বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরুর সময় একটা ভিডিও দেখে মন জুড়িয়ে গিয়েছিলো। বিউটিফুল বাংলাদেশঃ দি স্কুল অব লাইফ।
টিপিক্যাল প্রবাসী বাংলাদেশিদের মত আমিও নিয়ম করে ক’দিন পর পর ছিচকাঁদুনে গীত গাই, দেশের জন্যে আহা উহু করি। সেই আহা উহুর মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই ভিডিওটা। ভিডিওটির পরিবেশনা, বলাই বাহুল্য চমৎকার ছিলো, আমাদের দেশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। দেশের মানুষদের সরলতা দেখে মনে হয়েছিলো, আহা, সত্যিই তো, এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি। ফেইসবুক আর ইউটিউবে ভেসে বেড়িয়েছে বেশ কিছুদিন এই ভিডিওটা।
দুদিন হলো আরেকটা ভিডিও ভাসছে এখন ফেইসবুকে, এবং ইউটিউবে। ভুল ব্যাকরণে এই ভিডিওটির টাইটেল দেয়া- মিলন কিলিং। গতকাল সকালে উঠে পত্রিকা পড়ে ইতিমধ্যেই মিলনের ঘটনাটা জেনে গেছি, জেনে হতভম্ব হয়ে গেছি। মানুষের নিষ্ঠুরতায় বিহবল হয়ে পড়েছি। ফেইসবুকে অনেকের প্রোফাইলে শেয়ার দেয়া আছে মিলন হত্যার ভিডিওটা, কিন্তু এখনও সাহস করে একবারও দেখে উঠতে পারিনি সেটা, হয়তো পারবোও না।
ভিডিওটির বদলে যে পুলিশগুলো মিনলকে ভ্যান থেকে নামিয়ে ওই লোকগুলোর হাতে তুলে দিয়েছিলো, আমার ইচ্ছে করছে তাদের চেহারা দেখি। অথবা যেই লোকগুলো কোন কারণ ছাড়াই অবিরাম পিটিয়ে একটা কিশোর ছেলেকে মেরে ফেললো, তাদের প্রত্যেকের ছবি দেখতে ইচ্ছে করছে। কোন একজন লোক নাকি মিলনের মাথায় ইটের বাড়ি দিয়ে ওর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে, তাকেও আমার খুব চিনতে ইচ্ছে করছে। আমার দেশের সাধারণ মানুষদের সরলতায় আমি মুগ্ধ হই, তাহলে সেই সরল মানুষদের নিষ্ঠুরতায় মুগ্ধ হওয়া বাকি থাকবে কেন?
আজ সারাদিন অক্ষম আক্রোশে কেবলই কেঁপে কেঁপে উঠেছি। প্রতিদিন সকালে আয়নায় তাকিয়ে অন্তত দশবার করে নিজেদের শূয়োরের বাচ্চা বলে গাল দেয়া উচিত আমাদের, কারণ এই আমাদের দেশ, এরাই আমাদের দেশের মানুষ, এই আমাদের দেশের পুলিশ।
বিউটিফুল বাংলাদেশ ভিডিওটির নির্মাতাদের কাছে অনুরোধ রইলো, আপনারা কষ্ট করে আগের ভিডিওটার একটা বর্ধিত সংস্করণ বের করুন। আগের ভিডিওটার সাথে মিলনকে মেরে ফেলার এই ভিডিওটাও দয়া করে জুড়ে দিন। একটা ভিনদেশি মেয়ে নির্বিঘ্নে আমাদের দেশময় একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই মিথ্যের পেছনে একজন শামসুদ্দিন মিলনের সত্যটাও যুক্ত হয়ে থাকুক। যেখানে আমার নিজের দেশেরই কিশোর এক ছেলে ভিন এলাকায় গিয়ে গণপিটুনিতে লাশ হয়ে যায়। এই সত্য প্রতিষ্ঠিত হোক- বিউটি এবং বীস্ট আদতেই একে অপরের পরিপূরক!
অনেকেই বলছেন এটাতো আমার ভাই হতে পারতো, বা আপনারই ছেলে। এসব শুনে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালির সংখ্যা আরও দশবার বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। নিজের ভাই বা ছেলে না মরা পর্যন্ত দুঃখ বুঝবে না আমার সরকার? অন্যের ছেলে হলে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতে বাঁধা নেই তাহলে? রাষ্ট্রের তো কোন ছেলে বা ভাই নেই, রাষ্ট্রের কাছে সবাইই নাগরিক, সবাইই মানুষ। রাষ্ট্রের মানুষ মেরে ফেলা হলে কেমন করে সরকার নির্লিপ্ত বসে থাকে!
গণপিটুনি সংক্রান্ত আইন বাংলাদেশে কী আছে বা কেমন আছে জানি না। কিন্তু এই রাষ্ট্রের ছেলে বা ভাই নই, একজন নাগরিক হিসেবে দাবি জানাই গণপিটুনিকে হত্যা বলে চিহ্নিত করা হোক। এতে অংশগ্রহণকারীদের খুনী হিসেবে বিচার করা হোক। অবিলম্বে।
নইলে শুনে রাখুন, আয়নায় তকিয়ে কেবল নিজেদেরই নয়, মানিক মিয়া এভিনিউর চওড়া রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আপনাদের মুখের উপর মুতে দিয়ে বলবো, শালা শুয়োরের বাচ্চারা, মনুষ্যত্ব শিখে আয়, মানুষ হয়ে তবে এখানে আয়, এই দেশ চালাতে আয়।
মন্তব্য
বেঁচে থাকার দৌড়ে কোনমতে টিকে থাকতে গিয়ে আমরা অমানুষ হয়ে গেছি সেই কবেই!
কিছু মনে করবেন না, অফটপিক একটা প্রশ্ন করি: আপনি কি জাহেদ সরওয়ার?
ইডা কনফু।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ডেভুরামের ফাঁসি চাই।
আমি যখন মন্তব্য করি তখন লেখকের আইডি msarwar দেখাচ্ছিল। এখন আইডি কনফু দেখালেও নাম এখনো সেই "?" রয়ে গেছে।
বিউটিফুল বাংলাদেশের ভিডিওটা একটা পরিপূর্ণ মিথ্যে। আমাদের ভিডিওতে দেখানো হয় না - আমাদের নিরাপদ পাহাড়ের আড়ালে কাঁদে আদিবাসী মানুষ, হাসে আমাদের দখলদার বাহিনী। ঢাকার রাস্তায় ছিনতাইকারীর হাতে নির্যাতিত হয় ফরাসী তরুণী সারা। লালনের মাজারে বাউলের চুল কেটে নেয় মূর্খ রাজনীতির পান্ডারা।
এইসব লোকদেখানো বিউটিফুল বাংলাদেশ এর ভিডিও আমন্ত্রণ ভীষণ হাস্যকর।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
_____________________
Give Her Freedom!
আমাদের সকলের এখন মনরোগ বিশেষজ্ঞকে মন দেখানো খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। মানসিক বৈকল্য ছাড়া এই ধরনের ঘটনায় অংশ নিতে পারার কথা নয়।
শুনতে পেলাম ঐ পুলিশ মহদোয়দের নাকি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে!! ঠান্ডা মাথার খুনিদের শুধুই সাময়িক বরখাস্ত? তাহলে ফাঁসির হুকুম হয় কাদের???!!!
গালি ছাড়া আর কিছু মুখে আসে না, ভিতরে কিছু একটা দলা পাকিয়ে অশ্রুর মত বের হয়ে আসে, নিঃশব্দ থাকি!!!
গণপিটুনির বিরুদ্ধে জোড় প্রচারণা চালানো উচিৎ, গণপিটুনিকে আমরা 'না' বলি।
_____________________
Give Her Freedom!
টিভি পেপার সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে থাকতে ইচ্ছা করে...দেখার পর মনে হল কেন যে আজকে টিভি খুল্লাম...কেন যে পেপার পড়লাম...
সহমত
গণপিটুনি দিয়ে আরও কত জলজ্যান্ত মানুষ কে লাশ বানালে এসবের প্রতিকার পাওয়া যাবে তার কোন উত্তর খুঁজে পাই না। আমরা যেসব আমজনতার কথা বলি তারা এরকম খুনিতে কি করে পরিণত হয় তা ই আমার মাথায় ঢোকে না ।
বাঙালি বীরের জাতি, একতাবদ্ধ জাতি আরেকবার প্রমাণ হল। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
ঠিক ১ বছর আগে পাকিস্তানের শিয়ালকোটে ২ ভাইকে ডাকাত সন্দেহে এলাকাবাসী পিটিয়ে মেরে ফেলে। মিডিয়া ও ফেইসবুকের কল্যানে সেই ভিডিও দেখে বেশ আহত হয়েছিলাম,ভাবছিলাম ওরা পাকিস্তানী, ৭১ এ আমাদের সাথে এভাবেই আচরণ করেছিলো। ১ বছর পর এই বাংলাদেশে সাভারে ৬ ছাত্রকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, নোয়াখালীতে ৬ যুবককে হত্যা, মিলনের হত্যাকান্ড, মেধাবী ছাত্র কাদের এর পায়ে চাপাতি দিয়ে কোপানো এইগুলো দেখে ও শুনে নিজের কাছে প্রশ্ন জাগে কোন সভ্যতায় আমরা বাস করছি?
"এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি"
আমি যদ্দুর শুনেছেই, এইদেশে গণপিটুনির বিরুদ্ধে কোন আইন নেই। এটার ব্যাপারে সত্ত্বর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
কিছু বলার নাই
গনপিটুনিতে মিলনের মৃত্যুর প্রসঙ্গে সচলায়তনে বেশ কয়েকটা লেখা এসেছে। লেখাগুলো পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্যও লিখেছি। আমার মত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য লিখেছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে কোন প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ কোনটাই হয়নি। আমারও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস নেই। অক্ষমতার কারনে অন্তরে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে অত্যন্ত অসহায় বোধ করছি। গত কিছুদিন যাবত যেসব ঘটনাগুলো ঘটে গেল তার পরিনাম চিন্তা করে আমি বড়ই আতঙ্কিত। আমি আপনি বা আমার আপনার পরিবার কি এদেশে নিরাপদ? এভাবে চলতে থাকলেতো আমি, আমার ভাই অধবা সন্তানওতো এই ধরনের ঘটনার স্বীকার হবে। এদেশটা ছেড়ে কোথাও যেতে চাইনা। দেশটাকে যে বড় ভালবাসি। পরিবর্তন চাই, কিন্তু কিভাবে ? মন্তব্য : প্রৌঢ়ভাবনা
একেকটা খবর পড়ি, আর মনে হয়,.ডন অব দ্য ডেড সিনেমাটা বাংলাদেশের জন্য সত্যি হয়ে উঠছে।
ভয়াবহতার পারদ চড়েই যাচ্ছে।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভিতরে কিছু একটা দলা পাকিয়ে আসে কিন্তু কিছুই বলতে পারিনা। কাকে বলব ? কি বলব ? ভয়ঙ্কর অক্ষম এক আক্রোশে কেবলই কেঁপে কেঁপে উঠছি।
নাকি চারপাশের এই অক্ষম আক্রোশই মানুষের ভেতর ক্রমশ পুঞ্জীভূত হয়ে মানুষগুলোকে অমানুষ করে দিচ্ছে ? তারা সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই প্রতিপক্ষ ভেবে নিয়ে ভেতরের সব ক্রোধ উগরে দিচ্ছে ?
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
এ কোন বর্বর সময়ে বাস করছি!
এই যে, আরেকটি আগলি নিউজ ...
ওরে!! বাঙালিরাতো ম্যজিক দেখাইতেছেরে!!
এখন আমি আর সরকারের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চাই না, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই। ব্যাপারটা অনেকটা "ভিক্ষার দরকার নাই, কুকুর ঠেকা" টাইপের অবস্হা.......
আমি কেবলই একটা ষড়যন্ত্রের আভাস পাই। বাংলাদেশকে সবদিক থেকে ব্যর্থ রাস্ট্র হিসেবে দেখাতে যেনো সবাই উঠে পড়ে লেগেছে!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হের মনির হোশেন, বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র প্রমাণ করার জন্য নতুন করে আর উঠে পড়ে লাগার দরকার নাই। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পুরোপুরি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
মন ভাল করার জন্য এই খবরটা পড়েন।
আমার এক বন্ধু, সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই সে বিদেশ চলে যেতে চাচ্ছিলো, আমি জোর করে যেতে দেইনি। পড়ার জন্য গেলে ভিন্ন কথা, কিন্তু ওর মতো মেধাবী ছেলেরা একেবারে কেন চলে যাবে?
পিএইচডি করতে বিদেশ গেলো, ঢাবির টিচারও হলো। কিছুদিন আগে বিদেশ থেকে ফোন করছে, পিএইচডির পর দেশে ফিরবে কি না সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, আমি বললাম ফিরিস না...
সে অবাক হয়ে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারেনি...
সত্যিই আমি এখন বলি... ফিরিস না... কনফু... আপনিও না ফিরুন... এখানে ফেরা নেই... ফেরার হয়ে গেছে সব
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আসলে কী, মিলনের ঘটনাটা আমার বহুদিন ধরে আবছাভাবে জানা একটা সত্যকে নিজের কাছে স্পষ্ট করে তুলল। আমাদের মানুষ এভাবে রাস্তায় হাত চালায়ে বিকৃত আনন্দ পায়। আমরা পাশ্চাত্যের মানুষদের তুলনায় নিজেদেরকে সভ্য দাবি করি ওদের যৌন জীবন, প্রাচুর্য এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলে। কিন্তু মানুষ হিসাবে আমরা এই পৃথিবীর যেকোন সভ্য জাতির চেয়ে বহুগুনে নিকৃষ্ট, খুব মৌলিক পর্যায়ে।
নতুন মন্তব্য করুন