রামায়ণের শোলক সন্ধান ১: সীতা কার মেয়ে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শুক্র, ৩১/০৭/২০১৫ - ৩:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সীতা কি রাবণের মেয়ে? নাকি শুধু মন্দোদরীর সন্তান?

বাঙালির লাইগা রামায়ণের কিছু ভয়ানক ভার্সন আছে। যেইগুলাতে দেখা যায়; রাবণ যখন মায়াসুরের কাছে তার কইন্যা মন্দোদরীরে বিবাহ করার লাইগা প্রস্তাব দেয় তখন মায়াসুর একটা দৈববাণী স্মরণ কইরা রাবণরে সতর্কবাণী শোনায়- মন্দোদরী গর্ভজাত প্রথম সন্তান কিন্তু হইব তার স্বামীর বংশনাশের কারণ...

সতর্কবাণী শুনাইবার পর কাহিনিটার আবার দুইটা উপভার্সন পাওয়া যায়। একটাতে কয় মন্দোদরীর প্রথম সন্তানটা আছিল বিবাহপূর্ব; যারে সে জঙ্গলে ফালাইয়া আইসা পরে রাবণরে বিবাহ করে। আর অন্যটাতে কয়- রাবণরে বিবাহের পরেই সে জন্ম দেয় প্রথম সন্তান আর তারপর রাবণ আর মন্দোদরী দুইজনে শল্লা কইরাই সন্তানটারে ফালাইয়া আসে বনে। দুই ভার্সনেই মন্দোদরীর পয়লা সন্তানটা কন্যা...

দুইটা কাহিনি কিন্তু আবার আইসা একই উপসংহারে মিলে; মানে মন্দোদরী কিংবা রাবণ আর মন্দোদরী ফালাইয়া দিবার পর চাষবাস করতে যাওয়ার পথে কিংবা ফিরার পথে কিংবা চাষবাসের সময় জনক রাজা সেই পরিত্যক্ত কইন্যারে পাইয়া কোলে নিয়া ঘরে আইনা বড়ো কইরা বিবাহ দেন দশরথের পোলা রামের সাথে। মানে নিশ্চিতভাবে মন্দোদরীর সেই গর্ভজাত কইন্যাটাই হইল সীতা; হোক সে রাবণের ঔরসজাত; অথবা না...

রামায়ণের বাঙাল ভার্সন কিংবা অন্য অনেক ভার্সনে এই কাহিনিটা নাই। কিন্তু তারপরেও একটা খটকা থাইকা যায়। তা হইল; রাবণের আলুর দোষ তো নতুন কিছু না। মন্দোদরী সেইটা জানেও। এবং সীতা ছাড়া অন্য মাইয়াদের লগে মিলামিশায় মন্দোদরী রাবণরে বাধা দিছে এমন কোনো কাহিনি কিন্তু নাই। অবশ্য সেইযুগে একাধিক নারীসঙ্গ ব্রাহ্মণ কিংবা রাজা কারো লাইগাই দোষের কিছু আছিল না; হোক তা লোভ দেখাইয়া কিংবা জোর কইরা। আর রাবণ তো খালি রাজাই আছিল না; আছিল রীতিমতো চতুর্বেদী ব্রাহ্মণ...

রামায়ণের বেশিরভাগ ভার্সনে কয় যে পয়লা থাইকাই রাবণ সীতারে অশোকবনে রাখে। কিন্তু লেখক হরিশঙ্কর জলদাস একদিন কইলেন তিনি কোথাও পাইছেন যে সীতারে ধইরা নিবার পর রাবণ প্রাসাদ থাইকা সবাইরে বাইর কইরা দিয়া এক রাত্তির থাকে সীতার লগে একা। তার পরের দিন মন্দোদরীর বাধায় সীতারে অশোকবনে সরায়...

সীতার লগে মিলামিশার বিষয়ে রাবণরে যে মন্দোদরী কঠিন বাধা দিছিল তা কিন্তু সকল রামায়ণেই আছে। তবে কি মন্দোদরী নিজের চেহারার লগে সীতার চেহারার মিল দেইখা চিনা ফালাইছিল তারে? এর লাইগাই কি সে এই একটামাত্র নারীর ক্ষেত্রে শুধু রাবণরে বাধা দিছিল যৌনতায়? মন্দোদরী কি রাবণরেও জানাইছিল সীতার লগে তাগো সম্পর্কের কথা?

প্রশ্নটা ঘুরপাক খায় সীতারে অশোকবনে সরাইয়া দিবার সিদ্ধান্তের কারণে; অশোকবনে নিবার পর রাবণ আর তারে স্পর্শ করে নাই...

মন্দোদরীর লগে সীতার চেহারার মিল নিয়া এইখানে আরেকটা সূত্র একটু ঝিলিক দিয়া উঠে। হনুমান লঙ্কায় মন্দোদরীরে দূর থাইকা দেইখা ভাবছিল ইনিই বোধহয় সীতা। যদিও বেশিরভাগ রামায়ণ কাহিনি কয় যে সীতার অপহরণ হইবার পরেই রামের লগে হনুমানের পরিচয়। মানে লঙ্কার আগে সীতারে দেখে নাই হনুমান। কিন্তু রাম লক্ষণের লগে হনুমানের যে সম্পর্ক আর আনুগত্য তা দেইখা একটু ভিন্ন কথাই মনে হয়। মনে হয় হনুমান রাম পরিবারের লগে আগে থাইকাই পরিচিত আছিল; কিছু কিছু উপভার্সনেও কিন্তু একই কথা কয়। না হইলে সুগ্রীব কইল- কে যায়; যা দেইখা আয়’ আর হনুমান গিয়া রামেরে দেইখা তার ভক্ত বইনা গেলো; এইটা অত সহজে মাইনা নেয়া কঠিন। আর যদি হনুমান রাম পরিবারের লগে পূর্ব পরিচিত হয়; তবে বহুদিন পরে মন্দোদরীর চেহারা দেইখা তার সীতা বইলা চমকাইয়া উঠারই কথা; কারণ মাইয়ার লগে মায়ের চেহারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো একেবারেই এক; আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রচুর মিল...

.................
অজুহাত

অলৌকিকত্ব বাদ দিয়া হয়ত রামায়ণেরও একটা সহজিয়া গল্প খাড়া করা সম্ভব। সেই দুঃসাহসী জায়গায় যাইতে পারি বা না পারি; ঘাঁটাঘাঁটি করতে তো অসুবিধা নাই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম রামায়ণপাঠের ধান্দাগুলা একটা দুইটা কইরা সকলের সাথে শেয়ার করা; যাতে আরো পাঠ কিংবা ভিন্ন পাঠ থাইকা ধান্দাগুলারে সরলীকরণ করা যায়। কারণ এই কম্ম আমার একলার পক্ষে সামলানো এক্কেবারে অসম্ভব...

এইখানের সব কথাবার্তার পুরাটাই প্রাথমিক বিশ্লেষণ; কিংবা মাথায় গজাইয়া উঠা প্রশ্নমালা মাত্র। যেকোনো মত; ভিন্নমত; বিশ্লেষণ কিংবা প্রশ্ন; যার পাঠে যা আছে দয়া কইরা আমারে সাপ্লাই দেন। আশা করি তাতে একটা ভালো পাঠে পৌছাইয়া যাইতে পারব আমি...


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

রামায়ণ! হৈ হৈ হাততালি

পুনশ্চঃ ইটা রাইখ্যা গেলাম... - ১

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ইটা মাইনাস ক্যারে?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ইটা রাইখ্যা গেলাম... : ১

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ইটার পাশের দেয়ালে দুইটা ছিদ্র ক্যারে?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

দুইডা জোড়া দিলে তো বুইলবেন যে ...

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

খেকশিয়াল এর ছবি

অতুল সুরের এক বইয়ে তারে দশরথ জাতকের গল্পের থিকা উল্লেখ করতে দেখি যে দশরথ বেনারসের রাজা ছিলেন আর রাম সীতা লক্ষ্মণ সব ভাই বোন। http://www.sacred-texts.com/bud/j4/j4025.htm

জৈনদেরও একটা ভার্সন আছে রামায়ণ এর, ঐটা পাই নাই এখনো।

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। সেইটা আছে; রাম-সীতা ভাইবোনের কাহিনিও আছে। সেইটা নিয়া প্রশ্ন তৈয়ারি আছে; করব নে সিরিয়ালি; আপাতত সীতার সতীত্ব আর রাবণের রাক্ষসত্ব নিয়া আছি...

০২
রামায়ণের ভার্সনসমূহ সম্পর্কে আসব সবার শেষের দিকে; খালি ভারতীয় রামায়ণ না; নেপালিসহ অভারতীয় রামায়ণগুলা্ও সেইখানে তুইলা আনব আশা করি

০৩
একখান সূত্র দিয়া পার পাইয়া যাইও না; আরো দেও

মন মাঝি এর ছবি

গ্রীক রামায়ণও একখান আছে না? হাসি

****************************************

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হায় হায়। সেইটার কথা তো জানি না
আপনে কি ইলিয়াডের কথা কইতাছেন?

ইলিয়াডের প্রিয়ামের লগে রাবণের মিল আছে; তার শতপুত্র মিল আছে; হেক্টরের লগে মেঘনাদের মিল আছে; কিন্তু কাহিনি আর কনটেক্সট আলাদা;
আমার কোনোকালেই মনে হয় নাই যে এই রামায়ণ আর ইলিয়াডে পরস্পর কোনো প্রভাব আছে
মিলগুলা কাকতালীয় হইতে পারে

ঈয়াসীন এর ছবি

সাথে একটু তথ্যসূত্র যোগ করলে আমরাও উপকৃত হইতাম। মন্দোদরীর বিবাহপূর্বক সন্তানের কথা আমার জানা ছিল না। কিংবা অনেক আগে পড়া বলে ভুলেও যেতে পারি। যাইহোক, ভাল উদ্যোগ নিছেন। রামায়ন, মহাভারতে আমার আগ্রহ ব্যাপক। ধন্যবাদ আপ্নারে।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইতো বিপদে ফেললেন স্যার; তথ্যসূত্র টাইপ করা বড়োই কঠিন কাম;
আপাতত প্রশ্নগুলা কইরা যাই; কয়েকটা গুচ্ছ প্রশ্নের পর বিষয় ধইরা তথ্য যোগ কইরা দিমুনে

০২
মন্দোদরীর বিবাহপূর্ব সন্তানের কথা সব কাহিনিতে নাই; কিছু কিছুতে আছে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চন্দ্রাবতীর রামায়ণে আবার ভিন্ন কাহিনী

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চন্দ্রাবতী রামায়ণে আছে দেবতাগোরে ঠ্যাঙ্গায়ে রাবণ যখন লঙ্কায় ফিরলো, প্রচুর পরিমাণে দেবকন্যা অপহরণ করে নিয়ে আসলো আর তাদেরে নিয়া অশোকবনে ফুর্তি করতে লাগলো।
এই কথা শুনে মন্দোদরী মনের দুঃখে খাইলো বিষ। কিন্তু মরলো না, গর্ভিত হইলো। দশমাস পর ডিম প্রসব করলো। তখন গণকেরা কইলো এই ডিম রাক্ষসদের ধ্বংস করবে। এরে ধ্বংস করো। কিন্তু মন্দোদরী কান্নাকাটি করে রাবণের মন গলাইলো। ধ্বংস না কইরা এই ডিমরে সোনা রুপার খাঁচায় বন্দি করে সমুদ্রে ফেলে দিলো।
গরীব জেলে মাধব, সেদিন কোনো মাছ ধরা পরে না তার জালে, হঠাৎ এই সোনারুপার খাঁচাওয়ালা ডিম পায়। সোনারুপা বিক্রি করে বড়লোক হয়। মাধবের বউয়ের নাম সতা।
সতা স্বপ্ন দেখে ডিমের ভিতরে এক নারী আছে, যে তারে বলতেছে জনকের কাছে নিয়ে যেতে, জনক তার পিতা। এইভাবে সীতার জন্ম। সতার নামে মিলায়ে তার নাম সীতা রাখা হয়।

বাংলাদেশ ভূখণ্ডের আর কোনো কবি কি রামায়ণ রচণা করেছিলেন চন্দ্রাবতী ছাড়া?

আমাদের কিশোরগঞ্জের কবি চন্দ্রাবতী ১৬০০ সালের আশেপাশে যে রামায়ণ লিখছিলেন তাতে কি বঙ্গে ইসলাম প্রচারের কোনো সংযোগ আছে?

মুসা নবী আর ফেরাউনের কাহিনীর সঙ্গে চন্দ্রাবতী বর্ণিত রাবণ সীতা অনেকটা মিলে যায়। যে মিল আর কোনো রামায়ণে পাই না

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

চন্দ্রাবতী রামায়ণে সীতার জন্ম কাহিনিটা সত্যিই অন্য সবগুলা থাইকা আলাদা; এই সম্পর্কে আপনার প্রশ্নটা নিয়া ভাববার মতো। কারণ ষোড়শ শতকে বাংলায় সেমেটিক মিথের পরিচিতি অনেক ব্যাপক ছিল। ময়মনসিংহ গীতিকায়ও তার প্রভাব স্পষ্ট (চন্দ্রাবতী নিজেও তো ময়মনসিংহ গীতিকার কবি)...

০২
বাংলাপিডিয়ার সূত্রে আরো কিছু রামায়ণের উল্লেখ পাওয়া যায়; তার মধ্যে শতেরো শতকের অদ্ভুতরামায়ণ (অদ্ভুতানন্দ/নিত্যানন্দ রচিত) এইটা নাকি উত্তরবঙ্গে খুব জনপ্রিয় ছিল। বাংলাপিডিয়াতে আরো কিছু নাম আছে; এগুলোর একটাও দেখার সুযোগ হয় নাই আমার। কিন্তু অদ্ভতভাবে বাংলাপিডিয়াতে চন্দ্রবতীর নাম নাই...

০৩
বাংলাপিডিয়ার লিংকটা এইখানে রাইখা গেলাম; হয়ত কেউ কেউ কিছু সূত্র দিতে পারেন
http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A3

অতিথি লেখক এর ছবি

বদ্দা আপনে কিশোরগঞ্জের নি? আমার এলাকার পোলা। আসেন কুলাকুলি করি। কোলাকুলি চন্দ্রাবতীরে নিয়া অচিরেই একখান লেখা দিমু।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

না, আমি কিশোরগঞ্জের না। আমগো বলছি বাংলাদেশের অর্থে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

খালি চন্দ্রাবতী ক্যান? যত রামায়ণ তত কাহিনি; আর কৃত্তিবাসী পুরাই একখান আলাদা কাহিনি; তিনি রামেরে দিয়া বাঙালি দূর্গাপুজাও করাইছেন

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সীতা কার কন্যা এটা একটা ধন্ধ বটে, তবে বহুদিন থেকে বহু মানুষ আরও একটা গুরুতর ধন্ধে নিমজ্জিত- "সীতা কার বাপ?"

অতিথি লেখক এর ছবি

এবং এই ঘোরতর ধন্ধটা সবার মনে উদ্ভূত হয়নি; শুধুমাত্র তাদেরই কিছুসংখ্যকের হয়েছে, যারা সপ্তখন্ড রামায়ণ পুরোটাই পড়ে শেষ করেছেন! হাসি

রাজর্ষি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। কারণ তিনারা বাল্মিকীর লেখা থাইকা দুইখান বাড়তি কাণ্ড পড়ছেন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাল্মিকী লিখছিলেন রামায়ণের ৫খান কাণ্ড; ২ থাইকা ছয়। সেইখানে সীতা একজন নারীই। তাই আপাতত আমার চিন্তাভাবনা নারী সীতারে নিয়াই

তয় যারা বাল্মিকীর ৫কাণ্ডের লগে আরো দুই কাণ্ড যোগ কইরা ৭কাণ্ডের রামায়ণ পড়েন; সীতা বাপ না মা সেইটা মনে হয় তাগোরই আবিষ্কার

রণদীপম বসু এর ছবি

প্যাঁচানি শুরু হইলো তাইলে !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ স্যার। শুরু কইরা দিলাম। তয় আপনার কাছে কিন্তু অনেকগুলা প্রশ্নের উত্তর পাইবার আশা রাখি

অতিথি লেখক এর ছবি

রাবণ না ছিল অনার্য রাক্ষসদের রাজা! রাক্ষসরা কি বেদ পাঠ করতে পারত?

Emran

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আর্য অনার্য বহুত জায়গাতেই মিলা মিশা একাকার। বেদরে বলা হয় ব্রহ্মার মুখনিঃসৃত বাণী; অথচ স্বয়ং ব্রহ্মাই হইলেন গিয়া অবৈদিক দেবতা... তো?

০২
রাবণ খালি বেদ পাঠ করে নাই; বিশেষজ্ঞ্ও আছিল। রাবণরে যে দশানন/দশমাথা কওয়া হয় সেইটা হইল তার দশ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের লাইগা। তার মাঝে আছে ছয়টা শাস্ত্র আর চাইরটা বেদ; মোট দশটা জ্ঞান...

রাবণের লেখা কিন্তু একটা বইও আছে রাবণসংহিতা নামে; জ্যোতিষশাস্ত্রের বই

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এইবার আমার নিজস্ব চিন্তা কই, বাল্মীকী যখন রামায়ণ লিখছিলেন, সেইটা সম্ভবত একটা অর্ডারি কাজ ছিলো। রামের প্রশংসাই সেখানে মুখ্য। অনার্য রাবণরে রাক্ষস, মানুষখেকো ইত্যাদি বানাইতে তিনি কার্পন্য করেন নাই। কিন্তু রাম একজন হেনতেন লোকরে পরাজিত করলে তো হয় না, তাই প্রতিপক্ষরেও বিরাট করতে হয়, তাই রাবণের দশমাথা ইত্যাদি।

রামায়ণের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং পার্ট হইলো সীতার সতীত্ব প্রমাণ। রামের চরিত্র বিনির্মানের জায়গায় সীতার চরিত্র প্রধান হয়ে যায়। কোনোভাবেই একজন অনার্যর সঙ্গে সীতাকে বিছানায় নামানো যায় না। দশমাস পার হইলেও। রামের বউ একজন লোকালের সঙ্গে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় শুইছে এইটা কোনোভাবেই ইতিহাসে রাখা যাবে না। এই কারণেই রামায়ণে রামের চেয়ে সীতা অনেকাংশে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রামের বউরে যে কোনো মূল্যে গরীব গুর্বা অনার্য রাক্ষসদের সংস্পর্ষমুক্ত রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা রামায়ণে আছে।
পাশাপাশি প্রজাদের গুঞ্জন ইত্যাদিতে রামের চিন্তার পরিবর্তনও আছে।

রামায়ণ শেষ পর্যন্ত যতোটা না রামের হইছে, বাধ্য হয়েই সেটা শেষ পর্যন্ত সীতার চরিত্র নির্মাণের ঝাণ্ডা হইছে।

আজকে আপাতত অফ যাই, কালকা আবার আলাপে ফিরবো। অনেক আলাপ বাকী আছে

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রামের কাহিনি যত দিন আগেরই হোক না কেন; বলা হয় বাল্মিকী আছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালের মানুষ। তার মানে তিনি রচনা করছেন তিনার মনের মাধুরি মিশায়ে। এই ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের ভাষা ও ছন্দ কাহিনি কাবিতার কয়েকটা লাইন রামায়ণ রচনায় বাল্মিকীর ক্রিয়েটিভিটিরেই বেশি গুরুত্ব দিছে:

ঘটে যা তা সব সত্য নহে । কবি , তব মনোভূমি

রামের জনমস্থান , অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো । '

অর্ডার আর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এত বড়ো রচনা এই যুগেও প্রায় অসম্ভব; সেই যুগে তো কল্পনাই করা যায়। কিন্তু রামায়ণ রচনায় পৃষ্ঠপোষক কারা ছিল; সেইটা বাইর করা কিন্তু বহুত কঠিন কাজ। হৈতে পারে কোনো বৈষ্ণব রাজা; যে কৃষ্ণ ঘরানার বৈষ্ণব থাইকা আলাদা একটা বৈষ্ণব ঘরানা খুজতেছিল (যদিও এখন রাম আর কৃষ্ণ দুইজনেই একই বৈষ্ণব ঘরানার অবতার)

০২
আমার একটা হিসাবে কয় রাবণ আর রাম মূলত দুই সময়ের মানুষ। রাবণের কাহিনিগুলা আলাদাভাবে খুজলে রামের সময়কার কনটেক্সট এর সাথে কেমন জানি মিলে না। হইলে হইতে পারে বাল্মিকী একটা সমকাল থাইকা রাবণরে নিয়া রামের চরিত্র বড়ো কইরা তুলছেন...

রাবণের কাহিনি কিন্তু প্যারালালি শিবের কাহিনির লগে চলে। তারে বলা হয় শিবের সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত। তার রাবণ নামখানও শিবের দেয়া। তার সৎভাই কুবের হইল শিবের সখা...

ভারতীয় পুরাণে নারায়ণ/বিষ্ণুর কাহিনি থাইকা কিন্তু শিবের কাহিনিগুলা প্রাচীন। মহাভারত পুরাটাই শৈব; কৃষ্ণরে সেইখানে বিষ্ণু অবতার কওয়া হইলেও সকল পুজা কিন্তু হইতাছে শিবের; রামায়ণের রামরেও দেখতে পাই শিব পূজারি; কিন্তু বেশ আরোপিত মনে হয় (রাম শিবের ধনুক ব্যবহার করতেন; যেইটা আবার অন্য কাহিনিতে দেখা যায় শিব নিজে ব্যবহার করছেন ত্রিপুরাসুর মারতে; তারপরে দান কইরা দিছেন পরশুরামরে..)

০৩
আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে সীতার সতীত্ব পরীক্ষা রামায়ণের সময়কার কনটেক্ট না; যৌনস্পর্শ দিয়া সতীত্ব নির্ধারণ কিন্তু বহুত পরের কালচার (যেটার উপর খাড়াইয়া আছে পুরা ময়মনসিংহ গীতিকা)। এইটা পরে আরোপিত জিনিসি। আমার পরের পর্বের প্রশ্নটাই সীতার সতীত্ব পরীক্ষা নিয়া আসতাছে

০৪
সমাজরে আর্য অনার্য হিসাবে ভাগ করা বোধ হয় বৈষ্ণবযুগের (বৈষ্ণব রাজাদের) কাম। দ্বাদশ শতক পর্যন্ত শৈব আর বৈষ্ণব পুরা আলাদা ধর্মই আছিল বলতে গেলে। আর শৈব ঘরানায় কিন্তু আর্য অনার্য ভেদ নাই। শিবের ভক্ত যেমন দেবগুরু বৃহস্পতি তেমনি নন্দী ত্রিপুরাসুর কিংবা রাবণ; অথচ নারায়ণের ভক্তরা আবার বেশ সম্ভ্রান্ত মানুষ

০৫
হ। বাংলা রামায়ণটা মূলত সীতায়ন
আর বেশিরভাগ রামায়ণ মূলত হনুমায়ন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

০২
আমি নিজে এই মতে কিঞ্চিত আস্থাশীল যে, রাবণ ও রাম সমসাময়িক নন্‌। রাবণের কীর্তিকাহিনীর অনেকগুলো (যেমন নিচে কুশধ্বজ বেদবতী কাণ্ডের কথা বলেছি) ত্রেতা যুগের চেয়ে বেশি সত্য যুগের বলে মনে হয়। তাছাড়া 'রামায়ণ রামের জন্মের পূর্বে লিখিত' এই মতে আস্থা আনতে হয় তাহলে রাবণ নিশ্চিতভাবেই ত্রেতা যুগের কেউ নন্‌, সত্য যুগের চরিত্র।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রামের জন্মের পরে নিয়ে কাহিনি আছে; কিন্তু আদৌ কি রাম নামে কেউ ছিলেন?

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এই কম্ম আমার একলার পক্ষে সামলানো এক্কেবারে অসম্ভব...

ভালই সম্ভব। আর আলোচনাও জমে উঠেছে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বাতাস দিয়া লাভ নাই; একেকটা দেশেই রামায়ণের হাজারো কাহিনি;
মহাভারতের মানুষগুলা আছিল স্থলচারী; তারা নিজেরা যেমন আগাইছে মাঠঘাট দিয়া; তেমনি মহাভারতের কাহিনির বিস্তারও হইছে সড়কপথে
কিন্তু রামায়ণগোষ্ঠী জলচারী; তারা যেমন নৌকা ভাসাইয়া চইলা গেছে বহুদূর; তেমনি রামায়ণের কাহিনিও জলপথে ভারত ছাড়াইা ছড়াইয়া পড়ছে বহুদূর পর্যন্ত; এখন এইগুলারে উজান ঠেইলা আনা কেমনে একলার পক্ষে সম্ভব আমার?

মন মাঝি এর ছবি

বাতাস দিয়া লাভ নাই;....

আপনার পক্ষেই সম্ভব! লন বাতাস দেই ভাল কইরা --

****************************************

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

হৈ হৈ হৈ হৈ - নতুন কাহিনি শুরু হইল ঐ!!

মহাভারতের পরে রামায়ণ! আহা, পপ্পন হাতে লইয়া বইলাম! পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পপ্পন নিলে হইব না; সিনেমার কিছু ধারা বর্ণনা্ও দেয়া লাগবে
মহাভারতে কবিরা যোগ করছে তাই প্যাচ খোলা যায়
কিন্তু রামায়ণে প্যাচগুলা দিছে রাজা বাদশারা; এইগুলা একটু জটিল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্রশ্নটাকে একেবারে পার্টিকুলার করে ফেলি। সীতা কার গর্ভে, কার ঔরসে জন্মেছিলেন? এবার গর্ভের মালিক আর ঔরসের মালিক খোঁজা যাক।

১। রেফারেন্সগুলোর একটা বড় অংশের দাবি - সীতা ভূমির কন্যা। এই ভূমি/ভূমি দেবী/ভূ-দেবী/আন্দাল বিষ্ণুর অবতার বরাহের স্ত্রী হলেও সীতার বরাহের ঔরসে জন্মেছেন এমনটা কোথাও পাইনি। তাছাড়া সীতার সাথে বিষ্ণু বা তার অবতারের সম্পর্ক হবার কথা স্বামী-স্ত্রী'র পিতা-পুত্রীর নয়।

২। বৃহস্পতির পুত্র কুশধ্বজ আর কুশধ্বজের কন্যা বেদবতী। বেদবতী পরজন্মে সীতা হয়ে জন্মান। বেদবতীর পিতার খোঁজ পাওয়া গেলেও তার মায়ের নাম খুঁজে পাইনি। কুশধ্বজ বেদবতীকে বলেছিলেন স্বামী হিসেবে বিষ্ণুকে কামনা করতে। এক অমাবশ্যা রাতে দৈত্যরাজ শম্ভু বেদবতীর পিতা-মাতাকে হত্যা করে। আরো পরে রাক্ষসরাজ রাবণ ধ্যানস্থ বেদবতীর শ্লীলতাহানি করে বা করার চেষ্টা করে। বেদবতী রাবণকে অভিশাপ দিতে দিতে আগুনে আত্মাহুতি দেন। অভিশাপটি ছিল পরজন্মে তিনি রাবণের ধ্বংসের কারণ হবেন। বেদবতী পরজন্মে কী হয়ে জন্মেছিলেন সেটা নিয়ে তিনটা থিয়োরি আছে।
(ক) বেদবতী পরজন্মে সীতা হয়ে জন্মেছেন। কার গর্ভে, কার ঔরসে সেটা নিয়ে বহুমত আছে।
(খ) বেদবতী পরজন্মে স্বাহা হয়ে জন্মেছেন। স্বাহা হচ্ছেন অগ্নির স্ত্রী, কিন্তু তার পিতা-মাতার পরিচয় অজ্ঞাত। রাবণ স্বাহাকে সীতা ভেবে অপহরণ করেছিল। স্বাহা পরবর্তীতে পদ্মাবতী/আলামেলু মাঙ্গা হিসেবে জন্মেছিলেন। পদ্মাবতী হচ্ছেন ভেঙ্কটেশ্বরের স্ত্রী, আর ভেঙ্কটেশ্বর হচ্ছেন বিষ্ণুর অবতার।
(গ) বেদবতী পরজন্মে মায়া সীতা হয়ে জন্মেছেন। মায়া সীতা ইল্যুশনারি ক্যারেকটার বলে তার পিতা-মাতা থাকাটা আবশ্যিক না। মায়া সীতা অগ্নিপরীক্ষার সময় বিলুপ্ত হন।

বাকিটা পরে বলছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সীতা ভূমিজ পরিবারের কন্যা; কিংবা ভূমিজ পরিবারে পালিত এই সূত্রটা প্রায় সবখানেই আছে
রবীন্দ্রনাথের একটা বিশ্লেষণের পড়েছিলাম যে তৎকালীন ক্ষত্রিদের সাথে কৃষির সম্পর্ক ঘটিয়েছিলেন বিশ্বামিত্র; যিনি মূলত রামকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কৃষকপরিবার/জনক পরিবারের সাথে...

০২
কিছু সূত্র একসাথে মিলালে এক ধরনের একটা সমীকরণ কিন্তু খাড়া করা যায় সেটা হলো: রামের সাথে রাবণের যুদ্ধ/দেখাই হয়নি কারণ (১) কিছু কাহিনিমতে (আপনার পয়েন্ট খ) রাবণ মূলত সীতাকে হরণ করেণি; করেছে অন্য কাউকে (মায়া সীতা ইত্যাদি); (২) জাতকের মতো কিছু কাহিনিতে সীতা রামের স্ত্রী নন বোন; মানে হইল পরবর্তীতে সীতার সন্তানদের বিষয়ে রামের পিতৃত্ব সংক্রান্ত জটিলতায় সীতার অগ্নিপরীক্ষা অস্তিত্বহীন...

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১ (পুনশ্চ): সীতা লক্ষ্মীর রিইনকারনেশন এই কথা সত্য ধরলে সীতার পিতা বা মাতা থাকা প্রয়োজনীয় নয়। বেদবতীর একজন সম্ভাব্য হচ্ছে রিইনকারনেশন হচ্ছে দ্রৌপদী যে অযোনীসম্ভূতা। বেদবতীর আরেক সম্ভাব্য রিইনকারনেশন পদ্মাবতীও অযোনীসম্ভূতা। এই লাইনে চিন্তা করলে সীতাও অযোনীসম্ভূতা। লৌকিক ব্যাখ্যা হতে পারে সীতা কোন কৃষিজীবি পরিবারের সন্তান। বারাণসীর রাজা জনক নিঃসন্তান হওয়ায় তিনি সীতাকে দত্তক নেন। জনকের ভাই রাজা কুশধ্বজ'র (বৃহস্পতি'র পুত্র কুশধ্বজ নয়) কন্যা মাণ্ডবী'র সাথে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র ভরতের বিবাহ হয়। কুশধ্বজের আর আরেক কন্যা শ্রুতকীর্তি'র সাথে দশরথের আরেক পুত্র শত্রুঘ্নের বিবাহ হয়। এই সূত্রে সীতা জনকের ঔরসজাত সন্তান না হলেও তার সাথে দশরথের আরেক পুত্র রামের বিবাহ হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

২ (পুনশ্চ): মায়া সীতার ধারণা সম্ভবত মধ্যযুগের রচনাকারদের আবিষ্কার। যেমনটা আমরা হেলেনের ক্ষেত্রে দেখতে পাই। ইউরিপিদেস, স্তেসিকোরাস এবং হেরোদোতাস আসল হেলেনকে মিশরে পাঠিয়ে দিয়ে তার প্রতিরূপকে ট্র্যয়ে পাঠিয়েছেন। গ্রীকদের এই পিউরিটান ধারণা (নারী অপহৃতা হলে বা পরপুরুষের অনুগামিনী হলে ঐ পুরুষের সাথে তার যৌনসংসর্গ হতে পারে, তাতে তাকে আর গ্রহন করা যাবে না) গ্রীকদের ভারতে আসার সাথে সাথে আমদানী হয়ে থাকতে পারে। পিউরিটান ধারণার উৎস যা-ই হোক ভারতীয় রচনাকাররা সীতার সতীত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই মায়া সীতার আমদানী করেছেন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

হ। ইনারা একটু পলিশড গ্রিকগিরি চর্চা করছেন; কিন্তু আদি গ্রিক কাহিনিতে নারী কিংবা পুরুষের একাধিক যৌন সম্পর্ক এবং তার ফলে জন্মানো সন্তানি কিন্তু কোনোভাবেই আলাদা হিসাবে চিহ্নিত ছিল না

০২
দ্বিতীয় পয়েন্টে আমার একটু খটকা আছে; নারীর শুদ্ধতা গ্রিক থাইকা ভারতে আসছে নাকি দুই জায়গায় আলাদা উৎপন্ন হইছে সেইটা অবশ্য একটা প্রশ্ন

তাহসিন রেজা এর ছবি

দুইটা বইয়ের নরম কপি পেলাম। জানিনা আপনার কাজে লাগবে কিনা কিংবা আগেই পড়ে ফেলেছেন কিনা। তবু লিংক দুইটা দিয়ে গেলাম, যদি প্রিয় লেখকের কাজে লাগে!

Many Ramayanas: The Diversity of a Narrative Tradition in South Asia Paula Richman

The Ramayana Revisited Mandakranta Bose

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৩. ইক্ষ্বাকু বংশের সন্তান বারাণসী'র রাজা অশ্বসেন আর রাণী ভামার পুত্র রাজা পর্শ্বনাথ। এই পর্শ্বনাথ আবার জৈন মতে তেইশতম তীর্থঙ্কর। মেঘলীন (মেঘনাদ!) যখন পর্শ্বনাথকে আক্রমণ করে তখন দেবী পদ্মাবতী আর তার স্বামী ধরানেন্দ্র তাকে রক্ষা করেন। এই থিয়োরিতে পদ্মাবতী নিজে দেবী বলে তার জন্মবৃত্তান্ত অপ্রয়োজনীয়। পদ্মাবতী = সীতা, ধরানেন্দ্র = রাম, পর্শ্বনাথ = সুগ্রীব অথবা জনক ধরলে এটা একটা ধারণা হতে পারে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

স্থানান্তর-জন্মান্তর-সময়ান্তর আর নামান্তর এই চাইরটা জিনিস রাখতে গেলে সহজিয়া রামায়ণ হইবা না স্যার;

০২
আমার পয়লা টার্গেট হইল সময়কালটারে ধরা; রাবণের সময়কাল
আমার ধারণতা রাবণ আর রাম আলাদা সময়ের মানুষ। হয়ত সীতার কোনো অস্তিত্বই আছিল না। সীতা বিভিন্ন চরিত্রের একটা সমন্বয়

০৩
রামায়ণ যখন লেখা হয় (বাল্মিকীই যদি লেইখা থাকেন) তখন কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার হইয়া গেছে; বৌদ্ধদের নাস্তিক বইলা গালাগালিও কিন্তু প্রচারিত। যদ্দুর মনে পড়ে রামায়ণের একটা ভার্সনে কিন্তু রাম মুনি জাবালেরে বৌদ্ধ নাস্তিক কইয়া গালাগাল করেন

বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে ভারতে সবচে বেশি হুমকির মুখে পড়ে হিন্দু ধর্ম; এর প্রভাবে প্রচুর সংস্কার হয় হিন্দু ধর্মে। যার ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধরে দশম অবতার কইয়া ব্যালেন্স করা হয় আর অন্যদিকে বৌদ্ধরাও হীনযান থাইকা মহাযান (মূতিপুজারি প্রায়) হইয়া সম্পর্ক স্বীকার করে...

এমনও কি হইতে পারে যে বৌদ্ধ ধর্মের অগ্রযাত্রার মুখে একজন বৈষ্ণবেরা একজন 'রাম' তৈরির প্রয়োজনীয়তা থেকে রাময়ণের সৃষ্টি করছে?

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মন্দোদরীর আরেক নাম কি বিদ্যাধরী মায়া? কারণ, বিদ্যাধরী মায়ার প্রথম সন্তান রাবণের বিনাশের কারণ হবার কথা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এইটা জানি না। প্রশ্নটা রাইখা দিলাম সন্ধানের লাইগা

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৪. বেদবতী আখ্যানের আরেকটা ভার্সান পাওয়া যায় খ্রীষ্টপূর্ব নবম শতকে গুণভদ্রের বর্ণনায়। রাবণ অলকাপুরী'র অমিতভেজের কন্যা মানিবতীর শ্লীলতাহানি করলে মানিবতী প্রতিশোধস্পৃহায় পরজন্মে রাবণ ও মন্দোদরীর কন্যা হিসেবে জন্মান। জ্যোতিষীরা রাবণকে এই কন্যার ব্যাপারে সাবধান করলে মন্দোদরী কন্যাকে বাক্সে পুরে মিথিলার ভূমিতে পুঁতে আসেন। বাকিটা সবার জানা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আরো্ও তো আছে স্যার। আমার ধারণা রাজাদের দ্বার অপহৃত সকল নারীকের সীতায় চাপানো হইছে এককালে; আর সকল রাবণের কান্ধে তুইলা দেওয়া হইছে সকল নারী অপহরণের দায় এবং এরপর করপোরেট প্রতিশোধটা নেয়া হইছে রামায়ণ দিয়া..

পুনর্জন্ম নিয়া কেউ যুবতি হইতে গেলে কিন্তু সময় হিসাবে দুই জেনারেশন লাগে; কিন্তু সেই হিসাবে রাবণের তো কয়েক হাজার বছর বাইচা থাকার কথা (পৌরাণিক বাস্তবতায় সম্ভব)। রাবণ তো আর একেকজনরে অপহরণ করার লাইগা একেকবার জন্মায় নাই

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

৫. রামায়ণ মঞ্জরী মোতাবেক সীতা মেনকার ইচ্ছাকন্যা। সুতরাং এখানে কারো ঔরসের প্রশ্ন নেই।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পাণ্ডব দা; প্রশ্ন যদি নাই থাকে তবে তো নমো নমো কইরা সীতাকাণ্ড শুরু কইরা নমো নমো কইরা আবার শেষ কইরা দিতে হইব...

০২
ভারতীয় পূরাণে অযোণীসম্ভূত এবং দৈব জন্মের কাহিনি থাকলেও এইটাও কিন্তু আলাদা বলা আছে যে নারী-পুরুষের মিলন ছাড়া জন্ম সম্ভব না...

০৩
সীতার পিতার সন্ধান জটিল হবে বুঝতে পারছি; কিন্তু মাতার একটা সমীকরণ কিন্তু দাঁড় করানো সম্ভব মনে হয়

অতিথি লেখক এর ছবি

রামায়ন ভালু পাই। পপকর্ণ লইয়া গ্যালারিতে বসলাম। পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম আর চন্দ্রাবতী আমার নিজের এলাকার কবি। তারে নিয়া লিখবার ইচ্ছে আছে। চন্দ্রাবতীর রামায়ন সম্ভবত সাহিত্যের প্রথম নারীবাদী রামায়ন যেখানে রামের চেয়েও সীতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পুনশ্চঃ লেখা মচমচা হইসে। হাততালি

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

মাহবুব লীলেন এর ছবি

এলাকার পোলা হিসাবে যখন আগাইয়া আসছেন তখন আপনার এলাকা সম্পর্কে একখান কাম দেই; তা হইল:
(১) ময়মনসিংহ গীতিকায় রাময়ণের প্রভাব খুব বেশি; এর প্রায় সবগুলা গল্পেই সতীত্ব প্রমাণ/পরীক্ষার কাহিনি আছে; যা মূলত সীতার অগ্নিপরীক্ষারই বিভিন্ন ভার্সন এবং প্রচুর গল্পে শক্তিমান মানুষ দ্বারা বিবাহিত নারী অপহরণ; কিন্তু তাকে স্পর্শ করতে না পারা (অপহৃত নারী বিভিন্নভাবে/উসিলায় অপহরণকারীকে সরিয়ে রাখে) এবং অপহারণকারী দ্বারা অপহৃতাকে বিভিন্ন লোভ দেখিযে বিয়ে করতে রাজি করানের চেষ্টা (রাবণ ভার্সন)

ময়মনসিংহ গীতিকায় এই রামায়ণ প্রভাবের সূত্র/কারণগুলা কী? এগুলা মূলত কাদের দ্বারা প্রভাবিত?

০২
ময়মনসিংহ গীতিকার প্রচুর চরিত্র/দেওয়ান ধর্মের দিক দিয়া মুসলমান কিন্তু কাহিনি রামায়ণী; রাবণ আর সীতা আর জনগণ/প্রজা (যারা সতীত্ব নিয়া প্রশ্ন তোলে) এবং ময়মনসিংহ গীতিকায় রাম নাই...

এই মিশ্রণ কিংবা রাম বিহিন রামায়ণের ভার্সনের শানে নুজুলটা কী?

এইবার এলাকার মান সম্মান রক্ষার সব দায়িত্ব কিন্তু আপনার...। তথ্য দেন

সাগর  এর ছবি

লিলেন দা, এই সব বই পুস্তক বাদে মুখ এমুখে কইলাম আরেক খান রামায়ন চলে, সেই রামায়নে সিতা রাবনের বেটি হইয়া উঠেন যখন রাবন মুনি ঋষিগো অত্যাচার কইরা খাজনা হিসাবে তাগো কাছ থাইকা রক্ত নিয়া আসেন তখন! সেই রক্ত গিল্লা রাবনের পেট লাইগা যায়, আর বারনের উরোতে সীতার জন্ম হয়!! রাবন সেই মাইয়ারে হাওড়ে ফালাইইয়া আসেন আর জনক রানা সকল প্রজার পাপ নিতে বছরের পয়লা লাঙ্গল লইয়া হাওড়ে গিয়ায় পান সীতারে!!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

কাহিনি বহুত আছে সত্য। তার মইদ্যে রামায়ণ একটা কাহিনি। রাম বাদ দিয়া রাবণের কাহিনি পড়লে কিন্তু গল্পটা পুরাই আলাদা হয়। আমার হিসাব নিকাশে কয় রাবণ আর রাম এক সময়ের মানুষ না। রাজা রামরে বড়ো বানইতে গিয়া তার থিকা পুরাণা রাজা রাবণরে আইনা তার লগে যুদ্ধ করাইয়া রামরে বড়ো করা হইছে। কারণ বড়োসড় ভিলেন না থাকলে হিরো বড়ো হইতে পারে না

০২
সীতা নিয়াও বহুত কাহিনি আছে। এক কাহিনিতে কিন্তু সীতা দশরথের মেয়ে; রামের বোন। আরেক কাহিনিতে মন্দোদরীরর মেয়ে (এর একটা ভার্সনে রাবণেরও মেয়ে। আরেকটায় খালি রাবণের বৌ মন্দোদরীরর বিবাহপূর্ব মেয়ে) আরেকা কাহিনিতে জনক রাজা সীরধ্বজের মেয়ে (তার একটা ভার্সন আবার জমি চাষ করতে গিয়া পাওয়া মেয়ে)

অতিথি লেখক এর ছবি

হু । ইন্টারেস্টিং বিষয় ।

সীতা জনকের টোকাইয়া পাওয়া কন্যা ( লাঙ্গলের ফলার আগায় উইঠা আসছে ) । এই নিয়ার এতোটা বছর শান্তিতে ছিলাম । দিলেন শান্তিটা নষ্ট কইরা । এখন কুল পাইতে পুরা সিরিজ আর আলোচনা পড়া লাগবো ।

মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
========================
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

মাহবুব লীলেন এর ছবি

শান্তি আরো যাবে। রামের জন্মকথায় আসলে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।