অভাজনের রামায়ণ। বনবাস ০১

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: বুধ, ১৯/০১/২০২২ - ৩:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জাত যাবার ডরে খায় নাই ভাত; দুই দিনের খিদা নিয়া এখন পশুর পোড়া থ্যাতলা মাংস চাবায় জঙ্গলের ভিতর…

অযোধ্যা ছাইড়া ছাইড়া তমসা নদীর তীর পর্যন্ত আসতেই বনাঞ্চল শুরু আর দশরথের রাজ্যের সীমাও শেষ। সীমান্তটা নগরের কাছেই। এই পর্যন্ত রাম লক্ষ্মণ সীতা রথে কইরা আসলেও তাগো পিছে পিছে পায়ে হাঁটা গ্রামবাসীরাও পৌঁছায়া যায় একই সময়। রামের পাক্কা বনবাস না দেইখা ফিরব না তারা। কিছু বামুনও হাজির হইছে শেষ মুহূর্তে রাজবংশীয়রা কোনো দানখয়রাত দিলে সেইগুলা হাতানোর আশায়। কিন্তু অত লোকরে খালি মুখে রাইখা কিছু খাওয়া রাজপুত্রের মানায় না বইলা ‘রাত্তিরে আর কিছু খাব না’ কইয়া পানি খায়া ঘুমায়া পড়ে রাম…

পরদিন সকালের তামাশা দেখার আশায় লোকজনও খালিপেটে শুইয়া পড়ে খোলা জায়গার এদিক-সেদিক। কিন্তু সবাইরে ঘুমে রাইখাই অতি ভোরে সুমন্ত্রের রথে কইরা রাম দেয় ভাগল…

লোকজন যাতে পিছু নিতে না পারে তার লাইগা একটা চালাকিও সে করে। যেই দিকে যাইবার কথা সেইদিকে ভাই আর বৌ নিয়া পায়েদল গিয়া সুমন্ত্ররে কয় অন্য দিকে চক্কর দিয়া মাটিতে রথের চাকার দাগ ফালায়া ঘুরপথে আইসা তাগোরে উঠায়া নিতে। ঘুম ভাইঙা লোকজন রথের দাগ ধইরা ধান্দা খাবে আর এই ফাকে নিশ্চিন্তে ঢুইকা পড়া যাবে বনবাসে…

তমসা নদীর অন্যপারে কোশল রাজ্য। রামের মা এই দেশের এক গেরস্থ বাড়ির মেয়ে বইলা লোকজন তারে কৌশল্যা কইয়া ডাকে। কোশল ছাড়ায়া ছোট তিনটা নদী পাড়ি দিয়া রাম আইসা পৌঁছায় গঙ্গা তীরের শৃঙ্গবেরপুর রাজ্যে। নদীমাতৃক এই দেশের নিষাদ রাজা গুহকের লগে দশরথের ভালোই খাতির। গুহকের রাজধানীও তীরের নিকটে। বৌ নিয়া অযোধ্যার রাজপুত্র আসছে শুইনা খাতির যত্ন করতে খাওনদাওন নিয়া পায়ে হাইটাই নদীঘাটে আইসা পৌঁছান গুহক…

কিন্তু তখনো রামের লগে রাজ্যের কর্মচারী সুমন্ত্র সাঁইটা আছে। তাছাড়া এই এলাকার লগে অযোধ্যার মানুষদের সাক্ষাত-যাতায়াত দুইটাই নিয়মিত। তাই খিদা থাকলেও গুহকের খাদ্য মুখে দেয় না রাম। কারণ পুরোহিতরা যেইসব বিধিবিধান করতে আছেন সেইসব মতে গুহকের জাতি নিষাদরা পড়ছে নিচু জাতের তালিকায়; রামের গোষ্ঠী ক্ষত্রিয়দের রাখা হইছে উঁচু জাতির কাতারে। নিচা জাতের হাতে খাওন খাইলে উঁচা বংশের মান মর্যাদা যায় বইলাও ব্রাহ্মণেরা বিধান দিছেন। দশরথের মন্ত্রী জাবালির মতো বৌদ্ধরা এইসব নিয়ম না মানলেও অযোধ্যার রাষ্ট্রীয় বিধানগুলা আবার তৈরি হয় বশিষ্ঠের মতো ব্রাহ্মণের মতামতে…

রাজপরিবার সদস্যদের এইসব বিধান মাইনা চলতে হয়; নাইলে সিংহাসন ফাইসা যাইত পারে। তাই গুহকের দেয়া খাদ্য খাইয়া মর্যাদা নষ্টের চাইতে উপাস দেয়াই ভালো মনে হয় রামের। সে গুহকের আনা খাওনগুলা ঘোড়ারে খাইতে দিয়া কয়- দয়া কইরা কাইল আমাদের গঙ্গাটা পার কইরা দিও…

সন্ধ্যা নাইমা আসছে; নদীপারেই থাকার আয়োজন করে তারা। ভরত যদি তাগো পিছু ধাওয়া দেয় তবে গাঙপারের এই গুহক রাজা হইতে পারে এক কার্যকর প্রতিরোধ। তাই নিজের মতো কইরা পুরা কাহিনী শুনায়া গুহকের কিছু দয়ামায়া হাতায় লক্ষ্মণ…

সকালে নদী পার হইবার আগেই সুমন্ত্ররে বিদায় করে রাম- বাবারে বলবা চৌদ্দ বছর শেষে আবার দেখা হবে; মায়েদেরও বলবা একই কথা। আর ভরতরে অনুরোধ কইরো যেন সে আমাদের মায়েদেরও তার নিজের মায়ের মতো দেখে…

সুমন্ত্র আবেগি হয়- আমি আর ফিরা গিয়া করব কী? আমি বরং তোমাগো লগেই থাকি। চৌদ্দ বছর পরে না হয় এক লগেই ফিরব সবাই…
সুমন্ত্ররে টিপা দেয় রাম- তুমি যদি এখন না ফিরো তাইলে কিন্তু রানি কৈকেয়ী বিশ্বাস যাবেন না যে আমি বনবাসে গেছি। বলবেন আমরা কোথাও ঘাপটি মাইরা আছি। আর তখন কিন্তু তিনি তোমার রাজার উপর নির্যাতন আরো বাড়ায়া দিবেন। তুমি তো সব কিছুই বুঝো…
দশরথের পুরানা সারথি সুমন্ত্র বোঝে। সে বিদায় নেয়…

সুমন্ত্র যাবার পর রাম গুহকরে কয়- আমাদের পদে পদে বিপদ। লোকজন যাতে চিনতে না পারে তার লাইগা আমাগো সন্ন্যাসী বেশ নেয়া দরকার…
গুহক বটের আঠা আনায়; রাম লক্ষ্মণ সেইগুলা চুলে মাইখা সন্ন্যাসী সাজে। তারপর সীতারে নিয়া গাঙ পার হইতে উঠে গিয়া গুহকের নৌকায়….

নদীপ্রণাম সীতার অভ্যাস। মাঝনদীতে আইসা সে গঙ্গারে পেন্নাম দিয়া কয়- চৌদ্দ বছর পরে যখন এই রাজপুত্র আবার দেশে ফিরবে তখন তোমার পূজা দিব আমি। রাম যদি রাজা হইতে পারে তয় বামুনগো শত শত গরু আর ঘোড়া দিব; নিজ হাতে মাংস রাইন্ধা খাওয়াবো; আর তোমার তীরের দুইধারে যত তীর্থ আছে সবগুলাতে গিয়া পূজা আর দক্ষিণা দিব…

গঙ্গারে বহুত খাদ্যের লোভ দেখায়া রাম আর লক্ষ্মণের লগে নদীর অন্যপারে নামে উপাসি সীতা। আধা বন আধা বসতি এই এলাকাগুলা কোনো রাজ্য না। এইসব এলাকায় বিশেষ কোনো রাজার শাসন নাই। গোত্রে-গুচ্ছে আদিবাসী বনবাসীরা থাকে নিজেগো মতো আর তার ফাঁকে ফাঁকে ব্রাহ্মণেরা আইসা বসাইছে নিজেদের গ্রাম…

বাবনদের গ্রামগুলা স্বায়ত্তশাসিত। গরুবাছুর পালা আর ছাত্র পড়ানোর লগে লগে অস্ত্রপাতি আর লাঠিয়ালও রাখে তারা; দান-দক্ষিণা কিংবা সহায়তার আশায় সুন্দর সম্পর্ক রাইখা চলে আশপাশের রাজাদের সাথে। মাঝে মাঝে আদিবাসীগো এলাকা দখল কইরা গ্রামের সীমানা বাড়ায় আবার কোথাও সুবিধা কইমা আসলে গ্রাম উঠায়া অন্য কোথাও গিয়া নয়া গ্রাম পত্তনি করে…
আধা যাযাবর ব্রাহ্মণগো বসতিরে কয় গ্রাম আর আর খেত খামার নিয়া থানাদার ক্ষত্রিয়গো বসতিরে কয় রাজ্য। গঙ্গার এই পারে আর কোনো রাজ্য নাই। তবে বনবাসী বা বন নর বা সংক্ষেপে বানর মানুষদের বসতির ফাঁকে ফাঁকে ছোটবড়ো বহুত গ্রাম গইড়া উঠছে এইসব এলাকায়…

ঘাটে নাইমা বনের পথে পয়লা হাঁটে লক্ষ্মণ তারপরে সীতা তার পরে রাম। হাঁটতে হাঁটতে শুয়োর আর হরিণ দেইখা রাম কয় কয়- লক্ষ্মণ। চলরে ভাই; আগে কিছু মাইরা খাই…
শুয়োরও মোরে হরিণও মারে। পুড়ায়া মাংস খাইয়া ওইখানেই রাইতের ডেরা গাড়ে। রাম কয়- ঘটনা কী হইল কিছু বুঝলি লক্ষ্মণ? একটা মেয়েমানুষের কথায় বাজানের এমন দুর্মতি হওয়া কি ঠিক হইল? হইলে কিন্তু এমনো হইতে পারে যে কৈকেয়ী বিষ দিয়া রাজারে মাইরাও ফেলতে পারেন…

লক্ষ্মণ কিছু কয় না। দশরথের শূদ্রাণী বৌর গর্ভে জন্মানোর কারণে সে আর তার যমজ ভাই শত্রুঘ্নর পয়লা থাইকাই সিংহাসনে কোনো ভাগাভাগি নাই। একটু বড়ো হইবার পর তাগো দুই ভাইরে রাজা তার জাতিলা দুই পোলার সেবাদাস বানায়া দিছেন…

স্বাভাবিক হিসাবে রাজার বড়োপোলা রামেরই পরবর্তী রাজা হইবার কথা থাকলেও রামের মা আবার কোনো রাজকইন্যা না। ফলে রাজকইন্যা কৈকেয়ীরে দ্বিতীয় বৌ করার কালে তার বাপ অশ্বপতি দশরথরে একটা শর্ত জুইড়া দেন- আমার মাইয়ার গর্ভের পোলারেই কিন্তু তোমার পরে অযোধ্যার রাজা বানাইতে হবে…
শ্বশুরের রাজকীয় শর্ত মাইনা নেন দশরথ। ফলে পয়লা থাইকা কৌশল্যাপুত্র রামও তালিকার বাইরে চইলা যায় আর অযোধ্যার পরবর্তী রাজা হইবার লাইগা নানাবাড়ি গিয়া প্রশিক্ষণ নিতে থাকে কৈকেয়ীপুত্র ভরত…

কিন্তু ভরতরে নানাবাড়ি রাইখাই হঠাৎ কইরা শর্ত ভাইঙা রামরে পরবর্তী রাজা বানাইবার খায়েশ জাগে দশরথের। আর সেই ভেজালেই দায়িত্বের খাতিরে আইজ লক্ষ্মণরেও বৌবাচ্চা ফালায়া রামের লগে যাওয়া লাগতেছে বনে…
লক্ষ্মণরে বাতাস দিবার দরকার না পড়লে রাম সুমিত্রার লগে মা কথাটা পর্যন্ত যোগ করে না; বাপের বৌ হইলেও ছোটজাতের নারী বইলা রাম তারে নাম ধইরাই ডাকে। সেই সুমিত্রাপুতের রাজ্যের হিসাব কইরা কী লাভ? তাই সে চুপ কইরা থাকে…

রামের ঘুম আসে না। তারে রাজা বানাইতে গিয়া ধরা খাওয়া বাপের চোহারাখান ভাসে। লক্ষ্মণরে কয়- কৈকেয়ী জিতলেন। আমি চইলা আসায় বাবা তো একেবারে এতিম; কৈকেয়ীর কথামতো চলা ছাড়া তার আর কিছু করার নাই। মেয়েমানুষই বাজানরে খাইল রে ভাই। নিজের পোলারেও খেদাইলেন তিনি…
রাম কান্দে; লক্ষ্মণ চুপ। রাম কয়- পুরা রাজ্যটাই এখন ভরত আর তার বৌর। একলাই তারা খাবে। এমনও হইতে পারে ভরতের মা আমার মায়েরে বিষ দিয়া মাইরাও ফেলতে পারেন…

রাম আরো কান্দে কিন্তু লক্ষ্মণের কোনো বিকার নাই। বিলাপ থামায়া রাম এইবার বাহাদুরি দেখায়- চাইলে কিন্তু আমি এখনই একলা গিয়া তির মাইরা অযোধ্যা দখল করতে পারি। খালি অযোধ্যা ক্যান; চাইলে পুরা দুনিয়াটাই জয় করতে পারি। কিন্তু করা ঠিক হইব না বইলা করতেছি না কিছু…
লক্ষ্মণ কয়- হ। তারপর পাশ ফিরা লাগায় ঘুম…

পরদিন হাঁটতে হাঁটতে দুই নদীর মোহনা প্রয়াগে উপস্থিত হইয়া রাম কয়- লও মুনি ভরদ্বাজের আশ্রমে যাই…
পেন্নাম কইরা পরিচয় দিয়া ভরদ্বাজের সামনে খাড়াইতেই তিনি কন- তুমি আসার আগেই তোমার সংবাদ পাইয়া গেছি আমি। তুমি নিশ্চিন্তে এইখানেই থাকতে পারো…
রাম কয়- আমি আসার আগেই যেইখানে অযোধ্যার সংবাদ পৌঁছায়া যায় সেইখানে কি থাকা ঠিক হবে আমার? প্রয়াগ আর অযোধ্যায় লোকজনের নিত্য যাতায়াত। এইখানে গ্রামের লোক যেমন আমাগো দেখতে আসবে তেমনি ভরতের চরও আইসা হাজির হবে। আপনে আমাগো লাইগা একটা নির্জন ঠিকানা দেন…

ভরদ্বাজ কন- সেই বিবেচনায় উপযুক্ত স্থান হইতে পারে দশ ক্রোশ দূরের চিত্রকূট পর্বতে ঋষি বাল্মিকীর আশ্রম। পুরাই বনবাসীগো এলাকা সেইটা; মাঝে মাঝে কিছু ঋষিদের গ্রাম। এই এলাকার লোকজনের সেইদিকে যাতায়াত প্রায় নাই…

রামেরে এক সম্ভাবনাময় তরুণ বইলা মনে হয় ভরদ্বাজের। দশরথের রাজ্য অতি ছোট হইলেও অযোধ্যার পরে এই দিকে আর শক্তিশালী কোনো ক্ষত্রিয় রাজ্য নাই। এই এলাকাগুলা নদীমাতৃক। ঘোড়া নির্ভর ক্ষত্রিয় রাজারা জলাভূমিতে দুর্বল। তাই নদীঘেরা অঞ্চলসব এখনো থাইকা গেছে ভূতেগো দখলে। বাবনেরা আইসা অনেক গ্রাম পত্তনি দিলেও ভূতেরা তাদের শত্রুমিত্র কোনোটাই ভাবে না। মাঝে মাঝে অবশ্য কিছু চুরিচামারি করে; বাটে পাইলে কিলায়া জিনিসপত্র নিয়া যায়…

ভূত মানে ভূমিতে বর্তমান মানুষ। গ্রাম পত্তন কিংবা রাজ্য বিস্তারের লাইগা প্রকৃতি শাসিত এদের অঞ্চলের চাইতে দারণ কিছু নাই। কারণ এরা সংখ্যায় বহুত হইলেও আলাদা আলাদা। তবে এইসব এলাকায় সবচে বড়ো ঝামেলা হইল নদী। ক্ষত্রিয়রা নদীতে এখনো সুবিধা কইরা উঠতে পারে নাই; এইসব এলাকায় তাগো যাতায়াতও কম। কিন্তু বিশ্বামিত্রের লগে চক্কর দিয়া এক বিশাল অসাশিত এলাকার সন্ধান জাইনা আসছে রাম। নামধামও কামাইছে বেশ…

সালিশ কইরা মুনি গৌতমের ঘরের ভেজাল মিটানোয় গৌতমগো কাছেও রাম এক পছন্দের মানুষ। বিশ্বামিত্র রামের বৈবাহিক সম্পর্ক করায়া দিছেন জনক রাজবংশের লগে। সীতারে দেইখা ভরদ্বাজের বিশেষ অনুমান; ঋষি বাল্মিকী নিশ্চয় সীতারে প্রশ্রয় দিবেন। সেই কারণেই রামেরে চিত্রকূট যাইতে বলছেন তিনি…

ভরদ্বাজের মনে হয় এমনো হইতে পারে যে নদীমাতৃক এইসব এলাকায় আর্যশাসন প্রতিষ্ঠায় রামই হয়ত হবে প্রথম পুরুষ। চৌদ্দ বছরের বনবাসে আরো ব্যাপক অঞ্চল ঘুইরা বেড়াবে সে; বুইঝা নিবে রাজ্য বিস্তারের সুবিধা ও অসুবিধা। এর উপরে বিশ্বামিত্র-গৌতম-ভরদ্বাজ-বাল্মিকী এমন চাইরটা প্রভাবশালী বাবন গোষ্ঠীর সমর্থন যদি তার লগে থাকে; তো তারে আর ঠেকাইব কে…
পরের দিন সকালে রাম চিত্রকূট যাবার সিদ্ধান্ত জানাইলে ভরদ্বাজ তারে পুরা রাস্তা বাতায়া একেবারে ঘরের পোলার মতো আদরে বিদায় দিবার সময় কন- মনে রাইখ। আমার আশ্রম কিন্তু সব সময় তোমার লাইগা খোলা; এইখানে তোমাগো ছুঁইতেও পারবে না কেউ…

ভরদ্বাজের বিবরণ মতে কিছুদূর যমুনার উজানে হাইটা নদী পার হইয়া চিত্রকূটের পথ ধরে রাম। নদী পূজার পুরানা অভ্যাসে সীতা যমুনারেও পূজা পেন্নাম করে। নদী পার হইয়া ক্রোশ পথ হাইটা দিনের শেষে পশু মাইরা খাইয়া তারা রাত্রি কাটায় ময়ূর নদীর তীরে। পরের সকালে হাঁটতে হাঁটতে গিয়া পৌঁছায় চিত্রকূট; ভার্গব বংশজাত বাল্মিকী ঘরানার ঋষি রত্নাকর ভালিওর আশ্রম- প্রণাম ভগবান। ঋষি ভরদ্বাজ আমাদের পাঠাইছেন এইখানে…

রামের কাহিনী শোনেন বাল্মিকী রত্নাকর। জনকের পালিতা কইন্যা সীতার শ্যামবর্ণ মুখের গড়ন দেইখা তার মনে হয়; নিশ্চিতভাবেই এই মেয়ের জন্ম তারই জাতিগোষ্ঠীর ঘরে। সীতার দিকে পৈত্রিক দৃষ্টি রাইখা কথা কন রত্মাকর ভালিও- থাকো কইন্যা। পছন্দমতো স্থানে ঘর উঠায়া যত দিন ইচ্ছা থাকো; আর স্মরণে রাইখো; এই আশ্রয় সর্বদাই তোমার লাইগা খোলা…


নোট
রামায়ণ কাহিনীটা বহুবার দীর্ঘ বিরতির খপ্পরে পড়ছে। একাধিকবার পয়লা থাইকা নতুন কইরা লিখছি। খাবলা খাবলা আকারে লিখছি মাঝখানের ও শেষের দিকের বেশ কয়েকটা অধ্যায়। সেইগুলাও আবার গিয়া পড়ছে বিরতির পাল্লায়। ফলে খসড়া- আধা খসড়া ও বিবিধ জাতের নোটে এলোপাথাড়ি হইয়া আছে মূল খসড়াখান। সচলায়তনে পয়লা দিকের কয়েকটা অধ্যায় ধারাবাহিকই প্রকাশ করছিলাম। একবার ভাবছিলাম সেইগুলারই পুনর্লেখন দিয়া আবার পয়লা থাইকা শুরু করি। কিন্তু আবারো বিরতির খপ্পরে পড়ব না এমন নিশ্চয়তা নাই; তাই সেইগুলার পর থাইকা গল্পের মূল কাঠামোটা এক লগে শেষ করার সিদ্ধান্ত নিছি। দেখি কতদিন চালাইতে পারি…
আগের অধ্যায়গুলার লগে এখনকার অধ্যায়গুলাতে কিছু বেমিল চোখে পড়তে পারে। পুরা গল্পটা দাঁড়ায়া গেলে আগাগোড়া একটা টিউনিং দিব নতুন সংযোজনগুলাসহ। বইয়ের প্রাথমিক নামও ‘সহজিয়া রামায়ণ’ থাইকা ‘অভাজনের রামায়ণ’ হইছে; যদিও নাথিং ফাইনাল…


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, দারুণ লাগলো, পুরোদমে চলুক

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আশা করি চলিবে

তানভীর রুসমত এর ছবি

লীলেন্দা, নতুন করে শুরুটা ঠিক সহজিয়া লাগছে না। গল্প নদী পথে চললেও লেখনি নদীর জলের মতো না লেগে ক্ষত্রিয়দের ঘোড়া দৌড় মনে হচ্ছে।

পুনশ্চ:'বাবন' কি 'বামুন' এর সহজিয়া প্রতিশব্দ? ভালো লেগেছে।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

প্রায় পাচ বছরের বিরতি মাঝখানে। মাঝখানে বোকামি কইরা তথ্যমথ্য খটখটানি সাজানো শুরু কইরা দিছিলাম। এখন চিন্তা করছি গল্পের খসড়াটা আগে শেষ করব। তারপর টিউনিং দিব। তারপর যাব মাটি খোঁড়াখুড়ির বিবরণ দিতে

০২
ব্রাহ্মণরে সিলেটে কয় বাবন। বেটাগো কয় বাবনা আর নারীরা হইল বাবনি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।