''পঞ্চাশের দশকে আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, জাহানারা ইমাম তখন ঢাকা শহরের সুচিত্রা সেন। ''
আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এমন করেই তাঁর স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন, জাহানারা ইমামকে প্রথম দেখে তিনি চমকে উঠে ভেবেছিলেন কোলকাতা থেকে এত দূরে, ঢাকায়, কি করে অবিকল একই রকম একজন সুচিত্রা সেন থাকতে পারে, যিনি পর্দার অলীক নায়িকা নন, বাস্তব মানুষ!
'৯৪ এ লেখা এই প্রবন্ধটি প্রায় এক যুগ বাদে প্রথমবারের মত পড়বার সময় আমি নিজেও চমকে উঠেছিলাম! বস্তুত, জাহানারা ইমামকে শহীদ জননী হিসেবেই জানি, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান হিসেবে জানি- তিনি একজন সাধারণ মানবী নন, একজন অতিমানবী। ঠিক এরকম ভাবনাগুলোর সাথে সুচিত্রা সেন-এর ছবিটা মিলছিল না, সে কারণেই যখন তাঁরই সমবয়েসী ও সমকালীন সায়ীদ স্যারের লেখায় জানলাম, তৎকালীন যুব সমাজের কাছে তিনি ছিলেন ঢাকা শহরের সুচিত্রা সেন, এই প্রথমবারের মত অনেক কাঠিন্যের পেছনে তাঁর মানবী রূপটিও যেন সহসাই চোখে পড়লো।
অনেক রকমের স্মৃতিচারণের মাঝে এই নতুনত্বটুকু বেশ উপভোগ্য লাগলো।
----------------
এইট বা নাইনে পড়ি, কলেজ লাইব্রেরীর বাংলা বইয়ের শেলফের কোন এক কোনায় একটা বই সবসময়ে চোখে পড়তো, ক্যান্সারের সাথে বসবাস। লেখক- জাহানারা ইমাম। কখনো পড়িনি, পড়বার আগ্রহও বোধ করি নি, বরং ফেলুদার কীর্তিকলাপ বেশ কয়েকবার রিভিশান দেয়াতেই আগ্রহ ছিল বেশি। সেসময়েই একবার মুহম্মদ জাফর ইকবালের কোন একটা লেখায় জাহানারা ইমামের কথা পড়লাম, সহজ সরল জলের মতন ভাষায় জাফর ইকবাল কি লিখেছিলেন মনে নেই, তবে সেটা পড়ে চোখ ভিজে গিয়েছিল মনে আছে। পরের লাইব্রেরী ক্লাসেই ইস্যু করি ক্যান্সারের সাথে বসবাস। তারপরের সপ্তাহে- একাত্তরের দিনগুলি। এবং মন্ত্রমুগ্ধের মতন পড়ে যাই। একবার নয়, বেশ কয়েকবার। ফেলুদার বদলে রুমি-জামিই আমার খুব কাছের মানুষ হয়ে গিয়েছিল তখন। প্রায় চেনা ভঙ্গিতে এমন সুন্দরভাবে লিখেছেন তিনি, যেন তাঁকে সঙ্গী করেই সকল আনন্দ বেদনা অনুভব করতে করতে '৭১ এর ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ালাম বেশ কয়েকটা দিন।
তারপর, ক্রমশ বড় হই, বড় হতে হতে এই ভীষন বড় মানুষটার কথা যখন আরো বেশি করে জানতে পারি, শ্রদ্ধায় অবনত হয়ে যাই।
--------------
আজ শ্রদ্ধেয় জাহানারা ইমামের জন্মদিন। কাছের মানুষেরা তাঁকে আম্মা বলে ডাকে। অথবা কে জানে, আম্মা ডেকেই হয়ত সবাই তাঁর খুব কাছের মানুষ হয়ে যায়!
জন্মদিনের দিন মৃত্যুর কথা বলতে নেই। তবু যে মানুষটা চলে গেছেন, তাঁর জন্মদিনেও যেন তাঁকে হারাবার বেদনাটাই বেশি করে বুকে বেজে ওঠে।
ঢাকার রাস্তায় যখন জাহানারা ইমামকে কালো কফিনে শুইয়ে বিদায় জানানো হচ্ছিল, সেই কফিনবাহী লাশের পাশ দিয়ে যেতে যেতে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের কথাটুকু দিয়েই শেষ করি বরং-
" একটা ভারী কষ্ট গলা অব্দি উঠে এসে বুক চেপে বসে রইল। আমার চোখ ছাপিয়ে পানি টলমল করে উঠল, কিন্তু মাটিতে পড়লো না। আমরা এখন আর কাঁদি না। বয়সের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জেনেছি, যে দুঃখের অশ্রু একবার মাটিতে ঝরে, সে দুঃখকে মানুষ হারিয়ে ফেলে।''
-------------
আপনার জন্যে বুকের গভীর থেকে উঠে আসা ভালবাসা জানাই শহীদ জননী। কখনো কোন মানুষের জন্যে যদি অমরত্ব প্রার্থনা করার সুযোগ পেতাম, নিঃসন্দেহে সেটা আপনিই হতেন।
মন্তব্য
শহীদ জননীর জন্মদিনে লেখা, এখানে তুলে রাখলাম।
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এই লেখাটি আপনি বছরে একবার করে পোস্ট করতে পারেন, পুরনো হবে না।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জুবায়ের ভাইয়ের সাথে একমত।
এ লেখা কখনো পুরাতন হবে না কনফু। প্রতি বছরই এই লেখা নতুন করে পড়া সম্ভব।
কনফুর গদ্য, আমার মত মানুষের সেই গদ্যের মান বিচার করার সামর্থ্য এখনো হয় নি। (লেখাটা আগেও পড়েছিলাম, আবার ও পড়লাম।)
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?
সায়ীদ স্যারের বইটা, বিদায় অবন্তি এত ভালো লাগে পড়তে। ক্যান্সারের সঙ্গে পড়িনি। পড়বওনা। যে বইটা সঙ্গে রাখতে চাই সবসময়, একাত্তরের দিনগুলি
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
একাত্তরের দিনগুলি মোট তিনবার পড়েছি। এই বইটা এমন যার আবেদন কখনো ফুরায় না। আরেকটা বই তিনবার পড়েছি- যদ্যপি আমার গুরু। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আম্মাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
যদ্যপি আমার গুরু শুড়ি বাড়ি যায়
তথাপি তাহার নাম নিত্যানন্দ রায়
কয়বার পড়ছি? তিনবার থেকে বেশিই হবে। আরেকটা আছে অনেকবার পড়ার তালিকায়। সুনিলেন একা ও কয়েকজন। নিজেরে বাদল ভাবতে খুব ইচ্ছে করে।
*অফ টপিক হয়ে গেল মনে হয়।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কনফু, লেখাটা কখনকার বুঝতে পারছি না। আপনি মনে হয় জন্মদিনে লিখেছিলেন। আম্মার জন্মদিন ৩মে, ১৯২৯ আর প্রয়াণ ২৬ জুন, ১৯৯৪।
_______________________________________
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
প্রণমি তোমায় মাতা
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
প্রণমি তোমায় মাতা
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-যা দেখি তা-ই বলি...
হু, জন্মদিনেই লেখা। প্রথম মন্তব্যে সেটাই উল্লেখ করেছি।
বাকি সবার মন্তব্যও ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
কনফুসিয়াস ,
সত্যি আপনার সব লেখার মতই এই লেখাটিও অসাধারন হয়েছে,
আমার একজন বন্ধু কনফুকে আবেগাপ্লুত ধন্যবাদ জানিয়েছেন লেখাটার জন্য।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বইটা পড়ে খুবই নাড়া খেয়েছি। এখন আপনার এই লেখাটা পড়েও ওরকম অনুভূতি হলো।
নতুন মন্তব্য করুন