বিরাধের বগলচিপায় মরতে মরতে সীতার বুদ্ধিতে বাঁইচা গিয়া রাম বুঝে বনে বাহাদুরি সোজা কাম না। একলা এক বনুয়া দুই ভাইর সামনে থাইকা খালি সীতারেই থাবা দিয়া উঠায় নাই; দশরথের দুই বীরপুতেরেও লটকায়া হাঁটা দিছিল দূরে নিয়া কোপাইতে…
বিপদে সীতার মাথা খোলে আর রামের হয় বন্ধ। কথাটা স্বীকার করলেও স্বীকার না যাইয়া রাম কয়- বনটা কঠিন। আমাগো মনে লয় ঋষি শরভঙ্গের আশ্রমেও যাওয়া ভালো…
মরার আগে শরভঙ্গের আশ্রমের ঠিকানা বইলা গেছে বিরাধ…
আশ্রমে আইসা দেখে শরভঙ্গের লগে কথা কইতে আছে এক ইন্দ্র রাজা। ইন্দ্ররা হইল ঘোড়া চালাইতে ওস্তাদ পাহাড়ি দেবগোষ্ঠীর লোকেদের নেতা; যারা নিজেগো দেশেরে কয় স্বর্গ। এদের ঘোড়াগুলা অল্প দিনেই পাহাড়ে উঠানামা করতে করতে হয় লেতর হইয়া পড়ে না হয় হাড্ডিগুড্ডি ভাইঙা আতুর। ফলে নিত্যই এদের ঘোড়া বদলাইতে হয়; একেবারে জংলি ঘোড়াও এরা সামলাইতে পারে। শরভঙ্গের আশ্রমে আসা ইন্দ্রের রথে বান্ধা ঘোড়াগুলাও মনে হইতেছে আধাজংলি…
পর্বতবাসী হইবার কারণে সমতল থাইকা গিয়া দেবতাগো লগে কেউ খুব একটা সুবিধা করতে পারে না। তারাই বরং চামেচুমে নাইমা লুটপাট চালায়া ঘোড়া দাবড়ায়া দ্রুত পাহাড়ে লুকায়…
শক্তি ও সম্পদে সবল দেবতারা চামড়ায় ফর্সা রঙের মানুষ। শ্যামবর্ণের দশরথপুত্র রাম ইন্দ্ররে দেখায়া ছোটভাইরে কয়- দেখছসনি লক্ষ্মণ; কী সুন্দর; চেহারা থাইকা যেন আলো ঠিকরাইতাছে। ইন্দ্রের সেপাইগুলাও কত সুন্দর; একটাও বুড়াধুড়া নাই। সবগুলা পঁচিশের কম বয়েসি তাগড়া জোয়ান। তুই সীতার কাছে থাক; আমি গিয়া জাইনা আসি এই ইন্দ্রের নাম কী?
রাম কাছাকাছি যাইবার আগেই ইন্দ্র ঋষির আশ্রম ছাইড়া যায়। রাম শরভঙ্গরে পেন্নাম-পরিচয় দিয়া জিগায়- ইন্দ্র এইখানে আসছিলেন ক্যান?
শরভঙ্গ কন- আমারে নিতে আসছেন তিনি। তার দেশে নিয়া গ্রাম পত্তনি করাইতে চান। এই আশ্রমের আশেপাশে বহুত জায়গা জমি আছে; চাইলে তুমি এইগুলা নিয়া রাজ্য বসাইতে পারো…
রাম কয়- দানে পাওয়া জমিতে যেন রাজত্ব না করা লাগে; আমারে সেই আশীর্বাদ করেন ঋষি। রাজা যদি হইতেই হয় তয় যেন জয় করা রাজ্যেই সেইটা হইতে পারি আমি…
রামের বিবরণ আগেই শুনছেন শরভঙ্গ; রাজত্বের চাইতে গৌরবে আগ্রহ বেশি পোলার। তিনি কন- খুশি হইলাম তোমার এই আকাঙ্ক্ষা শুইনা। তাইলে বৌ ভাই নিয়া যতদিন ইচ্ছা এই আশ্রমে অতিথি হও…
রাম কয়- এইখানে নিজের আবাসটাও যদি আমি নিজে বানাইতে চাই তবে কি রুষ্ট হবেন ঋষি?
ঋষি কন- ঘর বানাইবার শক্তি থাকে না বইলা প্রবীণ রাজারা অন্যের প্রসাদ দখল কইরা বিলাস করে। তরুণেরা নিজেরাই উঠায় নিজের ঘর। তুমি নিজের ঘর নিজে বানাইলে খুশি হব আমি…
রাম কয়- আমারে তাইলে এই বনে একটা বাসযোগ্য স্থানের ঠিকানা দেন…
শরভঙ্গ কন- মন্দাকিনী নদীর উজানে হাঁটলে পাবা সুতীক্ষ্ণ ঋষির আশ্রম। সেই এলাকা হইতে পারে বসবাসের উপযুক্ত স্থান…
নতুন গ্রাম পত্তনি করতে আশ্রম ছাইড়া ঋষি শরভঙ্গ রওয়ানা দেন ইন্দ্রের লগে। শরভঙ্গ বন ছাড়ায় তার নামে ও দাপটে আশ্রিত খুচরা ঋষিগো মনে হয় তরুণ রামই হইতে পারে তাগো নতুন সুরক্ষার উপায়। তারা রামের কাছে আইসা কয়- তোমারে আমরা রাজা বইলা মাইনা নিলাম। এইখানে বহুত ব্রাহ্মণ ঋষি প্রতিদিন রাক্ষসগো হাতে মাইর খায়। চিত্রকূটের মতো পম্পা আর মন্দাকিনীর তীর ধইরা রাক্ষসগো বহুত উৎপাত। আমাগো রক্ষা কইরো তুমি…
রাম কয়- রাক্ষসগো থাইকা আপনাগো রক্ষা করব আমি; তয় রাজা হইয়া কাম নাই আমার। আমার উপরে খালি আশীর্বাদ রাইখেন সকলে। এইবার লন ঋষি সুতীক্ষ্ণের আশ্রমে যাই…
সুতীক্ষ্ণের আশ্রমে গিয়া রাম দেখে তিনিও গাট্টি গোল কইরা হাঁটা দিতেছেন ইন্দ্রের লগে। কয়দিন আগে রাবণের পোলার হাতে ইন্দ্র কিল খাইবার পরে বহু ঋষি বন ছাইড়া ভাগছেন। এখন কোনোমতে পইড়া থাকা ঋষিগো বাইছা বাইছা নিয়া নিজের রাজ্যে বসাইতেছে ইন্দ্র; বুদ্ধি ভালো…
সুতীক্ষ্ণও রামের কথা শুনছেন। তিনিও তারে পাইয়া নিজের পরিত্যক্ত আশ্রম আর পইড়া থাকা খুচরা ঋষিগো রামের ঘাড়ে গছাইতে চান। রাম কয়- আশ্রম আশ্রমের জায়গায় থাউক। আমি ঘর উঠায়া থাকতে পারি এমন একটা জায়গা দেখায়া দেন…
সুতীক্ষ্ণ কন- তুমি যদি এইখানে বসতি করো তয় আর আমার ইন্দ্রের দেশে গিয়া কাম নাই। তুমি এই আশ্রমেই থাকো; এইখানে ফলমূলের অভাব নাই…
রাম কয়- বাবন আর ক্ষত্রিয় এক বাড়িতে না থাকাই ভালো। দেখা যাবে আপনে যেইসব হরিণ পোষেন; তাগো কোনোটা একদিন মাইরা খাইয়া ফেলব আমি; তখন ঝামেলা হবে…
সুতীক্ষ্ণ কন- ঠিকাছে তাইলে। আইজ রাত্তিরে অন্তত আমার অতিথি হও…
সকালে রামরে বিদায় দিতে গিয়া সুতীক্ষ্ণ বারবার কন- স্মরণ রাইখ; তোমার ভরসায় ইন্দ্রের আমন্ত্রণ কিন্তু ফিরায়া দিছি আমি। আমাগো দেইখা রাইখ…
বনের পথে যাইতে যাইতে সীতা রামেরে কয়- মিছা কথা কওয়া; পরের বৌ টানাটানি আর বেহুদা নিষ্ঠুরতা; এই তিনটা হইল দুনিয়ার সবচে খারাপ কাম। পয়লা দুইটা তোমার নাই। কিন্তু রাক্ষস মারার লাইগা ঋষিগো যে কথা দিছ তুমি; সেইটা নিয়া চিন্তা হইতেছে আমার। বেহুদাই বহুত রক্তপাতে জড়ায়া পড়বা তুমি। ক্ষত্রিয়গিরিই যদি করতে চাও তয় আমি কই অযোধ্যায় ফিরা গিয়া করো। আর তপোবনে থাকলে ধর্ম নিয়াই থাকা ভালো; রক্তারক্তি না…
রাম কয়- তুমি কইতে আছ কূলধর্মের কথা। এইখানে আমাগো কূল নাই কিন্তু আশ্রিত আছে। আশ্রিতগো রক্ষা করাই কিন্তু কূলহীন ক্ষত্রিয়ের কাম। দণ্ডকারণ্যের ঋষিরা আমার শরণ নিছেন; আমিও তাগো সুরক্ষার কথা দিছি। ব্রাহ্মণগো দেয়া কথা ফিরানো কিন্তু আমার লাইগা অসম্ভব। দেখবা এই বাবনগো হাত ধইরাই তৈরি হবে আমার ভবিষ্যৎ তৈরি হবে। তুমি আমার লগে থাইকো সীতা…
বন ভাইঙা সন্ধ্যাকালে তারা গিয়া উপস্থিত হয় বিশাল এক দিঘির পারে। দিঘির মাঝখানে দ্বীপ বানায়া তার উপর প্রাসাদ কইরা পাঁচ বৌ নিয়া থাকেন মাণ্ডুকর্ণি মুনি। এই এলাকার বিখ্যাত ঋষিগো সম্পদ আর দাপট দেইখা রামের মাথা ঘোরে; কী বিলাসী জীবনই না যাপন করে তারা…
বনের কোথাও কয়েক মাস; কোথাও সর্বোচ্চ এক বছর থাইকা দশ বছর পরে আবার সুতীক্ষ্ণের আশ্রমে আইসা হাজির হয় রাম লক্ষ্মণ সীতা। রাম জিগায়- হুনছি এই বনের কোথাও মুনি অগস্ত্যের আশ্রম। কিন্তু আমি তার সন্ধান করতে পারি নাই। জানা থাকলে আমারে একটু জানান…
সুতীক্ষ্ণ কন- আমিও ভাবতেছিলাম তিনার কথা বলব তোমারে। আর্যগো বিন্ধ্য পর্বত পাড়ি দিয়া দক্ষিণে যাবার গিরিপথ অগস্ত্যই দেখাইছেন। তার দেখানো পথেই বিন্ধ্য পাড়ি দিয়া দক্ষিণে এখন প্রায় পুরা আর্য শাসন। তিনিও এখন দক্ষিণেই থাকেন…
চাইর যোজন দূরে অগস্ত্যের ভাইর আশ্রমের ঠিকানা দিয়া সুতীক্ষ্ণ কন- আমি তো আর দক্ষিণে যাই নাই; এর বেশি বলতে পারব না। অগস্ত্যের ভাই নিশ্চয়ই তার ঠিকানা জানেন…
অগস্ত্যের ভাই যে আশ্রম চালান সেইটাও বাতাবি আর ইম্বল নামে দুই অসুর মাইরা দখল করা জমিতে অগস্ত্যের তৈরি। আশ্রমে সন্ধ্যায় পৌঁছাইয়া সেইখানে রাইত কাটায়া সন্ধান নিয়া পরদিন ভোরে রাম রওয়ানা দেয় অগস্ত্যের ঠিকানায়…
অগস্ত্যের লগে একটু ভাব নিয়া দেখা করতে চায় রাম। তাই সরাসরি না গিয়া লক্ষ্মণরে আগে পাঠায় মুনির কাছে তার রাজকীয় বিবরণ দিতে। অচেনা লোকের কাছে সরাসরি হাজির না হইয়া চ্যালা পাঠায়া আগাম সংবাদ দিলে দাম বেশি পাওয়া যায়…
লক্ষ্মণ গিয়া অগস্ত্যের শিষ্যের কাছে রাজা দশরথের বড়ো পুতের বড়ো বিবরণ দিয়া মুনিরে সংবাদ পাঠাইলে অগস্ত্য শিষ্যরে কন- তারে নিয়া আসো আমার নিকট…
বৈদিক ঋষিরা কেউ পূজা করে না। অগস্ত্যও করতেন না আগে। কিন্তু অগস্ত্যের এই আশ্রমে দেবতাগো মূর্তি বানায়া পূজাও করা হয়। চোখ ঘুরায়া রাম দেখে আশ্রমে আলাদা আলাদা পূজামন্দিরে বৈদিক দেবতা ইন্দ্র আর সূর্যর মূর্তির পাশাপাশি অবৈদিক দুই নতুন দেবতা ব্রহ্মা আর বিষ্ণুরও মূর্তি আছে…
অগস্ত্য দক্ষিণে আসার পরে স্থানীয়গো পূজার ভিতর যজ্ঞ হোম ঢুকায়া যেমন সেইগুলার আর্যায়ন ঘটাইছেন; তেমনি স্থানীয়গো দেবতাদেরও ব্রাহ্মণগো লাইগা পূজ্য কইরা তুলছেন। অন্য ঋষি-বাবনগো থাইকা অগস্ত্য এইখানে ব্যতিক্রম। আর্য-অনার্যের মিশ্রণে আগ্রহী তিনি…
অগস্ত্য রামেরে ভালো কিছু তির ধনুক আর অস্ত্রপাতি দেন; রাত্তিরে বিশ্রাম করতে কন। তারপর রামেরে কন- দুনিয়ার সাধারণ নিয়ম হইল মানুষ সম্পদশালীর পিছে হাঁটে আর ফকিরার পিছন থাইকা ভাগে। কিন্তু তোমার বৌটা তোমারে ফকির জাইনাও তোমার লগে বনে বনে ঘুরতেছে। বৌটার সুখ-সুবিধায় অবহেলা কইরো না। তারে নিয়া তুমি এইখানে থাকলে পুরা দেশ ধন্য হবে। এই সীতা মাইয়াটা আলাদা। আদি বশিষ্ঠের স্ত্রী অরুন্ধতীর লগে তোমর বৌ সীতার মিল পাইতেছি আমি…
রাম কয়- উপদেশে ধন্য হইলাম গুরুদেব। এইবার সহজে পানি আর শিকার মিলে; থাকার লাইগা এমন একটা ভালো বনের সন্ধান দিলে ঘর উঠায়া থাকতে পারি কয়টা দিন…
অগস্ত্য কন- যোজন দুই দূরে পঞ্চবটী হইতে পারে তোমার উপযুক্ত স্থান। ফল জল আর জঙ্গলের লগে প্রচুর শিকারও পাইবা গোদাবরী তীরের ওই জায়গায়। তোমারে সেইখানে পাইলে বাবন-ঋষিরাও বুকে বল পাবে। তারাও বহুত কামে লাগব তোমার…
শিকার করা কয়টা পাখি মাথায় নিয়া একটা লোকরে বনে হাঁটতে দেখে তারা। লোকটারে রাক্ষস মনে কইরা রাম লক্ষ্মণ সতর্ক হয়। কাছে গিয়া দেখে রাক্ষস হইলেও অতি বৃদ্ধ ও দুর্বল…
রাম জিগায়- তুমি কেডা?
রাম-লক্ষ্মণ-সীতারে এক ঝলক দেইখাই লোকটা বুঝে এরা অভিজাত আর্য সমাজের লোক। তাই লোকটা মিঠাই পাকায়- ও পুত। আমি আর কেডা হইতে পারি? আমি হইলাম গিয়া তোমাগো বাপের বয়সী একটা মানুষ। চলতে কষ্ট হাঁটতে হাঁপাই…
রাম তার নামধাম জিগায়। কিন্তু লোকটা নিজের নাম না কইয়া আর্যদের দেবতাগো প্রথম পুরুষ বইলা স্বীকৃত প্রজাপতি থাইকা বংশলতা টানতে টানতে নিজের বাপের নাম কয় অরুণ। তারপর কয়- আমি তার পোলা জটায়ু…
জটায়ু থাইমা হাঁপায়। তারপর কয়- মনে হইতেছে এই বনে তোমরা কয়েকদিন থাকবা; যদি একটা কামকাজ দেও তয় তোমাগো বহুত উপকারে লাগতে পারি আমি। তোমরা শিকারে টিকারে গেলে ওই মাইয়ারে পাহারাও দিতে পারব…
রাম বোঝে রাক্ষস জটায়ু একটা কামের ধান্দায় তাগো কাছে আর্য বংশলতিকা বানায়া নিজের পরিচয় দিছে। লোকটা স্থানীয় আর নিরীহ। অন্য কোনো কামে না লাগলেও কোথায় কী পাওয়া যায় না যায় সেইটা সে দেখায়া দিতে পারবে…
জটায়ুরে কামলা নিয়া রাম কয়- আমার বৌ সীতার রক্ষার ভার তাইলে এখন থাইকা তোমার…
বিগলিত জটায়ু কয়- অবশ্যই অবশ্যই। জান থাকতে এই মাইয়ার কিছু হইতে দিমু না আমি…
চাইরপাশ গহিন বন হইলেও পঞ্চবটী এলাকাটা বনহীন। গোদাবরী নদীর কাছাকাছি একটা সমতল জায়গায় বাঁশ-কাঠ-বেত মাটি দিয়া বড়োসড়ো একটা কুঁড়েঘর তোলে লক্ষ্মণ। আশপাশে শিকার বা বুনো ফলের অভাব নাই। টুকটাক কামে লাইগা থাকে জটায়ু। কয় মাস পরে শরৎ বিদায় নিয়া হেমন্ত আসে। বনবাসের মেয়াদও শেষের পথে। আইলসা দিনের সকালে অযোধ্যার কথা মনে হয় দুই ভাইর। লক্ষ্মণ কয়- এমন দিনে ভরতও নিশ্চয় সকালবেলা সরযুতে গোসল করতে যায়…
উথলানো দুঃখ পাকায় লক্ষ্মণ- কৈকেয়ী কেমনে যে কামটা করলেন…
রাম কয়- কৈকেয়ীর কথা থাউক। ভরতের লগে আমাগো দেখা হইবার পরে কী হইতে পারে সে বিষয়ে তোর কোনো চিন্তা থাকলে বল…
উঠানে বইসা খাজুরা আলাপ করে রাম আর লক্ষ্মণ; আশেপাশে সীতাও আছে। বন ঘুরতে ঘুরতে বনের ভিতরে নতুন ঘর দেইখা শূর্পণখা আগায়া আসে। রাম লক্ষ্মণরে দেইখা বুঝে এরা বনের বাইরের লোক…
শূর্পণখা আগায় রামের দিকে- পরনে তপস্বীর বেশ কিন্তু লগে অস্ত্রপাতি আর নারী। কী উদ্দেশ্যে এই রাক্ষস দেশে থাকতে আছ তোমরা?
সরল বর্ণনায় রাম নিজের বিত্তান্ত জানায়া কয়- তুমি কেডা? দেইখা তো মনে হইতেছে রাক্ষসী। একলা এই বনে কী করো?
শূর্পণখা কয়- নিজের দেশে আবার একলা আর দোকলা কী? এইটা তো আমাগোই দেশ। নিত্যই চক্কর দেই। রাজা রাবণের নাম শুনছ নিশ্চয়; রাবণ আমার বড়ো ভাই। আরো দুইটা বড়ো ভাই আছে আমার; একজন কুম্ভকর্ণ; একটু জড়বুদ্ধির মানুষ; কামকাজ করে না; খালি খায় আর ঘুমায়। অন্যজন বিভীষণ; তার আচার আচরণ অবশ্য রাক্ষসগো থাইকা তোমাগো লগেই মিলে বেশি…
বনের ত্রাস রাক্ষস রাজা রাবণের বইন খাড়ায়া আছে রামের উঠানে। রাম লক্ষ্মণ এ অন্যের দিকে তাকায়…
শূর্পণখা নিজের পরিচয় বিস্তার করে- আবার বাবা কিন্তু আছিলেন একজন মুনি; তার নামও হয়ত শুইনা থাকবা- বিশ্রবা মুনি। আমাগো মা নিকষাসহ মোট চাইরখান বিয়া করছিলেন তিনি। বাপের অন্য ঘরগুলাতে আমগো আরো অনেক সতিলা ভাইবইন আছে। এইসব এলাকার শাসক খর আর দূষণও আমার সতিলা ভাই…
সামনে খাড়ায়া আছে ঋষি-বাবনগো শত্রুর বইন। কী করা যায় ভাবতে থাকে রাম। রামেরে চুপচাপ দেইখা শূর্পণখা কয়- তোমারে দেইখা পছন্দ হইছে আমার। আমারে বিয়া কইরা ফালাও। তাইলে দণ্ডকারণ্যের যেখানে ইচ্ছা সেইখানে যাইতে পারবা…
রাম হাসে- আমি যে বিয়াইত্তা মানুষ; বৌও লগে আছে আমার। তোমার মতো মাইয়ার পক্ষে সতীনের ঘর করাতো কঠিন…
লক্ষ্মণরে দেখায়া রাম কয়- আমার এই ভাই কিন্তু আবিয়াইত্তা। যেমন বীর; চরিত্রও তেমন ভালো; তোমার উপযুক্ত। আমার মনে হয় এরেই তোমার পাত্র হিসাবে বাইছা নিতে পারো…
লক্ষ্মণ কথা কাটে- আমি হইলাম গিয়া ভাইয়ের সেবাদাস। একটা কামলাবেটার বৌ হওয়ার চাইতে তোমার মনে লয় বড়ো ভাইর ছোট বৌ হওয়াই বেশি ভালো…
তারে নিয়া দুই ভাইর তামাশায় খেইপা উঠে শূর্পণখা। রাম লক্ষ্মণরে কয়- এর চেহারা ভচকায়া দে…
ধারালো ছোরার টানে শূর্পণখার নাকের আগা আর দুই কানের লতি কাইটা ফালায় লক্ষ্মণ। চিক্কুর দিয়া বনে মিলায় শূর্পণখা…
লক্ষ্মণের দিকে তাকায়া হাসে রাম- নাককান কাটা রক্তাক্ত বইনরে দেইখা বনে দশরথপুত্রের উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চয়ই একখান বার্তা পাবে রাক্ষসগো রাজা রাবণ। পাবে। অবশ্যই পাবে…
মন্তব্য
এক বছরে দুই/তিনটা পর্ব দিলে পাঠককে তো বার্ষিক পরীক্ষার জন্য পড়া রিভিশন দেবার মতো করে আগের সব পর্ব পড়ে আসতে হবে। যাকগে, সিরিজ আবার চালু করেছেন তাতে আমি খুশি।
একটা ম্যাপ ছাড়া স্থানের অবস্থান ও বর্ণনা বুঝতে খুব সমস্যা হচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের ভূগোল আমার অতি সামান্য জানা আছে, তাতেও কুলিয়ে উঠতে পারছি না। অবস্থান বোঝাটা খুব জরুরী।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
দক্ষিণ ভারতে যাব না। আপাতত খালি দক্ষিণ কথাটা রাখছি। জায়গাটা আদতে আফগানিস্তানের বলখ এলা্কা। লঙ্কা আছিল হররুদ নদীর একটা চর। তারই তিরে দণ্ডকারণ্য। খাবলা খাবলাভাবে কয়েকটা অধ্যায়ে সেইগুলার বিবরণ রাখছিলাম। কিন্তু এখন সেইগুলা টানতে গেলে গল্প গুলায়া যাবে। তাই ফাইনাল টিউনিং এর সময় মানচিত্রটার বিবরণ দিব…
০২
রামায়ণে দক্ষিণ ভারত ঢোকানো হইল ভূগোলের স্থানান্তর। আদতে খিপূ ৮ শতকের আগে দক্ষিণ ভারতে আর্যগো পা পড়ে নাই
নতুন মন্তব্য করুন