এক দেশে ছিল এক বগডুল। তার মাও নাই বাপও নাই। ঘরবাড়ি কিছুই নাই। গাছতলায় থাকে। গাছের পাতা খায় আর রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া একটা বস্তায় ঢুকে রাত্তিরে ঘুমায়
একদনি বগডুল রাস্তায় একটা পাঁচ টাকার কয়েন কুড়িয়ে পেল। এর আগে সে কোনোদিন টাকা দেখেনি। তাই সে বুঝতে পারছিল না জিনিসটা কী? চকচকে কয়েনটা তার খুব পছন্দ হয়ে গেলো। তার খুব জানতে ইচ্ছে করল জিনিসটা কী? কিন্তু কাউকে দেখালে যদি কেড়ে নিয়ে যায় এই ভয়ে কাউকে সে জিজ্ঞেসও করে না। বস্তার ভেতরে ঢুকে লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েনটা দেখে আর মনে মনে ভাবে জিনিসটা কী? কেমনে বানাইল এত সুন্দর জিনিস
বগডুল একদিন একটা বুদ্ধি বের করল। সকাল বেলা ইস্কুলের সামনে ভালো করে দেখল কোন পিচ্চির গায়ের জোর তার থেকে কম হবে। কোন পিচ্চি তার কাছ থেকে জোর করে জিনিসটা কেড়ে নিতে পারবে না। তারপর একেবারে রোগাসোগা হালকা পাতলা এক পিচ্চির সামনে কয়েনটা মুঠোর ভেতরে ধরে জিজ্ঞেস করল- বলোতো আমার হাতে কী?
পিচ্চি বলল- চকলেট
বগডুল বলল- হয়নি। আবার বলো
পিচ্চি বলল- মার্বেল। বগডুল বলল আবার বলো। এভাবে পিচ্চি একশোটা জিনিসের নাম বলল। কিন্তু প্রতিবারই বডডুল বলে- হয়নি। আবার বলো। শেষে রেগে মেগে পিচ্চি বলল- ঘোড়ার ডিম। তোমার হাতে কিছুই নেই...
বগডুল বলল- আছে। কিন্তু তুমি বলতে পারো না...
পিচ্চি বলল- দেখি তো কী আছে তোমার হাতে?
বগডুল ভাবলো এইবার পিচ্চিকে জিনিসটা দেখানো যায়। তা হলে জিনিসটার নাম জানা যাবে। এই ভেবে বগডুল একটু দূরে গিয়ে হাত খুলে পিচ্চিকে দেখালো। পিচ্চি ঠোঁট উল্টে ভেংচি দিয়ে বলল- আগেই তো বলেছি তোমার হাতে টাকা
জিনিসটার নাম জেনে বগডুল এক দৌড়ে গিয়ে তার বস্তার ভেতরে ঢুকে গেলো। সে শুনেছে টাকা থাকলে অনেক খাবারদাবার এমনকি ঘরবাড়িও পাওয়া যায়। বগডুল মনে মনে ভাবলো সবার আগে তার একটা বাড়ি দরকার। সে বস্তা থেকে বের হয়ে বিশাল এক বাড়ির সামনে গিয়ে আওয়াজ দিলো- টাকা দেবো। বাড়ি দেবে?
তার চিল্লাচিল্লি শুনে বাড়িওয়ালা বের হয়ে এসে জিজ্ঞেস করল- দেখি। কয়টাকা আছে তোর
বগডুল হাতের মুঠো বের করে কয়েনটা দেখালো- এই যে টাকা। এইটা নাও আর বাড়িটা দাও
তার কথা শুনে বাড়িওয়ালা ঠাঠা করে হেসে উঠলো- হা হা হা। পাঁচ টাকায় বাড়ি কিনবে? যা ব্যাটা ভাগ...
তাড়িয়ে দিলেও বগডুল নতুন দুটো জিনিস টাকা ছাড়াই জেনে গেলো। তা হলো- তার হাতের টাকাটা পাঁচ টাকা। আর পাঁচ টাকায় বাড়ি পাওয়া যায় না
সে এবইবার একটা হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিলো- পাঁচ টাকা দেবো। খাবার দাও
তার কথা শুনে হোটেলওয়ালা দিলো এক দাবড়ানি- যা ব্যাটা ওই ফুটপাতে যা। পাঁচ টাকায় হোটেলে কিছু নাই
বগডুল দাবড়ানি খেয়ে আরেকটা জিনিস জেনে গেলো। পাঁচ টাকায় ফুটপাতে খাবার পাওয়া যায়
সে এবার ফুটপাতের একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আওয়াজ দিলো- টাকা নাও। খাবার দাও
ফুটপাতি দোকানদার পাঁচ টাকার কয়েনটা নিয়ে একটা বনরুটি দিলো। আর পাতলা একটা এক টাকার কয়েন ফিরত দিলো
বগডুল এক টাকার কয়েন আর বনরুটি নিয়ে এসে ঢুকে গেলো আবার ব্স্তার ভেতরে। বস্তায় ঢুকে এক টাকার কয়েনটা পাশে রেখে বনরুটিটা খেয়ে হাত থেকে বনরুটির গুঁড়া ঝাড়ার জন্য দুইহাতে বাড়ি দিলো- খটাস খাটাস
ওমা। খটাস খটাস করতেই দেখে তার দোকানির দেয়া ছোট কয়েনটার কাছে তার আগের পাঁচ টাকার কয়েনটাও পড়ে আছে
বগডুল এবার দুটো কয়েন নেড়েচেড়ে দেখে। সত্যি সত্যি নতুন কয়েনটার সাথে তার পুরোনো কয়েনটাও তার হাতে। অনেক্ষণ কয়েন দুটো নাড়াচাড়া করতে করতে বগডুলের ক্ষিদে পেয়ে যায়। সে আবার কয়েনদুটো নিয়ে ফুটপাতের দোকানে যায়। দোকানি কয়েন দুটো নিয়ে তাকে একটা বনরুটি দেয় আর একটা কাগজের দুইটাকার নোট ফেরত দেয়। বগডুল আবার বস্তায় ঢুকে বনরুটি খেয়ে যেই না দুই হাতে খটাস খটাস করেছে। সাথে সাথে দেখে দুই টাকার নোটের পাশে তার আগের কয়েন দুটোও পড়ে আছে...
এইবার বগডুল বুঝে যায় টাকা দিয়ে ফিরে এসে হাতে খটাস খটাস করলে টাকা আবার ফেরত চলে আসে। সে আবার দোকানে যায়। আবার জিনিস কিনে আর ফিরে এসে বস্তায় ঢুকে দুইহাতে খটাস করে। তারপর সে সেই হোটেলে গিয়ে খায় আর ফিরে এসে খটাস করার সাথে সাথেই তার টাকা তার বস্তায় ফিরে আসে। তারপর বিভিন্ন জিনিস কিনে আর খটাস করে। খটাস করতে করতে সে শিখে যায় যে পুরো টাকার জিনিস একসাথে কিনলে লস বেশি। পাঁচশো টাকার নোট দিয়ে কিনতে হয় একশো টাকার জিনিস। তাহলে দোকানি ফেরত দেয় চারশো টাকা আর খটাস করলে নিজের পাঁচশো ফিরে এসে হয়ে যায় নয়শো টাকা। এইভাবে কয়েকদিনের মধ্যে বগডুলের অনেক টাকা হয়ে যায়। টাকা দিয়ে সে বাড়ি কেনে। গাড়ি কেনে। আরামে খায় দায় ঘুমায় আর বস্তার ভেতরে হাত ঢুকিয়ে খটাস করে আরো আরো টাকা কামায়...
২০১০.০২.০৩ বুধবার
মন্তব্য
এইটা কি জাদু বাস্তবতা?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
না
এইটা কিচ্ছা
মজার কিচ্ছা!
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মজা পাইলৈ হৈল
কিসসা ভালু পাইলাম।
ভালু পাইলৈ ভালু
খুবই ভালো লাগল। এতো সুন্দর করে কিচ্ছা লেখা যায় না পড়লে বুঝা যেতো না। অনেক কিছু শিখার আছে লীন ভাইয়ের লেখা থেকে। ধন্যবাদ।
==========
কামরুজ্জামান স্বাধীন
এইটার মইধেও শিক্ষণীয়?
দারুন জাদুর কিচ্ছা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
জাদু ছাড়া কিচ্ছা শুনছে কেউ কোনোদিন?
পরের পর্ব কবে দেবেন? লেখাটা শেষ হয়ে যাওয়ায় খুব দু:খ পাইছি।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
পরের পর্ব লেখা হইলেই দিবো
আর বস্তাটার কি হল?
থাইকলো
পরে কামে লাগবো
সেইটা জানার অপেক্ষায়...
বগডুল হৈথাম ছাই
হইতারলে আমারেও লগে নিয়েন
কিচ্ছা হিসেবে ভালই হইছে। দেখি মেয়েকে আজ রাতে শোনাতে হবে।
মেয়ের ফিডব্যাকটা দিয়েন। কাজে লাগবে আমার
চমৎকার। ০১ দেখে আশা করছি আরো আসবে।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
হ
বাহ, এইটা বেশ হৈসেতো... বগডুলের নতুন নতুন শেখার পন্থাটা ভালো লাগসে। ... কিচ্ছা সিরিজ করন যায় না ??
_________________________________________
সেরিওজা
চেষ্টাইতেছি সিরিজাইবার
আমাদের ঋণ খেলাপীের সােথ কিমুন জানি মিল পাই - লিলেন দা।
হৈতারে
দারুণ!! আমিও বগডুল হৈতে চাই।
পারমিশান দিলাম
আপনার অন্য লেখাগুলোর তুলনায় এটা অনেক বেশি সহজ-সরল।
তাই ভাবছি, কিছু কি মিস করলাম?
...........................
কেউ আমাকে সরল পেয়ে বানিয়ে গেছে জটিল মানুষ
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
মিস করলেন আমার সহজ সরল লেখার চেষ্টা
কিচ্ছু বুঝি নাই !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
জ্ঞানীলুকরা এইডা বুঝব না
মিছা কতা। বহুৎ খটাস খটাস করলাম মাগার টাকা পাইলামনা
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আগে বস্তা জোগাড় করো। তারপর খটাস
মনে হচ্ছে সিরিজ হবে। যদি সিরিজ খেলাপী না হোন এবারে তবে আশা করবো এরকম আরও কেচ্ছা নিয়ে পরের বই মেলায় নতুন বই পাব।
কি বলেন?
আশা করি
মজার কিচ্ছা! চালাইয়েন কিন্তু!
-------------------------
ওলো সুজন আমার ঘরে তবু আইলোনা
এ পোড়া মনের জ্বলন কেন বুঝলোনা!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন