মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৬

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ১৩/১১/২০১৩ - ১২:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নারদের বুদ্ধিতে একেক ভাইয়ের ঘরে দ্রৌপদীর বার্ষিক পালা ঠিক হইবার পর অর্জুন যাইচা অপরাধ করে পাঁচ বচ্ছরের নির্বাসন-শাস্তি নিয়া পথে পথে তিনটা বিবাহ কইরা শেষে ফিরছিল দেশে। আর বনবাসের শুরুতেই আবার সে অস্ত্র সংগ্রহের নামে আরো পাঁচ বচ্ছরের লাইগা চইলা যায় দ্রৌপদী থাইকা দূরে। তাই এইবার অর্জুন ফিরা আসলে সমস্ত পালাটালা ভাইঙ্গা যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীরে বরাদ্দ দেয় অর্জুনের ঘরে। কিন্তু এই অর্জুন তো আর সেই অর্জুন নাই। পাঁচ বচ্ছরের অস্ত্রসংগ্রহকালে কোথায় যেন কী করতে গিয়া বিচি হারাইয়া ফিরতে হইছে তারে...

দ্রৌপদী হাসে- থাউক। সময়কালে দূর কইরা দিয়া অসময়ে কাছে আসার দরকারই বা কী?

আগে গেছে ছয় বছর। এখন আরো গেলো চাইর। এগারো বছরের শুরুতে ভীম কয়- এইবার তো আমাগের প্রস্তুতি নেওয়া লাগে। যুধিষ্ঠিরও যুক্তি মানে। ভীমের সংবাদ পাইয়া আবার আইসা হাজির হয় ঘটোৎকচ। অর্জুন খুইটা খুইটা ভাতিজার যুদ্ধ কৌশল দেখে। অর্জুনের যুদ্ধ করে লক্ষ্য নির্দিষ্ট কইরা। নির্দিষ্ট শত্র“ লক্ষ্যের ভিতরে না আসলে অস্ত্র উঠায় না সে। যেইখানে ভীমের কৌশল হইল গণমাইর; কে মরল আর কে বাকি থাকল তা দিনের শেষে গিয়া হিসাব করে সে। ...ঘটোৎকচ বাপের গণমাইর কৌশলের সাথে আয়ত্ব করছে তার মাতৃবংশের মায়াযুদ্ধের কৌশল। অর্জুন যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকায়- ঘটায় কিন্তু কর্ণরে ফাইট দিবার যোগ্যতা রাখে...

খুশিতে ডগমগ করে ভীম। ফকিন্নির পোলা কর্ণ তারে মাকুন্দা কইয়া গালি দিলেও সে তার কিচ্ছু করতে পারে নাই কোনোদিন। তার পোলায় যদি কর্ণরে কিলাইতে পারে তয় ভীমের থাইকা বেশি খুশি হইব না কেউ...

লোমশ থাইকা গেলেন গন্ধমাদনে। পাণ্ডবরা রওয়ানা দেয় ফিরতি পথে। সতিনের পোলা ঘটার কান্ধে চইড়া ফিরতে ফিরতে মুখ লুকাইয়া কান্দে পাঁচ পোলার জননী দ্রৌপদী। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণ অর্জুন সকলেই সর্বদা কর্ণরে ফাইট দিবার মতো যোদ্ধা খোঁজে। কৃষ্ণ আগে ইঙ্গিত দিয়া গেছে ঘটার শক্তি বিষয়ে। এইবার অর্জুন সেই ইঙ্গিতরে প্রায় সিদ্ধান্তে নিয়া গেছে; অর্জুনের আগে পাণ্ডব বংশের কেউ যদি কর্ণের মুখামুখি খাড়ায়; তবে নিশ্চিত সে হইব ঘটোৎকচ। ...কিন্তু দ্রোণ আর পরশুরামের শিষ্য কর্ণের সামনে কতক্ষণ টিকব স্বশিক্ষিত ঘটার রণ-কৌশল? ঘটার কান্ধে বইসা নিঃশব্দে তড়পায় দ্রৌপদী। তার অভিশাপ কি তবে সত্যিই ফলে যাবে একদিন?

বৃষপর্বার আশ্রমে এক রাইত আর বদরিকায় একমাস থাইকা সকলে কিরাতরাজ সুবাহুর রাজ্যে উপস্থিত হইলে ঘটা বিদায় নেয়। ভীম তার কান্ধে চাপড় দেয়- যা বেটা। পোলাগোরে নিয়া তৈয়ার হ। সংবাদ পাঠামু যুদ্ধের আগে...

ঘটোৎকচ বাপ-কাকা আর মায়েরে পেন্নাম কইরা গিয়া যুধিষ্ঠিরের সামনে খাড়ায়- তোমার ভাতিজা এখনই যুদ্ধের লাইগা তৈয়ারি জ্যাঠা; খালি নির্দেশখান বাকি....

যুধিষ্ঠির বুকে বল পায়। ঘটোৎকচের বাহিনী আসন্ন মহাযুদ্ধে পাণ্ডবপক্ষের নিশ্চিত প্রথম বাহিনী; কর্ণের সামনে খাড়াইবার মতো প্রথম যোদ্ধাও ঘটোৎকচ। যুধিষ্ঠির ঘটারে জড়ায়ে ধরে- সময় আসুক বাপ...

ঘটা বিদায় নিবার পর তারা আইসা উপস্থিত হয় যমুনার উৎপত্তিস্থান বিশাখযুপ। বিশাখাযুপে একবছর বাসকালে এইখানেও ঝামেলা করতে গিয়া ভীম বান্ধা খায় নহুষ বংশের কাছে আর আবারও যুধিষ্ঠির গিয়া হাত জোড় কইরা তারে ছাড়াইয়া আইনা সইরা আসে দ্বৈতবনে...

বারো বচ্ছর পূর্ণ হইবার মাত্র কয়েকমাস আগে কৃষ্ণ আবার আইসা হাজির হয় পাণ্ডবদের কাছে। এইবার সত্যভামা ছাড়া কাউরে সে সাথে আনে নাই। সকলরে সকলের কুশল বিনিময় কইরা কৃষ্ণ তাকায় যুধিষ্ঠিরের দিকে- মহারাজ। যাদবসেনারা যুদ্ধের লাইগা এখন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চাইলে এখনই আমরা যুদ্ধ কইরা আপনারে আপনের রাজ্য জয় কইরা দিতে পারি। আপনি ইচ্ছা করলে সেই রাজ্যে এখনই যাইতে পারেন আবার চাইলে বনবাসের মেয়াদ শেষ কইরাও হস্তিনাপুর ফিরতে পারেন...

তয় এইবার যুধিষ্ঠিরের অনুপস্থিতিতে কে তার রাজ্য শাসন করব সেই দিকে যায় না কৃষ্ণ। যুধিষ্ঠির তেমন কোনো উৎসাহ দেখায় না কৃষ্ণের কথায়। সে হালকাস্বরে বলে- অতদিন যখন অপেক্ষা করছি বাকি কয়টা দিন না হয় অপেক্ষায়ই করলাম। খামাখা কয়টা দিনের লাইগা আর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ না করি...

মুনি মার্কেণ্ড আইসা পড়ায় কথা আর বেশিদূর আগায় না। কৃষ্ণ আর পাণ্ডবেরা শুনতে থাকে মুনি মার্কেণ্ডের পুরাণ কথা আর সত্যভামা দ্রৌপদীরে নিয়া গিয়া আড়ালে খাড়ায়- তুমি তো পাঁচ পাঁচটা স্বামীরে সামলাইয়া রাখো; আমারে একটু বুদ্ধি দেওতো বইন যাতে কৃষ্ণরে আমি ধইরা রাখতে পারি?

দ্রৌপদী হাসে- ভাতার যদি টের পায় তুমি তারে বাইন্ধা রাখতে চাও তাইলেই কিন্তু সে পলাই পলাই করব। তুমি বরং স্বাভাবিক থাইকো। ...তয় মাঝে মাঝে যদি তারে বুঝাইয়া দিতে পারো যে তারে ছাড়া তুমি দুনিয়ার কাউরে পোছো না তাইলেই সোনায় সোহাগা। তবে একটা কথা; স্বামীর সামনে নিজের পোলাদেরও কিন্তু বেশি খাতির কইর না কোনোদিন...

বারো বচ্ছরের বাকি সময় পাণ্ডবরা দ্বৈতবনেই ঘর তুইলা থাকে। সংবাদ পাইয়া দুর্যোধনের মনে হয়- যাই নিজের চোক্ষে একবার পাণ্ডবগো দুর্দশা দেইখা আসি...

পাণ্ডবগো আস্তানার কাছেই ছিল দুর্যোধনের গোপপল্লী। দুর্যোধনের প্রস্তাব নিয়া কর্ণ আর শকুনি যায় ধৃতরাষ্ট্রের কাছে- এই বছর পালের গরুবাছুর তো গোনাগুনতি দরকার। মৃগয়ার জন্যও সময়টা উপযুক্ত। তাই দুর্যোধনের ঘোষযাত্রা আর মৃগয়ার অনুমতি প্রার্থনা করি মহারাজ...

আন্ধা ধৃতরাষ্ট্র চোখ পিটপিট করেন- প্রস্তাব ভালো আর দরকারিও বটে; কিন্তু শুনেছি গোপপল্লীর কাছেই এখন পাণ্ডবরা থাকে। যুধিষ্ঠির ঠান্ডা মানুষ; তোমাদের দেখলে সে কিছু বলব না। কিন্তু ভীমের মেজাজ আর পাঞ্চালীর রাগের কথা ভাইবা আমার বড়ো ডর লাগে। তোমরা সেইখানে গিয়া লাফালাফি করবা আর তারা বইসা থাকব এইটা ভাবতে আমার কষ্ট হয়। তাছাড়া শুনছি এর মধ্যে অর্জুন নাকি বহুত অস্ত্রও জোগাড় কইরা ফালাইছে...

শকুনি কয়- কথা দেই মহারাজ; পাণ্ডবরা যেইদিকে আছে সেইদিকে আমরা পাও বাড়াব না। আমরা খালি পালের গরুবাছুর গোনাগুনতি কইরা দুই চাইরটা শিকার সাইরা আবার ফিরা আসব ঘরে...

ধৃতরাষ্ট্র মিনমিন কইরা অনুমতি দিলেও দুর্যোধনরে ডাইকা কন- তোর যাওয়ার কাম নাই বাপ। তুই বরং ঘোষযাত্রায় অন্য লোকরে পাঠা...

কিন্তু অন্যের চোখ দিয়া কি আর ছাল-বাকলা পরা পাণ্ডব আর দ্রৌপদীর দুরবস্থা দেখা যায়? দুর্যোধন বরং বাড়ির সব বৌদের বস্ত্রে অলংকারে সাজুগুজু করাইয়া সাথে নিয়া রওয়ানা দেয় মৃগয়ায়। কৌরবদের শান শওকত দেইখা নিশ্চয় মনের জ্বালা আরেক কাঠি বাইড়া যাবে পাণ্ডব আর পাঞ্চালীর...

গেছে গরু বাছুর গুণতে আর শিকার করতে। তাই হাতেগোনা কিছু দেহরক্ষী আর কামলা গোছের মানুষ ছাড়া দুর্যোধনের লগে তেমন সৈন্যসামন্ত নাই। তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারে নাই যে পাণ্ডবদের আশেপাশেই মৃগয়ার নামে সৈন্যসামন্ত নিয়া অর্জুনের দোস্ত গান্ধর্বরাজ চিত্রসেন পাহারা দিতাছে তাদের। ...ঝামেলাটা সেইখানেই ঘটল। দুর্যোধনের খেলাধুলার ঘরবাড়ি বানাইতে গিয়া তার কামলারা মারামারি বাধইল চিত্রসেনের আর্মিগো লগে আর চিত্রসেন আইসা দিলো সব তছনছ কইরা। রথ হারাইয়া কর্ণ দিলো চম্পট আর চিত্রসেন দুর্যোধনরে লগে বাড়ির সব মেয়েদের বাইন্ধা রওয়ানা দিলো নিজের শিবিরে...

দুর্যোধনের চ্যালারা আইসা পড়ল যুধিষ্ঠিরের পায়- রক্ষা করেন মহারাজ। আপনার পরিবারের মেয়েদের ধইরা নিয়া গেছে চিত্রসেন। ভীম কয়- খারাপ কী? আমরা যা করতে চাই; চিত্রসেন তা আগেই কইরা ফালাইছে। ভালৈতো। কিন্তু বংশের নারীদের নিয়া চিত্রসেনের টানাটানি পছন্দ করে না যুধিষ্ঠির। সে ভীম আর অর্জুনরে পাঠায় তাগোরে উদ্ধার কইরা আনতে। অর্জুনরে দেইখা চিত্রসেন হাসে- কও দোস্ত। কী করতে হইব? অর্জুন কয়- মেয়েদের ছাইড়া দিয়া দুর্যোধনরে বাইন্ধা নিয়া চলো যুধিষ্ঠিরের কাছে...

ছাল-বাকলা পইরা বইসা আছে যুধিষ্ঠির আর তার সামনে রাজকীয় পোশাক পরা দুর্যোধনরে বাইন্ধা নিয়া আসছে চিত্রসেন। বাড়ির যে মাইয়াদের সে নিয়া আসছিল দ্রৌপদীর দুর্দশা দেখানোর লাইগা; তারা এখন দ্রৌপদীর উঠানে দুর্যোধনরে দেখতাছে যুধিষ্ঠিরের সামনে হাঁটু মুইড়া বইসা থাকতে....

দুর্যোধন মাথা তোলে না। যুধিষ্ঠির চিত্রসেনরে কয় হাতের বাধন খুইলা দিতে। দুর্যোধন উইঠা খাড়ায়। যুধিষ্ঠির তার দিকে তাকাইয়া কয়- যাও বাড়ি যাও। সব জায়গায় বাহাদুরি দেখাইতে যাইও না....

শত্রুর দয়ায় প্রাণ নিয়া বাইচা থাইকা কী লাভ? দুর্যোধন সবাইরে হস্তিনাপুর ফিরা যাইবার আদেশ দিয়া নিজে সিদ্ধান্ত নেয় আত্মহত্যার। ভাইয়েরা তার পায়ে ধইরা কান্দাকাটি করে। মামা শকুনি হাতে ধইরা বোঝায় কিন্তু দুর্যোধন এই জীবন রাখব না আর। সব দেইখা কর্ণ আইসা খাড়ায় দুর্যোধনের সামনে- হইছেটা কী শুনি? যুদ্ধে সেনাপতিররা শত্রুর হাতে ধরা খায় এইটা কি নতুন কিছু? বন্দী হইবার পর সৈন্য আর প্রজারা আবার সেনাপতিরে শত্রুর হাত থাইকা ছাড়াইয়া আনে; সেইটাওতো নতুন কিছু না। পাণ্ডবগোরে তুমি শত্রু মনে করতাছ কেন? তারা এখন তোমার রাজ্যে বসবাস করা প্রজা। তাগোর দায়িত্ব হইল রাজা দুর্যোধনরে শত্রুর হাত থাইকা ছাড়াইয়া আনা। তারা যা করছে তা অনুগত প্রজার দায়িত্বের বেশি কিছু করে নাই। তুমি তাগোরে ধন্যবাদ দিছ তাতেই তাদের জীবন ধন্য হইবার কথা। এইবার লও বাড়ি যাই...

কিন্তু এই যুক্তি দিয়া কি দুর্যোধন নিজেরে সান্ত্বনা দিতে পারে? সে কয়- কর্ণ তোমরা যাও; গিয়া রাজ্য শাসন করো। আমি বরং মরি...

কর্ণ এইবার দুর্যোধনরে একটা ঝাঁকি দেয়- বেকুবি কইরো না কইলাম। মান অপমান ওইগুলা ব্রাহ্মণের বিষয়। ক্ষত্রিয়ের কাজ শত্রু নিধন। নিজে মইরা গেলে কোনোদিনও শত্রুজয় হইবার সম্ভাবনা নাই বরং বাইচা থাকলেই কিছু না কিছু চান্স বাইর করা যায়। ...চলো গিয়া সেই বন্দোবস্ত করি....

হস্তিনাপুর ফিরা আইসাই দুর্যোধন পড়ে ভীষ্মের সামনে- কইছিলাম না যাইও না? লাফাইতে লাফাইতে তো গেলা; সেইখানে কী হইছে তার সংবাদ রাখি না মনে করো? তোমার ধোপানির পোলা কর্ণ তো পয়লা ধাক্কাতেই পলাইছে তোমারে থুইয়া। শেষ পর্যন্ত তো পাণ্ডবগো দয়াতেই বাইচা রাজবাড়ি ফিরলা? কই? নিজের শানশওকত ঠিকমতো দেখাইতে পারছিলা তো পাঞ্চালীরে?

দুর্যোধন ভীষ্মের কথার কোনো উত্তর না দিয়া হাঁটে। বাড়িতে গিয়া ঝিমায়। বাঁচামরার প্রশ্নে না হয় মানসম্মান তুচ্ছ কিন্তু বাইচা থাকলে তো সম্মান লাগে। ভীষ্ম খোঁচাইব; প্রজারা হাসব এইটা তো হইতে পারে না। এমন একটা কিছু করতে হইব যাতে সবাই এই প্রসঙ্গটা ভুইলা যায়...

রাজা হিসাবে বড়োসড়ো কিছু করা মানে হয় বড়োসড়ো যুদ্ধের জয় না হয় বড়ো একখান যজ্ঞ করা। বড়ো যুদ্ধ যেহেতু আপাতত সুযোগ নাই তাই যজ্ঞই করব দুর্যোধন। যজ্ঞের মইধ্যে সবচে বড়ো রাজসূয় যজ্ঞ। কিন্তু সেইখানে একটা সমস্যা আছে। বংশে রাজসূয় যজ্ঞ করছে আপনা কাকাতো ভাই যুধিষ্ঠির। আর রাজা হিসাবে এখনো জীবিত আছে নিজের বাপ ধৃতরাষ্ট্র; যার আবার রাজ্যে অভিষেক হয় নাই কোনোদিন। সে মূলত এখনো ভাই পাণ্ডর রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত রাজা। বংশে রাজসূয় যজ্ঞ করা ব্যক্তি জীবিত থাকতে যেমন দ্বিতীয় কেউ তা করতে পারে না তেমনি নিজের বাপ ভারপ্রাপ্তেরও রাজসূয় করার সুযোগ নাই। তাই দুর্যোধনের লাইগা একমাত্র বিকল্প হইল রাজসূয় যজ্ঞ থাইকা কিছুটা কম মর্যাদার বৈষ্ণব যজ্ঞ; করদ রাজাদের কাছ থিকা কর তুইলা সেই টাকায় সোনার লাঙল বানাইয়া মাটি চইষা উদ্বোধন হয় এই যজ্ঞের....

কিন্তু যজ্ঞের ঝকমকানি ছাল-বাকলা পরা পাণ্ডবদের তো দেখাইতে হয়। ...দুর্যোধন পাণ্ডবদের নিমন্ত্রণ পাঠায় যজ্ঞে যোগদানের। যুধিষ্ঠির প্রত্যাখ্যান করে বিনয়ের সাথে- এখন হস্তিনাপুর গেলে তো বনবাসের শর্ত লঙ্ঘন হয় তাই আমরা যাইতে অপারগ। তয় দুর্যোধনের লাইগা আমার আশীর্বাদ থাকল। তারে কইও আমাগো তেরো বচ্ছর পূর্ণ হইলে হস্তিনাপুরে আবার দেখা হইব আমাদের। আর ভীম কয়- হ। তেরো বছর পূর্ণ হইলে আমরা হস্তিনাপুর গিয়া দুর্যোধনরে আগুনে ফালাইয়া যে যজ্ঞ করুম; সেইখানে তার লগে দেখা হইব আমাদের...

যজ্ঞ শেষে কেউ কয় যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ থাইকা তোমারটা ভালৈছে; কেউ কয় খারাপ। কর্ণ কয়- দুঃখ কইরো না দুর্যোধন। পাণ্ডবরা নিপাতে গেলে রাজসূয় যজ্ঞ কররা তুমি। তবে তোমার এই যজ্ঞ যেমনই হোক না কেন; এই যজ্ঞের পুণ্যের লগে তুমি কর্ণের একটা একটা প্রতিজ্ঞা যোগ করো আজ- যতদিন অর্জুন বাইচা থাকব ততদিন এই কর্ণ পা ধুইব না; মদ-মাংস খাবে না আর আমার কাছে কেউ কিছু চাইলে কোনো অবস্থাতেই তারে না বলব না আমি....

যজ্ঞের কোনো সংবাদেই কান তোলো না যুধিষ্ঠির। সে খালি ভাবতে থাকে কর্ণের প্রতিজ্ঞা- যতদিন অর্জুন জীবিত থাকব ততদিন কেউ তার কাছে কিছু চাইলে কোনো অবস্থাতেই তারে না বলবে না সে... তার মানে অর্জুনরে হত্যা না করার বর চাইলেও কর্ণ তা দিব... যুধিষ্ঠির ভাবতে থাকে কর্ণের কাছে কী চাওয়া যায়...

এমন সময় দ্বৈপায়নের কথায় পাণ্ডবরা জায়গা বদলাইয়া ফিরা আসে কাম্যকবনে। কারণ বনের এক জায়গায় বেশিদিন বসবাস করলে বনের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি নিজেরও শেকড় গজায়। ওইদিকে দুর্যোধন কোনোমতেই ভুলতে পারে নাই কোনো অপমান। পাণ্ডবরা তার যজ্ঞের নিমন্ত্রণেও সাড়া দেয় নাই। এরি মধ্যে একদিন মুনি দুর্বাসার দেখা পায় দুর্যোধন। একটু খবিস কিসিমের এই মুনি। বদরাগি আর কথায় কথায় মাইনসেরে অভিশাপ দেয়া তার কাম। তেলবাজ মুনি দুর্বাসারে খুশি করা খুব কঠিন। সেই যুগে একবার মাত্র তারে খুশি করতে পারছিল কুন্তী আর এই যুগে তারে তেল মারতে মারতে খুশি কইরা ফালায় দুর্যোধন। মুনি তার সেবায় খুশি হইলে সে কয়- আমার উপরে যদি আপনি খুশি হইয়া থাকেন তয় আমার একটা অনুরোধ রাখেন। আপনিতো জানেন যে আমার বড়োভাই যুধিষ্ঠির খুব ভালো মানুষ। সে এখন বনে আছে। আমারে সে কইয়া দিছে যে আপনারে পাইলে যেন কই আপনি আপনের শিষ্যদের নিয়া তার বনবাসের বাড়িতে একদিন নিমন্ত্রণ খাইতে যান...

পঙ্গপালের মতো একপাল শিষ্য নিয়া সত্যি সত্যি একদিন যুধিষ্ঠিরের কাম্যকবনে গিয়া হাজির হয় দুর্বাসা মুনি- খাইতে আইলাম তোমাদের ঘরে...

দুর্যোধন দুর্বাসারে যুধিষ্ঠিরের ঘরে খাইতে পাঠায় নাই। পাঠাইছে যুধিষ্ঠিরের বাড়িতে খাইতে না পাইয়া দুর্বাসা কী অভিশাপ দেয় তা দেখার লাইগা। কিন্তু কৃষ্ণ যে সেইদিন সেইখানে উপস্থিত সেইডা তো আর জানে না কেউ। মুনি আইসা খাইতে চাইলে যুধিষ্ঠির কয়- ঠিকাছে; যান নদী থাইকা স্নান কইরা আসেন। দ্রৌপদী কপাল থাবড়ায়-এখন কেমনে কী করি। অত মানুষের খাওন পাকাইতে তো বহুত সময় লাগব। কিন্তু স্নান শেষ কইরা আইসা যদি দুর্বাসা খাওন না পায় তো ছারখার কইরা দিব সব...

কৃষ্ণ দ্রৌপদীরে থামায়- খাড়াও দেখতাছি আমি...

কৃষ্ণ এক লোকেরে দিয়া দুর্বাসার কাছে সংবাদ পাঠায়- কও গিয়া বাসুদেবের পোলা কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরের বাড়ির সব খাবার খাইয়া ফালাইছে আজ...

কৃষ্ণের নাম শুইনা দাড়িলোম সব খাড়া হয়ে উঠে দুর্বাসার। গোসলটোসল বাদ দিয়া সে শুরু করে দৌড়। শিষ্যরা জিগায়- গুরু কই যান? দৌড়াইতে দৌড়াইতে মুনি কয়- পলাও। যাদব জাউরা কৃষ্ণের লগে মুনিগিরি ফলান ঠিক না। পলাও...

কাম্যকবনেই আরেক ঘটনা ঘটে অন্যদিন। ...পাণ্ডবরা গেছে শিকারে। বাড়িতে দ্রৌপদী আর পুরোহিত ধৌম্য। এই সময় ধৃতরাষ্ট্রের মাইয়া দুঃশলার জামাই সিন্ধুরাজ জয়দ্রথ আরেকটা বিবাহের আশায় যাইতেছিল শাল্বরাজ্যে। পথে কাম্যকবনে দ্রৌপদীরে দেইখা তার মাথা আউলা- এই বনে এমন সুন্দরী নারী কেমনে কী? এর সামনে তো অন্য মেয়েরা বান্দরের সুমান...

জয়দ্রথের চ্যালা কোটিকাস্য সংবাদ নিয়া আইসা বিস্তারিত জানাইলে জয়দ্রথ কয়- শাল্বরাজ্যে গিয়া কাম নাই। এরেই বিবাহ করব আমি...
জয়দ্রথ নিজে আউগাইয়া গিয়া প্রস্তাব তোলে দ্রৌপদীর কাছে- ফকির পাণ্ডবগো লগে থাইকা কী করবা তুমি? তার থাইকা আমারে বিবাহ কইরা তুমি হও সিন্ধুর রাণী...

দ্রৌপদী ধাক্কা মাইরা জয়দ্রথরে মাটিতে ফালাইয়া দিলেও জয়দ্রথ তারে বাইন্ধা নিজের রথে তুইলা ফালায়। রথ চলা শুরু করলে দ্রৌপদী চিক্কুর দিয়া ডাকে ধৌম্যরে আর চলন্ত রথের পিছনে দৌড়াইতে দৌড়াইতে ভীমের নাম ধইরা চিল্লায় ধৌম্য পুরোহিত- ভীম। কই গেলিরে ভীম...

ধৌম্যের চিক্কুর আর ঘোড়ার দাগ দেইখা পাণ্ডবেরা পৌঁছাইয়া যায় জয়দ্রথের কাছে। মাইরের শুরুতেই ভীমের হাতে চ্যাপ্টা হয় কোটিকাস্য। দ্রৌপদীরে ছাইড়া জয়দ্রথ পলায়। যুধিষ্ঠির আশ্রমে ফিরা আসে দ্রৌপদী- ধৌম্য আর নকুল সহদেবরে নিয়া। ভীম আর অর্জুন ধাওয়া দেয় জয়দ্রথের পিছে। যুধিষ্ঠির অর্জুনরে কইয়া যায়- ওরে জানে মাইর না। ও আমাগো বইনের জামাই...

ভীম তার চুলের মুঠি ধইরা আছড়ায়। অর্জুন কয় যুধিষ্ঠির কইছেন তারে জানে না মারতে। ভীম কয়- এ হালা দ্রৌপদীরে অসম্মান করছে এর বাচার কোনো অধিকার নাই। কিন্তু অর্জুন ভীমেরে সামলায়। ভীম টাইনা জয়দ্রথের মাথার চুল ছিড়া ফালাইয়া ধইরা নিয়া আসে দ্রৌপদীর কাছে । যুধিষ্ঠির কয়- যথেষ্ট শিক্ষা হইছে তার। এইবার জননী গান্ধারী আর বইন দুঃশলার কথা ভাইবা এরে ছাইড়া দেও। ভীম কয়- তোমার কথায় ছাড়া যাইবা না তারে। পাঞ্চালী যদি ছাড়তে কয় তবেই শুধু ছড়া পাইব সে...

যুধিষ্ঠিরের দিকে তাকাইয়া দ্রৌপদী হাসে- যে আমারে জুয়ার দানে তুলতে পারে তার কাছে আমার অসম্মান আর কী এমন বিষয়। ...দেও। তোমাগো বোনাইরে ছাইড়াই দেও...

অজ্ঞাতবাসে যাইবার আগে আগে জয়দ্রথরে ধরা-মারর চেয়ে কর্ণের নিবীর্যকরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ যুধিষ্ঠিরের কাছে। কর্ণের কাছে অর্জুনের প্রাণভিক্ষা চাওয়া হবে চূড়ান্ত অসম্মানের বিষয়। তাই কর্ণের প্রতিজ্ঞার ফাঁক দিয়া কর্ণরেই নিবীর্য করার বিষয়ে লোমশ মুনি পরামর্শ দিছেন এবং নিজেই দায়িত্ব নিছেন নিছেন কর্ণরে নিবীর্য করার। সেই সংবাদটা এইমাত্র আইসা পৌঁছাইল যুধিষ্ঠিরের কানে। আইজ এক ব্রাহ্মণ কর্ণের কাছে গিয়া চাইয়া বসছে তার অক্ষয় বর্ম; যে বর্ম ভেদ করার মতো কোনো অস্ত্র আইজও দুনিয়ায় কেউ আবিষ্কার করে নাই। এই বর্ম নিয়া যুদ্ধে নামলে কর্ণ অমর। কিন্তু নিজের প্রতিজ্ঞার ফান্দে পইড়া আইজ সেই বর্মটাই ব্রাহ্মণরে দান কইরা দিতে হইছে কর্ণের...

যুধিষ্ঠির স্বস্তি পায়- যুদ্ধের মাঠে কর্ণ তবে এখন এক মরণশীল জীব...
২০১৩. ১০.২৮ সোমবার

মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৫ [ঘটোৎকচ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৪: ঘটোৎকচ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৩: ঘটোৎকচ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ১]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

ছোটবেলায় পড়া গল্প ঝাপসা মনে আছে। কুন্তী সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিলো, আপনার পূর্ব-প্রকাশিত লেখা পড়লেই জানা যাবে।

আমার কাছে দ্রৌপদীকেই রাজনৈতিক নারী হিসেবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী মনে হয়।

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১২, ২০১৩

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার এই পুরা লেখাটা কুন্তীকে নিয়ে লেখার জন্যই করা নোট
মহাভারতের মাঝখানের ১৩ বছর যেহেতু কুন্তী অনুপস্থিত তাই সময়টা অন্যদের ধরে পার করা

০২
আমার হিসেবে মহাভারতে রাজনীতিবিদ মাত্র চারজন; সত্যবতী-কুন্তী-কৃষ্ণ আর যুধিষ্ঠির
দ্রৌপদী রাজনীতির শিকার। রাজনীতিবিদ না
প্রভাবের দিক থেকে কৃষ্ণ প্রথম হলে কুন্তী দ্বিতীয় আর কুন্তী প্রথম হলে কৃষ্ণ দ্বিতীয়
কিন্তু যেই প্রথম আর দ্বিতীয় হোক; পুরা মহাভারতে (সত্যবতী যুগের পরে) সমস্ত রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে ফুপু-ভাতিজা কুন্তী আর কৃষ্ণ

কৌশিক এর ছবি

লীলেন ভাই, (সাহস কইরা ‘ভাই’ কইয়া ফেললাম, মাইন্ড খাইয়েন না কিন্তু!!)
দুর্বাসার বিনা দাওয়াতে হাজির হওয়ার পরবর্তী ঘটনাটা একটু অন্য রকম জানতাম। দুর্বাসা ‘চুদির ভাই’ নাকি দ্রৌপদি সহ পান্ডবগো সবার খাওয়া-দাওয়া হইয়া যাবার পরে গিয়া হাজির হইছিল (ইচ্ছাকৃত ভাবে)। চুদির ভাই নাকি দুর্জোধোনের পামপট্টি খাইয়া পুরাই ‘ডিটারমাইণ্ড’ হইয়া গেছিল যে পাণ্ডবগো একাগাদা অভিশাপ না দিয়া ফিরবোই না।
এখন আসল কথায় আসি। যুধিষ্ঠির যখন ওগরে গোসল করতে পাঠাইলো, তখন দ্রৌপদি আইসা কৃষ্ণরে কইল, “দোস্তো আমারে তুমি বাঁচাও।”
সব বৃত্যান্ত শুইনা কৃষ্ণ দ্রৌপদিরে কইলো,
-তোমার হাড়িতে যা খাবার আছে, তা আমারে আইনা দেও।
-কিচ্ছু নাই, সব তো ছাইচা-পুইছা খাইয়া ফেলছি।
-আরে ভালো কইরা দেইখা আসো।
দ্রৌপদি বহুত খোজাখুজি কইরা এককনা ভাত পাইলো। ওইটাই নিয়া আসলো। কৃষ্ণ ঐ এককনা ভাত খাইয়া দ্রৌপদিরে কইলো পানি দেও। পানি খাইয়া কৃষ্ণ একটা কড়া ঢেঁকুর তুলল। (আমরা ঠেসে পেট ভরে খাওয়ার পর যেমন ঢেঁকুর তুলি আর কি!!!)
আর এতেই ঘইটা গেল তেলেসমতি। কেননা, কৃষ্ণ তো আবার ভগবান। ভগবানের পেট ভরছে আর দুর্বাসা তো ‘কোন চ্যাটের বাল, কাশীনাথ পাল’
তো দুর্বাসা আর ওর এক পাল শিষ্য সকলের পেট ভরে গেল। পেট এমন ভরা ভরল যে, ওজনের ঠেলায় নদী দিয়া উঠতে পারতেছিল না। পরে নাকি যুধিষ্ঠিরে লোক পাঠায়া নদী থেকে তুলতে হইছিল ওদের।

সজল এর ছবি

ধরেন মহাভারতের কাহিনী সত্যি কিংবা লৌকিক। তাহলে কোন ভার্সনটা বাস্তব হবে? ভগবানের এক ভাত খাওয়ায় দুনিয়ার সবার ক্ষুধা মিটে যাওয়া নাকি জাঁহাবাজ কৃষ্ণের ভয়ে সবার ভেগে যাওয়া? আর প্রথম ভার্সন সত্য হলেতো কৃষ্ণ প্রতিদিনই খেতো, কিন্তু তার জীবৎকালে
কী কোন মানুষ ক্ষুধায় ভোগেনি?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আর প্রথম ভার্সন সত্য হলেতো কৃষ্ণ প্রতিদিনই খেতো, কিন্তু তার জীবৎকালে
কী কোন মানুষ ক্ষুধায় ভোগেনি?

কৃষ্ণ ভগবান হয়েছে বহু পরে... জীবন কালে কৃষ্ণ সাধারণ মানুষই ছিল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রথম অংশ ঠিক। দুর্যোধন বলেই পাঠিয়েছিল পাণ্ডবদের শিক্ষা দেবার জন্য

০২
বিশ্বাসীদের মহাভারতে কৃষ্ণ কিন্তু সেখানে উপস্থিত ছিল না। দ্রৌপদী স্মরণ করা মাত্র এসে হাজির হন। হয়ে সেই অলৌকিক ঘটনা ঘটান। যে পাত্র থেকে তিনি পড়ে থাকা শাক খান সেই পাত্রও কিন্তু অলৌকিক ক্ষমতাধর। দ্রৌপদী না খা্ওয়া পর্যন্ত সেই পাত্রের খাবার শেষ হয় না। দুর্যোধন বলে দিয়েছিল দুর্বাসা যেন পাঞ্চালির খাবার পরে যান। (মূলত সেই পাত্র ছিল একটা তামার পাত্র। মহাভারতে প্রথ তামার ব্যবহার এখানেই পা্ওয়া যায়)

০৩
আমি অলৌকিকতা থেকে দূরে আছি। কৃষ্ণ যেহেতু প্রায়ই পাণ্ডবদের শিবিরে থাকত (এমনকি অজ্ঞাতবাসেও) সেহেতু সেখানে তার আগে থেকে থাকাই যুক্তির মনে হয়েছে আমার

০৪
কৃষ্ণ কে বুঝতে হলে যুধিষ্ঠির আর কৃষ্ণের কৃতিত্ব ভাগাভাগির হিসাবটা যে একটু খেয়াল করতে হবে। কে কোনটা অন্যেরে দিয়ে নিজে কোনটা রাখে? রাজনীতিতে এই দুই ভাইর জুটি কিন্তু অতুলনীয়

ওয়াইফাই ক্যানসার এর ছবি

কৌশিকের সাথে আমি একমত। আমিও গল্পটা এইরকমই জানতাম।

এই পর্বটা মোক্ষম জায়গাতে শেষ হয়েছে...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কৌশিক ঠিক। আপন্ওে ঠিক

এক লহমা এর ছবি

দুর্বাসা কাহিনী আপনি যে ভাবে বলেছেন সেটা আমার বেশ যুক্তিসঙ্গত লেগেছে। ভাল লেগেছে তাই।
পুরো পর্বটাই ভাল লেগেছে। অনেকদিন অপেক্ষা করে ছিলাম আমরা। আশা করি এবার আরো তাড়াতাড়ি পরের পর্বগুলো পেতে থাকব।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আসবে দ্রুত আশা করি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

অনেকদিন অপেক্ষা করিয়ে রাখলেন, এই জন্যই বোধ হয়, তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পর্ব কিন্তু বাকি আছে আরো

শ্রী বেকুবেশ্বর  এর ছবি

১) যে কর্ণের কাছে মানসম্মানের চাইতে শত্রু নিধনের প্রাধান্য বেশি, সেই কর্ণ প্রতিজ্ঞা করল যে সে কেউ কোন কিছু চাইলে না করবোনা!!

২) কর্ণের যদি অক্ষয় বর্ম থাকে তাইলে অর্জুনরে একটা মহা অক্ষয় বর্ম দেওয়া কৃষ্ণের লাইগ্য কোন ব্যাপার হওনের কথা না।

সিরিজটা ভাল লাগতেছে। ঘটা'র নিনজা যুদ্ধ কৌশলের কথা এবং অন্যান্য কিছু পরে মনে হইতেছিল মহাভারতের একটা অলৌকিকতাহীন বিশ্লেষণ পরতেছি। কিন্তু এই পর্বে আইসা একটা ঘোট পাকাইয়া গেল। নিজের মায়ের কাছে অবাঞ্ছিত কর্ণকে মহান করতে অলৌকিকতার আশ্রয় নিতেছেন কিনা বুঝতেছিনা।

বরাবরের মতই পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কর্ণের যদি অক্ষয় বর্ম থাকে তাইলে অর্জুনরে একটা মহা অক্ষয় বর্ম দেওয়া কৃষ্ণের লাইগ্য কোন ব্যাপার হওনের কথা না।

অর্জুনকে ঠিকই অক্ষয় বর্ম দিয়েছিল কৃষ্ণ। তবে অন্যভাবে; যুদ্ধে তার ক্ষতি হতে না দিয়ে। সেটা ছিল বুদ্ধির বর্ম। কিন্তু সেই যুগে বিশিষ্ট যোদ্ধারা নিজের আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ বর্ম সংগ্রহ করত। যা সাধারণ অন্য অস্ত্র (তীর বর্শা ভোজালি) দিয়ে ভেদ করা যেত না। কর্ণের হয়তো সেরকম বিশেষ কোনো বস্তুগত বর্ম ছিল...

০২
কর্ণকে তো মহান করছি না। কর্ণ স্বভাবে ইতর হল্ওে যোদ্ধা হিসাবে তার তুলনা নাই সেটা তার সকল শত্রুরাই স্বীকার করেছে সারা মহাভারত জুড়ে (যুধিষ্ঠির তো ১৩ বছর ঠিকমতো ঘুমায় নাই কর্ণের ভয়ে)

গৌতম এর ছবি

কর্ণ স্বভাবে কেন ইতর হলো, সেটার পরস্পরা না জানালে কিন্তু কর্ণ সম্পর্কে অনেকে ভুল ধারণা করতে পারে। আর যাই হোক, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই লোকটাকে অপছন্দ করি না।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমারও অনেক পছন্দের লোক কর্ণ। সম্ভবত সবচে বেশি পছন্দের
কর্ণ জীবনের সবগুলো বৈচিত্রকে বোধহয় একমাত্র নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী ধরতে পেরেছেন তার 'কৃষ্ণা কুন্তী এবং কৌন্তেয় বইয়ে...

মহাভারতের চরিত্র হিসেবে কর্ণকে নিয়েই বোধহয় সবচে বেশি লেখা হয়েছে
নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর পরে মনে হয় আর কিছু লেখা সম্ভব না আমার সম্পর্কে

এক লহমা এর ছবি

"কর্ণ স্বভাবে ইতর হলেও" - ঠিক এক্কেবারে এই জায়গাটায় দ্বিধায় আছি। সে অবশ‌্যই অমার্জনীয়, চরম দন্ডযোগ্য অপরাধ করেছে। কিন্তু "স্বভাবে" ইতরতার দোষে দুষ্ট ছিল কি?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

তা অবশ্য ঠিক। পুরোপুরি স্বভাবে ইতর বলা যাবে না

গৌতম এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত মহাভারত পড়েছিলাম ভক্তিভরে। নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী পড়ার পর থেকে মনে হলো, মহাভারতের যে রূপ আমরা বংশ-পরম্পরায় জেনে থাকি, সেখানে ভক্তিরস প্রাধান্য পায়, ফলে বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়ার চর্চা দেখা যায় না প্রায় কারোরই মধ্যে। এই ভদ্রলোক রামায়ান-মহাভারত সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গিটাই বদলে দিয়েছেন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নৃসিংহপ্রসাদ এই বিষয়ে সত্যিই গুরু পর্যায়ের লোক

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যত যাই বলেন, দ্রৌপদী কিন্তু এ জগতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গ্ল্যামার গার্ল। আপনার এই সমাজতাত্বিক উপস্থাপনায় যদিও ইতিহাসের এক অনুক্ত অধ্যায়ের উন্মোচন ঘটছে, কিন্তু বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে দ্রৌপদীর মহাকাব্যিক রুপমাধুরী। যদি অনুমতি দেন, দ্রৌপদীর গ্ল্যামার উপস্থাপন করে একটি পোষ্ট দিতে চাই।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অবশ্যই লিখে ফ্যালেন। দ্রৌপদীর ৪৫-৫০ বছর বয়সে জয়দ্রথ তাকে দেখে বলে- এই নারীর সামনে দুনিয়ার বাকি সব নারী বান্দরনীর সমান.... এর থেকেই তার গ্ল‌্যামার অনুমান করা যায়... কিন্তু আমার যে সেদিকে যাবার উপায় নাই...

০২

অন্য প্রসঙ্গ। ড. অতুল প্রসাদ কিন্তু দ্রৌপদীরে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন পাঞ্চাল দেশ হলো বীরভূম আর দ্রৌপদী বীরভূমের মেয়ে

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ড. অতুল প্রসাদ কিন্তু দ্রৌপদীরে বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বলেছেন পাঞ্চাল দেশ হলো বীরভূম আর দ্রৌপদী বীরভূমের মেয়ে

দ্রৌপদীকে আমিও স্বগোত্রীয় বলেই মনে করি, কারন বর্ণ প্রথার স্বর্নযুগেও সে গৌড়বর্ণা নয়, কৃষ্ণা। বীরভূমের যদি সে না ও হয়, তবুও সে যে আদি বাসিন্দাদের মধ্য থেকে উদ্ভূত তা সহজেই বোঝা যায়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রেফারেন্স ভুল দিয়েছি। অতুল প্রসাদ নয়। ড. অতুল সুর

০২
মহাভারতের বেশিরভাগই কালো মানুষ
সত্যবতী (ডাক নাম কালী) কুন্তী- অর্জুন (ডাক নাম কৃষ্ণ) কৃষ্ণ- ভীম- পাঞ্চালি (ডাক না কৃষ্ণা) এবং সবার উপরে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাস

এইখানে কিছু গাঁথা আছে:
মহাভারত; মাতৃলাঞ্ছনার এক অনন্য প্রতিশোধ

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি সচলে নতুন তাই আগে আপনার পোস্ট পড়ার হয় নাই কিন্তু অগ্রজের কৃপায় আপনার তিনখানা আস্ত বই পড়া হয়ে সৌভাগ্য হয়েছিল, তাই আগে থেকেই আপনার লেখার ভক্ত হয়েছিলাম। সে কারনে সচলে আপনার লেখা বেশ আগ্রহ নিয়েই পড়ি।
মহাভারত ছোটবেলায় বই আকারে পড়া হয়েছিল তা নেহাতই ক্ষুদ্র পরিসরে, বৃহৎ আকারে পড়ার ইচ্ছে ছিল তা এখন কিছুটা দূর হচ্ছে আপনার কল্যানে। আরজ আলী মাতুব্বরের ‘রাবনের প্রতিভা’ বা পাঠ্যপুস্তকে সমুদ্রের প্রতি রাবন পড়ার পর রাবনকে অন্য রুপে চিনেছিলাম। তেমনি আপনার লেখায় মহাভারতকে আরও আকর্ষনীয় লেগেছে। লিখতে থাকেন আমরা অপেক্ষায় রইলাম আগামী পর্বের তবে শেষ দুই পর্বের মাঝে এই ৬ মাসের একটা গ্যাপ ছিল , যদি সম্ভব হয় তবে সময়টা কমাবেন।
ধন্যবাদ ।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ পড়ার জন্য

০২

তবে শেষ দুই পর্বের মাঝে এই ৬ মাসের একটা গ্যাপ ছিল , যদি সম্ভব হয় তবে সময়টা কমাবেন।

শেষ দুই পর্বের ভেতর আমার ৪মাস বয়সী মেয়ে ঢুকেপড়ে মহাভারতীয় ঘটনায় ৬মাসের একটা গ্যাপ তৈরি করে ফেলেছিল...
আশাকরি আমার 'পিতৃত্ব শিক্ষা' মহাভারত অশুদ্ধ করবে না আর..

অতিথি লেখক এর ছবি

দুখিত, অবশ্যই অশুদ্ধ করবে না। কারন সদ্য বাবা হয়েছিতো তাই আপনার অনুভুতিটা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল বুঝতে পারব।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আপনি যে লিখছেন তাই তো বেশী!!

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।