আমি ভয়ে জুবুথুবু হয়ে বসে আছি। কালকে একটা ভয়াবহ পরীক্ষা। অথচ আমি কিছুই পারিনা। সামনে বইটা হাট করে খোলা। এমন একটা চ্যাপ্টার সামনে ধরে বসে আছি যেটা কোনদিন ধরেও দেখিনি। কিছুক্ষণ সন্দেহে ভুগলাম। উল্টে পাল্টে দেখলাম আরেকবার ভালোমত। না, ঠিকই আছে তো। বইটা আমার সিলেবাসেরই। বুঝলাম পড়াশুনা হবেনা। বসলাম ক্যালকুলেটর নিয়ে। পাশ করতে কত লাগে। কিছুক্ষণ পরে এই লাইনেও হতাশ। ক্যালকুলেটরের বদলে সুপার কম্পিউটার এনে হিসেব করলেও ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবার চান্স নাই। তারপর সব আশা বাদ দিয়ে বসে বসে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলাম...
আল্লাহ আমার কথা শুনলেন। এমন দূর্যোগময় মুহূর্তে আমার ঘুমটা খট করে ভেঙ্গে গেল। আতংকের ঘোর তখনো কাটেনি। চোখ ভালমত কচলে তাও শিওর হলাম সত্যিই স্বপ্ন দেখছি কীনা। নাহ, আসলেই স্বপ্ন দেখছিলাম। স্বপ্নইতো হবার কথা ,তাইনা? নিজেকে মনে মনে প্রবোধ দেই। আমি তো আছি তিনমাসের রাজকীয় ছুটিতে। এর মধ্যে আবার পরীক্ষা কীসের। মনটা হঠাৎ করেই খুশি খুশি হয়ে গেল। গরমের সীজন থাকলে হয়তো ঘুম ভেংগে দেখতাম ঘেমে গোসল করে ফেলসি। কিন্তু এ যাত্রায় তেমন কিছু হলোনা। শীত মাশাল্লাহ এইবার খারাপ পড়েনি এইদিকে...
তবে কিছু সিস্টেম লস হয়ে গেল ঠিকই। অন্যান্য দিন যেখানে সাড়ে এগারোটা বারোটায় উঠি আজকে ভয়ের চোটে দশটার দিকেই উঠে গেসি। পরীক্ষার মত আসলে আমার আর কিছুরে এত বেশি ভয় লাগেনা...
কালকে রাত দুইটার দিকে অন্তর্জালের এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছিলাম উদ্দেশ্যহীনভাবে। কান্নার আওয়াজ শুনলাম তখনই। মেয়ে কন্ঠের গুনগুন সুরে। হঠাৎ করে কেমন ধাক্কা মত লাগলো। কান্নার সুরটাই যেন কেমন। আমি এ সুর খুব ভাল মত চিনি। এর আগের বছর দু বার শুনেছি। পর পর দু রাত। মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম এবারো তেমন কিছু যেন না হয়। আমি কিছুটা দ্বিধা, শংকা আর কেমন কেমন করা মন নিয়ে পিসি বন্ধ করে বিছানায় উঠে গেলাম চুপচাপ। শুধু মনে প্রাণে চাচ্ছিলাম কান্নাটা যেন থেমে যায় একসময়।.... হয়না, যা চাই সবসময় তা' হয়না। আমার ভাবনাগুলোকে মাড়িয়ে কান্নার সুর একটু একটু করে বাড়তে থাকে। গুনগুনানি একসময় আহাজারি হয়ে যায়। কে হতে পারে.. হাবিবের নানু, স্বর্ণা আপুদের বাসায় বেড়াতে আসা অশীতিপর বৃদ্ধ মানুষটা নাকি আগের বছর মত পাশের বাসার কম বয়েসী বড় ভাইটার মত কেউ। বুঝে উঠতে পারিনা ঠিকঠাক। আমি লেপটা আরেকটু ভালোমত জড়িয়ে চুপচাপ চলে যাওয়া মানুষটার কথা ভাবতে থাকি। ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে যাই টের পাইনা। টের পায়নি বোধহয় ঐ মানুষটাও। আর কোনদিন সকালে উঠতে হবেনা জেনেও যে এই হিমহিমে শীতের রাতে ঘুমিয়ে পড়লো। আরো হিমহিমে শীতের কোন দেশে জেগে উঠবে বলে...
সকালে উঠে পিসি খুলে নেটে ঢুকলাম। ফেসবুকে ঢুকে নিউজ ফিড থেকে কৌতুহলী হয়ে একটা ছবির লিংকে চলে গেলাম। বাহ! বেশ সুন্দর তো! আমি আশায় আশায় নিচের দিকে নামি। নামতে নামতে বালক পান্থ ভাইয়ের দেখা পেলাম। উনি দেখি আমার আগেই কৌতুহলী হয়ে এখানে বসে আছে। বেশ তো। আমি না হয় সেকেন্ড ক্যান্ডিডেট হয়ে নাম লেখাই। কিন্তু কমেন্টের গা বেয়ে আরেকটু নামতে না নামতেই সব ইচ্ছা চলে গেল। পান্থ ভাইয়ের করুণ পরিণতি দেখে দু:খ পাওয়ার কথা ছিল। উল্টা আমি হাসতে হাসতে চেয়ার থেকে পড়ে যাই আর কি। বেচারারে মেয়ের বড় বোনের হাতে এমন করে সাইজ হতে দেখে খালি ভাবতেসিলাম ভাগ্যিস বালিকা সম্পর্কে আগ্রহের কথা উনার আগে আমি জানাইনাই। না হলে আমার বদলে পান্থ ভাইই হয়তো গড়াগড়ি খেতে খেতে অফিসের চেয়ার ভেংগে ফেলতো। সত্যিই, আল্লাহ পরম করুণাময়।
আজকে সকালে উঠেই কিছু একটা লেখার জন্য মন কেমন উশখুশ করতেসিল। মনে হয় গুরু(ধু.গো) রোগে ধরসে। তবে দিনকাল এখন জানি কেমন কেমন। কয়েকদিন ধরেই কেন যেন খালি মনে হয় বর্তমান লাইফটারে ভাঁজ করে ব্যাকপ্যাকে ভরে রাখি। সে আর হয়না, বরাবরের মতই। লাইফই উল্টা আমারে ধরে চ্যাপ্টা বানায় ফেলতেসে দিন দিন। তারপরও আশায় থাকি। সময় একদিন নিশ্চয়ই বদলাবে। রাতে ঘুমোতে হবেনা মন খারাপ করা কোন ভাবনা বালিশের পাশে নিয়ে। কিংবা সব সকালগুলো হবে খুব খুব সুন্দর। যার লোভে এগারোটার বদলে ভোর ছটায়(!) উঠে পড়বো ঝকঝকে নরোম তুলতুলে রোদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবো বলে।
তাই সুসময়ের আশায় আছি জীবনের এক পাড়ে বসে থেকে। দেখি কোথাকার পানি কোথায় গড়ায়। কারণ গুরু বলে গেছেন- "জীবন হালায় বহমান।"
এবং গুরু কখনো ভুল বলেন না।
মন্তব্য
জীবন বহমান , তয় আমাগো ক্ষেত্রে বইতে বোধহয় একটু বেশী সময় লাগতেছে ।
......................................................
উত্তর বাংলার অনাহারী যুবক
আহারে!
তয় ভাইজান, চিন্তা কৈরেন্না। গুরু যখন বলসেন তো একটা কিছু ইনশাল্লাহ খুব শিগগিরি হয়ে যাবে। ইয়া হাবিবি।
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আমি মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি যে বিশাল ফাঁকা একটা রাস্তা দিয়ে আমি দৌঁড়াচ্ছি, চারপাশে কেউ নাই, সব খালি... ভয় লাগে কেমন যেন...
"গুরু রোগ" তোমাকে এক্কেবারে কাবু করে ফেলুক, এই কামনা করি
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
বেশি ভয় লাগলে আমারে ডাক দিয়েন। দুই জন একসাথে দৌড়াবোনে
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
ডাকলে আসবা তো? নাকি আবার হেলিকপ্টার পাঠাতে হবে?
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
কাল পরীক্ষা, অথচ আমি সিলেবাসটাও ঠিক মত জানিনা...এইরকম স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি, এবং ঘুম ভেঙ্গে বিরাট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি যে এটা স্বপ্ন ছিলো। কেউ কি বলতে পারবেন এমন কেন হচ্ছে আমার বছরের পর বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে বরাবরই ভালো রেজাল্ট করেছি অবশ্য।
আমার মনে হয় এই স্বপ্ন যে কোন দিন স্কুলে যায়নাই সেও দেখে
সো নো টেনশন ব্রাদার। নেক্সট টাইম স্বপ্ন দেখলে সিলেবাস যেন মনে থাকে সেই শুভ কামনা রইলো।
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আপনি তো বিরাট বস!!
=============================
তোমরা তো তাও পড়াশুনার মধ্যে আছ এখনো, আমি যে এখনো দেখি ! যে পরীক্ষার হলে বইসা আছি, কিন্তু কিছুই পারি না, পরে স্বপ্নের মধ্যেই জোর কইরা ভাবি ধুরো! পরীক্ষা এইগুলা তো কবেই শেষ করছি ! তখন কি যে শান্তি লাগে !
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
আসলেই। ঘুমায়াও শান্তি নাই।
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
ছড়ার মতই দুর্দান্ত হয়েছে আপনার দিনপঞ্জি।
প্রহরীর সাথে একমত পুরা লেখার সেরা লাইন -
কয়েকদিন ধরেই কেন যেন খালি মনে হয় বর্তমান লাইফটারে ভাঁজ করে ব্যাকপ্যাকে ভরে রাখি।
শেষকথা - আমাদের বালক পান্থ কবে এমন রাম ধরা খাইলো ?
হাটে হাঁড়ি ভাঙলে ভাই ভালো কইরা ভাঙেন তো্ ।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ধন্যবাদ, কীর্তিনাশা ভাই।
পান্থ ভাইরে একটু চেপে ধরেন। সে নিজেই বলবে। আর এইসব কথা পাবলিক প্লেসে বেশি খুলে না বলাই ভাল
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আমি একবার স্বপ্ন দেখলাম যে আমি আদুভাই হয়ে গেছি! সবাই আমাক আদুভাই বলে ডাকছে!! এই সব স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার পর মনে হয়- আর না এইবারই ভাল হয়েযাব!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হ। ভাল হয়া যান। ভাল হইতে পয়সা লাগেন। টাকা লাগে কীনা সেইটা অবশ্য সিওর না।
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
ভার্সিটি বন্ধ না? তাও স্বপ্নে পরীক্ষা আসে? ভয়াবহ অবস্থা দেখি !
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
পরীক্ষার বদলে শুধু পরী আসলেও হৈতো
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
স্বপ্না দেখি সবসময় স্বপ্ন দেখে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বদলে তাইলে কি দেখতে কন?
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আমার ঘুম গভীর (যদিও হালকা শব্দেই ঘুম ভাঙে) বলেই হয়তো স্বপ্ন দেখি কদাচিত্ ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনি সন্ন্যাসী পুরুষ!
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
কিরে দোস্ত তুই এমন আরামের দিনগুলাতে এমুন উদ্ভট স্বপ্ন দেখিস ক্যান?
=============================
স্বপ্ন সবসময় উদ্ভটই হয় মনে হয়
---------------------------------
বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
নতুন মন্তব্য করুন