অভাজনের রামায়ণ। বনবাস ০৩

মাহবুব লীলেন এর ছবি
লিখেছেন মাহবুব লীলেন (তারিখ: শনি, ২৯/০১/২০২২ - ৪:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মদও খাইছে নারীও পাইছে; আয়েশে গড়ায়া ভরতের সৈন্যরা কয়- মোরা চিত্রকূটও যাব না; অযোধ্যাও ফিরব না। যে যেইখানে আছে সেইখানেই সুখে থাউক; রাম থাউক বনে; ভরত সিংহাসনে। আমরা এইখানেই থাকতে চাই বাকি জীবন…
ভরত রামরে আক্রমণের লাইগা না; বরং নিজের বিশাল সেনাসৈনিক দেখায়া তারে ঘাবড়াইতে চায় নিশ্চিত হইয়া ভরদ্বাজ সকালে যখন চিত্রকূটে রামের ঠিকানা দিলেন তখন নিজের লোকদের ডাকতে আইসা ভরত দেখে গত রাত্তিরে ভরদ্বাজের খাতিরে সবগুলা বেহুশের মতো টাল…
রামের লগে ভরদ্বাজের যোগাযোগ আছে। চিত্রকূটে রাম নির্দিষ্ট কোন জায়গায় আছে ভরদ্বাজ সেইটাও জানেন…
ভরত হিসাব মিলায়; রামের সমর্থনে গঙ্গাপারে দাস বাহিনী নিয়া খাড়াইছিল গুহক; তারে দুই কথায় ভোলানো গেলেও দরকারে গঙ্গারেই প্রতিরোধের দেয়াল বানাইতে মুহূর্তকাল লাগব না তার। আপ্যায়ন দিয়াই যিনি ভরতের পুরা বাহিনী অবশ কইরা দিতে পারেন; রামের ঢাল হইয়া প্রয়াগে খাড়ায়া আছেন সেই ব্রাহ্মণ ভরদ্বাজ। আর সর্বশেষ; রাম গিয়া নিছে দস্যু গোত্রজাত বাল্মিকী রত্নাকরের আশ্রয়; যারা কাব্যও করেন; শাস্ত্রও করেন আবার অস্ত্রটাও সর্বদা লগে নিয়া ঘোরেন। এর বাইরে পথে পথে আছে ছোট বড়ো অতগুলা নদী। বড়োই কঠিন প্রতিরোধ গইড়া তুলছে রাম…

ভরদ্বাজের সামর্থ্যেও বিস্মিত ভরত। অত দ্রুত অতগুলা মাইনসেরে ভরদ্বাজ শুধু মদই খাওয়ান নাই; ছাগল- শুয়োর- হরিণ- ময়ূর- মুরগি; পাঁচ পদের মাংস; বিবিধ ফল; দই-দুধ দিয়া আপ্যায়ন করছেন সবাইরে। যেইসব থালা বাসনে সাধারণ সৈন্যদের খাওন দিছেন সেইগুলাও সোনা-রুপার তৈরি। ভরদ্বাজের সেনাশক্তি সম্পর্কে ভরত ধারণা না পাইলেও তিনি যে সাধারণ লোকবল দেখাইছেন তাও বিশাল; অতগুলা মানুষের প্রত্যেকের গোসলের লাইগা দেয়া হইছে তোলা পানি; প্রত্যেকরে দেয়া হইছে আলাদা আলাদা বিছানা ও সেবাদাসীর বিছানাবিনোদন…
এমন সুখ পাইয়া সৈনিকরা এইখানে থাইকা যাইতে চাইলে তাগোরে দোষ দেয়া চলে না…
বিদায়ের আগে নিজের মায়ের লোভের কারণে রামের বনবাস হইছে বইলা ভরদ্বাজের কাছে মন খারাপ করে ভরত। ভরদ্বাজ কন- দুঃখ করার কিছু নাই। হইলে হইতে পারে রামের নির্বাসন আসন্ন কালে আমাগো সকলের লাইগা মঙ্গলও নিয়া আসতে পারে। যেইসব জায়গায় এর আগে কোনো আর্য পদছাপ পড়ে নাই; হইতে পারে যে সেইসব এলাকায় চৌদ্দ বছর রামের বিচরণে উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত…

ভরদ্বাজ রামেরে ছোটখাটো অযোধ্যায় ফিরার চাইতে অশাসিত বিশাল বনে রাজত্বের স্বপ্ন দেখাইছেন অনুমান কইরা নিশ্চিন্ত হয় ভরত। ঠেইলা ঠুইলা সেনাসৈনিক দাঁড় করায়া সে চিত্রকূট রওয়ানা দেয়। চিত্রকূট গিরির উত্তরে নদীর ধারে ঘর উঠায়া থাকতে আছে রাম-লক্ষ্মণ-সীতা…
বনবাসীরা সাধারণত ঘোড়ায় চড়ে না; কিন্তু এই এলাকা ব্যতিক্রম। চিত্রকূটের শিকারিরা ঘোড়ায় চড়ে। নদীনালা গাছপালার আড়ালের লগে গতিটাও আয়ত্ত করছে তারা…
সৈনিকদের খোলা জায়গায় রাইখা নদীর কিনারে নতুন উঠা একটা ঘর খুঁইজা আমাত্যগো নিয়া আগায় ভরত…

সেনা সমাবেশের অস্তিত্ব টের পাইছে রাম। গাছে উইঠা অযোধ্যার বাহিনী চিনতে পাইরা চিল্লায় লক্ষ্মণ- ভরত আমাগো মারতে আসছে ভাই। তির-ধনুক নিয়া রেডি হন…

রাম নির্বিকার। রুক্ষ-শুষ্ক উটচলা কেকয় দেশে বড়ো হওয়া ভরত পিছনে ভরদ্বাজের গ্রাম রাইখা নদীমাতৃক বনাঞ্চলে বাল্মিকীর গ্রামে আইসা তারে আক্রমণ করার মতো বোকা না সে জানে। সে কয়- ভরত যদি নিজে আসে তো আমাগো দেখতে আইছে। চিন্তার কিছু নাই…
বশিষ্ঠসহ সকল মন্ত্রী; দশরথের তিন রানি আর শত্রুঘ্নরে নিয়া পায়ে হাইটা রামের উঠানে আইসা খাড়ায় ভরত। কুঁড়েঘর হইলেও ঘরটা বিশাল; অস্ত্রপাতি ভর্তি। সন্ন্যাসী বেশ নিয়া এইখানে থাকে রাম লক্ষ্মণ সীতা…
রামের পা ছুঁইয়া কাইন্দা পড়ে ছোটভাই- রাজা হইবার কথা যার; আমার কারণে সে আইজ থাকে হরিণ বান্দরের লগে। হায় হায়…
রাম কয়- সকলে আইলা; কিন্তু বাজান কই?
এক বাক্যে দশরথের মৃত্যুসংবাদ জানায়া পরের বাক্যে ভরত কয়- এখন আপনারেই যে রাজা হইতে হবে ভাই…

অযোধ্যায় সেনাগো উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়া ভরত তারে রাজা হইতে কয়। রাম সুমন্ত্ররে নিয়া বাপের লাইগা প্রার্থনা করতে নদীতে নামে। নদী থাইকা এক কোষ জল নিয়া নদীতেই নিবেদন করে- নির্বাসিত পুতের এই দানে যেন তোমার আত্মা শান্তি পায় পিতা…

দশরথের লাইগা কান্নাকাটি শেষ হইলে শুরু হয় সভা। ভরত কয়- বাপে আমারে যে রাজ্য দিছিলেন তা আমি আপনেরে দিলাম; নিয়া শান্তিতে রাজত্ব করেন…
পয়লা কইছিল বাপের সিংহাসন নিতে; এখন কয় তার দান করা সিংহাসন নিতে। রাম কয়- বাবায় তোমারে দিয়া গেছেন সিংহাসন; আমারে নির্বাসন। বাপে আমাগো যারে যা দিছেন সেইটাই থাউক। বাপের আদেশ আমাগো মাইনা চলা উচিত…

ভরত রামরে আরো মুলায়-তেলায়- শেষকালে বুদ্ধিনাশ হইছিল পিতার। মায়ের কুবুদ্ধিতে অন্যায় করছেন তিনি। আপনে বড়ো ভাই; আপনেই সিংহাসনের উত্তরাধিকার…

রাম বোঝে সিংহাসন ভোগের লাইগা তার কাছ থাইকা সব জাতের প্রতিশ্রুতিই নিয়া ফিরতে চায় ভরত। সে কয়- বাপের সিদ্ধান্ত বাপেরই; অন্য কাউরে তার লাইগা দোষ দিবার কিছু নাই। তিনি যারে যা দিছেন সেইটাই কথা। অযোধ্যায় রাজা থাকো তুমি; বনান্তরে রাজত্ব করব আমি…
বনে রামের রাজত্ব ইচ্ছায় ভরতের মনে আশা জাগে; প্রায় একই রকম কথা শুনাইছিলেন ভরদ্বাজ। হইলে হইতে পারে রামের হাত ধইরাই গঙ্গার এইপারে গইড়া উঠবে আর্য শাসন…

দশরথের রাজপরিষদ আগাগোড়াই আছিল আত্মীয়বিহীন। এক বাপের এক পুত দশরথের বাপের গোষ্ঠীতে কোনো লোক না থাকলেও তিনখান বিবাহে নিজের তিনটা শ্বশুরপক্ষ; মাইয়ার শ্বশুরবংশ কিংবা চাইর পুতের এক জোড়া শ্বশুরবাড়ি থাইকাও কাউরে পরিষদ-প্রশাসন কিংবা সেনাদলে রাখেন নাই দশরথ। তার পরিষদের সদস্যরা বিভিন্ন গোত্রের ব্রাহ্মণ। বশিষ্ঠ সেই পরিষদের প্রধান; যিনি একই লগে রাজ্যের প্রধান পুরোহিত- প্রধানমন্ত্রী- সেনাপতি আর ভূপতিগো সর্দার…

প্রশাসনে বশিষ্ঠরা সেরা। পাশাপাশি পরিষদে বিবিধ গোত্রের ব্রাহ্মণ থাকায় দশরথ আগাগোড়াই কাটায়া গেছেন নিশ্চিন্ত জীবন। দশরথের পরিষদে ব্রাহ্মণ্যবাদ বিরোধী বৌদ্ধ মুনি জাবালিও আছেন…

আদি আর্যস্থান পারস্যের আদালতে বিচারক আছিলেন কাবুলের শক বংশজাত মুনি গৌতম; পারস্যরাজ মরার পরে রাজার পুতেরে মাইরা নিজেই তিনি রাজা হইয়া বসেন। কিন্তু মাত্র কিছুদিন রাজাগিরির পর সেনাপতির পাল্টা টেক্কায় ভাগল দিয়া তিনি শুরু করেন যুদ্ধসংঘাত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নতুন অহিংস মতের প্রচার; এর লগে জুইড়া দেন শাক্যবংশের পুরানা আর্যধর্ম বিরোধিতার নতুন নতুন বিধান। প্রচার করতে থাকেন- সুখ দুঃখ যা কিছু আছে তা সব এক জীবনেই ঘটে; মইরা যাবার আগেপরে কিছু নাই; ঈশ্বর কিংবা জাতপাত বইলও নাই কিছু। তার এইসব কথাবার্তা সরাসরি আইসা লাত্থি মারে বাবনগো কলিজায়। কারণ বাবনেরা প্রচার করেন তারা উঁচা জাতের মানুষ আর বাকি ছোটজাতগুলার জন্ম হইছে বাবনগো সেবার নিমিত্তে…

বাল্মিকী ঘরানার ভার্গব বামুনেরা বিধান দিছেন বর্ণগোত্র শুধু জন্মসূত্রেই পাওয়া যাবে; ব্রাহ্মণের ঘরেই শুধু ব্রাহ্মণ জন্মাবে; শূদ্রের ঘরে শূদ্র। যদিও বিশ্বামিত্রের মতো কিছু ঘরানা এইসব এখনো পুরাপুরি মানতেছে না। আবার রামের শ্বশুর সিরধ্বজের মতো শিক্ষিত রাজারা এখনো ব্রাহ্মণ কিংবা ব্রাহ্মণ বিধানরে তেমন পাত্তা দেয় না। যাজ্ঞবল্ক্যের কাছে বিদ্যাশিক্ষা কইরা সিরধ্বজ নিজেই একজন ঋষি। তার রাজ্যে অনেক বাবন থাকলেও পুরোহিত বইলা কেউ নাই। রাজর্ষি সিরধ্বজ জনক নিজেই রাজ্যের পৌরহিত্ব করেন; নিজের মাইয়াগো বিবাহের পুরোহিতও আছিলেন সিরধ্বজ নিজে…

ব্রাহ্মণ আর ক্ষত্রিয় রাজাগো লাইগা মারাত্মক উপকারী একটা বিধান তৈরি করছেন সিরধ্বজের গুরু আর রামের মায়ের দেশ কোশলের সাধারণ এক আদিবাসী পরিবারে জন্মানো ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য। তার বিধানমতে; যার যত গতি কিংবা দুর্গতি; সবই তার আগের জন্মের কাম-আকামের ফলাফল। প্রজাগো না খাওয়া কিংবা মইরা যাবার লাইগা রাজার কোনো দোষ নাই। রাজায় রাজা হইছে পূর্বজন্মে সুকামের ফলে; প্রজায় দুঃখ পায় তার পূর্বজন্মে আকামের ফলে। জেন্দাকালে যারা ঠিকমতো ব্রাহ্মণ সেবা করে মরার পরে তারা ব্রাহ্মণ হইয়া জন্মায়। আর যারা ব্রাহ্মণ সেবা করে না; তারা খালি শূদ্রই হয় না; ঠিকমতো লাত্থিগুতা খাওনের লাইগা মাঝে মাঝে শিয়াল-কুত্তার পেটে গিয়াও পুনর্জন্ম পায়…
ভার্গবগো জন্মসূত্রে বর্ণ আর পুনর্জন্ম বিধানের কারণে বড়োই আরামে চলতেছিল পুরোহিত আর রাজাগো জীবন। এর মাঝে আইসা বামহাত ঢোকায়া দিলেন কাবুল মুনি গৌতম। তিনারে বোধিপ্রাপ্ত মানুষ গণ্য কইরা শিষ্যরা তারে গৌতম বুদ্ধ কইয়া ডাকে আর তার অনুসারী হিসাবে নিজেগো কয় বৌদ্ধ। বৌদ্ধবাদ এখন প্রচুর বাড়তেছে দেইখা বৌদ্ধমুনি জাবালিরেও পরিষদে রাখছিলেন দশরথ…

ভরত-রামের মুলামুলিতে ঢুইকা পড়েন বৌদ্ধমুনি জাবালি। রামরে কন- মানুষের জীবন একটাই; মইরা গেলেই কিন্তু সব শ্যাষ। মরা বাপে কী বলছে না বলছে সেইটার ত্যানা প্যাচায়া রাজ্য ছাইড়া বনবাস কিন্তু পাগলামি। এইসব আবাল যুক্তি বাদ্দিয়া আইসা অযোধ্যায় রাজত্ব করো। যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন দশরথ আছিলেন তোমার বাপ; এখন তিনি আর কারো কেউ না; মরা মাইনসের কথায় জেন্দা জীবন নষ্ট করা বেকুবের কাম…

এক সুযোগে জাবালি বাকি ব্রাহ্মণদেরও ঝাইড়া দেন- যজ্ঞমজ্ঞ এইসবে মরা মানুষের কী হয়? মরা মানুষ কি খাইতে পারে? এইসব হইল চালাকির বিধান; তাতে লোক ভোলানো গেলেও কামের কাম কিছু হয় না। ভরত যখন সিংহাসন দিতাছে তখন আইসা সেইটায় বসো…

ব্রাহ্মণগো অনুগ্রহ পাওয়া মানুষ রাম। জাবালির যুক্তিরে তার পাত্তা দিবার কারণ নাই। সে কয়- বাপে যদি জীবনে মাত্র একটা ভুল কইরা থাকেন; তয় সেইটা করছেন আপনের মতো বেদবিরোধী নাস্তিকরে পুরোহিত নিয়োগ দিয়া। আমার কাছে চোর- নাস্তিক আর বৌদ্ধ একই সমান। আপনের কথায় আমি না হারাইতে চাই স্বর্গ; না হইতে বদনামি। আমি বেদেরেই সত্য বইলা মানি…

ভরদ্বাজের শিষ্য বইলা কথা; বেদেরে তো মানতেই হবে। যে সাতটা ঋষি পরিবার সর্বপ্রথম রচনা করছিল বেদ; ভরদ্বাজ গোষ্ঠী তার মাঝে এক। বেদ না মানলে প্রয়াগে ভরদ্বাজের প্রতিরক্ষা যে হাওয়া হয়া যাবে সেইটা রাম ভালো কইরাই জানে…
বেদ রচনাকার সেই সাত গোষ্ঠীর আরেকটা হইল বশিষ্ঠ। অযোধ্যার বশিষ্ঠ পুরোহিত এই বিতর্ক আর বাড়তে দেন না। তিনি সবাইরে থামায়া জাবালির লাইগা সাফাই গান- আসলে তোমারে ক্ষেপায়া ভিতরের কথা বাইর করার লাইগা জাবালি এইসব বলছেন। তিনি কিন্তু পরকাল আর পুনর্জন্ম সম্পর্কে ভালোই জানেন…

নিজের জায়গা পরিষ্কার করতে বশিষ্ঠও রামেরে রাজা হইতে তেলান। রাম কয়- বাপের আদেশ অমান্য হয় এমন কিছু আমারে করতে বইলেন না পুরোহিত…
ভরত এইবার বাকিদের মতামত নেয়। সকলে কয়- তুমি যা বলার বলছ; রামও বলছেন বাপের আদেশ রাখবেন তিনি। সুতরাং তুমিই হইলা গিয়া রাজা…

রাজা সে আছে সন্দেহ নাই; কিন্তু ভরত ভোলে না তার রাজত্বের সীমা মাত্র চৌদ্দ বছর। চৌদ্দ বছর পরে যদি রাম আইসা হাজির হয় তাইলে নিজের যাবার কিংবা থাকার একটা পথ সে বাইর করতে চায়। সে কয়- সকলে যখন বলতেছেন আর ভাইয়ে যখন পিতার বচনই রাখতে চান তখন কী আর করা। তয় ভাই রাজা না হইলেও আমি কিন্তু রাজত্ব করব তিনার প্রতিনিধি হয়া…
রাম কয়- যেইখানে আমি নিজে রাজা হইতে পারি না; সেইখানে তোমারে রাজার প্রতিনিধি বানাব কেমনে?
ভরত কয়- আপনের কিছু করা লাগবে না। আমি আপনের এক জোড়া জুতা নিয়া যাইতেছি; সেইগুলারেই রাজা মাইনা চৌদ্দ বছর রাজ্য শাসন করব। ভাইয়ের জুতাই ভাইয়ের প্রতিনিধি। আর কোনো কথা নাই…

রামের জুতা ভরতের রাজত্বে রামের স্বীকৃতির চিহ্ন। ফিরবার পথে সে তা ভরদ্বাজরে দেখায়; গুহকরে দেখায়; অযোধ্যার মাইনসেরে দেখায়। তারপরেই তার মনে হয়; রাজ্য আর রাজবাড়ি তো দুই জিনিস। জুতা দেখায়া বাইরের লোক ভোলানো গেলেও ঘরের লোক তো জানে ভিতরের খবর…
আরেকখান মোচড় দেখায়া ভরত পাব্লিকরে কয়- যেই রাজবাড়িতে আমার শ্রদ্ধেয় ভাইজানের রাজা হইবার কথা; সেই বাড়িরে তার লাইগা সংরক্ষিত রাইখা তার জুতা নিয়া নন্দিগ্রাম গিয়া শাসন চালাব আমি…
নিজস্ব নতুন সেনাবাহিনী বানাইছে আগে; এইবার নতুন রাজধানী বানায়া শুরু হয় ভরত রাজার শাসন; যেইখানে দশরথের বাড়ির কারো কোনো উপস্থিতি নাই…

অভাজনের রামায়ণ। বনবাস ০২

নোট:
তথ্যের নোটগুলা গল্প শেষ হইবার পরে একসাথে জড়ো করার সিদ্ধান্ত নিছি। তাই গল্পের লগে সেইগুলা আর যোগ করি নাই। তবে গল্পে ব্যবহৃত রামায়ণ এবং বুদ্ধের ভূগোল- ইতিহাস বিত্তান্তে আগ্রহীরা এই তিনটা বই দেখতে পারেন:

Karvey Kraft: The Buddha from Babylon: The Lost History and Cosmic Vision of Siddhartha Gautama

Ranajit Pal: Non-Jonesian Indology and Alexander

Rajesh Kochhar: Vedic People History & Geography


মন্তব্য

ভরতের মামা এর ছবি

অভাজনের রামায়ন মহাভারতে অভাজনরা এমন পাকেজ নাটকের মেকি ভাষায় কথা কয় ক্যান? এইটা না হইছে ঢাকাইয়া, না হইছে প্রমিত বাংলা।

তবে সিলেটি হইয়া আপনে যে আবাদীর ভাষায় বই লিখতাছেন, এইটাও একটা ভাল ব্যাপার।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

রামায়ণ মহাভারতের অভাজনেরা না আছিল বাঙালি না ঢাকাইয়া না সিলেটি। এরা আমার লগে যেই ভাষায় কথা কয় আমি সেইভাবেই টুইকা রাখি। কী আর করা

Shahran Hussain এর ছবি

এই না ঢাকাইয়া না সিলোটি ভাষাই ভালো, নাহলে খাটি কুট্টি জবানে লিখলে কেও বুঝতে পারতো না!

চালিয়ে যান, পরীক্ষা আর রিসার্চ এর কাজ বাদ দিয়ে আপনার লেখা পড়ি। কিন্তু একটা ব্যাপার হলো ঋষি জাবালি কি বৌদ্ধ ছিলেন না চার্বাকপন্থী নাস্তেক কাফের, সেটা কিন্তু একটা প্রশ্ন। আর রাম যে বাপের বয়সী একজন মন্ত্রী মিনিস্টার কে গালি দিচ্ছে, এটা কিন্তু পরবর্তী কালের ব্রাহ্মণ্যবাদী সংযোজন।

ব্রুনো এর ছবি

আদি আর্যস্থান পারস্যের আদালতে বিচারক আছিলেন কাবুলের শক বংশজাত মুনি গৌতম; পারস্যরাজ মরার পরে রাজার পুতেরে মাইরা নিজেই তিনি রাজা হইয়া বসেন। কিন্তু মাত্র কিছুদিন রাজাগিরির পর সেনাপতির পাল্টা টেক্কায় ভাগল দিয়া তিনি শুরু করেন যুদ্ধসংঘাত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নতুন অহিংস মতের প্রচার

গৌতম বুদ্ধ কাবুলে জন্মাইছিলো আর উপরের কার্যকলাপ করছিলো--এই অনুমানের ভিত্তি কি?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভাবছিলাম গল্প শেষ করার আগে আর মাটি খোঁড়ার কামে লাগব না। এখন দেখতেছি প্রশ্ন আসতেছে। লেখার আপাতত লেখার নিচে তিনটা বইর তালিকা দিয়া দিছি। গল্প শেষ করতে পারলে কোন জাযগা খুইড়া কী তুইলা আনছি তার পুরা বিবরণ দিব

শামসুল ভুইয়া এর ছবি

আপনার অনবদ্য রচনাভঙ্গিতে বিমোহিত হলাম। ভাবছি, এভাবে একটি 'অভাজনের কোরান' বা 'অভাজনের হাদিস' যদি লিখতে পারতাম! লিখব নাকি ভাবতেই মনে হল বাংলাদেশে থাকি, আর মুসলমানদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বোঝার সামর্থ্য নেই।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমিনাপুত্রের খসড়া কইরা থুইছি সেই কবে। জানের ডরে ছাপাই না। ছাপাব

অতিথি লেখক এর ছবি

রায় মশয়ের গান মনে পড়ল।

মুণ্ডু গেলে খাবো টা কী?
মুণ্ডু গেলে বাঁচবো নাকি?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।