শাহ আবদুল করিমের জন্য একফোঁটা দীর্ঘশ্বাস

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শনি, ১২/০৯/২০০৯ - ৯:৩৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখাটা আমার নয়
ভারতীয় গণনাট্য সংঘের কর্মী সংগঠক শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের
এই লেখাটি ওপার বাংলায় আগামীকাল কোনো একটা পত্রিকায় যাবে

শাহ আবদুল করিমের অনেকগুলো গানের শিল্পী আর ঘনিষ্ঠ এই মানুষ লেখাটা আমাকে মেইলে পাঠিয়েছিলেন দেখার জন্য। কিন্তু আমার মনে হলো লেখাটা দেখানোও দরকার

প্রসঙ্গটা যদি সচলের নীতিমালার বিরোধী হয় তবে মডারেটরদের অনুরোধ করব মুছে দেবার
_ মাহবুব লীলেন


জীবন্ত কিংবদন্তীর জীবনাবসান
শাহ আব্দুল করিম আর নেই

- শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার


সকালবেলায় মোবাইলে ভেসে উঠল সিলেটের নাট্যকর্মী আমিরুল ইসলাম বাবুর ম্যাসেজ। ‘চলে গেলেন শাহ আব্দুল করিম’। মাথার মধ্যে হঠাৎ এক অসীম শূন্যতার বোধ আসতে না আসতেই দ্বিতীয় ম্যাসেজ খানিকটা বিভ্রান্ত করল আমাকে। সিলেটের প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রাণাকুমার সিন্হা ম্যাসেজ করেছেন, ‘শুভদা, করিমভাই মৃত্যুর সাথে লড়ছেন। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছে।’ বিভ্রান্ত হয়ে উত্তর পাঠালাম তাঁকে, ‘বাবু যে জানাল, করিমভাই আর নেই। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’ এবার উত্তর দিলেন রাণাদা, ‘আমি খবরের কাগজ
পড়ে ম্যাসেজ করেছিলাম। তার মানে সকালবেলাই চলে গেছেন করিমভাই। হায়, হায়।’ এমন একটা শোকের পরিস্থিতিতেও অদ্ভুত একটা পরিতৃপ্তির স্রোত বয়ে গেল ভেতরে। তার মানে সিলেটের শিল্পীমহলে তাঁর মৃত্যুসংবাদ পৌঁছনোর আগেই আমার কাছে খবর চলে এসেছে! কৃতজ্ঞতায় মনটা ভরে উঠল বাবুর প্রতি। আসলে সীমান্তের কাঁটাতারকে তুচ্ছ করে যে বাতাস সিলেটের নাট্যকর্মী আমিরুল ইসলাম বাবু আর এপারের গণনাট্যকর্মী আমার ওপর দিয়ে
বয়ে যায়, তার আরেকটা নাম তো শাহ আব্দুল করিম-ই। রবীন্দ্রনাথ - নজরুল - লালন - জীবনানন্দের মত তিনিও আমাদের দু’পারের হৃদযমুনার সেতু-ই। নিজের মনে একান্তেই— বলে উঠলাম, একলা রাতের অন্ধকারে আমরা যে পথের আলোর জন্যে কাঙাল, শাহ আব্দুল করিম ছিলেন সেই অনির্বাণ প্রদীপশিখা। গত পয়লা বৈশাখের সময় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সিলেট ও ঢাকায় গিয়েছিলাম। যেদিন সিলেট থেকে ফিরব সেদিন সকালে সিলেটের বিশিষ্ট কবি শুভেন্দু ইমাম এসেই জানালেন, অসুস্থ অবস্থায় করিমভাইকে কাল রাতে তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে এনে সিলেটের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে
ভর্তি করা হয়েছে। যাবার আগে একবার দেখে যান, আরেকবার এসে পাবেন কি না ঠিক নেই। করিমভাইয়ের শরীর একদম ভালো যাচ্ছে না। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পূবালী দেবনাথ। পূবালীকে বাবু বলল, দিদি, তোমার সৌভাগ্য, অসুস্থ অবস্থায় হলেও জীবদ্দশায় কিংবদন্তী হয়ে ওঠা একজন মানুষকে আজ দেখতে পাবে। তোমার এবারকার বাংলাদেশ সফরের সবচেয়ে বড় পাওনা কিন্তু এটাই। নূরজাহান ক্লিনিক নামের নার্সিংহোমে গিয়ে দেখি অসুস্থতার এক রাত্রি শেষে চেহারায় এক গভীর প্রশান্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছেন আমাদের বাউল সম্রাট। নিরাভরন হাসপাতাল
কক্ষের সাধারণ বিছানায় অতিসাধারণ পোষাকের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে যেন এক অনুপম দ্যুতি। তাঁকে দেখে তাঁর গানের পংক্তিই ভেসে উঠল মনে, ‘কোন্ সাগরে খেলতেছ লাই ভাবতেছি তাই অন্তরে/ কেমনে চিনিব তোমারে মুর্শিদ ধন হে’। মানুষ কত বড় হলে জানি অসুস্থ অবস্থায়ও এমন অতুলনীয় দীপ্তি ঠিকরে পড়ে কারো কারো মুখাবয়ব থেকে। মনের ভেতর বিদ্যুৎ তরঙ্গে খেলে গেল আমার জীবনে দেখা আরেক মহীরুহের রোগশয্যার মুখচ্ছবি। তিনি আন্দামান ফেরৎ বরাক উপত্যকার কমিউনিস্ট বিপ্লবী গোপেন রায়। জীবদ্দশায় দুজনেই ছিলেন দারিদ্র্যলাঞ্ছিত নিপীড়িত মানুষের আপনজন। একজন ছিলেন সাম্যবাদের স্বপেড়ব বিভোর রাজনৈতিক বিপ−বী, আরেকজন মরমিয়াবাদের সাধনায় থেকেও দীনদরিদ্র মানুষের দুঃখযন্ত্রণার সাঙ্গীতিক রূপকার। পৃথিবীর যত বড় দার্শনিক বা রাজনৈতিক বিষয়েই তাঁদের প্রশ্ন করা হোক, দুজনেই কথা বলতে পারতেন দরিদ্রসাধারণের মুখের ভাষায়।

১৯৯৬ সালের কেন্দ্রের যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ধন্যবাদ দিতে হয় আর কিছু না হোক, অন্তত— একটা কারণে- বিদেশি নাগরিকদের ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বেড়াতে আসার ক্ষেত্রে এতকাল যে রেস্ট্রিকটেড এরিয়া পারমিটের প্রয়োজন হত. ক্ষমতায় এসে তারা তা তুলে দেন। এর ফলেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচল সহজ ও স্বাভাবিক হয়। সুদূর দিলি− থেকে ওই পারমিট বের করার হ্যাপা পেরিয়ে কেউই আগে বাংলাদেশের নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানোর ঝক্কি নিত না। ১৯৯৭-৯৮ সাল থেকেই সিলেটের সাথে বরাক উপত্যকার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ঘটে। একটা কথা অনস্বীকার্য, আমাদের দু’পারের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে বরাক উপত্যকার ক্রীড়া জগৎ এক অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল। শিলচরের ইন্ডিয়া ক্লাব সিলেট সফর করার অনুষঙ্গেই শিলচরের সাথে সিলেটের সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বরাক উপত্যকায় গান গাইতে আসেন জামালউদ্দিন হাসান বানড়বা, মালতী পাল, হিমাংশু বিশ্বাস, বিদিতলাল দাস সহ আরো অনেকে। এঁদের কন্ঠনিঃসৃত হয়েই বরাক উপত্যকার প্রান্তপ্রান্তরে শাহ আব্দুল করিমের গানর ছড়িয়ে পড়ল। তবে এ কথা বলতেই হবে, এই যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল নাগরিক সমাজের মধ্যেই। বরাক উপত্যকার গ্রামীণ
লোকশিল্পীদের কাছে কোনও দিনই কাঁটাতারের বেড়া সাঙ্গীতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাধা ছিল না। নাগরিক সমাজের এই যোগাযোগ স্থাপনের অনেক আগে থেকেই করিম ভাইয়ের গান গাইতেন বরাক উপত্যকার লোকশিল্পীরা। একাধিক শিল্পী করিম ভাইয়ের প্রত্যক্ষ শিষ্যও ছিলেন।

১৯৯৯ সালে প্রথম সিলেট সফরে যাবার পরই বুঝতে পারি শাহ আব্দুল করিমের জীবন ও সৃষ্টির তাৎপর্য। সিলেটের পরম্পরাগত মরমী গানের অন্য স্রষ্টাদের চেয়ে কোন জায়গায় করিম ভাই অনন্য তার কিছুটা বুঝতে পারি তখন থেকেই। তারপর থেকে গত দশ বছরে প্রায় বারো তেরোবার গিয়েছি সিলেটে। এই এতবারের বাংলাদেশ আসা যাওয়ায় করিম ভাইকে পেয়েছি নানা ভাবে। কখনো তাঁর প্রিয় শিষ্যদের মুখে তাঁর শোনায়। কখনো তাঁর গুণমুগ্ধ সিলেটের
বুদ্ধিজীবী নাট্যকর্মী কবি সাহিত্যিকদের সাথে করিমের জীবন ও সৃষ্টি বিষয়ক আলোচনায়, আবার কখনো প্রত্যক্ষভাবে তাঁর সাথেই দিনভর আলাপচারিতায়। আশ্চর্য মানুষ, করিমভাই। মরমী সাধনার অন্দরের মানুষ হয়েও তাঁর একান্ত বিশ্বাস মাটির পৃথিবীর প্রতি। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমার ভাটির দেশের দরিদ্র মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাবে, আর আমি বুঝি এদের কথা ভুলে গিয়ে আচারের ধর্মে ডুবে থাকব? তাঁর একটি গানেও তিনি বলেছেন, ‘তত্ত্বগান লিখে গেলেন যারা মরমী কবি/ আমি তুলে ধরি দেশের দুঃখদুর্দশার ছবি/ বিপনড়ব মানুষের দাবি, করিম চায় শান্তির— বিধান,
মন মজালে ওহে বাউলাগান।’ এখানেই তিনি আর সকলের চেয়ে স্বতন্ত্র। তিনি পরম্পরার সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন সমকালের দুঃখযন্ত্রণাকে। তিনি একাধারে মরমী কবি, আবার প্রতিবাদী সঙ্গীতের স্রষ্টা। করিমভাইয়ের গানে মজেই একালের একজন গণনাট্যকর্মী হিসাবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, আমাদের প্রতিবাদী সঙ্গীতের শেকড় প্রোথিত হয়ে আছে আমাদের লোকায়ত ধর্মভাবনার গভীরে। আবহমানকাল ধরে দেশে দেশে ধর্মতত্ত্বের ভেতরমহলে যে সুদীর্ঘ দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও সংগ্রাম রয়েছে, তার অভ্যন্তরে আলো না ফেললে পরম্পরার সাথে সমকালের সংলাপের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদী সংস্কৃতির
আগামীর পথ তৈরি করতে পারব না। একজন গণনাট্যকর্মীকে জানতেই হবে কিভাবে ঈশ্বরসন্ধান করতে করতে করিমভাই পৌঁছে যান সমস্যাসঙ্কুল পৃথিবীর নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের ময়দানে। কোন্ সংগ্রামী হৃদয় থেকে তিনি কখনো সহযাত্রী হয়েছেন সেদেশের বিশেষ রাজনৈতিক যুগসন্ধিক্ষণে আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক মঞ্চে, আবার কখনো বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের কাছাকাছি। তাঁর গানের ভুবনও বি¯তৃত। ধর্মতত্ত্বের গান থেকে ঈশ্বরজিজ্ঞাসার গান, সেখান থেকে জীবনজিজ্ঞাসার গান হয়ে প্রতিবাদী গণসঙ্গীত। দরিদ্র মানুষের দুর্দশা দেখে যখন তিনি গানে বলেন, ‘জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে বল ওগো সাঁই/এই জীবনে যত দুঃখ কে দিয়াছে বল তাই/ ...এই কী তোমার বিবেচনা, কেউরে দিলায়
মাখন ছানা/কেউর মুখে অনড়ব জোটে না ভাঙা ঘরে ছানি নাই../’, তখন সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে তুলে ধরা প্রতিবাদী কন্ঠটি একাকার হয়ে যায় শোষণসর্বস্ব শ্রেণীবিভক্ত সমাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে। এভাবেই যেন আমাদের এক নিজস্ব ‘লিবারেশন থিওলজি’ তৈরি করেন করিমভাই। করিমভাইকে চেনার পর আমাদের দেশের বিশেষ করে আমাদের দেশের বাংলা-ভুবনের সংস্কৃতি আন্দোলনের প্রতি আমার মন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এই কারণে, তাঁরা অনেক দূরের অনেক প্রতিবাদী ধারার শুলুক সন্ধান জানেন। কিন্তু ঘর থেকে দু’পা ফেলে চোখ মেলে চেয়ে দেখলেন না কাঁটাতারের ওপারের এই প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ধারার এই অবিস্মরণীয় স্রষ্টাকে। সুদূরের পিয়াসা তাঁদেরকে যেন এতটাই আচ্ছনড়ব করেছিল, যে পড়শি থেকে গেল অপরিচিতই। করিমভাইয়ের এক গোপন দুঃখ ছিল- তাঁর গান এপারে পৌঁছলেও তাঁকে কেউ কখনো ডাকে নি।

এক বিনম্র উদ্যোগের অংশ হিসাবে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের শিলচর শাখার তরফ থেকে সিলেটের সতীর্থ নাট্যসংগঠন ‘কথাকলি’র বন্ধুদের মাধ্যমে আমরা বহুবার চেষ্টা করেছিলাম করিমভাইকে শিলচরে এনে সম্বর্ধনা দিয়ে আমাদের এই সামুহিক পাপস্খালনের। কিন্তু আমার যখন তাঁকে চিনলাম, তখন তাঁর শরীর অশক্ত হয়ে গেছে। সেজন্যে আমরা নিজেরাই ২০০১ সালে সিলেটে গিয়ে ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ শিলচর শাখার তরফ থেকে সম্বর্ধনা দিই। সেই অনুষ্ঠানে করিমভাই তাঁর প্রিয় শিষ্য রুহি ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে বেশ কয়েকটি গানও গেয়েছিলেন। একটি মজার ঘটনাও ঘটেছিল এ নিয়ে।
করিমভাইয়ের জনপ্রিয় গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এর যে সুরটি বেশি পরিচিত, তা লোকসঙ্গীত শিল্পী বিদিতলাল দাস বা পটলবাবুর দেওয়া সুর। করিমভাইয়ের নিজের দেওয়া সুরটি তাঁর ভক্তশিষ্যরাই বেশি ব্যবহার করেন। পটলদা’র দেওয়া সুরের এমনই সর্বগ্রাসী প্রভাব যে সেদিন করিমভাই নিজের এই গানটি গাইতে গিয়ে ভুল করে পটলবাবুর সুরে গেয়ে ওঠেন। খানিকটা এগোবার পর রুহিদা সামলে নিয়ে করিমভাইয়ের নিজের সুরে গানটিকে ফিরিয়ে আনেন। অনুষ্ঠানের পর রুহিদা হেসে বললেন, উস্তাদে দেখি আক্তা পটলবাবুর সুরো গাওয়া আরম্ভ করছইন। যে কষ্টে সামলাইছি শেষে। পরে করিমভাইকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই যে আপনার গানে পটলদার সুর বেশি জনপ্রিয় হয়েছে, এতে আপনার কষ্ট হয় না? নির্বিকার করিমভাই উত্তর দিয়েছিলেন, মানুষ এই সুর গ্রহণ করেছে। আমার এতে বলার কী আছে? পটলবাবুর সুর তো খারাপ না। তিনি তো একজন বড় শিল্পী। আসলে হয়ত করিমভাই তাঁর মনের গভীরে জানতেন শেষ পর্যন্ত সমস্ত সৃষ্টিই সামাজিক সৃষ্টি, আর সেটা নিয়ে ব্যক্তির বাড়াবাড়ি, আর যারই হোক, বাউলের শোভা পায় না।

কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন করিমভাইয়ের গানের শ্রেষ্ঠ রূপকার রুহি ঠাকুর। আমার মতে, রুহি ঠাকুরের গানেই করিমভাইয়ের গানের দার্শনিক জগতের সমস্ত দিকের যথার্থ উন্মোচন হয়। করিমভাইয়ের মত রুহিদাও ছিলেন এক আশ্চর্য কথক। শিলচরে, সিলেটে রুহিদার সাথে আলাপ-আলোচনা-আড্ডায় কেটেছে দিনরাতের যে অসংখ্য সুদীর্ঘ প্রহর, তাও জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ ধন।
করিমভাইয়ের মত আমারও কোনও পূর্বজন্ম, পরজন্ম, পরকালে বিশ্বাস নেই। যা কিছু আস্থা আছে, তা মাটির পৃথিবীর প্রতিই। তবু আজ একটু হলেও পরকালে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে। কল্পনা করি, রুহিদা আজ সকালের পর থেকে ভারি আনন্দে আছেন, কারণ এখন তিনি আর একা নন। তাঁর উস্তাদ করিম ভাই চলে এসেছেন তাঁর কাছে। করিমভাইও দারুণ খুশি প্রিয় শিষ্য রুহি ঠাকুরকে পেয়ে। উজানধল গ্রামের গানের সেই দিন সেই রাত, তত্ত্ব আলোচনার
সেই অসংখ্য প্রহর আবার শুরু হল বলে। বলা যায় না, নেত্রকোণার যৌবনের দিনের কথা মনে পড়ে সাত্তার মিয়ার সাথে আবার মালজোড়া গানের আসরে নেমে যেতে পারেন শাহ আবদুল করিম।

জন্ম : ১৫ ফেব্র“য়ারি, ১৯১৬, জন্মস্থান : বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই থানার ধলগ্রাম। পরবর্তী নিবাস : দিরাই থানার উজানধল গ্রাম। বাবা : ইব্রাহিম আলি, মা : নাইওরজান বিবি, স্ত্রী : সরলা খাতুন, পুত্র : শাহ নূর জালাল (বাবুল)

প্রকাশিত গানের বই : আফতাব সঙ্গীত (সম্ভবত ১৯৪৮) (বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য), গণসঙ্গীত (সম্ভবত ১৯৫৭) (বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য), কালনীর ঢেউ (১৯৮১), ধলমেলা (১৯৯০) ভাটির চিঠি(১৯৯৮), কালনীর কূলে (২০০১), রচনাসমগ্র (২০০৯)


মন্তব্য

মুস্তাফিজ এর ছবি

একদিন আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে, কিন্তু বিষয়টা হলো পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দাগ ফেলার মত কিছুই আমি রেখে যেতে পারবোনা যা শাহ্‌ আব্দুল করিম পেরেছেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

নজমুল আলবাব এর ছবি

লাইনগুলা এমন কেনো? পড়তে সমস্যা হয়েছে।

শুভদার লেখা ছুঁয়ে গেলো। তাকে সচলে আমন্ত্রন জানাও লীলেন ভাই।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটি।
লেখক ও মাহবুব লীলেনকে ধন্যবাদ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পিডিএফ থেকে কপি করায় ঝামেলাটা হচ্ছিল
ম্যানুয়ালি ঠিক করলাম কিছুটা (এনকিদুর বুদ্ধি কোনো কাজের না)

(২)

শুভদারে বহুবার লিংক দিয়েছি কিন্তু তার ভাদাইম্মাগিরির জন্য সে ভুলে যায় বারবার

নজমুল আলবাব এর ছবি

ঠিকাছে, আমি গোতাবোনে আজ থেকে।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

এনকিদু এর ছবি

লীলেন ভাই, পুরো লেখাটায় প্রচুর লাইন ব্রেক এসে পড়েছে ।

ঠিক করার একটা উপায় আমি জানি । নোট প্যাডে সম্পূর্ণ লেখাটা কপি করেন । তারপর word wrap তুলে দিন । তারপর ctrtl+a চেপে সব কিছু সিলেক্ট করে, সেগুলো একবারে কপি করে এখানে পেস্ট করেন । অযাচিত লাইন ব্রেক পালাবে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

একুশ তাপাদার [অতিথি] এর ছবি

দারুন একটি লেখা পড়তে পেরে তৃপ্তি লাগছে ।
অনেক মানুষের জন্য শ্রদ্ধা জানানো মানে আনুষ্টানিকতা আর কিছু কিছু মানুষের জন্য শ্রদ্ধা হৃদয় থেকে আসে - বাউল করিম সেরকমই "কিছু " মানুষদের দলে ।

লেখাটা ফেইসবুকে শেয়ার করছি । আরো অনেক মানুষ পড়ুক

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

সবাই চলে যায়, কথাটা ভুল। কেউ কেউ সবসময়-ই থেকে যায় তাঁর কর্মে...

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

লীলেন,অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটা লেখা সচলে শেয়ার করার জন্য।
আর শুভ প্রসাদ নন্দী মজুমদারকেও ধন্যবাদ অসাধারন এক মানুষকে নিয়ে চমৎকার লেখার জন্য।
বাউল শাহ করিমের জন্য শ্রদ্ধা।

খেকশিয়াল এর ছবি

পড়লাম, ধন্যবাদ লীলেনদা

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

তানবীরা এর ছবি

শ্রদ্ধা থাকলো প্রিয় অনেক গানের গীতিকারের জন্য। যেখানেই থাকুন তিনি, ভালো থাকুন।
জানতাম না তিনিও সিলেটের লোক ছিলেন।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

বাউল শাহ আবদুল করিম কে মনে রেখে, দোহার-এর গাওয়া ওনার একটা প্রিয় গান: http://www.esnips.com/doc/25e42753-519c-4600-8aa4-82acfc0e5858/DOHAR---GADI-CHALE-NA

সিরাত এর ছবি

ভাল লাগলো দুই বাংলার এই টান। হাসি

কীর্তিনাশা এর ছবি

অশেষ শ্রদ্ধা জানাই প্রিয় বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিম।

শুভ প্রসাদ নন্দী মজুমদারকেও ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ লীলেন্দাকে ।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

s-s এর ছবি

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

পড়ে ভালো লাগলো। এবং খুব ভালো কাজ করলেন লীলেন ভাই, লেখাটা উপস্থাপন করে।
ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আরিফ জেবতিক এর ছবি

রুহীদাকে অনেক অনেক মিস করি।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রয়াত সন্জীব চৌধুরী তখন ভোরের কাগজে কাজ করে, '৯২এ বাউল সম্রটের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল (সম্ভবত)। আমি সন্জীব আর কাজল (রুহুল আমীন কাজল, ট্রফিক আর্ট খ্যাত, ডেনমার্ক প্রবাসী) অনেকক্ষন পর্যন্ত তাঁর গান শুনি।আমরা তিনজনই কোন নেশা দ্রব্য না টেনেও বুঁদ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার মনে আছে অনেক অনেক দিন পর পর্যন্ত তার রেশ সত্ত্বার ভেতর গেঁথে ছিল। সেই প্রথম, সেই শেষ।

trishonku,

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার মনে হয় তথ্যগত ভুল আছে এখানে। ৯২ সালে সঞ্জীবদার সাথে আব্দুল করিমের পরিচয় ছিল না। খুব সম্ভবত ২০০০ সালে পরিচয়। সিলেটে ভোরের কাগজের পক্ষ থেকে আমরা করিম ভাইকে ১ লক্ষ টাকা চিকিৎসা খরচ ও সংবর্ধনা দেই , সেখানে সঞ্জীবদার সাথে করিম ভাইয়ের পরিচয়।
"গাড়ি চলে না " গানটা সেদিনই পিক করা যেটা দলছুটের অনেক জনপ্রিয় গান।
তাছাড়া কাজল ভাইয়ের সাথে সঞ্জীবদার পরিচয়ও এতো আগের বলে আমার মনে হয় না। কাজল ভাইয়ের ইন্টারভিউ আমিই প্রথম করেছি ভোরের কাগজে , সেটা ১৯৯৯ সালে হতে পারে, এবং যতোদূর মনে পড়ে তখনই সঞ্জীবদার সাথে উনার পরিচয়।

সোহেল মোরশেদ এর ছবি

উদ্ধৃতি:

"হয়ত করিমভাই তাঁর মনের গভীরে জানতেন শেষ পর্যন্ত সমস্ত সৃষ্টিই সামাজিক সৃষ্টি, আর সেটা নিয়ে ব্যক্তির বাড়াবাড়ি, আর যারই হোক, বাউলের শোভা পায় না।"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।