একদিন রাত্তিরে বস্তায় ঢুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছিল বগোডুল। এমন সময় ইয়া বড়ো চাকু হাতে দুই গুন্ডা এসে লাত্থি দিয়ে তার ঘুম ভাঙায়। লাত্থি খেয়ে বস্তা থেকে ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াতেই দুই গুন্ডা তার দিকে চাকু বাগিয়ে ধরে- যা আছে সব দিয়া দে নাইলে মাইরা ফালামু কিন্তু...
বগোডুল দুই গুন্ডার দুই চাকুর দিকে তাকায় আর কাকুতি মিনতি করে- ও বড়োভাই বড়োভাই গো। আমারে মাইরেন না গো ভাই। আমার টেকাপয়সা সুনাদা...একদিন রাত্তিরে বস্তায় ঢুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছিল বগোডুল। এমন সময় ইয়া বড়ো চাকু হাতে দুই গুন্ডা এসে লাত্থি দিয়ে তার ঘুম ভাঙায়। লাত্থি খেয়ে বস্তা থেকে ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াতেই দুই গুন্ডা তার দিকে চাকু বাগিয়ে ধরে- যা আছে সব দিয়া দে নাইলে মাইরা ফালামু কিন্তু...
বগোডুল দুই গুন্ডার দুই চাকুর দিকে তাকায় আর কাকুতি মিনতি করে- ও বড়োভাই বড়োভাই গো। আমারে মাইরেন না গো ভাই। আমার টেকাপয়সা সুনাদানা মা বাপ কিচ্ছু নাই গো ভাইজান। আমি রাস্তায় ঘুরি আর বস্তায় ঢুকে ফুটপাতে ঘুমাই...
বগোডুল যতই কাকুতি মিনতি করে গুন্ডারা ততই হামতাম করে আর সমানে লাত্থি গুঁতা মারে- টেকা নাই ক্যান? টেকা পয়দা কর। পয়দা কইরা আমাগের দে। নাইলে কিন্তু খাইয়া ফালামু কইলাম
বগোডুল লাত্থি খায় আর চাকুর দিকে তাকায় আর কাকুতি করে কিন্তু গুন্ডারা তাকে মারতেই থাকে। মারতে মারতে এক গুন্ডা আরেক গুন্ডার দিকে তাকায়- ধুশ্শালা মারতে মারতে হাতে পায়ে ব্যথা ধইরা গেলো। চল চাক্কু সান্ধাইয়া দিয়া অন্য মুরগি ধরি...
বগোডুল বুঝে কেইস খারাপ। সে এক ঝটকায় তার বস্তাটা তুলে দুই গুন্ডার উপরে ঝুপুত করে ফেলে ঝেড়ে দৌড় লাগায় উল্টা দিকে...
বগোডুল দৌড়ায় আর পেছনে তাকায় গুন্ডারা তাকে ধরতে আসলো কি না। অন্ধকার রাত্তির কিছু দেখা যায় না। তবু সে সামনে দৌড়ায় আর পেছনে তাকায়। দৌড়াতে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে একটা গাছের আড়ালে থামে। থেমে পেছনে তাকায়...
নাহ। কাউকে দেখে না বগোডুল। সে গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে আরো ভালো করে তাকায়। না কেউ নাই। সে আরেকটু আগায় আর আরেকটু তাকায়। কাউকে দেখে না সে। গুন্ডারা মনে হয় চলে গেছে। সে এবার এদিক সেদিক ডানে বামে তাকাতে তাকাতে গিয়ে তার বস্তার কাছে হাজির হয়। আবারো ডানে বামে ভালো করে তাকিয়ে দেখে কেউ নাই। বগোডুল এবার তার বস্তাটা টান দিয়ে তোলে। তুলতেই শোনে চিঁউ চিঁউ চিঁউ। ভাই ভাই ভাই...
বগোডুল এদিক সেদিক চারদিক তাকিয়ে কিচ্ছু দেখে না কিন্তু আবারো শোনে ইন্দুরের বাচ্চার মতো চিঁউ চিঁউ চিঁউ। ভাই ভাই ভাই...
বগোডুল চিঁউ চিঁউ শোনে আর এপাশওপাশ তাকায়। হঠাৎ টের পায় তার পায়ে ইন্দুরের মতো কীসে যেন বিরবির করে। বগোডুল পা ঝাড়ি দিয়ে ইন্দুর সরায় টের পায় পাশের দেয়ালে কিছু একটা গিয়ে ধপ করে পড়ল আর তারপর আবার সেই চিঁউ চিঁউ চিঁউ। ভাই ভাই ভাই...
বগোডুল আস্তে আস্তে দেয়ালের কাছে গিয়ে ভালো করে তাকায়। তাকিয়ে সে বেক্কল বনে যায়। ও মা। সেই দুই গুন্ডা। এখনও তাদের হাতে চাকু ধরা কিন্তু দুইটারই সাইজ হয়ে গেছে তিন আঙুলের সমান। আর তাদের হাতের চাকুগুলা এখন আঙুল থেকে কেটে ফেলা নখের সাইজের চেয়েও ছোট। বগোডুলকে দেখেই দুই গুন্ডা এবার হাউকাউ করে কান্নাকাটি করে- চিঁউ চিঁউ চিঁউ। ভাই ভাই ভাই। আমাগের মাপ কাইরা দেন। আমাগের বড়ো কইরা দেন। কান ধরি আর বেয়াদবি করব না...
বগোডুল তাজ্জব বনে। এইগুলা ইন্দুরের বাচ্চার মতো হইল কেমনে? বগোডুল কোনো কুল কিনারা পায় না। এর মধ্যে দুই গুন্ডা আবারও চিঁউ চিঁউ করে। বগোডুলের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়- হারামজাদারা চাক্কু নিয়া আমারে মারতে আসো আর এখন আমারেই তেল মারো। খাড়াও...
বগোডুল বস্তা থেকে সুতলি খুলে দুইটারে হাতপা নাকমুখসহ ঠেসে বেঁধে ফেলে। তারপর বস্তায় ঢুকে এক ঘুম দিয়ে পরের দিন দুইটারে হাতে ঝুলিয়ে রাস্তায় বের হয়। সে এই রাস্তায় হাঁটে ওই রাস্তায় হাঁটে। হাঁটতে হাঁটতে সে কুত্তা বিলাই খরগোশ কবুতর বিক্রির মার্কেটের সামনে দিয়ে যায়। সে হাঁটে আর হঠাৎ পেছন থেকে এক দোকানি তাকে ডাক দেয়- ওই খাড়া। তোর হাতের মইধ্যে কী?
- হাতের মইধ্যে গুন্ডা
- হাতের মইধ্যে গুন্ডা? দেখি তো দেখি?
দোকানি বগোডুলকে দোকানের মধ্যে নিয়ে শো কেসের উপরে দুই গুন্ডার সুতলি খোলে। সাথে সাথে নখের সাইজের চাকু ধরে তিনআঙলা দুই গুন্ডা চিৎকার করে উঠে- চিঁউ চিঁউ চিঁউ। ভাই ভাই ভাই...
দোকানি হাসে। কর্মচারী হাসে। আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকজনও হাসে- আরে বাইসরে বাইস। বীর পুরুষ ফাইটার...
সক্কলে মজা দেখে আর দোকানি বগোডুলের কানে কানে বলে- মাল দুইটা আমারে দে। টেকা দিমু তোরে। বগোডুল ভাবে খারাপ না। সে দুই গুন্ডারে বেচে দেয় আর দোকানি দুই গুন্ডারে একটা খাঁচায় ঢুকিয়ে কুত্তার খাঁচার পাশে রাখে। তারপর টাকাটুকা গুণে দিয়ে বগোডুলরে কানে কানে বলে- এইরাম মাল যা পাইবি সব আমারে দিবি। তোরে টেকা দিমু। বেশি বেশি টেকা...
বগোডুল বের হয়ে আসে আর মার্কেটের সব দোকানি তাকে ডেকে ডেকে কানে কানে বলে- মুই আরো বেশি টেকা দিমু। যা পাবি সব আমারে দিবি তুই...
বগোডুল কাউরে কিচ্ছু বলে না। সে কূলকিনারা পায় না দুই গুন্ডা কেমনে তিনআঙলা হলো। কিন্তু সে কাউরে কিচ্ছু বলে না। ভাব ধরে বের হয়ে এসে বস্তায় ঢুকে একটা ঘুম লাগায়। আর পরের দিন তার ইচ্ছা হয় গুন্ডা দুইটারে দেখতে। সে গুন্ডা বিক্রির টাকায় পেটভরে খেয়েদেয়ে বস্তা বগলে নিয়ে কুত্তা বিলাইর মার্কেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে এক দোকানি এসে তার ডানা ধরে দোকানের ভেতরে নিয়ে যায়- বস বাবা বস। মিষ্টি খা। চা খা। আর যা মাল আছে সব আমারে দিয়া যা
বগোডুল বলে আর কোনো মাল নাই। আমি কাইলকের মাল দুইটা দেখতে আসছি আজ। দোকানি বলে কালকের মাল দুইটা বহু দামে বিক্রি কইরা দিছে ওই দোকানি। আইজ তোরে আমি আরো বেশি টেকা দিমু সব মাল আমারেই দে...
বগোডুল যতই বোঝায় তার কাছে আর কোনো তিনআঙলা নাই দোকানি ততই চাপাচাপি করে। বগোডুল যতই বোঝায় দোকানি যতই চাপাচাপি করে আর তর্কাতর্কি করে। দোকানি তর্কাতর্কি করে আর এর ভুশ করে ক্ষেপে যায়। ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করে আর তার কর্মচারীদের বলে- এই দরজা লাগা আর এরে বাইন্ধা রাখ বাথরুমে নিয়া...
দুই কর্মচারী হুটহাট দরজা লাগিয়ে বগোডুলকে ধরার জন্য এগিয়ে আসতেই সে বুঝে কেইস খারাপ। বগডুল তার বগল থেকে বস্তাটা ঝুপুত করে দুই কর্মচারীর উপর ফেলে দিয়ে দৌড় লাগাতে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ। দরজা খোলার জন্য টান দিতেই টের পায় দোকানি নিজে এসে জাপটে ধরেছে তাকে- হারামজাদা যাবি কই। হয় তিনআঙলা আমারে দিবি না হয় বাথরুমে বান্ধা থাকবি সারাদিন
বগোডুল দোকানির সাথে কুস্তি করে আর ভাবে এখন দুই কর্মচারী এসে ধরলে তার কেইস খারাপ। কিন্তু সে কুস্তি করে আর দেখে কর্মচারীরা কেউ আসে না। হঠাৎ শোনে পায়ের কাছে চিঁউ চিঁউ চিঁউ। তার বস্তার নিচে কীসে যেন নড়াচড়া করে আর চিঁউ চিঁউ করে। কিন্তু দোকানি তাকে ছাড়ে না। দোকানি তার গলা জাপটে ধরে কর্মচারীদের ডাকে। দোকানি তাকে কাঞ্চি মেরে মাটিতে শুইয়ে ফেলে আর হঠাৎ বগোডুল বস্তাটা তুলে নিয়ে ঝুপুত করে দোকানিকে ঢেকে ফেলে। আর হঠাৎ করেই দেখে দোকানি নেই আর আগের দুইটার সাথে এখন তিনটা চিঁউ চিঁউ চিঁউ...
বগোডুল উঠে মাটির দিকে তাকিয়ে দেখে দুই কর্মচারী আর দোকানি সবাই তিনআঙলা হয়ে গেছে। বগোডুল এইবার কেইস বুঝে যায়। সে তার বস্তাটা ভাঁজ করে বগলে নেয় আর দোকান থেকে একটা বিলাইর খাঁচা খালি করে তিনটারে ঢুকিয়ে দরজা খুলে বাইরে এসে দাঁড়ায় আর আরেক দোকানি তাকে ডেকে নিয়ে বলে- তোর হাতের মাল আমারে দে। টেকা দিমু আমি...
বগোডুল তিনটা তিনআঙলাকে পাশের দোকানে বিক্রি করে বের হয় আর আরেক দোকানদার তারে ধরে নিয়ে যায়- কাইলকে না তোরে কইলাম- যা পাবি সব আমারে দিবি? তাইলে ওই দোকানে বিক্রি করলি ক্যান?
বগোডুল যতই বলে আর পাইলে দিমুনে। দোকানি তত ক্ষেপে। ক্ষেপতে ক্ষেপতে সেও তার কর্মচারীদের নিয়ে বগোডুলের সাথে কুস্তি করে আর বগোডুলও ঝুপুত করে সবগুলারে তিনআঙলা বানিয়ে পাশের দোকানে বিক্রি করে দেয়। আর তারপর ফিরে এসে খেয়েদেয়ে বস্তায় ঢুকে ঘুমায়। কিন্তু সন্ধ্যায় আবার তার ঘুম ভেঙে যায় পুলিশের বাঁশি আর লাঠির ঠেলায়- উঠ বেটা উঠ। মন্ত্রী আসবে এইখানে। যা ভাগ
বগোডুল যতই বোঝায় মন্ত্রী চিল্লাবে রাস্তায় আর সে ফুটপাতে ঘুমায়। অসুবিধা নাই। পুলিশ ততই তারে পিটায়। হঠাৎ বগোডুল ক্ষেপে যায়। পুরা গাড়িসহ পুলিশগুলারে ঝুপুত করে তিনআঙলা বানিয়ে সুতলি দিয়ে বাঁধে। একটু পরে আবারও পুলিশ আসে। সে ওদেরকেও তিনআঙলা বানায়। তারপর আসে মন্ত্রী। এসেই মাইকে দাঁড়িয়ে আগড়বাগড় লেকচার শুরু করে দেয়। কাউরে গালি দেয়। কাউরে তেল মারে। বগোডুলের ঘুম নষ্ট হয়। মেজাজ খারাপ হয়। সে মন্ত্রীর কাছে গিয়ে তার মাইকটাইকসহ ঝুপুত করে তাকে তিনআঙলা বানিয়ে ফেলে। তারপর পুলিশ আর মন্ত্রীকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় কুত্তা বিলাইর দোকানে। মন্ত্রী সেখানেও চিঁউ চিঁউ করে বক্তৃতা করে। তাই দেখে দোকানিরা বলে- বাজান এখন থাইকা খালি মন্ত্রী আর পুলিশ দিবি। এতে দামও বেশি পাইবি আর দেশটাও থাকব শান্তিতে...
বগোডুল ভাবে জিনিসটা খারাপ না। তার দেশে পুলিশ আর মন্ত্রীর সংখ্যা সমানে সমান। কত কত মন্ত্রী। চলতি মন্ত্রী। বকেয়া মন্ত্রী। হবু মন্ত্রী...
বগোডুল এইবার বস্তা নিয়ে খালি মন্ত্রী পাড়ায় ঘোরে। মন্ত্রীপাড়ায় পুলিশ আর মন্ত্রী একসাথেই পাওয়া যায়। প্রথমেই গেটের পুলিশগুলারে সে ঝুপুত করে। তারপর ঘরে ঢুকে ঝুপুত করে মন্ত্রীকে। তারপর সাপ্লাই দেয় কুত্তা বিলাইর মার্কেটে। আর শহরের লোকজন বাড়ির টিভি বিক্রি করে সেই পয়সায় পুলিশসহ মন্ত্রী কিনে ড্রয়িং রুমে খাঁচায় ঝুলিয়ে রাখে। মন্ত্রীরা সেখানে বক্তৃতা করে চিঁউ চিঁউ চিঁউ...
দেশ থেকে সব চলতি আর বকেয়া মন্ত্রী সাফ করে দিয়ে বগোডুল গিয়ে দাঁড়ায় বড়োমন্ত্রীর সামনে। তার আশেপাশে তখন একপাল হবু হবু মন্ত্রী। সবগুলা কাউ কাউ করে তাকে ঘিরে। বগোডুল সবগুলারে একসাথে ঝুপুত করে কুত্তার দোকানে সাপ্লাই দিয়ে এসে বস্তায় ঢুকে একটা লম্বা ঘুম দেয়....
২০১০.০২.১৯ শুক্রবার
মন্তব্য
হে হে হে... চ্রম
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বাহ! ভালোতো!
আমার বাসাতো কাঁটাবন। বাগোডুল পরেরবার এখানে আসার আগে খবর দিয়েন। সৌজন্য সাক্ষাত করুম।
---- মনজুর এলাহী ----
হা হা হা হা হা এইটা জোস হইসে!
আহ, সেইদিন কবে আসবে? আমরাও একটু শান্তিতে ঘুমাইতে পারতাম!
কাকুল কায়েশ
ওওওওরে, ক্লাসিক পুরা...আচ্ছা নামটা আগে বগডুল ছিল না? আমার বগডুলই পছন্দ। ভাগ্নিকেও বলে ফেলসি নামটা বগডুল। এখন কি করা যায়?
নাম চেইঞ্জ হইছে !
মন্ত্রী গুলার সাথে এমুন ই করন দরকার ।
বোহেমিয়ান
চরম হইছে ভাই! চরম।
তা বইটা কবেনাগাদ পাবো?
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
এ পর্বটা জোশ লাগলো!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হায়রে বগোডুল! [বগডুল ভাল্লাগতো বেশি!]
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
গল্প সেরকম হচ্ছে।
বগডুল নামটাই ভালো লাগতো।
পড়ার জন্য আর এই সিরিজটার সাথে থাকার জন্য আর পরামর্শের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ
০২
বগডুল/বগোডুল নামটা নিয়ে ঝামেলার কথাটা একটু বলি
সিলেটি শব্দগুলা বাংলা বানানে লেখা ভয়ানক ঝামেলার কাজ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলা বানানে সিলেটি শব্দ লেখা প্রায় অসম্ভব
তার মূল কারণ হচ্ছে বাংলা থেকে সিলেটির বর্ণ-সিলেবল এবং শব্দ উচ্চারণের স্টাইলের আকাশপাতাল ফারাক
সিলেটি উচ্চারণের স্বরধ্বনিতে 'ও' নেই। আছে 'অ' আর উ
যার কারণে 'কোন' কে আমরা বলি কুন আর কবি (কোবি)কে বলি কঅবি
এইটা হলো স্বরধ্বনির পার্থক্য (ব্যঞ্জনের পার্থক্যে না গেলাম এখন)
এবার আসি সিলেবল
চিহ্নহীন (কিংবা অযুক্ত) পরপর দুটো ব্যঞ্জনের উচ্চারণে বাংলায় যেখানে দ্বিতীয় বর্ণটি হসন্ত হয় (তৃতীয় বর্ণ চিহ্নযুক্ত) সেখানে সিলেটি দ্বিতীয় বর্ণটি হয় ও/অযুক্ত
'আমরা' শব্দটির বাংলা উচ্চারণ আম্রা সিলেটি উচ্চারণ আমোরা/আমঅরা
আপনারা= বাংলায় আপ্নারা সিলেটিতে আপোনারা/আপঅনারা
বগডুল শব্দটা প্রাচীন সিলেটি শব্দ। আহাম্মক কিংবা বেক্কল কিংবা রামবুদাই শব্দটির অর্থ। আর উচ্চারণটা হলো বগঅডুল
যদিও বানানে বগডুল লেখাই উচিত
সেভাবেই লিখেছিলাম প্রথমে। কিন্তু পরে খেয়াল করলাম বাংলা উচ্চারণ সূত্র ধরে লোকজন এটাকে উচ্চারন করছে বগ্ডুল। গ বর্ণটাকে হসন্ত করে
এইজন্য মূল উচ্চারণের কাছাকাছি উচ্চারণ ধারণা দেবার জন্য বানানটা একটু বদলে দিলাম। বগোডুল
০৩
বগোডুলের সাথে একার যোগ করা নিয়ে আমি এখনও কনফিউজড
এটা হবার দরকার ছিল বগোডুলর/বগোডুলোর কিচ্ছা
কিন্তু লএর সাথে একার যুক্ত না করলে কমিউনিকেশনে আরেকটা ঝামেলা হতে পারে বলে শেষ পর্যন্ত বগডুলকেও একার যুক্ত করতে হলো
০৪
সত্যি কথা বলতে আমার ফোক'এর সবচে বড়ো স্টকটা সিলেটি ফোক
কিন্তু শুধু কমিউনিকেটিভ করতে না পারার কারণে সিলেটি শব্দ/ফ্রেজগুলো আমি ইউজ করতে পারি না
কোথাও ইউজ করলে হয় এর ব্যাখ্যা দিতে হয় না হলে বদলে দিতে হয়
কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই মূল মজা কিংবা স্টেন্থ নষ্ট হয়ে যায়
০৫
বাংলার সাথে সরাসরি সিলেটি উপভাষা ব্যবহারের জন্য আমি বেশ কয়েক বছর থেকে তাকিয়ে আছি আমাদের এক ফ্রেন্ড কবি মুজিব ইরমের দিকে
ইরম বাংলা বানানে সরাসরি সিলেটি ভাষায় কবিতা লেখে
এখন পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি তাতে সিলেটি উচ্চারণসূত্র না জানা কারো পক্ষে ইরমের শব্দগুলো থেকে উচ্চারণ বের করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না
কিন্তু তার বাক্য বিন্যাস এবং কবিতায় প্রয়োগের কারণে অনেক শব্দ এবং শব্দবন্ধ উৎরে যায়। কমিউনিকেটিভও হয়
ইরম আরো এগোচ্ছে আর আমি খেয়াল রাখছি তার লেখার দিকে
ইরম যদি সিলেটি উপভাষাকে বাংলার সাথে কমিউনিকেটিভ করার সূত্র আবিষ্কারে সাকসেসফুল হয় তবে মুহূর্তের মধ্যে ভাষার একটা বিশাল স্টক এসে যাবে আমার হাতে
তার আগে পর্যন্ত আমাকে বাজারিবাটু কিংবা বেবাট কিংবা বগোডুলের মতো একটা দুইটা শব্দ নিয়েই নাড়াচাড়া করতে হবে আর আফসোস করতে হবে বিশাল একটা শব্দভাণ্ডারকে ব্যবহার করতে না পারার জন্য
চরম!
সিলেটি ভাষা নিয়ে চিন্তাভাবনা ইন্টারেস্টিং লাগল।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন