হংসরাজ নদীর পাড়ে ফরেস্টের পরিত্যক্ত টহল ফাঁড়িতে গোসল করার জন্য থেমেও কাদার জন্য নামে না ফটোগ্রাফার দলটি। নৌকায় দাঁড়িয়েই ছবি তুলতে থাকে আইলাঝড়ে ভাঙা গোলপাতার ফরেস্ট ছাউনি আর নদীর পাড়ে কাঁকড়া ধরতে চেষ্টা করা একটা সাদা বিড়ালের। বিড়ালটাকে হয়ত বসতির অংশ বানিয়ে লোকালয় থেকে কেউ ছাউনিতে এনেছিল কিন্তু ছাউনি ছাড়ার সময় আর ফিরিয়ে নেয়ার কথা মনে হয়নি কারো। ছাউনি ভেঙে গেলেও বিড়ালটা তার কাছাকাছি এই আশায় হয়ত থাকে যে একদিন কেউ আবার তাকে ঘরে তুলে নেবে...
ফটোগ্রাফারদের ছবি তোলার ফাঁকে ট্রলারের লোকজন ছাউনির পুকুরের দিকে পানির জার নিয়ে কাদা ভেঙে নেমে যায়। ঠিক তখনই ডানে এবং দূরে দুই মানুষের ছোট্ট একটা নৌকা ফটোগ্রাফারদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে এবং ক্রমাগত ছবি হতে হতে এসে একই ঘাটে ভিড়ে
নৌকার এক মাথায় আব্দুল ওহাব বসা। মাথাটা ঢুকে গেছে দুই হাঁটুর ভেতর কিংবা হাঁটু দুটো মাথা হয়ে উঠে গেছে তার মূল মাথার দুই পাশে। অন্যপাশে বেঁটেখাটো একটা গোঁয়ারমুখো তরুণ; তাগড়া আর ক্ষ্যাপাটে শরীর। দুজনেই নদীতে ফেলার জন্য বড়ো বড়ো বঁড়শিতে চিংড়ি আর ছোটমাছের টোপ পরাচ্ছে। ঠিক তখনই ফটোগ্রাফারদের ট্রলার থেকে গাজী সদরুল আওয়াজ দেয়- এই তোমরা কোন জায়গার?
আব্দুল ওহাব কারো দিকে না তাকিয়েই গ্রামের নাম বলে। তখন পর্যন্ত ফটোগ্রাফারদের সাথের ফরেস্টাররা কেউ লুঙ্গি পরে- কেউ খালি গায়ে দাঁড়ানো ছিল। নৌকা দেখেই তারা লুঙ্গির উপর খাকি শার্ট পরে এসে দাঁড়ায়- পাস আছে তোমাদের?
আব্দুল ওহাব এবার চমকে তাকায় ফটোগ্রাফারদের দিকে। পটাপট ছবি তোলে সবাই; মাঝি- নৌকা- টোপ- বঁড়শি। ফটোগ্রাফারদের পাশে খাকি পোশাকে ফরেস্টের গার্ড। নৌকায় বনবিভাগের সবুজ পতাকা। মুহূর্তে ঘোলা হয়ে যায় আব্দুল ওহাবের চোখ। পরিষ্কার আতঙ্ক নিয়ে সে একটু হাসার চেষ্টা করে- আছে স্যার। পাস আছে আমাগের
- কোন জায়গার পাস?
বিনীতভাবে সে কোনো এক ফরেস্ট ফাঁড়ির নাম বলে জোর করে হাসে- পাস ছাড়া আমরা জঙ্গলে আসি না স্যার। সেরম লোক নি আমরা
তারপর মুখের মধ্যে বঁড়শিগাঁথা মাছের মতো হা ঝুলিয়ে প্রত্যেকের দিকে আলাদা আলাদা করে তাকায়। নিশ্চয়ই এরা সবাই ফরেস্টের কোনো কর্তা কিংবা অফিসারের শালা- সম্বন্ধী- ভায়রা ভাই...
- তোমরা একাই না আরো নৌকা আছে?
- স্যার আমরা মোট তিন নৌকা। দুডো পেছনে আসতিছে
- এই আতিয়ার একটা পাতিল দে দেখি। কিছু চার নেই
মাছের টোপকে বলে চার। গাজী সদরুলের কথা শুনে আব্দুল ওহাব একবার চমকে উঠে আবার না শোনার ভান করে চার গাঁথতে থাকে। অতক্ষণ যেখানে সে একেকটা আঙুল সাইজ চিংড়ি কিংবা ছোট মাছ পটপট বঁড়শিতে গেঁথে ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখছিল; এবার তার হাত ফসকায় বেশ কয়েকবার...
গাজী সদরুল ফটোগ্রাফারদের এই ট্রলারের মালিক- গাইড- বন্ধু এবং সুন্দরবনের এক দাপুটে মানুষ। বনকে ঘিরে তার পেশা হলেও নেশার তালিকায় সমানতালে আছে গান- শৌখিন সাংবাদিকতা- বন্দুক আর পর্যটন। সেই সূত্রেই তিনি এই ফটোগ্রাফিক ভ্রমণের আয়োজক আর অভিভাবক। হাতের তালুর রেখার মতো সুন্দরবনের প্রতিটি বাঁক আর খাল তার চেনা। চেনাজানা ফরেস্টের লোক কিংবা ডাকাত। এবং এইসব সূত্র মিলিয়েই পর্যটকদের নিয়ে যখন তার ট্রলার বনের ভেতরে ঢোকে তখন সেখানে পতপত করে ওড়ে বনবিভাগের পতাকা...
- দেও দিকিনি। এইটাতে কিছু চার দেও তো
গাজী সদরুল একটা গামলা ছুঁড়ে মারে আব্দুল ওহাবের নৌকায়। গামলাটা তার কোলের কাছে পড়লেও অনেকক্ষণ সেদিকে তাকায়ই না সে। হাঁটুতে মাথা গুঁজে চার গাঁথলেও গাজী সদরুলের তার দিকে তাকিয়ে থাকা হয়ত সে অনুভব করে। অনেকক্ষণ পরে মাথা নিচের দিকে রেখেই সে হাত বাড়িয়ে গামলাটা টেনে নিজের গামলা থেকে বেছে বেছে কেজি দেড়েক চিংড়ি আর বারোয়ারি মাছ তুলে গাজী সদরুলকে দেবার জন্য যখন উঠে দাঁড়ায় তখনই- অ্যাহ। এইটাতে কী হবে? ওর ওখান থেকেও কিছু দেও...
গাজী সদরুল তাকে গলুইয়ের অন্যপাশে বসা ছেলেটির চারের গামলা দেখিয়ে দিলে আব্দুল ওহাব হাত গুটিয়ে বসে পড়ার আগেই ফটোগ্রাফাররা তাকে গামলা ধরে পোজ দিতে বলে। জেলের হাতে তরতাজা মাছ। দারুণ সমৃদ্ধির প্রতীক... ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকে দিয়ে ছবির পোজ করিয়ে ছেড়ে দিলে আব্দুল ওহাব নিজের জায়গায় বসে গামলাটা নৌকার ভেতর দিয়ে ঠেলে দেয় অন্য গলুইয়ে বসা গোঁয়ার ছেলেটার দিকে- দ্যাও। কী দেবা দেও। স্যাররা কিছু চার চায়...
একটু পরে আরো কিছু মাছ নিয়ে গামলাটা আব্দুল ওহাবের কাছে ফিরে এলে সে বাড়িয়ে দেয় গাজী সদরুলে দিকে। খেঁকিয়ে উঠে গাজী সদরুল- কী দিলা এইসব? আরো কিছু দেও। আমরাও তো মাছ ধরব...
আব্দুল ওহাব নিজের গামলা থেকে আরো কয়েকটা মাছ তুলে দিলে গাজী সদরুল অতগুলা মানুষের মাছ ধরার জন্য আরো কিছু চার চায়। কিন্তু এবার সে আর নড়ে না। দুই হাতে দুইটা গামলা নিয়ে গাজী সদরুল আর নিজের গামলার দিকে তাকায়। তার গামলায় টোপের পরিমাণ সদরুলে গামলার অর্ধেক। আব্দুল ওহাব মরিয়া হয়ে উঠে আতঙ্কে- স্যার। আর দিলি আমাগের চার হবি না স্যার...
বহুক্ষণ সে আর নিজের বঁড়শিগুলোতে চার গাঁথার সুযোগই পায় না। নৌকা সামনে নিয়ে- পেছনে ঠেলে- সোজা-ব্যাঁকা বানিয়ে চাহিদামতো পোজ দিতে থাকে সকলের ছবির...
- মাছ নাই তোমাদের সাথে?
গাজী সদরুলের নতুন প্রশ্নে শিরশির করে কেঁপে উঠে আব্দুল ওহাবের শরীর। সে চমকে উঠে শুধু একটা হাসি দেয়
- কই দেখি। কী মাছ দেখাও তো?
আব্দুল ওহাব মুখের বঁড়শিগাঁথা হা-টাকে আরো বড়ো করে এবার- এই নৌকায় নাই স্যার। পিছনের নৌকায়
- ওরা কই?
- এখানেই আসপি স্যার...
- কতদিন থেকে আপনারা নদীতে আছেন?
গলাটা ফটোগ্রাফার নয়নের। আব্দুল ওহাবের কাছ থেকে পাওয়ার মতো সবগুলো ফ্রেম শেষ হয়ে গেলে নয়ন প্রশ্নটা করে। নয়নের প্রশ্নে আব্দুল ওহাব আকাশের দিকে তাকিয়ে হিসাব করে- আজগের দিন গেলি আটাশ দিন হবি...
- কতদিন থাকবেন আর?
- আমাদের পারমিট দেড় মাসের
এ সময় অনেক দূরে জোড় বেঁধে আসা আরো দুটো নৌকা ক্যামেরার নাগালে ঢুকে পড়লে ফটোগ্রাফাররা তাদের উপর হামলে পড়ে। ছবি হতে হতে তারাও এসে ভিড়ে ট্রলারের কাছে। জোড় ভেঙে একটা নৌকা গিয়ে যোগ দেয় আব্দুল ওহাবের নৌকার কাছে আর আরেকটা উল্টোদিকে গিয়ে দাঁড়ায় বিড়াল পাড়ের কাছে...
- মাছ কোন নৌকায়?
গাজী সদরুলের কথায় কেউ উত্তর না দিলেও আব্দুল ওহাব নতুন নৌকায় কী একটা ইশারা দেয়। একটা ছেলে নামে। দীর্ঘ সুঠাম আর টানটান। কালো টিশার্টের নিচে প্রায় স্কিনটাইট একটা শর্টস। ছেলেটা কাছে এলে আব্দুল ওহাব কানে কানে কিছু বলে। একটা গামলা নিয়ে ছেলেটা এগিয়ে যায় বিড়ালের পাশে ভেড়ানো অন্য নৌকার দিকে...
গামলা হাতে ছেলেটা যখন ঝপাস ঝপাস পানি ভেঙে এগোয় তখন একবারও মনে হয় না তার পায়ের নিচে পা কামড়ানো কাদাও আছে হাঁটু সমান। একটু সামনে ঝুঁকে ছেলেটার এগিয়ে যাওয়া দেখে মনে হয় যেন তার কাছে সুন্দরবনের সব নদীই হাঁটুপানির সমান। কিন্তু বিড়াল নৌকার পাশে গিয়ে ছেলেটা হঠাৎ করে আব্দুল ওহাবের মতো তিনমাথা হয়ে যায়। শরীরটাকে মুচড়ে কুঁকড়ে গামলা হাতে ঢুকে পড়ে ছইয়ের ভেতর। অনেকক্ষণ ছইয়ের ভেতর মাথা নিচু করে বসে থেকে গামলাসহ একটা হাত বের করে আনে নৌকার বাইরে। গামলায় হাত দেড়েক লম্বা চারটা আইড় জাতীয় লোনাপানির মাছ। দুই থেকে আড়াই কেজি সমান একেকটার ওজন। বরফের বাষ্প উড়ছে মাছগুলো থেকে। খোলের ভেতরে বরফ দিয়ে রাখা ছিল মাছগুলো
- এইটা কী দিলা? অতগুলান মানুষ আমরা...
ছেলেটা বের হতে হতে আবার ঢুকে যায়। আরেকটু বড়ো সাইজের আরেকটা মাছ রাখে গামলায়। সেখানে বসেছিল আরেকজন। একটু মোটাসোটা কিন্তু চেহারা আব্দুল ওহাবের মতোই ভাঙা। কিছুই দেখছিল না সে অতক্ষণ। এবার সে কঁকিয়ে উঠে- স্যার মাছ পাই নাই তেমন। মহাজনের ট্রলার আসলি দিতি পারব না কিছুই...
ঠিক তখনই নয়ন খেয়াল করে ফটোগ্রাফারদের ট্রলারে মাছগুলো উঠছে বিনিমাগনায়...
- এই মাছগুলোর দাম কত?
বোকার মতো তাকায় মোটা লোকটা। গামলাটা সেখানেই রেখে সেই ছেলেটা ঝপঝপ পানি ভেঙে আবার চলে যায় নিজের নৌকায়। কিন্তু মাছের দাম বলে না কেউ
- এই মাছ আমরা খাবো না। বলেন মাছের দাম কত?
নয়ন নাছোড়ের মতো বারবার প্রশ্নটা করতে থাকলে গাজী সদরুল গলা খাকারি দিয়ে উঠে- আপনি এইসবে নাক গলান কেন? পয়সা দিতে হলে আমি দেবো। আপনি ছবি তুলতে এসেছেন ছবি তোলেন
নয়নের প্রশ্নে আধা সেকেন্ডের জন্য মাঝিদের চোখগুলো ঝিলিক দিয়ে আবার মরা ইলিশের চোখ হয়ে যায়। সদরুলের কথা কানে না তুলে নয়ন মাঝিদেরকে আবার প্রশ্নটা করে। কিন্তু এবার মোটা মাঝিটা জোড়হাত করে মাপ চায়- না না দাদ-দাদ-দাম ককককিসের? এই মাছ আপনাগের পাপ-পাপ-পাওনা
হয়ত লোকটা এমনিতেই তোতলা। অথবা সে তোতলাচ্ছে। তোতলাতে তোতলাতেই যোগ করে- এই মাছের দাম নেয়া তাদের জন্য পাপ। তারা গিয়ে মহাজনকে বলবে ফরেস্টারদের মাছ দেয়ার কথা। কারণ এইটুকু মাছ ফরেস্টের লোকদের পাওনা...
ফরেস্টারদের কাছ থেকে মাছের দাম নেয়া পাপ। মাঝিটা সততার এই শব্দগুলো বলার সময় নয়নের চোখে ধরা পড়ে লোকটার দিকে বাঘের চোখ রাঙানি করা গাজী সদরুলের একজোড়া চোখের আগুন। ফরেস্টারের কাছে টাকা চাওয়ার পরিণতির ভয় জেলেটার চোখে পড়তে পারলেও নয়নের জানা হয় না ওজন করে ট্রলারে তুলে দেবার আগ পর্যন্ত কোনো মাছের হিসাবই মহাজনের খাতায় উঠে না। এই মাছ দাদনে বান্ধা খাওয়া জেলের বাঘ-কুমির-কামটের ঘর থেকে তুলে আনা মাছ
- গোসলটা সেরে আসি
ফরেস্ট গার্ড রতন হঠাৎ শার্ট খুলে গামছা কাঁধে নেয়। নয়ন তার দিকে তাকায়- যাবেন কেমনে? অনেক কাদা তো
- এই যে এই নৌকায় উঠে যাব। ...নৌকাটা কাছে আনো তো
গার্ড রতন আব্দুল ওহাবকে নির্দেশ দেয় নৌকাটা ট্রলারের কাছে ভিড়াতে। কিন্তু নয়ন আবার পাল্টা প্রশ্ন করে- আপনি গোসল করতে করতে তো ওরা চলে যাবে। অত কাদার মধ্যে দিয়ে আবার ফিরবেন কেমনে?
- নাহ। যাবে আবার কই? পরে যাবে
আব্দুল ওহাব গার্ড রতনকে গোসল করার জন্য পাড়ে তুলে চুপচাপ বসে থাকে। বিড়াল পাড়ের নৌকা থেকে একটা খালি কলসি নিয়ে আরেকজন নামে। খোঁপা করা দীর্ঘ রুক্ষ শুকনা রংচটা চুল। হয়ত লোকটা একজন জেলে পাড়ার শিল্পী...
শিল্পী জেলে ধীরে ধীরে পানি আনতে পুকুরে যায়। ...ভরা কলসি ঘাড়ে করে ফেরে। বঁড়শিতে চার গাঁথা শেষ সবার। কিন্তু হুকুম না হওয়ায় যেতে পারছে না কেউ। ফটোগ্রাফারদের একজন শিল্পী জেলের হাতে একটা মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেয়। বুঝিয়ে দেয় সুন্দরবনের জেলে মোবাইলে কথা বলছে সেই পোজ কীভাবে দিতে হবে। সুন্দরবনেও পৌঁছে গেছি আমরা মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে। আহা। যে কোনো ফোন কোম্পানিকে ছবিটা ধরিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিত অনেকগুলো টাকা। অনেকগুলো ছবি তোলা হয় মাঝিটার; ডানহাতে বৈঠা- বামহাতে মোবাইল। বামহাতে বৈঠা- ডানহাতে মোবাইল। ফটোসেশন শেষ হলে নৌকাটা জায়গায় নিয়ে সে এবার পাড়ে উঠে একটা দুটো শুকনো কাঠের টুকরা কুড়ায়। কুড়িয়ে এনে নৌকায় চুলার পাশে রাখে। এরপর সে আর কোনো কাজ পায় না। সকলের সাথে বসে থাকে হুকুমের অপেক্ষায়...
বহুক্ষণ হয় গার্ড রতন গোসল করে ফিরেছে। রোদ পড়তে শুরু করেছে সুন্দরবনে; ফটোগ্রাফাররা তাদের ক্যামেরা নিয়ে অন্যদিকে মগ্ন। হঠাৎ একটা মিনমিনে আকুতি শোনা যায়- আমাগের যে এবার বিদায় দিতি হয় স্যাররা। চার দেবার বেলা চলি যাচ্ছে...
- আরে এরা বসে আছে কেন? এদের কাজ তো শেষ... যাও যাও। চলে যাও তোমরা
গাজী সদরুলের এই ঘোষণায় মুহূর্তের মধ্যে জেলেদের হাতগুলো বৈঠায় ঝিলিক দিয়ে উঠে। কিন্তু আব্দুল ওহাবের সঙ্গী গোঁয়ার ছেলেটা গোঁ গোঁ করে কী যেন বলে। আব্দুল ওহাব নৌকার রাশ টেনে বোকার মতো ফটোগ্রাফারদের দিকে তাকায়। একটা ভিক্ষুকের মতো আওয়াজ বের হয় তার গলা থেকে- খাবার কিছু থাকলি আমাগের দুই এক মুঠো দেন গো স্যারেরা। ছেইলেপিলে মানুষ বনের মদ্যি বহুদিন ভালোমন্দ খাইত পারে না কিছু...
- এইটা খাবারের টাইম নাকি মিয়া? এখন খাবার পাবা কই?
গাজী সদরুলের পাল্টা দাবড়ানিতে মাঝিরা নৌকা ঠেলে রওয়ানা দেয়। আর ফটোগ্রাফাররা এবার তোলে মাঝিদের চলে যাবার ছবি
সন্ধ্যা নেমে এলে ভদকার বোতল খুলে সবাই রান্না হবার অপেক্ষা করে। রান্না হয়। ভাতের সাথে আসে আঙুল সাইজের চিংড়ি- ছোটমাছ- বড়ো বড়ো মাছের টুকরা। সবাই খায়। খেতে খেতে লোনাপানির মাছের স্বাদ- শরীরের চর্বি আর মাছেদের নাম নিয়ে আলাপ করে সবাই। আলাপে আলাপে সবার চোখে নামে মদঘুম। সুন্দরবনের নিস্তব্ধ ঘুম। শুধু ট্রলারের ছাদে একা একটা চেয়ারে বসে থাকে নয়ন...
- ওয়াক...
এক ধাক্কায় নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে বের হয়ে আসে ভেতরের সব- ওয়াক...
শক্ত করে ট্রলারের রেলিঙ ধরে নয়ন নিজেকে সামলায়। যা কিছু পেটে ছিল সব গিয়ে পড়ে সুন্দরবনের নদীতে- ওয়াক...
শেষবার শুধু সামান্য একটু পানি বের হয়ে আসে। দুই হাতে রেলিঙে শরীরের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নয়ন। হঠাৎ পিঠে একটা হাত অনুভব করে সে। গাজী সদরুল...
পরদিন সকালে সবার সাথে খেতে বসলে হঠাৎ নয়নের প্লেটটা উল্টে যায়। উল্টে পড়ে যায় মাছমাখানো ভাত। গাজী সদরুল হাসে- সুন্দরবন চায় না এই মাছ আপনার পেটে যাক...
নয়ন বসে থাকে। আতিয়ার জায়গাটা মুছে আবারও এনে দেয় ভাত আর মাছ। শক্ত করে প্লেটটা ধরে ভাত খায় নয়ন। তারপর সকলের সাথে গিয়ে নামে আরেকটা ফরেস্ট ফাঁড়ির সামনে। প্রায় আট-দশ ফুট বেজের উপরে ইটের বাংলো টাইপ দালান। এখানে মোবাইলের অ্যান্টেনা আছে। ফোন করার জন্য হুড়মুড় করে সবাই গিয়ে ঢোকে ফরেস্ট বাংলোয়। কেউ ফোন করে ফিরে এসে আর কেউ ফোনের অপেক্ষা করে বারান্দায় চেয়ার নিয়ে বসে। নয়নও বসে একটা চেয়ারে। হঠাৎ এক দৌড়ে সে নিচে নেমে যায়- ওয়াক...
দ্বিতীয়বারে খাওয়া পুরা ভাত ঢেলে দেয় ঘাসে- ওয়াক...
নয়ন বাংলোর নিচে উবু হয়ে বসে বমি থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়। সামনে নদী তার ওপারে সুনসান সুন্দরবন। তাকিয়ে থাকতে থাকতে নয়নের চোখে ঘোর লাগে। আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না সে। দেখতে পায় না চেয়ারে বসা ফটোগ্রাফারদের। দেখতে পায় না পানির গ্লাস হাতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাজী সদরুলকে। সে শুধু নদীর অন্যপাড়ে বিশাল একটা কেওড়া গাছকে ঝাঁকি দিয়ে কেঁপে উঠতে দেখে। কেওড়া গাছটা তার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু যেন নড়ে উঠে। তারপর এক ঝটকায় মাটি থেকে শেকড়গুলো খুলে নিয়ে নদীর উপর দিয়ে হাঁসের মতো ভাসতে ভাসতে এগিয়ে আসতে থাকে নয়নের দিকে। একজন ঋষি মানুষের মতো ঝাঁকড়া কেওড়াগাছটা নদী পার হয়ে বাংলোর সিঁড়ির নিচে এসে দাঁড়ায়। ভয় পেয়ে নয়ন উঠতে চাইলেও এক চুলও নড়তে পারে না। কেওড়া গাছটা একটা দীর্ঘ ডাল বাড়িয়ে দেয় নয়নের দিকে। গাছের ডালটা নয়নের গলা পেঁচিয়ে ধরে তাকে টেনে দাঁড় করায়। গাছটা তাকে টানতে টানতে নিয়ে যায় বাংলোর উঠানে। তারপর হঠাৎ কাঠির মতো হরিণে পাতা খাওয়া একটা সরু ডাল এনে ঢুকিয়ে দেয় তার মুখের ভেতর। ডালটা আস্তে আস্তে নয়নের গলা বেয়ে ঢুকতে থাকে পাকস্থলীর দিকে। নয়ন নড়তেও পারে না। চিৎকারও করতে পারে না। ডালটা পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে থেমে যায়। এবার ডালের মাথাটা পেটের ভেতরে আঙুল বাঁকানোর মতো করে একটু বাঁকা হয় যেন। এবং তারপর একটা হ্যাঁচকা টান- ওয়াক...
এক হ্যাঁচকা টানে প্যান্টের পকেট ঝাড়ার মতো করে নয়নের পুরো পাকস্থলীটাকে মুখের বাইরে বের করে নিয়ে আসে। হুড়মুড় করে পেটের ভেতর যা কিছু ছিল সব ছিটকে পড়ে গাছের গোড়ায়- চাবানো মাছ- পানি- গলে যাওয়া ভাত...
নয়নকে জড়িয়ে রেখে গাছটা এবার ছোট ছোট পাতাওয়ালা ডাল দিয়ে তার পাকস্থলীটা মুছে দেয় যাতে মাছের কোনো গন্ধও অবশিষ্ট না থাকে। তারপর আরেক ধাক্কায় পাকস্থলীটা ভেতরে ঢুকিয়ে নয়নকে ছেড়ে গাছটা নদী পার হয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে এক ঝটকায় আবার সাধারণ গাছ হয়ে যায়...
পাশে দাঁড়ানো গাজী সদরুল দেখে বমির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে যাচ্ছে নয়ন- মাছ নয়। মাছ নয়; মাঝিদের রক্তের দলা এই সব...
২০০৯.০৮.২৫-২৬ মঙ্গল-বুধবার
মন্তব্য
বাপরে! এতো বড় লেখা? এই লেখা পড়ার চেয়ে সুন্দরবনে গিয়ে ঘুরে আসা ভালো!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সময় করে পড়েন।
সুন্দরবনের ইতিহাস বইয়ের লেখক এ.এফ.এম আবদুল জলীল সাহেবের এখান থেকে অনেক কিছু শেখার (টুকলিফাই করার) আছে। লীলেন ভাই, জব্বর লিখছেন (যদিও পুরাটুক পড়ি নাই! কিন্তু পড়র, আমরা এলাকা নিয়া লিখছেন বলে কথা)।
কলম ফেটে বেরুলো রক্ত... হ্যা আমি রক্তই দেখলাম অথবা রক্তাক্ত হলাম।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
লেখাটা ভাল্লাগলো.... লিঙ্কটা ফেসবুকে দিলাম।
এইটা কি লিখলেন লীলেন ভাই?
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
আমি আজকাল ফাঁকিবাজি করে ব্লগের সমস্ত লম্বা লেখাই এড়িয়ে যাই। কিন্তু একজন সচলের কাছ থেকে শোনার পর ধৈর্য্য ধরে এই গল্পটা পড়ে ফেললাম। সেই সচলকে ধন্যবাদ দিয়েছি এতো চমৎকার একটা লেখার সন্ধান দেওয়ার জন্য।
সবকিছু ছাপিয়ে এই গল্পের মূল নায়ক সম্ভবত চোখ। দেখার চোখ। যে চোখে মানুষকে দেখা হয়।
আর একটা কথা, এই লাইনটা খুব পছন্দ হলো:
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
লীলেন ভাই, পড়লাম।
ভাল থাকুন।
জটিল !
এটা কী লিখলেন স্যার?
এর চেয়ে ভাল এক্সপ্রেশন কি আর কিছু হতে পারে?
লীলেনদা এইটা কী লিখলেন? আসলেই সবার দেখার চোখ আলাদা!
---------------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অদ্ভুত একটা বাক্য-বন্ধ সৃষ্টি করলেন !
সোজাসাপ্টা নিজেগো অস্তিত্ব লইয়াই তো টান দিলেন রে ভাই ! এই লেখা যে পড়বো, আমার মনে হয় না তার হায়া থাকলে আপনারে সুন্দরবন যাইতে সঙ্গি হতে কয় !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
যারা পড়েননি তারা দয়া করে লেখাটা পড়েন। অন্য ব্লগের মত বলতে ইচ্ছে করছে লেখাটা স্টিকি করা হোক। এপর্যন্ত যত লেখা পড়েছি এমন করে কোনটাই নাড়া দেয়নি।
সেলাম লীলেন ভাই। প্রচণ্ড একটা নাড়া দিয়ে গেলেন।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
লেখাটা দূর্দান্ত হইছে...
কিন্তু এই জায়গাটায় আপত্তি আছে। মূলত জুবায়ের তুষার গ্রুপটাই এর আয়োজক। মুস্তাফিজ ভাই আপনি আমি সহ অনেক সচলকেই বলেছেন আগ্রহ থাকলে যাওয়ার জন্য। কারণ অনেকেই যেতে চেয়েছে এর আগে।
আর মাত্সন্যায়ের কালে কিন্তু মুস্তাফিজ ভাই-ই প্রথম প্রতিবাদ করেন। আমি মুস্তাফিজ ভাই আর তুষার তখন গলুয়ের কাছে বসা ছিলাম।
আর আপনের উপাধী বিসি না, ভিসি ছিলো... ভাইস চ্যান্সেলর...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমাকে যাবার কথা বলেছিলেন মুস্তাফিজ ভাই তাই সেই রেফারেন্সটাই দিয়েছিলাম
মাছ নেবার কালে গলাটা মুস্তাফিজ ভাইর বলে ঠাহর করতে পারিনি (অত মোটা মানুষ অত চিকন গলায় কথা বললে কেমনে শুনি)
০২
লেখাটার শুরুতে সবগুলো নামই ক্যামোফ্লেজ করে আগাচ্ছিলাম কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে বসুনিয়ার রেফারেন্স দিতে গিয়ে দেখি মুস্তাফিজ ভাইর নাম আনতেই হয়। তখন অন্য নামগুলোও আর ক্যামোফ্লেজ করার চেষ্টা করিনি
তবে এখনও মনে হচ্ছে হয় সবগুলো নাম এড়িয়ে যেতে হবে না হয় সবগুলোই ক্যামেফ্লেজ করতে হবে
না হলে অন্যদেরকে অভিযোগ করা কিংবা ছোট করার অভিযোগ থেকে বোধ হয় বের হয়ে আসতে পারবে না লেখাটা
০৩
লেখাটাতে আরো কাজ করতে হবে অনেক। বিশেষ করে গাঁথুনিগুলো আর ফ্রেইজিংয়ে। যাতে কথাগুলো যেন অভিযোগ না হয়ে উঠে কিংবা আমার মতো সুযোগের অভাবে চরিত্রবান পাবলিককে যেন সততার ঝাণ্ডাধারি পাণ্ডা না মনে হয়
আপনি এইধরনের লেখাগুলো সাবধানে রাখুন, এগুলোর মাঝে যথোপযুক্ত সংযোজক জুড়ে কালজয়ী উপন্যাস হওয়া সম্ভব। আপনার এই ধরনের লেখাগুলো যখন পড়ি,তাব্ধা হয়ে থাকি।
লোকে বাঙালী লেখকের সুন্দরবন নিয়ে ইংরেজী উপন্যাস পড়ে আহা উহু করে একশা করে( অবশ্য এইসব আহা উহুর পিছনে বাণিজ্যিক কায়দা আছে নানারকম, যা আমরা জানিনা ), তারা এই ধরনের প্রকৃত লেখার স্বাদ পেলে কি করবে? মানুষ নিজের শিকড় চিনতে শিখবে নিশ্চয় একদিন, হয়তো আমরা বা আমাদের সন্তানরাও না, হা হুতাশ করেই হয়তো আমাদের কেটে যাবে কাল, কিন্তু তারো তো পর আছে! হয়তো নাতিরা বা তাদের সন্তানেরা চিনতে শিখবে। তখন তারা এইসব লেখাগুলো পেলে?
আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইলো। এইধরনের লেখাগুলো যাতে আসে আর আসতে থাকে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এই লেখা পড়ে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই। কেবল বলতে পারি -
কলজেটা ধরে একটা প্রবল টান দিলেন লীলেন ভাই। সেই টান খেয়ে এখন তাব্দা মেরে বসে আছি।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দারুণ লাগলো। খুবই ভালো লেখা।
চমৎকার পোস্টের জন্য ধন্যবাদ লীলেন।
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
তুলিরেখার সাথে আমি একমত।
একমাত্র কবিরাই এরকম লিখতে পারে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা। খোলা চোখে আমরা যা দেখিনা সেই জিনিষটাই আপনি দেখিয়েছেন, সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ভায়ের যেখানটায় আপত্তি সেখানে আমার বক্তব্য হচ্ছে যে আমি এ ভ্রমনের আয়োজক না হলেও লিলেনদা কে নেবার পেছনে কারন যা ছিলো উনি তা বুঝতে পেরেছেন তবে লিলেনদা এটা বুঝতে পারেননি যে এমন লেখার জন্য উনাকে বিনে পয়সায় ঘুরিয়ে আনতেও রাজী আমি।
আশাকরি সুন্দরবন নিয়ে আপনার আরো লেখা পাবো।
...........................
Every Picture Tells a Story
লেখা যেরকমই হোক স্যার
লোকজনের নামগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনার সাজেশনটা কী বলেন তো?
আমি নিজে পড়ার পরেও মনে হচ্ছে অভিযোগের মতো শোনাচ্ছে কথাগুলো
আর অভিযোগ না এটা প্রমাণ করতে গেলে আরো অনেক অনেক লাইন ঢুকে যাচ্ছে প্রতিটা নামের সাথে
কী করা বলেন তো?
(নাম বলতে আপনার বাদ দিয়ে অন্যদের নাম)
স্যার, নাম ঢোকানোয় আপত্তির কিছু দেখি না। আবুল না হয় মোখলেস একটা তো নাম দিতেই হবে। সচলে বিষয়টা যেহেতু বেশ কিছুদিন যাবৎ আলোচিত তাই কিছুটা অন্যরকম (মানে অভিযোগ টাইপের) মনে হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু বৃহত্তর পাঠক গোষ্ঠীর কথা মাথায় নিলে নাম আসার ব্যাপারটা কোন ঘটনাইনা।
সর্বোপরি এটা আপনার সৃষ্টি, আমি তাতে সন্মান জানাই।
...........................
Every Picture Tells a Story
দারুণ! চমৎকার ! অসাধারণ লেখা। আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
নৈশী।
ভালই চেতিছেন দেখি !
প্রোফাইল ছবিতে চশমা তো আপনার চোখে আছেই, সুন্দরবনে নিয়া যান নাই ?
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
লেখাটা পড়ার জন্য কালকে সময় বের করতে পারি নি। আজকে পড়লাম। আমার অনুভূতি বা মন্তব্য ইতোমধ্যেই অনেকবার এখানে চলে এসেছে, তাই দ্বিরুক্তি করলাম না।
তবে আমার একটা অনুরোধ থাকবে- সম্ভব হলে আপনি আরও কয়েকটা জায়গায় যান, মধুপুরে যান, পার্বত্য চট্টগ্রামে যান, লাউয়াছড়ায় যান, বরিশালে যান, দিনাজপুরে যান, কুমিল্লায় যান, হাওরে যান (হয়তো সবগুলো জায়গাতে ইতোমধ্যে গিয়েছেন)- তারপর পরিযায়ী এই আপনাকে কেন্দ্রীয় চরিত্র বানিয়ে তাকে সারা দেশ ঘুরিয়ে একটা ঠিক এরকম স্বাদের ভ্রমণকাহিনী লিখে ফেলেন। আমার ধারণা, ভ্রমণপিয়াসু মানুষ নিজেকে উপলব্ধি করবে আপনার এই লেখার মাঝেই।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
এই সাজানো ছবিগুলি অন্য ফোটোগ্রাফারদের কাজ কঠিন করে কেবল। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় সিঙ্গাপুরের এক ফোটোগ্রাফার পিলখানায় গিয়ে এক দেশী ফোটোগ্রাফারকে দেখেছেন, ডিজির ছবি সেই লোক নিজে ছিঁড়ে চার টুকরো করে ফেলে সেই ছিন্ন ফোটোগ্রাফের দৃশ্যের ছবি তুলছে।
তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। পাশে বসা কাউকে দেখতে পাই না আমি। আমার চোখ আটকে আছে নদীর অন্যপাড়ে দূরের একটা বিশাল কেওড়া গাছে। প্রথমে কেওড়া গাছটা তার নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু নড়ে উঠে। তারপর এক ঝটকায় মাটি থেকে নিজের শেকড়গুলো খুলে নিয়ে নদীর উপর দিয়ে হাঁসের মতো ভাসতে ভাসতে আসতে থাকে আমার দিকে। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে থাকি। একটুও নড়তে পারছি না আমি। হাতের বিড়িতেও পারছি না টান দিতে। একজন ঋষি মানুষের মতো ঝাঁকড়া কেওড়াগাছটা নদী পার হয়ে এসে বাংলোর ব্যালকনির নিচে সিঁড়ির কাছে দাঁড়ায়। আমি তাকিয়ে আছি। সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে গাছটা একটা দীর্ঘ ডাল বাড়িয়ে ব্যালকনিতে বসা আমাকে পেঁচিয়ে ধরে গলায়। আমি কিছুই করতে পারছিলাম না তখন। গাছটা আমাকে টানতে টানতে নিচে নামিয়ে নিয়ে যায় তার গোড়ায়। তারপর আমাকে ধরে রেখেই হরিণে সবগুলো পাতা খাওয়া কাঠির মতো আরেকটা ডাল সোজা এনে নলের মতো ঢুকিয়ে দেয় আমার মুখের ভেতর। মুখ থেকে গলা বেয়ে পাকস্থলীতে গিয়ে থামে ডালটা। তারপর পেটের ভেতরে ডালের মাথাটা একটু বাঁকিয়ে হঠাৎ এক হ্যাঁচকা টানে প্যান্টের পকেট ঝাড়ার মতো করে আমার পুরো পাকস্থলীটাকে বের করে নিয়ে আসে মুখের বাইরে। হুড়মুড় করে গাছের গোড়ায় ছিটকে পড়ে পেটের ভেতর যা কিছু ছিল সব। ...চাবানো মাছ। পানি। গলে যাওয়া ভাত..
অসাধারন ! পুরো লেখাটায় উদ্ধৃতি করার মতো অসংখ্য প্যারা আছে। কেন জানি না উদ্ধৃতির এই অংশটুকু আমাকে স্পর্শ করে গেলে বেশি।
ভয়াবহ মুগ্ধ হলাম লেখাটা পড়ে, লীলেন ভাই। অসামান্য লেখা। যে দৃষ্টিতে আপনি দেখেছেন ঘটনা; তারচেয়েও বড়ো কথা, যেভাবে তুলে আনলেন তা শব্দের মোড়কে, তার সত্যিই কোনো তুলনা নেই।
কোনো একদিন বলেছিলেন যে আপনি মূলত কবি, গল্প-সাহিত্য লেখা আপনার ঠিক হয় না। কিন্তু এরকম লেখা যে লিখতে পারে, তাঁর সম্পর্কে এটুকুই বলি, আপনি একজন 'প্রকৃত লেখক'। সব কিছু লেখাই সম্ভব আপনাকে দিয়ে।
সামনে আবার দেখা হলে, কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করা যাবে। ভালো থাকবেন।
মাহবুব লীলেনের লেখা প্রথম পড়ি ১৯৮৯ সনে। সেই হিসেবে ঠিক কুড়ি বছর চলে গেল।
আমি সার্টিফিকেট দেই ,
আমার পঠিত লেখাগুলোর মাঝে এই লেখাটা মাহবুব লীলেনের সেরা লেখা।
অনেক কিছুই বলতে ইচ্ছে হয় , কিন্তু সেই সন্ধ্যা থেকে কয়েকবার পড়ে এর চাইতে বেশি কিছু গুছিয়ে বলতে পারলাম না।
আমার জানামতে তুমি এই পর্যন্ত আমার ৩টা লেখাকে সার্টিফিকেট দিলে
এইবার কিছু গ্যাপ ধরিয়ে দাও যাতে আরো কুড়ি বছর অন্তত শব্দবাণিজ্য করতে পারি
কাল ভোরে সেহরির পরে লেখাটা পড়া শুরু করি। পড়া শেষ করে দেখি চারিদিকে আলো হয়ে গিয়েছে। এই লেখাটা নিয়ে কি যে বলব... কথা গুছিয়ে উঠতে পারছিনা। কেমন একটা চুপিচুপি ঝড়ের মত উড়িয়ে নিয়ে গেল, হৃদয়ের খুব কাছে কাঁটার মত বিঁধলো, জ্বালালো, পোড়ালো, নিজেকে নিজের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করালো... এবং অনেকটাই... অনেকটাই বদলে দিলো আমাকে। অসম্ভব... অসম্ভব রকমের শ্রদ্ধা জেগে উঠলো মনে... এই তুমুল কথাশিল্পীর জন্যে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
এই ভ্রমন কাহিনীর উপর বেজ করে একটা পুরো উপন্যাস হতে পারে , ভেবে দেখতে পারেন ।
মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে গেলাম লেখাটা। অসাধারণ লাগলো।
লীলেনদার হাতে ফুল চন্দন পড়ুক।
-----------------------------------
আমার ইচ্ছে হলো বাজাতে গীটার, মন আমার, মন আমার, মন আমার-
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
অংশগ্রহনকারীরা একে ইতিহাস মনে না করলে নাম ব্যবহারে কিছু আসবে যাবে বলে মনে হয়না।
আর অভিযোগ এবং বক্তৃতার টোনটুকু ছেঁচে ফেললে- এই একটা লেখাই একজন লেখকের জন্য যথেষ্ট হতে পারে, তা সেটা গল্পের আদলে থাকুক কিংবা উপন্যাস হয়ে দাঁড়াক।
তবে একে উপন্যাস করে তুলতে লেখককে আরো অনেকবার যেতে হবে সুন্দরবনে। দীর্ঘ সময় কাটাতে হবে সেইসব প্রান্তজনদের সাথে।
সচলের অনেক উদ্যেগ নানানভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বছরে একটা সেরা লেখাকে পুরস্কার দেয়া হবে- এমন একটা উদ্যেগ এর কথা ভেবে দেখা যেতে পারে। যদি ভাবা হয়, তবে এই 'সাকিন সুন্দরবন' এর নাম আমি প্রস্তাব করছি।
আপনার অন্য কথাগুলোর সাথে মোটামুটি একমত , যদিও "অভিযোগের টোন" আমি ধরতে পারিনি। বক্তৃতার অংশটুকু অনাবশ্যক মনে হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে
এখানেই থেমে যেতে পারতো এই লেখা, তাতেই হয়তো আর ঋজু হতো ব্যাপারটা।
আপনার এই কথাটি সত্যি , তবে একটু ভিন্ন ভাবে ভাবতে পারা যায়।
উপন্যাসের জন্য এমনটাও তো হতে পারে যে একদল বন্ধু বেড়াতে গেছে , সেই বেড়াতে যাওয়াটা নিয়েই উপন্যাস। বেড়ানোর চরিত্রগুলো আর সেই ডিঙি থেকে দেখা প্রান্তজনের গল্প, উপন্যাস হিসেবে এই রাস্তায়ও হাটা যেতে পারে।
দেখুন, মানিক বন্দোপাধ্যায়ের উপন্যাসও উপন্যাস আবার হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসও উপন্যাস।
এই লেখার মূল বিষয় এবং চরিত্র কিন্তু প্রান্তজনেরা। বন্ধুরা অনুসঙ্গ। আর দেখা ও বোঝা ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
আরিফ
বক্তৃতার এই জায়গাটা বেশ খাপছাড়া রয়ে গেছে
একটা কনক্লুশন ড্র করার জন্য এই অংশটা নিয়ে এসছিলাম
কিন্তু ব্লেন্ডিংটা ঠিকমতো হয়নি
কিছুদিন পরে এটাতে আবার কাজ করব
যদি ব্লেন্ডিংটা যুতসই না হয় তাহলে এটা আর উহুঙলালা অংশটা হয়ত বাদই দিয়ে দেবো
০২
উপন্যাস হিসেবে এটাকে ভাবার সাহস করতে পারছি না
এইটুকু লিখতেই মালমসলার প্রচণ্ড অভাব ফিল করেছি
জনৈক
আগাগোড়া আমার প্রধান ইনটেনশন ছিল যাতে এটাকে ভ্রমণ কাহিনী কিংবা ডকুমেন্টারি না মনে হয়
কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় বিষয়টা উৎরাতে পারিনি আমি জানি
পুরো লেখাটাকে তিনবার রিরাইট করেও সামলাতে পারিনি
এর প্রধান কারণ হয়ত সুন্দরন ভ্রমণের স্মৃতিগুলো এখনও অনেক বেশি কাঁচা রয়ে গেছে
সাধারণত আমি লেখার পরে অনেক অনেকদিন পার না হলে লেখা কোথাও প্রকাশ করি না
প্রকাশের আগে বিভিন্ন সময়ে রিরাইট করি যাতে কোনো কাঁচা অনুভূতি থেকে না যায়
কিন্তু সচলে যুক্ত হবার পরে দেখেছি নিজে কয়েকবার পড়ে যে গ্যাপগুলো দেখা যায় না অন্যদের কমেন্টে সেগুলো সহজেই চোখে পড়ে
এজন্য কিছুদিন থেকে কাঁচা এবং খসড়াগুলোও দিচ্ছি কমেন্টের আশায়
তবে এটা সত্য যে লেখাটাকে যদি ভ্রমণ কাহিনী আর ডকুমেন্টারির পর্যায় থেকে দূরে সরিয়ে না নেয়া যায় তবে লেখাটা আদৌ দাঁড়াবে না
আমি তাকিয়ে আছি এর দুর্বলতাগুলো ধরা পড়ার আশায়
০২
ইয়েস স্যার
অভিযোগ এবং বক্তৃতার ঢং অনেকখানেই রয়ে গেছে
কিন্তু এই মুহূর্তে অভিযোগ খণ্ডন করতে গিয়ে দেখি আরেক অভিযোগ এসে হাজির হচ্ছে। বক্তৃতা ঢাকতে গিয়ে হাজির হচ্ছে আরেক বক্তৃতা
এর জন্য লেখাটার সাথে আমার নিজের কিছুটা সময় দূরত্ব লাগবে
কয়েকমাস পরে লেখাটাকে আরেকবার দেখলে ধারণা করি এই গ্যাপগুলো কিছুটা কাটাতে পারব। আর এর মধ্যে যদি কোনো কমেন্টে কোনো গ্যাপ বের হয়ে আসে তবে সেটা হবে আমার জন্য বিশাল একটা প্লাস পয়েন্ট
০৩
আর স্যার
এই লেখাটাকেই সেরা লেখা ভাবতে যে কষ্ট হয় আমার
আমি যে আরেকটু আশাবাদী হতে চাই আরেকটা লেখার জন্য?
লেখকেরতো তার কোনো লেখাকেই সেরা লেখা ভাবা উচিত/ঠিক না। আত্মসন্তষ্টিতে ভুগে মৃতেরা।
সময় অবশ্যই একটা চরম নিয়ামক। সাথে বিষয় এবং চরিত্রগুলোকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উল্টে-পাল্টে দেখা।
একটা অসাধারণ শিল্পকর্মের জন্য অপেক্ষা______
কালকেই পড়েছিলাম, কি মন্তব্য করবো বুঝতে না পেরে কিছু বলিনি ... এখন একটা স্যালুট দিয়ে গেলাম ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
মারাত্মক একটা লেখা৷
আপনার লেখায় মন্তব্য করতেই ভয় লাগে, তাও দু'একটা কথা একটু ভয়ে ভয়ে বলি কেমন৷
প্রথমত: গোটা লেখায় আপনার বা গল্পকথকের "হোলিয়ার দ্যান দাউ ' ভাবটা একটু চোখে লাগল৷ এইটা না থাকলেই বোধহয় ভাল হত৷
দ্বিতীয়ত: এই বাপ্পি ভাই, যিনি একটা সিস্টেমের কলকব্জা হয়ে উঠেছেন, তিনি কি কখনও অনুভব করেন না গলায় অদৃশ্য বকলসের স্পর্শ? আমার ধারণ করেন, নিশ্চয় করেন৷ তো, সেই ধুসর মুহূর্ত্ত কি আপনার চোখে পড়েনি? এটা কিরকম যেন বিশ্বাস হচ্ছে না৷ যিনি এত দেখেন, তিনি শুধু সাদা আর কালো দেখলেন, ধুসর দেখলেন না ---- এটা ঠিক লাগছে না৷ মনে করুন তো ভাল করে৷
আরও ধরুন যিনি/যাঁরা মাছের দাম দিতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না, বিনিময়্মুল্য না দিয়ে কিছু নিতে যাঁরা অভ্যস্ত নন, একটা সিস্টেমের কাছে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়ছেন, জানেন না কীভাবে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায়, তাঁদের সেই অসহায়তা , অপরাধবোধ কিন্তু এই গল্পটায় পেলাম না৷ কিন্তু আমার বিশ্বাস সেগুলো আছে, আপনি দেখেওছেন৷
আসলে গল্পটা এত মারাত্মক, বীভত্স ভাল বলেই এতগুলো কথা বললাম৷
--------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ দময়ন্তী এই দিকটা ধরিয়ে দেবার জন্য
আপনি বলার আগে বিষয়টা আগাগোড়াই চোখে পড়েনি আমার
এখন মনে হচ্ছে পুরো লেখাটাতেই কথকের নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করার প্রবণতাটা বড়ো বেশি প্রকট হয়ে আছে
আর তার পাশাপাশি অন্যদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণাও বোধহয় প্রকাশিত হয়ে আছে কোথাও কোথাও
আর পুরোটাই হয়ে গেছে একজনের দৃষ্টি; একজনের দেখা যেখানে অন্যরা সবাই দেখার উপকরণ
০২
লেখাটা তৈরির সময় পুরো দৃষ্টিভঙিটা লিনিয়ার থাকায় মূলত ঘটনাগুলোর সাথে অন্যদের রিয়েকশন একেবারেই আসেনি
ফলে বাদ পড়ে গেছে বাপ্পী ভাই
বাদ পড়ে গেছে অন্য সবাই
০২
বাঘের আক্রমণে এক বাওয়ালী যখন বুঝে যায় বাঁচবে না আর তখন
সে খবর দেয় বাপ্পী ভাইকে
মারা যাবার আগে বলে: মেজভাই। আমার একটা পোলা তিন বচ্ছর আরেকটা দুধের শিশু অথচ আমারেই সে ধরল? তুমি এর বিচার কইরে মেজভাই...
বাঘের বিচার করার জন্য যার কাছে আর্জি করতে পারে সুন্দরবনের বাওয়ালীরা সেই বাপ্পী ভাইকে নিয়ে তৈরি করছি আলাদা একটা লেখা
মনে হয় বাপ্পী ভাইর চোখ জ্বলে উঠা আর কুঁচকে যাওয়ার কিছুটা তুলে আনতে পারব সে লেখায়
০৩
থ্যাংকস স্যার
এটাকে আবার লিখব আমি
এই জায়গাটা আমার খুব চোখে পড়ছিলো... সেকারনেই কিছু আপত্তির কথা জানিয়েছিলাম। কথকের হিরোইজমটা ভালো লাগে নাই আমার...
সবাই খুব পছন্দ করেছে। বছরের সেরা লেখা বলছে... কিন্তু সত্য বলতে এই লেখাটা বার বার পড়েও আমার কাছে অনেক বেশি অসম্পূর্ণ মনে হইছে। এখানে আবেগ আছে, আবেগের আড়ালে হারায়ে গেছে অনেক কিছু। আপনার অন্য অনেক লেখার চেয়ে এটারে বেশ দূর্বল লাগছে আমার কাছে।
তবে এটাও জানি, এটাই আরেকবার লেখলে ফাটায়ে ফেলবেন আপনি। তখন আমিও এটাকে অসাধারণ একটা লেখা বলবো হয়তো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
লেখাটা অসম্পূর্ণ এবং অনেক বেশি আবেগি
আবেগের কারণেই হয়তো অনেকের চোখেই দুর্বলতাগুলো চোখে পড়েনি
একে তো ফার্স্ট পার্সনে বর্ণনা তার উপর একজনের অনুভূতি
দুটো মিলে বিষয়টা যে একধরনের হিরোইজমের দিকে চলে যাচ্ছে বিষয়টা দময়ন্তী ধরিয়ে দেবার আগে চোখেই পড়েনি
০২
অবশ্যই বছরের সেরা লেখা এটা না
সচলে এর চেয়ে ঢের ভালো ভালো লেখা আমারই চোখে পড়েছে অনেকগুলো
০৩
এইটাকে আরেকবার লিখব স্যার
তবে সেই লেখটা আমার জন্য সহজ হবে যদি ঝেড়ে কিছু সমালোচানা করেন এই লেখার
আবেগের বাড়াবাড়িটা সকালে বলতে চাইছিলাম। কেন যেন বলা হয় নাই। হিরোইজমটার কথা সকালে একটু বলছি আড়ালে আবডালে। সবাই এতো বেশি প্রশংসা করতেছে, তাই আর মুখ খুলতে সাহস পাই নাই। ঝেড়ে কিছু সমালোচনার ইচ্ছা আছে... কিন্তু এখন মাথার উপরে অনেক চাপ... ঈদের আগে ৩টা ২৬ পর্বের ক্ষেপ লিখে শেষ করতে হবে... কালকে থেকে আমি ইন্টারনেট লাইন অফ করে রাখতে পারি
সমালোচনার জন্য তো সামনাসামনি আড্ডা আছেই... তবে এইটারে স্যার লিখেন জোশ কইরা... ফাটাফাটি হইবো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কথা বেশি বলার অভিযোগ আমাকে যেমন প্রতিদিনই শুনতে হয় তেমনি শুনতে হয় একই কথা বারবার বলার অভিযোগ
লেখার ক্ষেত্রেও সেই দোষটা কাটে না আমার
বেশি বেশি বাক্য লেখা আর একই লেখা বারবার লেখা...
এই লেখাটা পোস্ট করার সময় কল্পনাও করতে পারিনি উল্টাসিধা বারোয়ারি চিন্তার এরকম একটা বিশাল জগাখিচুড়ি অতজন কষ্ট করে পড়বে
মাথায় শুধু একটা ধারণাই ঘুরপাক খাচ্ছিল
হয়তো এই লেখটায় কিছু ইলিমেন্ট আছে যা দিয়ে হয়ত কিছু একটা দাঁড় করাতে পারব
হয়ত কেউ পড়ে কোনো একটা ক্লু ধরিয়ে দেবেন
কিন্তু কল্পনাও করিনি এটা কারো ভালো লাগতে পারে
০২
কৃতজ্ঞতা সবার কাছে
০৩
অনুরোধ সবার কাছে; ভালো লেগেছে কিংবা লাগেনি যাদের
লেখাটাকে আরেকটু ভালো করার কোনো সাজেশন থাকলে দেন
খুব মন খারাপ হয়ে গেল লেখেটা পড়ে ।
আমিও রক্তখোর!
হয়তবা অন্যভাবে
মুস্তাফিজ ভাইয়ের সাথে বেড়িয়ে এসে উনাকেই ফাসিয়ে দিলেন, লোক বটে আপনি।
যেটুকু আপনি নিজে বললেন লীলেনদা, অন্যদের থেকে লেখকের মানবিকতাবোধটা একটু সুপিরিয়র দেখানো হয়েছে লেখাটায়। লেখক নিজেও সিস্টেমেরই অংশ এবং তার আচরনও অন্য সবার কাছাকাছি , এ চিত্রটা থাকলে লেখাটা আরো শক্তিশালী হবে বলে আমার মনে হয়। এটুকু বাদ দিলে অসম্ভব হৃদয় ছোঁয়া লেখা হয়েছে এটা।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
পুরান কথা;
রশিদ ভাই ৫ম বারে জাসদ বাদদিয়ে এমপি হইলে। মন্ত্রী হইলেন। তখন একবার কি মনে কইরা কারো কাছে জিগাইল; পুতিল কৈ? অনেক দিন হেহিনা, আমার লগে একবার দেহা করতো কইয়ো।
খবর হুইন্না আমি কইলাম;
মোনডায় কয়, সাতগিয়ারের ডেগারডা দিয়া পেটটা ফাইরা রইশ্যারে জিগাই, তর ভিতরে কোন জাগায় শোষন হীন সমাজ ব্যাবস্থাটা আছে আমারে দেহা।
ডরাইয়েন না, খেক খেক করুইন্না কুত্তায় কামড়ায় না। আমি কোন কিছু রশিদ ভাইয়ের ছিড়তে পারি নাই।
এখানে তীরুদার একটা অনুবাদ আছে। হাইনরিখ বোল-এর। লেখাটা আমার কাছে (জার্মান ভাষায়) যথেষ্ট আক্রমনাত্বক মনে হয়।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি; একটা গল্পের বাক্য, বর্ণনা, বিন্যাস, শব্দ শৈলীর চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ হইল, গল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা বা বাস্তবতা। আপনার গল্পে বাস্তবতাটা খুব ভাল করে টের পাওয়া গেছে। আপনার পেট থেকে খাবার বের করতে যখন একটা গাছ গাঙ পার হয়ে আসে, সেটাও সম্ভব মনে হয়। কিন্তু গল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মনে হয়নি।
উত্তম পুরুষে লেখার কারণে আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি, আপনি ভাত খাচ্ছেন, বমি করছেন। কিন্তু আপনার অনুশোচনা দেখলে দোষটা কি?
রশিদ ভাইয়ের খবর শুনে আমার যে অনুভূতি হয়েছিল, এখানে বক্তৃতার খসরাটা না থাকলেও কমরেডদের (এখানে রশিদ ভাই) প্রতি আমার সেই অনুভূতিই হতো। রাইফুন বসনিয়ার কথাটাও তেমন একটা এলিমেন্ট।
আরেক জনের ভুল ধরার মত সহজ কোন কাম নাই। কিন্তু আপনার ভুল ধরা আমার মত গপ্পার কাছে খুব কঠিন কাম।
যত যাই বাদ দেন আর যোগ করেন। গল্প হইল একটা বারুদে ভরা বাজির মত, একবার ফুটলে শেষ। এই ভাবে দেখলে গল্পটা এখন যেমন আছে তেমনই থাক।
এবং এইটা এর আগেরটা যদি আরো একটা গল্প আসে তাহলে এই তিনটা গল্পের জন্য সুন্দর বন দেখতে গেছেন। সেটা জায়েজ হয়।
খুব বেশী নাড়াচাড়ায় লেখা টেকনিক্যাল হয়ে যায়। প্রাণ থাকে না। মনে হয় সুন্দর বনে সাজানো গাছের সারি।
কত কথা কইলাম, পারলে মাফ কইরেন স্যার।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
শেষ করতে সময় দরকার। কাজেই সহজ পন্থা কপি করা। লেখকের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই...
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
যদিও জানি লীলেন ভাই লেখার এই কুকিংটা ক'রে থাকেন সময় দিয়ে, ধৈর্য নিয়ে, যত্নের সাথে আর ঐকান্তিকভাবেই, আমি সেই গল্প বা উপন্যাসাংশের সমস্যা-নির্ণয় বা সারাই-পুনর্নির্মাণের দিকে যাচ্ছিই না (তাতে নিশ্চয়ই পরিবর্তন হবে না মহাভারতের কোনো পরিস্থিতির)। যেভাবে এক টানে প'ড়ে গেলাম, চেনা লেখকের চোখেই/হাতেই অচেনা জনপদেরও চেনা অতিমানবিক আনুবীক্ষণিক মহাদুর্যোগেরই ছবি যেমন গল্পোর্ধ, ব্লগোর্ধ্ব, মতামতোর্ধ্ব এক অদেখা অলোক রূপে দেখলাম আজ, সেটাকে গল্প বা ব্লগের কোনো ফর্মুলা-কাঠামোর মধ্যে ফেলে বাজিয়ে দেখার মতো কোনো মানদণ্ড এই নগণ্য মন্তব্যকারীর হাতে নেই একেবারেই। পুরো ব্যাপারটা এত বেশি খোলা এখানে! ঘটনার সংঘটন সংগঠন, লেখকের দেখার চোখ, লেখার বর্ণনা বিবরণ, বিবেক-মনোবিচরণ, পাঠকের মন্তব্য, লেখকের ফিরতি-নিষ্ঠা, এইসব বিষমবাহু বহুভুজীয় সব খোলা-নাঙ্গা উত্তল-অবতল- সব মিলিয়ে এক্স-রে ফিল্মের চেয়েও বেশি এই অসহ্য স্বচ্ছতা! এটা বিরল। মানুষের চোখেই দেখা এটি, ত্রুটিমুক্ত যন্ত্রকৌশলে নয় নিশ্চয়ই। যে যাকে যা দেখাতে চেয়েছেন, তাতে কারো কোনো অস্বীকৃতি নেই- হোলিয়ার দ্যান দাউ-য়ের পাশাপাশিও যে সত্যনিষ্ঠ ফিরে-দেখা-মেনে-নেয়া-গুলোও আছে- এইরকম সূক্ষ্ম মহাসত্যসুন্দর কিছু আশেপাশে খুব কমই দেখা যায়, বা একেবারেই যায় না বললেও চলে।
স্পন্টেনি'টি-তে যা এসেছে, সেটাই এই খুব-বেশি সত্যরঙা চিত্রটার শ্রেষ্ঠ রূপ হ'লেও হ'তে পারে- আমি নিশ্চিত নই।
আমি যে এটাকে প্রিয় পোস্ট হিসেবে যুক্ত ক'রে নিলাম, আমার সচলিতিহাসে এই প্রথম, তা এই লেখার ফিলোসফি-অ্যানাটমি'র সাথে সাথে তার নিচের প্রতিটি মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য-শংসা-আত্নপক্ষসমর্থন- এ সবকিছু-সহই নিলাম।
স্যাল্যুট এই সবকিছু্কেই।
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!
___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি
লেখাটায় বেশ বড়োসড়ো একটা এডিট মারলাম
আগে ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের ভ্রমণ কাহিনী
এইবার চেষ্টালাম এইটারে গল্প বানানোর
আরেকবার পরিবর্তন করলাম লেখাটা
এই সিরিজ ডোন্ট মিস লেভেলের। পড়িনি। তবে পড়ব।
আপাতত স্যালুট রেখে যাই।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন