শুরু-
-----------------
গত বছর ডিসেম্বরে দেশে যাবার পরে একটা অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার হলো।
সারা দেশে তখন নির্বাচন পূর্ববর্তী আন্দোলন আর অবরোধ, সেই সাথে লেগে আছে হরতাল, জ্বালাও-পোড়াও...। দেশে যাবার আগে আগে শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনেকেই বললেন এরকম পরিস্থিতিতে না যেতে, নির্বাচন শেষ হোক, পরিস্থিতি শান্ত হোক, তারপর যাওয়া যাবে।
আমি তেমন একটা গা করলাম না। নিজের দেশে যাচ্ছি, সেটার জন্যে আবার পরিস্থিতি বিবেচনা কী? অনেককেই দেখেছি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে যাবার আগে ‘ওয়েদার’এর খোঁজ নেন, তা না হলে দেশে গিয়ে অসুখে পড়েন, আমার এখনও এরকম হয়নি। একবার শুধু অতিরিক্ত নিমন্ত্রণের চাপে পেটের বারোটা বেজে একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে ছিলাম কদিন, এ ছাড়া আমার এতদিনকার চিরচেনা ‘ওয়েদার’ কখনোই আমাকে বিপদে ফেলেনি। আর এইসব হরতাল, অবরোধ এসব তো আমাদের নির্বাচনী কালচার, ডরাইলেই ডর, নইলে তেমন কিছু না।
এরপরও অনেকের প্রশ্নের জবাবে মজা করে বলেছি, বেশি খারাপ পরিস্থিতি হলে ঘরের মধ্যেই শুয়ে বসে কাটিয়ে দিবো না হয়, তাতেই বা কী আসে গেল?
আমার সেই মজা করে বলা কথা-ই যে সত্যি হয়ে যাবে সেটা তখন বুঝিনি। দেশে যাবার পরে আমার আগমন উপলক্ষেই কি না কে জানে, হরতাল অবরোধের ঘনত্ব ও পুরুত্ব দুইই বেড়ে গেলো, আমি পুরো তিন সপ্তাহ ঢাকায় আটকে রইলাম, একবারের জন্যেও আমার নিজের শহর কুমিল্লায় যেতে পারলাম না!
এরকম কিছু আসলে স্বপ্নেও ভাবিনি। কুমিল্লায় যেতে পারছি না, আমি?!?
সৌভাগ্য এই যে আমার দুই মা-ই তখন ঢাকায়, মানে আমার আম্মু আর নানু। আম্মুর চিকিৎসার জন্যে মীরপুরে একটা অস্থায়ী ডেরায় উঠেছেন, তাঁকে দেখভাল করতে রয়েছেন নানু। কিন্তু এদিকে কুমিল্লায় আমার বাকি সব আত্মার আত্মীয়রা, আমার মামা, খালা আর সব পিচ্চি পিচ্চি কাজিনরা, যারা আমার অপেক্ষায় মোটামুটি পাগল-প্রায়।
সপ্তাহে একদিনের জন্যে অবরোধ তোলা হয়, কিন্তু যানজট ঠেলে দিনে দিনে কুমিল্লায় গিয়ে ফিরে আসার উপায় নেই। একবার গেলেও ফিরতে হলে পরের সপ্তাহের অবরোধ-হীন দিনের জন্যে অপেক্ষা করতে হবে, সেটাও সম্ভব না কারন আম্মু-নানু ঢাকায়।
এই দোটানার মধ্যে থেকেও একবার অবরোধ না-থাকার আগেরদিন ব্যাগ কাঁধে নিয়ে আমরা দুই ভাই বাস স্টপে গিয়ে বসে থাকলাম, আজ যদি কোন ভাবে বাস ছাড়ে তাহলে রাতে গিয়ে কাল রা্তেই ফিরে আসার চেষ্টা করা যাবে হয়তো। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও লাভ হলো না, সরকারী বাসের কাউন্টার থেকে বলা হলো যাত্রাবাড়ির পরে কোথায় যেন ব্যাপক ভাংচুর হয়েছে, বাস যাবে না!
এরকম হতাশার মধ্যে দিয়েই দেখি ছুটি প্রায় শেষ, আমারও মেলবোর্নে ফেরার সময় হয়ে গেলো। মুঠোফোনের অপর-প্রান্তে আমার দুখী দুখী কাজিন ভাই-বোনেদের গলা শুনে মন খারাপ হয়ে যায়।
ফিরবার আগের দিন এক কাজ করলাম। অনলাইনে বই কেনার একটা ওয়েবসাইট থেকে ওদের সবার জন্যে নানা রকম বই অর্ডার করলাম। একই বইয়ের চার/পাঁচ কপি করে প্রতিটি, সব মিলিয়ে আটটি বা নয়টি করে বই প্রত্যেকের জন্যে। আমি যেতে পারছি না কিন্তু এই বইগুলো যাচ্ছে ওদের কাছে, এই ভেবে খানিকটা হলেও শান্তি পেলাম।
মেলবোর্ন ফিরে আসার মাস তিনেক পরেই শুনি ওদের প্রায় সবারই সব বই পড়া হয়ে গেছে। খুব খুশি হলাম শুনে। পুরস্কার হিসেবে আরো নতুন নতুন বই পাবে, এরকম আবদারে আমি এত সহজেই রাজি হয়ে গেলাম যে ওরা খুশিতে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না।
স্বপ্ন-
----
অনেকদিন ধরেই মনে মনে ভেবে আসছিলাম আমাদের গ্রামের কিশোর/তরুন বয়েসী ছেলে-মেয়েদের জন্যে একটা কিছু করবো।
নানা পরিকল্পনা করি, বন্ধুদের বলি, কিন্তু স্থবিরতা কাটাতে পারি না। তিথি নিজেই ওদের গ্রামের স্কুলে প্রতি বছর একটা বৃত্তি-মতন দিয়ে আসছে কয়েক বছর ধরে, কিন্তু আমার কেন যেন বড় কিছুই করা হয়ে উঠছিলো না।
তো, এবারে দেশে গিয়ে এই বই পাঠানোর পরে একটা বুদ্ধি মাথায় এলো, কেন না আমাদের গ্রামের স্কুলে একটা লাইব্রেরির অন্তত শুরুটা করে দেয়া যাক! আমাদের গ্রাম নয় শুধু এমনকি আশপাশের কোন গ্রামেও লাইব্রেরি বলে কিছু নেই, সেখানকার মানুষেরা লাইব্রেরি বললে বুঝে উপজেলা শহরের বইয়ের দোকান!
তিথিকে বলতেই সানন্দে রাজি হয়ে গেলো। আমি আমার বড় মামার সাথে কথা বললাম, মামা জানালেন ব্যাপারটা অসম্ভব নয়, কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে হবে।
খানিকটা আশার আলো দেখতে পেয়ে আমি এবারে কোমর বেঁধে লাগলাম একটা ঝকঝকে প্ল্যান করে ফেলার জন্যে। যেন বেশ তো, ধরা যাক দু’একটা ইঁদুর এবার।
বাজেট-
--------
আমরা দু’জনেই সীমিত আয়ের মানুষ। এর ভেতরে থেকেই যা করার করতে হবে ভেবে নিলাম। দুয়েকজন পরিচিত ও বন্ধু-বান্ধব ডোনেট করতে চাইলো, কিন্তু আমি ভাবলাম ব্যাপারটা শুরু হোক আগে, দেখি কেমন দাঁড়ায়, তারপরে বড় আকারে করা যাবে। তাই আপাতত ডোনেশান নেয়ার চিন্তা বাদ দিলাম।
আগেও বলেছি, বছরে এক বা দু’বার আমরা দেশ থেকে বাংলা বই আনাই। সেটা, ইদানিংকালে আরও বেশি খরচান্ত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তবু প্রতি বছরই আমরা অল্প কিছু টাকা জমানোর চেষ্টা করি এই খাতে।
ভাল খবর হচ্ছে, এই করে করে গত কয়েক বছরে আমরা আমাদের চাহিতামতন অনেক বই নিয়ে এসেছি এখানে। সেগুলো পড়ে শেষ করে উঠতে আরও কিছু বছর চলে যাবে আশা করি। আপাতত নিজেদের জন্যে অনেক বেশি বই আনানোর প্রয়োজন পড়বে না।
তাই, এই বইয়ের পেছনের বাজেটটুকু আমরা নির্দ্ধিধায় লাইব্রেরির জন্যে বরাদ্দ করে দিলাম। শুধু তাতে কুলাবে না বলেই মনে হলো, তাই এদিক সেদিকের সাংসারিক খরচ কাটাকুটি করে বরাদ্দ করা হলো আরও কিছু অর্থ।
প্রক্রিয়া
--------
একবার ভাবা হলো গ্রামের বাজারে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে করা হবে লাইব্রেরি।
কিন্তু আমার মাথা থেকে কেন যেন স্কুলের ব্যাপারটা যাচ্ছিলো না। অবশেষে, আমাদের গ্রামের হাই স্কুলের হেডমাস্টারকে প্রস্তাব দেয়া হলো, যদি স্কুলের একটা ছোট ঘর উনি ব্যবহার করতে দিতে রাজি হন, আমরা তাহলে সেখানে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামবাসীদের জন্যে একটা লাইব্রেরি শুরু করে দিবো। তিনি সানন্দে রাজি হলেন তাতে।
স্কুলের একটা বড় হলঘরের একপাশে বেড়া দিয়ে নতুন একটা ঘর তৈরি হলো। মাটি ফেলে, এবং আরও কিছু মেরামতের পরে সেটা ব্যবহার উপযোগী করা হলো।
এর মধ্যেই আমি বই অর্ডার করতে শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে অর্ডার দিলাম মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক পছন্দের বইগুলো, প্রছুর কিশোর-উপযোগী বই, এবং সেবা প্রকাশনীর প্রচুর বই। অন্যদিকে যোগাযোগ করলাম ঢাকা-কমিক্সের মেহেদী হক-এর সাথে। সেখান থেকে বের হওয়া সবগুলো কমিক্সও অর্ডার করে দিলাম।
লাইব্রেরির জন্যে বানানো হলো বুকশেলফ, আলমিরা, পড়ার জন্যে চেয়ার টেবিল। সব আয়োজন শেষ করে আমার দুই মামা গিয়ে হাজির হলেন আমাদের গ্রামে, একটা স্বপ্নের সূচনা করে দিয়ে আসতে।
বইদ্বীপ গ্রন্থাগার
--------------------
লাইব্রেরির একটা নাম দরকার ছিলো। বই সংক্রান্ত ব্যাপার স্যাপার নিয়ে অনেক ভেবেও আর কোন নাম পেলাম না খুঁজে, তাই ভাবলাম আমার ইবুকের সাইট বইদ্বীপেরই একটা প্রজেক্ট হিসেবে এটাকে সাথে রাখা যায়।
লাইব্রেরির নাম তাই বইদ্বীপ গ্রন্থাগার।
মাস দুয়েক ধরে চালু রয়েছে এটা। সদস্য হবার জন্যে ফি হিসেবে টাকা নেয়া হয় না এই লাইব্রেরিতে। আমি বলেছি, সদস্য ফি হচ্ছে একটা বই। ওখানে বসে পড়তে সদস্য হবার দরকার নেই, কিন্তু বই বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে যে কোন মূল্যের একটা বই জমা দিয়ে সদস্য হতে পারবে যে কেউ।
গ্রামের মুরুব্বীদের দাবি অনুযায়ী একটা বাংলা পত্রিকা রাখা হচ্ছে সেখানে। যেন লোক সমাগম বাড়ে।
আমাদের পরিকল্পনা হলো, বাজেট অনুযায়ী বছরে এক বা দু’বার নতুন বই কেনা হবে এ লাইব্রেরির জন্যে। সেই সাথে আশপাশের গ্রামের অন্তত অল্প কয়েকটা স্কুলে আস্তে আস্তে করে দেয়া হবে লাইব্রেরি।
নানা রকম স্বপ্ন দেখি মনে, ভেবেছি, কোন স্কুলে আগে দেয়া হবে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পরিচ্ছন্নতা প্রতিযোগীতার আয়োজন করা যেতে পারে স্কুলগুলোর মধ্যে, বিজয়ী স্কুল সবার আগে পাবে লাইব্রেরী ঘর।
বিজ্ঞান মেলা ধরণের কিছু আয়োজনের পরিকল্পনাও আছে, এ জন্যে বিজ্ঞান প্রজেক্ট বিষয়ক বেশ কিছু বইও আছে লাইব্রেরিতে।
সেই সাথে ভালো রেজাল্ট ও আর্থিক সামর্থ্যের ভিত্তিতে একটা বাৎসরিক বৃত্তি দেয়া হবে আগামী বছর থেকেই। সবচেয়ে বেশি বই-পড়ুয়াদের পুরস্কৃত করার একটা পরিকল্পনাও মাথায় আছে এখনো।
ব্যাপারটা শেষমেষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বা কেমন হবে, সেটা এখুনি বলা মুশকিল। কিন্তু খুব ভাল কিছুই যে হবে এ বিষয়ে আশা করতে দোষ দেখছি না কোনও।
হইলো না শেষ-
-----------------
আমি কথা বলে দেখেছি, ‘একটা কিছু’ করার মানসিকতা রাখেন আমাদের পরিচিত মানুষদের অনেকেই, যাদের অনেকেই সেটাকে বাস্তবায়িত করতে পারেন না সময়, সুযোগ, পরিকল্পনা ও বাস্তব ধারণার অভাবে।
এই পোস্টটি আসলে তাদেরকে ভেবেই লেখা। কেউ যদি পড়ে উৎসাহিত হয়ে আরও বিশদ জানতে চান, আমি সানন্দে তাঁদেরকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে রাজি।
অর্থের হিসাব লিখে পোস্টটাকে জটিল করতে চাইনি বলে লিখিনি, কিন্তু জেনে অবাক হবেন এই পুরো ব্যপারটা করতে খুব বেশি খরচের প্রয়োজন হয় না আসলে। যে কোন স্বচ্ছল পরিবারই এরকম একটা প্রোজেক্ট চালাতে পারেন মন চাইলে, অথবা দু’তিনটে পরিবার মিলে এক সাথে।
একটু সদিচ্ছা, খানিকটা যোগাযোগ আর অল্প একটু সময় দিলেই এরকম কিছু করা আর অসম্ভব থাকে না।
----
তারেক নূরুল হাসান
০৯/০৯/২০১৪
মন্তব্য
সাথে অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
স্মৃতিকাতর করে দিলেন। দশম শ্রেণীতে পড়াকালে এক বন্ধুর বাপের একটা অফিস ফাঁকা পেয়ে বাকি দুই বন্ধুর নিজেদের সংগ্রহের বই নিয়ে মহা সমারোহে শুরু করে দিলাম 'বন্ধু পাঠাগার'। বিকেলে খেলা বাদ দিয়ে পাঠাগারে বসি, নিজেরাও বই পড়ি, আড্ডাও হয়। সেবার বই ১ টাকা আর বড় বই ২ টাকা দড়ে ভাড়া দেই। সেই টাকায় আবার বই কিনি।
কয়েকমাসের মধ্যে চাট্টিবাট্টি গোল, অফিসে আবার অফিস হবে। পাঠাগার বন্ধ। মাঝখান থেকে আমার বইগুলা গেলো
যাহোক, উদ্যোগে সাধুবাদ। খুবই ভালো লাগলো ব্যাপারটা। একদিন যাবো দেখতে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পাশের বাসার বন্ধুর সিঁড়িঘরের তলায় দরজা লাগিয়ে আমরাও একটা লাইব্রেরি করেছিলাম, ফোর বা ফাইভে পড়ি তখন। লাইব্রেরি যদিও, কিন্তু নাম দিয়েছিলাম 'কিশোর ক্লাব'। তিন গোয়েন্দার বদান্যতা।
আপনিও আমাকে ভাল জিনিস মনে করিয়ে দিলেন।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
সবার মাঝেই সামাজিক আর রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা জাগ্রত হোক এই কামনা করি।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
সুন্দর উদ্যোগ।
____________________________
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
একশ'টা মহান পরিকল্পনার চেয়ে একটা সাধারণ পরিকল্পনার বাস্তবায়ণ অনেক দুরূহ। আপনার আর তিথি'র আমাদের ধন্যবাদের দরকার নেই। প্রকল্পটা দাঁড় করিয়ে আপনারা যে আনন্দ পেয়েছেন সেটা খুব কম মানুষের ভাগ্যে জোটে।
আপনাদের লাইব্রেরীটা নিয়ে অযাচিতভাবে কিছু নগণ্য পরামর্শ দেইঃ
১। সাইনবোর্ডওয়ালা ঘরটা যদি লাইব্রেরী হয়ে থাকে তাহলে বলতেই হবে এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা একেবারেই দুর্বল। একেবারে বাচ্চা চোরও ভেতরে ঢুকে সর্বনাশ করে ফেলবে।
২। টিনের চালের ফুটো দিয়ে পড়া পানি, বাতাসের আর্দ্রতা, উইপোকা (মাটির মেঝে হলে এদের পোয়াবারো), ইঁদুর, ঘুনপোকা থেকে সাবধান।
৩। বাংলাদেশের বহু স্কুল/মহল্লায় লাইব্রেরী আছে। কিন্তু সেগুলোর দরোজা কালেভদ্রে খোলা হয়। এটা যেন অমন না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সম্ভব হলে সপ্তাহে ৫/৬ দিন একজন মানুষ (সবেতন) দিনে ৪/৫ ঘন্টা লাইব্রেরীটাকে খোলা রাখবেন এমন ব্যবস্থা করুন।
৪। শিশু-কিশোররা বই নেবার সময় অযাচিত সেন্সরশীপের সকল সম্ভাবনা নির্মূল করুন। দেখা যায়, অতি সচেতন মুরুব্বী মুক্তিযুদ্ধ বা বিজ্ঞান বিষয়ক বইগুলোকে শিশু-কিশোরদের জন্য নিষিদ্ধ করে দেন। অন্যদিকে চোরাপথে তাদের হাতে গুপ্তযুগের বই ঠিকই চলে আসে।
৫। লাইব্রেরীতে কী পত্রিকা রাখা হচ্ছে তার খোঁজ রাখুন।
৬। বইচোর আর বইয়ের পাতা কাটা চোরদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি রাখুন। যেমন, একটা বই চুরি করলে সাতটা বই জরিমানা দিতে হবে, বা বইয়ের পাতা কাটলে ঐ বইয়ের শেষ ২৫ পৃষ্ঠা মুখস্থ করতে দেয়া হবে ইত্যাদি।
সম্ভব হলে পঠিত বইয়ের উপর সহজ পরীক্ষা নিয়ে পুরস্কারটা দিন। প্রচুর অধ্যয়ণ করার চেয়ে অধীত বিষয় আত্মস্থ করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
যারা বৃত্তি দেন তাদের প্রায় সবাই আর্থিক সামর্থ্যের এই পয়েন্টটা বিবেচনা করেন না। আজকাল অবস্থাপন্ন পরিবারের সন্তানেরা ভালো ফলাফল করে। হতদরিদ্র পরিবারের যে শিক্ষার্থীটি ৩.৫ গ্রেড পেলো সে স্বচ্ছল পরিবারের ৫.০ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীটির চেয়ে বৃত্তিটার অধিক দাবীদার। সম্ভব হলে বৃত্তিটা কোন ছেলেকে দিন। কারণ, কন্যাশিশুরা সরকারী উপবৃত্তি পায়। একই পরিবারের বোন স্কুলে যাচ্ছে আর ভাই মাঠে বা বাজারে কাজ করতে যাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখেছি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
উলটো আপনাকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ পান্ডবদা।
লেখায় বিশদে কিছু বলিনি, কিন্তু আপনার দেয়া বেশ কিছু পয়েন্ট এর মধ্যেই মাথায় ছিলো।
যেমন- ৩/ একজন লাইব্রেরিয়ান রাখা হয়েছে যিনি স্কুলের সময়ের বাইরেও ঘন্টা দুয়েক লাইব্রেরি খোলা রাখবেন। লাইব্রেরির জন্যে একটা কমিটি করা হয়েছে, যেটার প্রধান আমাদের একজন আত্মীয়, যিনি নিজেও বইপ্রেমী। তার দায়িত্ববোধের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে।
৪/ সেন্সরশীপ না থাকার কথা বলেছি আগেই। আমি আসলে এখানে বসে যা কিছু মাথায় আনা যায় সেসব ভেবে টেবে একটা গাইডলাইন মতন বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি দেশে। সেটা আপডেট করবো দরকার হলে।
লাইব্রেরির নিরাপত্তা সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ করা হয়েছে বলে জানি। আপাতত বদর বদর কর মাঝি।
বইচোরদের কথা মাথায় ছিলো না, এটা যোগ করে নিবো।
পঠিত বইয়ের উপরে পরীক্ষা নিয়েই পুরস্কার দেয়া হবে, এটা আগেই ভেবেছি।
আর বৃত্তির ব্যাপারটা আমি চেয়েছি নতুন কিছু করতে। আগের বছরের তুলনায় এ বছরে সবচেয়ে বেশি ভাল রেজাল্ট করেছে যে ( মানে এগিয়েছে যে) এরকম দু'জন করে প্রতি ক্লাসে বৃত্তি দেয়া হবে। সাথে প্রথম হওয়া একজন এবং সবচেয়ে দরিদ্র শিক্ষার্থী আরেকজন। সবমিলিয়ে ক্লাস প্রতি চারজনের চিন্তা মাথায় নিয়ে এগুচ্ছি। দেখা যাক।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
লাইব্রেরিতে কী পত্রিকা- এটা নিয়েও স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। বাংলাদেশ বিরোধী কোন বই বা পত্রিকা বিশেষত জামাত ঘেঁষা কিছু প্রবেশাধিকার না পায় সেটা নিশ্চিত করেছি প্রথম সুযোগেই।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ছিঃ! এই কচিকাঁচাদের বাক-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছেন?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গুড জব! জামায়াতী বই-পত্রিকা-হিতৈষী সব কিছুর প্রবেশই নিষিদ্ধ করতে হবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
লাইব্রেরিয়ানঃ ধারণা করছি উনাকে যথাসাধ্য সম্মানী দেবার ব্যবস্থা করেছেন। সম্ভব হলে উনাকে বা আগ্রহী অন্য কাউকে লাইব্রেরী এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্সের ওপর একটা শর্ট কোর্স বা ওয়ার্কশপ করিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন। এতে গোটা কাজটাতে পেশাদারীত্বের ছাপ পড়বে।
সেন্সরশীপঃ এই কাজটা অত্যুৎসাহী মুরুব্বীরা করে থাকেন। আপনারা দু'জন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে স্কাইপে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাতে এমন অপকর্ম হচ্ছে কিনা সেটা যেমন জানতে পারবেন আর সাথে সাথে তারা কী কী বই চায় সেটাও জানতে পারবেন।
বৃত্তিঃ আপনার ভাবনাটা আরো গোছানো ও সুন্দর। আশা করি কয়েক বছরের মধ্যে এই উদ্যোগের ফল সাদা চোখে দেখতে পাবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অসাধারণ উদ্যোগ
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
চমৎকার উদ্যোগ!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আর কিছু বলার নেই।
প্রকল্প আরও এগিয়ে যাক সামনের দিকে -সেই প্রত্যাশাই করি কেবল।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
শুভ কামনা
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
চমৎকার!
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
মন ভাল করে দেওয়া পোস্ট। আপনাদের ক্রমাগত সাফল্য আকাঙ্খা করি।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
একটু সদিচ্ছা, খানিকটা যোগাযোগ আর অল্প একটু সময় দিলেই এরকম কিছু করা আর অসম্ভব থাকে না।
----চতুর্থ বর্ষের শেষে পরিকল্পনা নিয়েছিলাম সবাই মিলে ৪০ টাকা করে দিয়ে একটা সোলার প্যানেল করে দিবো কোন এক স্কুলে। সহপাঠীদের প্রবল আপত্তির মুখে তা হয়ে ওঠেনি।
শুভ কামনা
অলস সময়
অসাধারণ উদ্যোগ। স্যালুট।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
এরকম একটা পরিকল্পনা আমার গ্রামের জন্য করেছিলাম আমি। কিন্তু এখনো সবার মতামত পাইনি বলে কিছু করা হয়নি। আপনার উদ্যোগটা দেখে বেশ উৎসাহ পেলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
দারুণ একটা কাজ। আমি ছোটবেলাতে একটা লাইব্রেরি দিয়েছিলাম, নাম ছিল চৈত্রী গ্রন্থাগার। ব্যাপারটা মনে ছিল না, মনে থাকলে স্মৃতির শহরের কোন একটা পর্বে এটা নিয়ে লিখতাম। আপনার লেখা পড়ে মনে হল। অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আগ্রহীরা কি আপনার লাইব্রেরীর জন্য বই পাঠাতে পারবেন?
সচল লেখকদের অনেকের বই প্রকাশিত হয়েছে - তাদের বই পড়ার তালিকায় রাখা যায়না?
বই নেয়ার পরিকল্পনা এখুনি নেই। আমি আসলে দেখতে চাইছি ব্যাপারটা ঠিকঠাক মতন কাজ করে কি না। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা বাড়াবো।
সচলদের বই যোগ হবে অবশ্যই, আস্তে আস্তে।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
চমৎকার। শুভকামনা রইল এই উদ্যোগের প্রতি।
গোঁসাইবাবু
লাইব্রেরিতে কোন কোন বইগুলো দিচ্ছেন, সময় পেলে তার একটা তালিকা দিয়েন। অনেকেরই বাচ্চাদের উপযুক্ত বই সম্পর্কে ধারণা কম (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। সচলে যারা লেখেন, তারা প্রচুর বই পড়েন বলেই মনে হয়েছে, কাজেই তাদের কারো দেওয়া তালিকা ভাল গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে
--------------------------------
বানান ভুল থাকলে ধরিয়ে দিন!
লাইব্রেরির বই সংগ্রহে এরকম একটা আইডিয়াও থাকতে পারে কি যে, লাইব্রেরির ডাক-ঠিকানা জানা থাকলে কেউ চাইলে ওই ঠিকানায় এক বা একাধিক বই পাঠিয়ে দিতে পারেন। লাইব্রেরির দায়িত্বে যিনি থাকবেন, ডাকে বই পাবার পর যোগ্য মনে হলে বইটা পড়ার জন্য তালিকাভুক্ত করবেন।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন