স্মৃতিবান্ধা

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শনি, ০৫/০৮/২০১৭ - ৯:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সমস্যা বুঝতে তো সমস্যা হইতেই পারে; আমার একটু বেশি হয়। আমি হা কইরা থাকি…

খাওয়ার টেবিলের একটা চেয়ার ঘুরাইয়া ঠ্যাং মেলাইয়া দোস্ত মুখ খোলে- আমি তোরে মাত্র দুইটা অপশন দিতে পারি। এক তুই এখনই যাবি আর দুই; কাইল সকালে যাবি তুই…

অপশন বিচারের আগে সমস্যটা নিয়া ভাবতে হয় আমার। আমি বুঝতে পারি না আমারে হাফপ্যান্টপরা বয়সে রাইখা দোস্ত কেমনে একটা স্টারধারী জেনারেল হইল। জুলফিতে কিছু পাকধরা চুলও ম্যানেজ কইরা ফালাইছে হালায়…
দোস্ত আমার সমস্যারে তার সমস্যার তলে ফালায়া সমাধানের সূত্র বাতায়- তোরে ভাগতে হবে দোস্ত…

আমি কথায় কান দেই না দেখে সে আমারে লোভায়- আমি তোর ভাগার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কিন্তু সেইটা হইতে হবে আইজ রাত্তির না হয় কাইল সকালের ভিতর…

কথা শেষ কইরা দোস্তের নিজেরই মনে হয় তার এই কথাটা আগের কথার ভাব সম্প্রসারণ ছাড়া নতুন কিছু হয় নাই। তাই এইবার সে আমারে ডর দেখাইতে লাগে- এর পরে কিন্তু আমার আর কিছু করার থাকবে না…
আমি কই- তোর কান্ধের স্টারে অত বড়ো ক্ষমতা রাইখাও ভাগতে হবে আমারে?
দোস্ত কয়- যারা তোরে পাইলে জাপটাইয়া ধরতে পারে তাগোরে ধামকি দিয়া আমি আগাইতে পারব। আমার স্টার দেখলে বহুত পিছনে ফুসুরফাসুর টেলিফোন না কইরা তারা আটকাতে সাহস করবে না। এর লাইগাই মাঝরাত্তিরে আমি ইস্টারওয়ালা কাপড়ে আসছি তোর ঘরে; রেডি হ বাপ…
আমি কই যাব কই?
দোস্ত সংক্ষেপে রিপিট করে তার কথা- তোরে ভাগতেই হবে…

বাড়ির সকলে ঘুমে। আমি ঠিক বুইঝা উঠতে পারি না বাড়িতে আর কে কে আছে অথবা আদৌ আর কেউ আছে কি নাই। আমি একটা ব্যাগ নিয়া খাড়ায়া থাকি। ঠিক বুঝি না কী নেব আর কী না। কাউরে বলতে হবে কি না তাও বুঝি না। আমি যদি এখন হাফপ্যান্টের বয়েসি হই তবে তো বাপ-মায়ের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি দোস্তের মতো পাকা জুলফি হই তবে না বইলা গেলেও সকলে ভাববে বিড়ি খাইতে গেছি…
কিন্তু তাগোরে ডাইকা তোলার পর তো বুঝাইয়া দিতে হবে যে তারা হাফপ্যান্টি পোলার বাপ-মা নাকি তাদের পুত্র এখন একজন পাকা জুলফি মানুষ…

দোস্ত জিগায়- কোন অপশন নিলি?
আমি কই- আরো কয়েকটা দিন সময় দে। একটু ভাবতাম…

দোস্ত হতাশা জানায়- তুই আমার সমস্যাটা বুঝলি না। সক্কাল হইলেই ফুসুরফাসুর ফোনে সিদ্ধান্ত দেওয়া লোকগুলা জাইগা উঠবে। আমারে ব্যরাকে ফিরাইয়া তোরে ধরে নিয়া যাবে…
আমি কই- আমি একটা ছোট মানুষ। আমারে একটু লুকাইয়া থাকার জায়গা দিতে পারস না তুই?
দোস্ত কয়- ছোট হইলে আর কত ছোট তুই? সভ্যতার নেংটিকালেই জাল দিয়া কাচকি মাছ ধরার কৌশল আবিষ্কার করছে মানুষ। এখন তো গুয়ের ভিতর থাইকা ব্যাকটেরিয়াও খুঁইজা বার করতে পারে মেডিক্যাল বিজ্ঞান…

আমি ব্যাগ গুছাইতে গিয়া খাড়ায়া থাকি। দোস্ত জিগায়- এখন যাবি?
আমি কই- না সমস্যা আছে
দোস্ত সমস্যা জিগায়। আমি কই- ইস্কুল ড্রেসটা তো কোনোভাবেই খুইজা পাই না দেখি…
দোস্ত বিরক্ত হয়- ইস্কুল ড্রেস দিয়া এখন কী কাম তোর?
আমি কই- ইস্কুল ড্রেস ছাড়া যে অন্য কোনো পোশাকে আমার ভাগল দিবার কোনোই অভিজ্ঞতা নাই…
২০১৭.০৭.২৮ বিষুদবার


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

..................গল্প ভালো লেগেছে।

মোখলেস হোসেন

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধন্যবাদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যারা জাপটে ধরে তারা হাফপ্যান্ট-স্কুল ড্রেস-পাকা জুলফি কিছুই বিবেচনা করে না, হয়তো কাঁধে স্টারধারী জেনারেলও। অজাত শিশুকেও এরা ছাড়ে না। ভাগতে সাহায্য করার মতো স্টারধারী জেনারেল বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অবশ্য ভাগতে সাহায্য করার মতো কোন বন্ধু পাওয়াই ভাগ্যের ব্যাপার। স্কুল ড্রেস খুঁজে, পরে, ভাগল দেবার মনোবল তৈরি করার অ্যাম্বিয়েন্স - এতো সময় কেউ দেবে না।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

নেংটি খুইলা দৌড় দিবার ঘটনা হইলে তো নিউজ হইত স্যার; গপ্প নহে

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ভাগতে হবে কেন? কোন আকাম করছেন, নাকি পরিস্থিতির শিকার? আকামের সাথে জেনারেল সাহেবও কি কোনভাবে জড়িত, নাকি শুধুই বন্ধুর প্রতি মমত্ববোধের কারনে আপনাকে পালাতে বলছেন? গল্পের কি দ্বিতীয় পার্ট আছে, যেখানে এইসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে, নাকি কল্পনায় আমাদেরই বানায়ে নিতে হবে?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অত গবেষণা করব কেডায়?

০২
এই গল্পের আবার দ্বিতীয় পার্ট?

অতিথি লেখক এর ছবি

আশাকরি এটা গল্পের প্রথম পর্ব, অপেক্ষায় রইলাম!

ক্ষৌণীশ ভারতীপুত্র

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ইস্কুল ড্রেসটা খুইজা দেন; তাইলে পরের পর্ব নামাইয়া দিমুনে

মাহতাব মুনী এর ছবি

বন্ধুর জেনারেলের কাদে আপনে ভালোআপদ.....

ভালো লেগেছে লেখনশৈলী।

দেবদ্যুতি এর ছবি

চলুক

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।