুল করিনি, এখন পারলে আবার দিতাম
ছোট্ট একটু সমালোচনাঃ টিফিন বক্সের ব্যাপারটা একটু নাটকীয় মনে হয়েছে। এর চাইতে আগোছালো স্বভাব,আলসেমি বা নিজের যত্নের প্রতি উদাসীনতার কারণে অফিসে লাঞ্চ বক্স না আনার বিষয়টি আরেকটু চেনা-পরিচিত মনে হতো। একান্তই ব্যক্তিগত মত--গুরুত্ব না দিলেও চলবে
সমালোচনার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
মনজুর চরিত্রটা কেমন করে উঠে দাঁড়াবে এটা নিয়ে অনেক ভেবেছিলাম লেখার সময়। একদম স্বাভাবিক বা সাধারণ চিন্তার মানুষ তো নয় সে, সেরকম হলে একটা ছবি থেকে ওরকম কল্পনা করতে পারতো না। আবার যদি এ ব্যাপারটাকে শুধু নিঃসঙ্গতার প্রতিক্রিয়া দেখাতাম, তাহলে বেচারাকে মানসিক রোগী হতে হয়। এটাও চাই নি। ওর এই কল্পনাটা একাকিত্বের জন্যে নয় আসলে, এই কল্পনার অন্যতম প্রধান কারণ শাহানার প্রতি অদম্য ভালবাসা। তাই সুস্থ মানুষ, কিন্তু বুক আর মাথা ভর্তি ভালবাসা, সেই সাথে অস্বাভাবিক একটা কল্পনা, এই সব কিছু একসাথে আনতে গিয়ে টিফিন বাক্সের কথাটা এসেছে।
হয়তো গল্পে ঠিকঠাক বুঝিয়ে উঠতে পারি নি।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আপনার গল্প গুলো সত্যিই অসাধারণ। খুব ভালো লাগলো।
যশোর গিয়েছিলাম কয়েকদিন আগে এক রাতের জন্য। ব্যাগ ট্যাগ কিছু নেই নাই, এক বস্ত্রে দোস্তদের সাথে দেখা করতে। সাথে খালি কাঠের সেনাপতি। এই গল্পটা আরিচায় এসে শেষ হলো এবং আমি একজনকে ফোনে বললাম, সমান্তরালের চেয়ে তো বউ গল্পটা বেশি ভালো লাগলো আমার। অবশ্য যশোর যেতে যেতে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে "শব্দশিল্পী"। তবে দ্বিতীয় সেরা এটাই
থ্যাংকু থ্যাংকু। সমান্তরাল নিয়া খুব বিপদে আছি, এই প্রথম একজন কেউ সেটাকে টপকানোর সাট্টিফিকেট দিলো। অশেষ থ্যাংকু!
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এহ !!! আপনার সেরা গল্পটা হচ্ছে ইঁদুর !!! এইটা সবচে দারুণ !!!
_________________________________________
সেরিওজা
'কাঠের সেনাপতিতে' পড়া ছিল। ভীষণ ভাল লেগেছে এ কথাটা জানিয়ে গেলাম।
কী সুন্দর! কী অদ্ভুত সুন্দর!
|| শব্দালাপ ||
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
নইজ্যা আর সুহানের সাথে সহ-সহমতাইলাম!
নাহ, আপনি আসলেই অতিরিক্ত ভালো লিখেন
খুব ভালো লেগেছে। তবে গল্পের মাঝখানে একটা ছোটো আভাস চলে এসেছে, সামনে কী আছে।
এককথায় দারুণ লেগেছে।
++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
গল্প টা পড়ে খুব খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম।
কী যেন এক অদ্ভুত মায়া।
চমৎকার লাগলো। লেখার স্টাইলটা খুব সুন্দর। কিছু বিষয় নিয়ে হয়ত বলা যায়। কিন্তু খুঁত তো চাঁদেরও আছে, তাই না।
একটা ব্যাপার ভেবে ভালো লাগে, চাপের মধ্যে লিখেও কনফু তাঁর নিজস্বতা থেকে সরেন না। [চাপ কেনো, সেটা আমার অনুমান ;)]
নতুন মন্তব্য করুন