প্রিয় সেগুন বাগান

কনফুসিয়াস এর ছবি
লিখেছেন কনফুসিয়াস (তারিখ: শুক্র, ১৯/১০/২০০৭ - ৯:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খুব সিরিয়াসলি সত্যজিৎ রায় হতে চাইবার আগে আমি তারচেয়ে সিরিয়াসলি হতে চেয়েছি ম্যাকগাইভার কিংবা মিঠুন চক্রবর্তী। এই দুইয়ের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বন্ধুদের নিয়ে গোয়েন্দা দল বানিয়ে আমি প্রায় হয়েই গিয়েছিলাম কিশোর পাশা। গোয়েন্দা রাজু খুব বেশিদিন আমার সহচর ছিলো না। কাকাবাবু বা ফেলুদা পড়েছি, তবে হতে চাই নি কোনদিন। এখন এই আধাযুবক বয়সেও ছেলেবেলার যে হিরোর আবেদন একটুও কমেনি আমার কাছে, সেই দুর্দান্ত ছোকরার নাম 'মাসুদ রানা'। হু, ইনি তিনিই, যে 'টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না।'
এইরকম স্বার্থপর একটা বর্ণনাই বোধকরি আমাদের মাসুদ রানার প্রতি আগ্রহী করে তুলেছিলো। আরো অনেক কারণও ছিলো। সদ্য কিশোর তখন আমরা, এরকম একটা সময়ে প্রতিবার বিপদে পড়া বাংলাদেশকে বাঁচাতে, অথবা কোন বন্ধুরাষ্ট্রকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে যখন কাঁচা পাকা ভুরুর মেজর জেনারেল রাহাত খান অফিসে ডেকে পাঠাতেন মাসুদ রানা-কে, আমরা সেই সময় আরো একটি চমৎকার স্পাই থ্রিলারের আশায় বসের সামনে বসা মাসুদ রানার কানের পাশে সমানে ফিসফিস করে বলে যেতাম, 'রাজি হয়ে যা ব্যাটা, রাজি হয়ে যা।'
সোহানা চৌধুরির আদুরে ভালোবাসার লোভ ছিলো হামেশাই। সেই সাথে প্রতি পর্বে নতুন কোন স্বর্ণকেশিনীর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াটাতো অনিবার্য। এইরকম গল্প গুলোই তখন আমাদের কাছে সোনামাখা স্বপ্ন হয়ে দেখা দিতো।

এইবার দেশে গিয়ে নিজেকে সাংসারিক সকল বাঁধনে জড়ানোর ব্যবস্থা করার ফাঁকে ফাঁকেও বেশ মনে হচ্ছিলো এই 'কোনদিন বাঁধনে না জড়ানো' যুবকের কথা। আমার ফেলে আসা পুরনো বইগুলোর ভীড় থেকে টেনে বের করি মাসুদ রানা সিরিজের আমার খুব পছন্দের একটি বই 'মুক্ত বিহংগ'। এই গল্পের আর দুটি প্রধান চরিত্রও আমার ভীষন পছন্দের ছিলো, মাইকেল সেভারস আর এনি উইসপার।

ঠাকুমার ঝুলি দিয়ে হাতে খড়ি হবার পর, আমার পুরো ছেলেবেলাটাই কেটেছে সেবা প্রকাশনীর বই পড়ে।
অনেকেরই দেখি সেবা প্রকাশনীর বইগুলো নিয়ে নাক উঁচু একটা ভাব রয়েছে। খুব প্রিয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদও একবার এরকম কিছু বলেছিলেন, সেবা প্রকাশনীর সস্তা বইগুলো পড়ে নাকি আমাদের ছেলেমেয়েরা গোল্লায় যাচ্ছে। এটা পড়ে ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি নিজের ও আমার বন্ধুদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সেবা প্রকাশনীর ঐ সস্তা ও অগভীর থ্রিলার বইগুলোই আমাদের দেশের কিশোরদের বই-পড়ুয়া হিসেবে বড় হতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। একেকটা স্বপ্নের রাজ্যের দরোজা খুলে দিত সেইসব অবাস্তব ফিকশানগুলোই। আমি নিজের কথা বলতে পারি, ঐ বয়সে সেবা'র বই না হলে পড়বার অভ্যাসটাই হয়তো ঠিকমতন গড়ে উঠতো না। আর সেটা না হলে বিশ্বসাহিত্যের অন্য সব বইগুলোও আমার ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে যেত নিশ্চিত। তাই সুরুচির পতাকাধারীদের ভুরু বেঁকে গেলে যাক, আমার রুচির ফিল্টারে বিশাল বিশাল ফাঁক। তা দিয়ে পটেমকিন জাহাজ যেমন করে বেরিয়ে যায়, তেমনি যায় ক্যাসিনো রয়্যালও। আবার সে ভাবেই গোর্কী আর কাজীদা সেখানে পাশাপাশি চলেন।

রকিব হাসান নিজেই তখন আবু সাঈদ নামে লিখতেন গোয়েন্দা রাজু। জাফর চৌধুরিও কি ওনারই ছদ্মনাম ছিলো? মনে নেই সেটা, তবে রেজা-সুজার সেই রোমহর্ষক সিরিজও পড়তাম ভালই। কুয়াশা সিরিজ মোটামুটি লাগতো, আর তিন গোয়েন্দা ছিলো অসাধারণ। তারপর বয়সের দাবী অনুযায়ীই হাতে চলে এল গরমাগরম মাসুদ রানা। শেখ আব্দুল হাকিম আর খন্দকার মাজহারুল করিমের রোমান্টিক বইগুলোও লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তাম। কিশোর ও রহস্যপত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম অনেকদিন।

ক্লাশের তাড়াহুড়া না থাকলে দুপুরের দিকে ঘুম ভাঙ্গে আমার। আজ কেমন করে জানি খানিকটা ব্যতিক্রম হলো, কাক নেই, তাই তার ডাকও শোনা যায় না এখানে, তবে আমার জন্যে সেটা কাক-ডাকা ভোরই আসলে। কি ভেবে আধ-পড়া ইলিয়াস আর মানিক বন্দ্যো-র মাঝখান থেকে টেনে নিলাম মুক্ত বিহংগটাকেই। বহুদিন পরে আবার একটা সকাল বেশ ঝলমলে হয়ে গেল। ছাপোষা জীবনে অভ্যস্ত আমার হঠাৎ করেই ইচ্ছে হলো আফ্রিকার গহীন জঙ্গলের মাঝ দিয়ে চারটে ট্যাংকের বিশাল বহরকে চালিয়ে নিয়ে যেতে।
এই কৈশোরিক আনন্দে ভরা চপল সুন্দর সকালটুকুর জন্যে তাই কৃতজ্ঞতা জানাই কাজী আনোয়ার হোসেন ও তার সেগুন বাগান প্রকাশনীকে। অনেক ধন্যবাদ আপনাদের কাজীদা, এক স্বপ্নবাজ কিশোরের ছেলেবেলাকে বাঁধনে জড়িয়ে নেবার জন্যে।


মন্তব্য

সংসার সমালোচক এর ছবি

খসরু চৌধুরির অনুবাদ পড়ছো কখনো?

জানো, এই লোকটা আমাদের স্কুলে পড়াতে আসছিলো। বি.এড না এম. এড করতে আসছিলো।
আমার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগতো কুয়াশা। কেন জানিনা।
মাসুদ রানা একটু চুপেচাপে পড়তে হইতো। খাইছে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হায় সেই সব দিন!!

অতিথি এর ছবি

"
আমি নিজের ও আমার বন্ধুদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সেবা প্রকাশনীর ঐ সস্তা ও অগভীর থ্রিলার বইগুলোই আমাদের দেশের কিশোরদের বই-পড়ুয়া হিসেবে বড় হতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। একেকটা স্বপ্নের রাজ্যের দরোজা খুলে দিত সেইসব অবাস্তব ফিকশানগুলোই। আমি নিজের কথা বলতে পারি, ঐ বয়সে সেবা'র বই না হলে পড়বার অভ্যাসটাই হয়তো ঠিকমতন গড়ে উঠতো না।
"

২০০% একমত । সেবা প্রকাশনীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞতা ।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

বাংলা ভাষায় ফিকশানের অনুবাদ সেবা প্রকাশনীরটাই সব চেয়ে ভালো। আব্দুল্লাহ আবু সাইদ সাহেব যাই বলুক জুল ভার্ন,মার্ক টোয়েন, ডেনিয়েল ডিফো,রবার্ট লুই স্টিভেনসানর লেখার অনুবাদ সেবারটা অনবদ্য।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এক সময় সেবা প্রকাশনীর অনুবাদগুলো গোগ্রাসে গিলেছি। সত্যিই ওদের অনুবাদ খুব সুন্দর, প্রাণময়।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

আ আ সায়ীদ শ্রদ্ধেয় মানুষ, কিন্তু সেবা প্রকাশনীর মূল্যায়ন তার একদমই ভুল। ৮০ আর ৯০'এর দশকে বাংলাদেশের পোলাপানরে বই-মুখী করাতে সেবার যে বিরাট অবদান, তা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তার চেয়ে বড় কথা - বিশ্ব সাহিত্যের যে সুবিশাল ভান্ডার সেবা বাংলাভাষীদের কাছে এত নিপুণ অনুবাদের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলো - যেমন কিশোর ক্লাসিক সিরিজ - সেটা দুই বাংলায় আর কোন প্রকাশক করতে পেরেছে? আর তিন গোয়েন্দা আর সেবার ওয়েস্টার্ন সিরিজ পড়ার মতন নিরেট, খাঁটি, বিশুদ্ধ, ১০০%-প্রুফ, সকাল-দুপুর-বিকেল-পার-করে-দেয়ার মজা - সেটাই বা আর কোথায় পেতাম আমরা তখন (ম্যাকগাইভার বা থান্ডারক্যাটস ছাড়া)?! এই হরদম ইন্টারনেট, ভিডিও গেম আর কেব্‌ল টিভির যুগের বই-বিমুখ পোলাপানের জন্যে দুঃখই লাগে মাঝে মাঝে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ভানু এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল। সেবার বই এখন আর পড়া হয়না, কিন্তু মনের টানটা রয়ে গেছে, রয়ে যাবে। মাঝে মাঝে ভাবি বই তখন পড়তাম না খেতাম! সেবা নিয়ে কেউ বাজে বললে তাই ভালো লাগেনা। আমি নিজে সেবার অনুবাদ আর তিন গোয়েন্দা গোয়েন্দা রাজু পড়ে বড় হয়েছি, তাই কেউ যখন বলে এগুলো পড়ে ছেলেপেলে বখে যায়, আমার তখন হাসিই পায়। কে বলে সেবার অনুবাদ খারাপ। আগে পরে আরও অনেক অনুবাদই পড়েছি আমি। বাংলা একাডেমীর অনুবাদও তো পড়েছি। তবু কই সেবার অনেক অনুবাদ এখনও মনে পড়ে কত উন্নত ছিল। সেই সময় সেবার বইগুলো আমার যে কল্পনার একটা জগৎ করে দিয়েছে সেটার জন্য সেবার কাছে আমার অনেক ঋণ।
ভালো থাকো সেবা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সেই সময়গুলোতে সারা দেশে যে কতো কিশোর গোয়েন্দাদল গড়ে উঠেছিলো হাসি
তিনগোয়েন্দার ভুত আমাদের চেপেছিলো ক্লাস সিক্সে । ক্লাশে বসে বসে লুকিয়ে বই পড়া । কি জানি,সেবার বইগুলো চুমওকের মতো না টানলে হয়তো বই পড়ার নেশাটা তৈরীই হতোনা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হিমু এর ছবি

সেবা প্রকাশনীর কাছে আমৃত্যু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাবো সুন্দর একটা শৈশবের জন্য। সময়ের সাথে কিছুটা মান কমেছে হয়তো, কিন্তু চমৎকার সব ক্লাসিক অনুবাদ করে সস্তায় ছেলেপিলেদের কাছে পৌঁছে দেয়ার যে বিরাট কাজটা তাঁরা করেছেন, তার তুল্য কাজ কমই হয়েছে। কত অল্প বয়সে পড়েছিলাম অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট, জাহিদ হাসানের আশ্চর্য ঝরঝরে অনুবাদ, কী প্রচন্ড মন খারাপ হয়েছিলো বইটা পড়ে, পরে যখন ইংরেজি বইটা পড়েছি, মন খারাপ হয়েছিলো হারিয়ে যাওয়া শৈশবের কথা মনে পড়ে। সেলিম হোসেন টিপুর দুর্দান্ত অনুবাদে পড়েছি এক একটা সেরা কল্পবিজ্ঞানের গল্প বা ছোট গল্প, কাজী মাহবুব হোসেনের ওয়েস্টার্নগুলি, শামসুদ্দিন নওয়াব ছদ্মনামে কাজী আনোয়ার আর শেখ আবদুল হাকিমের করা চমৎকার সব রোমাঞ্চোপন্যাস। এমন কোন দিন নেই যেদিন কোলের ওপর বই রেখে পড়তে পড়তে ভাত খাইনি। এখনও মাঝে মাঝে বুকশেলফের গহীন অন্দর থেকে বার করে পড়ি কিছু কিছু বই, এর সাথে যে আনন্দ আর যে বিষাদ জড়িয়ে থাকে, তার কোন তুলনা হয় না।

সেবা প্রকাশনীকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আর কনফুকেও।


হাঁটুপানির জলদস্যু

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঠিক কথা। সেবা-র অনুবাদ সবচেয়ে সুন্দর আর সমৃদ্ধ। বাংলাদেশী বা পশ্চিমবংগের আর কোন অনুবাদ এত সুন্দর নয়।
আমার এখন আরো অনেক কিছু মনে পড়ছে। অশুভ সংকেতের তিনটে বইয়ের সিরিজ, পড়ে ভীষন ভয় পেয়েছিলাম। কাজী মাহবুব হোসেনের অনুবাদ ছিলো কি ওটা?
অল কোয়ায়েট আমারো প্রথম পড়া সেবারটাই। আর, শী এবং রিটার্ণ অব শী-র কথা মনে আছে কারো? দুর্দান্ত!
বলতে গেলে আসলে কিছুতেই শেষ হবার নয়।
ফাইভে বৃত্তির টাকা প্রথমবার হাতে পেয়ে মনে আছে, একগাদা তিনগোয়েন্দা কিনে বাসায় ঢুকেছিলাম!

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আহ্... আবারো স্মৃতি তড়পানোর ঝামেলায় ফেললেন ? ইশকুলে নীল প্যন্ট পরতে হইতো... আমি সবসময় প্যান্ট বানানের সময় পকেট বড় রাখতাম... একটা সেবার বই আঁইটা যায় যাতে। তিন গোয়েন্দা আর মাসুদ রানার ফ্যান হিসাবে নিজেরে মনে হইতো গোয়েন্দা টোয়েন্দা... পকেটে একটা বক্স রাখতাম... তাতে নানারকম যন্ত্রপাতি থাকতো... বলা তো যায়না... কখন কি কাজে লাগে না লাগে...
আমার বেশিরভাগ সময় থাকতো দোতলা বই... মানে পাঠ্যবইয়ের নিচে সেবার বই। একবার তিন বন্ধু মিইলা গেছিলাম সেগুনবাগে... দেখা করতে কাজীদার সাথে... মেলে নাই। আহ্ বাল্যবেলা।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নিঘাত তিথি এর ছবি

আসলেই পাঠক তৈরীতে সেবার ভূমিকা অসাধারণ। মনে হয় না এমন কেউ আছে যে বই পড়ে অথচ কিশোরবেলায় তিন গোয়েন্দার একজন হতে চায় নি। বড় হয়ে গোয়েন্দা হবার এম্বিশানও বোধহয় সবারই একটাকালে ছিলো।
আর অনুবাদের কথা বললে সেবা প্রকাশনীর চেয়ে ভালো অনুবাদ আর কোথাও হয় না, এটা জোর গলায় বলতে পারি।
--------------------------------------------------

-- আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

কনফুসিয়াস লিখেছেন:

অনেকেরই দেখি সেবা প্রকাশনীর বইগুলো নিয়ে নাক উঁচু একটা ভাব রয়েছে। খুব প্রিয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদও একবার এরকম কিছু বলেছিলেন, সেবা প্রকাশনীর সস্তা বইগুলো পড়ে নাকি আমাদের ছেলেমেয়েরা গোল্লায় যাচ্ছে।

সেবার কিছু আলতু-ফালতু বই আছে সত্য, কিন্তু সেইটা কোন প্রকাশনীর নাই? এপার-ওপার দুই বাংলাতেই প্রথিতযশা সাহিত্যিকরা স্রেফ পয়সা বানানোর ধান্দায় প্রতিবছর যেসব জন্জাল প্রসব করেন সেটা নিয়ে কাউরে কিছু বলতে শুনি না কেন?

আমি একটা জিনিস দেখছি, যারা সেবার বই নিয়ে আউল-ফাউল কথা বলে তারা কেউই আসলে সেবার ভাল বইগুলি পড়ে নাই ... সায়ীদ স্যারও পড়েন নাই নিশ্চিত ...

যারা ইংলিশে থ্রীলার-টীলার পড়েন তারা জানেন ম্যান অন ফায়ার আর দ্য ডে অফ দ্য জ্যাকলের কথা ... দুইটা নিয়েই হলিউডে মুভি হইছে ... ম্যান অন ফায়ারের মেইন রোলটা করছে ডেনজেল (হিন্দীটায় বচ্চন সাহেব) ... সেইসব মুভি দেইখা আজকালকার জেনারেশন মুগ্ধ হয় ... আমরা কিন্তু অনেক আগে থেকে এইসব ক্লাসিক থ্রীলারের টেস্ট পাইছি অগ্নিপুরুষ আর সেই উ সেনের মাধ্যমে ... চারিদিকে শত্রু, আই লাভ ইউ ম্যান, লেলিনগ্রাদ, অপহরণের মত বই এই জেনারেশন আর পড়বে না ... কাকাতুয়া রহস্য কিংবা রক্তচক্ষু উদ্ধারের নেশায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হবে না ... এতে যে একসময় আলটিমেটলি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীরই বারোটা বাজবে সেটা বুঝতে সায়ীদ স্যারদের আর কয়দিন লাগবে কে জানে?

ক্লাস ফাইভের বৃত্তির পরে আমারে একজন একটা নীল চামড়ার মলাটের ইয়া মোটা বই কিনে দিছিলো ... জুলভার্ন রচনাসমগ্র ... কলকাতার কোন একটা প্রকাশনীর অনুবাদ ... সর্বভুক ছিলাম ... ঝাঁপায়ে পড়লাম ... দুইটা উপন্যাস শেষ কইরাই বন্ধ করলাম ... এই গাঁজাখুরি মানুষ লিখে কেমনে ...

সেই আমিই মাত্র একইছর পরে সেবার সবগুলি জুলভার্নের ভলিউম কিনছিলাম ঈদের সালামীর পয়সা বাঁচায়ে ...

মাসুদ রানা, তিন গোয়েন্দা আর ওয়েস্টার্নের সাহিত্যমূল্য নিয়া তথাকথিত বিদগ্ধরুচির মানুষদের সমস্যা থাকতে পারে ... কিন্তু টম সয়্যার, হাক ফিন আর প্রিন্স অ্যান্ড দ্য পপারের সাথে পরিচয় করায়ে দেয়ার জন্য কি সেবার কাছে আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ না?

নিউমার্কেটের একটা দোকান আছে, যেটায় এখনো শেলফ ভর্তি সেবার বই পাওয়া যায় ... আমি যখনি যাই সেখান থেকে এক বান্ডিল বই কিনি ফোরে পড়া ছোট ভাইটার জন্য ... পোকিমন, জিটিএ ভাইসসিটি আর স্পাইডারম্যান থ্রী সম্বল কইরাই যেন সে বড় হয়া না যায় ...

কনফুসিয়াস এর ছবি

কিংকং এর মন্তব্যটা একদম বাঁধাই করে রাখার মত হইছে!
দেখা যাচ্ছে, সেবা-র জন্যে তাহলে সবারই টান আছে!

-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

ভুতুম এর ছবি

সেবা সেবাই। যে সেবা করে যাচ্ছে বইপড়ুয়া কিশোরদের, তা অনেকের নাকসিঁটকানোতে ম্লান হবে না।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আহ, সেবা !! আকৈশোরের ভালোবাসা ! ! !
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

সোহেল ইমাম এর ছবি

সুন্দর লেখা। ভাগ্যিস লিংকটা দিয়েছিলেন, নইলে এমন সুন্দর লেখাটা পড়া হতোনা। সত্যিই সেবা প্রকাশনীর বই ছাড়া সেই মনোমুগ্ধকর সময়ের শৈশবটা হয়তো সম্ভবই ছিলনা।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।