[আলো আস্তে আস্তে ফুটে উঠবে। পেছনে মিশন ইম্পসিবল বা জেমস বন্ডে এর মিউজিক থাকবে। হাবলু আস্তে আস্তে প্রবেশ করবে। এক পা দু পা করে ফার্নিচার থেকে গা বাঁচিয়ে ডিটেক্টিভের মতো যেয়ে সোফার পেছনে বসে পড়বে। উকিল আর চান মিয়ার প্রবেশ]
চান: আরে আইজ দুই সপ্তা ধইরা তোমারে খুঁজতাছি। ফোন দিলে ধর না, ব্যাপার কি? হ্যা, বস বস।
[দুই জনই সোফায় বসবে]
উকিলআরে বইলো না। একটা কেসের কাজে ঢাকার বাইরে আছিলাম। যেই সেই কেস না। মার্ডার কেস।
চান: ওহ হ। তুমি তো আবার ওই সব কেসে মজা বেশী পাও।
উকিল: হি হি। টেকাও বেশী।
চান: হইবো না? তোমার মক্কেলরা তো বেশী ভাগই তো মিথ্যা সাক্ষী দেয়। সবই সাজানো – এক্কেবারে দুই নম্বর। টেকাতো বেশী দিবই।
উকিল: দেখ। এইডা কিন্তু পুরা ঠিক না।
চান: আইচ্ছা আইচ্ছা। বাদ দাও ওই সব।
উকিল: হ। কামের কথা কও। কও ক্যান ডাকছ?
চান: ইশ! ডাকছি ক্যান তাতো জানোই।
উকিল: না পুরা জানি না। সাজিয়ে বল।
চান: আরে ওইযে চুমকি আছে না?
উকিল: (সলাজ হেসে) চুমকি? কেমুন আছে চুমকি?
চান: আরে রাখ কেমন আছে। আছে আছে ভালোই। মনোযোগ দিয়া শোন।
উকিল: ঠিক আছে বল।
চান: চুমকির বয়স ধর এখন উনিশ। বিয়ার বয়স জায় যায় আর কি।
উকিল: তাইলে বিয়া দিয়া দাও।
চান: আরে রাখ। বিয়া দিয়া দাও! অতোগুলা সম্পত্তি কি পানিতে ফালাই আর কি?
উকিল: তার মাইনে কি করতে চাও?
চান: তেমুন কিছু না। এই ধরো ঘরের মেয়ে ঘরেই রাখতে চাই আর কি।
উকিল: কিন্তু তোমার তো কোন ছেলে নাই। ভাতিজা ভুতিজাও নাই। তাইলে বিয়া হবে কার সাথে?
চান: ক্যান আমার সাথে?
উকিল: (নড়ে চড়ে) অ্যা তোমার সাথে? তোমার মিয়া বিয়ার বয়স আছে?
চান: আহা তোমরা খালি বাইরেরটা দেখলা। মনে মনে তো আমি “ইবার গিরিন” – চির সবুজ আর কি। আর তোমার ভাবীর ইন্তেকালের পরে ওই পজিশনটা তো খালি আছে।
উকিল: তা না হয় হইলো। কিন্তু সম্পর্কে তো সে তোমার ভাতিজি। সেইডার কি করবা?
চান: আরে রাখ তোমার সম্পর্ক। আমার বৌ এর মামার শালার বেয়াইএর নাতনী...
উকিল: হইছে হইছে। কিন্তু চুমকি কি রাজী হইব? তোমাকে চিরকাল কাকা বলে ডাকছে। গলা জড়িয়ে আদর করছে। কোলে উঠছে...
চান: আরে বৌ ও তো ওইসব করে। কিছুই বদলাইতাছে না।
উকিল: আর ওই কাকা বলাটা?
চান: ডাকে আর কি আসে যায়। ওইটা বিয়ার পর ঠিক হইয়া যাইব।
উকিল: তারপরেও একটু ভাইবা দেখ। আসলেই তোমার কি বিয়া করাটা ঠিক হইবো?
চান: আমার সাথে বিয়া হইলে ঠিক হইব না। তোমার সাথে হইলে ঠিক হইব।
উকিল: (সলাজে) কি যে বল। আমার সাথে? সত্যই। আমার কইলাম আপত্তি নাই।
চান: ব্যাটা ধান্দাবাজ। তুমারে ডাকলাম আমার বিয়ার কথা কইতে। আর তুমি নিজের বিয়া ঠিক করতাছ?
উকিল: না না। সে কি? ক্ষেপ ক্যান? একটু রস করলাম।
চান: ওহ তাই কও।
উকিল: কিন্তু চান মিয়া। মনে রাইখ, বিয়ার পরও এক বছর কিন্তু চুমকির কোন সম্পত্তি পাইবা না। এক বছরের মইধ্যে চুমকি চাইলে সম্পত্তি দানও কইরা দিতে পারে। তার বাপের উইলে এমনই লেখা আছে।
চান: তার মাইনে? কি কইতে চাও?
উকিল: তার মানে চুমকির সাথে তোমার ভাল আচরণ করতে হইব। তার মনে তোমার জন্য মহব্বত নিয়া আসতে হইব। নাইলে...
চান: নাইলে?
উকিল: সম্পত্তি নাই।
চান: উফ। উকিল মিয়া কিছু একটা করন যায় না? আমারে দিয়া মহব্বত...। বড়ই কঠিন।
উকিল: দেখি কি করা যায়। তয় খালি চা আর বিস্কুট দিয়া আর কতদিন? আমার সময়ের তো দাম আছে নাকি?
চান: উহ হা হা। আরে কইবা না? আমি তো তোমারে দিতেই চাই কিছু। তুমিইতো নাও না। অন্যান্য দিনের মতো আইজও নিশ্চয় বলবা আমিতো তোমার বন্ধুর মত। আমার কাছে টেকা কিসের?
উকিল: নাহ নাহ আইজ বলবো না। তুমি ভাল মনে কইরা কিছু দিবা – না করতে পারি?
চান: (ঢোক গেলার মত) হ্যা নিবা।
উকিল: নিশ্চয়।
চান: আইচ্ছা বস। দেখি কি করা যায়। (উঠতে উঠতে কিছুটা নিজের মনে) ব্যাবসাপাতির অবস্থা ভাল না। এইদিকে...
[চান মিয়ার প্রস্থান]
উকিল: ব্যাটা হাড় কিপটা। দাঁড়া না মাত্র তো শুরু। তোরে আমের মত চুইষা টেকা আদায় না করছি তো আমিও বাপের ব্যাটা না।
[আমলার প্রবেশ – হাতে ফুল]
উকিল: স্লামুয়ালায়কুম।
আমলা: আলায়কুম সালাম (ফুল লুকাবে)। আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
উকিল: ওহ। আমি আমি মিঃ চান মিয়ার উকিল ফেরেন্ড বলতে পারেন। মাঝে মইধ্যে উনারে সলা পরামর্শ মাইনে লজিস্টিক সাইপুট দেই আর কি।
আমলা: আচ্ছা আছা। ভেরি গুড। আমি হচ্ছি গিয়ে...
উকিল: জানি জানি। আপনাদের কে না চেনে? কতবার টিভিতে দেখলাম।
আমলা: ওহ তাই? কোথায় দেখেছেন?
উকিল: আরে যেখানে বন্যা খরা সেখানেইতো আপনেরা।
আমলা: মানুষের কষ্ট আমাকে খুব নাড়া দেয় জানেন?
উকিল: ওহ তাই বুঝি ছুইটা যান? ভাগ বসাইতে?
আমলা: অ্যা? কিছু বললেন?
উকিল: আরে না। ঐ বলতাছিলাম কোথায় কোথায় আপ্নেরে দেখছি।
আমলা: তাই বলেন। টিভি চ্যানেলগুলো আবার সবাই আমাদের দেখায়।
উকিল: সবগুলান দেখায় কিনা জানি না। তয় চামচা চ্যানেলগুলা ঠিকই দেখায়।
আমলা: দেখুন আপনি কিন্তু কিছু বলেছেন এবার।
[চান মিয়ার প্রবেশ, হাতে ঠোঙ্গা]
চান: কি সৌভাগ্য। কি সৌভাগ্য গরীবের বাড়ীতে হাত্তির পারা।
আমলা: চান সাহেব। ক্যান যে শুধু শুধু হাতি বলেন? এমন কি মোটা আমি?
চান: ছি ছি। মোটা না মোটা না। সম্মান করি আপনেরে আর কি।
আমলা: ও তাই বলেন।
চান: ধরো উকিল। তোমার জন্য আমার মত গরীবের পক্ষ থাইকা সামান্য উপহার আর কি।
উকিল: চান মিয়া ক্যান যে লজ্জা দাও।
[ঠোঙ্গা দুজনের হাতে ধরা]
চান: বেশী লজ্জা লাগলে নিও না।
উকিল: আরে তোমার সাথে এত লজ্জা করলে চলে? দাও দাও।
চান: অ্যা বানিজ্য সার এইদিকে কি মনে কইরা?
আমলা: এদিক দিইয়ে যাচ্ছিলাম ভাবলাম একটু দেখে যাই। আই মিন দেখা করে যাই।
চান: ইশ। কি ভদ্দরলোক আপনে? খুব ভাল করছেন।
আমলা: তা আছে নাকি?
চান: কি?
আমলা: ঐযে চুমকি? বাসায় আছে নাকি? ডাকুন না একটু। দেখা করি।
চান: অ্যা? আর কইয়েন না। সক্কাল থাইকা বাসা ফাঁকা। কাউরে পাইতাছি না। জরিনাডাও নাই। অন্যান্য দিন ঐ হাবলু বদডাও ঘুরঘুর করে। আইজ ওইডারেও দেখি না। হারামজাদা হাবলুডা মনে হয় ভীষণ ধান্দাবাজ।
[হাবলু লাফিয়ে উঠবে সোফার পেছন থেকে]
হাবলু: স্যার আপনার কথাডা ঠিক না। আমি ধান্দাবাজ না।
চান: দ্যাখছেন দ্যাখছেন হারামজাদা সব সময় সোফার পিছনে লুকাইয়া লুকাইয়া সথা শোনে। দাড়া তোরে আমি আইজ। থাউক অহন না।
আমলা: হ্যা। লোকটা তো সাংঘাতিক।
উকিল: ওই ব্যাটা? তোর মতলব কি?
হাবলু: (চান মিয়ার দিকে) সার হেল্প হেল্প...
চান: আরে আপনেরা ঠান্ডা হন। ও আমাগোই লোক হাবলু।
হাবলু: জি সার।
চান: যা দ্যাখতো তোর আপামনি বাগানে আছে নাকি।
হাবলু: অক্ষনই যাইতাছি সার। তয় বাগানেতো...
চান: ওই তুই গেলি।
হাবলু: (দৌড়াবে) অকে সার অকে সার। আমি চইল্লাম।
উকিল: চান মিয়া এইসব কি? (ঠোঙ্গার দিকে দেখিয়ে)
চান: ঠিক আছে না নিলে দাও।
উকিল: নাহ থাক। আইকার দিনে কিছু বললাম না।
আমলা: নিয়ে নেন। নিয়ে নেন। যা পাওয়া যায়...
চান: ঠিক আছে ঠিক আছে। পরে হবে আরো কেমন?
[চুমকি কানে হেডফোন হাতে বই নিয়ে দুলকি চালে স্টেজের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত হেঁটে যাবে। উকি আর আমলার দিকে হাত নাড়বে। আমলার ফুল জুজনেই কাড়াকাড়ি করবে। শেষে উকিল আর আমলা দুজনেই এক সাথে একই ফুল চুমকির উদ্দেশ্যে ধরবে। চুমকির প্রস্থান। দুজনেই ভিতরের দিকে তাকিয়ে থাকবে।]
চান: (প্রথমে অবাক এবং পরে রেগে) ওই মিয়ারা বসেন।
[আমলা আর উকিল বসে পড়ে, শক থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা]
চান: হালার বাসায় দেখি মজনুর ছড়াছড়ি।
[দুজনেই বোকার মত হেসে উঠবে। হাবলু দৌড়ে স্টেজে ঢুকবে]
হাবলু: সার ও সার।
হাবলু: কইতে ভুইলা গেছিলাম। বাগানেতো ইয়া বড় এক লাশ লুকাইয়া আছে।
চান: লাশ? মরছে। বাগানে লাশ পইরা আছে। খুন খুন...
উকিল: মার্ডার। মার্ডার। যাউক আরেকটা কেস পাওয়া গেল।
আমলা: বল কি? আমি বরং...
হাবলু: না সার লাশ পইরা নাই। এইদিকে আইতাছে। আমি চইল্লাম। আল বিদা।
[হাবলু আবার সোফার পিছনে লুকাবে]
স্বাধীন: হা হা হা। উহা। হা। সবাইখে আইজ ফুটা খইরা দিবো।
চান: হ্যা ভাই সাব আপনে কে? (চিনতে পেরে) আরে তুই কে? স্বাধীন না?
স্বাধীন: ঠিকই ধরছ বুইরা মিয়া।
চান: হুনছিলাম জেলে আছিলি। ছাড়া পাইলি কবে?
স্বাধীন: খাইল। ওই ব্যাটা? তুই খইরা কস ক্যা? তুই খইরা কস ক্যা? এইঠা দেখসস (পিস্তল দেখাবে)। এখদম ফুঠা খইরা দিব। (সবাই দুই হাত উপরে তুলবে)
চান: ওরে বাবা। জনাব স্বাধীন আপনে কি চান এইখানে?
স্বাধীন: শুদু চুমখি। শুদু আমার চুমখি খে চাই।
চান: অ্যা মরছে।
স্বাধীন: তুই ব্যাটা চুমখিখে বিয়া দিসিশ খোন সাহসে?
চান: চুমকি? বিয়া? মাইনে?
স্বাধীন: খই খই তার স্বামী। থাখে মেরে আমি আবার ফয়োজনে আবার ফালিয়ে যাব।
[চান মিয়া হাত দিয়ে উকিল আর আমলা কে দেখাবে]
স্বাধীন: খোনঠা?
চান: দুইডাই?
স্বাধীন: (আমলা আর উকিলের দিকে তাকিয়ে) খি? তোরা দুইঠাই আমার চুমকিখে বিয়া খরেছিস? আইজ থোদের এখদিন খি আমার আখদিন। ইয়া ঢিসিয়া।
[আমলা আর উকিল দৌড়াদৌড়ি শুরু করবে]
আমলা: ওই ব্যাটা মুখ দিয়ে আওয়াজ দিস ক্যান? মুখ দিয়ে আওয়াজ দিস ক্যান?
স্বাধীন: এখন তো মুখ দিয়া দিচ্চি। আসল গুলি খাইলে ফ্যান্ট নষ্ঠ খইরা দিবা।
আমিলা: ওরে বাবারে মেরে ফেলল রে।
উকিল: আমাগো কি দোষ? আল্লাহরে...
[স্বাধীণ, আমলা আর উকিলের প্রস্থান। চান মিয়া পেছন পেছন যাবে মজা দেখতে। দূর থেকে স্বাধীনের ঢিসিয়া ঢিসিয়া শব্দ ভেসে আসবে]
চান: (দর্শকের উদ্দেশ্যে) এতো ঝামেলার মধ্যে আছি। এর মইধ্যে ওই হারামজাদা স্বাধীনডা আইসা জুটছে। আগেও যেমন বলদ আছিল অহনও মনে হয় তাই আছে। খেলনা পিস্তল লইয়া ভয় দেখাইতে আইছে। বেকুবের সর্দার। যাউকগা। আমার আবার চুমকির সাথে একটু রঙ ঢং করতে হবে। হুম। বহুত চিন্তা ভাবনা করা দরকার। কি কি ধরনের রঙ এবং ঢং করা যাইতে পারে। হে হে যাই অনেক কাম বাকি। চুমকি, মা চুমকি? থুক্কু ওগো চুমকি, আমার চুমকি... লক্ষীটি...
[চান মিয়ার প্রস্থান]
মন্তব্য
নতুন মন্তব্য করুন