এসো, আলোর ঝরনাধারায় এসো।
এলো চুলে ধরতেই গান,
অশরীরী হাওয়া এসে
একমুঠো রোদ্দুর দিল ছুঁড়ে।
দিশেহারা আমি নেমে পড়ি রাস্তায়।
রাস্তায় রোদ্দুর আমার সর্বাঙ্গে ঝরে পড়ে।
চুঁইয়ে, চুঁইয়ে আলো গড়ায়
আমার চুলে চোখে মুখে।
আমি রৌদ্রের ঝরনাধারায় দুহাত উপরে তুলে
উদার বৃক্ষের ভঙ্গিতে দাঁড়াই।
"দাও রোদ্দুর আলো দাও
আলো দাও আমার কবিতায়
দাও আমার গান ভরিয়ে দাও।
অর্ন্তহিত করো ছায়া
ভাসিয়ে দাও, ডুবিয়ে দাও দেশ
অমর করো আমায়।"
আলোর আর্শীবাদে আমি
দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে উঠি।
অবশেষে আলোর জন্মদাত্রী সূর্যের
পদস্পর্শ করে আমি দেবতায় উর্ত্তীণ হলাম
এসো আলোর ঝরনাধারায় এসো,
এসো আলোয় ভিজে ধর গান।
দুহাত বাড়িয়ে দাও সূর্যের দিকে,
এমন আঁধার যুগে,
সূর্যের আর্শিবাদেই পাবে
অন্য নতুন দিন।
(এটা আসলে "করোটিতে আরো রোদ্দুর" লেখার আগেই লিখা। দুইটার মধ্যে রৌদ্রের মিল ছাড়া আর কিছু মিল নাই। এই সময়টাতে বুয়েটের প্রথম বর্ষে পড়তাম। লম্বা চুল ছিল আমার। তখন গীটার টীটারও শিখতাম। খুব ভাবে রৌদ্রে ঘুইরা বেড়াইতাম। সেইজন্য রৌদ্র ছিল আমার প্রিয় অনুসঙ্গ। যেমন সিগারেট ছিল কলেজে পড়ার সময়। তখন বোধহয় জেমসের দুঃখিনী দুঃখ কোরোনা এলবামটা বের হইছিল। তার কিছুটা প্রভাব ছিল বোধহয়।
এই কবিতাটা অতটা ভাল হয় নাই। তবু আপনাদের প্রশ্রয় পাইয়া তুইলা দিলাম।)
মন্তব্য
আপনারে আরো প্রশ্রয় দেয়া হইলো ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মূল কবিতায় মন্তব্য করলাম , পড়ার পর। ধারাবাহিকতা বোঝার চেষ্টা করছিলাম।
ss
"রৌদ্র করোটিতে"
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
প্রতক্ষ্য ভাবে প্রভাব ছিল না। পরোক্ষভাবে থাকতেই পারে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কবিতাটিতে শামসুর রাহমান বিরচিত 'রৌদ্র করোটিতে'-এর প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষ কোনরূপ প্রভাবই দেখি না আমি। একটু ভুমিকা দিলে ব্যাপারটি বোধকরি স্পষ্ট হবে।
'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'-এর কবির যেন অনিবার্য পরিনতি এই 'রৌদ্র করোটিতে'। 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'-তে দেখি জীবনানন্দের ছায়া-সম্পাত। সেখানে সন্ধান মেলে এক বিষণ্ণতা, নস্টালজিয়া, যে প্রিয়া চলে যাবে তাঁকে শেষবারের মতো আলিঙ্গনে বাঁধবার অভিপ্রায়। সেখানে নিরাশার ঘনায়মান অন্ধকারে এখনো কিছু মুমূর্ষু আশারা বেঁচে থাকে।
কিন্তু এ প্রিয়ার চলে যাওয়া যে অবশ্যম্ভাবী। দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে প্রথম গান তাই অন্তরীক্ষে মিলিয়ে গেল এভাবে,
আর চেয়ে দেখি মৃত্তিকায় করোটিতে জ্যোৎস্না জ্বলে
বিষণ্ণ স্মৃতির মতো, দ্বিতীয় মৃত্যুর ধ্বনি ভাসে।
(শামসুর রাহমান, ''প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে'', 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে')
'রৌদ্র করোটিতে' কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা 'দুঃখ'। এই কবিতাটিই যেন সমগ্র কাব্যগ্রন্থটির আবরণ উন্মোচিত করেছে। নান্দীমুখে বসিয়ে দেয়া কবিতাটিই যেন বলে দেয় এখন থেকে কবি যার সাথে ঘর করবেন তার নাম 'দুঃখ'। দ্বিতীয় মৃত্যুর অবক্ষয় এখানে যেন নাস্তিতে এসে ঠেকেছে। 'রৌদ্র করোটিতে'-তে তাই সুধীনের প্রভাব দেখে বিস্ময়াভিভূত হই না। মনে পড়ে, সুধীনের সেই কালো সূর্যের নিচে বহ্ন্যুৎসব,
মৃত্যু, কেবল, মৃত্যুই ধ্রুব সখা,
যাতনা, শুধুই যাতনা সুচির সাথী।
(সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, "অর্কেস্ট্রা", 'অর্কেস্ট্রা' )
'রৌদ্র করোটিতে'-এর কাব্যগ্রন্থের নায়ক অনিদ্রা ও দুঃস্বপ্নের শিকার, 'দাগে দাগ মেপে ঠিকঠাক ঘুমহীন রাতে/কেবলি ওষুধ খায়'। মাঝে মধ্যে তারও অবশ্য মনে হয়, 'বেঁচে আছি', জীবনের প্রতি হয়তবা কখনো সখনো শেখেন কৃতজ্ঞ হতে, কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই 'বিশ শতকের যীশু'। তাই তো কবি স্থিরচিত্তে বলেন,
.......................................কখনোবা
হঠাৎ দেখব জেগে শুয়ে আছি হাত-পা ছড়ানো
বিকেলের সাথে নামহীন কবরের হলদে ঘাসে,
দেখবো অঢেল রৌদ্রে ঝলসে উঠে ঝরায় চুম্বন
ওষ্ঠহীন করোটিতে, জানবো না সে করোটি কার,
সম্রাট অথবা ভাঁড় যার হোক আমি শুধু একা
দেখব রৌদ্রের খেলা একটি নির্মোহ করোটির
তমসায় সেখব কে ছুঁয়ে যায় কালের বুড়িকে।
(শামসুর রাহমান, ''রৌদ্র করোটিতে'', 'রৌদ্র করোটিতে')
এবার এস এম মাহবুব মুর্শেদের কবিতাটির পাঠে নিমগ্ন হওয়া যাক। কবিতাটির শেষে আমরা কবির জুড়ে দেয়া একটি পাদটিকা লক্ষ্য করি। তিনি সেখানে লিখেছেন, তার রচিত অন্য একটি কবিতা "করোটিতে আরো রোদ্দুর" লেখার অনেক আগেই তিনি বক্ষ্যমান কবিতাটি লিখেছেন। দুটি কবিতার মধ্য রোদ্দুরের মিল ছাড়া আর কোন মিল নাই। স্বভাবতই দ্বিতীয় কবিতাটি পড়ার জন্য আকৃষ্ট হই এবং অমিল বিষয়ক কবিভাষণের সত্যতা আবিস্কার করি। সেই সাথে এও আবিস্কার করি যে 'রৌদ্র করোটিতে'-এর উপজীব্যের সাথে দ্বিতীয় কবিতাটি অর্থাৎ "করোটিতে আরো রোদ্দুর"-এর ও কোনরূপ মিল নেই। "করোটিতে আরো রোদ্দুর" লেখার শানে নুযূলও কবি সেই কবিতার পাদটীকায় জুড়ে দিয়েছেন। সেখানেও স্পষ্ট হয় কবি কোন পরিস্থিতিতে কবিতাটি লিখেছিলেন। সেখানেও নাস্তি আক্রান্ত হবার কোন চিহ্ন খুঁজে পাই না। বরং নিজের উপর বিশ্বাস অটুট রেখেই তিনি তাঁর কবিতার সমালোচকদের উদ্দেশ্যে ঐশ্বরিক স্পর্ধিত উচ্চারণ করেন।
আবার ফিরে আসা যাক বক্ষ্যমাণ কবিতাটিতে। এই কবিতার একটি চরণেও ক্ষয়ের ছাপ প্রতিফলিত হতে দেখি না। দেখি না নিরাশা কিম্বা নাস্তির ছবি। নাই অবক্ষয়ের নান্দীরোল। তবে কি আছে? নিচের কবিতাটির সাথে একটু মিলিয়ে দেখি,
আলো আমার আলো ওগো, আলো ভূবন ভরা
আলো নয়ন ধোওয়া আমার আলো হৃদয় হরা ।
নাচে আলো নাচে ও ভাই, আমার প্রাণের কাছে -
বাজে আলো বাজে ও ভাই, হৃদয়বীণার মাঝে
জাগে আকাশ, ছোটে বাতাস, হাসে সকল ধরা ।
আলোর স্রোতে পাল তুলেছে হাজার প্রজাপতি
আলোর ঢেউয়ে উঠল মেতে মল্লিকা মালতী ।
মেঘে মেঘে সোনা, ও ভাই যায়না মানিক গোনা -
পাতায় পাতায় হাসি ও ভাই, পুলক রাশি রাশি ।
সুরনদীর কূল ডুবেছে সুধা-নিঝর-ঝরা।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, "আলো আমার আলো ওগো, আলো ভূবন ভরা", অচলায়তন)
এই প্রভাব কি কবির যাচিত, নাকি অযাচিতেই পাখা মেলেছে তা নিয়ে ভাবনা নাহয় অন্যসময় করা যাবে। এখন বরং দুটি অনিবার্য বাক্যে বক্তব্যসার তুলে ধরি। কালের বুড়ি অতীতের সাথে ভবিষ্যতের নিরবিচ্ছিন্ন যোগসূত্রে যে বিনিসুতোর বন্ধন নিয়তই বুনে চলেছে, ইচ্ছে করলেও চিন্তায়, কর্মে, বোধে কিম্বা উপলব্ধিতে সবসময় স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে সেই বন্ধন ছিন্ন করবার কোন উপায় নেই, তা সম্ভবও নয়। যেহেতু কবিতা বা কবি স্বয়ম্ভূ নন তাই প্রভাবিত হয়েও নতুনের সুলোক সন্ধানে দোষ কোথায়?
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন