আমার নিজের বই ছাড়া যত বই আছে সব কার্টন খুলে গতকাল রাতে ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেললাম। কার্টন উল্টাই আর ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারি ফ্লোরে
শেলফ টেলফ কিচ্ছু নাই তাই সব বইই কার্টনে রাখি। দুই ধরনের কার্টন। পড়া বইয়ের জন্য এক ধরনের আর না পড়া বইয়ের জন্য আরেক ধরনে। কাল সবগুলাই তিনটা ঘরের ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিড়ি ধরিয়ে বইয়ের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে নামগুলা পড়া শুরু করলাম। অনেক পদের অনেক অনেক বই। পদ্য-গদ্য-কবিতা-গল্প-জ্ঞান-গুণ-বিজ্ঞান-বৃক্ষ-মাছ-পুরাণ-ফিল্ম-ধর্ম-আইন-অর্থনীতি হাবিজাবি বহুত বই
তার মধ্যে না পড়া বইও অনেক। বইগুলো ছড়ানোর উদ্যেশ্য ছিল পড়ার জন্য একটা বই খুঁজে বের করা। কিন্তু কোনোটাই পছন্দ হয় না। হাতে তুলি- মলাট দেখি আর দেয়ালে ছুঁড়ে মেরে দেখি বাঁধাইটা কতটুকু শক্ত। অনেকগুলা ভচকায়। অনেকগুলা টিকে থাকে আর অনেকগুলা একেবারে ঠোঙার উপযোগী হয়ে পড়ে এক আছাড়েই
এই করতে করতে দেখি নীল মলাটের নড়বড়ে ঠাকুরমার ঝুলি। দক্ষিণারঞ্জনের। ইসকুলের বইয়ের বাইরে এটা আমার জীবনে প্রথম পড়া বই। কিন্তু এই কপিটা সেইটা না। এই কপিটা ৯৪/৯৫ দিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের স্টক লাইব্রেরি থেকে চুরি করা। দক্ষিণারঞ্জন মরার আগের প্রকাশনা
জ্ঞানী জ্ঞানী বইগুলারে লাত্থি দিয়ে সরিয়ে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়লাম ঠাকুরমার ঝুলির ভেতর...
একটার পর একটা গপ্প পড়ি। নো-সমস্যার জীবন যাপন। এক তলোয়ারে কেল্লাফতে...
কিন্তু পড়তে পড়তেই হঠাৎ খেয়াল হয় গল্পগুলা সবগুলাই রাজাবাদশার ঘরের হিংসা আর সোনা রুপার ঝকমকানি। তার সাথে লাফাঙ্গা রাজপুত্রদের বিয়ে পাগলামি আর রাজার স্বেচ্ছাচার আর দুয়েকটা ফকিন্নির পুতের মন্ত্রী টন্ত্রি হয়ে জাতে উঠার কাহিনী...
পড়ি আর চোখের সামনে ভেসে উঠে এক না খাওয়া ঠাকুরমার ছবি। তিনি তার অনাহারী নাতিদের চোখে লোভ জাগিয়ে তুলছেন মণিমান্যিকের ঝকমকানির কাহিনী শুনিয়ে। রাজকন্যার রুপের বর্ণনা করে ঘোর লাগাচ্ছেন নাতিদের চোখে
আর একই সাথে শেখাচ্ছেন রাজাদের কাছে অনুগত হতে। রাজারা যখন যা ইচ্ছা করতে পারেন। যার তার গর্দান নিতে পারেন। যাকে তাকে মন্ত্রী বানাতে পারেন। যাকে ইচ্ছা রাণী করে আবার পরেরদিন ঘুঁটে কুড়ানি দাসি বানাতে পারেন....
তিনি পার্থক্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন রাজার সন্তানেরা খালি সুন্দর আর সুন্দর হয়। রাজার সন্তান ছাড়া বাকিসবাই দাসিপুত্র। তারা কালাকুচ্ছিত হয়। আর কালাকুচ্ছিতরা রাজবংশে ঢুকে পড়লেও তাদের স্বভাবে থাকে হিংসা
পড়ি আর ভাবি রাজপুত্রদের মেয়েদের পেছনে ছোটা ছাড়া কোনো কাজ নেই কেন? রাজদরবারে রাজার ব্যক্তিগত কাজ ছাড়া আর কোনো কাজ নেই কেন? হিংসা ছাড়া রাণীদের আর কোনো কাজ নেই কেন?
এবং তখনই আবিষ্কার করি রাজনীতিহীন রাজা আর রাজত্ব। এবং বুঝে যাই ইচ্ছা করেই ঠাকুরমা রাজনীতি এড়িয়ে যান। কারণ গল্পের ভেতর রাজনীতি এলেই নিজের অনাহারিত্ব ঢুকে পড়বে কিচ্ছায়। পরিষ্কার হয়ে উঠবে নাতিনাতনিদের সম্ভাবনাহীন ভবিষ্যতের ছবি...
তাই সেখানে তিনি মুনি ঋষি রাক্ষস খোক্ষস ঢুকিয়ে দিয়ে গল্পের ব্যালেন্স করেন। কারণ তিনি জানেন নাতিদের ভাতের অভাব ভুলিয়ে রাখার জন্যই এই ঘোরলাগা গল্পের বুনন করছেন তিনি। চকচকে হীরামাণিক্যের ঘোরে পড়ে যদি নাতিরা ঘুমিয়ে পড়ে অনাহারে ঠাণ্ডায়; তবে অন্তত একটা দিন পার করতে পারবে তারা...
এবং এই কৌশলে ভুল করেন না ঠাকুর মা কিন্তু ভুল করে বসেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বইটার ভূমিকা লিখতে গিয়ে তিনি শুধু লোকঐতিহ্য দেখেন। লোকইতিহাসের সমাজবাস্তবতা চোখ এড়িয়ে যায় তার....
০২
জীবনানন্দের আট বছর আগের একদিন কবিতার শেষ প্যারাটা মনে পড়ে
হে প্রগাঢ় পিতামহী
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো
বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেবো কালিদহে বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে
শূন্য করে চলে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার
জীবনে যে কোনোদিন ভাঁড়ারই দেখেনি সে আর কী শূন্য করবে?
বানের জল দিয়ে চাঁদকে ভাসিয়ে নেয়া ছাড়া তার আর কীইবা গতি?
০৩
ধন্যবাদ ঠাকুরমা
নাতিনাতনিকে বীভৎস বাস্তবতা থেকে ভুলিয়ে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য
আর দুঃখিত দক্ষিণারঞ্জন রীন্দ্রনাথ আর আব্দুল্লাহ আবু সাইদ
আপনারা যাকে লোকঐতিহ্যের বই বলেন সেটা যে মূলত লোকদাসত্ব আর লোকদারিদ্রের ইহিহাস
আপনাদের বড়ো মাথায় তা একবারও ঢোকে না
২০১০.০২.২৫ বিষুদবার
মন্তব্য
এভাবে একবারের জন্যও ভেবে দেখিনি কোনোদিন !!!
আপনি পারেন, কেবল আপনিই পারেন এমন করে লিখতে। তারা দাগানোর যোগ্য হয়ে উঠিনি এখনো, যেদিন সেই যোগ্যতা পাবো সেদিন ঠিক পেছনে এসে এই লেখাটার গায়ে ৫ তারা এঁকে দিয়ে যাবো।
আপাততঃ প্রিয়তে।
===============================================
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
(আকতার আহমেদ)
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
তারায়ণ লাগবো না
কোনোদিন ঠাকুরমার ঝুলির ভূমিকা লেখার সুযোগ হইলে কথাগুলান লিখ্যা দিলেই হইব
এমন করে কোনোদিনই ভেবে দেখিনি। গল্পের ভেতরকার অন্ধ-ইতিহাসটুকু হয়তো অজানাই থেকে যেত।
ধন্যবাদ লীলেন ভাই।
আমি প্রায়ই অনুভব করি চিন্তার দিক থেকে আমাদের এগিয়ে যাবার পথে তথ্যের/চিন্তার অভাবের চেয়ে শৈশবের জানাশেখা ভুল চিন্তা আর তথ্য অনেক বেশি সমস্যা তৈরি করে
নিজেকে যুক্তিভিত্তিক করার জন্য যতটা না লার্নিংয়ের দিকে নজর দিতে হয় তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয় ডিলার্নিংয়ের জন্য
আমার খুব পছন্দের একটা বিষয় নিয়ে লিখলেন।
বইগুলা কই যে পাই...
আমিও কোনদিন এভাবে ভেবে দেখিনি। অনেক ধন্যবাদ চোখ খুলে দেবার জন্য।
দারুণ লেখা!!
শেষটুকু তো এককখায় দূর্দান্ত...
ইয়ে লীলেন্দা, বেখেয়াল চারটে টাইপো চোখে পড়লো...
ঠিক করে নিন প্লীজ!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
টাইপো কয়েকটা মুছে দিলাম। কিন্তু তারপরেও যে কিছু রয়ে যায়নি বলা যায় না
ভুলেভরা শিশুপাঠ থেকে কল্পকথা, লোকগাঁথা। তবুও বই পড়ি...
আপ্নের মতো দুই মাইয়ার বাপের বয়েসি হয়ে পড়লে সমুস্যা নাই
কিন্তু আপ্নার মাইয়াগো বয়সে পড়লে পরবলেম
সারা ঘরে বই বিছিয়ে হাটলেও এরকম করে ভাবা হবে না।
আপনিই পারেন গুরু। নমস্কার।
দারুন লেখা।
আমিও একটা ব্যাপার শেয়ার করি- পড়াশোনা সম্পর্কিত কাজে একবার সাভারের এক গ্রামে গিয়েছিলাম (নাম খুব সম্ভব কর্ণপাড়া)। সেখানে একটা পুরোনো বাড়ীর নাম সবাইকে বলতে শুনলাম- মিত্রমজুমদারের বাড়ী- একজন বলল- 'ওই যে ঠাকুরমার ঝুলি লিখছে না?' আমি খুবই অবাক হই, কারণ এই লোকের বাড়ী যে বাংলাদেশে তা আমার জানা ছিলো না। এর পর আগ্রহী হয়ে আমি আরো খোঁজ নেই, ঠাকুরমার ঝুলির এক কোলকাতা সংস্করণের ভূমিকায় এরপর আরো তথ্য পেলাম। এই লোক যে শুধু বাংলাদেশী তা-ই না, গল্পগুলিও উনি বাংলাদেশ থেকেই যোগাড় করেছেন। মূলতঃ ময়মনসিংহ এলাকার গল্প এগুলো। আর সংগ্রহের পর সম্পূর্ণ মনের মাধুরী মিশিয়ে উনি গল্পগুলো সাজিয়েছেন। এটা এই জন্য বলছি কারণ গোটা ঠাকুরমার ঝুলি তে কোন মুসলমান চরিত্র নেই যা এই দেশের গল্পের সাপেক্ষে অবাস্তব। আছে কিছু পুত্র সন্তান কামী রাজার গল্প, সাধু সন্ন্যাসীর পাঁচন খেয়ে ছোটরানীর গর্ভবতী হবার গল্প, হিন্দী সিরিয়ালের মত কুটনামী করা সতীনের গল্প।
এই ভদ্রলোক মূলতঃ সাভারের জমিদার বংশের এবং প্রবল ধার্মিক। ছোটদের ব্রত নিয়ে তার একাধিক বই আছে- সেটা কোন সমস্যার কথা না। সমস্যা হল উনি বাংলাদেশের গল্পগুলিকে চরিত্র পাল্টে নিজের মত কর লিখেছেন, কোথাও এমনকী কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কষ্টটুকুও করেন নি।
আমি ভাবছি অছিরেই আরো রেফারেন্স সহ এই বিষয়ে একটা পোস্ট দেব।
সমস্যা হল উনি বাংলাদেশের গল্পগুলিকে চরিত্র পাল্টে নিজের মত কর লিখেছেন, কোথাও এমনকী কৃতজ্ঞতা স্বীকারের কষ্টটুকুও করেন নি।
বইতে মুসলমান নাম নেই, তাই লেখক চরিত্র পাল্টে নিজের মত লিখেছেন - এরকম উপসংহারে চট করে সত্যিই আসা যায় কি?
এইটা যেন কোনমতেই ধর্মবিষয়ক বস্তাপঁচা কোন তর্কে উপনীত না হয় এই মিনতি রইলো প্রথমে। এবার জবাব-
০১. মুসলমান নাম নেই মানে এটা প্রমাণিত যে উনি নাম নিজের মত করে বসিয়েছেন। (যদিও এটা গবেষণার দাবী রাখে, এবং আমি বলেওছি যে অচিরেই একটা পোস্ট দিতে চাচ্ছি এ বিষয়ে)
০২.’তাই লেখক চরিত্র পাল্টেনিজের মত লিখেছেন - এরকম উপসংহারে চট করে সত্যিই আসা যায় কি?
আমি দক্ষিণারঞ্জন রচনাসমগ্রের দ্বিতীয় খণ্ডে লেখা (মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স, ১০ শ্যামাচরণ দে স্টৃট থেকে ১৯৮২ সালে প্রকাশিত)শ্রী বারিদবরণ ঘোষের ‘দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদারের জীবনালেখ্য’ থেকে কোট করছি
- জমিদারী দেখতে গিয়ে দক্ষিণারঞ্জনের সঙ্গী হল ভ্রমণ-গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে (পৃঃ চ) (উনি সাভারের উলাইল গ্রামের বাসিন্দা, আর জমিদারীও ছিলো বর্তমান বাংলাদেশেই)
- জলে ভেসে আসা একখানা গান দক্ষিণারঞ্জনের জীবনের দিশারী হয়ে গেল... খুঁজে বের করলেন তিনি সেই পানসির গায়কদের। অধীনস্থ প্রজা তারা, মনিবের কাছে গান গাইতে সংকোচ লাগে। মিশে গেলেন দক্ষিণারঞ্জন তাদের হৃদয়ের সাথে। বের করে আনলেন হৃদয় রসে জারিত সেই অপরুপ লোককথা...fantasy র সঙ্গে মিলিত হল তার Imagination.
- ঢাকা ও ময়মনসিংহের নিভৃত পল্লীর ঠাকুরমাদের (ভাবখানা এই ওই সময়ে ঢাকা ও ময়মনসিংহে শুধু ঠাকুরমারাই থাকত দাদীরা থাকতো না, আমি অচিরেই ওই সময়ের সেন্সাস সহ একটা পোস্ট দিতে চাচ্ছি) অভিজ্ঞতার বলিরেখা, গ্রাম-বৃদ্ধের কথকতার অসামান্য ভঙ্গি দক্ষিণারঞ্জনের সংগ্রহ পুস্তকে কালির আঁচর কাটতে লাগলো।
এই লেখায় আরো লেখা হয়েছে যে ঢাকা ও ময়মনসিংহ থেকে গল্পগুলো সংগ্রহ করে উনি কোলকাতায় চলে আসেন ১৯০৬ সালে। এবং ‘সাধারণী’-সম্পাদক এই লেখার ‘সংস্করণ’ করে তা ছাপেন।
আশা করি কিছুটা জবাব পেয়েছেন।
মেহেদী হক বোধহয় একটু অন্যদিকে চলে গেছেন
বাংলা লোককথায় প্রচলিত রাজারাজড়াদের বেশিরভাগ গল্পগুলোই বৈদিক/আর্য নৈতিকতা/সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে তৈরি
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলোর নৈতিকতা/সংস্কৃতি সরাসরি বৈদিক/আর্য নয়
গল্পগুলোতে রাজাবাদশারা হামেশাই নৈতিকতার সীমা পায়ে দুমড়ে যান এবং সেক্ষেত্রে তাদেরকে কোথাও দায়ি করতে কিংবা প্রায়শ্চিত্ত করতে দেখা যায় না
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু আচার আর কিছু মুনিঋষির উপস্থিতি শুধু এই গল্পগুলোর সময়কালে বৈদিক আচারের উপস্থিতির কথা কিংবা চরিত্রগুলোর বৈদিক/আর্য উত্তরাধিকারের সাথে একটা হালকা সম্পর্ক স্থাপন করে
হতে পারে এটা পরবর্তীকালের গল্পকারদের সংযোজন কিংবা সাহিত্যে যাকে বলে প্রক্ষিপ্ত অংশ
কিন্তু এই গল্পগুলোর সময়কালে বাংলা অঞ্চলে মুসলমানদের উপস্থিতি ছিল বলে মনে হয় না। এগুলো এই অঞ্চলে মুসলমানদের উপস্থিতির আগের গল্প না হয় অমুসলিম সংস্কৃতিতেই তৈরি হওয়া গল্প
এই বিষয়ে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত
কারণ গল্পগুলোকে কোনোভাবেই মুসলিম কাঠামোতে ফেলা যায় না এগুলোর অলৌকিত্বের ধরনের কারণেই
মুসলিম মিথের/রূপকথার অলৌকিকত্বের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা
ওগুলোকে কোনোভাবেই সংশোধন করে এই রূপকথায় রূপান্তর সম্ভব নয়
এই অঞ্চলে পরবর্তীতে কিছু মুসলিম মিথ কিংবা রূপকথা তৈরি হয়েছে
সেগুলোর বেশিরভাগের ঘটনা কিন্তু পীর ফকিরদের অলৌকিকত্ব নিয়ে
সেখানে জ্বিন আছে। কিন্তু সেই জ্বিনের চরিত্র ঠাকুরমার ঝুলির রাক্ষস খোক্ষস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং ইসলাম নিয়ন্ত্রিত ছকে বাঁধা
০২
দক্ষিণারঞ্জনের কাজকে আমি কোনোভাবে ছোট করে দেখি না
যেমন ছোট করে দেখি না দীনেশ চন্দ্র সেনের ময়মনসিংহ গীতিকা সংকলন
এগুলোর খুবই দরকার আছে লোকইতিহাসের জন্য
দুজনই বাংলাদেশের লোক। দুজনই তাকিয়েছেন বাংলার লোকঐতিহ্যের দিকে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের চলাচল
কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্য জায়গায়। দীর্ঘদিন থেকে আমি ময়মনসিংহ গীতিকা ভূমিকা ছাড়া কোথাও পড়া কিংবা পারফরমেন্সের বিরোধীতা করে আসছি
কারণ ময়মনসিংহ গীতিকার সবগুলো গল্পই মূলত সীতার অগ্নিপরীক্ষার বিভিন্ন ভার্সন। যেখানে নারীকে কারণে অকারণে তার সীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়
হয়তো একসময় তা বাস্তবতা ছিল। কিন্তু এখনকার যুগে তা আমাদের সোসাল এথিকসের বিরোধী
তাই ময়মনসিংহ গীতিকাকে আমি বর্তমানে অনুসরণীয় সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে সরিয়ে আর্কাইভে রাখতে চাই
বলতে চাই- আমরা একসময় এরকম ভাবতাম। কারণ আমাদের নারীদের বাস্তবতা ছিল এরকম
কিন্তু এখন আমরা এরকম ভাবি না
কাল ঠাকুরমার ঝুলি পড়তে গিযে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকেও আমার ওই গোত্রের মনে হলো
মনে হলো এই গল্পগুলো আর ছোটদের শোনানো উচিত না
এগুলো এখন বড়োদের গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত
ছোটরা শুনলে তাদের মাথায় বর্তমান চিন্তাবিরোধী ধারণা বদ্ধমূল হয়ে যেতে পারে
০৩
দক্ষিণারঞ্জন ধার্মিক ছিলেন কি না আমি জানি না
কিন্তু তার এই সংকলনে আমি কোনো সাম্প্রদায়িকতার কোনো গন্ধ পাই না
আর তিনি বাংলাদেশের চরিত্রগুলোকে পাল্টে দিয়েছেন এটা কোথায় মনে হলো আপনার?
আমি একটা ব্যাপার ভুল বুঝেছি।
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
বাংলায় মুসলিম শাসন শুরু হয় ১২০৪-০৫ এর দিকে। লোকগল্পগুলো নিশ্চই তারো আগের হবে। তাই তাতে হিন্দুদের নাম ও সংস্কৃতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
আমি যেটা ভুল ভেবেছি সেটা হল- যেহেতু উনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট বাংলাদেশ থেকে এইসব গল্প সংগ্রহ করেছেন তাই নিশ্চই চরিত্র গুলিও মুসলিমই হবার কথা ছিল। কিন্তু সেগুলো যে তারো হাজার বছর আগ্র গল্প হতে পারে সেটা আমার মাথায় ছিলো না।
তারপরেও এই গ্রন্থ যে পুরোপুরি আমাদের এই বর্তমান বাংলাদেশেরই সম্পদ সেটা যথার্থ প্রচারের দাবী রাখে।
ভালো কথা আমি নিজে একটা ছোটদের পত্রিকার সাথে যুক্ত আছি। আমরা এই ব্লগের সবাই কেন পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু নতুন রূপকথা লিখি না?
আপনি শুরু করেন
তারপর নাহয় আস্তে আস্তে অন্যরা অনুসরণ করবে
দূর্দান্ত লেখা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গতকাল দাদাকে ভুতে ধরেছিল
...........................
Every Picture Tells a Story
বাচ্চাদের একটা অনুষ্ঠানে ভাবলাম, ওদের দিয়ে লোক-গল্প বলাই, তো খোঁজ বাঙালীর হাসির গল্পের। নেটে যে ক'টা গল্প পেলাম, সেখানে গরীব চাষী নিত্য বউকে মারে, আর বউ তাকে কিভাবে জব্দ করে; কিংবা এক বোকা বুড়ীকে কিভাবে এক চালাক বুড়ী ঠকায় সেই গল্প। নিশ্চয়ই আরো অনেক গল্প আছে, অন্তত আমার তো মনে পরে, ছিলো, কিন্তু নেটে পাওয়া এ গল্প দুটো নিয়ে পড়লাম বিপদে।
পুরো গল্পটার ভিত্তি নিয়েই বিদেশে বড় হওয়া এসব বাচ্চাদের প্রশ্ন, কেন বউকে চাষী মারবে, বা কেন একজন আরেকজনকে ঠকাবে?
শেষপর্যন্ত বাদ দিলাম সে প্রজেক্ট। কিন্তু আপনার লেখা পড়ে মনে হলো, গল্পে মনে হয় নৈ্তিকতারও সমস্যা থাকে সময় সময়, যা বড়দের তরফ থেকে বোঝানো মুশকিল। অথচ নিজে যখন ছোট ছিলাম, তখন এদের মতো এরকম প্রশ্ন মাথায় জাগেনি।
কেন বউকে চাষী মারবে, বা কেন একজন আরেকজনকে ঠকাবে?
কোথাকার রূপকথায় এগুলো নেই বলুন?
দুর্দান্ত
পৃথিবীর সব রূপথাতেই কিছু কিছু মৌলিক মিল আমাদের মনে করিয়ে দেয় আদি মানবসমাজের মৌলিক মিলগুলোর কথা
কিন্তু এখন বোধহয় আমাদের ভাবা দরকার কোনটা আমরা ছোটদের পড়তে দেবোআর কোনটা না
কারণ তা না হলে বাচ্চার মনে কিন্তু বদ্ধ ধারণা হয়েই যেতে পারে যে চাষী মানেই বৌপিটানো আর চোর ছেচ্ছড়
আর রাজা মানেই ফেরেশতা
লালন সাঁইয়ের এই কথাটা নিযে একটু আগাই
ছোটবেলায় কোনো প্রশ্ন মাথায় আসেনি ঠিকই কিন্তু ছোটবেলার সেই কাহিনীগুলো থেকেই কিন্তু আমাদের মাথার ভেতরে ধারণা তৈরি হয়ে গেছে যে- রাজা যা খুশি করতে পারেন। রাজার ছেলেই রাজা হবে। ফকিন্নির ছেলে রাজা হলে ভাণ্ডে কূলাবে না
ছোটলোক বড়ো হলে বন্ধুরে কাঁদায়
কিংবা জাতের মেয়ে কালো্ও ভালো। নদীর জল ঘোলাও ভালো
এগুলো কিন্তু আমাদের মগজের গঠনের ভেতরে ঢুকে গেছে অবচেতনভাবে ছোটবেলায়
এবং ছোটবেলা অর্থ না বুঝলেও কিন্তু বড়ো হয়ে এগুলোই আমরা বাস্তবায়ন করি
০২
একবার বাঙালির ইলেকশন সাইকোলজি নিযে একটা কাজ করেছিলাম
অবাক হয়ে দেখলাম ভোট দেবার জন্য বিশাল অংকের ভোটারার উত্তরাধিকারকে একটা বিশাল গুণ মনে করেন
তাদের ভাষ্য চেয়ারম্যানের ছেলে চেয়ারম্যান হ্ওয়াই ভালো
কারণ তার ঐতিহ্য আছে
আর যার বাবা চাষী ছিল সে নিজে যতই যোগ্য হোক না কেন ক্যান্ডিডেট হিসেবে বিশাল অংশের ভোটারের কাছে যে অযোগ্য
তারা সোজা কথায় বলে- হাইল্লার ছেলে চেয়ারম্যানগিরি কী বুঝবে?
এই চিন্তা কিন্তু রাজার ছেলে রাজা হবে দাসের ছেলে দাস
সেই চিন্তারই বর্তমাণ রূপ
০৩
আমি এখন পরিষ্কার মনে করি ছোটদেরকে এগুলো আর পড়তে দেয়া উচিত না
এগুলো এখন বড়োদের পড়ার বিষয়
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
এসব লোক গল্প শুনেই আমরা বড় হয়েছি, আপনি বড় হয়েছেন। সেসব শুনেছি বলেই পরবর্তিতে লেখার প্রতি পড়ার প্রতি আমাদের আগ্রহটা তৈরী হয়েছে আর আজ পরিনত বয়সে এসে আমরা উপলব্দি করতে পারছি এর অনৈতিক দিকগুলি। এর গুরুত্বকে আমরা অস্বীকার করতে পারিনা।
লেখা ভালো লেগেছে।
ছোটবেলায় আমরা অনেক কিছুই ভুল পড়েছি ভুল জেনেছি যা উচিত হয়নি
কারণ সেগুলো মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে অনেকগুলো ভুল ধারণাসহ
সেই কাহিনীগুলো থেকেই আমরা বলতে শিখেছি খারাপ লোক মানে কালো লোক- ভূত; যারা এদেদেশের আদি সন্তান
সেখান থেকেই আমরা অনুগত হতে শিখেছি সাদা আর লম্বা মানুষদের কাছে
যার এককালে আর্য তারপর পার্শিয়ান তারপর ইউরোপিয়ান...
সেই ভুল গল্পগুলো পড়েই আমরা সাদাকে সুন্দর আর কালোকে অসুন্দর আর অপয়া ভাবতে শিখেছি
এবং এখন যে ভাবনাগুলো মাথা থেকে সরাতে বছরের পর বছর সাধনা করতে হচ্ছে আমাদের
অথবা সরছেই না
এই পোস্টের সর্বোত্তম মন্তব্য এইটা, মন্তব্যে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
লীলেন দা, আমি রূপকথা পড়ি শিশু মনটুকুকে একটুখানি খোরাক দিতে। যে মনটাকে প্রতিদিন সমাজের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয়, সেই মনটা তো আঘাতে আঘাতে মৃতপ্রায় হয়ে যাচ্ছে! তাই রবীন্দ্রনাথের, আব্দুল্লাহ আবু সাইদের ভুল গুলোকে ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যাই। ওগুলোর দিকে চোখ পড়ে গেলে, আমার শিশুমনের খাদ্যটুকুও অখাদ্য হয়ে যেতে পারে। .
--------------------------------------------------------
যখন প্রাণের সব ঢেউ
জেগে ওঠে, কথা বলে, রক্তের আশ্চর্য কলরবে
বৃষ্টির দুপুরে মনে পড়ে
বর্ষার মতন গাঢ় চোখ মেলে তুমি আছ দু'দিনের ঘরে।।
[শামসুর রাহমান]
-----------------------------------------------------------------------------
বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
কিছু বিষ মানুষকে সাথে সাথে মারে
আর কিছু বিষ মারে আস্তে আস্তে। দীর্ঘ সময় নিয়ে
শিশুমনে এইসব স্লো পয়জন না ঢুকিযে এখন যে অন্য খাবারের দিকে নজর দিতে হবে রোদ্দুর মশাই
না হলে আজকের শিশু বেড়ে উঠবে ভেতরে অনেকগুলো প্রাচীন ক্ষত নিয়ে
অসাধারণ!!
পাঠক থেকে সাহিত্যের ছাত্র হতে চাই। তথাস্তু কি বলবেন!
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
লীলেন্দা, আপনি নিশ্চয়ই আমার থেকে ভাল জানবেন, তবুও জিজ্ঞেস করছি, এই গল্পগুলো কি কেবল গরিবঘরের ঠাকুরমাদেরই বলা গল্প? কোন সচ্ছল ঘরের ঠাকুমারা কি কখনও এরকম গল্প বলত না?
কৌস্তুভ
বংগদেশিয় ঠাকুমাদের রাজভাগ্য শেষ কবে হয়েছিল সেটা দেখতে ইতিহাস বই ঘাটা লাগবে।
লেখা জুমায়লেস হৈসে...দেয়ালে বাঁধায় রাখার মত লেখা...আপাতত খোমাখাতার দেয়ালে গেল...
কৌস্তভ
নিশ্চিত যে সব ঠাকুরমারাই কমবেশি বলত
প্রসঙ্গটা ঠিক সে জায়গায় নয়
প্রসঙ্গটা হলো সবাই কিন্তু রাজাপ্রজা দুইভাগে ভাগ করার ক্ষেত্রে একই নীতির ছিল
আর নীতিটা হলো রাজা যা ইচ্ছা করবে
প্রজা সব মেনে নেবে
এটা গরিব ধনী দুজনকেই শেখায় মানুষের শ্রেণী বিভাজন
হ, এই বিষয়টা ঠাউরমারা ব্যাবাক ঠিক শিখায়ে দিয়া গেসে, আমরা আজকেও চোখ বুজে সব মেনে চলসি...
কৌস্তুভ
মাঝে 'ব্যাঘ্র ও রাখাল বালক' নিয়েও এমন আলোচনা পেয়েছিলাম। যেখানে মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে একাকীত্বের কারনে রাখাল বালকের বাঘ আসছে বলে হাঁক ছাড়া। আলোচনার শেষে প্রশ্ন ছিলো, তবে কী আমরা এ গল্পের পাঠ বন্ধ করে দেবো?
বেশ ভালো পয়েন্ট ধরেছেন লীলেন্দা। বিশেষতঃ শ্রেণী বিভাজন এবং প্রশ্নাতীত আনুগত্যের ব্যাপারটি। স্যালুট।
রূপকথা হিসেবে শিশুদের জন্যে নতুন কিছু সৃষ্টি জরুরী হয়ে পড়েছে। আপনার 'বগডুল' এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
রাখালের গল্পটা কিন্তু রূপকথার গল্প নয়
ওটা ধর্মীয় নৈতিকতা শিক্ষার জন্য তৈরি গল্প
যেখানে রাখালের একাকীত্বের চেয়ে মিথ্যে না বলার উপর ফোকাসড
এরকম গল্পগুলোর ক্যাটাগরি এবং উদ্দেশ্য মাথায় না রেখে অনেকেই মিশ্রভাবে ছোটদের সংলনে ঢুকিয়ে দেন
এখানে বোধহয় একটু সতর্ক থাকা দরকার
০২
কোনোকিছু্রই পাঠ বন্ধ করা দরকার নেই
আগের যুগের আইন যেমন এখন আর আইন হিসেবে না পড়ে পড়া হয় ইতিহাসের উপাদান হিসেবে
ঠিক তেমনি আগের যুগের শিশুপাঠ কিংবা নৈতিকতাগুলো এখন পড়তে হবে অন্য দৃষ্টি দিয়ে
০৩
বগডুলের গল্প আদৌ শিশুদের উপযোগী হয়ে উঠবে কি না সে বিষযে আমার সন্দেহ আছে
কারণ এর উপাদানগুলো বড়োদের
আমার ছোট এক খালাত বোনকে তার শৈশবে রূপকথার গল্প শোনাতাম আমি। একদিন সে আমাকে প্রশ্ন করেঃ "আচ্ছা, সব গল্পের শেষেই রাজপুত্র আর রাজকন্যার বিয়ে হয়ে যায় কেন?"
ভেবে দেখলাম। সত্যিই তো। সব গল্পেই তো ওই জিনিস। অবলা রূপবতী রাজকুমারীকে বাঁচাতে দত্যিদানো আর সৎমায়েদের কূটচালের সাথে লড়ে তাকে রক্ষা করে রূপবান-ধনবান-বলবান রাজকুমার। সবশেষে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে। পুরোটা দৃশ্যপটই রাজকীয়। দীনহীনদের আগমণ ঘটে শেষ দৃশ্যে। যখন মিঠাই-মন্ডা আর মোহর বিলানো হয়। বিয়ের খুশিতে।
আমার বোনটি তাহলে কী শিখল?
গরীব হওয়া ভালো না। (কারণ গল্পে গরীবদের অবস্থান যারপরনাই নড়বড়ে। নিজেকে গরীব ভাবলে গল্পের সাথে একাত্ম হওয়া সম্ভব নয়।)
সুন্দর না হলে রাজকুমারী হওয়া যায়না।(রাজকুমারীরা সবসময়ই সুন্দর। দুধে আলতা গায়ের রঙ, মেঘবরণ কেশ। )
রাক্ষসের আস্তানায় বন্দি রাজকুমারীর একমাত্র কাজ রাজপুত্রের পথ চেয়ে অশ্রুবিসর্জন করা।
বিয়েই সুখের সর্বশেষ সংজ্ঞা। (গল্পশেষে অবশ্যই একটি বিয়ে হবে। তারপরই নটেগাছটি মুড়োবে। এবং উহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকবে।)
আমার যা মনে হয় তা হলো, গল্পগুলো যারপরনাই পুরনো এবং শিশুসাহিত্য যারপরনাই অবহেলিত। শিশুদের বই নির্বাচনের সময় এক ধরনের অন্ধ রোমান্টিকতা নিয়ে আমরা ঐ রাক্ষস-খোক্কসের গল্পগুলো তুলে দেই তাদের হাতে। কোন গূঢ় চিন্তা ছাড়াই। আসলে এগুলোকে এখন যাদুঘরে আশ্রয় দেওয়া উচিত।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
ফ্রয়েডইতো বোধহয় বলেছিলেন যে আমরা শিশুদেরকে মূলত বড়ো মানুষের মিনিয়েচার-এর বেশি কিছু ভাবি না
তারপর থেকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তাদেরকে আলাদাভাবা শুরু হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে বোধহয় এখনো তাদেরদকে আমরা মিনিয়েচারই ভাবি
০২
আমরা মনে করি বাচ্চাদের ফ্যান্টাসি পছন্দ করার কথা
কিন্তু এই ভাবনা থেকে যে আমরা তাদের হাতে বড়োদের ফ্যান্টাসি তুলে দেই তা খেয়াল করি না
অথচ সুকুমারের ছড়াগুলো কিন্তু বাচ্চাদের ফ্যান্টাসি
- অনেকদিন থেকে ভাবতেছি বাবুতোষ (পড়তে হবে, 'ধুগোতোষ') একটা ঠাকুরমার ঝুলি লিখবো কিনা! পুরনো গল্পের কিছুটা রিমিক্স আরকি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ওগুলো কি বাবুপাঠ্য নাকি শুধুই ধূগোপাঠ্য?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
- দুইপাঠ্যই। বাবুরাই তো একদিন ধুগো হবে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
লিখ্যা হালান
তয় যতদূর মনে লয় ধুগোতোষ গল্পের বাচ্চাদের বয়স হইতে হইব ১৮-৮১
লীলেন্দা, অসাধারণ একটা লেখা, নতুন করে নিজের হীনমন্যতাগুলোর উৎস গুলোকে খুজে পেলাম আপনার লেখা পড়ে, অনেক অনেক ধন্যবাদ বস।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আপ্নে বস। কুনু মাফ নাই।
রূপকথা্র রাজা-প্রজা ধারণার চেয়েও রাজপুত্র-রাজকন্যা ধারণা আমাদের উপর বেশি প্রভাব ফেলে বলে মনে হয়। এই রূপকথা পড়েই বড় হয়েও আমরা রাজপুত্র-রাজকন্যা ইত্যাদির অপেক্ষায় থাকি।
আর রাজা-প্রজা/ ধনী-গরীব ধারণা তৈরিতে পরিবার, পরিবেশই বেশি ভূমিকা রাখে, আমার ধারণা।
ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথা অসাধারণ লাগে এজন্য। এসবের কোন ঝামেলা নেই।
-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়
এন্ডারসনেরলেখা গল্প এবং গোপাল ভাঁড় নাসিরউদ্দিন হোজা এদের অনেক গল্প কিন্তু এসব থেকে একেবারেই মুক্ত
চোখ খুলে দেওয়ার আর নতুন করে দেখাবার চোখ আপনার।
আমাদের শিশুকাল থেকে ভুল আর কম শিখলাম কোথায়? স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যে শিক্ষকেরা শারীরিক আঘাত করতে পারেন না এটা জানতে আমার ৮ বছরের শিক্ষাজীবন পার হয়ে গিয়েছে। আগামীর শিশুকে আমরা কী শিক্ষা দিচ্ছি এটা মূল্যায়নের সময় এসেছে। ধন্যবাদ আবারও চোখে আঙুল দেওয়ার জন্যে।
অফ টপিক... মেঝেতে যে বই ছড়াচ্ছেন, ভাবী এখনও ক্ষেপে যান নি?
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
যে পুরা আমার উপর ক্ষ্যাইপাই কুলাইতে পারতেছে না তার আবার এইসব ছুডুমুডু জিনিসে ক্ষ্যাপার সুমায় কই?
দুর্দান্ত একটা লেখা!
ঠাকুরমার ঝুলি বইটা কার লেখা?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার।
নতুন মন্তব্য করুন