উকুন বাছা দিন। ১৬। জন্মান্তর

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: মঙ্গল, ২৫/০৩/২০০৮ - ১১:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জন্মান্তর

কোনো বাবা থাকবে না। মায়ের রং শ্যামলা। বয়েস বত্রিশ। একদিন কমবেও না বাড়বেও না। কমবয়েসি মা’দের আপা আপা মনে হয়। আর বত্রিশের পরে তারা রাক্ষুসী হয়ে যায়। মায়ের বয়েস বত্রিশই থাকবে। আমার বয়েস দশ। আমার জন্মও হবে দশ বছর বয়সে। চা বাগানে। ওখানে আমার কেউ চাকরি করবে না। কিন্তু ওখানেই বাসা হবে আমার। উঁচু একটা টিলাতে। পেছনে খাসিয়া বস্তি। ওদের ছেলে সুবই থাকবে আমার সাথে। কোমরে ঝোলানো পাথর ভর্তি ব্যাগ। হাতে ধনুকের গুলতি। আমার দুটো সুবইর দুটো; মোট চারটে কুকুর নিয়ে খালি পায়ে বনে বনে ঘুরব সারাদিন। পাখি মারব। ধনুকের মুঠোয় লাগাব পাখির রক্ত। তাতে নিশানা ভালো হবে। বুনো আলু তুলে পুড়িয়ে খাবো। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাব কিনাই ছড়ার দিকে। কুড়াব গোল গোল পাথর; পাখি মারার জন্য। ফিরতি পথে নিশানা প্র্যাকটিস করব বিভিন্ন জনের মাচানে ঝুলন্ত লাউ-কুমড়ায়। ছোট ডোবায় নেমে ধরব টাকিমাছ- কাঁকড়া। খাবো আগুনে পুড়িয়ে। এরই মাঝে ফুটবে ঠাস ঠাস মার্বেল। কিংবা আঁকাবাঁকা সাপের মাথা লক্ষ্য করে ছুটবে গুলতি। ছুটব আমরা। আমি- সুবই- নৃপেন। লেজে ধরেই পৃথিবী গোল। মাথার উপর শূন্যে ঘুরবে সাপ

ঘরে ফিরেই মায়ের সামনে চোর। মা তার বিছানা ওল্টাবে লিকলিকে বেতের জন্য। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরব তার কোমর। মা ঘুরবে। ঘুরব আমিও। তারপর মায়ের হাসি- ছাড় ছাড় জঙ্গলি। এই ময়লা হাতে আমাকে ধরবি না। যা গোসল করে আয়। মা ব্যস্ত হয়ে পড়বে ভাত বাড়তে

রাতে আসবে নায়েব আলী। বেঁটে। মুখে বিশাল দাড়ি। মাথায় টাক। নায়েব আলী যতদিন আসবে ততদিনই শীত থাকবে। চাদর মুড়ি দিয়ে হাতে বানানো বিড়ি টানতে টানতে বসবে উঠানে জ্বালানো আগুনের পাশে। বসব আমরাও কুকুর দুটোসহ। বিড়ির ধোঁয়ায় চোখ কুঁচকে আগুনের দিকে দুু’হাত বাড়িয়ে নায়েব আলী শুরু করবে- বুঝলা... আগুন তাপানি অইলো আউগ্গানি-পেউচ্ছানি আর খাউজ্জানি। পয়লা শীত লাগব; তুমি আউগ্গাইয়া বসবা। হেরপর গরম লাগব; তুমি পাছাইয়া বসবা। হেরপরে দ্যাখবা শইলে খাউজ্জাইতাছে। তয়... শিয়ালডা দ্যাখল তার ল্যাজ কাডা পরছে। মনে মনে কইলো এইডাদো শরমের কতা। মুখ দ্যাখামু ক্যামনে। তয় হ্যায় আবার আছিল একটা এক নম্বরের ফককর। কী করন যায় অহন। চিন্তা করল শুইয়া শুইয়া। তার পরে না; দিলো একটা দৌর। এক দৌরে গুষ্টির কাছে গিয়া কইল- হুনো আমার বাই বেরাদর। আমি গবিশন কইরা দ্যাখছি ল্যাজ আমাগো কুনু কামে লাগে না। উল্টা গু-মুত লাইগ্যা হুগাইয়া লাডি অইয়া থাহে। তাই দিছি কাইট্যা। তুমরাও...
চলবে অনেক রাত পর্যন্ত নায়েব আলীর গল্প। নায়েব আলী প্রথম আমাদের বাসায় আসবে মায়ের কাছে সার্ভেন কথার মানে জানতে। অর্থ জেনে খুঁটিতে হেলান দিয়ে ধপাস করে বসবে মাটিতে। চুলহীন মাথায় হাত চাপড়াতে চাপড়াতে- চোখের পানিতে দাড়ি ভিজিয়ে বিলাপ করবে মায়ের উদ্দেশ্যে- মাইরা ফালান নানি। ছুডু থাকতে পোলা-মাইয়াগো গলা টিপ্যা মাইরা ফালান। তও শান্তি। ... আমি তালের পিডা নিয়া গেছি। হ্যায় তার বন্দুগো কয়- বাইত থাইকা মায় সার্ভেন পাডাইছে পিডা দিয়া...। মাইরা ফালান বিষ দিয়া। পোলার মুখে সার্ভেন হুননের আগে মাইরা ফালান সব...

এর পর থেকেই নায়েব আলী আসবে রোজ। প্রায় প্রতি রাত মা তাকে ধমকে বিদায় না করা পর্যন্ত থাকবে। আমাদের শোনাবে গল্প

ভোরে মা নিজে গাই দোয়াবে। আমি বাছুর ধরব। গরুঘরের পাশে আখের পাতা খাওয়াব। আর এলুমিনিয়ামের পাতিলে দুধ পড়ার রিনঝিন শব্দ শুনব কান পেতে। এরই মাঝে ধনুকের গুলতি হাতে এসে দাঁড়াবে সুবই। আমি চিৎকার দিয়ে উঠব- হেঞ্-এ সুবই উয়ে... বালাবালি দাহাং?
- দাহাং দাহাং। যাইতোনানি?
বাছুর ছেড়েই এক দৌড় ঘরে। গুলতি আনতে। বাছুরের ধাক্কায় মায়ের হাত থেকে পড়ে যাবে দুধের পাতিল। মা ডাকবে। কিন্তু আমি আর সুবই হাওয়া

সারাদিন সুবইর সাথে ঘুরব। আবার স্কুলেও যাব। ... আমার জন্য প্রতিদিন দুটো সকাল হবে। একটা সকালে যাব সুবইর সাথে পাখি মারতে। আরেকটা সকালে যাব স্কুলে। স্কুল হবে শুধুমাত্র প্রাইমারি স্কুল। কোনো হাইস্কুল- কলেজ কিংবা ভার্সিটি থাকবে না। শুধু প্রাইমারি স্কুল। এবং ওখানে আমার জীবনের লক্ষ্য নামে কোনো রচনা লিখতে হবে না। আমার নামে হেডস্যারের কাছে কোনো অভিযোগ গেলে তিনি বলবেন- এ আমার পুত। এ ছেলে দুষ্টামি করতেই পারে না। তোমরা মিথ্যে বলছ। তারপর সবাই চলে গেলে আমাকে বলবেন- ছেলে হাড্ডি বেছে ফেলব আর যদি কোনো কমপ্লেন আসে। যাও

আমি পড়ব ক্লাস ফোরে। ক্লাস টিচার আপাকে প্রতিদিনই বলব আপা আমার জ্বর।
- কই দেখি বলে তিনি আমার কপালে হাত দেবেন। তখনই জ্বর চলে যাবে। আপা হাসবে। পকেটে সব সময় থাকবে নিজের বানানো গলাকাটা লাটিম। টিফিনে ঘোরাব স্কুলের বারান্দায়। সবাই দাঁড়িয়ে দেখবে। হইচই করবে। এই অপরাধে একদিন আপা আমার লাটিমটি নিয়ে যাবে। মোটেই দেবে না। সব শেষে বলবে- স্কুলে না। বিকেলে বাসায় আসিস। আমি বাসায় যাব। উঁকি দেবো দরজায়। পত্রিকা ফেলে আপা ডাকবে- আয়। আমি এগুবো ভয়ে। আমার কপালে হাত দিয়ে বলবে- জ্বর নেই এখন?
- আপা লাটিমটা....
- পাঁজি। দাঁড়া ভালো করে তোর জ্বর দেখে নেই আগে
আমাকে কান ধরে টেনে নেবে তার কোলের কাছে। মাথাটা চেপে ধরবে বুকে। আমার গালে তার গাল। তার ঝুঁকে পড়া দীর্ঘ চুলে ঢেকে যাব আমি। আপার বুকে এক অপূর্ব ঘ্রাণ। আমি চুপচাপ। সেও। অনেক্ষণ। এক সময় সে বলবে- আমার জ্বর দেখবি না?
আমি হাত বাড়াব তার কপালে। ঝটকায় হাত টেনে নিয়ে সে গুঁজে দেবে বুকে- দেখ ভালো করে দেখ। ...না আরো ভালো করে দেখতে হবে...। আমাকে ছুটতে দেবে না
- জ্বর কতো?
- নেই
- নেই?
- না। তবে ডাক্তার দেখান। আপনার টিউমার
ধাস করে একটা চড় পড়বে গালে- ফাজিল। বুকের কাছে চেপে ধরে কানে কানে বলবে- দেখাব। তুই যেদিন ডাক্তার হবি সেদিন তোকে দেখাব

অন্তরা কান্নাকাটি করে অভিযোগ দেবে। তার খাতায় আজেবাজে কী লিখেছে কে যেন। আপা গম্ভীর- কে লিখেছে? আমি জানি কার হাতের লেখা এটি। নিজে স্বীকার করলে কিছুই বলব না। বলো কে লিখেছ?
সবাই নিরুত্তর। চুপচাপ। অন্তরা আমার দিকে তাকাবে- থাক আপা আবার লিখলে বলব। আপা বেরিয়ে গেলে অন্তরা বলবে- তোকে মাপ করে দিলাম
- আমি মাপ চাইনি
- বলব আপাকে তোর নাম?
- বল। আমিও আমার খাতায় দেখাব তোর লেখা
- তুই একটা অসভ্য

আপা আমাকে অফিসে ডাকবে- ভীষণ মার দেবো তোকে। তুই এত বাজে? খবরদার আর এসব করবি না। তুই আমাকে লিখবি যা লিখার। আমি উত্তর দেবো
সে দিনই লিখব আপাকে- আপা আমি ডাক্তার হব। ডাক্তার কীভাবে হতে হয়? কতো দিন লাগে?
আপা কিন্তু এ চিঠির উত্তর দেবে না কোনোদিন

দেখ্ দেখ্ দেখ্ আকাশ পরিবহন। এটা আকাশ দিয়ে চলে। লক্কড়-ঝক্কড় মার্কা বাসটা দেখাবে শংকর। হিঃ হিঃ হিঃ শালা মাটি দিয়েই চলতে পারে না। আবার আকাশ পরিবহন
আকাশে উড়তে না পারলেও একদিন আকাশ পরিবহন শংকরের মাথায় উপর দিয়ে চলে যাবে। রক্তাক্ত শংকর। মৃত। কিচ্ছু ভাল্লাগবে না। থেমে থাকা আকাশ পরিবহনের গ্লাস চুরমার করে দেবে আমার লাটিম। অন্তরা আমাকে অসভ্য বলবে না। আপা আর জ্বর দেখবে না। হেডস্যার ছুটি দিয়ে দেবেন স্কুল। আমি সারাদিন চিন্তা করব কীভাবে ডানা লাগিয়ে ওড়া যায়। যাতে কোনোদিন আকাশ পরিবহন মাথার উপরে উঠতে না পারে

আফজাল আর আমাদের সাথে কথা বলবে না। কারণ বড়ো হলে তাকে আমি পুলিশের মন্ত্রী বানাতে রাজি হইনি। আমি একা কেন। কেউই রাজি হয়নি। যখন আমি বলেছি যে বড়ো হলে আমি প্রেসিডেন্ট হব তখন কাকে কী বানাতে হবে তা প্রত্যেকে আমাকে বলেছে। আফজাল বলেছিল তাকে যেন পুলিশের মন্ত্রী বানাই। কিন্তু ওকে আমাদের কারোই ভাল্লাগে না। তাকে না করে দিয়েছি। মিজানুরকে দিয়েছি ওই পদ। যদিও সে সেনাবাহিনীর প্রধান হতে চেয়েছিল। কিন্তু ও বেশি রকম বেঁটে আর মোটা। সেনাবাহিনীর প্রধান হয়ে ব্যাজ আর স্টার পরলে ওকে মানাবে না। তাছাড়া আর্মির বেল্ট ওর মাজায় লাগবেও না। সেনাপ্রধানের জন্য কম বুদ্ধির লম্বা কেউ একজনকে পরে খুঁজে নিলেই হবে। মিজানুরের বুদ্ধি অনেক বেশি। কোনো কিছু হারিয়ে গেলে সে খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারে। সে পুলিশের মন্ত্রী হলে খুব ভালো করে চোর ধরতে পারবে

আমাদের স্কুলের এক কিলো দূরে একটা মাত্র কলেজ থাকবে। হেডস্যারের বড়ো মেয়ে পড়বে সেখানে। সকালে হেডস্যার স্কুলে আসার সময় তাকে সাথে করে নিয়ে আসবেন। তারপর আমাকে ডেকে বলবেন- পুত যাওতো; তোমার আপাকে কলেজে এগিয়ে দিয়ে এসো

তখন আমার ক্লাস কিংবা বেত আনা সব মাপ। আমি আপার সাথে হাঁটতে হাঁটতে কলেজের দিকে যাব। তার পাশে হাঁটতে হাঁটতে মেলানোর চেষ্টা করব মুন্নির বুকটা আপার বুক থেকে ছোট না সমান। মুন্নিতো মাত্র ফাইভে পড়ে। তবে কি ফাইভের পর আর বুক বড়ো হয় না মেয়েদের? মিজানুরকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ও তার পাশের
বস্তিতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে অনেক কিছু দেখে। সে বলতে পারবে। আপা আমাকে সামনে হাঁটতে বলবে। কিন্তু আমি তার থেকে একটু পেছনে হাঁটব। সে বই ধরে বামহাতে বুকের সাথে চেপে। আমি সবসময় তার ডান দিকে থাকব

একদিন সে কলেজে গান গাইবে। আমাকে যেতে বলবে। সে গাইবে- জীবন মানে যন্ত্রণা- নয় ফুলের বিছানা। পরে তাকে জিজ্ঞেস করব ফুলের বিছানা কী। সে বলবে- ওসব কিছুই না। কথার সাথে কথা মেলানোর জন্য যারা গান লেখে তারা ইচ্ছামতো কিছু শব্দ লাগিয়ে দেয়। এগুলোর কোনো অর্থ থাকে না। তবে... ফুলশয্যা নামে একটা শব্দ আছে। বলেই হেসে উঠবে। তারপর বলবে- নাহ্ তোকে বলা যাবে না। তুই বেশি ছোট। বড়ো হলে বুঝবি
- না আপা বুঝব। আমি বড়োদের জন্য যে ভিডিওগুলো লুকিয়ে দেখায় ওগুলো দেখেছি। তুমি বলো আমি বুঝব
- তুই ওইসব ভিডিও দেখেছিস?
- হ্যাঁ দেখেছি। আমাদের কাছ থেকে দু’টাকা করে বেশি নেয়
- ওসবে কী দেখায়রে?
- তোমাকে বলা যাবে না
- কেন বলা যাবে না? আমিতো বড়োই। বল না
- ওই ভিডিওগুলোতে মেয়েদের পুরো শরীর দেখা যায়
- ধ্যাৎ। মেয়েদের শরীর দেখে আমার কী হবে। ছেলেদেরটা দেখায় না?
- কম। ছেলেরা সব সময় পেছন ফিরে থাকে
- এটা ঠিক না। ওরা পেছন ফিরে থাকবে কেন। আচ্ছা ওরা কি একজন আরেকজনের সামনে কাপড় খুলে ফেলে?
- মাঝে মাঝে দশ বারোজন একসাথে খুলে ফেলে
- ধ্যাৎ। এটা আবার কী রকম কথা। আচ্ছা মেয়েরা ওগুলো দেখতে যায় না?
- না
- এটাও ঠিক না
- তুমি দেখবে?
- কীভাবে?
- আমার একটা মাংকি ক্যাপ আছে। তুমি পেন্ট-শার্ট পরে মাংকি ক্যাপ পরলে তোমাকে ছেলেদের মতোই লাগবে। তোমার বুকতো বেশি বড়ো না। চাদর পরলে আর উঁচু বোঝাই যাবে না
- বাজে কথা বলবি না কিন্তু
- বাজে কথা কোথায় বললাম। ওখানে গেলে দেখবে কত বড়ো বড়ো বুক। আমাকে একজন বলেছে বেশি বেশি টিপলে নাকি মেয়েদের বুক বড়ো হয়। তোমারগুলো কেউ টিপে না আপা?
- মারব কিন্তু। আমি আজই বাবাকে বলে দেবো যে তুই ওসব আজেবাজে ভিডিও দেখিস
- তুমি যাবে?
- না

একদিন বিকেলে আমার মাংকি ক্যাপ আর শার্ট এবং তার বড়ো ভাইয়ের পেন্ট পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে আমার সাথে সে যাবে। ওখানে ছবি শুরু হলে লাইট বন্ধ করে দেয়। কেউ কারো দিকে তাকায় না। ছবি শুরু হবার পর সে আমার একটা হাত তার চাদরের নিচে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বলবে- বড়ো হবে তাই না? তারপর একটা নিগ্রোর শরীর দেখে কানে কানে জিজ্ঞেস করবে- তোর আছে? নাকি এখনো কাঁচা মরিচ?

এরপর আপা আর আমাকে সঙ্গে নেবে না কলেজে যাবার সময়। কিছুদিন পর তার বিয়ে হয়ে যাবে। শাড়ি পরে যখন কয়েকদিন পরে আসবে তখন তার বুক অনেক বড়ো হয়ে যাবে। কিন্তু আমার দিকে আর তাকাবে না সে

আমার বাসা স্কুলের কাছেই থাকবে। স্কুল ছুটির পর সব জানালা-দরজা বন্ধ করে আমি সমস্ত স্কুলের চাবি পকেটে নিয়ে বাজাতে বাজাতে বাসায় যাব। হেডস্যার আর কাউকেই স্কুলের চাবি দেবেন না। তিনি বলবেন- আমার পুতের হাতে থাকা মানে আমার হাতেই থাকা। পুত তুমি সকাল সকাল এসো। আমার ক্লাস বারোটা থেকে শুরু হলেও আমি সকাল সাড়ে নয়টায় স্কুলে চলে যাব। ক্লাস ওয়ান থেকে থ্রি পর্যন্ত ক্লাস হয় দশটা থেকে বারোটা। আমি গিয়ে দেখব ছোট ছোট বাচ্চারা দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু চাবি নেই বলে ঢুকতে পারছে না। আমাকে দেখেই তারা হইচই করে উঠবে- ভাইয়া এসেছে। ভাইয়া চাবি দেন। আমি কাউকে চাবি দেবো না। দরজাও খুলব না। বলব- খবরদার হইচই করলে দরজা খুলে দেবো না। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে সবাইকে। কিন্তু তারা কোনোমতে চুপ হতে পারবে না। একজনকে চুপ করার কথা বলতে গিয়ে আরেকজন কথা বলে উঠবে। তারপর তাকে থামাতে আবার কথা বলবে আরেকজন। আমি দরজা খুলব না। চাবির গোছা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকব। বলব- লাইন ধরে দাঁড়াও। লাইন ধরে দাঁড়াও সবাই। একজনও যদি লাইন ভাঙো তাহলে দরজা খুলব না। বহু কষ্টে তারা লাইন ধরে দাঁড়াবে। কিন্তু আমি দরজা খুলতেই লাইন ভেঙে আমাকে ধাক্কা মেরে হুড়মুড় করে ঢুকে যাবে ক্লাসে। তারপর দুয়েকজন যারা ধাক্কা টাক্কা খেয়ে ব্যথা পাবে তারা এসে আমার কাছে বিচার দেবে- ভাইয়া... আমাকে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু একদিন কী কারণে যেন অন্তরা সকালে এসে আমাকে এ অবস্থায় দেখে বলবে- ও। পিওনের কাজ? পিয়নতো শুধু দরজা খুলে দেবে। সে বিচার করবে কী করে? আমি তাকে ভয় দেখাব হেডস্যারের কাছে বিচার দেবার কথা বলে। কিন্তু দেবো না।

স্কুলে একটা পিকনিক হবে। চাঁদা দশ টাকা। আমার কাছে এই দশ টাকা থাকবে সেদিন। সবার সাথে লম্বা লম্বা গাড়ি চড়ে আমি পিকনিকে যাব। ক্লাস টিচার আপা সেদিন আর কোনোভাবেই আমাকে বলতে পারবে না- সবাই গেলো আর তুই গেলি না পিকনিকে? ...খারাপ; খুব খারাপ লেগেছে আমার
১৯৯৭.০৬.০৩ - ২০০৫.০১.১০

উকুন বাছা দিন

প্রকাশক- শুদ্ধস্বর। প্রচ্ছদ- শিশির ভট্টাচার্য্য। ২০০৫

............................................

উকুন বাছা দিন। ০১। ফসিল
উকুন বাছা দিন। ০২। মাকড়া
উকুন বাছা দিন। ০৩। টিকটিকি
উকুন বাছা দিন। ০৪। ঘুণপোকা
উকুন বাছা দিন। ০৫। নখর
উকুন বাছা দিন। ০৬। সমাবর্তন
উকুন বাছা দিন। ০৭। বংশ
উকুন বাছা দিন। ০৮। নির্বাণ
উকুন বাছা দিন। ০৯। অশোক বন
উকুন বাছা দিন। ১০। রাজসাক্ষী
উকুন বাছা দিন। ১১। অতল
উকুন বাছা দিন। ১২। উদ্বাস্তু
উকুন বাছা দিন। ১৩। অনির্ধারিত
উকুন বাছা দিন। ১৪। অপারেশন ক্লিন হার্ট
উকুন বাছা দিন। ১৫। ফিনিক্স
উকুন বাছা দিন। ১৬। জন্মান্তর


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জন্মান্তর উকুন বাছা দিন বইয়ের শেষ গল্প

অতিথি লেখক এর ছবি

লীলেন দা বইটা কই পামু ?

- খেকশিয়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আজিজ মার্কেটের তিন তলায়
শুদ্ধস্বরে আছে
৯১ নম্বর ঘর

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি গল্পগুলো প্রিন্ট করতেছি একটা একটা করে।
কোনদিন সুযোগ পেলে আলাপ হবে আপনার সাথে ।
[মামার বাড়ির আব্দার : লীলেন ভাই, গল্পতো অনেক হলো.. এবার কয়েকটা ছড়া যদি দাবী করি আপনার কাছে খুব কি অন্যায্য হবে..
মন খারাপ ]

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ছড়াদিয়েই তো শুরু করেছিলাম বাক্যবেসাত
কিন্তু আমি যে এক সময় ছড়া লিখতাম সেটাইতো ভুলে গেছি

হয়তো কোনো একদিন একটা ছড়ার বই হলেও হয়ে যেতে পারে

অনিন্দিতা এর ছবি

পড়লাম।
শুরুতেই একটু হোচঁট খেলাম। মনে হলো ভূমিকা কিএকটু অন্য রকম হতে পারত?
পড়তে গিয়ে আরও মনে হলো - একসাথে সমান্তরাল ভাবে দুটো জীবনের গল্প বললে কেমন হতো?নাকি একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি জন্মান্তরে দেখাতে চাইছেন বলে আলাদা করেন নি?
এই গল্পের সুবই আর খুনিচক্রের সুবই কি এক ব্যক্তি?
খুনিচক্র আমার খুব প্রিয় কবিতার একটি।
এই ব্লগে আরও কিছু মন্তব্য দিতে চাই যদি অনুমতি পাই।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একসঙ্গে অনেক জীবন নয়
এক জীবনেই অনেক জীবনের স্বাদ
হয়তো বিষয়টা সেভাবে আসেনি
এই একটা গল্প হয়তো আমি আরো বহুবার বহুভাবে কাটাছেঁড়া করব

এই গল্পের সুবই আর খুনিচক্রের সু্বই একই ব্যক্তি
২৩ বছর পরে তাকে খুঁজে বের করার ঘটনা খুনিচক্রে
আর এখানে সেই ২৩ বছর আগের সুবই

সুবইকে নিয়ে আমার আরো একটি লেখা আছে
বিশ্বায়ন থিওরি কিংবা একটি আদর্শ খামার

দেখতে পারেন

০২

সব ধরনের মন্তব্য স্বাগতম

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সে বই ধরে বামহাতে বুকের সাথে চেপে। আমি সবসময় তার ডান দিকে থাকব

লীলেন ভাই কি খাইষ্টা আছিলেন কুট্টি বেলায়?-
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একখানা বিনীত স্বীকারোক্তি:

আমার লেখার সাথে যাদের নিজের ঘটনা কমন পড়ে যায়
তারাই আমাকে নানা ভাষায় গালাগালি করে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- স্বীকারোক্তির ধাঁরালো জবাবঃ ভাই, অ ভাই, অ লীলেন ভাই- আমারে কিছু কইলেন? মন খারাপ
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনেরে কিছু কই নাই
তয় ফেনী এলাকায় একখান কথা হুনছিলাম:
'মাটিত বাড়ি দিলে গুনাগার চেতি উডে'

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি শিওর, এইটা আপনি আমারে কন নাই! হাসি

আপনি যখন উকুন বাছা দিন বের করেন তখন বয়স কতো ছিলো বলেনতো লীলেন ভাই? আপনার বলা গল্পগুলো বড্ড অনুরুপ মনে হয়। ভাবনায় কিংবা অতীতে তো কোনো ভাবে একই কাঠামোতে বেড়ে ওঠার কথা না আমাদের!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

মাহবুব লীলেন এর ছবি

৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ বিয়োগ ১২ অক্টোবর ১৯৭২
= ৩২ বছর ৩ মাস ২৮ দিন (মোটামুটি)

উকুন বাছা দিন বের করার সময় আমার বয়স ছিল উপরেরটা

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এখনো ক্লাস ফোরেই পড়তে ইচ্ছে করে আপনার?
সেই চাবির গোছাসহ...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পৃথিবীতে একটাই স্কুল থাকুক: দেবপুর প্রাইমারি স্কুল
পৃথিবীতে একটাই ক্লাস থাকুক: ক্লাস ফোর
পৃথিবীতে একটাই অহংকার চিরজীবী থাকুক: আমার পকেটে সারাটা স্কুলের চাবি

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

শেষটা ভালো হলো।
সমস্যা একটাই, অতৃপ্তি রয়ে গেল। ডেইলী একটা করে ঝাক্কাস গল্প পড়া হয়তো সহসাই হচ্ছে না। নাকি?

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার তৈরি করা আবর্জনার পরিমাণ কিন্তু সিটি করপোরেশনের দশ বছরের আবর্জনার পরিমাণ থেকেও বেশি

এইভাবে বললে এমন দেওয়া দেবো যে শেষ পর্যন্ত বলবেন- মাপ করেন
আর চাই না

শেখ জলিল এর ছবি

এরকম গল্প পড়ে মনে হয় বারবার নস্টালজিক হয়ে যাই...
উকুনবাছা দিন-এর গল্পগুলো কিন্তু এখনও পড়ছি!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জলিল ভাই এবার একটু নিম নাখারা য় উঁকি দিয়ে দেখবেন তো
ওই বইটা ইবুক হিসেবে সচলায়তনে আছে
সাতটা গল্প নিয়ে ওই বইটা বের হয় ২০০৭ এ
আপনার কমেন্টগুলো কাজে লাগবে আমার

অনিন্দিতা এর ছবি

একসঙ্গে অনেক জীবন নয়
এক জীবনেই অনেক জীবনের স্বাদ।

আমি বোধ হয় বোঝাতে পারি নি। যেহেতু জন্মান্তর বলছেন তাই এক জন্মের ঘটনাগুলোকে আরেক জন্মের ঘটনাগুলোর সাথে সমান্তরাল ভাবে দেখানোর কথা বলেছিলাম।
যাই হোক গল্প গুলো পড়ছি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সত্যি সত্যি যদি আমার আবার জন্ম নেয়ার সুযোগ হয়
তবে আমি আমার প্রিয় ভুলগুলো আবার করার জন্যই জন্ম নেবো

অনিন্দিতা এর ছবি

বেশ মজা তো ! কিন্তু কোন ভুলের জন্য যদি খুব কষ্ট পেতে হয় তাহলে সেগুলো বার বার করে কষ্ট সহ্য করার জন্য নিশ্চয়ই মানসিক শক্তি ও অনেক থাকতে হবে।
কামনা করি আপনার সেই শক্তি থাকুক। পারলে টিপস দেন অধম পাঠককে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নো টিপস
(জানলে তো দেবো?)

অন্য প্রসঙ্গ:
আপনাকে শুধু কমেন্ট করতে দেখি
এবং বেশ বিশ্লেষণী কমেন্ট
কিন্তু আপনার কোনো পোস্ট দেখি না কেন?

লেখেন
আমরাও দুয়েকটা কমেন্ট করার চান্স না হয় নিলাম

অনিন্দিতা এর ছবি

ঐ যে বলেছিলাম, লেখার মুরোদ নেই, খালি অন্যের লেখার উপর অবলীলায় মতামত দেই।
লিখতে জানলে তো লিখব।

অনিন্দিতা এর ছবি

১.উকুন বাছা দিনের গল্পগুলোর মধ্যে একটা মিল আছে। গল্পগুলো পাঠককে অন্য জগতে নিয়ে যায়। যখন পড়ি মনে হয় এটা পৃথিবীর ঘটনা নয়। অন্য কোন জায়গার।
২. ফসিল, টিকটিকি, সমাবর্তন, বংশ, অতল, অপারেশন ক্লীন হার্ট গল্পে জটিল মানবিক সম্পর্ক, সম্পর্কের টানাপোড়েন, কোন কোন ক্ষেত্রে পরিণতিহীন সম্পর্কগুলো খুব ভাবায়, বিষন্ন করে দেয়। বিশেষ করে ফসিলে চরিত্রগুলোর সম্পর্ক, সমাবর্তনে বোনের সন্তানের পিতৃত্বের দায়, বংশেডাক্তার/ক্রান্তি, নায়কের সম্পর্কের জটিলতা, পশুত্ব/মনুষত্বের ব্যাখ্যা, কেন জানি ভীষন অপরিচিত মনে হয়।
এটা কি উপস্থাপন কৌশলের কারণে নাকি মানবিক সম্পর্ককে আপনি এভাবেই দেখাতে চেয়েছেন? জানি সম্পর্কে অনেক জটিলতা থাকে। তবে আমাদের আশে পাশে অনেক সহজ , সাবলীল সম্পর্ক ও দেখি(অবশ্যই উপন্যাস,নাটক, সিনেমা নয়)। সেগুলোর কোন বিশেষত্ব কি কখনো আপনাকে টানেনি?
৩.অনির্ধারিত, ফিনিক্সঅন্য রকম লেগেছে। ফিনিক্সেই বোধ করি মানুষের নিজস্বতার মাঝে ফেরা( আমার কাছে জয়ী হওয়া মনে হয়েছে)দেখতে পেয়েছি। তবে.রাজসাক্ষী, উদ্বাস্তুভাল বুঝতে পারিনি।(আমার ব্যর্থতাই হবে)
৪. প্রতিটি গল্পে একধরণের বিষন্নতা ছড়িয়ে আছে। আপনার লেখার যাদুতে বার বার আটকে যাই। কিন্তু পড়তে গেলে আগাগোড়া একধরণের উৎকন্ঠা কাজ করে। চাপ অনুভব করি।পড়া শেষে ঝিম ধরে থাকি অনেক ক্ষণ। কিন্তু তার পর ও পড়ি।এটা হয়ত আমার একান্ত নিজস্ব অনুভূতি।
৫. মানুষের শুধু জটিল , অন্ধকার দিক নয়, আলোকিত দিক ও কি লেখায় আনা যায় না? আপনার এ লেখা গুলো থেকে আপনার বিশিষ্টতা খুজেঁ পাওয়া যায় সন্দেহ নেই। তবে তাতে ধরনে পুনরাবৃত্তি বা একঘেয়েমি কি আসতে পারে না? আপনার লেখার স্টাইল পাঠককে যেভাবে ধরে রাখে তাতে মনে হয় আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা সহজেই করতে পারেন(এই অধম পাঠকের মতামতে যদি বিরক্ত না হন।)
বি:দ্র:আমার মন্তব্য নিতান্তই একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিতে করা। একমত হতে হবে এমন কথা নেই। বিশেষজ্ঞীয় মতামতের যোগ্যতা রাখি না। সুতরাং.....আবর্জনা ভেবে ফেলে দিতে পারেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ
একেবারে অপ্রত্যাশিত একটা সার্বিক রিভিউ
এবং সত্যি সত্যি বিশ্লেষণ

আমি আশাও করতে পারিনি যে কেউ সবগুলো গল্প এইভাবে পড়বে
এবং পড়ে কষ্ট করে মতামত দেবে
ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ

০২
এই বইয়ের বেশ কতগুলো গল্প স্বপ্নের ফর্মেটে লেখা
মানুষ স্বপ্ন দেখলে যেমন কিছুটা খাপছাড়া কিছুটা বাস্তব কিছুটা আধা বাস্তব করে ঘটনার মধ্য দিয়ে যায়
ফসিল- বংশ-টিকটিকি-সমাবর্তন এই গল্পগুলোতে চেষ্টা করেছিলাম ওরকম যাবার
হয়তে ঠিকমতো খেই ধরে রাখতে পারিনি

০৩

মানুষের শুধু জটিল , অন্ধকার দিক নয়, আলোকিত দিক ও কি লেখায় আনা যায় না?

যায়
কিন্তু আলোর মতো প্রকাশিত বিষয়কে বাক্যে তুলে আনার জন্য দরকার টলস্টয় কিংবা দস্কয়ভস্কির মতো অসীম ক্ষমতা
সে ক্ষমতা অর্জনের দুঃস্বপ্ন দেখতেও ভয় লাগে

০৪

তবে তাতে ধরনে পুনরাবৃত্তি বা একঘেয়েমি কি আসতে পারে না?

পুনরাবৃত্তি একটা মারাত্মক সমস্যা হয়ে দেখা দিচেছ আমার লেখাগুলোতে
বিশেষ করে কবিতায় এবং রিয়েল কারেকটার নিয়ে লেখা গল্পগুলোতেও

কবিতার পুনরাবৃত্তি আটকাতে বেশ কয়েকদিন ধরে লেখা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছি। একেবারে ভিন্ন বিষয় না পাওয়া পর্যন্ত আর লিখবই না

গল্পের ক্ষেত্রে কিছু বন্ধুর হেল্প নিচ্ছি। যারা রিপিটেশনগুলো ধরিয়ে দিচ্ছে
দেখি এভাবে কাটাতে পারি কি না

০৫

তবে আমাদের আশে পাশে অনেক সহজ , সাবলীল সম্পর্ক ও দেখি(অবশ্যই উপন্যাস,নাটক, সিনেমা নয়)। সেগুলোর কোন বিশেষত্ব কি কখনো আপনাকে টানেনি?

টানে তো
মারাত্মক টানে
কিন্তু সহজ কথা যে যায় না বলা সহজে
সাবলীল জিনিস লিখে ফুটানো অনেক বেশি মুন্সিয়ানার কাজ

অনিন্দিতা এর ছবি

আপনি ঠিক ই পারবেন। সে ক্ষমতা আপনার আছে।এর জন্য টলষ্টয়,দস্তয়েভস্কি হওয়ার দরকার নেই।
ভয়ে ভয়ে একট কথা বলে ফেলি। আমার মনে হয় কোন বিষয়ে দেখার দৃষ্টিভঙ্গী কে পাল্টানো গেলে এটা সম্ভব। মানে একটা বিষয়কে শুধু নেতিবাচক বা শুধু ইতিবাচক ভাবে না দেখে নিরপেক্ষভাবে দেখা গেলে আপনার লেখাতে ও সেগুলোর প্রতিফলন পড়বে। নতুন বিষয সব সময় না ও পেতে পারেন। তার জন্য লেখা বন্ধ থাকবে?
লেখাতে প্রায়ই এক ধরনের নির্লিপ্ততা, বিষন্নতার ছোঁয়া থাকে। হতে পারে আপনি বিষন্নতা পছন্দ করেন। কিন্তু.....??
আপনার লেখা পড়েই সহজেই চেনা যায় এটা লীলেনের লেখা। এটা একদিকে ভাল হলেও খুব তাড়াতাড়ি typed হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
আমার মনে হয় যে বা যারা আগে আপনার লেখা পড়েছে তারা নিশ্চয়ই এটা আপনাকে কোন না কোন ভাবে বলে থাকবে।আমি সে ভরসাতেই দুঃসাহস করে ফেলেছি। না হলে ভীষণভাবে দুঃখিত।
আমি তো লেখক নই। কাজেই ব্যকরণগত ভাবে সমালোচনা করা সম্ভব নয়। আমার কাছে যা পাঠক হিসেবে মনে হয়েছে তাতে আপনি একমত নাও হতে পারেন । অসুবিধা নাই বাতিল করে দেবেন।
তবে এবার পড়ে নিজে নিজে হাসব এমন মন ভাল করা লেখা চাই।
ভাল থাকবেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

টাইপড হয়ে যাবার আশংকা নয়
হয়েই গেছি

এবং এজন্যই এখন বিকল্প স্টাইল আর বিষয় খুঁজে বেড়াচ্ছি
কিছু খুঁজে না পেয়ে চিন্তা করছি ১০/১২টা প্রেমপত্র এবং আমার এক চেংড়া ম্যাডামের শরীরের বর্ণনা লিখব (তার অনুমতি পেয়েছি)
একেবারে পুতুপুতু টাইপের প্রেমপত্র
দেখি এতে করে বিষণ্নতা কাটানো যায় কি না

তবে আপনার কোনো সাজেশন থাকলে অবশ্যই দেবেন

অনিন্দিতা এর ছবি

এটা অবশ্য আমার মোটেও পছন্দ হলো না।
আপনাকে তো সস্তা , পুতু পুতু প্রেমের গল্প লিখতে বলিনি।
প্রেমের অনেক গভীর দিক আছে। সেটা বাদ দিয়ে শুধু প্রেম পত্র আর শরীর কেন মশাই?ওটাও তো আপনার লেখায় ভাল মতোই আছে।
মনে হচ্ছে আমার কমেন্টে বিরক্ত হয়েছেন।
ঠিক আছে ।
মাপ চাচ্ছি। তবে পুতু পুতু গল্প পড়তে চাই না।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রেমের গভীরাতা?
জানি না
একটু ধরিয়ে দেবেন তো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।