কুরুযুদ্ধের একটা বিশাল অংশ জুইড়া আছে লোহার অস্ত্রপাতি; অথচ মহাভারতের ঘটনার সময় পর্যন্ত দুনিয়াতে লোহাই আবিষ্কার হয় নাই। অবশ্য তামা আবিষ্কার হইছে আরো বহু আগে; খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে চাইর হাজার বছরে। ড.
কুরুযুদ্ধে নাকি অংশ নিছিল ১৮ অক্ষৌহিণী সৈনিক; যাগো লগে হাতিঘোড়াও আছে আরো আছে জোগানদার কবিরাজ দাসদাসী বাদ্যকার বাবুর্চি পশুরাখাল দোকানদার এমনকি বেশ্যাও। তো ১৮ অক্ষৌহিণীরে বর্তমান সংখ্যা দিয়া কনভার্ট করলে খাড়ায় ৪৭ লক্ষ চব্বিশ হাজারের মতো। এর সাথে অন্য লোকজন যোগ দিলে পুরা যুদ্ধে বলতে হয় আছিল ৫০-৫৫ লক্ষ লোক; এবং তারা নাকি যুদ্ধ করছে একটা মাঠেই...
যত দিন ধইরাই লেখা হউক আর যত মাইনসেই কাহিনি যোগ করুক না ক্যান; মহাভারতের কাহিনিখান এখনো প্রচারিত আছে একক মানুষ বেদব্যাস কৃষ্ণ দ্বৈপায়নের নামে; এবং মহাভারতের প্রধানতম ভজঘট হইলেন স্বয়ং এই বেদব্যাস কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। তো এই কৃষ্ণ দ্বৈপায়নের একখান কাব্যিক বর্ণনা দিছেন রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় তার অন্নদামঙ্গলের পাতায়:
[center]দাঁড়াইলে জটাভার
চরণে লুটায় তাঁর
কক্ষলোমে আচ্ছাদয়ে হাঁটু
পাকা গোপ পাকা দাড়ি
কবিরা যুক্তি মানেন না আর ধার্মিকেরা যুক্তি বানান। এতে কোনো ঝামেলা নাই কারণ কাব্যকাহিনি যারা পড়েন আর ধর্মকথন যারা মানেন তারা ভিন্ন ভিন্ন লোক; ভিন্ন ভিন্ন রঙের অন্তর নিয়া তারা বসবাস করেন ভিন্ন ভিন্ন জগতে; যদিও দুই দলই ভিত্তি করেন মূলত কল্পনায়। পার্থক্য শুধু এই যে কাব্যভক্তরা কল্পনারে কল্পনা জাইনা বিনোদিত হন আর ধর্মভক্তরা কল্পনারে সত্য জাইনা করেন বিশ্বাস...
অবশেষে সব ছাইড়া দ্রৌপদী আর পঞ্চপাণ্ডব রওয়ানা দিছে বনবাসে। কুরুযুদ্ধের ছত্রিশ বছর পরে...
কুন্তীরা বনে যাবার বছর খানেক পর পাণ্ডবেরা বনে গিয়া দেইখা আসছিল তাদের। ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কুন্তী ভীষণ দুর্বল আর বিদুর বদ্ধ উন্মাদ; ন্যাংটা হইয়া বনে বনে ঘোরে...
কাউরে কিছু না জানায়ে কুন্তী সিদ্ধান্ত নেয় ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর লগে বনবাসে যাবার। ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারীর বানপ্রস্থে যাওয়ার কথা সকলেই জানত। যুদ্ধের পনেরো বছর পরে ভীমের জ্বালায় ধৃতরাষ্ট্র বাধ্য হইছেন বানপ্রস্থ বাইছা নিতে...
অভিষেকের আসরে হায় হায় করে যুধিষ্ঠির- মানুষ হারতে হারতে জিতে আর আমি হতভাগা জিততে জিততে হারি। কী পাইলাম আমি যুদ্ধ কইরা?
যুদ্ধ শেষ হইয়া গেছে। বাকিসব খুচরা আবেগ আর হিসাব নিকাশও শেষ। ভাই আর পোলাদের দুঃখ সামলাইয়া উইঠা দ্রৌপদী এক দফা দাবি জানাইছিল পাণ্ডবগো কাছে- অশ্বত্থামারে হত্যা কইরা তার মাথার মুকুটের মণি আইনা দিতে হবে তারে। অন্যথায় সে আত্মঘাতী হইয়া পোলা আর ভাইদের সাথে যাবে...
সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী গত সন্ধ্যায় পতিত হইছে দুর্যোধন। তার মানে যুদ্ধ শেষ। নকুল নিশ্চয়ই এই ভোরবেলা উপপ্লব্য নগরে আইসা উপস্থিত হইছে দ্রৌপদীরে সম্রাজ্ঞীর সংবর্ধনায় নিয়া যেতে...
নকুলরে উপপ্লব্য নগরে আসতে দেইখা এমনই ভাবে দ্রৌপদী। কিন্তু তার কোনো কথার উত্তর না দিয়া নিঃশব্দ নকুল যখন তারে নিয়া আইসা পাণ্ডব শিবিরে পৌছাইলে সে পয়লা ধাক্কাটা খায়। সামনে তার দুই ভাইয়ের লাশ...
দুর্যোধন পলাইছে। শল্য মরার পরপরই ভাগল দিছে দুর্যোধন...
কর্ণ মরার রাত্তিরে কৃপাচার্য আইসা দুর্যোধনরে কইছিলেন যুদ্ধ বাদ দিয়া দিতে। কিন্তু দুর্যোধনের কথা হইল- যুদ্ধ বাদ দিয়া আমার লাইগা যারা মরছে তাগো প্রতি অসম্মান দেখাইতে পারি না আমি। আমি শান্তিবাদী বুড়া হইয়া মরতে চাই না গুরু কৃপাচার্য। হয় আমি রাজা হইয়া মরব না হয় যুদ্ধ কইরা মরব সৈনিকের মতো...