• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

যে হাসি ঠোঁটেই শুকিয়ে যায়

স্বপ্নাহত এর ছবি
লিখেছেন স্বপ্নাহত (তারিখ: শুক্র, ০৮/০২/২০০৮ - ৩:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নাম ছাড়া কোন মানুষ হয়না। যেমন হয়না বিশেষত্ব ছাড়াও। ক্যাডেট কলেজের টীচারদের দেখলে সেটা আরো ভাল করে বোঝা যায়। বিশেষত্ব অনুযায়ী নামকরণ ক্যাডেট কলেজে অনেকটা ফরজের পর্যায়েই পড়ে। সেই সব বিশেষণ একত্রিত করা হলে দুই তিনটা বাংলা গ্রামার বই মার্কেটে ছাড়া কোন ব্যাপারই না। উপযুক্ত নামকরণের বেলায় কারো ছাড়ন নাই। সে রাশভারী চেহারার কোন শিক্ষকই হোক কিংবা পাশের বেড এর জিগরি দোস্তই হোক।

ক্লাস ইলেভেন এর কথা। হঠাৎ শোনা গেল আমাদের ভিপি স্যার(ভাইস প্রিন্সিপাল) বদলি হতে যাচ্ছেন। শুনে কারো ঠিক বিশ্বাস হতে চায়না। নানা ভেজালের মধ্যে দিন কাটাতে কাটাতে হঠাৎ কোন সুসংবাদ শুনলেই বরং কেমন অস্বাভাবিক লাগে। এও সম্ভব? আমাদের মত মহা অভাগা ব্যাচ এর কপালে এত সুখ আছে নাকি। সেই ক্লাস সেভেন এ চোখ খুলেই দেখি এই স্যার ভিপি। খোলা চোখ আর বন্ধ হয়না। ক্লাস কিংবা প্রেপটাইমে ঠিক মত ঘুমানোও যায়না তার ভয়ে। ঘুম আসলেও বেত হাতে তিনি স্বপ্নেও দেখা দেন,এমন অবস্থা। সেই স্যার নাকি আমাদের সুখের সাগরে ভাসিয়ে একেবারে চলে যাচ্ছেন... চিরতরে...। ক্যামনে কি...কোন মতেই হিসাব মেলেনা। স্বপ্ন দেখছি কিনা ভেবে দুই হাতে চোখ কচলাই। শেষপর্যন্ত সত্যিই শিওর হওয়া গেল,স্যার আসলেই চলে যাচ্ছেন। আনন্দে আমার এক ক্লাসমেট ছুটলো প্রেয়ার রুমে... জুম্মার নামাজের টাইমটুকু যার কাটে বাথরুমের দরজার চিপায়...সেই বান্দা গেল দুই রাকাত নফল নামায পড়তে। এই যখন অবস্থা তখন মাথায় ঢুকলো দুর্যোগ পরবর্তী চিন্তা। তার রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে কে আসবে??

যিনি আসবেন তিনি হুবহু ভিপি স্যারের কার্বন কপি না হয়ে মোটামুটি ৭০% হলেও পুরা খবর আছে। নফল ফরজ কোন নামাজেই তখন তেমন একটা লাভ হবেনা। তবুও নিজেরে এই বলে বুঝ দেই যে আর কারো পক্ষে বর্তমান ভিপি স্যারের মত হওয়া সম্ভব না। কিছু কিছু জিনিস দুনিয়াতে ওয়ান পিস হিসেবেই ডেলিভারী হয়।

দেখতে দেখতে একসময় ভিপি স্যারের ফেয়ারওয়েলও দিয়ে ফেললাম। এখন অপেক্ষা তার উত্তরসূরী হিসেবে কে আসে। এবং যিনি আসলেন প্রথম দেখাতেই মনে হল আর যাই হোক আগের ভিপি স্যারের দুই তিন মাইল আশেপাশেও এই ভদ্রলোক ঘেঁষতে পারবেননা। ছোট খাট শীর্ণকায় অতি সাধাসিধা ভাল মানুষ টাইপ চেহারা। চশমা পরা অবস্থায় কিছুটা মহাত্না গান্ধী টাইপ লুক আসে। আমরাও এই অহিংস ভিপি পেয়ে মনে মনে খুশি। এবার বুঝি শান্তিতে ঘুমানোর দিন শুরু হল।

দিনগুলো খারাপ যাচ্ছিল না। প্রেপটাইমে ঘুমের সময় মশা ছাড়া আর কিছু ডিস্টার্ব করেনা। নতুন ভিপি স্যারতো নয়ই। বড়জোর ঘুম থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করেন- বাবা তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে?? ঘুমের ঘোরে ডান বামে ঠিকমত মাথা নাড়তে না নাড়তেই আশ্বস্ত হয়ে চলে যান। কে কয় দুনিয়াতে সুখ বলে কিছু নাই??

কিন্তু এই ভালমানুষীও বেশিদিন ভাল লাগেনা। গাধা না হতে পারি,কিন্তু জল ঘোলা করে না খেলে ঠিক পিপাসা মিটেনা। সো কিছু একটা করা দরকার। তরকারীতে লবণ দরকার। সবচে বড় কথা নতুন ভিপির একটা নতুন নাম দরকার। নাম ঠিক করতে তেমন কষ্ট করতে হলোনা। দশের লাঠি একের বোঝা। দশ জন হলেই চলে। সেখানে চল্লিশ জন বাড়তি। মোট ক্লাসমেট পঞ্চাশ জন।

নামকরণ প্রকল্প ঠিকমত শুরু হতে না হতেই সার্থক সমাপ্তি ঘটলো। স্যারের একটা নতুন নাম দেয়া হয়ে গেল-মোশতাক স্যার। এখন থেকে নতুন ভিপিকে আর আসল নামে ডাকতে হবেনা,কী মজা! নতুন নামের ব্যাপারটা কেমন ঘোলাটে লাগছে? বলি... স্যারের নাকের নিচে ছিল একটা চিকন চাকন মাইক্রোস্কোপিক মোচ আর মাথা জুড়ে মেগা স্ট্রাকচারের একটা চকচকে টাক।মোচ আর টাক মিলে প্রথমে মোচ-টাক। আর সেখান থেকে দ্বিতীয় দফায় বিবর্তিত হয়ে মোশতাক। স্যার ধর্মে হিন্দু। কিন্তু নামকরণ হলো মুসলিম কায়দায়। বিবর্তনের কী অসাধারণ উদাহরণ! নিজেদের এহেন বুদ্ধির বহর দেখে নিজেরাই হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। ডারউইন আংকেল উপস্থিত থাকলেতো নিশ্চিত লুংগি তুলে দৌড় দিতেন।

কয়েকদিন পর স্যারের আরেকটা বিশেষত্ব ধরা পড়লো। স্যার কখনো হাসেন না। সারাক্ষণ বিষণ্ন থমথমে চেহারা। আমরা কিছু ভেবে পাইনা। খুঁজে পেতে এমন কাউকে পাওয়া গেলনা যে স্যারকে হাসতে দেখেছে। সো নেক্সট মিশন ঠিক করা হল স্যারকে হাসাতে হবে...

কিন্তু ফিল্ডে নেমে দেখা গেল এইবারের মিশনটা নামকরণ টাইপ দুই মিনিটের মামলা না। একে একে পেটের সব বিদ্যা মাথায় তুলে ঘামানো হল। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা যাকে বলে। কিন্তু নো আউটপুট। স্যারকে হাসাতে গিয়ে নিজেদেরই মুখের হাসি উধাও। সচরাচর যা হয়না সেটা এবার হলো। প্রথম বারের মত মাঝ পথেই কোন মিশন পটল তুললো। সবার মুখ কালো। দেখে মনে হয় সবাই একযোগে ভিপি স্যারের রেপ্লিকা হয়ে গিয়েছি।

ব্যর্থ হলেও সবার মনে কৌতূহলটা থেকেই গেল। স্যারের এই হাসি বিমুখতার কারণ কি। স্যারকে সবসময় এত বিষন্ন আর মলিন লাগে কেন। সেটা জানার সুযোগ মিলে গেল কয়েকদিন পরই...

গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে কিছুদিন পরই কলেজ থেকে বার্ষিক বনভোজনে গেলাম। নিয়ম হচ্ছে পিকনিক এর শেষ পর্যায়ে একটা ছোট খাট সাংস্কৃতিক পর্ব থাকে। একে অবশ্য ছোট খাট সাংস্কৃতিক অত্যাচারও বলা যায়। হেঁড়ে গলায়(তাও আবার ছেলে কন্ঠে) রবীন্দ্র সংগীত এবং এর ভাই বেরাদর গোত্রের গান শুনে হাতি ঘোড়া যাই আসুক,অন্তত মনে আনন্দ আসেনা। তবে নিয়মিত এই আয়োজনের অলিখিত একটা নিয়ম হল সবার সামনে কিছু একটা করে দেখানোর জন্য এমন কিছু স্যারদের ডাকা যাদেরকে সাধারণত ছাই দিয়েও ধরা যায়না। কিঞ্চিৎ ঘোল খাওয়ানোর অফিসিয়াল ভার্সন আর কি। তো এবারের পিকনিকে ভিপি স্যারকে যে ডাকা হবে সেটা বুঝতে খুব বেশি জ্ঞানী হওয়া লাগেনা। যথারীতি তাই হলো। কালচারাল প্রিফেক্ট মহসীন ভাই ডাকার পরপরই স্যারকে জিজ্ঞেস করলেন তাকে কেন আমরা সবসময় নিষ্প্রাণ আর বিষণ্ন দেখি। স্যার যেন এমন কিছু করেন যাতে তিনি নিজে হাসেন এবং সাথে সাথে আমরাও হাসি। মহসীন ভাইয়ের কথা শুনে স্যার সত্যিই একটু হাসলেন যেন। এরপর স্বভাবসুলভ নির্বিকার ভংগীতে তিনি যা শোনালেন তা' শুনে আমরা স্তব্দ হয়ে গেলাম। মনে হল হাসিখুশি কোলাহলের উপর নীরবতার জল ঢেলে দিল কেউ।

স্যার নিজের জীবনের কথা বলা শুরু করলেন। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় তার চোখের সামনে মা বাবা ভাই বোন সহ পরিবারের প্রায় ১৮ জন সদস্যকে পুড়িয়ে মারা হয়। কারণ তারা সবাই হিন্দু ছিল। উনি ভাগ্যক্রমে পালিয়ে বেঁচে যান। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রিয়জন বিসর্জনের চিতা বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন। অবশ্য যদি একে বেঁচে থাকা বলা হয়। আজ তার পরিবারের তিনিই একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। সব শুনে বেদনায় মাথা নুয়ে আসে। হাসিশুণ্য মুখটাকে এরপর আর অস্বাভাবিক মনে হয়না। তিনি নিজের হাসির বিনিময়ে আমাদের জন্য হাসি কিনে এনেছেন। স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অবনত হই।

কয়েকদিন আগে খবর পেলাম স্যার মারা গিয়েছেন। নিজের রুম থেকে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। জীবনের শেষ বেলাটুকুও তার পুরো জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে রইল। বড় বেশি নিঃসঙ্গ প্রস্থান।

স্বর্গ,নরক কিংবা জান্নাত- জাহান্নাম এর বিতর্কে যেতে চাইনা। শুধু বলি-স্যার,আপনি যেখানেই থাকুন,ভাল থাকুন।

ঠোঁটে শুকিয়ে যাওয়া হাসির বিনিময়ে এতটুকু চাওয়া বোধকরি খুব বেশি কিছু নয়...


মন্তব্য

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

.......................................................................................

স্বপ্নাহত এর ছবি

কিং কং ভাইজানের কি কীবোর্ড এ ভাইরাস ধরলো নাকি??
নাকি abcd লেখা ভুইলা গ্যালেন গা?? :P

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

কই আমাদের 'বদা' আর কই তোদের 'মোচতাক'।

Man can do what he wants, But he can't want what he wants

স্বপ্নাহত এর ছবি

ক্যান দোস্ত... "বদা" আবার কি করলো??

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দোস্ত...অসাধারণ লাগল তোর লেখা
অসাধারণ লাগল তোদের ভি.পি. স্যারকে।

---------------------------------
-মহিব
ভাবসাব দেখে মনে হইল "উনি একজন মানুষ"

স্বপ্নাহত এর ছবি

থ্যাংকু ম্যাংকু...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এমন একটা লেখার এমন এন্ডিং!!
হাতযশ গো গুরু, হাতযশ! একেই বলে হাতযশ!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

স্বপ্নাহত এর ছবি

গুরু, বিগিনিং ই কন আর এন্ডিংই কন...
কোনডাই তো হাতে নাইক্যা।
উপর তলা থেকে নির্দেশ আসে,আর নিচতলায় বসে খালি হুজুর হুজুর করি...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ার সময় মনে হচ্ছিল, কলেজে চলে গেছি; সেই প্রসন্ন কুমার পাল আর আবু সাঈদ বিশ্বাস। নাম দুটি আমি উল্লেখ করে দিলাম, প্রসন্ন কুমার পালকে শ্রদ্ধা জানাতেই। এক বিরহী মুক্তিযোদ্ধার কথা সবাই জানুক। কলেজের এক স্টুডেন্ট্‌স এসেম্বলিতে প্রিন্সিপালও তার এই বিরহের কথা জানিয়েছিলেন। পি কে পাল স্যারের মৃত্যু সংবাদ শুনে অতিরিক্ত অবাক হয়েছিলাম। মৃত্যুটাও রহস্যজনক। কাউকে না বলে চলে গেলেন, অবশ্য বলার মত কাউকে হয়তো পাননি। পরজীবনে তার সাথে যেন নিজ পরিবারের সবার দেখা হয়, শান্তিতে কাটে যেন তার সে জীবন.. এই কামনায়..........

মুহাম্মদ২০১৭

স্বপ্নাহত এর ছবি

কাউকে না বলে চলে গেলেন, অবশ্য বলার মত কাউকে হয়তো পাননি।

মুহাম্মদ,এই একটা কথাতে তুমি স্যারের পুরো জীবনটা বলে দিলে।

স্যারকে আগে না জেনে অনেক টীজ করসি।ব্যাপারটা শোনার পর স্যারকে দেখলেই মন অসম্ভব খারাপ হয়ে যেত ।

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ঠাট্টা-মশকরার ধাঁচে শুরু করে শেষে কাঁদানোর ব্যবস্থা! লেখার এই ক্ষমতাটি খুব সুলভ নয়, এটা যেন না হারায়। অসাধারণ লেখা।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

স্বপ্নাহত এর ছবি

রীতিমত অনুপ্রাণিত বোধ করছি।
তবে এর চেয়ে প্রিয়জনগুলোর মুখের হাসি সজীব থাকলেই বোধহয় আরো বেশি ভাল লাগতো...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এমন এক মোচড় দিলেন শেষে!
মনটা ভারি খারাপ হয়ে গেল।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? :-?

স্বপ্নাহত এর ছবি

যাক... সন্ন্যাসীরাও মানুষ...
তাদেরও মন খারাপ হয়... :)

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।