মাঝ রাত্তিরে কিছু লোক ঘুমের মধ্যে হাঁটে। দরজা-মরজা খুলে বাইরে চলে যায়। গোয়াল থেকে গরু খুলে রওয়ানা দেয় মাঠে অথবা পুকুরে পানিতে ডুবে মরে কিংবা গাছে উঠে পিপড়ার কামড়ে হুশ ফিরে পেলে চিক্কুর দেয়- মাইওগো... মুই কনে?...
নাগরিক শহরে এরা নাইটগার্ডের ধাক্কায় জেগে উঠে ভদ্রতা বজায় রেখে একটা চাপা গোঙানি দেয়-ঞ্যাঁ...?
তারপর কেউ হার্টমার্ট এ্যাটাক করে না হয় গার্ডদের কাছে মাতাল বনে গিয়ে বাসায় ফিরে ঝিমায়...
গত তিনমাস ধরে আমি যারে পাই তারে জিগাই এই লোকগুলারে আপনার অঞ্চলে কী বলে?
অতি বুদ্ধিমানরা সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠে- খাড়ান খাড়ান এইটার একটা নাম আছে। ... কিন্তু সেই নাম কেউ আর মনে করতে পারে না...
মাঝারি বুদ্ধিমানরা বলে উল্টাপাল্টা নাম। কম বুদ্ধির লোকজন বলে ইংলিশ নাম আর বুদ্ধিমানরা সরাসরি বলে- জানি না...
এই রোগে বাঙালি ডাক্তার দেখায় না। টুটকা ফুটকা কবিরাজ পির ফকির তান্ত্রিক ধরে পানিপড়া জড়িপড়া তাবিজ কবজের জন্য
আমি গিয়ে ধরি এক টুটকাবাজকে। এদেরকে কী বলে
সে সোজা উত্তর দেয়- জ্বিনে মুমিনে ধরা
আমি জিজ্ঞেস করি বাংলায় কী বলে?
সে সোজা উত্তর দেয় জ্বিন আর মুমিনের কোনোদিন বাংলা নাম হয় না
এইবার গিয়ে ধরি একট অমুমিন টুটকাবাজকে। সে কী একটা সংস্কৃত শুনিয়ে আমাকে বলে এইটা একটা শনি
- এর বাংলা নাম কী?
- এইগুলার তো দাদা বাংলা হয় না
আমি মনে মনে খুব খুশি হই। শনি শয়তান জ্বিনের আসর থেকে বাংলাভাষা পুরাপুরি মুক্ত। কিন্তু তারপরেও এইসব আরবি-সংস্কৃত বাতাসের কবলে বহু বাঙালি আক্রান্ত...
ঘুমের মধ্যে হাঁটে। ঘুমের ঘোরে কথা বলে। ঘুমের মধ্যে ঘটিয়ে ফেলে বহুকিছু। তারপর জেগে উঠলে আর কিছুই মনে করতে পারে না কেম্নে কী ঘটলো...
এদের একটা নাম দরকার আমার। কারণ আমার ২০১০এর গল্পের বইটা পুরাটা এদেরকে নিয়ে কিংবা এদের ঘটনা নিয়ে কিংবা এই রোগে ধরা খেয়ে আমার লেখা। সুতরাং এদের নামটাই হবে আমার বইয়ের নাম...
লেখাগুলার আগামাথা ঠিক নাই। ঘোরের মধ্যে কম্পুর বোতাম টিপে টিপে গিয়ে যা দাঁড়ায় তাই। ভদ্র ভাষায় বললে খাপছাড়া। কিন্তু শব্দটা আমার আগেই দখল করে বসেছেন সুকুমার
একবার নিজে নিজে আওয়াজ দিলাম- শব্দটা কি সুকুমারের বাপের জমিদারি নাকি যে আমি ব্যবহার করতে পারব না?
- না মোটেও না। উপেন কিশোরের জামিদারির তালিকায় শব্দটা নেই। সুতরাং এইটাই আমার বইয়ের নাম...
ফাইনাল। ফাইনাল। ফাইনাল
মুস্তাফিজ ভাই প্রচ্ছদ করে ফেলেছেন এই নামে। আমি ফাইনাল এডিট শেষ করে ফেলেছি এই নামে। বইমেলার ব্রোশিয়ার ছাপা হয়ে গেছে এই নামে। কিন্তু ট্রেসিং বের করতে গিয়ে দেখি পুরা কম্পু জুড়ে গোল গোল চশমার ফাঁক দিয়ে সুকুমারের চোখ ভাসে। ঘুমের মধ্যে তেড়ে আসে সুকুমারি চিড়িয়াখানার সবগুলা বকচ্ছপ আর রাম গরুঢ়ের ছানাপোনা...
আমি ট্রেসিং বের করি না। বই ছাপা বন্ধ করে দেই। আবার এরে তারে জিগাই- ও বাঙ্গাল ভাই। ঘুমের মধ্যে যারা হাঁটে তাদের বাংলায় কী কয়?
বাঙালরা আবারও ইংরেজি কপচায় অথবা ভাব ধরে মনে করতে পারে না। আমিও খুঁজি কিছু ভদ্র লোকের শব্দ। তারপরে নিজেই নিজেরে খাঁটি সিলেটিতে গালি দেই- শালা বেবাট। আস্ত একটা বেবাট না হলে পুরা বই লিখে নামের জন্য ছাপা আটকায় কারো?
ধুম করে নিজের গালিটা নিজের কানে লাগে। বেবাট। যার কোনো বাট নাই সে বেবাট। যারে কোনোভাবেই বাটে ফেলা যায় না সেও বেবাট
আমার বইটাও তাই
আস্ত একখান বেবাট রচনা
আধা ঘুম আধা স্বপ্ন আধা জাগারণ আধা বাস্তব...
ফাইনাল
এবারের গল্প বইটা বেবাট
দিয়ে দিলাম ছাপতে...
মন্তব্য
অভিনন্দন। শুভেচ্ছা থাকলো।
ঘুমের মধ্যে যারা হাঁটে, তাদের কী বলে? জানলে জানায়েন। আমিও জানি না। (আমি কি তাইলে 'বুদ্ধিমান'?)
এখন থেকে বলবে বেবাট
দেখেন লীলেন ভাই, আমি আগেও কইসি, এখনো কই- আমার 'এরিয়ার' লোকজন ব্যাপক শিক্ষিত... আমরা এইটারে স্লীপ ওয়াকিং বইলাই ডাকি
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
শিক্ষিত মানুষরে ডরাই
মজা পাইলাম
অভিনন্দন লীলেনদা, শুভেচ্ছা রইলো!
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
নিশি পাওয়া লোক
নিশির ডাক শোনা মানুষ
-এইসবও বলে আমাদের গাঁয়ে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এইনামগুলা পাওয়া গেছে
কিন্তু এগুলো অতি পলিশড
আমি একেবারে গ্রামীণ খুঁজছিলাম
নিশ্চয়ই আছে
দেখা যাক পাওয়া যায় কি না
সহমত। আমিও এ কথাটাই বলতে চাইছিলাম। "নিশি পাওয়া মানুষ" বলে এদের...
লীলেনদাকে অভিনন্দন।
_________________________________________
সেরিওজা
ভাইজান নিশি পাওয়া মানুষ বলার আগে গ্রামের বাড়িতে দাদাদাদি কাউরে কথাটা ঠিক কি না জিগাও
প্রমিত ভাষায় ছোটবেলা থেকে ভূতের গপ্পো শোনার সময় থেকে নিশি পাওয়া বলেই জেনে এসেছি এদের।
... আচ্ছা, আরেকটা মনে পড়েছে- ভুলো । ভুলোর ডাকে সব ভুলে যারা বেরিয়ে যায় এবং শেষে ভুলোর হাতে প্রাণ খোয়ায়...
_________________________________________
সেরিওজা
আমার বাসায় একটা কুকুর ছিল। নাম ভোলা। আদর করে ভুলো ডাকতাম।
লীলেনদা,
লেখা ভাল্লাগছে।
আরেকটা শুনেছিলাম। কানাওলায় ধরা। কানাওলায় ধরলে নাকি চেনা পথ ও চেনা জায়গাও মানুষ আর চিনতে পারে না, ঘুরে ঘুরে একই মোড়ে ফিরে আসতে থাকে। তখন নাকি জামাকাপড় খুলে ভালো করে ঝেড়ে আবার পরতে হয়। কানাওলা ছেড়ে দেয় ঝাড়া জামাকাপড় পরলে। আবার কোনো কিছু খুজে না পেলে নাকি বলতে হয় "কানাওলা বেহায়া/ আমারে দে দেখাইয়া।" কেজানে কেন! এগুলো হয়তো ব্রেনের বিশেষ অবস্থা, ঝাঁকানি মেরে ঠিক করা হয়।
তবে এর সঙ্গে ঘুমে হাঁটা লোকজনের সম্পর্ক নেই। যেকোনো লোককেই কানাওলা ধরতে পারে।
-----------------------------------------------
কোন্ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
তুলিই ঠিক। এর নাম কানাওলা। এই ছড়া/মন্ত্রটাও আমি জানি। তাই স্যার বইয়ের নাম আবার পালটে "কানাওলা" রাখুন। বেবাট শব্দটা বহু অর্থবোধক - তাই মানানসই হয় না।
বইয়ের বিজ্ঞাপণ অংশটা বাদ দিলে লেখাটা একটা গল্পের অর্ধেক বলে মনে হয়। বইয়ের প্রবেশক হিসাবে গল্পটা দিতে পারেন, তবে অবশ্যই গল্পটা শেষ করে দেবেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
স্যার কানাওয়ালারা আরেকটা ভার্সন আছে- কানায় ধরা
কিন্তু কানাওয়ালা কিংবা কানায় ধরা বোধহয় নিশি পাওয়ার প্রতিশব্দ নয়
ভিন্ন
০২
বইয়ের নাম খোঁজার গ্যাঞ্জাম এড়াতে আমাদের এক কবিবন্ধু তার সকল বইয়ের নাম দেয়- মুজিব ইরমের বই- ০১। মুজিব ইরমের বই-০২
আমারও এখন মনে হচ্ছে সবচে ভালো হয় আমার বই- এক আমার বই- দুই এভাবে নাম দেয়া শুরু করলে
না হলে এখনই অত ঝামেলা। বেঁচে থাকলে তো প্রতি বছরই দুচারটা হাবিজাবি আবর্জনা বাড়াব। অত নাম পাব কই?
০৩
আপনার কথা শুনে এখন বিল ভাউচার লিখতেও ভয় লাগে
কোন সময় না আবার গল্প হয়ে যায়...
অভিনন্দন!!
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি একটা 'সৌজন্য সংখ্যা, বিক্রয়ের জন্য নহে' কপি চাই।
অভিনন্দন!!
মেলায় কবে নাগাদ আসছে?
কিছু মনে করবেন না, বইয়ের নাম হিসেবে বেবাট কেমন জানি লাগছে..
আর কিছু ভাবা যায় না?
অভিনন্দন জানাচ্ছি ।
সাইকোলজির বইপত্রে এইধনের কাজরে কয় 'সমনামবুলিজম', আর যারা করে তাগোরে কয় 'সমনামবুলিস্ট'। আমাদের ঢাকাইয়া ভাষায় তো এদের কয় 'নিশিতে পাওয়া'। এর চে বেশি এখন কইতে পারতেছি না।
আর অনেক অভিনন্দন! আর "বেবাট' এর জন্য শুভকামনা রইলো।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
অভিনন্দন। শুভেচ্ছা থাকলো। গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম।
তুলিরেখার উল্লেখ করা কানাওলায় ধরা এবং নিশি পাওয়া মনে হয় দুই জিনিস।
অভিনন্দন এবং শুভকামনা রইলো ।
-------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
বইয়ের জন্য শুভ কামান দাগাইলাম। ষষ্ঠদার কথাটা কিন্তু ফেলনা না। আর আমার সৌজন্য কপি আমি নিজ দ্বায়িত্বে আপনার কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিব।
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নাম ভালো লাগেনি লীলেন ভাই
বইটা নিশ্চয়ই ভালো লাগবে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
হ
আমি বুদ্ধিমান । আমি আপনারে শুদ্ধস্বরে বলছিলাম "জানিনা"।
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বইটা আসছে কবে?
২য়টার কাজ কেমন হচ্ছে?
- এই হলো তবে "বেবাট" নামে ইতিহাস!
আচ্ছা, 'কৃষ্ণপক্ষ' শব্দটা কোনটা? আংরেজীতে কাছাকাছি যে শব্দটা ব্যবহার করা হয়, তার বাংলা করলে এটাই হয় না? অবশ্য এই নামটাও বইতে চালিয়ে দিলে চশমার ফাঁকে আপনি হুমায়ূন আহমেদ-এর চোখ দেখতেন!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
নতুন মন্তব্য করুন