একদিন বস্তার ভেতরে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়েছিল বগডুল। হঠাৎ গদাম করে বস্তার উপরে এক লাত্থিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। এরকম ঘুমের মধ্যে তাকে প্রায়ই লাত্থি খেতে হয়। কারণ তার মাও নাই বাপও নাই। থাকার কোনো জায়গাও নাই। কুড়িয়ে পাওয়া বস্তার ভেতরে ঢুকে সে এইখানে ওইখানে বারান্দায় ফুটপাতে ঘুমায়
লাত্থি খেয়ে বগডুল আবার পাশ ফিরে চুপচাপ ঘুমায়। কিন্তু একটু পরে পরপর আরো দুইটা গদাম। বগডুল ঘুম থেকে উঠে বস্তার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে উলকুন্দা টাইপের একটা লোক আরেকটা লাথি মারার জন্য পা তুলছে। দেখেই এক লাফে বস্তা থেকে বের হয়ে দূরে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে মারেন ক্যান?
উলকুন্দা এবার খ্যাকখ্যাক করে উঠে- এইটা আমার জায়গা তুই ঘুমাস ক্যান?
লোকটার যেমন চেহারা তেমন গলা। বগডুল ভয় পেয়ে যায়। সে বস্তাটা পোঁটলা করে বগলে নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বলে- এইটাতো ফুটপাত। আপনার জায়গা কেমনে?
উলকুন্দা এবার খটাস করে একটা চটকনা মারে বগডুলের কানকায়- বলছি যখন আমার জায়গা তখন এইটা আমার জায়গা
চটকনা খেয়ে পড়ে গিয়ে বগডুল আবার উঠে দাঁড়ায়। পেছনে তাকিয়ে দৌড় দেবার জন্য জায়গা দেখে নিয়ে আবার সোজা হয়। তাকে সোজা হতে দেখে উলকুন্দা আরেকটা চটকনা মারার জন্য এগোতেই বগডুল ফচাৎ করে উলকুন্দার পাঁজরে একটা খোঁচা মেরে ঝেড়ে দৌড় লাগায়
দৌড়াতে দৌড়াতে বগডুল শুনতে পায় উলকুন্দার গলা। উলকুন্দা তার পেছনে দৌড়াচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে- এইটা আমার জায়গা না। তুই থাক। তুই থাক
বলা যায় না। তাকে থামিয়ে আরো কয়েকটা গদাম দেবার জন্য হয়ত লোকটা চালাকি করছে। কিন্তু তারপরও বগডুল একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। উলকুন্দা কাছে এসে বলতে থাকে- ওইটা আমি মিথ্যে বলছিলাম। ওইটা আমার জায়গা না। তুই থাক। তুই ঘুমা। আমি যাই...
উলকুন্দা চলে যায়। বগডুল আবার ফিরে এসে বস্তায় ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমাতে ঘুমাতে তার ক্ষিদে পায়। উঁকি মেরে দেখে সন্ধ্যা হয় হয়। সে বস্তা থেকে বের হয়ে বস্তাটা পোঁটলা করে বগলে নিয়ে বাবু টাইপের একটা লোকের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়- স্যার দুইটা টেকা দেন। একটা রুটি খামু
লোকটা দাঁড়িয়ে তার দোস্তের সাথে গল্প করছিল। সে বগডুলের কথা শোনে না। বগডুল আবার বলে- স্যার দুইটা টেকা দেন। একটা রুটি খামু
লোকটা এবার ধমক লাগায়- যা যা ভাগ
কিন্তু বগডুল ভাগে না। মিনমিন করে আবার বলে- স্যার দুইটা টেকা দেন...
লোকটা এবার বগডুলের দিকে তাকায়- মাপ কর বাবা। টাকা নাই। অন্যদিকে যা...
কথাটা শুনে বগডুলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বেটা টেকা নাই সেটা আগে বললেই তো হয়। খামাখা ভাব নিলি কেন?
বগডুল পেছনে তাকিয়ে দৌড় লাগানোর রাস্তা দেখে ফচাৎ করে লোকটার ভুঁড়িতে একটা খোঁচা মেরে দৌড় লাগায়। কিন্তু দৌড়াতে দৌড়াতেই শোনে পেছন থেকে লোকটা ডাকছে- টাকা আছে। নিয়ে যা
বগডুল দাঁড়িয়ে ভাবে লোকটা টাকার লোভ দেখিয়ে মাইর দেবে তাকে। সে দাঁড়িয়ে থাকে। দেখে লোকটা এগিয়ে আসছে তার দিকে। পেছনে দৌড় লাগানোর জায়গা ভালো করে দেখে নিয়ে বগডুলও একটু এগিয়ে যায়। লোকটা সামনে এসে তাকে দুইটাকা দিয়ে বলে- আমি মিছা কতা কইছিলাম টেকা নাই। এই নে দুই টেকা...
বগডুল টাকা নিয়ে ফুটপাতের একটা হোটেলে গিয়ে একটা রুটি নেয়। বস্তাটা পাশে রেখে কাঠের বেঞ্চিতে বসে রুটি খেয়ে দোকানিকে দুই টাকা দিতেই সে খ্যাক খ্যাক করে উঠে- তিন টেকা লাগব। রুটির দাম তিন টেকা
- কাইলকে না খাইলাম দুই টেকায়?
- আইজকা রুটির দাম বাইড়া গেছে। এখন তিন টেকা
বগডুলের কাছে আর কোনো টাকা নাই। তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে দোকানিকে একটা ফচাৎ করে বসে। সাথে সাথে দোকানি রুটি গরম করার হাতা নিয়ে তেড়ে আসে তার দিকে- টেকা দিবো না আবার মারে? আইজকা খাইছি তরে...
এক দৌড় লাগায় বগডুল। কিন্তু অনেক দূরে গিয়ে টের পায় তার বস্তাটা ফেলে এসছে দোকানে। সে আবার আস্তে আস্তে দোকানের দিকে যায়। দূর থেকে দেখে দোকানি বসে বসে রুটি বানাচ্ছে আর তার বস্তাটা পড়ে আছে আগের জায়গায়। সে পা টিপে টিপে আরেকটু আগায়। দোকানি তাকে দেখে না। বগডুল পা টিপে টিপে বেঞ্চ থেকে বস্তাটা বগলে নিয়ে দৌড় লাগাতে গিয়ে দেখে খপাৎ করে দোকানি তাকে ধরে ফেলেছে- টেকা দিবি না। আবার মারবি আমারে। এইবার তরেই ভাইজা বিক্রি করমু আমি। আয়...
দোকানি ইন্দুরের বাচ্চার মতো বগডুলকে ধরে চুলার দিকে টেনে নিতে থাকে। বগডুল বস্তাটা এক হাতে বগলে চেপে দোকানির হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য অন্য হাতে তার পেটে একটা ফচাৎ করে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানি তাকে ছেড়ে দেয়। বগডুল ভাবে এইবার বুঝি তাকে মাইর দেবে। কিন্তু না। দেখে দোকানি তাকে ছেড়ে দিয়ে বলে- যা। রুটির দাম দুই টেকাই। দাম বাড়ে নাই। বেশি লাভের লাইগা কইছিলাম তিন টেকা। যা
দোকান থেকে বের হয়ে বগডুল হাঁটে আর ভাবে। ভাবে আর হাঁটে। লোকগুলা একবার মিথ্যা বলে আবার সত্য বলে। কেম্নে কী? ফচাতের ভেতরে কী একটা আছে। কিন্তু সেটাও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। দোকানিকে একবার ফচাৎ করায় মারতে এলো। আরেকবার ফচাৎ করার ছেড়ে দিলো। ঘটনা কী?
বগডুল আরেকটা লোকের সামনে দাঁড়ায়- স্যার দুইটা টেকা দেন
- টেকা নাই। অন্য দিকে যা
বগডুল দৌড়ানোর রাস্তা দেখে বস্তাটা হাতে নিয়ে একটা ফচাৎ করে। সাথে সাথে লোকটা তাকে দাবড়ানি দেয়। অনেক দূরে গিয়ে বগডুল দেখে লোকটা তাকে আর ডাকছে না। গালাগালি দিচ্ছে। তার মানে ফচাতে কাজ হয়নি। বগডুল আরেক লোকের কাছে যায়। সেই লোকও বলে টেকা নাই। বগডুল বস্তাটা বগলে চেপে এই বেটাকেও ফচাৎ করে দৌড় দেয়। পেছনে তাকিয়ে দেখে লোকটা টাকা হাতে নিয়ে তাকে ডাকছে
বগডুল টাকা নিয়ে ভাবে আর হাটে। হাঁটে আর ভাবে। এক ফচাতে দাবড়ানি আরেক ফচাতে কামাই। কোনটা কী?
বগডুল ভাবে আর হাঁটে। হাঁটে আর ভাবে। কোনো কূল কিনারা পায় না। হঠাৎ তার খেয়াল হয় দাবড়ানি খাওয়া ফচাৎগুলোর সময় তার বগলে বস্তা ছিল না
সে এইবার একটা দোকানে গিয়ে একটা বড়ো রুটি দেখিয়ে দোকানিকে জিজ্ঞেস করে- ভাই এইটার কিনা দাম কত পড়ছে?
- কিনা দাম? কিনা দাম পড়ছে পঁচিশ টেকা
বগডুল বস্তা বগলে নিয়ে দোকানিকে একটা ফচাৎ করে। সঙ্গে সঙ্গে দোকানি কথা পাল্টে ফেলে- না ভাই। মিছা কইছিলাম। এইটার কিনা দাম পড়ছে আঠারো টেকা...
বগডুল বুঝে যায় বস্তাটা বগলে নিয়ে ফচাৎ করলে মানুষ সত্য কথা বলে। তারপর সে টাকা চাওয়ার সময় ফচাৎ করে। টাকা খরচের সময় ফচাৎ করে আর বস্তার ভেতরে গুটিসুটি মেরে ঘুমায়। কিন্তু একদিন মাইকের আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়। বস্তা থেকে উঁকি দিয়ে দেখে ফুটপাতের পাশের রাস্তা আটকে এক রাজাকার গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা দিচেছ- দেশের স্বাধীনতার জন্য আমরাও যুদ্ধ করেছি। ভাষার জন্য লড়াই করেছি আমরাও...
বগডুল বক্তৃতার অতকিছু বোঝে না। তার মেজাজ খারাপ হয় মাইকের আওয়াজে। রাজাকারটার সামনে অনেক লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুনছে আর হাত তালি দিচ্ছে। বগডুল বুঝে যায় এইখানে সে ঘুমাতে পারবে না। তার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ লোকটাকে তার একবার ফচাৎ করতে ইচ্ছা করে। সে বস্তা বগলে নিয়ে আস্তে করে মঞ্চের পেছন দিকে যায়। কেউ তাকে খেয়াল করে না। রাজাকারটা তখনও বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে। বগডুল বস্তাটা বগলে চেপে এক লাফে স্টেজে উঠে পেছন থেকে রাজাকারটাকে একটা ফচাৎ করে দৌড় লাগায়। একটু দূরে গিয়ে দেখে রাজাকরটা থেমে গেছে। থেমে এদিক সেদিক তাকিয়ে আবার বক্তৃতা শুরু করেছে- ভাইসব। আমি অতক্ষণ যা বলেছি তা মিথ্যা। আসোলে আমি যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ধরে মিলিটারিদের হাতে দিতাম। স্বাধীনতা চাইনি আমরা। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছিলাম মুক্তিযুদ্ধ ঠেকানোর...
বগডুল দূরে দাঁড়িয়ে দেখে রাজাকারটা এইসব কথা বলছে আর হুড়মুড় করে পাবলিক গিয়ে উঠে যাচ্ছে মঞ্চের উপর। উঠেই যে যেভাবে পারে লাত্থি কিল জুতা কইন গদাম দিয়ে মঞ্চের সবগুলোকে রাস্তার উপরে এনে ফেলছে চিৎ করে। বগডুল খুব মজা পায়। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। কয়েক মিনিটের মধ্যে লোকজন রাজাকারগুলাকে রাস্তার মধ্যে চ্যাপ্টা করে ফেলে। আর মাইকও বন্ধ হয়ে যায়। আর বগডুল আবার তার বস্তার ভেতরে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়ে....
২০১০.০২.১২ শুক্রবার
মন্তব্য
হা হা হা ... মজা পাচ্ছি এই সিরিজটায়। চলুক!
দেখি কদ্দুর চালাতে পারি
মাথার মালমসলায় বোধহয় ৮-১০টা হবে
তারপরে নামবো ধারকর্জ করতে
প্রথমটা ভালো লেগেছিল আবার এটাও ভালো লাগলো। মাঝখানেরটা তেমন লাগনি।
সব লেখা কি আর ভালো লাগার মতো করে লেখা যায় স্যার?
দশটার মধ্যে একটা দুইটার বেশি কি আর পাশমার্ক পায়?
হে হে .. আপনার লেখায় এর উল্টোটাই ঘটে; একটা দুইটা হয়তো ফেল করতে পারে বাকীগুলো পাশ করবেই। এমন আশাবাদ আছে।
বগডুলের বস্তাটা যদি খালি একবার পাইতাম। এইটা দেখি আলাদীনের প্রদীপের চাইতে সিরিয়াস...
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বগডুল হইতাম চাই।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
আমি পুরা সিরিজটাই আমার বোনকে মেল করে পাঠাচ্ছি, আমার ভাগ্নির জন্য...
বগডুলের সবগুলো কিচ্ছাই ছোটরা পড়তে পারবে। শুধু একটা লিখব বড়োদের জন্য। ওটা কিন্তু আবার পাঠায়েন না ছোট কাউকে (শিরোনামে লিখে দেবো- বড়দের বগডুল)
চমৎকার লাগছে সিরিজটা।
আশা করি মাঝপথে বন্ধ হবে না।
হেহে । এইটা সবচেয়ে ভ্লা হইছে ।
বগডুল দীর্ঘজীবি হৌক
বোহেমিয়ান
সবগুলাই লেটার মার্কসহ পাশ। বগডুল হবার দরকার নাই, সবাই জর্ম থেকেই বগডুল হয়ে বসে আছি।
অনেক আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি বগডুল সিরিজের জন্য। ধন্যবাদ এত মজার মজার গল্প দেওয়ার জন্য।
================================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।
মজার ...খুবই মজার ! ভালো লাগছে এই সিরিজটা।
সব বগডুলের ট্যাগ "বগডুল" যোগ করে দিয়েন। তখন ক্যাটেগোরি "বগডুল" এ ক্লিক করলে সব ক'টা একসাথে পাওয়া যাবে। শেয়ার করতে সুবিধা।
মহামতি লীলেন স্বরূপে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
বেশ কেমন শান্তমত গল্প৷ ভাল্লাগ্লো৷
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
বগডুলের গল্প শুধু চারটা কেন? আরো চাই
বগডুলের গল্প শুধু চারটা কেন? আরো চাই
----------------------
শান্ত নদী
আসলেই ফচাৎ-এ খুব ভাল কাজ দেয়। ক্যান যে সবাই বগডুলের সাহসের বস্তা নিয়ে উচিত সময়ে ফচাৎ করি না তাই ভাবছি।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
কবেকার লেখা। কিন্তু ফচাতের ঘটানা দেখি মিলা গেলো আজকের লগে....
দারুন ভাইয়া, আপনার লেখা পইরা এখন শিখতাছি।
নতুন মন্তব্য করুন