২০০৭ এর শেষের দিকে কবি শামীম রেজা হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল- কোন বইটা আরেকবার পড়তে চান?
বহু বইয়েই পড়ার সময় মার্জিনে নোট লিখে পাতা ভাঁজ করে রেখেছি আরেকবার পড়ার জন্য। সেগুলোর অনেকটাই গেছে উইপোকার পেটে। অনেকগুলোর নাম গেছি ভুলে আর অনেকগুলোই গেছে হারিয়ে। কিন্তু কোনোটাই উল্টানো হয়নি দ্বিতীয়বার
আমি শামীমকে জিজ্ঞেস করলাম- কেন?
- এইভাবে জিজ্ঞেস করে করে আমি একটা তালিকা করছি। যদি সেই তালিকার কোনো বই নিজের পড়া না থাকে তবে পড়ব। আর পুরো তালিকাটা ব্যাখ্যাসহ দেবো আমার স্টুডেন্টদের। যাতে এক তালিকায় কিছু ভালো বইয়ের নাম তারা পায়
বড়োই সাদামাটা উদ্দেশ্য। কিন্তু কোন বইটা আমি আবার পড়তে চাই? শামীম আরেকটু অগ্রসর হলো- যদি আপনাকে নির্বাসনে পাঠানো হয় তবে কোন বইটা সাথে করে নিয়ে যেতে চান?
গ্রামে অচেনা মানুষকে দেখলে গ্রামীণরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম প্রশ্নটা করে- কোত্থেকে আসছেন?
যদি আমি অন্য কোথাও চলে যাই তবে আমি কোত্থেকে আসছি সেই কথা কোন বই বলতে পারে আমার মতো করে?
পরিষ্কার একটা নামই আমার স্মৃতি থেকে বের হয়ে এলো- আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলে কোঠার সেপাই। বাংলাদেশ জন্মের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা একমাত্র মহাকাব্যিক উপন্যাস
হয়তো কয়েকশো বছর আগে পড়েছি এই বই আমি। ধার করা সেই বইয়ের কোনো পাতায়ই কোনো নোট কিংবা ভাঁজ রাখিনি দ্বিতীয়বার পড়ার জন্য। কী মলাট- কী রং- কতগুলো পাতা কিংবা কারা কারা সেই বইয়ে ছিল তার কতটুকু এই মুহূর্তে আমার মগজে আছে?
- শেখ মুজিব কি এডেকোয়েট?
ঢাউস বইয়ের হাজার হাজার লাইনের ভেতর থেকে ৬৯ এর চায়ের দোকানে বসা কোনো এক অজ্ঞাত চরিত্রের ছোট্ট প্রশ্নটা ধা করে সামনে চলে আসে আমার
এই প্রশ্নটা আমরা এখন পাস্ট টেন্সে করি- তিনি কি যথেষ্ট ছিলেন? ঠিক ছিল কি তার কৌশল? এবং এখনও এই প্রশ্নগুলো করা হয় শহুরে চায়ের দোকানে বসে
ইলিয়াসের বইটার নোঙর যেই সময়ে বাঁধা সেই সময়ে বাংলাদেশের যতগুলো স্থানকে শহর বলা হতো সেগুলোকে মূলত গায়ের জোরেই ডাকা হতো শহর। ওই রকম জায়গাকে এখন আমরা গ্রামই বলি। কিন্তু ইলিয়াস আগাগোড়া একটা গ্রামীণ বাংলাদেশে উপন্যাসের নোঙর ফেলেও কেন গ্রামের দিকে তাকালেন না একবারও? কিংবা জোর করে ভুলে যেতে চাইলেন যে বাংলাদেশ একটা গ্রাম?
এর একটাই কারণ। তিনি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গন্তব্য করেছিলেন তার যাত্রার। আর জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্টটাই মানসিকভাবে ক্রমাগত শহুরে হয়ে উঠা আমাদের প্রত্যাশার ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের গ্রাম তখনও আত্মস্থ করেনি জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্ট। এখনও না। বাংলাদেশের গ্রাম তখনও এবং এখনও চলে জাতিরাষ্ট্রের সমস্ত সুবিধা ও সম্পর্কের বাইরে। গ্রামীণ দায় আর দাবির নীতিমালায় চলে বাংলাদেশের গ্রাম। কিন্তু আমরা মানচিত্রে কলম দিয়ে দাগ টেনে সেই গ্রামগুলোকে জাতি রাষ্ট্রের সীমানায় ঢুকিয়ে বলি- এই হলো আমাদের দেশ
৬৯ এর আন্দোলনে গ্রাম ছিল না। ২০০৮ এর পরিকল্পনায়ও নেই গ্রাম। তাই অজ্ঞাত চরিত্রের মুখ থেকে ইলিয়াসের প্রশ্নটা বের হয়ে আসে- শেখ মুজিব কি যথেষ্ট? আর ২০০৮ এ আমরা জিজ্ঞেস করি- এইসব গণতন্ত্র কি ঠিকাছে? এইসব কি চেয়েছি আমরা? কারণ তখন শেখ মুজিব ছিলেন শহুরে আর শহর কেন্দ্রিক। এখনও আমরা নগর আর নাগরিক কেন্দ্রিক
একটা তরুণকে চূড়ান্ত প্রেমিক বানাতে চাইলে তাকে পাগল বানানো ছাড়া কোনো গতি নেই এটা বহু আগেই বুঝে গিয়েছিলেন লাইলি মজনুর লেখক শেখ জামি। এজন্যই প্রেমিক কায়েসকে তিনি মজনু বানিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন উপন্যাস ছেড়ে। তারপর কিংবদন্তি কায়েসকে মজনু কিংবা পাগল হিসেবেই টেনে নিয়ে গেছে শেখ জামির নাম গন্ধের বাইরে...
আর চিলে কোঠার ইলিয়াস কী করলেন?
ওসমান গণির কাঁধে ভর করে ৬৯ পর্যন্ত এসে তাকে বললেন- যা তুই এইবার পাগল হ। না হলে অনন্তকালেও শেষ হবে না এই বই...
আর পরে যাতে কেউ- কই আমাকে তো পেলাম না আমি’ বলে তাকে দোষ দিতে না পারে সেইজন্য ওসমানের বগলের চিপা থেকে বের করলেন আরেকটা আইকন। হাড্ডি খিজির। যে লোক তার মায়ের গর্ভে তাকে জন্ম দিয়েছে সেই লোকই তার বৌয়ের গর্ভে জন্ম দিতে যাচ্ছে তার সন্তান...
খিজির সব জেনেও নিজের বাবার নাম বলতে গেলে হাড্ডি চুলকাতে চুলকাতে বলে এক কল্পিত মানুষের নাম। এবং হাড্ডি চুলকাতে চুলকাতেই সে জানে তার বৌয়ের সন্তানও মাথার উকুন বাছতে বাছতে তারই নাম বলবে বাবার নাম বলার প্রসঙ্গ এলে
ফাউন্টেন পেনের কালি ঝাড়তে গিয়ে ইলিয়াস ওসমান আর খিজিরকে ছুঁড়ে দিলেন সময়ের সামনের দিকে। অথবা বসিয়ে দিলেন আমাদেরই চায়ের টেবিলে। অথবা তাদেরকে সামনে ঠেলে দিয়ে আমাদেরকেও করে নিলেন তার চিলে কোঠার বাসিন্দা
কেননা তিনি পরিষ্কার দেখছিলেন আমাদের এইসব দিন। তিনি জেনে গিয়েছিলেন তার কিংবা আমাদের কিংবা পুরো জাতির দৌড়ানোর মতো দুই পা থাকবে না। পোশাকের নিচে পায়ের মতো দেখতে একটা কাঠের টুকরা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হবে তাকে কিংবা আমাকে কিংবা বাংলাদেশকে বহুদিন। তাই তিনি নাগরিক চিন্তার জাতিরাষ্ট্র কিংবা হাড্ডি খিজিরের দৌড় দৌড়ের উপরই থামিয়ে দিলেন। কেন আর কী জন্য না বুঝেই গুলি খেয়ে পড়ে থাকল হাড্ডি খিজির কিংবা নূর হোসেন কিংবা অন্য কেউ কিংবা আমরা নিজেরা
বাংলাদেশ জন্মের পরিকল্পনা এবং বর্তমান বাংলাদেশ পরিচালনা দুটোই আধা নাগরিক চিন্তা এবং নাগরিকতা কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ এখনও সেই ফাঁকগুলো সারাতে পারেনি। এখনও গ্রামীণ বাংলা কিংবা মূল বাংলা থেকে গেছে বাংলাদেশের বাইরে। আর নগরে বেহুদা লাফাচ্ছি আমরা বাস্টার্ড হাড্ডি খিজির কিংবা খ্যাপাটে ওসমানের দল
বইটা দ্বিতীয়বার আর পড়ব না আমি। কিন্তু আমাকে যদি কোথাও চলে যেতে হয়; যেখানে আমার দেশের নাম কেউ জানে না। তবে পকেটে করে আমি নিয়ে যাব ২০০৫ সালে লেখা নিজের একটা কবিতা আর বগলে চিলে কোঠার সেপাই। নিজের নাম বলার আগেই কবিতাটা শোনাব সবাইকে:
আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নাকি মাঝে মাঝে কেটে ফেলা পায়েও চুলকানি অনুভব করতেন
আর চুলকাতে গিয়ে দেখতেন ওখানে পা নেই; কাঠের এক ডামি
হয়তবা কেটে ফেলা পায়ে পুরোনো কোনো মশার কামড় মনে হয়ে যেত তার; তিনি হাত বাড়াতেন
এবং দেখতেন তার একটা পা নেই
আমাদেরও অন্তরে বহুকিছু ডামি করে নিয়েছি আমরা সৌন্দর্য ও সভ্যতার নামে
বহুকিছু ফেলা হয়ে গেছে ছেঁটে; বহু অঙ্গ বিকি হয়ে গেছে ভাত আর ভর্তার দামে
কিন্তু কোথাও আমাদের কোনো কামড়ের স্মৃতি নেই। কোনো অবচেতন পিঁপড়াও আমাদের মনে করিয়ে দেয় না আমরা কেউই এখন আর না আছি না পূর্ণ মানুষ- না সম্পূর্ণ বাঙাল
কেননা ইলিয়াসের পায়ে ছিল কাঠ; আর আমাদের হৃৎপিণ্ডে প্লাস্টিক- হৃদয়ে সিমেন্ট
রিফরমেশন/বাজারিবাটু
তারপর আমি বলব- আমি একজন ওসমান গণি অথবা হাড্ডি খিজির। আমার কোষ্ঠী লিখেছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস নামে এক গণক। এই সেই কোষ্ঠী- চিলে কোঠার সেপাই
২০০৮.০৬.২০ শুক্রবার
মন্তব্য
এক লিটলম্যাগ সম্পাদক একমাস ধরে গলায় দড়ি লাগিয়ে টানছে আমার প্রিয় কোনো একটা বই কিংবা কোনো এক লেখক সম্পর্কে যেন কিছু লিখি
কিন্তু এই একমাস ধরে বহু চেষ্টা করেও কোনো লেখক কিংবা কোনো বইয়ের নাম মনে করতে পারছি না
প্রতিবারই আমার মনে হচ্ছে আমি হয়তো জীবনেও কোনো বই পড়িনি কোনো লেখকের নাম শুনিনি
পরে ২০০৭ সালে নিজের এই আড্ডার কথাটাই লিখে ফেললাম
এটা বই না লেখক না নিজের সম্পর্কে হলো জানি না
যদি কারো ধৈর্য্য থাকে তবে দুয়েকটা কিছু যোগ করে আমাকে উদ্ধার করতে পারেন সেই সম্পাদকের টেলিফোন থেকে
প্রথমেই কবিতাটার জন্য অভিনন্দন *****
পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন এবং নির্মম কতগুলা প্রশ্ন হলো... সবচেয়ে প্রিয় বই কোনটি?... সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কে? ...
তবে নিজে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে না পেলেও অন্যেরটা শুনতে সবসময় ভালো লাগে। আর কিছুটা উপকারও হয়। কারণ কারো প্রিয় বই কিংবা সিনেমাটা দেখা যাবে- কারণ ওটা ভালো হওয়ার চান্স বেশি। তবে প্রিয় মানুষ যদি আশপাশ বয়সী কোন মেয়ে হয়- ঐ চিন্তা তো বাদ।
সত্যি কথা বলতে আখতারুজ্জামানের বইটা ছাড়া এই বাংলায় আমি খুব কম বই পড়ে তৃপ্তি পেয়েছি। আরেকটা আছে সূর্য দীঘল বাড়ি।
আমাকে কেউ বাংলা বইয়ের নাম বলতে বললে... কতগুলো নাম ঠোঁটে চলে আসে।
বিভূতি'র 'দৃষ্টিপ্রদীপ'
যাযাবরের ''দৃষ্টিপাত''
মানিকের 'পুতুল নাচের ইতিকথা' ;চতুস্কোণ'
যদিও বিভূতিভূষণের সব বইয়ের নাম বলতে আমি রাজি।
এ যুগে শুধু ঐ বাংলার লেখকদের উপন্যাসই পড়ি।
সুনীলের ত্রয়ী ... সেইসময়... প্রথম আলো... পূর্ব পশ্চিম আর একা এবং কয়েকজনের কোন তুলনা নাই। পূর্ব পশ্চিমে মুক্তিযুদ্ধ যতটুকু ফুটে উঠছে আর কোন উপন্যাসে দেখি নাই। জোছনা ও জননীর গল্প ফাউল লাগছে। আনিসুল হকের 'মা' অনেক ফাটাফাটি শুনলেও হতাশ হইছি।
সুনীলের আরেকটা বই খুব ভালো লাগে। বুকের ভেতর আগুন।
সমরেশের কালবেলা...সিরিজ ছাড়া আর তেমন কোনটা ভালো লাগে নাই।
শীর্ষেন্দু সম্পর্কে কিছু বলবনা। আমি শীর্ষেন্দুর অন্ধ ভক্ত। যেমন অন্ধ ভক্ত সত্যজিতের ছোট গল্পের।
তবে আমার একটা বদভ্যাস আছে। প্রায় বই আমার ভালো লেগে যায়। চোখের সামনে বাংলা অক্ষর ধরে রাখার মত আনন্দের জিনিস বোধহয় পৃথিবীতে আর নাই।
ইংরেজী অনুবাদ কিংবা ইংরেজী ভাষায় থ্রিলারই বেশি পড়া হয়। দস্তয়ভস্কি আমার খুব প্রিয়। 'দ্য নোটস ফ্রম আণ্ডারগ্রাউণ্ড' তুলনাহীন। বইটা প্রথমে পড়েছিলাম বাংলায়। নাম সম্ভবত 'অজ্ঞাতবাসের পত্র''। এরপর ইংরেজিটা পড়লাম। কিন্তু আফসোস রাশিয়ান ভাষা জানি না। আমার খুব ইচ্ছা রাশিয়ান ভাষা শিখব। দস্তয়ভস্কির লেখা পড়ার জন্য।
গতকাল আপনার একটা কথা খুব সত্যি ছিল। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সত্যিকারের কোন উপন্যাস বাংলাদেশে হয় নাই। তবে অন্যরকম কিছু বই মুগ্ধ হয়ে পড়ার মত। মাহবুব আলমের 'গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে' পৃথিবীর মানুষ পড়তে পারলে 'অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রণ্ট' হার মেনে যেত।
অনেক উলটাপালটা গ্যাজাই ফেললাম। ক্ষমা চাই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
এসব ক্ষেত্রে আমি কান ধরে বলি মাপ করে দেন
প্রিয় লেখক আর বইয়ের কথা জানিনা, কেউ রিভিউ লিখলে দম না ফেলে পড়তে ইচ্ছে করে।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের রুটিন বাঁধা সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে বইযের চেয়ে বইয়ের উক্তি গুলোই বেশী কাছে টেনেছে। আরো আগে,
স্কুলের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে প্রজাপতি আর কুয়াশা সিরিজের বই গুলো ছিলো অতি প্রিয়,অতপর কাজী আনোয়ার হোসেনের পেপার বুক। মাসুদ রানা সিরিজ... আর কিছু বইয়ের নাম শুনে শুনে গিয়ে নীল ক্ষেতের পুরাতন বইয়ের দোকানে খুঁজতাম।
বাড়ন্ত বয়সে হুমাযুন আহমেদ, আর ওপার বাংলার সুনীল, শমরেশ আর শীর্ষেন্দু থেকে শুরু করে বুদ্ধদেব গুহ কাকে বাদ দিয়ে কার কথা বলি....তার চেয়ে বরং গুরু আপনারা লেখেন আমরা পড়ি....
----------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
আপনি তো বহু দেশটেশ ঘোরেন
দেখেন না ঈশ্বররের মতো 'কুন ফাইয়াকুন' মেশিন পাওযা যায় কি না লেখালেখির জন্য
তাহলে বসে বসে শুধু বলব- একটা উপন্যাস হোক
হয়ে যাবে
একটা বালিকা গ্রামার হউক থার্ড আইয়ের জন্য
হয়ে যাবে
মেশিন ছাড়াই আপনার যা অবস্থা !! আমার দেশ ঘুইরা কাম নাই রবং আবার সুযোগ পাইলে আজিজ সুপার ঘুরার ইচ্ছা আচ্ছে ওই কারখানাতে অনেক কিছু আবিস্কার হয়।
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
দুর্দান্ত
সাঁধেই কি আর গুরু মানি আপনাকে
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
লেখাটার গদ্য অংশে একজন ইনটেলেকচুয়াল লীলেনের জটিল ভাবনার বিচ্ছুরণগুলো ছড়িয়ে পড়তে চাইছে। আর কবিতা অংশে এসে পেলাম একজন দার্শনিক প্রজ্ঞাছোঁয়া অসম্ভব সত্যদর্শী কবি লীলেনকে।
গদ্যঅংশ মগজের কোষগুলোকে ক্রমাগত আঘাতে আঘাতে জর্জরিত করেও যা উপলব্ধির গভীরে টোকা দিতে পারে নি, একটা দুর্দান্ত কবিতা সেটা শুধু বুঝিয়ে নয়, আত্ম-অনুভবের বিচিত্র সৈকতে এনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে, ওখান থেকে ফিরে যাবার কোন উপায় নেই।
ধন্যবাদ লীলেন ভাই, লেখাটা তো বটেই, অসম্ভব ভালো লাগলো কবিতাটা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
ইনটেলেকচুয়াল আর প্রজ্ঞা?
দুইটা গালি দিলেন?
আপনার এই লেখাটাকে বেশ অগোছালো লাগলো। অনেকগুলি বিষয়কে একসঙ্গে ধরতে গিয়ে বিপত্তি ঘটেছে বলে আমার বিশ্বাস। প্রত্যেকটিই আলাদা মনোযোগ দাবি করে, একত্রে এই আয়তনের মধ্যে তারা হাঁসফাঁস করছে। লেখকও মনে হয় ধুত্তোরি বলে শেষ করে দিলেন। দুই হাত সম্বল করে একসঙ্গে একুশটা ঘুড়ি আকাশে ওড়ালে যা হতে পারে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
বিপত্তিটা আমিও টের পেয়েছি গত একমাস ধরে
কিন্তু এই বিষয়ে মগজে যেসব কথাবার্তা কিলবিল করে তা লিখলে দিস্তায় দিস্তায় কাগজ লাগবে আর লিটলম্যাগ সম্পদাক তেড়ে আসবে তার ম্যাগাজিনের সাইজ বাড়িয়ে দেবার অপরাধে
শেষটা ধুত্তুরি বলে করিনি
হাত তুলে সারেন্ডার করে করেছি
কথা পরম্পরাতে ইলিয়াসের সাক্ষাতকারটা আবার পড়লাম সেদিন। তখনই ভাবতেছিলাম চিলে কোঠার সেপাইটা আবার পড়তে হবে... নতুন কইরা... আপনার লেখাটা পড়ার পরে সেই ভাবনাটা প্রবল হইলো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রিয় লেখক তো সময় নিরপেক্ষ কোন ব্যাপার না আমার কাছে। এক এক সময় একেক লেখকে পেয়ে বসে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত মার্কেসে ছিলাম, আর এখন আছি রাহুল সাংকৃত্যায়নে ( ভোলগা থেকে গঙ্গা বাদেও তাঁর চমৎকার বই আছে, এটা আমি অনেক দিন জানতাম না)।
লেখাটা ভালো লাগলো, তবে জুবায়ের ভাই এর সাথে কিঞ্চিত সহমত, লেখাটায় এক সাথে অনেক বিষয়ের অবতারণায় কিছুটা ভ্যাবাচাকা খেয়ে গিয়েছিলাম, তবে কাটিয়ে উঠেছি।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কবিতা অসাধারণ লাগলো। আর প্রিয় বই...অসংখ্য। চিলে কোঠার সেপাই পড়া হয়নি...এখন মনে হচ্ছে পড়তে হবে, এবং খুব তাড়াতাড়ি।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
নজরুল ভাই একটা কমেন্টে সঞ্জীবদা'র কথা মনে করিয়ে দিয়ে মাথাটা এলোমেলো করে দিল .. এখন আপনি বললেন ইলিয়াসের কথা ! পাঠক হিসেবে নিজেকে তৃতীয় শ্রেণীর মেনে নিয়েও যদি পৃথিবীর সমস্ত বইগুলোর মাঝ থেকে যে কোন একটি বই বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে ইলিয়াসের "চিলে কোঠার সেপাই"-ই নেব আমি ।
ধন্যবাদ লীলেন ভাই চমত্কার এই পোষ্ট এবং কবিতার জন্য !
খুব ভালো লাগলো বইয়ের আলোচনা। এক কথায় অপূর্ব!
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
যদি আমাকে দ্বীপান্তর দেয়া হয় তাহলে আমি রণেশ দাশগুপ্ত সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের কাব্যসংগ্রহ নেব, ইলিয়াসের খোয়াবনামা নেব আর তৃতীয় বইটা এখনও সাব্যস্ত করা হয় নাই।
ঠিক ধরেছেন, চিলেকোঠার সেপাই-য়ে ইলিয়াস তখনো ঢাকা ও গ্রাম-মফস্বলের মধ্যে অনায়াসে চলাচল করতে পারেননি। মনে হয় দুই জগতকে কয়েকটা চরিত্রের আপতিক সুতো দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। ছেড়ে দিলে বগুড়ার যমুনা পাড়ের গ্রামীণ আখ্যান রওনা দেবে খোয়াবনামার দিকে, চেংটু হয়ে যাবে তমিজ আর চিলেকোঠা তথা ঢাকার বাংলাদেশ অপেক্ষা করবে তার পরের বিকাশের জন্য।
কিন্তু গ্রামে না গিয়ে ঊনসত্তরকে বোঝাতে পারতেন না তিনি। গ্রামে গ্রামে জোতদার-মহাজন-গরুচোর বিরোধী গণআদালতের শ্রেণী সংগ্রাম আর ঢাকার ছাত্র-শ্রমিকের ভেতরেই অভ্যুত্থানের শক্তি খুঁজেছেন তিনি। একাত্তরে এই তিনশক্তির মিলন হলো। কিন্তু বিজয় হাতছাড়া হয়ে চলে গেল মধ্যবিত্তের হাতে।
খোয়বানামায় এই গ্রামকেই পুরোটা তুলে আনলেন। সেখানে উঠতি মধ্যবিত্তের সঙ্গে কৃষক-জেলে সমাজের সুপ্ত বিরোধ খোলা করে দিলেন, অবলম্বন করলেন নিম্নবর্গের স্ট্রাকচার অব ফিলিং এবং ইতিহাস কাঠামো_ইওরোপীয় ইতিহাস ও সমাজ ব্যাখ্যার রীত-প্রকরণের সমালোচনা করে। তাই বলা যায় কি যে,
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে তাঁর পরের উপন্যাসটির গল্প মুখে মুখে করেছিলেন আমাদের কাছে। কৈবর্ত্য বিদ্রোহের এলাকা পুন্ড্রবর্ধন হতো তার পটভূমি। সে সাধ অপূরিত রেখে মারা যাওয়ার আক্ষেপ তাঁর মতো কঠিন লোকের পক্ষেও মানা সম্ভব হয় নাই, আমরাও মানতে পারি না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ইলিয়াসের সাথে দূর থেকে দুয়েকবার শুধু আমার দেখা হয়েছে
কথা হয়নি সেরকম কোনোদিন
কিন্তু সরকার আশরাফের মুখে তার অনেক প্লানিংয়ের কথা শুনেছি
যেগুলো হয়তো কিছু নোট আছে কোনোটা হয়তো মগজে নিয়েই তিনি চলে গেছেন
তাঁর ডায়রিতে এ উপন্যাসের কিছু ছক ও কিছু মন্তব্য ছিল। সম্ভবত তা অপ্রকাশিত রচনাবলিতে ছাপাও হয়েছে। আনু মুহাম্মদ, রবিন আহসান, জোনায়েদ সাকি এঁরা জানেন কিছুটা। আমিও কিছু কিছু শুনেছি তাঁর মুখে।
ইলিয়াস নিয়ে একটা আলোচনা তুলে দিলাম। দেইখেন তো!
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
অন্তর্গত - সৈয়দ শামসুল হক।
ধার করে পড়েছিলাম একাধিকবার; অনেক দোকান খুঁজেও পাইনি, কিনতে চেয়ে।
আমি খুব একটা উঁচুদরের পাঠক নই। অনেক ভাল ভাল বই-ই আমার এখনো পড়া হয়নি।
তবে আপনার এই লেখাটা পড়ে চিলেকোঠার সেপাই পড়ার প্রচন্ড আগ্রহ বোধ করছি। আরো কিছু বই নিয়ে হালকা আলোচনাসহ কিছু পোস্ট দিলে আমার মতো অলস লোকজন কিছু ভালো বই পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ পাবে। ভালো বইগুলোর রিভিউ নিয়ে আপনার একটা সিরিজ চালু হলে কেমন হয়?
এইটা একটা প্রস্তাব।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হ
কুবুদ্ধি তো ভালোই দিতে পারেন
আমরা লিখি আর আপনি খালি পড়েন
তার চেয়ে এই সিরিজটা আপনিই লিখেন না ক্যান?
আমরা না হয় একটু আরামসে পড়লাম কিছুদিন
খাইছে !
কারে কি কয় !!
যারে কথাটা বললেন, তার মাথায় ঘিলুর পরিমাণ দেইখা কথাটা বলবেন তো...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
শিমুলের সাথে পুরোপুরি একমত। তবে কথাকলি অবশ্যই চালু রাখতে হবে।
টাকা দেন। প্রতি শব্দ ১০ টাকা
আর বইয়ের নাম দেন
দেখবেন বইয়ের ডবল সাইজ রিভিউ লিখে দেবো
(এক সময় আমি এক ফর্মা ম্যাগজিনের দুই ফর্মা পর্যন্ত রিভিউ লিখেছি)
জ্বে আচ্ছা।
যেদিন চিলে কোঠার সেপাই পইড়া শেষ করসিলাম ওইদিন সারাটা দিন মেজাজ খারাপ আসিল মাথার থিকা বইটা যাইতাসিল না, মনে করসিলাম কালকে ঠিক হইয়া যাইব, না দেখি ব্যাপারটা সপ্তাহে গড়াইল, মেজাজ খারাপ হইত, গণির গুমুত পাড়াইয়া অগস্ত্য যাত্রারে আল্টিমেট সমাধান মনে হইত, একটা পূর্ণতা পাইতাম ব্যাপারটায়, এর লেইগা নিজের উপরেও মেজাজ খারাপ হইত, ইলিয়াসের উপরও হইত । হাড্ডি খিজির যখন মইরা যাইতাসিল তখন আমার মনে হইতাসিল আমিই মইরা যাইতাসি ! আমি ওই লাইনগুলি পড়ার সময় রীতিমত ডুইবা যাইতাসিলাম, কোন বাজে একটা স্বপ্নে । ব্যাপারটা মাস থিকা বছরে গড়াইল, এখনো নিজের অজান্তেই ভাবি এই ইলিয়াস হালার পোর সমস্যা কি ? এই বই কেম্নে লেখল, ওর সমস্যা কি ?
লীলেনদা , আপনার কোষ্ঠীর কথাটা পইড়াই মেজাজ খারাপ হইয়া গেসে, আপনার উপরে । কথাটা মনে ধরসে দেইখা নিজের উপরেও নিজে বিরক্ত হইসি, নিজেরে থাপড়াইতে ইচ্ছা করতেসে, কই মিয়া এগুলির থিকা বাইর হয়ার ট্রাই করতাসি আর আপ্নেরা এই বালসাল লেইখাই যাইতেসেন ! হুরো মিয়া !
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
এইগুলা লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম ৯৫এ
যখন আহমদ মিনহাজ প্রবন্ধ লেখা শুরু করল তখন
কারণ প্রবন্ধ কিংবা আলোচনা লেখার জন্য যতটুকু যত্ন আর পড়াশোন দরকার সেটা মিনহাজই করে
কিন্তু কেমনে কেমনে যেন মিনহাজের এক শিষ্যের চাপে পড়ে এটা লিখে ফেললাম
নিশ্চয়তা দিচ্ছি
মহাভারতের বঞ্চিতজন ছাড়া আর কোনো গদ্য লিখব না আমি অদূর কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে
লেখবেন না কেন ,আরো লেখেন, পড়ি আর আপ্নেরে শাপান্ত করি
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
তুমি তো স্যার ইদানিং সবই পাতলার উপর দিয়া সারতাছো। কায়েস আহমেদ রচনা সমগ্রের পাতলা ভুমিকা দেখে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকেও এই কথা বলছিলাম থুক্কু লিখছিলাম।ব্লগে লেখা দিলেই শব্দ আর মিনিট হিসাব করে দিবা এইটা ঠিক না।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
পাতলা কঠিন কোনো গদ্যই আর লিখব না স্যার
খালি গলফ আর কোবতে
না লিখলে কেমনে কী?
আমি তো আরো পড়তে চাই।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
নতুন মন্তব্য করুন