মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শনি, ১০/১১/২০১২ - ২:১৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাপে মরলে পোলায় রাজ্য পায়। বড়োপোলা আতুড় ল্যাংড়া আন্ধা লুলা হইলে ছোটপোলায় পায়। কিংবা বাপের ইচ্ছা হইলে অন্য পোলা কিংবা অন্য কারো পোলারে রাজ্য দিয়া যায়। তারপর সেই রাজায় লাঠি দাবড়াইয়া- এলাকাবাসীর চামড়া ছিলা খাজনাটাজনা আদায় করে স্বর্ণের মুকুট-সিংহাসন বানিয়ে রাজত্ব করে। কোনো রাজার হেডম থাকলে নিজের পোলা-শালা-ভাইভাতিজা নিয়া আশপাশের রাজ্য দখল করে মহারাজ হয়; না হলে অন্যের আক্রমণে নিজের ঘটিবাটি হারিয়েও জীবিত থাকলে বনে গিয়ে জটাজূটধারী সন্ন্যাসী হয়...

রাজা শান্তনু পর্যন্ত মহাভারতে রাজনীতিবিহীন রাজাদের ইতিহাস এরকমই। এক্কেবারে সরল সোজা। হাজারে হাজারে রাজা। মাঝে মাঝে মনে হয় বাড়ির বয়স্ক বুড়ারেও এরা কইত রাজা। কাঠুরের দলনেতাও সেখানে যেমন রাজা; গোষ্ঠীর বুড়াও তেমন রাজা; শিকারি দলের প্রধানও রাজা। আবার বহু ক্ষেমতাশালি ইন্দ্রও সেখানে একজন রাজা। মহাভারতে রাজার কোনো সংজ্ঞাও নাই; মাপজোকও নাই। এক্কেবারে বর্তমান কালে বাংলাদেশের গ্রামের মতো। গ্রামেরও কোনো মাপজোক নাই; সংজ্ঞাও নাই। দুই ঘর মানুষ নিয়াও যেমন বাংলাদেশে গ্রাম আছে তেমনি লাখের উপর জনসংখ্যা আর আস্ত একটা উপজেলার সীমা নিয়া বাইন্যাচঙ্গও বাংলাদেশের একটা গ্রাম... মাঝেমাঝে মনে হয় সেইকালে গ্রামবুড়াদেরই অন্য নাম ছিল রাজা...

তো জোয়ান পোলার বাপ বুইড়া রাজা শান্তনু পর্যন্ত মহাভারতের রাজারা ওইরকমই ছোটতে বড়োতে মিলামিশা রাজনীতি বিহীনই ছিল। তারপরেও ওইরকমই থাকার কথা ছিল; কেননা সকলেই জানত শান্তনু মরে গেলে জোয়ান শক্তিমান এবং বুদ্ধিমান একমাত্র পোলা দেবব্রতই হবে হস্তিনাপুরের রাজা। শান্তনু নিজেও তা জানত তাই পোলারে যুবরাজ কইরা তার হাতে রাজ্যের বেশিরভাগ দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে বুড়াকালে সে প্রায় ধাম্মিক জীবন যাপন করে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াত। আর এই ঘুরে বেড়াতে বেড়াতেই সে মহাভারতের রাজাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো পড়ে গেলো রাজনীতির মুখোমুখি...

সেই বুড়া রাজা শান্তনুর তখন বৌ নাই। দেবব্রতের মা তার এই বৌয়ের নাম গঙ্গা। যারা তারে দেবী মানে তারা বলে দেবী গঙ্গা শান্তনুরে পোলা দিয়ে আবার ফিরা গেছে গাঙে... মানে সে থাকলেও শান্তনুর সংসারে নাই। সাদা চোখে মনে হয় তখন শান্তনুর বৌ মইরা গেছে গা অথবা এক্কেবারে বুড়া; হইলেও হইতে পারে গঙ্গা তখনও জীবিত; হয়ত সে শান্তনুর বাড়িতে একটা ঘরে থাকে কিংবা দূরে কোথাও নিজের বাপের বাড়িতে থাকে। কারণ মহাভারতে পোলা দেবব্রতের বিপদে আপদে পরেও তারে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। যদিও শান্তনুর সাথে তারে আর কোনোকালে কোনো কথাবার্তা কইতে দেখছি বলে মনে হয় না আমার....

তো সেই বুড়িগঙ্গা কিংবা মরাগঙ্গার স্বামী রাজা শান্তনু একদিন হাঁটতে হাঁটতে যমুনার তীরে গিয়া আছাড় খাইয়া পড়ল তরতাজা মাইমলকন্যা সত্যবতীর সামনে। ওরে বাপরে বাপ; কী মাইয়া দেখল রে রাজা। যেমন তার তেজ তেমন তার ধার। বয়স আর রূপের কথা তো বলারই কারণ নাই কেননা সেই যে চিৎ হইয়া পড়ছিল রাজা; মণিমুক্তা মাখানো পোশাক কাদায় ছেড়াবেড়া তবু সে ভুইলা গেছে হামাগুড়ি দিয়া উঠবার কথা। বুইড়া হাবড়া আর চিতপটাং হইলেও সে হস্তিনাপুরের রাজা আর যেহেতু তারই রাজ্যে বৈঠা ধইরা মাইনসেরে নদী পারাপার করে সেহেতু এই মাইয়া নিশ্চিত এক পাটনি কন্যা; মানে তার প্রজা ...মানে কাদাকুদা মেখেও রাজা তারে যে কোনো কিছু কইতে পারে...

শরীরে আগুন জ্বইলা উঠলে কাদার মধ্য থেকে লাফ দিয়ে উঠে গলায় রাজকীয় গাম্ভির্য এনে রাজা শান্তনু তারে সরাসরি প্রস্তাব দিলো- শোনো কইন্যা। আমি রাজা শান্তনু। তোমারে বিয়া করবার চাই...

একজন রাজা হইয়া মাইমলের মাইয়ারে এর থেকে ভালো করে বলার কোনো কারণ নাই। হোক সে বুড়া; তবু রাজায় তারে বিয়া করতে চায় এইটা শুনলে শুধু সে কেন; তার গুষ্ঠিসুদ্ধা খুশিতে বগবগা হইয়া ধন্যধন্য করার কথা। কিন্তু রাজা যেরাম ভাবছিল এই পাটনি সত্যবতী সেরাম মাইয়া না। ন্যাড়া হইয়া সে একবার বেলতলায় গিয়া বহুত হ্যাপা সামলাইছে। তার যখন আরো বয়স কম; বুদ্ধিশুদ্ধিও অত বেশি নাই। তখন এরকমই আরেকজন তার ঘাটে আইসা পরিচয় দিছিল- শোনো কইন্যা আমি বশিষ্ঠ পরাশর... আমি তুমার লগে শুইবার চাই...

জটাজূটধারী সেই লোক জাতে ব্রাহ্মণ। একহাতে লোটা অন্যহাতে ত্রিশূল; মুনি বশিষ্ঠের নাতি... এইরকম একখান দাবি করে বসছে; নমশূদ্র মাইমল গোষ্ঠীর উপর যা তার ধার্মিক অধিকার.... নৌকার সব লোক এই কথা শুনে থ মাইরা গেলো। আশেপাশেও তার গোষ্ঠীর বহুত লোক ছিল। মাইয়া তাগোর সকলের দিকে তাকায়; কিন্তু নিরুপায় সকলেই যেন কিছুই শোনে নাই সেই ভান করে এদিক সেদিক হাঁটে। সত্যবতীর নৌকায় যারা উঠছিল নদী পার হইতে তারা ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া নৌকাতেই বইসা থাকে। নৌকার একদিকে নদী অন্যদিকে ব্রাহ্মণ পরাশর। তাদের যাইবার কোনো জায়গা নাই। আশেপাশে তাকাইয়া পরাশর বুঝে বাতাস তার অনুকূলে আছে। সত্যবতীর নৌকার যাত্রীদের সে আদেশ করে নৌকা থেকে নেমে যেতে- আমি একাই যাত্রী হবো আজ... পাব্লিকের জানে পানি আসে। হুড়মুড় করে তারা নৌকা থেকে নেমে গেলে পরাশর উঠে সত্যবতীরে আদেশ করে- নৌকা ছাড়ো...

হতভম্ব সত্যবতীর নৌকা যখন মাঝ নদীতে তখন পরাশর আদেশ করে- কাছে আইস কইন্যা। নৌকা ভাসুক গাঙে...। পাটনিবিহীন নৌকা ভাসে গাঙে আর পরাশর সাঁতরায় তরুণী পাটনি সত্যবতীর দেহে... তারপর দুইখান বাণী আর ভংচং আশীর্বাদ দিয়া পরাশর চইলা যায় কিন্তু সেইদিন মাঝ নদীতে গর্ভবতী হওয়া সত্যবতীরে লোকলজ্জার ভয়ে দূরের চরে গিয়া জন্ম দিয়া আসতে হয় এক পোলা... পরাশর তো গেছে। কিন্তু বিয়ার বাজারে সত্যবতীর দামও সে নামাইয়া দিয়া গেছে এক্কেবারে তলায়। এক পোলার মায়েরে বুড়াধুড়া ছাড়া কোনো জোয়ান মানুষ বিয়া করতে চায় না। তাও যে দুয়েকজন চায় তারা কন্যাপণ দিতে এক্কেবারেই নারাজ... কারণ তারে বিয়া করলে তার আগের ঘরের পোলারেও খাওন পরন দেওন লাগব সেই স্বামীর...

বুইড়াদের কামচক্ষু পড়া সে শিখেছে পরাশরকে দেখেই। শান্তনুর চোখেও তার শরীর। পার্থক্য শুধু এই ব্রাহ্মণরা কাম ছাড়ে হাটে মাঠে ঘাটে আর রাজারা কাম ফলায় মেয়েদের ঘরে নিয়ে গিয়ে। খারাপ না। এক পোলার মায়েরে যেখানে কোনো জোয়ান মরদ বিয়া করতেই চায় না সেখানে রাজা শান্তনু খারাপ কীসে। বুইড়া হইলেও তো সে রাজা। পয়সা পাত্তির অভাব নাই। তার পোলার ভরণপোষণেও তার ঝামেলা থাকার কথা না। কিন্তু না। এক বাক্যেই রাজি হওয়া ঠিক না। শান্তনু যখন বঁড়শি গিলছে তখন তারে নিয়া কিছু খেলতে সমস্যা কোথায়...

সত্যবতীর শরীরে হুমড়ি খেয়ে পড়া হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনুর দিকে সত্যবতী চোখ তুলে চায়- রাজার বিয়ার প্রস্তাব কি হাটে মাঠে ঘাটে দেওয়া মানায়? বাড়িতে আমার বাপে আছে। সে আমার অভিভাবক। কইন্যার বিয়ার প্রস্তাব তার কাছে দেওয়া যেমন রাজার উপযুক্ত তেমনি কন্যাদানের অধিকারও একমাত্র তার...

ঠিক কথা। ঠিক কথা। মাইমলের মাইয়া হইলেও বুদ্ধিশুদ্ধি যেমন তার আছে তেমনি রাজার সম্মানও সে বোঝে ষোলো আনা। বাপের কাছেই গিয়া কন্যাপ্রার্থনা করা উপযুক্ত কাজ। প্রার্থনা একটা ফরমালিটি মাত্র। রাজায় তার মাইয়ারে চায় এইটা শুনলে দাসের বেটা সুড়সুড় করেই মেয়েরে পাঠিয়ে দেবে হস্তিনাপুরে শান্তনুর হেরেমে। কিন্তু শান্তনু সত্যবতীর বাপের কাছে যাবার আগেই নিজের বাপেরে সে সকল বিত্তান্ত বুঝিয়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পরে মাইমল পাড়ায় এসে রাজা যখন সত্যবতীর বাপেরে বললেন- শোনো মাইমল; তোমার মাইয়ারে আমি বিয়া করতে চাই। তখন জোড়হাত করে মাইমল হাসে- মহারাজ। আপনার তো একখান জোয়ান পোলা আছে। সে যদি ঝামেলা করে? আপনের সাথে মাইয়ার বিবাহ সাত জন্মের সৌভাগ্য আমার। কিন্তু কেমনে বলেন বাপ হয়ে নিজের মাইয়ারে এমন ঝামেলার ঘরে পাঠাই?

ধুশশালা বলে এখান থেকে যেমন চইলা আসা যায়; তেমনি চুলের মুঠায় ধইরা সত্যবতীরেও নিয়া আসা যায়। কিন্তু সত্যবতীর রূপে শইল যেমন উচাটন হইছে তেমনি মান সম্মান বইলাও একখান কথা আছে। মাইমল বেটারে পাত্তা না দিলেও নিজের জোয়ান পোলার ভাবসাব একবার যাচাই করা দরকার। পোলায় যদি সৎমা মাইনা না লয় তবে সত্যিই তো ঝামেলার কথা...

মাইমলের কথা শুনে বাড়ি গিয়া শান্তনু নিজের পোলার সামনে আনচান করে। পোলায় জিগায়- কী হইল বাপ? আবার কেউ তোমার রাজ্য হরণের হুমকি দিছে নাকি? বাপে কয়- নারে বাপ; তুই যে দেশের যুবরাজ সেই দেশেরে হুমকি দিবার সাহস কার আছে বল? পোলায় জিগায়- তবে কেন মন বেচইন বাজান? বাপে কয়- মনটা বড়োই বেচইন ভিন্ন কারণে বাপধন। আমি বুড়া মানুষ; সংসারে একা একা থাকি। কেমনে কী করি বল? তোর মতো বয়স থাকলে যুদ্ধটুদ্ধ কিংবা অস্ত্র অনুশীলন কইরাও সময় কাটাইতে পারতাম। কিন্তু... বুঝিসই তো বাপ; বাপে তোর একলা একটা বুড়া মানুষ... তাছাড়া তুই একটাই মাত্র পোলা আমার। শাস্ত্রে কয় এক পোলা থাকা আর পোলাহীন থাকা পিরায় সমান... বড়োই চিন্তিত আছি রে বাপ; যদি তোর কিছু হইয়া যায় তো আমার পিণ্ডি দিবারও থাকব না কেউ...

বুদ্ধিমান পোলায় বোঝে বাপের গতর টাডাইছে তাই বিয়া করতে চায়। কাউরে দেইখা নিশ্চয় বুড়ার রক্ত উচাটন। ...পোলায় আর বাপেরে কিছু কয় না। বাপের সঙ্গী সাথিদের গিয়া জিগায়- কারে দেইখা আমার বাপে উতলা হইছে কন তো দেখি? বাপের সঙ্গীসাথিদের কাছ থিকা সত্যবতীর নামধাম শুনে পোলায় ভাবে অসুবিধা কী? করুক না বিয়া। বুইড়া মানুষ মরবার আগে একটু রং তামাশা করতে চায় করুক না...

পোলায় নিজেই দায়িত্ব নেয় বাপের বিয়ার ঘটকালির। বাপেরে নিশ্চিন্ত করে সে মিত্র অমাত্য নিয়া মাইমলের উঠানে দাঁড়ায়- শোনো মাইমল। আমার পিতা হস্তিনাপুরের রাজা শান্তনু তোমার মাইয়ারে বিবাহ করতে ইচ্ছুক। আমি তার প্রস্তাব নিয়া আসছি তোমার কাছে...

দেবব্রতের এই প্রস্তাবেও মাইমল হাসে- শোনো যুবরাজ। নিঃসন্দেহে রাজরানি হইবার এই প্রস্তাব আমার মাইয়া আর আমার গোষ্ঠীর জন্য মহা সৌভাগ্য আর সম্মানের বিষয়। কিন্তু তোমার বাপের সাথে যদি আমার মাইয়ার বিবাহও হয়; তবু আমার নাতিপুতিরা কেউই রাজা হতে পারব না। কেননা বড়ো পোলা হিসাবে তোমার পিতার পরে তোমারই রাজা হইবার কথা। তুমিই বলো; বাপ হইয়া কেমনে আমি নিজের কইন্যার এমন অধস্তন ভবিষ্যৎ মাইনা লইতে পারি?

দেবব্রত পড়ে মহা ফাপড়ে। বাপেরে বইলা আসছে সত্যবতীর লগে তার বিয়া করাইয়া দিবে। পাত্র অমাত্যদেরও ভড়ং দেখাইয়া কইছে- বুইড়া বাপের লাইগা আমার এইটুকু করা উচিত; তাই আমি নিজেই যামু বাপের বিয়ার ঘটক হইয়া। কিন্তু এখন যদি তার কারণেই বাপের বিয়া ভাইঙ্গা যায় তয় মুখ দেখাইব কেমনে?

সে মাইমলের হাত ধইরা কয়- আমি তোমারে কথা দিতাছি ভবিষ্যৎ নানা। যদিও আমি যুবরাজ এবং বাপের পরে রাজা হইবার দাবিদার। তবু আমি সকলেরে সাক্ষী রেখে স্বেচ্ছায় সেই রাজত্বের দাবি ছাইড়া দিলাম। তোমার মাইয়ার গর্ভে আমার যে ভাইয়েরা হবে; তারাই রাজা হবে আমার পিতার পরে... এইবার তুমি রাজি হও...

মাছেরে নিয়া কারবার যে মাইমলের; সে ঠিকই বোঝে মাছে টোপ গিললেই সাথে সাথে বঁড়শিতে টান দিতে নাই। টোপ গিলার পরেও কোন সময় টান দিলে মাছের বঁড়শি ছিড়া চলে যাবার সম্ভাবনা আছে আর কোন সময় টান দিলে বঁড়শিটা গিয়া মাছের মাংসে গাঁথবে তা মাইমলই জানে সবার থেকে বেশি। সে বলে- অতীব খুশির কথা যুবরাজ। নিজের পিতার একটা খায়েশ পূরণের লাইগা রাজত্ব ছাইড়া দিবার প্রতিজ্ঞার মতো তোমার যে ত্যাগ তা ইতিহাসে স্মরণীয় থাকব এই আমি বইলা দিতে পারি। কিন্তু তুমি একটা জোয়ান পোলা... সামনে বিয়াশাদি করবা। তোমারও পোলাপান হইব; কিন্তু কে কইতে পারে সকল পোলরাই বাপের মতো ত্যাগী আর উদার হয়? তুমি এক মহান মানুষ। তুমি রাজত্বের দাবি ছাইড়া দিলেও তোমার ভবিষ্যৎ পোলাপান তা মানব কেন? তারা যদি ভাবে রাজত্ব তাদের পৈতৃক উত্তরাধিকার আর সেইজন্য আমার ভবিষ্যৎ নাতিগো লগে তোমার ভবিষ্যৎ পোলাপান কাইজা বাধায়? সেইটাওতো একখান চিন্তার বিষয়; নাকি কও?

কী কুক্ষণে যে বাপেরে কথা দিয়া তার বিয়ার ঘটকালি করতে আসছিল দেবব্রত এইবার মনে মনে ভাবে। বাপের সঙ্গীসাথি অমাত্যরা তার দিকেই তাকিয়ে আছে; কারো কিছু কওয়ার নাই। হীরামণি মাণিক্য কিংবা কন্যাপণ নিয়া আলোচনা হলে অমাত্যরা কিছু বলতে পারে। কিন্তু হালার মাইমল যা কয় সব কিছু যুবরাজরে নিয়াই কয়। এইসব কথার উত্তর তো যুবরাজ ছাড়া তার বাপেরও দিবার সাধ্য নাই...

যুবরাজ দেবব্রত পড়ে মাইনকার চিপায়। সক্কলের চোখে সে দেখে একটাই ভাষা- বাপধন। বাপের বিয়াটা যদি হয়; তবে একমাত্র তুমিই তা করায়া দিতে পারো। আর যদি না হয় তবে সেইটাও একমাত্র তোমার লাইগা ভাইঙ্গা যাইতে পারে... এইবার দেখো বাপধন... কী করবা না করবা সব তুমিই বুইঝা লও...

নাহ। দায়িত্ব নিয়া আইসা পিছানোর থাইকা মইরা যাওন ভালো। সব দিক ভাইবা চিন্তিয়া দেবব্রত আগাইয়া যায় মাইমলের দিকে- আমি গঙ্গাপুত্র দেবব্রত। তোমার গোষ্ঠীগাড়া এবং আমার বাপের এই সঙ্গীসাথি অমাত্যদের সামনে প্রতিজ্ঞা করতাছি যে বাপের খায়েশ পূরণ আর তোমার আশঙ্কা দূর করার লাইগা আমি সারাজীবন ব্রহ্মচারী হইয়াই থাকমু। জীবনেও বিয়াশাদি করব না। আর যদি বিয়াশাদি না করলে আমার যেহেতু পোলাপান হইবারও কোনো সম্ভাবনা নাই; সেহেতু তাগোর লগে তোমার ভবিষ্যৎ নাতিপুতির মারামারি কাইজারও কোনো আশঙ্কা নাই। এইবার তুমি রাজি?
- হ রাজি...

ভীষণ কঠিন প্রতিজ্ঞা করার লাইগা দেবব্রতরে সক্কলে ভীষ্ম খেতাব দিয়া ধন্যধন্য করে আর যোগ্য বড়ো পোলা থাকতেও ভবিষ্যতে নিজের গর্ভজাত পোলাপানের রাজত্ব আর বড়োপোলারে নির্বংশ রাখার সিস্টেম করে সত্যবতী রাজনীতিরে লইয়া আসে শান্তনুর ঘরে... ব্যাপার খানা বিশাল দারুণ। বাপের আশ্রমে বিদ্যাশিক্ষা কইরা মাইমল কন্যার বড়ো পোলায় হইছে ব্রাহ্মণ। এই ছুডুকালেই জ্ঞানগম্যির লাইগা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন কইয়া তার বেশ নামডাক। পরের ঘরে আরেক পোলা যদি রাজা হয় তবে বেশ দারুণই হইব কইতে হয়...

সত্যবতীর গর্ভে দুইখান পোলা জন্ম দিয়া রাজা শান্তনু মইরা গেলে নিজের প্রতিজ্ঞা স্মরণ কইরা দেবব্রত সত্যবতীর বড়ো পোলা চিত্রাঙ্গদরে বসাইল ক্ষমতায়। কিন্তু কী সব যুদ্ধমুদ্দ করতে গিয়া বিয়াশাদির আগেই চিত্রাঙ্গদ মইরা গেলে সত্যবতীর ছোটপোলা নাবালক বিচিত্রবীর্যই হইল রাজা... সতিনের পোলা ভীষ্ম থাকল উপদেষ্টা আর অভিভাবক... সেই পোলা বড়ো হইলে বাপের ঘটকালিতে অভিজ্ঞ ভীষ্ম ছোট ভাইয়েরও একসাথে দুইখান বিবাহ করাইয়া দিলো। কিন্তু সত্যবতীর কপাল খারাপ। দুই পোলাই রাজা হইল কিন্তু রাজত্ব করতে পারল না কেউ। বড়োটা লড়াই করতে গিয়া মরল বিয়াশাদির আগে আর ছোটটা বিয়াশাদি করলেও দুইটা বৌ রাইখা যক্ষ্মায় মইরা গেলো পোলাপান জন্ম দিবার আগে... সত্যবতী পড়ল ঝামেলায়। নিজে রাণী হইল; তার বুদ্ধিতে বড়ো ভাইরে বাদ দিয়া ছোট ভাইরা রাজাও হইল তার কিন্তু এখন তো তার আর কোনো পোলাও নাই; নাতিপুতিও নাই। এখন তো সেই ভীষ্মই শান্তনুর একমাত্র উত্তরাধিকার... সিংহাসন ছাইড়া দিলেও রাজার একমাত্র বংশধর। নিয়মমতো ভাইয়ের বিধবাদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের দায়িত্ব আর অধিকার তারই... কিন্তু... ভীষ্মতো প্রতিজ্ঞা করেছেন সন্তান জন্ম না দেবার... তার পরেও তারে একবার জিজ্ঞেস করা উচিত... সত্যবতী যাইয়া ভীষ্মরে জিগায়... ভীষ্ম নিজের ব্রহ্মচারীত্বের প্রতিজ্ঞা মনে করে বিধবাদের গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য কোনো ব্রাহ্মণকে ভাড়া করার কথা বলে। কিন্তু নিজের আরেক পুত্র থাকতে সত্যবতী ব্রাহ্মণ ভাড়া করতে যাবে কোন দুঃখে? সে তার বিবাহপূর্ব কানীন সন্তান দ্বৈপায়নকেই ডাকে...

দ্বৈপায়নের ঔরসে ছোট ভাইয়ের দুই বিধবার গর্ভে জন্ম নেয় দুইটা পোলা। শান্তনুর রাজত্ব পোলাদের পরে আবারও থাকে সত্যবতীর নাতিদের হাতে... ভীষ্মরে নিয়া সত্যবতীর আর কোনো চিন্তা নাই। ভাতিজারা বড়ো হইলে তারাই রাজা হইব। বড়োটা আন্ধা বইলা ক্ষমতা পাইব না; ছোট পাণ্ডুই হইব পরের রাজা... বড়ো ভাতিজার বিয়ার ঘটকালিও ভীষ্ম করে। নিজে বিয়া শাদি না করলেও বাপ ভাই ভাতিজা সকলের বিয়ার ঘটক ভীষ্ম নিজে। শান্তনু বংশে নিজের বিয়া নিজে নিজে করার নিয়ম নাই। শান্তনুর প্রথম বৌ গঙ্গারে পোলার লাইগা পাত্রী ঠিক করছিল তার বাপ প্রতীপ। সত্যবতীর সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ের সব কিছুই তো কইরা দিলো পোলায়। ভাইয়ের লাইগাও পাত্রী আইনা দিলো ভীষ্ম। ভাতিজা ধৃতরাষ্ট্রের লাইগাও পাত্রী জোগাড় করল সে। কিন্তু পাণ্ডুটা ঝামেলা বাধাইল। কাউরে কিছু না কইয়া নিজে নিজে স্বয়ংবরায় গিয়া কুন্তীরে আইনা তুলল ঘরে। ভীষ্ম ভালোই ক্ষেপছিল। কিন্তু ভাতিজায় বিয়া কইরা ফালাইছে; এইখানে তো আর কিছু কইবার নাই। এখন তো আর গিয়া কইতে পারে না যে আমি থাকতে তুমি নিজের পছন্দে বিয়া করলা ক্যান? মনে মনে সে ক্ষেপলেও কিছু কয় না। কিন্তু কিছুদিন পরে ভীষ্ম পয়সা দিয়া মাদ্রীরে কিনা আইনা পাণ্ডুরে কইল- তোর পয়লা বৌয়ের গর্ভে কোনো বাচ্চাকাচ্চা হয় না। তাই বংশ রক্ষার জন্য তোর দ্বিতীয় বিবাহের আয়োজন করছি আমি। এরে তুই বিয়া কর। যদিও তখনো ভীষ্মের ঘটকালিতে বহুদিন আগে বিয়া করা ধৃতরাষ্ট্রের বৌ গান্ধারীর গর্ভেও কোনো বাচ্চাকাচ্চা নাই। কিন্তু ভীষ্ম পাত্রী নিয়া হাজির... কে তার সাথে তক্ক করে? দাদি সত্যবতী কিংবা মা অম্বালিকাও এতে কোনো দোষ দেখেন না। যেহেতু বড়োভাই আন্ধা তাই পাণ্ডুই শান্তনু বংশের রাজা; সেহেতু রাজার একাধিক বৌ থাকা দোষের কিছু না...

পাণ্ডুর বৌ কুন্তীরও বেশি কিছু বলবার নাই। নিজে সে রাজকন্যা না। রাজার পালিত কন্যা সে। তার বাপ চাষাভুসা শূর ছোটকালেই তারে দান কইরা দিছিল নিঃসন্তান রাজা কুন্তীভোজের কাছে। তাই রাজার মেয়ে না হয়েও সে রাজকন্যার মতো স্বয়ংবরা করে রাজা পাণ্ডুরে বিয়া করছে পছন্দ কইরা। পাণ্ডুর সন্তান হয় না বইলা সকলে তারে দুষলেও সে জানে সন্তান জন্মদানে তার কোনো সমস্যা নাই। কারণ বিয়ার আগেই তার একটা পোলা হইছে। দাদি সত্যবতীরও বিয়ার আগের পোলা ছিল কিন্তু তা ছিল প্রকাশ্য। কিন্তু কুন্তী নিজে কিছু দুই নম্বরী করছে এই ক্ষেত্রে। পোলার মা হইয়াও পোলার কথা লুকাইয়া কুমারী হিসাবেই সে স্বয়ংবরা করছে। এখন বেশি কচলাইতে গেলে মিথ্যা কুমারী সাইজা রাজা পাণ্ডুরে বিয়া করার অপরাধে ভীষ্ম তারে কাইট্টাও ফালাইতে পারে। এতে আমও যাবে ছালাও যাবে। তার চেয়ে থাক। পাণ্ডু না হয় বিয়াই করুক আরেকখান। সামলাইয়া চলতে পারলে এইটা কোনো সমস্যা না...

পাণ্ডু দুই বিয়া কইরাও পোলাপান পায় না। বহুদিন আগে বিয়া কইরাও পোলাপান হয় না ধৃতরাষ্ট্রের। ধৃত রাষ্ট্রেরে নিয়া কারো তেমন কোনো মাথাব্যাথা নাই। কারণ সে রাজা না। একান্ত যদি পাণ্ডু নিঃসন্তান না হয় তবে ধৃতরাষ্ট্রের পোলাপানও রাজা হইবার তেমন দাবিদার হইব না। দাদি সত্যবতীর সন্দেহ হয় পোলাপান জন্ম দিবার ক্ষেত্রে তার নাতির ক্ষেমতায়। তিনি সরাসরি গিয়া নাতবৌ কুন্তীরে ধরেন- পোলাপান না থাকলে রাজবাড়িতে রাণীর মর্যাদা প্রায় দাসীগো সমান হয় এইটা বোঝো না তুমি? নাতি আমার রাজা। নাতিবৌর গর্ভে যে জন্মাবে সেই হবে নাতির পরে রাজত্বের দাবিদার। নাতির আমার সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু তোমার তো সমস্যা থাকার কথা না নাতির পরে যে রাজা হবে তারে জন্ম দিতে? নাতি কিন্তু আমার আরেকটা আছে। বিদুর। দাসীর গর্ভে জন্ম নিলেও কিন্তু সেও আমার পুত্র দ্বৈপায়নের বংশধর। দেবর হিসাবে তার সাথে তোমার সম্পর্কও তো জানি খুব হাসিখুশি। প্রয়োজন পড়লে তুমি তারও সাহায্য নিতে পারো। কথাটা কি বুঝাইতে পারছি আমি?

- হ দাদি। পুরাপুরিই বুঝাইতে পারছেন যা বুঝাইবার চান...

২০১২.১১.০৯ শুক্রবার


মন্তব্য

জুন এর ছবি

অহো! এই না হইলে জেবন। মন খারাপ

আপনার লেখা নিয়া কিছু বলা আমার সাজে না। হাসি পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পরেরটা আসিবে শিগগির

স্বপ্নহারা এর ছবি

গুরু গুরু

ঈমানে কই এই শান্তনু আমি না।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শান্তনু হৈতে হয় না; সিস্টেমে পড়লে শান্তনু বনে যেতে হয়

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

মহা ইতিবৃত্ত, মহাভারতের বনপর্বে বেদের উল্লেখ করে স্পষ্টই বলা হয়েছে, অবিবাহিত রমনীগণ যাকে ইচ্ছা তাকেই কামনা করতে পারে বলেই তাদের 'কন্যা' বলা হয়। কন্যা হচ্ছে স্বতন্ত্রা, পরতন্ত্রা নয়। স্বেচ্ছানুযায়ী কাজ করাটাই সভাবসিদ্ধ ব্যাপার।

প্রাচীনকালে সমাজ ব্যবস্থায় এমনটি ছিল।
শান্তনু, ভীষ্ম ও বেদব্যসকে নিয়ে আমার এই লেখাটি দেখুন, 'পুরাণকথা, পর্ব-৬

পরের পর্বের অপেক্ষায়.....

মাহবুব লীলেন এর ছবি

জি। কথাসত্য। মহাভারতের বিধানখানও সেখানে বিদ্যমান... তবে এইখানে কন্যা শব্দটা কিন্তু আমি বর্তমানের মেয়ে কিংবা পুত্রী অর্থেই ব্যবহার করেছি

০২

আপনার লেখাটা পোস্টানোর দিনই পড়েছিলাম। আবার পড়লাম। দুর্দান্ত সংকলন তবে আমারগুলান একটু ভিন্নপাঠ আরকি...

০৩
আমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে করি পরাশর সত্যবতীরে ধর্ষণই করেছিল নৌকায়
সত্যবতী আর দ্বৈপায়নকে নিয়া আমার একটা নোট এইখানে থাকল; একটা গুতা দিতে পারেন
মহাভারত; মাতৃলাঞ্ছনার এক অনন্য প্রতিশোধ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আপনার ভিন্নপাঠ ভাল লাগছে। নতুন চিন্তার খোরাকও জুটছে বটে !
আপনার দেওয়া লিঙ্কটার লেখাটা পড়লাম। মুনি-ঋষিদের যথেচ্ছ যৌনাচার এবং তার বৈধতা দেবার ফতোয়া সম্পর্কে আমার একটা লেখা : 'পুরাণকথা, পর্ব-৭

দিগন্ত এর ছবি

জাস্ট অসাধারণ হচ্ছে, আপনার পরের রাজনৈতিক নারী কি কুন্তী?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

স্বপ্নহারা এর ছবি

এরপর দ্রৌপদী খাইছে

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

দিগন্ত এর ছবি

ঐটা তো থাকবেই হাসি


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কুন্তীর পরে কৃষ্ণা দ্রৌপদী

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পরের পর্ব কুন্তী... কুন্তীকে নিয়ে একটা সম্পূর্ণ মঞ্চ নাটক প্রায় শেষের পথে; ওইটারই একটা সামারি নোট কুন্তীপর্ব

পুতুল এর ছবি

কত মেধাবী ছিল আসলে তারা যারা ধর্মটা প্রনয়ন বা রচনা করেছে! হিন্দু ধর্মের বর্ণপ্রথাটা বুঝতে চাই। অবশ্য এইটুকু বুঝতেই কষ্ট হয়েছে অনেক। যেটুকু বুঝেছি তার কৃতিত্ব আপনার মুখে মুখে বলার মতো করে লেখা জীবন্ত গদ্য।

আমি চেষ্টা করবো শোষনের ক্ষেত্রে ইসলাম, হিন্দু এবং খৃষ্টান ধর্মের মিলটা দেখাতে। হিন্দু ধর্মের বর্ণ প্রথাটা একটা পর্যায়ক্রমিক শোষণ ছাড়া আর কিছু না, আমার মতে। কিন্তু নীচু বর্ণের হিন্দুরা ধর্মমতে কী কী কাজ আচরণ কারতে পারে বা পারে না। এর উপরে একটু ধারণা পাওয়া যাবে কী কী বই পড়লে এবং বই গুলো পাব কোথায়? ভাবছিলাম সাহায্য চাহিয়া একটা পোষ্ট দেব। কিন্তু এখন দেখি এই লাইনে এখানেই তীর্থ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্বপ্নহারা এর ছবি

আপনি মহাভারত পড়তে পারেন।

প্রবীর ঘোষের কিছু বই আছে সেগুলোও। আর রিসেন্টলি আমি পড়লাম রাহুল সাংকৃত্যায়নের "ভোলগা থেকে গঙ্গা"- বেশ একটা আইডিয়া পাবেন। বর্ণ বিভাজনের মূল ইত্রামি করেছিলো ঋষিগুলো- রাজনীতি-ধর্ম দুইটা মিলিয়ে সুবিধা করার জন্য।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

পুতুল এর ছবি

মহাভারত পড়া হয়নি। ভোলগা থেকে গঙ্গাও পড়েছি প্রায় তিরিশ বছর আগে। দেখি এবার দেশে নিয়ে আসব। ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্বপ্নহারা এর ছবি

মহাভারতের কথা অমৃত সমান দেঁতো হাসি

ঐটা পড়লেই বুঝে যাবেন কাহিনী- শুধু একটু ফিল্টার করতে হবে আপনার যুক্তির চশমা দিয়ে।

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভাতের কথা অমৃত সমান' কথাখান বিশ্বাসী এবং ধার্মিকদের জন্য কিন্তু কাহিনীখান যে সব সময়ই সাম্প্রতিক সেইটাই মনে হয় এর মূল বৈশিষ্ট্য

'মহাভারত হচ্ছে মানবাজিতর প্রথম রাজনৈতিক ইতিহাস' কথাখান কেউ কেউ বলে; আমি এর সাথে একমত

বর্তমান রাজনীতি-কলার অনেক কিছুরই সূচনা মহাভারতে; এমন কি যুদ্ধের আইনও মহাভারতের আগে আমি কোথাও পাইনি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারত কিন্তু এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। বাংলা ইংরেজি দুইটাই

অ্যাজোলরাস এর ছবি

পুতুল ভাই মনুসংহিতা পড়ে দেখতে পারেন। জাত পাত ও বর্ণপ্রথা নিয়ে ধারণা পাওয়া যেতে পারে।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ অ্যাজোলরাস। যোগার নেব।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বর্ণ বিভাজনটা ঋষিদেরই কাজ। কথাটা ঠিক। ভার্গব ব্রাহ্মণরা ব্রাহ্মণদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য এইটারে বেশ প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে- বিশেষত চ্যাবন-শুক্রাচার্য এই দুই ভাই এবং তার পরে তাদের বংশধররা। কিন্তু ক্ষত্রিয় যযাতি বংশের মহাভারতের মূল কাহিনী কিন্তু ব্রাহ্মণ বর্জিত... ওইখানে ব্রাহ্মণদের কোনো পাত্তা নাই...

দিগন্ত এর ছবি

এইটা নিয়ে আমি আগে কখনও লিখিনি তবে খুবসম্ভব এটাই আমার লেখার পরবর্তী টপিক। আশাকরি উইকেন্ডে কখনও পাওয়া যাবে। তবে আমার লেখা আবারও সংখ্যা আর ইতিহাসে ভরতি থাকবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

পুতুল এর ছবি

তবে আমার লেখা আবারও সংখ্যা আর ইতিহাসে ভরতি থাকবে।

সেটাই সাধারণত বাস্তবের খুব কাছাকাছি থাকে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্বপ্নহারা এর ছবি

অপেক্ষায় রইলাম। সেলিব্রিটি মহামুনিদের একটু সাইজ দেয়া দরকার হাসি

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দিগন্ত মহাভরত নিয়ে লিখে ফেলেন। আপনি বিজ্ঞানের মানুষ। সম্ভবত আপনার পক্ষেই একটা বিষয় নিয়ে লেখা সম্ভব। সেটা হচ্ছে মহাভারতের টেকনলজি...

মহাভাতে বেশ কিছু টেকনলজির কথা আছে। ওগুলোতে রংচং আছে প্রচুর কিন্তু আমার মনে হয় ওগুলো পেছনে কিছু বেসিকও ছিল;

মহাভারতের উড়ন্ত যান [বিমান] আগ্নেয়াস্ত্র; যা দূর থেকে ছোড়া হতো- বোমা জাতীয় অস্ত্র [অনেকে একসাথে ধ্বংস করে দিতো- অজুর্ণ আর কর্ণের শব্দহীন রথ... আমার মনে হয় ওগুলোর পেছনে বেশ কিছু বাস্তবিক টেকনলজি ছিল; পরবর্তীতে টেকিমূর্খ লেখকদের হাতে পড়ে ওগুলো অলৌকিক চেহারা পায়... এগুলো নিয়ে একটু ভাববেন?

দিগন্ত এর ছবি

আমার প্রিয় এক বন্ধুর বাবা মহাভারত নিয়ে অনেক লেখেন - নৃসিঙ্ঘপ্রসাদ ভাদুড়ি। আমার কোনোদিন মহাভারত নিয়ে ওনার সাথে আলোচনা করার সময় হয় নি। মহাভারত নিয়ে লিখলে আমি ভারতীয় মহাভারতের সাথে ইন্দোনেশিয়া, লাওস আর ভিয়েতনামের মহাভারতের তুলনামূলক একটা লেখা লিখতে চাই। কিন্তু এই বিষয়ে পড়াশোনা করতে অনেক সময় লাগবে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি মানে কি 'দণ্ডনীতি'র লেখক? যদি তাই হয়ে থাকেন তবে তো গুরু মানুষ
তার দণ্ডনীতি বইটাও এইক্ষেত্রে একটা অসাধারণ রেফারেন্স

দিগন্ত এর ছবি

ঠিকই ধরেছেন, উনিই।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হিন্দু ধর্মের সমাজব্যবস্থা আর মহাভারতীয় কিংবা রামায়ণীয় সমাজ ব্যবস্থা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা
একটার সাথে আরেকটার সম্পর্কের মিল থাকলেও চেহার কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন
এবং তার থেকেও ভিন্ন বৈদিক সমাজ ব্যবস্থা

সুতরাং বর্ণপ্রথার ক্ষেত্রেও তাই; পৌরাণিক- বৈদিক- এবং হিন্দু; আলাদা আলাদা কিন্তু

মহাভারতে জাতপাত নিয়ে কিন্তু তেমন ঝামেলা নাই; বর্ণ আছে কিন্তু বিয়েশাদি হরহামেশাই হয়; সেই অসবর্ণ বিয়ের সন্তানদেরও কিন্তু বংশমর্যাদা নিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না...

যদিও এইসব ক্ষেত্রে কিছু কিছু অলৌকিক কাহিনীর সংযোজন করা হয়েছে; মনে হয় না ওগুলো অরিজিনাল রচনা; ওগুলো পরের সংযোজন বা প্রক্ষিপ্ত...

০২

হিন্দু ধর্মের চতুবর্ণ ভেতপ্রথাটার প্রাকটিক্যাল উদাহরণ আমি তেমন কোথাও পাইনি; আসোলে আরো অনেক বেশি বর্ণ সব সময়ই ছিল। কোথাও সেগুলো মানা হতো আবার কোথাও খেয়ালই করা হতো না

০৩

পুরাপুরি প্রমাণ পাইনি; কিন্তু আমার মনে হয় মানুষকে চতুবর্ণে ভাগ করা হয়েছিল কোনো এক যুদ্ধের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য; চার গোত্রের চারটা দায়িত্ব দিয়ে; পরে সেই গাছ কেটে ফেলে দিলেও গোড়া থেকে যায়

০৪
মহাভরত- সিন্ধুসভ্যতা- হিন্দুধর্ম- আর্য-অনার্য এই বিষয়গুলোর জন্য ড. অতুল সুরের বইগুলো দেখতে পারেন। বিশেষ করে তার 'মহাভারত ও সিন্ধু সভ্যতা' 'ভারতের বিবাহের ইতিহাস' 'ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়' 'বাঙলা ও বাঙালির বিবর্তন' হিন্দু সভ্যতার নৃতাত্ত্বিক ভাষ্য' 'সিন্ধু সভ্যতার স্বরূপ ও অবদান' এই বইগুলোতে অনেক কিছুরই উত্তর আর বিশ্লেষণ পেয়ে যাওয়া যাবে

বাংলা একাডেমি থেকে সাম্প্রতিকালে প্রকাশিত সুপ্তিকণা মজুমদারের 'বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ' বইটাও একটা অসাধারণ বই; বিশেষত বর্ণপ্রথা নিয়ে এর চ্যাপ্টাগুলো আপনার প্রশ্নের সাথে সরাসরি মিলে যাবে

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ স্যার, বিস্তারিত ভাবে জবাব দেয়ার জন্য।
পশ্চিমে এসে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে একটা জোক শুনেছি;
এক সাধু তার সাধনা পূর্ণ করে সিদ্ধি লাভ করেছে। এখন ঈশ্বরের কাছে সে বর চাইতে পারে। কী বর চাইবে অনেক ভেবে চিন্তে সে বলল হে ভগবান; শুনেছি, দুনিয়াতে আমেরিকা নামে একটা জায়গা আছে, জায়গাটা দেখার আমার খুব ইচ্ছা। কিন্তু আমি কোন উড়ন্ত বাহনে চড়তে পারি পারি না, ভয় পাই। পানিতে ভেসে যে জাহাজ চলে তাতেও উঠতে পারি না। কারণ আমার অসুখ হয়।
একটু চিন্তা করে অবতার বললেন; তাহলে ভারত থেকে আমেরিকা পর্যন্ত তোমার জন্য একটা সেতু বানাতে হয়। কাজটা সহজ না মোটেই। তোমার কী অন্য কোন ইচ্ছে আছে?
সাধু বলল; আমি তো অনেক প্রর্থনা করেছি কিন্তু হিন্দু ধর্মটা ভাল করে বুঝিনি, তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও।
অবতার বললেন; স্বর্গের সব স্থপতিদের সভা ডেকে সেতু বানানোর দায়ীত্ব দেয়া হবে।
হিন্দু ধর্মের জটিলতা বুঝাতে এই জোক চালু আছে পশ্চিমে।
তো আশা করি "সুপ্তিকণা মজুমদারের 'বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ'" আমার মতো নাদান পাঠকের কথা ভেবে লেখা হয়েছে। সব চেয়ে ভাল হতো যদি আপনি এই ধরণের একটা বই এই লেখাটার মতো বাংলায় লিখতেন।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সুপ্তিকণা মজুমদারের বইয়ের ভাষাটাও খুব ঝরঝরে। পড়তে ঝামেলা হয় না। অতুল সুরের বইগুলো বেশ একাডেমিক- আবার বেশ কিছু পুরোনো বাংলা ব্যবহার করা। একবার লোভ হয়েছিল তা 'মহাভারত ও সিন্ধুসভ্যতা' সহজ বাংলায় তর্জমা করি। পিচ্চি এই বইটা আমার হিসাবে তার শ্রেষ্ঠ বই

পুতুল এর ছবি

"সুপ্তিকণা মজুমদারের বইয়ের ভাষাটাও খুব ঝরঝরে।"
শুনে ভরসা পেলাম।
"'মহাভারত ও সিন্ধুসভ্যতা' সহজ বাংলায় তর্জমা করি। পিচ্চি এই বইটা আমার হিসাবে তার শ্রেষ্ঠ বই"
কাজটা করে ফেলুন। দয়া করে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

রণদীপম বসু এর ছবি

বর্ণপ্রথার বিষয়টা জানতে হলে মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা-ই ভালো সোর্স। তবে এখানে এসব নিয়ে পরপর তিনটি পর্ব পাবেন যা থেকে আপনার বেশ কিছুটা কৌতুহল মিটতে পারে : http://horoppa.wordpress.com/2011/08/10/4390-gendar-and-hinduism-01/

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ স্যার
এই বিষযে আপনার সিরিজটা অসাধারণ; তবে মনে হয় মহাভারত সময়ে সমাজ মনুস্মৃতি থেকে কিছুটা সরে এসছিল...

০২
মনুস্মৃতিকে বেজ ধরে বর্ণপ্রথায় পরবর্তী সংযোজন বিয়োজনগুলা নিয়ে কিছু কাজ করেন না স্যার

রণদীপম বসু এর ছবি

মহাভারতের সময়ে সমাজ মুনস্মৃতি থেকে কিছুটা সরে এসেছিলো কিনা তা মনে হয় দুটি দিক থেকে ভাবতে হবে। মহাভারত হলো মূলত রাজরাজরাদেরকে ঘিরে কাহিনীবৃত্ত। ভারতীয় সমাজে কোনকালেই রাজাদের জন্য শাস্ত্রীয়বিধান কড়াকড়ি ছিলোনা, বরং তাদের সুবিধার্থেই তৈরি হয়েছে। যদিও মনুতে রাজাদের জন্যেও বিধান আছে, কিন্তু বর্ণপ্রথাটা মূলত তৎকালীন সমাজ ও রাজ্যশাসনের সুবিধার্থেই করা হয়েছে বলে সমাজের নিচের দিকের জন্যেই বিধানগুলো অবশ্যমান্য হিসেবে খুবই অমানবিকভাবেই কড়াকড়ি ছিলো। তাই আমরা মনে হয় মহাভারতের ঘটনাবলির সাপেক্ষে তৎকালীন মনু-ব্যবস্থাটার প্রকৃত চিত্র পাবো না। তারপরও বিষয়টা অবশ্যই ভাবার মতো।

তবে এখন চার্বাক আর ভারতীয় দর্শন নিয়ে দিগ্বিদিক সাঁতরাচ্ছি ! আগে এই দরিয়া পার হয়ে নিই, পরে ভাববো যে সেইটা হেডমে কুলাবে কিনা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আহা। একবার আমার পিএইচডি করার খায়েশ হইছিল। বাইছা নিছিলাম চার্বাক। প্রপোজালের খসড়া নিয়া অধ্যাপকগো কাছে গেলে তারা আমারে খেদাইয়া দিলো- নাস্তিক ফাস্তিক নিয়া চিন্তা করার দরকার কী' কইয়া
আমারে তারা সাজেশনও দিলো- 'আমি না লইলাম আল্লাজির নাম রে' এইরকম গানগুলারে নিয়া হাছন রাজার মরমীবাদের উপর গবেষণা করতে....

যখন এইগুলা নিয়া ভাবছেন তখন একটা লাইন যোগান দেই- বহুঈশ্বরবাদ মূলত একধরনের নিরীশ্বরবাদ' এই চোখ নিয়া লোকায়ত বিষয়গুলা একটু ভাইবেন সময় পাইলে

রণদীপম বসু এর ছবি

আসলেই তাই। আমাদের আউল-বাউল এই সহজিয়ারাই মূলত এই ধারাটাকে লালন করে আসছে। এবং এটাই আমাদের সংস্কৃতির শেকড়-বাকর। এজন্যেই তো কট্টর ধর্মবাদীরা লালন-শিষ্য কিংবা সিলেটে বাউলদের প্রতি হামলা চালায়, মাথা মুণ্ডিত করে কিংবা খুনও করে ফেলছে !

আপাতত দর্শনের কাজটা শেষ করে নেই। পরে আপনার প্রস্তাবিত বিষয়টা, বহুকাল থেকেই আমার আকর্ষণের বিন্দু হয়ে আছে। এই বহুঈশ্বরবাদিতা আছে বলেই প্রাচীন হিন্দু ধর্মে নাস্তিক্যটা কিন্তু গুরুতর অপরাধ হয় না। অন্য অর্থে তাই অনেক জবরদস্ত দার্শনিক নাস্তিক হলেও খারিজ হয়ে যান না, বরং যুক্তি দিযে তাদেরকে পরাস্ত করার প্রক্রিয়াটা দর্শন জগতটাকেই সরব করে রেখেছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীলকান্ত এর ছবি

গুরু গুরু


অলস সময়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ

স্পর্শ এর ছবি

আপনার বর্ণনায় দারুণ লাগলো গল্পটা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ ভাইজান

mamun এর ছবি

ভাইয়া দ্বীতিয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চাইছিলাম আজকে আর কোন পড়াশোনা করমু না। আর আপনি আজকেই নামাইলেন সেরাম একটা লেখা চাল্লু

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খালি কাহিনীতেই এই অবস্থা? সিনেমা হইলে কী অবস্থা হইত?

খালি কল্পনা করেন তো; বম্বের নায়িকা দিপিকা বেলাউজ ছাড়া শাড়ি পরে ঘাটে নৌকা চালায় আর রাজা শান্তনুর ভূমিকায় এটিএম শামসুজ্জামান তার সামনে খাড়াইয়া কয়- আমি তুমারে বিয়া করবার চাই...

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

স্যাম এর ছবি

হাততালি চলুক

এরিক এর ছবি

মনে হইল একসাথে বইসা গফ পারতেসি আপনার লগে। লেখা অসাধারণ !

হাসিব এর ছবি

সত্য ঘটমা অবলম্বনে কাহিনী?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আরে না। আরেক বেডার লেখা পুস্তকের উপ্রে কচকচানি। সত্যমিথ্য কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন জানে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিচিত্রবীর্য কি যক্ষ্মায় মরছে নাকি অন্য কোন রোগে? আমার কিঞ্চিত সন্দো আছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুস্তকে তাই আছে। তবে তার আগে দুই বৌ পেয়ে সাত বছর যথেচ্ছা যৌনাচারের কথাও বলা আছে। কিন্তু শেষে আবার বলা আছে যক্ষ্মায়ই মরেছে সে

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এম্নে কি আর ইজ্জত বাঁচবো? বিয়ার আগে থেইকাই যা শুরু করছিলো তাতে দুই বিয়া কইরাও কোন সন্তান পয়দা কর্তে পারে নাই। আকলমন্দ দুইয়ে দুইয়ে চাইর ঠিকৈ মিলাইতে পার্বো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ওইটা কিছু না। রাজপুত্রদের বিভিন্ন বিষয়ে আগাম প্রশিক্ষণ নিতে হয়

অতিথি লেখক এর ছবি

হো হো হো

ফারাসাত

কড়িকাঠুরে এর ছবি

পড়তে বইলাম...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খালি পড়লে হবে না। মাঝে মাঝে দুয়েকটা আওয়াজ দিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
মাহ্বুবুবো লীলেন ভনে শুনে পুণ্যবান॥

মহাভারতের কথা শুনে অনেক অনেক নেকী হাসিল হইল, ধন্যবাদ।
আলাপচারিতায় বলেছেন-'মহাভারত হচ্ছে মানবাজিতর প্রথম রাজনৈতিক ইতিহাস'। সেই সংগে মহাভারত মানবজাতির প্রথম নৃতত্ববিদ্যাও বোধ হয়। ভারতীয় জাতিসত্বা, ধর্ম, কৃষ্টি ও সভ্যতায় অনার্য প্রভাব যে কতটা ব্যাপক, কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন কতৃক মহাভারত রচনাই তার প্রকৃষ্ট উদাহরন।

আব্দুল্লাহ এ.এম.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারত নৃতত্ববিদ‌্যা না হলেও এ অঞ্চলের নৃতত্ত্বের খনি নিঃসন্দেহে। সাধারণ বর্ণনার আড়ালে ওখানে প্রচুর তথ্য পড়ে আছে; তা যেমন জাতির তেমনি সংস্কৃতির তেমনি টেকনলজির

তারেক অণু এর ছবি

সাবাশ, ! হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সত্যবতীর ছবি দেই নাই; তাও শাবাস [শাবাশ বানানে কোন শ/স আগে আর কোনটা পরে বসে?]

রণদীপম বসু এর ছবি

কাউরে সাব্বাশ দিতে স আর শ-এর ফেকড়ায় পড়লে কি আর শাব্বাস দেয়া হবে !! দিছি তো দিছিই !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

onindita এর ছবি

কিছুদিন থেকেই আপনি মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে লিখছেন। বিষয় হিসেবে খুবই চমৎকার । কিন্তু লিখন রীতি টা এমন কেন? এটা থেকে কি নাটক করার ইচ্ছে নাকি এভাবে নাটকের কাজ শুরু করে দিয়েছেন?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

লিখন রীতি কী স্যার?

onindita এর ছবি

হাসি এই যে কেমন কথ্য ভাষায় লিখছেন এটা আর কি। এটা কেন ব্যবহার করছেন সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাষা নিয়া খুব বিপদে আছি স্যার। নিজের নাম বললে লীলেন না হয়ে হয়ে যেত ইয়েন। তারপর মায়ের মাইর খেয়ে মুখ ত্যাড়াবেকা করে শিখলাম কিছু ভাষা। পরে শুনি ওইটা নাকি বাংলা না সিলেটি ভাষা। তারপর ইস্কুলে গ্রামারে ফেল করতে করতে আবারো মুখ ত্যাড়াবেকা করতে করতে শিখলাম আরো কিছু উচ্চারণ আর গ্রামার। এখন দেখি ওইগুলা জাদুঘরের ভাষা; বিটিভির সংবাদ পাঠিকারা ছাড়া কেউ ওই ভাষায় কথা কয় না। তাই অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম- আর যাই শিখি; বাংলাভাষা শিখমু না আর.... যা ইচ্ছা তা কমু আর কেউ কিছু জিগাইলে কমু- এইটাই বাংলার উত্তরাধুনিক গ্রামার...

onindita এর ছবি

কি জানি স্যার! আমার ভাষা নিয়ে আপনার এই এক্সপেরিমেন্ট গুলো কেমন যেন ভাল লাগছে না মন খারাপ আপনার আগের লেখাগুলো যেখানে এই ব্যাপারটা ছিল না সেগুলো পড়তে অনেক ভল লাগতো। এই যে এখানে ’যুধিষ্ঠিরকে’ না লিখে লিখছেন ’যুধিষ্ঠিররে ’। কথ্টা পড়তে বা শুনতে কেমন যেন হোঁচট খেতে হয়। তবে অনেক বিখ্যাত লেখা ও তো আঞ্চলিক ভাষায় আছে তাই না। আপনি সেটা করতে পারেন । কিন্তু
এটা কোন ভাষা! আরেকটা দিক আছে- সিরিয়াস বিষয় নিয়ে যদি এই ভাষায় লেখা হয় তখন মনে হয় সেই মেজাজটা আর থাকবে না। শুধুই মজা করা বা মজা পাওয়ার জন্যই লেখা মনে হবে।
আমি যদি ভুল করে না থাকি তবে আপনি নিজে কথা বলার সময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলেন এরকম কোথাও বলেছিলেন মনে হয়। এখন কি সেটাও বদলে ফেলেছেন? এসবই কি communicate করতে সুবিধা হয় বলে করা?
এসবই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আপনি কি ভেবে করছেন সেটা জানতেই এত কথা বললাম।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমিতো ভাষার গবেষক না স্যার; ভাষার কামলা। কিছু ইটকাঠ জড়ো করে দেখি কিছু হয় কি না গ্রামার ব্যাকরণ ভাষাগবেষক-বিশেষজ্ঞ-ইঞ্জিনিয়ার-শিল্পীদের কাজ.... তবে যে ভুলটা ধরিয়ে দিয়েছেন তা সত্যিই শুনতে খটকা লাগে... এর পরে যাই করি না কেন ধম্মপুত্রের সাথে চণ্ডালি ব্যবহার করব না নিশ্চয়তা দিলাম

onindita এর ছবি

কি যে বলেন! কাজের জায়গায় মানুষ কামলা হয় ঠিকই তবে আপনি তো লেখার ক্ষেত্রে কামলা নন। আপনি যত কিছুই যত ভাল ভাবে ই লিখেন না কে ন আমার মতে আপনি আগা গোড়া তো কবিই। কাজেই ভাষার সৌন্দর্য্য, ব্যাকরণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যারা কাজ করেন আপনি কিন্তু সেখানেও আছেন। সেই দায় তো এড়াতে পারবেন না স্যার হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

এককালের খুবই গুরুত্বপূর্ণ (এখনও গুরুত্বপূর্ণ বলে আমার ধারণা) কথাসাহিত্যিক মাহবুব-উল আলম নিজেকে বলতেন 'সাহিত্যে দিনমজুর'। তারই পুত্রবৎ বর্তমানের আরেক সাহিত্যিক রণজিৎ বিশ্বাস শ্রমজীবী সাহিত্যিক হিসেবেই নিজের পরিচয় দেন। অতএব মজুর কি মজুর না সেই বিতর্ক চলুক নাহয়।

কিন্তু এখানে লীলেন ভাই'র ব্যবহৃত ভাষাটাকে নিরীক্ষামূলক ভাবতে সমস্যা কোথায় ? আপনি নিজেই একটা পরীক্ষা চালাতে পারেন। এই পোস্টটার ভাষারীতিটাকে আপনার মতো করে একটু অণুলিখন করে দেখতে পারেন লেখাটার বর্তমান হিউমার আর আকর্ষণটা অক্ষুণ্ন থাকে কিনা। কিংবা আরো বৃদ্ধি পায় কিনা। তাতে করে যৌক্তিকতার প্রশ্নটা তখন নমুনা সহকারে উপস্থাপন করতে সুবিধা হতে পারে।
একজন লেখকই সিদ্ধান্ত নেন তিনি তার বিষয় ও বিষয়ের প্রেক্ষিতে উপস্থাপিত বক্তব্যটা যথার্থভাবে পাঠকের ভেতরে পৌঁছাতে কোন্ ভাষাটা ব্যবহার করবেন। আর পাঠক হিসেবে আমাদেরও স্বাধীনতা রয়েছে লেখক এখানে সফল না ব্যর্থ হচ্ছেন তা খুঁজে দেখায়। সেক্ষেত্রে পাঠককেও কখনো কখনো মজুরের ভূমিকা নিতে হয় তার নিজস্ব ধারণার যৌক্তিকতা যাচাই করতে। এ এক মজার খেলা ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খালি সিলেটি বাংলার উচ্চারণগুলা বাংলায় ঠিকমতো আসে না। নাইলে আমি কিন্তু সিলেটিতেই লিখতে শুরু করতাম। তখন ভাষা নিয়া আলাদা সময় নষ্ট করতে হইত না; খালি বিষয় নিয়াই ভাবতে পারতাম। কারণ ইস্কুলে শিখা বাংলা শব্দ খুজতে আর বানান ঠিক করতে এখনো আমার ৬০ ভাগের বেশি সময় চইলা যায়

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ। পরের পর্বের জন্য চানাচুর আর ঝালমুড়ি নিয়ে বসলাম।

ফারাসাত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আইসবে; যদি কিছু মুড়ি আমারেও দেন

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

খুব ভাল লাগল । পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পরের পর্বটা বেশ ঝামেলার। সত্যবতী দেখে গেছে তিন জেনারেশনের মুখ। কুন্তী তার ছেলের নাতি পর্যন্ত সক্রিয় ছিল... বড়োই দীর্ঘ তার যাত্রা...

খেকশিয়াল এর ছবি

দারুণ লীলেনদা! পরের পর্বের জন্য বসলাম এখন হাসি

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। খালি বইবাই তো। তোমার না দেবাসুর নিয়া কী একটা লেখার কথা ছিল?

খেকশিয়াল এর ছবি

লেখুম লীলেনদা, পড়তাছি, অনেক পড়া বাকি এখনো, আপনার কিছু হেল্প লাগবে বই নিয়া, আপনারে ফোন দিমু এর মধ্যে

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

রণদীপম বসু এর ছবি

হ, শিয়ালের কাছে মুরগির ভাগ চায় লীলেন ভাইয়ে ! আমি তো বাল্যকাল থিকাই শুনতেছি তিনি কী একটা নিয়ে লিখবেন !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আয়নামতি এর ছবি

দারুণ হচ্ছে কিন্তু চলুক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

কাহিনির আড়ালের কাহিনি উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

-অয়ন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটা কাহিনীর আড়ালের কাহিনী না; কাহিনীর সামনের কাহিনী

কীর্তিনাশা এর ছবি

আহ্ মাহবুব লীলেন
কী দারুণ লেখাই দিলেন !!

পড়ের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম গুরু ।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বেদযুগে আর্যরা একলোকরে কইত সিদ্ধিনাশা। সেই লোকটা লোকাল পাব্লিক; অনার্য-অসুর। আর্যদের হাতি বাহিনীর সামনে তার ছিল বিশাল হস্তিবাহিনী; তার সাথে তার ছিল পাব্লিক সাপোর্ট। সেইযুগে সবাই রাজা মহারাজা হলেও তার উপাধি ছিল গণপতি। সে ছিল জনগণের নেতা। আর্যরা জমিজামা দখল করার জন্য যতই সিদ্ধি অর্জন করেত চাইত গণপতির সামনে গিয়া সব ম্যান্দমেরে যেত। এইজন্য এরে তারা ডাকতো সিদ্ধিনাশক হিসেবে। কিন্তু হঠাৎ এক সময় আর্যরা খেয়াল করল আরেক অনার্য মাইমলপুত্র তাদেরকে নিয়ে মুখে মুখে আঠারোটা পুরাণ আর একখান মহাভারত রচনা করে ফেলেছে। কিন্তু মুখে মুখে থাকার কারণে যে যার মতো করে তা এডিট করে আর বর্ণনা করে। পুস্তকগুলার একটু লিখিত রূপ থাকা দরকার। কিন্তু লিখবে কেডায়? আর্যরা তো নিরক্ষর। তাদের কোনো বর্ণও নাই; ভাষার লিখিত ফর্মও নাই। সেইটা আবার আছে সেই অনার্য গণপতির...

সেই গণপতিরে গিয়া এইবার আর্যরা ধরল- বাবারে আমাদের পুরাণ আর মহাভারতখান লিখা দে... গণপতি আঠারোখান পুরাণ আর পুরা মহাভারতের লিখিত রূপ দিয়ে আর্যসমাজরে সারাজীবনের জন্য ধন্য করে দিলো.... আর তার বিনিময়ে আর্যরা তারে সিদ্ধিনাশক থেকে দেবতায় প্রমোশন দিয়ে বানাইলো 'সিদ্ধিদাতা' গণপতি হয়ে গেলো গণেশ....

তা কীর্তিনাশারও কি ওমন কোনো কাহিনী আছে নাকি?

কীর্তিনাশা এর ছবি

কী এর লগে কী অ্যাঁ

কুথায় আগরতলা আর কুথায় খাটের তলা !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

পুতুল এর ছবি

আরে! কীর্তানাশা এসেগেছে! এই কে আছিস পান-তামুক দে।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

কীর্তিনাশা এর ছবি

আমি তো সব সময় এখানেই আছি পুতুল ভাই। কোথাও তো যাই নাই হাসি

তয় পান-তামুক দিতে কইছেন, দেন খাই। বাঙালি তো মাগনা পাইলে নাকি আলকাতরাও ....... দেঁতো হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

এই কাহিনী আর পার্বতী/মহাদেবের পুত্র কাহিনীর সিনক্রোনাইজেশনটা কি ভাবে হলো? সেটাও কি আর্যদের এডিটিং কারসাজি? আর গণপতি বাবাজীই বা এমন ফেক দেবত্বগাঁথা চোখ বন্ধ করে কিভাবে লিখে গেলেন?

আব্দুল্লাহ এ.এম.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাংলা হিসাব মতে মহাদেব পার্বতীর কোনো ছেলেপুলে নাই। সবই সেইযুগের ফটোশপের কাজ; বর্তমান হিন্দুধর্ম বৈষ্ণবপ্রভাবিত; যদিও শিবের দাপট কোনোভাবেই কম না। কিন্তু সমস্ত পৌরাণিক যুগ; আর রাম-কৃষ্ণসহ সকল পৌরাণিক মহানায়কেরা শিবপূজারি;

সিস্টেম অনুযায়ী বিষ্ণুর বৌ আছে কিন্তু কোনো পোলাপান নাই। বিভিন্ন সময় তিনি নিজেই জন্মান অবতার হয়ে... তার সবচে বিখ্যাত মানুষ অবতাররা হলেন কৃষ্ণ আর রাম। সময়ে অন্য প্রাণীতেও তার অবতার আছে

শিবের কোনো অবতার নাই। তিনি বিশ্বপিতা। জঙ্গলে থাকলেও এক্বেবারে এক গেরস্থ মানুষ। তার পোলাপানের হিসাব কিন্তু বেসুমার। কোথাও কোথাও পোলাপান পাওয়া গেলে তাদের মা খুজে পাওয়া যায় না; কোথাও মা হিসাবে কাউরে পাওয়া গেলেও দেখা যায় মায়ের থেকে ছেলেমেয়ের বয়স বেশি।

বাঙাল শিবের স্ত্রী দুর্গা। তার আবার চারপোলাপান; কার্তিক গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতী। কিন্তু অন্য কাহিনীতে দেখা যায় শিবের সাথে পার্বতীর বিয়ের পর এই লক্ষ্মী আর সরস্বতীই পার্বতীরে বধূবরণ করেছে... এক্কেবারে লালনের গানরে মতো- মায়ের আগে ঝিয়ের জন্ম। এখন যিনি পার্বতী তিনিই দুর্গা মানলে কাহিনী এক্বেবারে তালগোল পাকিয়ে যায়। হিসাব অনুযায়ী দুর্গা কালী কিন্তু পার্বতীর কোনো জন্ম না; বিশেষ পরিস্থিতিতে একেকটা রূপ.... তো?

পাবর্তী কিন্তু নিঃসন্তান। অন্তত আমার হিসেবে। পুরাণের কাহিনীতেও। তার সবপোলাপান [কার্তিক গণেশসহ] কেউই তার গর্ভজাত সন্তান না...

আর শিবের আরেক বিখ্যাত কন্যা হলো মনসা। কিন্তু কেমনে?

শিবের কিন্তু আরো কিছু কম বিখ‌্যাত পোলাপানের নামে পেয়েছি আমি বিভিন্ন জায়গায়। মনে হয় বিভিন্ন লোকাল দেবতাকে বিভিন্ন সময় বড়ো দেবতা শিবের পরিবারে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে...

০২

গণপতি কেমনে দেবত্ব মাইনা লইল তা আমারে ক্যান? গণেশরে গিয়া জিগান

কীর্তিনাশা এর ছবি

এইগুলা কী কন গুরু ইকটু বুঝাইয়া কন, মাথা তো ঘুরতাছে বনবন্ ! অ্যাঁ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

অতিথি লেখক এর ছবি

গনেশের জন্মের পৌরানিক উপাখ্যান তো এইরকম-
মহাদেব দেবতাদের পক্ষে যুদ্ধ করতে গেছেন, ঘরে পার্বতী একলা। এই অবসরে পার্বতী স্নান করতে মনস্থ করলেন, এখন কোন উটকো লোক যাতে তারে স্নানরতা অবস্থায় না দেখে, সেইজন্য পাহারায় রাখলেন নন্দীরে(শিবের বাহন ষাঁড়)। এদিকে শিব যুদ্ধের একফাঁকে পার্বতীরে দেখার জন্য বাসায় আইসা দেখেন পার্বতী স্নান করতেছে, পাহারাদার নন্দী সঙ্গত কারনেই এই ক্রিটিকাল মুহুর্তে শিবেরে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয় নাই। কিন্তু পার্বতী কর্তব্য কর্মে নন্দীর এহেন দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য যারপরনাই ক্ষুদ্ধ হলেন। যাই হোক, পার্বতীকে দেখা শেষ করে শিব আবার যুদ্ধে গেলেন, পার্বতী আবার স্নান করতে মনস্থ করলেন, কিন্তু এিবার আর নন্দীর উপর আস্থা রাখতে পারলেন না। স্নানের জন্য গায়ে যে কাঁচা হলুদ মেখেছেন, তাই দিয়ে সৃষ্টি করলেন গনেশকে। শিব যুদ্ধ করতে করতে আবার পার্বতীকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে কৈলাসে চলে এলেন, কিন্তু এইবার পার্বতী পাহারায় রাখছে গনেশরে, সে তো আর নন্দীর মত বলদা না। তাই সে পার্বতীর স্নানরতা অবস্থায় তার স্বামীরেও বাসার ভিতরে ঢুকতে দিল না। বেশ একটা যুদ্ধ হলো, গনেশের মাথা কাটা পড়লো, পার্বতী পুত্র(?) শোকে পাগলীনি প্রায়, শিব মহা অপ্রস্তত, ব্রহ্মার মধ্যস্থতায় হাতীর মস্তক ধারন করে গনেশের পুনঃজীবন লাভ।
এখন সিনক্রোনাইজেশন দেখেন-

Parvati is a form of Devi, the Parashakti (Supreme Energy). In the human body She resides in the Muladhara chakra as the Kundalini shakti. It is said that when we purify ourselves, ridding ourselves of the impurities that bind us, then the Lord automatically comes. This is why Shiva, the Supreme Lord, came unannounced as Parvati was bathing.

Nandi, Shiva’s bull, who Parvati first sent to guard the door represents the divine temperment. Nandi is so devoted to Shiva that his every thought is directed to Him, and he is able to easily recognize the Lord when He arrives. This shows that the attitude of the spiritual aspirant is what gains access to Devi’s (the kundalini shakti’s) abode. One must first develop this attitude of the devotee before hoping to become qualified for the highest treasure of spiritual attainment, which Devi alone grants.

After Nandi permitted Shiva to enter, Parvati took the turmeric paste from Her own body, and with it created Ganesha.. Yellow is the color associated with the Muladhara chakra, where the kundalini resides, and Ganesha is the deity who guards this chakra. Devi needed to create Ganesha, who represents the earthbound awareness, as a shield to protect the divine secret from unripe minds. It is when this awareness begins to turn away from things of the world, and toward the Divine, as Nandi had, that the great secret is revealed.

Shiva is the Lord and Supreme Teacher. Ganesha here represents the ego-bound Jiva. When the Lord comes, the Jiva, surrounded as it is with the murky cloud of ego, usually doesn’t recognize Him, and maybe even ends up arguing or fighting with Him! Therefore, it is the duty of the Lord, in the form of the Guru, to cut off the head of our ego! So powerful is this ego however, that at first the Guru’s instructions may not work, as Shiva’s armies failed to subdue Ganesha. It often requires a tougher approach, but, eventually the compassionate Guru, in His wisdom finds a way.

Devi threatened to destroy the whole Creation after learning of Ganesha’s demise. This indicates that when the ego thus dies, the liberated Jiva loses interest in its temporary physical vehicle, the body, and begins to merge into the Supreme. The physical world is here represented by Devi. This impermanent and changeable creation is a form of Devi, to which this body belongs; the unchanging Absolute is Shiva, to which belongs the Soul. When the ego dies, the external world, which depends on the ego for its existence, disappears along with it. It is said that if we want to know the secrets of this world, which is a manifestation of Devi, then we must first receive the blessings of Ganesha.

Shiva restoring life to Ganesha, and replacing his head with an elephant’s, means that before we can leave the body, the Lord first replaces our small ego with a “big”, or universal ego. This doesn’t mean that we become more egoistic. On the contrary, we no longer identify with the limited individual self, but rather with the large universal Self. In this way, our life is renewed, becoming one that can truly benefit Creation. It is however only a functional ego, like the one Krishna and Buddha kept. It is like a thin string tying the liberated Consciousness to our world, solely for our benefit.

গণপতির সিনক্রোনাইজেশন দেখেন-

Ganesha is given dominion over the Ganas, which is a general term denoting all classes of beings, ranging from insects, animals and humans to the subtle and celestial beings. These various beings all contribute to the government of the Creation; everything from natural forces like storms and earthquakes, to the elemental qualities like fire and water, to functioning of the body’s organs and processes. If we don’t honor the Ganas, then our every action is a form of thievery, as it is unsanctioned. Therefore, instead of propitiating each Gana in order to receive their blessings, we bow to their Lord, Sri Ganesha. By receiving His grace, we receive the grace of all. He removes any potential obstacles and enables our endeavors to succeed.

গণপতি কেমনে দেবত্ব মাইনা লইল তা আমারে ক্যান? গণেশরে গিয়া জিগান

জিগাইছি, সোজা কথায় জবাব দেয় না, ইতং বিতং কয়। চিন্তিত

আব্দুল্লাহ এ.এম.

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটা অনেক কাহিনীর একটা। আচ্ছা বলেন তো গণেশ বড়ো না কার্তিক?

কোথাও কোথাও কার্তিক বড়ো কোথাও গণেশ
প্রায় সব জায়গাতেই পার্বতীর সাথে কার্তিক আছে কিন্তু গণে কিন্তু সব জায়গায় নাই

০২

পার্বতীর সব কাহিনীতেই- পোলা চাই পোলা চাই হাহাকার আছে; কিন্তু পার্বতী গর্ভধারণ করতে পারে না [কাহিনীমতে কামদেবের বৌ রতির অভিশাপে; বিস্তারিত খোজ নিলে শিবের ধ্যানভঙ্গ অনুসন্ধান করেন]

তো শিব আলাভোলা মানুষ। সে পোলাপান নিয়ে গেরস্থ হতে চায় না [যে কাহিনীতে কার্তিক নাই এবং তারকাসুরকে মারার জন্য কার্তিকরে জন্ম দিয়ে দেবতাদের সেনাপতি বানাবার কাহিনী নাই; এইটা সেই কাহিনী]

এই কাহিনীতে শিব পোলপান চায় না কিন্তু পার্বতী ঘেনঘেন করে। পরে শিব ক্ষেপে গিয়ে তার মাথার জটা থেকে একটা চুল খুলে পার্বতীর কোলে ছুড়ে মেরে বলে- এই নাও পোলা...

পাবর্তীর কোল জুড়ে হাসে গণেশ। তাই দেখে ভোলাশিব আনন্দে পোলারে কোলে নিয়ে শুরু করে নাচন। নাচতে নাচতে আলাভোলার হাত থেকে পোলা পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে মরে যায়...
পোলারে বাঁচানোর জন্য সন্ধান করা হয় উত্তর না দক্ষিণ দিকে যেন মাথা করে থাকা কোনো প্রাণীর....

শিবের সবকিছুর দায়িত্ব যেমন নন্দীর [এর পুরা নাম কিন্তু সুবীর নন্দী; যদিও আমাদের শিল্পী সুবীর নন্দীর সাথে তার কোনো সম্পক্ক নাই] এই কাজের দায়িত্বও পড়ে নন্দীর উপর
সে কোথাও কোনো মানুষ না পেয়ে ইদ্রের হাতি [ঐরাবত] [কোথাও কিন্তু বৃহ্মার হাতি] এর মাথা কেটে নিয়ে আসে [ইন্দ্র হাতির মাথা দিতে রাজি হয় না সেজন্য নন্দী কিন্তু ইন্দ্ররে কিলিয়ে ভালোমতোই ভর্তা বানায় এখানে]

তারপর সেই হাতির মাথা আর পোলার শরীর মিলে হয় গণেশ...

এর কিন্তু আরো কাহিনী আছে....

কিন্তু পেটুক গণেশ- বণিক গণেশ- গণপতি গণেশ আর জ্ঞানী গণেশ/লেখক গণেশের কাহিনী মিল করতে গেলে কিন্তু আবার মাথা আউলা ঝাউলা হয়ে যায়...

সুতরাং বাবা গণেশ নিয়া যাই কাহিনী থাকুক না কেন; ওগুলাও তার ধড়ের সাথে মাথার জোড়া দেবার মতো প্রাচীন ফটোশপের কাজ

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক
কার্তিক আর গনেশ নিয়ে বোধহয় ভারতব্যাপী নানারকম ষ্ট্যান্ডার্ড প্রচলিত আছে(অবশ্য অন্যান্য দেবদেবীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য)। মহারাষ্ট্রে গনেশ সর্বাধিক পুজিত তো দক্ষিনে কার্তিক (মুরুগান নামে)।
গনেশ এর জন্ম বিষয়ে এক ব্লগে এক মজার তথ্য এবং সে সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন দেখেছিলাম-
তথ্যঃ অতপর দেবী পার্বতী স্নানরতা অবস্থায় শরীর মর্দন করিতেছিলেন এবং শরীর হইতে যে ময়লা নির্গত হইতেছিল তাহা সংগ্রহ করিয়া তদ্বারা তিনি একটি বালকের পুত্তলিকা নির্মান করিলেন............।
প্রশ্নঃ দেবী পার্বতীর শরীর হইতে এত বিপুল পরিমান ময়লা নির্গত হইত কেন?

শিবের সবকিছুর দায়িত্ব যেমন নন্দীর [এর পুরা নাম কিন্তু সুবীর নন্দী;

দারুন তথ্য!

আব্দুল্লাহ এ.এম.

রণদীপম বসু এর ছবি

লীলেন ভাই, গনেশের মাথা নিয়া কিন্তু আরো কাহিনী আছে !
ভাগনে গনেশকে সব বিপদ আপদ থেকে নিরাপদ রাখতে আশির্বাদ করতে এলেন শনি মামা। বহুত আদর করে ভাগনেকে কোলে নিয়ে আশির্বাদ করতে গিয়ে যেই না শনির দৃষ্টি পড়লো ভাগনের মুখে, অমনি মাথাটা খশে পড়লো মাটিতে। যারে কয় শনির দৃষ্টি ! হা হা হা ! কী আর করা, পার্বতি তো থাবা দিয়ে ধরলেন ভাইরে, তুই আমার পোলার এই কী করছস !! অতঃপর উপায় দেয়া হলো, সূর্যোদয়ের প্রথম ক্ষণে যাকে প্রথম পাওয়া যাবে তার মাথাটা এনে লাগালে গনেশ ফের জীবন ফিরে পাবে। সেই মতে পাওয়া গেলো হাতিটারেই ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাইরে; অন্য যারে নিয়া ইচ্ছা আমারে লিখতে কন আমি রাজি
কিন্তু গণেশরে নিয়া না
কাহিনী তো কাহিনী। এখন পর্যন্ত আমি গণেশের জন্ম কাহিনীই পাইছি ২২টা; যার মধ্যে ১০-১২টায় তার মা-বাপ শিব-পার্বতী আর বাকিগুলায় অন্তত আরো ডজনখানেক মানুষ...

সবজান্তা এর ছবি

লীলেন ভাই, আমি যতোদূর জানি- বৈদিক যুগের অনেক শ্লোকেই গনেশকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হয়েছে- বেশ 'ইভিল' একটা উপস্থাপন ছিলো। পরে কোনোভাবেই তাকে সাইজ না করতে পেরে নিজেদের দলে টেনে এনেছে। বেশ ভালো বুদ্ধি।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গণেশ বৈদিক বেশিরভাগ রচনাতেই পরিচিত ছিল 'সিদ্ধি নাশক' রাক্ষস হিসাবে

রণদীপম বসু এর ছবি

সবজান্তা, এ বিষয়ে বহু তথ্য তো দেবীপ্রসাদের 'লোকায়ত দর্শন' বইটারই অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সবজান্তা এর ছবি

হে হে ... রণদা তো একবারে সোর্স ধইরা ফেলছেন। আমি তো ওই কমলা রঙের মোটকা বইটা পড়েই জ্ঞান অর্জন করছিলাম। বইটা দুর্দান্ত- ইন ফ্যাক্ট, গনেশের ইতিহাসটুকু দুর্দান্তভাবে ব্যাখ্যা করা। ভারতীয় দর্শন আর ইতিহাস নিয়ে আমার পড়া অন্যতম সেরা বই হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পঞ্চপাণ্ডবের জন্ম দেবগণের ঔরসে উল্লেখ থাকলেও কোন কোন ব্যাখ্যাকারের মতে তাঁদের জন্ম, বিদুদের ঔরসেই।
পরের পর্ব তরাই আসুক। অনেক কিছুই জানছি। চলুক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটাতে আমি দ্বিমত করি স্যার। যুধিষ্টির বিদুরের ছেলে এইটা নিশ্চিত। কিন্তু ভীম আর অর্জুণের পিতা অন্যরা। এদের দেহের পুরা বর্ণনা দেখলে এদেরকে ভিন্ন ভিন্ন জতির রক্তের উত্তরাধিকারই মনে হয়। কুন্তী কালা মানুষ; তার ছেলে ভীমও না হয় কালো হলো; কিন্তু মুখে মাত্র দুইচারখান দাড়ি/প্রায় মাকুন্দা এই ভীম তো জটাজুটদাড়িগোফওয়ালা দ্বৈপায়নের ছেলে বিদুরের বংশ হবার কথা না? অর্জুনের দেহের বর্ণনায় কিন্তু তারেক এরিয়ান বংশাজতই মনে হয় [কোনো শিকারী জাতি? নাকি অন্যকোনো বনবাসী এরিয়ান বংশধর?]

দুর্দান্ত এর ছবি

"বনবাসী এরিয়ান" এর ঘটনা বুঝলাম না। এরা কারা?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আর্যদের মধ্যে কোনো শিকারি... কিংবা সাময়িক সময়ের জন্য বনে থাকা মানুষ... কিংবা গরুর পাল নিয়ে বনে থাকা দল। এদের সময়কালে প্রায় সকলেই মনে হয় কিছু না কিছু সময় কিছু না কিছু কাজে বনে থাকত বেশ কিছুদিন। এদের কথাই এক্কথায় বলে ফেললাম

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক মহাভারতের যেকোনো অনুলিখন ভালো লাগে।

মহাভারত নৃতত্ববিদ‌্যা না হলেও এ অঞ্চলের নৃতত্ত্বের খনি নিঃসন্দেহে। সাধারণ বর্ণনার আড়ালে ওখানে প্রচুর তথ্য পড়ে আছে; তা যেমন জাতির তেমনি সংস্কৃতির তেমনি টেকনলজির

ঠিক এইকারনেই আমার মহাভারতের যেকোনো লেখা ভালো লাগে।

রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারত এক ধরনের ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয়। নেশার মতো কাজ করে এই বইটা

শান্ত এর ছবি

পুরো মহাভারত এই ভাষায় পড়তে চাই চাই চাই। চমৎকার হয়েছে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বেশি আশা কইর না মনু। এই ভাষায় মহাভারত বর্ণনা করা গেলেও 'ধৃতরাষ্ট্র-জমদগ্নী-বিচিত্রবীর্য-অষ্টাবক্র... এই নামগুলারে কেমনে এই ভাষায় অনুবাদ করি?

অতিথি লেখক এর ছবি

অষ্টাবক্র = আটব্যাঁকা??
ধৃতরাষ্ট্র = ধরা খাওয়া রাষ্ট্র = ফাকিস্তান?? চোখ টিপি

ফারাসাত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কিন্তু ১৮ দিনের কুরু যুদ্ধে পাণ্ডবদের সেনাপতি ধৃষ্টদ্যুম্ন-র চলতি বাংলায় না কী হবে?
এরে বাদ দিলে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বাদ দিয়েই মহাভারত বর্ণনা করতে হবে
[এতে অবশ্য বর্ণনাটা বেশ মৌলিক হবে। কারণ দ্বৈপায়নের আদি মহাভারতে নাকি কুরুযুদ্ধ নিয়া কিছু আছিল না। আর বইটার নামও মহাভারত ছিল না; ছিল জয়]

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, মানে...

ফারাসাত

অতিথি লেখক এর ছবি

উপরে অনিন্দিতা যে ভাষা নিয়ে "কমপ্লেইন" করছেন আমার কিন্তু ওটাই "সেরম" লাগছে। জমে উঠেছে বেশ। পরের পর্ব চাই লীলেন দা।

- বিক্ষিপ্ত মাত্রা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আসিতেছে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাষা নিয়ে চিন্তা করি না। ওটা নিয়ে ইস্কুলে চিন্তা করতে গিয়ে রেজাল্ট পেয়েছি ধুমা ফেল...

০২

একেবারে লোকায়ত ভাষায় শিবের কাহিনী কিংবা মনসা/বেহুলার কাহিনগুলো কিন্তু আমার কাছে অসাধারণ লাগে... ওই ভাষার শার্পনেস যেকোনোভাবে শিবপুরাণ কিংবা পদ্মপুরাণ থেকে বেশি

দুর্দান্ত এর ছবি

"মাঝেমাঝে মনে হয় সেইকালে গ্রামবুড়াদেরই অন্য নাম ছিল রাজা..."
আমারো মনে হয়।
***
এই যে দ্বৈপা্যন আর দ্রৌপদির নামের আগে কৃ্ষ্ণ, এর মাজমা কি? বর্তমানের 'কালা জাহাঙ্গীর' অথবা "পাত্রীর গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা" - এইরকম কিছু?
***
উপস্থাপন ভাল লাগছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এরা কালা জাহাঙ্গীরেরই ভাইবেরাদর। মহাভারতের বেশিরভাগই তো কালো। দ্বৈপায়ন-কৃষ্ণ-দ্রৌপদী-ভীম-অর্জুণ সকলেই কালো। আর দ্বৈপায়ন যদি কালো হয় [এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই] তাহলে হয় পরাশর ছিল ভীমকালো না হয় সত্যবতী; দুজনের মধ্যে একজন নিশ্চয়ই কালো...

মহাভারতের কালা বন্দনা নিয়ে আমার এই লেখায় গুতা দিতে পারেন

তাপস শর্মা এর ছবি

অসাধারণ

এভাবেও বলা যায়, ভাবা যায় মহাভারতকে তা আপনাকে দেখেই শিখেছি দাদা। পরের পর্বগুলির অপেক্ষায় আছি। আপনাকে দেখেই শেখা, মহাভারত একটা রাজনৈতিক আখ্যান ভিন্ন কিছুই নয়

অটঃ কথাকলি আসা দরকার। অনেক লম্বা গ্যাপ হয়ে গেছে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মহাভারত আর পড়ব না পড়ব না করেও গড়ে প্রতি দুই বছরে একবার করে পড়া হয়ে যায়

ভাবছিলাম কুন্তী-দ্বৈপায়ন আর দুর্যোধনকে নিয়ে লেখার পরে মহাভারত আর ঘাঁটব না আমি
কিন্তু সাম্প্রতিককালে কৃষ্ণকে নিয়ে আবার ঘোরে পড়ে গেছি; সম্ভবত কৃষ্ণ-গীতা-কুরুযুদ্ধ নিয়েও কিছু একটা লিখব

শিবকে নিয়ে একটা লেখা আমার প্রায় খসড়া; কিন্তু সামলাতে পারছি না। এত বৈচিত্র আমি আর কোথাও কোনো দেবতার চরিত্রে দেখিনি....

০২

কথাকলি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু একটা মানসিক সংকটে ভুগছি। কথাকলির লোকজনের ছেলেমেয়েরা বড়ো হয়ে গেছে। এখন এই অবস্থায় তাদের বাপ মায়ের নাম ধরে কিছু লিখতে গিয়ে বেশ ঝামেলায় আছি....

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

মহাভারত পড়তে আমার খুব ভাল লাগে।
লেখার কথা আর কী বলব! অসাধারণ। পরের পর্বের জন্য বসে পড়লাম পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম নিয়ে।

উপরের মন্তব্যের অফ টপইকের সাথে একাত্মতা জানালাম। কথাকলি চাই। কথাকলি চাই।

অতিথি এর ছবি

"মহাভারত কিন্তু এখন অনলাইনে পাওয়া যায়। বাংলা ইংরেজি দুইটাই"

বাংলা মহাভারতের লিংক দেয়া যাবে?

শান্ত শান এর ছবি

মাহবুব লীলেন ভাই

আমি কোন কমেন্ট করি নাই কিন্ত না করে পারলাম না। ভাইরে কোন অবস্থায় লেখা বন্ধ করিয়েন না । যদি বন্ধ করে দেন তাহলে পুণ্যি পাওয়ার রাস্তা আমার বন্ধ হয়ে যাবে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এমন উৎসাহ পাইলে মানুষ আগুনেও ঝাপ দেয় আর এইটা তো একটা লেখা

০২

আপাতত একটা বড়ো অংশ অন্তত কাভার না করে শেষ করার পরিকল্পনা নাই
কারণ এইটা একবার বন্ধ করে কিছুদিন পর ফিরে আসতে গেলে আবার অনেকগুলা বইয়ের শতশত পাতা উল্টাইতে হয় কার আগে কে আর কার পরে কে সেই হিসাব বাইর করতে
সুতরাং অন্তত কুন্তী আর দ্রৌপদীর মৃত‌্যু পর্যন্ত একটানা যাইবার ইচ্ছা আছে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।