ব্লগ কেন খবর মিডিয়ার চেয়ে উপভোগ্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: সোম, ২১/০১/২০০৮ - ১১:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আঁতলামী নয়, কি কারনে যেন হঠাৎ বিষয়টি মাথায় ঘুরছিল। আগে নোট নিয়ে রেখেছিলাম আজ লিখে ফেললাম। আপনার মূল্যবান মন্তব্য পেলে নিজেকে ধন্য মনে করব।

১। ইনস্ট্যান্ট প্রকাশনা
যখন ইচ্ছা আমার লেখার খাতা কথাটির সাথে ব্লগের কনসেপ্টটি খুব যায়। এই মুর্হুতে একটি চিন্তা মাথায় আসল - কম্পিউটার বা মোবাইল টিপে সাথে সাথে সেটা প্রকাশ করে ফেলা গেল। লেখার প্রসব বেদনা নেই বললেই চলে। ফটাক চিন্তা, ঝটাক লেখা। এই সহজলভ্যতা লেখকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে।

২। অন্যের মতামত এবং যোগাযোগ
আরেকটি খুব আকর্ষণীয় বিষয় হল পাঠকের মন্তব্য। আপনার লেখা একজন পড়ল তারপর সেটা কেমন লাগল জানাল। এটা একটা বিরাট পাওয়া। তাছাড়া পারস্পরিক মেধা বিনিময়ের ব্যাপারটিও চলে আসে এখানটায়। আপনি যেমন অন্যের চিন্তায় প্রভাব ফেলেন তেমনি অন্যের চিন্তার প্রভাবও মনের অজান্তে চলে আসে আপনার উপর। এছাড়া ব্লগের পাঠকে-লেখকের মধ্যেও গড়ে উঠে বন্ধুত্বপূর্ণ একটি সর্ম্পক।

৩। যেমন ইচ্ছা লেখার খাতা
ব্লগের লেখার বিষয়টিকে ফ্লো লেআউট হিসেবে চিন্তা করা যেতে পারে। একজন লেখক একাধিক বিষয় লিখছেন। পত্রিকার মত আপনার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করলেও আপনাকে খেলার খবর লিখতে হবে না। একজন লেখকই গল্প লিখছেন, কবিতা লিখছেন, চিন্তা ভাবনা লিখছেন - কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, নেই রিজেকশনের ভয়। অনেক সময় এখানে লিখে নিয়ে পরে ঘষামাজা করে প্রকাশ করতে পারেন প্রিন্ট মিডিয়ার জন্য।

৪। অথেনটিসিটির ব্যাপার নেই
একটা খবর লোকমুখে শুনে আপনি ব্লগে তুলে দিতে পারেন। কথাটা সত্য হোক মিথ্যে হোক তার দায় আপনাকে নিতে হবে না। এভাবে যদিও গুজব ছড়াতে পারে, তবু মুখরোচক খবরগুলো কিন্তু পাঠকের সাথে ঠিকই শেয়ার করতে পারছেন লেখক। এমনকি যেসব নিউজ সম্পাদকের কাঁচির নীচে কাটা পড়ে সেসবও এখানে প্রকাশ হতে পারে।

৫। মুখের ভাষাই লেখার ভাষা
আমাদের নিজেদের অজান্তে আমাদের মধ্যে দুধরনের ভাষা প্রায় সবসময় চলে এসেছে। আগে ছিল লেখার জন্য সাধু এবং বলার জন্য চলিত ভাষা। সাধু ভাষা চলে গেছে কিন্তু এখনও রয়েছে লেখার জন্য চলিত এবং বলার জন্য কথ্য ভাষা। এই পার্থক্য ঘুঁচে যায় এই ব্লগে এসে। একজন মানুষের চিন্তা ভাবনা একেবার কাঁচাভাবে মুখের ভাষায় প্রতিফলিত হয় ব্লগে। তদুপরি, লেখার সে রীতি তার থেকে কথা বলার রীতিটাই বেশী চোখে পড়ে এখানে। তাই লেখকে আরো বেশী আপন আরো বেশী কাছের মনে হয় ব্লগে।

এইসমস্ত কারনেই ব্লগ আজকাল ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে চলেছে। সামনে আরো সুদৃঢ় ভাবে ব্লগকে দেখা যাবে বলেই মনে হয়।


মন্তব্য

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কোনোকালে চাক্ষুষ না দেখে, কণ্ঠস্বর না শুনে এই যে পারস্পরিক যোগাযোগ - এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো আকর্ষণ। অন্য কোনো মিডিয়ার সঙ্গে তুলনা করার মানে হয় না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ফ্রি-তে উপন্যাস পড়া যায়, আবার ধরা খাওয়ার ভয় নাই! চোখ টিপি

রেজওয়ান এর ছবি

ভালো হয়েছে। আচ্ছা ভবিষ্যতে সেইসব টুকরো লেখাকে সংকলিত করে ব্লগ প্রসারের জন্যে সচলায়তন থেকে একটি সমষ্টিগত ইবুক করলে কেমন হয়? আমি সম্প্রতি রাইজিং ভয়েসেস এর সিটিজেন মিডিয়া গাইডের বাংলা করেছি (আমার পোষ্টে ডাউনলোডের জন্যে তুলে দিয়েছি)। সেই আদলে লোকালাইজড কিছু একটা বের করা যায় যা ইমেইলের মাধ্যমে ব্যপক চালাচালি করা সম্ভব। টার্গেট গ্রুপ হতে পারে প্রাথমিকভাবে কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রতিষ্ঠিত লেখকরাও এই সহজ ভাষায় গাইডটি পড়ে উঃসাহিত হবে। সচলায়তনের ব্যবহারকারী বাড়বে।

কি বলেন?

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুব ভালো আইডিয়া! আমি রাজি। উদ্যোগ নেয়া জাতীয় কিছু এই মুর্হুতে করতে না পারলেও সাথে থাকব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
হিমু এর ছবি

সচলায়তনের পক্ষ থেকে একটি সচিত্র পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে, তবে প্রকাশে আরেকটু সময় লাগবে। এর আবেদন কিছুটা চটুল, কিছুটা গম্ভীর থাকবে।

সচলায়তন সবসময়ই সম্প্রসারিত হচ্ছে, তবে ধীর এবং স্থিতলয়ে। লেখক এবং পাঠক, উভয়ের সংখ্যাই বর্ধনশীল।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মাহবুব লীলেন এর ছবি

০১
অনেকে লেখা বিষয়টাকেই ভয় পান
আর লিখিত কোনো জিনিসকে ভাবেন ধর্মীয় বাণীর কাছাকাছি
এ দুটো জিনিসই কেটে যায়

০২
চোখে তাকিয়ে কোনো মানুষকে ঝাড়ি দেয়া কঠিন
এবং সমান কঠিন হলো যাকে ঝাড়ি দেবো তার সাথে যদি অন্য কোথাও দেখার হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে
ব্লগে এই দুটোর কোনোটাই নেই
ফলে হাত পা নাড়িয়ে ঝাড়ি দেয়া যায়

০৩
নো প্রেশার। নো ডেড লাইন

০৪
সম্পাদককে নো তেল
নো সম্পাদকীয় উপদেশ

০৫

তাৎক্ষণিক মন্তব্যের আকর্ষণ

মুজিব মেহদী এর ছবি

ব্লগের সবচেয়ে ভালো দিক হলো নিরংকুশ স্বাধীনতার আস্বাদটা নিতে পারা, আর সবচেয়ে খারাপ দিক হলো ইন্টারনেট অকসেস নেই এমন পাঠকের কাছে পৌঁছতে না পারা।

ব্লগিংয়ের পক্ষে আরো যেসব ভালো কথা বলা যায়--
১. সবার লেখাই আপাত মাগনা পাঠের সুযোগ (প্রকৃতপক্ষে নয়, কারণ মাস শেষে তো বিল পরিশোধ করতেই হয়)।
২. পত্রপত্রিকার মতো সংরক্ষণের হ্যাপা নেই। ব্লগ ময়লা হয় না, ছিঁড়ে বা ভিজেও যায় না।
৩. দূরে কোথাও গেছি হঠাৎই একটা লেখা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের দরকার হলো, কোনোভাবে একটা সাইবার ক্যাফে খুঁজে পেলেই হলো। কিন্তু পত্রপত্রিকার ক্ষেত্রে একটা লাইব্রেরি বা পেপারস্টল খুঁজে পেলেই তা পাবার নিশ্চয়তা নেই।
৪. কোনো লেখা কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চাইলে, তিনি যত দূরেই থাকুন না কেন ইমেইল অ্যাড্রেসে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে লিংক পাঠাতে পারা।
৫. যারা সচলায়তনে চেষ্টা করে করে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের কাছে সচলের লিংক পাঠিয়ে ফুটানি মারতে পারা (এটা সব ব্লগারদের ক্ষেত্রে নয়, কেবল সচলদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।
৬. লিখিত পাঠ-প্রতিক্রিয়া জানা যায়। ভালোগুলো বেছে বেছে পরে বইয়ের ফ্ল্যাপে ব্যবহারের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে (নামসহ)।
৭. যখন তখন যে কাউকে 'আপনাকে বিপ্লব' বা 'উত্তম ঝাজা' দেয়া যায়।

এ তালিকায়ও একাধটা খারাপ দিক না বললে অন্যায় হবে। সেগুলো হলো--
১. (অফিসে ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে) প্রায়ই কাজে ফাঁকি দেয়া হয়ে যায়।
২. (রাত জেগে বাসায় ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে) বউয়ের গালমন্দ শুনতে হয়।
৩. (উভয় ক্ষেত্রে) লেখালেখির চাইতে চাপাবাজি বেশি হয়।
..................................................................................
অপরিপক্কতা সবসময় একরোখা হয়, আর পরিপক্কতা হচ্ছে সর্বগ্রাহী
-সেলিম আল দীন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুব ভালো কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছেন! আপনাকে জাঝা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শেখ জলিল এর ছবি

ব্লগ আমার যেমন ইচ্ছে লেখার খাতা। লেখার প্রকাশের জন্য নিজের ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। কোনো গ্রুপ বা দলাদলি না করেও প্রকাশ করা যায় নিজের লেখা। আর তাৎক্ষণিক মন্তব্যটা পাওয়া যায় ব্লগ লেখা বা ফোরাম থেকে- যেটা পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। সর্বোপরি ভার্চুয়াল বন্ধুত্বের ব্যাপারটাও উপরি পাওনা হিসেবে পাই। জয়তু ব্লগ।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি

====================
অবিরাম ছুটে চলায় হঠাৎ থমকে যাওয়া

'

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ব্লগের সবচাইতে বড়ো সর্বনাশটা হলো , এখানে দায়দায়িত্ব কম থাকে । যেহেতু সম্পাদনার কাচির ভয় নেই , তাই ধুম ধাম লিখে ফেলা যায় । নো গ্রামার টেনশন , নো বানান টেনশন ।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

- পেপার-পত্রিকায় লেখা সাহসে কুলায় না। অদৃশ্য ব্যারিয়ার লাগে। ব্লগ এই দিকে আরাম।
- প্লাস বাপ-মা'র পড়ার দরকার নাই আমি কি লিখলাম।
- একেবারে নিজের পার্সোনাল বকবকও মানুষ মন দিয়া পড়ে - এর থেকা ভালো আর কি হইতে পারে দেঁতো হাসি
- লেখকের সাথে ফিডব্যাক বিনিময়, মতের অমিল হইলে লাইট বিবাদের সুযোগ হেহেহ
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।