অবশেষে সব ছাইড়া দ্রৌপদী আর পঞ্চপাণ্ডব রওয়ানা দিছে বনবাসে। কুরুযুদ্ধের ছত্রিশ বছর পরে...
কুন্তীরা বনে যাবার বছর খানেক পর পাণ্ডবেরা বনে গিয়া দেইখা আসছিল তাদের। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী ভীষণ দুর্বল আর বিদুর বদ্ধ উন্মাদ; ন্যাংটা হইয়া বনে বনে ঘোরে...
যুধিষ্ঠির বনে গিয়া বিদুররে খুইজা বার করলে বিদুর যুধিষ্ঠিররে জড়াইয়া ধইরা আর ছাড়ে না। অবশেষে যুধিষ্ঠির অতি ধীরে ছাড়ায়ে নেয় প্রাণহীন বিদুরের আলিঙ্গন...
পাণ্ডবেরা দেইখা আসার বছর দুয়েক পরে দাবানল থাইকা পলাইতে না পাইরা আগুনে পুইড়া মারা যান ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী আর কুন্তী। আগুনের হাত থিকা বাঁচতে পারে শুধু সঞ্জয়...
পাণ্ডবগো রাজ্য বিস্তার হইছে বহুত কিন্তু ভাইঙা পড়ছে তাগো শক্তি আর শরীর। দ্বারকায় ভাইঙা পড়ছে কৃষ্ণ আর বলরামের নিয়ন্ত্রণ...
কুরুযুদ্ধে যেসব বড়ো রাজা মারা গেছেন তাগো উত্তরাধিকার নবীন রাজারা অন্যদেশ আক্রমণের থাইকা নিজের রাজ্য গুছাইতে এখনো বেশি মনোযোগী। বাকি যে খুচরা বিদ্রোহী রাজ্য আছিল তারাও সবাই অশ্বমেধ যজ্ঞের কালে অর্জুনের কাছে আত্মসমর্পণ কইরা পাণ্ডবরাজের অনুগত এখন। আর একই সাথে যুদ্ধহীন আর্যাবর্তে পেশাদার যোদ্ধা যাদববংশ পুরাপুরি বেকার; কোথাও কোনো যুদ্ধ নাই; তাই তাগো কোনো কামও নাই। বেকার সময়ে তাগো হাত কামড়ায়। অস্ত্র টাডায়। তাই মাতলামি আর নিজেগো মাঝে হাতাহাতি কইরা তারা সময় কাটায়। মারামারি করতে করতে মাতালেরা এক সময় মারামারিতেও বৈচিত্র্য খোঁজে। লাঠি গদা অস্ত্রের বদলা তারা শুরু করে একে অন্যের পাছায় ডান্ডা ঢোকানোর কাজ। আর এই প্রক্রিয়ায় পুটকি দিয়া পয়লা ডান্ডাটা ঢোকে কৃষ্ণপুত্র শাল্বের...
কৃষ্ণের সেই তাকতও নাই; হুকুমদারিও নাই। কৃষ্ণ আর চক্র চালাইতে পারে না। মেরামতির অভাবে ভাইঙা গেছে রথ। ছাইড়া দেওয়া ঘোড়াগুলা ভাইগা গেছে বনে। গাঙে ঝাঁপ দিয়া দ্বারকার নারীরা আত্মহত্যা করে। লুটতরাজ আর চুরিচামারি হইতে থাকে প্রচুর আর চলতে থাকে যাদববংশের মদ খাইয়া একে অন্যের পাছায় বাঁশ দিবার কাম...
বলরামরে নিয়া কৃষ্ণ চেষ্টা করে দ্বারকায় মদ তৈরি আর বিক্রি বন্ধ করার। কাজ হয় না। নিরুপায় কৃষ্ণ অবশেষে গোষ্ঠী আর পরিবার নিয়া দেশান্তরি হয় সমুদ্রতীরের প্রভাসতীর্থে। কিন্তু সেইখানেও বদলায় না কিছু। সাত্যকি বলরাম কৃষ্ণের সামনেও মাতলামি করতে থাকে পোলাপান। আর আস্তে আস্তে এই মহামারি ছড়াইতে থাকে বড়োদের মাঝেও...
খাইতে বইসা সামান্য ঝগড়ার সূত্রে সাত্যকি খড়গ দিয়া কৃতবর্মার মাথা আলগা কইরা অন্যদেরও কোপাইতে থাকে। অন্যরা হাতের থালাবাটি বাসন দিয়া পিটাইতে শুরু করে সাত্যকিরে। কৃষ্ণের পোলা প্রদ্যুু সাত্যকির পক্ষ নিতে গেলে থালাবাটির বাড়ি খাইয়া কৃষ্ণের সামনেই সে মরে সাত্যকির লগে। সাত্যকি আর পোলার মৃত্যুতে কৃষ্ণও একটা মুগুর নিয়া সবাইরে পিটায়। শুরু হয় আউলাঝাড়া মাইর। কে কার পক্ষে জানে না কেউ। সবাই সবাইরে পিটায়। শুধু যে মারা যায় সে থামে। কৃষ্ণের সামনেই মরে তার আরো চাইর পোলা; শাম্ব চারুদেষ্ণ অনিরুদ্ধ আর গদ...
এই গিয়াঞ্জামে বিষণ্ণ বলরাম তখন একলা বনে বনে ঘোরে। বহু কষ্টে কৃষ্ণরে কিলাকিলি থাইকা সরাইয়া বলরামের কাছে নিয়া আসে বভ্রু আর দারুক। বলরামের কাছে বইসা অর্জুনরে নিয়া আসতে দারুকরে হস্তিনাপুর পাঠায় কৃষ্ণ; হয়ত এই অন্তর্ঘাত থাইকা বংশের নারী আর শিশুগো অন্তত বাচাইতে পারব অর্জুন...
বলরামের কাছে বইসাই কৃষ্ণ বভ্রুরে পাঠায় বংশের নারীগো দেইখা আসতে। কিন্তু রাস্তাতেই বভ্রু মারা যায় কারো হাতে। এইবার কৃষ্ণ নিজে গিয়া নারীগো জানায় যে অর্জুনরে সংবাদ পাঠানো হইছে; দুশ্চিন্তার কিছু নাই। আর বাপ বসুদেবরে কয়- অর্জুন না আসা পর্যন্ত যেইভাবেই হউক আপনে নারী আর শিশুগো আগলাইয়া রাখেন...
কৃষ্ণ আবার ফিরা আসে বনে বলরামের কাছে। কিন্তু তখন আর বলরাম নাই। এক সাপের এর মইধ্যেই মৃত্যু হইছে তার...
বলরামের মৃত্যুতে বিধ্বস্ত কৃষ্ণ বনে পায়চারি করে। পায়চারি করতে করতে কৃষ্ণ বনে বইসা ঝিমায় আর এক শিকারি তারে শিকার মনে কইরা বিন্ধাইয়া দেয় একখান তীর...
মাত্র একটা তীরেই শেষ হয় দুর্ধর্ষ যাদব কৃষ্ণের জীবন...
কৃষ্ণ-বলরামহীন যাদবকুলের সকল সম্পদ ভাগিনা অর্জুনরে হাতে তুইলা দিয়া পরদিন বসুদেব মারা গেলে কৃষ্ণ বলরাম বসুদেবের সৎকার শেষ কইরা পরিবারের সকল নারী আর শিশুদের নিয়া অর্জুন রওয়ানা দেয় হস্তিনাপুর। কিন্তু রাস্তায় রাস্তায় লুট হইতে থাকে অর্জুনের বাহিনী; ধনরত্ন যায়; গবাদিপশু যায়; নারীদের লুইটা নিয়া যায় ডাকাতের দল কিন্তু গাণ্ডিব চালাইবার শক্তি আর নাই অর্জুনের গায়...
লুটের হাত থিকা বাইচা যাওয়া মানুষগুলারে পথে বিভিন্ন সহায়ে রাইখা ইন্দ্রপ্রস্থ ফিরে আসে বৃদ্ধ অর্জুন আর আবার সন্ন্যাস চাগান দিয়া উঠে যুধিষ্ঠিরের মনে...
এইবার আর তারে নিষেধ করে না কেউ। নদীর জলে গাণ্ডিব ফালাইয়া আইসা সন্ন্যাস দলে যোগ দেয় অর্জুন। যোগ দেয় ভীম নকুল সহদেব আর দ্রৌপদী...
উত্তরার পুত্র পরীক্ষিতরে রাজা বানাইয়া দ্রৌপদীর লগে হিমালয়ের উত্তরে মানস সরোবর উদ্দেশ্য কইরা বানপ্রস্থে রওয়ানা দেয় পঞ্চপাণ্ডব; আর তাগো পিছে আইসা যোগ দেয়া একটা কুকুর...
বনের পথে সবার আগে আগে হাঁটে যুধিষ্ঠির। তার পিছনে হাঁটে পাঁচটা মানুষ আর একটা কুকুর। হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যায় দ্রৌপদী; যুধিষ্ঠিরের পিছনে পা মিলায় চাইরটা মানুষ আর একটা কুকুর। পড়ে যায় সহদেব; যুধিষ্ঠিরের পিছনে চলে তিনটা মানুষ আর একটা কুকুর। পড়ে যায় নকুল; যুধিষ্ঠিরের পিছনে থাকে দুইটা মানুষ আর একটা কুকুর। পড়ে যায় অর্জুন; যুধিষ্ঠিরের পিছনে দৌড়ায় একটা মানুষ আর একটা কুকুর। পড়ে যায় ভীম; আর পিছনে একটা কুকুর নিয়া আগাইতে থাকে কুন্তীপুত্র যুধিষ্ঠির; যারে সর্ব অবস্থায় স্থির থাইকা সামনে আগানোর লাইগাই জন্ম দিছে কুন্তী; হোক তা ক্ষমতার দিকে আর হোক নিরুদ্দেশ যাত্রায়...
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১৩
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৯
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ১০ [দুর্যোধন]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৯ [কর্ণ ৪]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৮ [দ্রোণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৭ [কর্ণ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৬ [কর্ণ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৫ [কর্ণ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী। পর্ব ৪
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৮
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৭
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৬
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ৫ [ঘটোৎকচ ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৪: ঘটোৎকচ ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। [পর্ব ৩: ঘটোৎকচ]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ২
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ৩। দ্রৌপদী। পর্ব ১
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ৩]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ২]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ২। কুন্তী [পর্ব ১]
মহাভারতে তিন রাজনৈতিক নারী। ১। সত্যবতী
মন্তব্য
মহাভারতের কথা করিয়া যতন
রচেন লীনেন পুনঃ, পড়ে মুগ্ধ মন।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ
মহাভারতের কথা করিয়া যতন
রচেন লীলেন পুনঃ, পড়ে মুগ্ধ মন।
আপনার নাম নিতে গিয়ে আবার-ও একই ভুল করেছি। নিজেই নিজেরে থাবড়াই। ছ্যাঃ।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
অসাধারণ! সবসময় মন্তব্য করা হয় না, কিন্তু আপনার এই সিরিজ গোগ্রাসে গিলেছি। বইমেলায় কি এই সিরিজটা বই আকারে আসবে? কয় তারিখের দিকে আসতে পারে সেটা একটু বইলেন। কেনার ইচ্ছা আছে।
ফারাসাত
মাসের মাঝামাঝি আসবে আশা করি
আক্ষরিক অর্থেই এই কাজ করতো? নাকি রূপকার্থে বলেছেন?
এই ডান্ডার যে সন্ধান পাইছি তা ডরাইয়া লিখি নাই; ওইটা মূলত পিছন দিকে মানবিক ডান্ডা ঢোকানো; শাল্ব মাতাল হইয়া মেয়েদের পোশাক পইরা ঘোরে আর অন্য মাতালেরা তারে ধর্ষণ কইরা ফালায়....
শেষ হয়ে গেল?
দুইটা সংস্কৃত মহাকাব্যই আলটিমেটলি ট্র্যাজেডি। কিন্তু ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত নাটকে ট্র্যাজেডি নাই। এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়।
Emran
এইখানে বোধহয় দ্বিমত করব। রামায়ণ মহাভারত দুইটাই কিন্তু শেষ হয়েছে 'অবশেষে সুখে দিনাতিপাত করিতে লাগিল' জাতীয় বিষয়ে
দুইটা বইই পড়ছি অন্তত ২০ বছর আগে। যতদূর মনে পড়ে, রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে রাম সীতারে নির্বাসনে পাঠায়, তারপর সীতা মাটির নীচে ঢুইকা যায়। মহাভারতে অবশ্য স্বর্গারোহণ পর্ব আছে, তবে আমার কাছে সেইটারে একটু জোর কইরে লেখা মনে হইসে। মহাভারতের কাহিনী শুরু থেকে যেইভাবে আগাইসে, তাতে আপনি যেইখানে থামসেন, সেইটা কিন্তু অরগানিক ডেভেলপমেন্ট। এই অর্থেই বলছিলাম ট্র্যাজেডির কথা।
Emran
শেষ পর্ব পড়ে মন খারাপ হলো। যদি আরোও চলতো।
যাই হোক বইয়ের অপেক্ষায় আছি।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
আমি না চালাইলেও তোমার পড়া বন্ধ করল কেডা; শতে শতে বই আছে; পড়তে থাকো; এক জীবনে শেষ করতে পারবে না অর্ধেকও
কোনোটাই মিস দেই নি। বই এর জন্যে অপেক্ষায়।
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ঠিক বুঝলাম না। সিরিজটাই কি শেষ হয়ে গেল? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে অসাধারন একটা সিরিজ সাফল্যের সাথে শেষ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন! অন্য অনেকের মত শুরু থেকেই দারুনভাবে উপভোগ করেছি মহাভারতের এই ভিন্নপাঠ, সিরিজটি সচলায়তনকেও নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে। আপনার লেখক স্বত্বার পরম সমৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।
নতুন মন্তব্য করুন