কবিরা যুক্তি মানেন না আর ধার্মিকেরা যুক্তি বানান। এতে কোনো ঝামেলা নাই কারণ কাব্যকাহিনি যারা পড়েন আর ধর্মকথন যারা মানেন তারা ভিন্ন ভিন্ন লোক; ভিন্ন ভিন্ন রঙের অন্তর নিয়া তারা বসবাস করেন ভিন্ন ভিন্ন জগতে; যদিও দুই দলই ভিত্তি করেন মূলত কল্পনায়। পার্থক্য শুধু এই যে কাব্যভক্তরা কল্পনারে কল্পনা জাইনা বিনোদিত হন আর ধর্মভক্তরা কল্পনারে সত্য জাইনা করেন বিশ্বাস...
এতেও কোনো ঝামেলা নাই। কিন্তু ঝামেলা তখনই বাঁধে যখন কবিরা ধর্মকথন কইতে যান কিংবা ধার্মিকেরা আসেন কাব্য রচনায়। আর তখনই তৈরি হয় বিশ্বাসের কাব্য কিংবা কাব্যিক বিশ্বাস কিংবা দুনিয়ার সব থাইকা বড়ো ভজঘট; মহাভারত...
উল্টাপাল্টা কিছু কইরা তারে জায়েজ করতে গেলে মাইনসে যুক্তি দেখায়- এতে কি মহাভারত অশুদ্ধ হইল? আসোলে মহাভারত এমন একখান অশুদ্ধ জিনিসের শুদ্ধতম উদাহরণ যেকোনোমতেই তারে অশুদ্ধ করার সাধ্যি কারো বাপেরও নাই। অন্তত এইটা আমার উপলব্ধি...
আইজ থাইকা সাড়ে চাইর হাজার বছর আগে তৈরি হওয়া একখান কাহিনি কথক পালাকারের মুখে ঘুরতে ঘুরতে লিপিবদ্ধ পুস্তকের চেহারা পাইছে মাত্র হাজার দুয়েক বছর আগে। এই যে কথাটা কইলাম সেইখানেও কিন্তু বিশাল ভজঘট আছে। কারণ প্রাচীন দুই গণিতবিদ আর্য ভট্ট আর বরাহ মিহিরের রেফারেন্স টাইনা যেইখানে ড. অতুল সুর কন যুধিষ্ঠিরের রাজ্য অভিষেক হইছিল খ্রিস্টপূর্ব ২৪৪৮ সালে; সেইখানে প্রাচীন শাস্ত্র ঘাঁইটা আর বিস্তর গোনাগুনতি কইরা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কন কুরুযুদ্ধ হইছে খ্রিস্টপূর্ব ১৪৩০ সালে। প্রাচীন দুই গণিতবিদের মতো অতুল সুর কুরুযুদ্ধের অস্তিত্বে সন্দেহ করলেও কুরুযুদ্ধ আর যুধিষ্ঠিরের রাজ্য অভিষেক যেহেতু পিঠাপিঠি জিনিস তাতে সহজেই বলা যায় যে এই দুই মহারথীর গোনাগুনতির মইদ্যেও ফারাক প্রায় হাজার বছরের। এর বাইরেও আরো কতা আছে। কইতে কইতে কেউ কেউ সাক্ষী দলিল দেখাইয়া মহাভারতের ঘটনারে টানতে টানতে আরো বহু কাছাকাছি; মানে তৃতীয় চতুর্থ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিয়া আসেন। তো এইটা হইল মহাভারতের ঘটনাবলির সময়কাল নিয়া গ্যাঞ্জাম। একইভাবে ভিন্ন ভিন্ন যুক্তি আর সিদ্ধান্ত আছে পুস্তক হিসাবে মহাভারত লিখিত হইবার সময়কাল নিয়া; যেইটা মোটামুটি খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থাইকা ৬০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আটশো বছরের ঘাপলাকাল...
যে কালেই শুরু হউক আর যে কালেই লেখা হউক না কেন; মূল কতা হইল শুরু হইবার পর এই পুস্তক বহু জায়গায় বহু চেহারা পাইছে ভিন্ন ভিন্ন দেশে; ভিন্ন ভিন্ন গোত্র; ভিন্ন ভিন্ন মানুষের হাতে। এইটার চেহারা বদলাইছেন কবিরা; চেহারা বদলাইছেন ধার্মিকেরা; চেহারা বদলাইছেন রাজনীতিবিদেরা। মাঝে মাঝে নিজের জাতিরে ঐতিহ্যবান দেখাইতে গিয়া তৈরি হইছে লাখে লাখে উপকাহিনি- মহাভারতে বর্ণিত অমুক জায়গাখান কিন্তু মোগো বাসস্থান কিংবা কুরুযুদ্ধের অমুক চরিত্র হইল মোগো পূর্বপুরুষ। যদিও নৃতাত্ত্বিকেরা মহাভারতের কিছু ঘটনা আর কিছু কেন্দ্রীয় ভূগোলের ঐতিহাসিক বাস্তবতা স্বীকার কইরা নিলেও সম্পূর্ণ সন্দেহ করেন কুরুযুদ্ধের অস্তিত্ব নিয়া। তারা কন কোনোকালেই কুরুযুদ্ধ নামে কিছু হয় নাই। এর পক্ষে পয়লা দুইটা যুক্তি হইল দ্বৈপায়নের মহাভারত লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বয়ানকার বৈশম্পায়ন আর সৌতি যে কথাগুলা বলেন তার মধ্যেও যেমন কুরুযুদ্ধের কতা নাই তেমনি কুরুযুদ্ধের কোনো নামগন্ধ নাই ঋগ্বেদের পাতায়...
বেদের কথাবার্তায় মহাভারত ভরপুর থাকলেও বেদ কিন্তু তৈরি হইছে মহাভারতের বহুত পরে। ঋগ্বেদরে যারা অনেক প্রাচীন কইতে চান তারা কন এইটা তৈরি হইছে খ্রিস্টপূর্ব ১৩০০-তে আর যারা এরে আরো নবীন বলেন তারা কন খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-তে; মানে বঙ্কিমচন্দ্রের হিসাবে কুরুযুদ্ধের কমপক্ষে ১৩০ বছর আর অতুল সুরের হিসাবে কমপক্ষে প্রায় সাড়ে এগারোশো বছর পর। বাকি বেদগুলার রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব হাজার থাইকা নয়শো পর্যন্ত হইলেও সেইগুলাতেও কুরুযুদ্ধের কোনো তথ্য-তালাশ নাই...
কেউ কেউ কন হইলে হইতে পারে মহাভারতের দশ-বিশজন পালোয়ান কোনো এক সময় কিছু কিলাকিলি আর লাঠালাঠি করছিল: আবার এমনও হইতে পারে যে কুরু-পাঞ্চাল মারামারিরে ফুলাইয়া-ফাঁপাইয়া কবিগণ আঠারো দিনের কুরুযুদ্ধ বানাইয়া ফালাইছেন। তবে এইটাও মনে রাখা দরকার যে পাঞ্চালজাতি সম্পর্কেও কিন্তু বেদে পরিষ্কার কিছু নাই; যদিও অনেকে অনুমান-টনুমান করেন যে বেদের অমুক কথায় বোধ হয় পাঞ্চালের কথা কওয়া হইছে। কিন্তু কারো কতার লগেই কারো কতা মিলে না। একজন একখান পুস্তক রচনা কইরা এক বয়ান করে তো আরেকজন তা অন্য রচনায় বাতিল কইরা কন- তিনি যা কইছেন তা ঠিক না; মূলত মহাভারত কইছে অন্যকথা...
তয় এইটা ঠিক যে মহাভারত কইছে বহুত কিছু কিংবা মহাভারতরে দিয়া কওয়ানো হইছে বহুত কিছু। মহাভারত চতুর্বর্ণের কথা কইছে। কিন্তু গুণীজন হিসাব কইরা কন চতুর্বর্ণের সংবিধান মনু সংহিতার রচনাকাল মাত্র খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক। কেউ কেউ কন আরো পরে; খ্রিস্টপূর্ব ২০০ থাইকা ২০০ খ্রিস্টাব্দ। মহাভারতের পরতে পরতে আছে কর্মফল- জন্মান্তরবাদ আর পূর্বজন্মের কাহিনি। কিন্তু ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের উর্বর মগজ থাইকা এই জন্মান্তরবাদের থিওরিখান নাকি বাইরাইছে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০’র দিকে; বর্ণপ্রথা চালুর সময়। মহাভারত জুইড়া অবতারগো বিশাল দাপট; স্বয়ং কৃষ্ণ সেইখানে অবতার; কিন্তু এই অবতারবাদের উদ্ভব হইছে যিশুখ্রিস্ট জন্মাইবার তিন থেকে চাইরশো বছর পরে; গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়; যেইখানে এইটারে জোরালো বিশ্বাসে পরিণত করছে বৌদ্ধ ধর্মের জাতক কাহিনি। কুরুযুদ্ধে বহুত ভারী ভারী লোহার অস্ত্রের বর্ণনা পাওয়া গেলেও মানবজাতি কিন্তু লোহা আবিষ্কার করছে মাত্র খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালে আর তার ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছে আরো বহু পরে...
তো কথা হইল তাইলে মহাভারতে অত বর্ণপ্রথা জন্মান্তরবাদ অবতারবাদের থিউরি আর লোহার অস্ত্র সাপ্লাই দিলো কেডায়?
সাপ্লাই দিছে এখন থাইকা মাত্র দেড়-দুই হাজার বছর আগের কবিদল; মানে পুরাণ রচয়িতাগণ। পুরাণগুলারে যারা অনেক প্রাচীন কইতে চান তারা কন খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থাইকা শুরু হইয়া ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মইদ্যে রচিত হইছে এইগুলা আর যারা পুরাণের বয়স কমাইবার পক্ষে তারা কন এইগুলা খ্রিস্টজন্মের ৬ থাইকা ১২ শতাব্দী সময়কালে উৎপাদিত জিনিস। আর ড. অতুল সুর কন মহাভারতখান লিখিত রূপ পাইছে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ থাইকা ৪০০ খ্রিস্টাব্দের মইদ্যে। মানে যা কারিগরি হইবার তা হইছে এই সময়টাতেই; মহাভারত লিখিত হইবার সময়। এই সময়ে লেখকগো হাতে মগজে বোঁচকায় যার যত অ্যাজেন্ডা আছিল সব তারা ঢুকাইয়া দিছে মহাভারতের পাতায়; আর তাতে চেহারায় বিষয়ে গল্পে পুরা ভজঘট পাকাইয়া হইয়া উঠছে বর্তমান লিখিত মহাভারত। যদিও লিখিত প্রাচীন মহাভারতও কিন্তু এক মহাভারত না; ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন ভার্সনের অস্তিত্ব বিদ্যমান; যদিও সকলেই নিজেরটা সম্পর্কে দাবি করেন- ইহাই আদি ও অকৃত্রিম দ্বৈপায়নের রচনা...
মন্তব্য
ভালোই হ্যাপা দেখি মহাভারত জুড়ে!
কবি তো বলেই গেছেন:
কাজেই যে যার মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখছেন আর কি!
--------
আচ্ছা, ইলিয়াডের সাথে এর কিছু মিল আছে যেন? আমি মহাভারত পড়িনি। ঠ্যালায় পড়ে ইলিয়াড পড়তে হয়েছিল।
ঘটনা এট্টু জেনেশুনে কেন জানি মনে হয় এর সাথে ওর মিল আছে।
----
এ পর্বটা চট করেই শেষ হয়ে গেলো মনে হলো। পড়তে বেশ লাগছিল
হ স্যার। কাব্য বরাবরই আপন মনের মাধুরি মিশায়ে লেখা হয়; মহাকাব্য মানে আপন মনের মহা মহা মাধুরি মিশানো..
০২
ইলিয়াডের সাথে কিন্তু কোনো মিল নাই স্যার। খালি প্রিয়ামের ১০০ পোলা আর ধৃতরাষ্ট্রের ১০০ পোলার হিসাব দিয়া মিলাইলে আমার কান ধইরা মাফ চাওযা ছাড়া কিছু করার নাই
ইলিয়াডের সাথে বরং কিছুটা মিলাইতে পারেন রামায়নরে;
(১) দুইটাই বহিরাগতের আক্রমণে একটা প্রতিষ্ঠিত নগর ধ্বংস হয়
(২) দুইটারই যুদ্ধের মূল কারণ নারী অপহরণ এবং অপহরণকারীরা পরাজিত হয়
(৩) দুইটারই পরাজিতপক্ষের বড়ো বীর ঘটনার সাথে যুক্ত না (হেক্টর আর মেঘনাধ) কিন্তু নিজের দেশের স্বাধীনতার লাইগা দুইজনই মরে
(৪) দুইটাতেই পরবর্তীতে দখলদার/পেটুয়া সরকার হয়
(৫) দুইটাইতেই আক্রমণকারীরা বহুজাতিক কিন্তু প্রতিরোধকারী হইল মাত্র এক দেশ/জাতি...
আরো বহু মিল আছে রামায়ণে আর ইলিয়াডে; কিন্তু মহাভারতের লগে আমি কোনোকিছুরই মিল পাই নাই স্যার
কিন্তু মহাভারত পুরা আলাদা; একেবারেই আলাদা
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
তাইলেই বোঝেন বিদ্যার বহর আমার!!! ঠিক ওটার সাথেই মিল।
দুটোর একটাও পড়িনি রে বাবা
এই আমাকে স্যার বলেন কেন? ঠাট্টা করলেন চামে না
সবাইরেই বিদ্যার জাহাজ হইতে হবে নাকি!
রামায়ণের একেলিস কে, কর্ণ নাকি? ভুল হইলে ঠাট্টা নয় সংশোধন কাম্য
আপনের বিদ্যার কথা কই নাই; আপনি তো কইছেনই যে আপনি ওইটা পড়েন নাই। কিন্তু মহাভারত পইড়া টইড়াও কেউ কেউ এই কথা কয় তার লাইগা কইলাম...
০২
জীবনের শুরুতে কাউরেই স্যার কইতাম না। কিন্তু এই না কওয়ার কারণে মাস্টরা এমন পিটান পিটাইছে যে এখন স্যারটা মুদ্রাদোষেই পরিণত হইছে; সবাইরেই কই
০৩
রামায়ণে একিলিস নাইু; রাম এত বড়ো বীর যে আর কাউরে আনলে তার সম্মানহানি হয়; তয় বিজয়ের নায়ক কিন্তু হনুমান; যদিও তারে একটা বান্দরের চাইতে বেশি সম্মান দেওয়া হয় নাই। উল্টাদিকে ইলিয়াডে সেই যে ট্রয়যুদ্ধের বুদ্ধিগুরু অডিসাস কয়- আমারে যদি কেউ জিগায় তোমার পরিচয় কী? তবে আমি বলব শুধু এইটুকু জানো যে আমি জীবিত ছিলাম মহান একিলিসের সময়
সেইখানে একিলিসি এতটাই উপরে...
০৪
রামায়ণে তো কর্ণ নাই; আছে কুম্ভকর্ণ; আস্ত একটা বেকুব মানুষ; খালি খায় আর ঘুমায়; কে কার পক্ষে আর কে কার বিপক্ষে সেইটাই ঠিকমতো বুঝতে পারে না
মহাভারতের সাথে কোনো মিল নেই যে তা পুরাটা ঠিক না। গ্রিক পুরাণের বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা মহাভারতের কিছু ঘটনার সাথে মিলে যায়, অবশ্যই নিজ মিথের সাথে সঙ্গতি রেখে। কয়েকটা দেই।
১. একিলিসের বড় ভাইদের অমৃতে চুবায় স্বর্গে পাঠানো - ভীষ্মের বড় ভাইদের গঙ্গার বিসর্জন।
২. একিলিস হিল - দুর্যোধনের উরু। লিমিটেড ইন্ভাল্নারেবিলিটি।
৩. সেনাপতির সাথে ঝগড়া করে কর্ণের/একিলিসের যুদ্ধ না করে বসে থাকা।
৪. অশ্বথামা/ ডায়মিডিসের যুদ্ধবিরতির সময় ঘুমন্ত শত্রু হত্যা।
৫. সেমসাইড - হেক্টর- একিলিসের মৃত্যুর পরে যুদ্ধবিরতি উত্সবের সময় গ্রিক ক্যাম্পে মহারথীদের মারপিট। দুর্যোধনের দলে মহারথীদের ক্যাচাল, মুসল্পরবে যাদবদের মারপিট।
৬. ইলিয়াডেও কিন্তু একটা তীরন্দাজী কম্পিটিশন ছিল, একটা সয়ম্বরসভায় : ওডিসিয়াস এক ভিখিরির ছদ্দবেশে এসে প্রতিযোগিতা যেতে।
অফটপিক,
বইটা কি এবার বইমেলাতে আসছে? কোন প্রকাশনীতে গেলে পাব?
-সো।
আমারে মাফ কইরা দেন; আমার দৃষ্টি অত দূর যায় না; কানা মানুষ
০২
বইটা আসছে; শুদ্ধস্বর-এ পাওয়া যাবে
হেহে, এত্তবার পরসি, মিল থাকলে চোখে পড়ে, না থাকলেও মিলায় ফেলি ।
-সো ।
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
মন্তব্য কই হারাই গেল?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
কেমনে খুঁজি?
লীনেন দার মহাভারত নিয়ে লেখাগুলো শুরু থেকে পড়ছি । লীনের দার যুক্তিও অকাট্য নয় কারন একেক জন ভাবনা ও যুক্তির মাধ্যমেই বিশ্লেষন করে একেকটা বিষযকে উপস্থাপন করে। আমি লীনেন দার সব কিছুর সাথে একমত হতে পারবো না কিন্তু ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লাইনের পর লাইন আপনি চিন্তা করে লেখতে পেরেছেন সেটা একটা বিস্ময়ের ব্যপার।পরবর্তী বিশ্লেষনের অপেক্ষায় থাকবো।
অনেক ধন্যবাদ
একমত হবার কোনো দরকার নাই; আমিও অন্যদের সাথে একমত হইতে পারি নাই দেইখা নিজেই বইসা পড়ছি কাহিনি বয়ানে; সম্পূর্ণ ভাবে ভিন্নমতের জায়গা রাইখা
এইটাই ত মহাভারতের মজা। বারে বারে তার বয়ান হয়। আমার পঠিত সাম্প্রতিকতমটি - দ্বৈপায়ন-এর ভিত্তিতে লীলেনকৃত বয়ান। সেইটিকে নিয়ে চলতি ছড়া -
মহাভারতের কথা করিয়া যতন
রচেন লীলেন পুনঃ, পড়ে মুগ্ধ মন।
(এই মন্তব্যটাই হারায় গেছিল। এই বারে এইখানে বসায় দিলাম )
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ। আপনে মুগ্ধ হইছেন যেমন; তেমনি ক্ষেপছেনও অনেকে (তিনাদের কইছি নিজের মতো কইরা আরেকটা লিখা ফালাইতে)
ভাষা নির্বিশেষে যেসব মহাকাব্য 'জাতীয় মহাকাব্য'র রূপ পরিগ্রহ করেছে সেগুলো আসলে একক ব্যক্তির রচনা নয়। এবং অবশ্যই এক প্রজন্মে রচিত নয়। প্রজন্মান্তরে চলার সময় কালিক ও স্থানিক বীর ও দুরাচারেরা, ঘটনা ও দুর্ঘটনারা ক্রময়ান্বয়ে এর সাথে যুক্ত হতে থাকে। এভাবে বহু ব্যক্তির দ্বারা, একটা দীর্ঘ সময় ধরে রচিত-কথিত-বর্ণিত-শ্রুত মহাকাব্যটি যখন কোন মহান সাহিত্যিক সংকলিত করে এক খণ্ডে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন তখন অবধারিতভাবে কিছু জিনিস ঘটেঃ
১। আয়তন নিয়ন্ত্রিত আকারে রাখার জন্য অনেক ঘটনা, চরিত্র ও ব্যাখ্যা বাদ পড়ে যায়
২। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বা ভূখণ্ডের মধ্যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান গোষ্ঠির ভাষ্যগুলো লিপিবদ্ধ হয়
৩। ক্ষমতাবান গোষ্ঠীর পক্ষে অবজ্ঞাকর-হেয়কর-লজ্জাকর বিষয়াদী ও ভাষ্যগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় না
৪। রচয়িতা ও প্যাট্রনদের নিজস্ব জাজমেন্ট চলে আসে
৫। অনেক বিষয় ও ঘটনার কালানুক্রম, পুরুষানুক্রম, ঘটনানুক্রম, আবিষ্কারানুক্রম ধরে রাখা সম্ভব হয় না
৬। চরিত্র বিশেষকে অহেতুক অতি উচ্চ বা অতি নীচ দেখানোর জোরপূর্বক প্রচেষ্টা থাকে
৭। ভাষ্যকার বা ব্যাখ্যাকার উগ্র জাতীয়তাবাদী হলে জাতি বিশেষকে গৌরবান্বিত করার কষ্টকর প্রয়াস থাকে
৮। ভাষ্যকার বা ব্যাখ্যাকার ধর্মান্ধ হলে ধর্ম বিশেষকে মহিমান্বিত করার কষ্টকর প্রয়াস থাকে
৯। ভাষ্যকার বা ব্যাখ্যাকারের নিজস্ব রাজনৈতিক দর্শন প্রতিষ্ঠিত করার কষ্টকর প্রয়াস থাকে
১০। তথ্য ও বর্ণনার ক্ষেত্রে স্বল্প সংখ্য উৎসের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা বা বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে
১১। শেষ পর্যন্ত আদর্শ বিশেষ বা ভাবনা বিশেষকে প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে মধ্যবর্তী ঘটনা ও ব্যাখ্যাসমূহকে বিকৃত করা হয়
১২। জ্ঞানের অসম্পূর্ণতা, অজ্ঞতা ও অন্ধবিশ্বাসজনিত কারণে ভুল ব্যাখ্যা ও ভাষ্য প্রদান করা হয়ে থাকে
১৩। প্রকৃত প্রেক্ষিত সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত ভুল প্রেক্ষিতে ঘটনা উপস্থাপন করা হয়ে থাকে
১৪। অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যক্তির জীবন দর্শন, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সাথে যথাযথ আন্তঃসম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয় এবং সমাজ বিবর্তনের ধারাটিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে অসমর্থ হয়
ইলিয়াড, শাহ্নামেহ্, রামায়ন, মহাভারত – কোনটাই এই ত্রুটিগুলোর ঊর্ধ্বে নয়। জাতীয় মহাকাব্যগুলো নিয়ে অনিঃশেষ বিতর্ক ও অনিঃশেষ মজাটাও এখানে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দেখো মাহবুব !!!!!! প্রাচিনকালে কি ঘটতে পারে আর না পারে সে নিয়ে তুমার লেখালেখি না করাটাই ভালো । তুমি যা নিয়ে লেখালেখি করেছো তা একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্হ । তা বিশ্বাসে আঘাত হানতেছো । তুমি পারলে হোমার হয়ে গিয়ে কিছু একটি লিখে ফেলো ।
শোন মাহবুব , মহাবিশ্ব কিভাবে চলতেছে , এটা নিয়ে আছে মতভেদ । মতভেদের মধ্যেই চলতেছে । তুমি বলতেছো লোহার কথা , আমি বলতেছি সেসময় আটলান্টিস নামক এলাকায় নেটওয়ার্ক ছিলো , বিমান ও ছিলো । দেখো মাহবুব , আজ যদি আমেরিকা রাশিয়া দ্বন্ধে পরমানু বোমায় পৃথীবিতে মাত্র ৩০ হাজার আদিম আদিবাসী রক্ষা পায় আর সবাই মারা যায় তাহলে এখানেই সবকিছু মুছে গেলো , নতুন করে তৈরি হবে আবার জ্ঞান । তুমি কি জানো বিজ্ঞানীরা মনে করেন বর্তমান ভারত ছিলো মাদাগাস্কারের একটি অংশ । ভূমিকম্পের ফলে সেটি এখানে এসেছে । পৃথীবিতে অনেক রহস্য মাহবুব !!!!! এগুলো নিয়ে কথা বলো না , কারন তোমার মধ্যে অবিশ্বাস কাজ করছে । তুমি কি জানো পৃথীবিতে এমন ও প্রানী আছে যাদের অনেক কমিটি করে ধরা যায় নি । বিগফুটের নাম শুনেছেো ? তুমি আজ রাতে বাংলাদেশ সময় রাত ১১:৩০ ডিসকভারীতে চ্যানেলে সত্য ঘটনা অনুসারে ভৌতিক ঘটনার সিরিয়াল অনে যেয়ো । দেখবে পৃথীবি আসলেই রহস্য । কারো মতের উপর আঘাত হেনো না ।
পুরা তো ডর দেখাইয়া দিলেন ভাইজান। কিন্তু লেখা তো শেষ আর প্রকাশকও ছাপাইয়া ফালাইছে
এখন আমার পিসি থাইকা ডিলিট মারলেও ছাপাপুস্তকের কী করব?
০২
আমি যা লিখছি তা একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গ্রন্থ: একটু ব্যাখ্যা দিলে ভালো হইত। ধর্মগ্রন্থ মানে তো হইল কোনো একটা দল মানুষ ধর্মচর্চার সময় যে গ্রন্থটা/গ্রন্থের ঘটনা/আচার অনুসরণ করে; আমাকে একটু দেখায়ে দিয়েন তো মহাভারতের আচার আচরণ কোন ধর্মের মানুষ এখন অসুসরণ করে? কোনটা করে?
০৩
হোমার হইলে তো খারাপ হয় না। হইতে ইচ্ছাও হয়। কিন্তু হোমার হইতে হইলে তো চোখ আন্ধা কইরালাইতে হইব। একটা মাত্র মহাকাব্য লেখার লাইগা জগতের অত রং থাইকা নিজেরে কেমনে বঞ্চিত করি?
০৪
আমি ছোটখাটো মানুষ; আপনার মতো অত বড়ো মহাবিশ্বের সংবাদ রাখার যোগ্যতা রাখি না রে ভাই; ওইটার নিয়ে জ্ঞানীরা কইবেন
তয় আপনের জ্ঞানগুলা আরেকটু সাজায়ে না দিলে জ্ঞানীরাও আপনের প্রশ্ন বুঝতে পারবে কি না আমার সন্দেহ আছে
০৫
আপনে কিন্তু মন্তব্যটা করছেন পাণ্ডবদার মন্তব্যের লেঞ্জায়; কিন্তু নাম ধরছেন আমার; তাই আমি কিছু উত্তর দিয়া দিছি; ভুল হইলে মাফ কইরা দিয়েন
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বই কি আইসা গেছে লীলেন্দা?
পয়লা দিনে গেছিলাম, কইল ৭ তারিখের পর আইতে। আমু নি?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এখানো আসে নাই; ৪-৫ দিন আরো লাগবে মনে হয়
তাইলে সমিস্যা নাই, আমার ঢাকা আইতেও ৪-৫ দিন লাগবে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পাণ্ডবদা ঠিকাছে
খালি ইলিয়াডের বিষয়ে আমার বোধহয় কিঞ্চিত দ্বিমত আছে
আমার হিসাবে ইলিয়াডটাকে তেমন চেঞ্জ করা হয় নাই; ইলিয়াডের পরের কাহিনী নিয়া ইনিড লিখছেন ভার্জিল কিন্তু সেইটা একটা আলাদা বই
আপনার বইটার অপেক্ষায় লীলেনদা।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আসি আসি করিতেছে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ক্যান? কবি হইল বইলা কি যুদ্ধে অস্ত্রপাতি সাপ্লাই দেওয়া নিষেধ। কিছু একটা কইরা খাইয়া পইরা না বাচলে কবিতা করব কেমনে?
মহাভারত আসলেই এক মহা গ্রন্থ, সুতরাং তার ভজঘটও(যদি কিছু থেকে থাকে) যে মহা হবে, তাতে আর আশ্চর্যের কি আছে। মহাভারত(এবং রামায়ণ) একদিকে যেমন মহাকাব্য, অন্যদিকে তেমনি ধর্মকথা, নীতিশাস্ত্র, সমাজচিত্র, ইতিহাস, নৃতত্ত্ববিদ্যা, ইত্যাদি বিষয়ের আধার। সে বিবেচনায় মহাভারত(এবং রামায়ণ) বিশ্বের জগতখ্যাত অন্যান্য মহাকাব্য থেকে অনেকটাই আলাদা। এটি কি মূলতঃ মহাকাব্য, নাকি ধর্মশাস্ত্র, সেটা নির্ধারন করাও বোধ হয় সহজ কাজ নয়। বহুকাল ধরেই এটা এ অঞ্চলের মানুষের ধর্মীয় আবেগ এবং সাহিত্যানুরাগ হয়ত সমানভাবেই ধারন করে আছে, তাতে কোন সমস্যা তো হয় নাই।
মাঝে মাঝেই দেখি, একদল প্রত্নবিজ্ঞানী(?) নুহ'র নৌকার গতিপথ আবিস্কারের অভিযানে বের হন, কেউ কেউ কোন বা পর্বতপৃষ্ঠে সে নৌকার ল্যান্ডিং স্টেশন আবিস্কার করে বসেন। তাহলে আর কুরুক্ষেত্রের স্থান কাল পাত্ররাই বা উপেক্ষিত থাকে কেন? মহাভারত মহাভারতের জায়গাতেই আছে, ভজঘট বাঁধাচ্ছে তত্ত্ববাগীশের দল।
আবিষ্কারের তো সীমাসংখ্যা নাই; টেস্টটিউব বেবি পর্যন্ত মহাভারত থাইকা আবিষ্কার কইরা ফালায় কেউ কেউ; এ্যাটোম বোমা তো আছেই
মহাভজঘটে ফেললেন লীলেনদা। মহাভারতের কাহিনীকার কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস কয়শত বছর বেঁচেছিলেন? উনিতো সনাতন ধর্মের পুরাণসকলের সংকলকও বটেন! কেমনে কি?
দ্বৈপায়ন ভজঘট আসিতেছে পরের পর্বে
মহাভারতের কাহিনী পইড়া আসলাম। এবার আপনের সিরিজ ধরছি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়!
_________________
[খোমাখাতা]
নতুন মন্তব্য করুন