ছোট ছোট সম্পাদক দ্বারা ছোট ছোট লেখকদের ছোট ছোট লেখা নিয়ে প্রকাশিত ছোট ছোট সংকলনগুলোকেই আমরা বলতাম লিটল ম্যাগাজিন। বড়ো পত্রিকার বড়ো সম্পাদকরা বড়ো লেখকদের লেখা ছাড়া ছাপাতেন না বলে আমরা পত্রিকার সাহিত্য পাতা খেয়াল রাখতাম মূলত আমাদের ছোট মানুষদের মধ্যে কে কোন ফাঁকতালে বড়ো পত্রিকায় লেখা ছাপিয়ে বড়ো লেখক হয়ে গেছে তা নজরদারি করার জন্য; যদিও তলে তলে বান্ডিল বান্ডিল লেখার সাথে বড়ো পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক বরাবর অতি বিনয়ের সাথে লেখা ছাপানোর বিনীত অনুরোধ করে নিয়মিতই চিঠি লিখতাম আর প্রতি সপ্তায় সাহিত্য পাতা খুলে আবিষ্কার করতাম- বড়ো লেখক হইতে আমার এখনো বহুত বাকি...
কিন্তু এইসব কথা কাউরে বলতাম না। বললে অন্যরা গালাগালি করত প্রতিষ্ঠান বিরোধী অবস্থানের সাথে বেইমানি করে বড়ো পত্রিকায় লেখা পাঠানোর দোষে। তাই আমরা আড্ডায় এবং প্রকাশ্যে বরাবরই থাকতাম বড়ো পত্রিকা বিরোধী এবং লিটল ম্যাগাজিনের একান্ত ধারক বাহক লেখক আর পাঠক...
মূলত এইসব লিটল ম্যাগাজিনের বাচ্চা সম্পাদকরা ছাড়া আমাদের লেখা ছাপাত না কেউ। আমাদের লেখা যে দুয়েকজন মানুষ পড়ত তা শুধুই এইসব পিচ্চি ম্যাগাজিনের কল্যাণে। তাই এইসব পিচ্চি ম্যাগাজিন আমাদের কাছে ছিল মহা মূল্যবান। নিজের লেখা যেখানে ছাপা হয় তা যেমন সংরক্ষণ করে রাখতাম নিজেকে একজন ছাপিত লেখক হিসেবে প্রমাণ দেবার জন্য তেমনি যেখানে ছাপা হয় না সেটাও রাখতাম সম্পাদকের ঠিকানা সংরক্ষণের জন্য যাতে তার পরবর্তী সংখ্যার জন্য ডাকযোগে কিছু লেখা পাঠাতে পারি....
এইসব ম্যাগাজিন আমরা পড়তামও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পৃষ্ঠা নম্বরসহ। তার পয়লা কারণ হলো বেশি বড়ো বড়ো বই পড়ে আমরা বুঝতে পারতাম না; বরং ছোট মানুষদের লেখাগুলো আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারতাম। আবার বিষয়টা যে আমি ভালোমতোই জানি কিংবা লেখক থেকেও হয়তো ভালো জানি তা বোঝানোর জন্য কোমর বেঁধে তর্কও করতাম। মাঝে মাঝে খামাখাই দু চার লাইন কোট করে লেখকের প্রশংসাও করতাম যাতে তার কাছ থেকেও আমি কিছু প্রশংসা বের করে নিতে পারি...
এই চক্রে আমাদের লেখার সবচে বড়ো প্লাটফর্ম যেমন ছিল লিটল ম্যাগ; তেমনি স্টাডিরও প্রধান অবলম্বন ছিল লিটল ম্যাগ। আর আস্তে আস্তে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির প্রধানতম সম্পদও হয়ে উঠল এই লিটল ম্যাগের সংগ্রহ...
বহুদিন। বহু বছর। ১৯৮৯ সাল থেকে আমার প্রধান ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে উঠে লিটল ম্যাগাজিন। তারপর এক সময় কেমনে কেমনে যেন নিজেরে নিজের কাছে বড়ো লেখক ঘোষণা দিয়া ফালাইলাম। এখন আর লিটল ম্যাগাজিনে লেখা হয় না। অথবা আমাদের সেইসব পিচ্চি সম্পাদকরা নিজেরাও বড়ো হয়ে কেউ বড়ো পত্রিকার সম্পাদক হয়ে গেলো তো কেউ হয়ে গেলো সাহিত্য সম্পাদক তো কেউ হয়ে গেলো প্রকাশক। আবার একসময় দেখি বড়ো সাইজেরও লিটল ম্যাগাজিনও যেমন হয় তেমনি বড়ো বড়ো মানুষের পক্ষেও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা সম্ভব। তার উপরে দেখি এখন বড়ো পত্রিকায়ও লেখা ছাপা হয়। বড়ো সাইজের লিটল ম্যাগাজিনের বড়ো মাপের সম্পাদকও লেখা চান...
ধীরে ধীরে ছোট মানুষের বানানো ছোট লিটল ম্যাগে লেখা কমে যেতে থাকে। লেখা নেই; অথবা দুর তারে দিয়ে কী হবে...
তারপর দেখি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। ব্লগ। নো সম্পাদক; নো বিনীত নিবেদন এই যে স্যার লেখাটা ছাপাইয়া বাধিত করিবেন...। কিংবা লেখা দেবার পর লিটল ম্যাগাজিনের ছোট সম্পাদককে বিজ্ঞাপন জোগাড় করে দিয়ে প্রকাশনার নিশ্চয়তা দেবার মতো বাড়তি খাটনি। ...লেখালেখি এক্কেবারে সোজা। টাইপ করো আর ক্লিক করো...
পয়লা কয়েক বছর অনলাইনে ধুমায়ে লিখি; মানুষ মনে করে ডেলি ডেলি লেখা পয়দা করি আমি। মূলত আমি আমার বাকশো বস্তা খুলে পুরানা লেখাগুলো প্রায় প্রতিদিন তুলে দেই। পাশাপাশি কিছু নতুনও লিখি। তারপর শুরু হয় লেখার সংকট। যেইখানে বিনীত নিবেদন ছাড়াই ক্লিক করলে লেখা ছাপা হয় সেইখানেই দেবার মতো লেখাও নেই। পত্রিকা বাদ। ম্যাগাজিন তো বহুত আগেই বাদ...
বহু বছর আর লিটল ম্যাগাজিন পড়াও হয় না আমার। এখন আমি কিছু কিছু মোটা বইও পড়তে পারি। এখন আমি নেটে বহু কিছু পড়তে পারি; এইসবের কাছে লিটল ম্যাগাজিন বড়োই লিটল লিটল বিষয়ের দরিদ্র লিলিপুট মনে হয়...
কিন্তু লিটল ম্যাগ কেনা বন্ধ হয় না। সংগ্রহ বন্ধ হয় না। কেন কে জানে....
আমার কোনোদিনও কোনো বুক শেলফ ছিল না। আমার বেশিরভাগ বইপত্রের আদি সংগ্রহ ছিল হয় চুরি না হয় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে কেনা। পুরোনো কার্টুন কিংবা বাকশের মধ্যে রাখতাম বইপত্র। বহু আগে একবার বড়ো মামা আমাদের বাড়িতে গিয়ে বইপত্রের দুরবস্থা দেখে নিজের বাড়ি থেকে একটা আমগাছ কেটে তক্তা বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন শেলফ বানানোর মজুরির টাকাসহ। টাকাগুলো অন্যখাতে খরচ করে ফেলায় কাঠগুলা ওইভাবেই পড়েছিল বহুদিন...
আমাদের বাড়িটি ছিল মাটির। হাজারখানেক বই গেছে উই পোকার পেটে। অবশেষে আমাদের সেই বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেলে সমস্ত গেরস্থালি দেনা শোধ করে হাতে যা থাকল তা থেকে থেকে মা আমাকে কিনে দিলেন একটা মোবাইল ফোন আর নিজের বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় উঠে মামার দেওয়া সেই কাঠগুলার সাথে কাঠ মিস্ত্রির মজুরি যোগ করে আমার জন্য বানিয়ে দিলেন বিশাল একটা বুক শেলফ...
কিন্তু আমার বই জায়গা হয় না সেইখানে। শেলফের বাইরেও থাকে বহু বাকশো পেটরা কার্টুন। এক সময় সিলেট ছেড়ে চলে আসলাম। বুক শেলফটা তালা মেরেই রাখলেন মা। বাকশোগুলো খাটের তলায় ছাদের কোনায় গুঁজে রাখলেন। তারপর বহুবার তিনিও বাড়ি বদলেছেন; কিন্তু আমার বইগুলাতে একটাও টোকা পড়েনি। যেখানেই গেছেন; প্রকাশ্যে সবচে বড়ো জায়গাটা জুড়ে বইয়ের শেলফটাই রেখেছেন; তালা মারা। মাঝে মাঝে আমি গিয়ে সেখান থেকে কিংবা বাকশো খুলে কিছু কিছু বই নিয়ে আসি প্রতিবার...
ঘুরতে ঘুরতে ঢাকায় অতি কম পয়সায় বিশাল একটা বাসায় পেয়ে গেলাম আমি। এর একটা ঘর ভরে উঠতে থাকে বইয়ের স্তূপে। এইখানেও আমার কোনো শেলফ নেই। একবার মা এলেন। আশপাশের বাজার খুঁজে তিনি আমার জন্য নিয়ে আসলেন লোহার রড দিয়ে বানানো বিশাল একটা কিচেন রেক- এতে তোর কাজ চলে যাবে...
বইয়ের ভারে কিচেন রেকটা কাৎ হয়ে পড়ে। আমি দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে কোনো মতে চালাই। এর মধ্যে দিনা কিনল একটা পড়ার টেবিল। মোটা মোটা বইগুলা কিচেন রেকে রাখা যায় না বলে মহাভারত নিয়ে আমার কাজ করার সুবাদে একটা দুইটা করে মোটা বই জায়গা করে নিতে থাকল দিনার টেবিল। অবশেষে সেটাও দেয়ালের সাথে কাৎ হয়ে প্রায় ছাদ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকল...
এবার এলো বাড়ি বদলের সময়। সব ভরা হলো কার্টুনে। মাল সরানির কামলারা কার্টুন ধরে আর জিজ্ঞেস করে- এটা অত ভারী কেন?
- এটাতে বই
- ওটা?
- বই...
- বইয়ের বাকশে ওজন বেশি। টাকা বেশি লাগবে....
সাকুল্যে দুই ট্রাকের মধ্যে প্রায় এক ট্রাক এলো এইসব বাকশো। নতুন বাসাটা ছোট। একটা রুমে কামলাদের নামিয়ে রাখা বাকশোগুলার দিকে তাকিয়েই মনে হলো- গেরস্ত বাড়িতে ছোট ছোট লিটল ম্যাগের চাইতে বড়ো একটা আলমারির স্থান অতীব অগ্রাধিকার...
টানা দুই দিনের খাটনিতে বসুন্ধরা টিসুর বড়ো বড়ো চারটা কার্টুন আলাদা করা গেলো। একবার মনে হলো যেগুলোতে নিজের লেখা ছাপা হয়েছে সেগুলা রাখি। আবার মনে হলো যেগুলা গুরুত্বপূর্ণ সেইগুলা রাখি। ফাইনালি মনে হলো কোনোটাই আর কোনোদিন দেখা হবে না। সুতরাং বাদ। এক্কেবারে বাদ...
কার্টুনগুলা ঠেলে ঠেলে বারান্দায় বের করে বাড়ির দুই দারোয়ানকে বললাম- এইসব বাকশে কিছু পুরানা কাগজপত্র আছে; ছাড়ায়ে ফেলেন...
দারোয়ান দুইজন বাকশো ঠেলেঠুলে আমার দিকে হা করে তাকায়- ট্রাক ভাড়া দিয়া আপনি এইসব নিয়া আসছেন ফালাইয়া দিবার লাইগা? এইগুলা তো আগেই ফালাইয়া আসতে পারতেন...
আমি বলি- আগে ফেলে আসলে তো আর এইগুলা থেকে আপনাদের বকশিশের টাকা হতো না। সের দরে বিক্রি করে যা পান আপনারা নিয়ে নিয়েন...
দুই দারোয়ানের চোখ ঝিলিক দিয়ে উঠে। তারা ধরাধরি করে বাকাশোগুলা নামাতে থাকে নীচে...
যাক। লিটল ম্যাগাজিনগুলা অন্তত দুজন লিটল মানুষকে শেষ পর্যন্ত কিছু লিটল আনন্দ দিতে পারল লিটল অ্যামাউন্টের কিছু পয়সার আশায়...
২০১৫.০৬.৩০ মঙ্গলবার
মন্তব্য
আপনার হাল আর আমার হাল দেখি প্রায় কাছাকাছি। বুকসেলফ কেনায় আমার খুব আপত্তি। এই টেকায় কতোগুলো বই কেনা যাইতো!
আমার জীবনে এই একটা বিশাল দুঃখ
মিরপুরে আমাদের আদি বাড়িতে বই দেওয়ালে ঠেস দিয়ে রাখতাম। আম্মা একটা বিশাল সেলফ বানিয়ে দিয়েছিলো বিরক্ত হয়ে। মিরপুরের বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেলো, পরিবারের লোকজন বিদেশ চলে গেলো। বই কই গেলো র্যাক কই গেলো আমি জানি না
তারপর ভাড়াবাড়িতে আবার বই জমতে লাগলো। দেয়ালে ঠেস দিয়েই রাখি। অফিস থেকে ফেলে দেওয়া একটা সেলফ এনে কিছু বই রাখা হলো। বিরক্ত হয়ে নূপুর একদিন ধরে নিয়ে গেলো কাটাবন। দু'টো বুকসেলফ আর একটা টেবিল বানাতে বাধ্য হলাম। অফিস থেকে আবার ফেলে দেওয়া একটা বিশাল বুকসেলফ আর একখান টেবিল জুটে গেলো কপালে। বুকসেলফ ছাপিয়ে দুই টেবিলে বই উঠে এসেছে। এখন আমার আরেকটা বুকসেলফ দরকার। দরদী সহৃদয়বান ব্যক্তি খুঁজতেছি যে একজন 'দরিদ্র ও মেধাবী পাঠকরে' বুকসেলফ দান করবে
যাহোক, যেকথা বলতে চাইছিলাম সেটা বলি। আমার ঘরে কিন্তু বই রাখার বিস্তর জায়গা আছে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বইগুলো ফেলে দিয়ে বা দান করে দিয়ে সেলফের প্রয়োজনীয়তাটাই “নাই” করে দিতে পারেন। আমার সেলফ আছে কিন্ত বই নাই, আপনি চাইলে সেখানে কিছু রাখতে পারি।
পরের রাউন্ডে ওইগুলা খালাস হবে
একটা হিসাব কইরা দেখছি; বচ্ছরে আমি এখন আর ৪০টার বেশি বই পড়তে পারি না; সেই হিসাবে আগামী ৩০ বছরে মোট বই পড়তে পারব সর্বোচ্চ ১২০০টা
(এর পরে বাইচা থাকলে তো ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কিছুই পড়ার আগ্রহ থাকব না)
এর মানে হইল কিছু খালাস করতে হইব আর কিন্তে হইব গুইনা গুইনা...
এই হিসেবটা অতীদীর্ঘদিন আগে করছি। বিদেশে আসার পর মূলত। এইখানে বই টেনে বেড়ানো যায় না। কাগজের বই কেনা বাদ দিয়ে তাই ই-বই কেনা চলে। সেসব হারায় না। একটা কিন্ডলে সঙ্গে করে নিয়ে ঘোরা যায়। সমস্যা হচ্ছে বাংলার বই কিন্ডলে কমই পাওয়া যায়। যেসব পড়তে চাই সেসবও।
হিসেব করে দেখেছি জীবনে হাজার দুয়েকের বেশি বই পড়া হবে না। যদি কেঁদেকেটে লেগে থাকি তবুও ওই পর্যন্তই যেতে পারবো। বরং অনেক কম হবে। তাই হিসেব করে কিনি। হিসেব করে পড়ি। অন্তত নিজেরে বুঝ দেই, হবেনা, জীবনটা ছোট। সামর্থ আরো ছোট।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আপনার বুকশেলফ, টেবিল আর বিস্তর জায়গাঅলা ঘরটা যেদিন উপচে উপচে পরবে, সেদিন যদি কোন ছোট মানুষকে ছোট্ট একটু আনন্দ দেয়ার বাসনা জাগে, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক এই অধ্ম ছোটলোকটিকে স্মরণ করিবেন।
জানা থাকল
১।
আপনার মামার দেয়া ঐ আমকাঠের তক্তাগুলি আছে এখনও?
২।
আবার দারোয়ানরে ডাকার মতন অবস্থা সৃষ্টি হলে ডাক দিয়েন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
তক্তা সব কাঠ হইয়া গেছে
০২
আগ্রহ নোটেড
১।
২।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বইগুলি আপনার, কিন্তু কেন জানি অন্তরটা ছলাৎ করে উঠল! বিসর্জন বেদনা ছড়িয়ে পড়ল হৃদয়কোণে!
তবে বাসা বদলে প্রায় একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল, লীলেন ভাই। থালাবাটির বস্তা বাঁধা সাড়া হয়ে যায় অনেক আগেই, তবু বইয়ের বস্তা বাঁধা ফুরোতেই চায় না। সাথে আছে সবার বিরক্তি, নাক সিঁটকেনো, মানে, 'আতেঁল দেখেছি, কিন্তু এমন আঁতেল----'।
তবু নতুন বাসায় এসে প্রথমেই খুলি বইয়ের বস্তাগুলি, তীব্র উদ্বেগ নিয়ে, দুমড়ে-মুচড়ে কি ক্ষতিটা না জানি হয়েছে প্রিয় বইগুলির!
।।।।।।।।।।
অনিত্র
বইয়ের লাইগা অত মায়া রাইখা কী লাভ?
লীলেন্দা ভাল্লাগছে। বাড়ি বদলের আরো কাহিনী দেন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কাহিনি তো দিতে চাই। কিন্তু পুরা কাহিনি কইতে গেলে তো বিবিধ পত্রাবলী নিয়াও লিখতে হইব। কিন্তুক গেরস্ত মানুষ হইয়া সব প্রকাশ্য আর গোপন পত্রাবলি নিয়া কেমনে গপ্প বানাই সেই চিন্তায় আছি
আর যে লোকটাকে তার সমস্ত সংগ্রহ ফেলে দিয়ে শুধু একটা সুকুমার সমগ্র নিয়ে (কারণ তার সদ্য তিনে পা রাখা কন্যাটি ঐ বইয়ের অজস্র কবিতা আবৃত্তি করতে পারত যে গুলি সে তার পৃথিবী বদলে যাওয়ার মানসিক ধাক্কায় এক ঝটকায় সব ভুলে যাবে চিরদিনের মত) পাড়া-দেশ-মহাদেশ ছাড়িয়ে আমূল অচেনা একটা ভূখণ্ডের বাড়িতে গিয়ে উঠতে হয়, তার ভিতরটা যে কিভাবে ভেঙ্গেচুরে যায়!
আপনার বেদনার ভাগীদার।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সব ফালাইয়া দেয়া কিন্তু সহজ। বাইছা ফালানো কিন্তু নিজেরে খামছানোর সমান
ভালো লাগলো আপনার বাড়ি বদলের কাহিনী তবে দারোয়ানকে বখশিশ দেবার জন্য বইগুলো বিসর্জন না দিয়ে অন্যকিছু বিসর্জন দিলে আরও ভালো লাগতো।
“আমার কোনোদিনও কোনো বুক শেলফ ছিল না।”-----আর আমি বুক শেলফ পেয়ে মুখোমুখি হয়ে ছিলাম করুণ পরিণতির। আমার বইগুলো এখানে ওখানে স্তুপ হয়ে পড়ে থাকে দেখে আম্মা খুব সুন্দর একটা শেলফ কিনে দেন।মনের মাধুরী মিশিয়ে বইগুলোা সাজিয়ে ভার্সিটি হলে ফিরে আসি। একমাস পর বাসায় গিয়ে দেখি শেলফটা খালি খালি লাগে।কিছুই বুঝিনা ঘটনা কি? আম্মার কাছে শুনি ইদানীং আমার ছোট কাজিন রোজই আম্মাকে দেখতে আসে।সে নাকি আজকাল সাহিত্য সংগঠনও করে,স্কুল ম্যাগাজিনে দু’একটা লেখা ও নাকি ছাপা হয়েছে।তো আমি আসার পর যথারীতি সে হাজির, আমাকে দেখে মনে হলো একটু যেন অপ্রস্তুত হয়েছে।আম্মাকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে এরুম ওরুম ঘুরে হঠাৎ অনেকটা ঝড়ের গতিতে বের হয়ে গেলো। জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ওর হাতে মেমসাহেব আর গর্ভধারিণী বইদুটো। এবার শেলফ খালি খালি লাগা আর ওর রোজ আম্মাকে দেখতে আসার রহস্য বুঝলাম।
Jaraahzabin
একবার গেরস্ত হইয়া গেলে জায়গা দাম বুঝতে হয় ভাইজান...
০২
আপনার বইগুলা তাও তো পড়ার কামে লাগছে। খারাপ কী?
হ
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
জ্বি হ
মন খারাপ হলো কেন জানি! লিটল ম্যাগের দু'চারটা রাখতেন আপনার মেয়েটার জন্য। বড় হয়ে ওর ভালো লাগতো বাবার শুরুটা কোথা থেকে হলো তা জেনে। আপনার লিটল বিউটুন গুড্ডু মেয়েটা তো পড়ুয়া অনেক(এখনই অভিধান পড়ে!) ওর কথা মনে করে কিছু রাখলেন না!
মেয়ে বড়ো হইবার পর 'লিটল' বলতে বুঝাইব বর্তমানের মাইক্রো চিপের চাইত্ওে ছোট (ন্যানো?) কিছু। বর্তমান 'লিটল'গুলারে তো তখন তারা কইব ল্যাপটপ সাইজের ম্যাগাজিন
কত কি মনে পড়ে গেল! বইয়ের পাশাপাশি ম্যাগাজিন জমানোর শখ ছিল আমারো। লিটলম্যাগ থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রা রোববার। আশি দশকের বিরাট একটা সংগ্রহ ছিল পুরোনো ম্যাগাজিনের। ৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে বইগুলো কোনমতে রক্ষা পেলেও ম্যাগাজিনের বিপুল সংগ্রহটা হারিয়ে গেল। এখন আর ম্যাগাজিন জাতীয় কিছু কিনি না বড় বড় লেখক বাদে পড়ি না
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হ। সংগ্রহ থাইকা সংরক্ষণ ঝামেলা বেশি
বই তো আসলে অন্য কিছুর মতো না, যতবারই পুরানো বই অন্য কাউরে দিছি- নিজের একটা অংশ চলে গেছে সাথে।
আজকাল অনেক সাহিত্য পত্রিকা আসতেছে মনে হয়। সেইখানে লিটল ম্যাগুগুলাই সাইজে একটু নাদুস হয়ে গেছে মালুম।
এখনকারগুলা লিটল ম্যাগাজিন না; বামন ম্যাগাজিন। দৈর্ঘ্যে ছোট কিন্তু প্রস্থে বড়ো
বইয়ের প্রতি মায়া রাখি না। এককালে রাখতাম। সবথেকে মূল্যবান বইগুলো আরো মূল্যবান কিছু স্মৃতির সাথে বয়ে গেছে। যেতে যেতে একসময় মায়াটাই চলে গেল। সচরাচর এক বই একাধিকবার পড়া হয় না। তাই একবার অক্ষরগুলো পড়া হয়ে গেলে মলাটে বাঁধা শরীরটা নিয়ে ভাবিত হই না আর। যে চায় নিয়ে যায়। কেউ না কেউ পড়লেই হলো।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হ। বই জমানোর কোনো মানে হয় না। পড়া শেষ হইলে দিয়া দেওয়াই ভালো
বইয়ের মায়া কাটায় উঠছি। কারণ মায়া রাখা যায় না আসলে। যেগুলো নিজের আগ্রহ ও সংগ্রামের সাথে যায় আর যেগুলো স্মৃতির সাথে সংযুক্ত সেগুলো রাখি। বাকিগুলো স্ক্যান করে হাড্ডিতে তুলে রাখি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমার একটা সফট লাইব্রোরি ছিল; আদিযুগের কম্পিউটারের সাথে সেইটাও গেছে
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
ধন্যবাদ
ভালো লেগেছে। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
সাদা মেঘদল
আইসা গেছে
আমি আসার পর দাদার ব্যাচেলর বাসাটা বাতিল হয়ে গেল, মানে চিলেকোঠা থেকে আমাদের ঠাঁই হলো বাসার সবচে’ উপরের তলায়। ধরাধরি করেও দাদার বাক্সভরা বইগুলো আমরা আনতে পারিনি সব, হাতে করে নিয়ে আসতাম; বাকিগুলো ওই চিলোকোঠার পরের বাসিন্দা দিয়ে গেছে আমাদের। একটা শেলফ ও চেয়ে চেয়ে গিফট নিলো আমার কাছ থেকে, তাতে অর্ধেক বইও ধরে না, আমারগুলো আমার রুমে গড়াগড়ি খায়, মাঝেমাঝে দাদার পিচ্চির হাতে দুই চারটা মলাট আত্মবিসর্জন করে... বাড়ি বদলের গল্পটা দারুণ
দেবদ্যুতি
বাড়িতে শেলফ বানিয়ে বই রাখার বোধহয় আর কোনো মানে নাই; পড়া শেষ হয়ে গেলে যারা পড়ে নাই তাদের দিয়ে দিলেই হয়
নতুন মন্তব্য করুন