কথা সত্য - সত্য কথা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শুক্র, ১৮/০১/২০০৮ - ৬:৩৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অপ্রিয় সত্য কথা শুনতে ভালো লাগে না। কেউ যখন সেটা উচ্চারন করে বসে তখন হয়ে উঠে চক্ষুশুল। গতবছর ঢাকায় গিয়ে এরকম একটা পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম।

আলী আমার অনেকদিনের বন্ধু। বহু দুঃসময় একসাথে পার করেছি। দুঃসময় অনেক বিষম ধ্যান ধারনার মানুষকেও কাছাকাছি এনে দেয়। যেমন ঘটেছিল এই ক্ষেত্রে। আলী আর আমার বন্ধুত্বের শুরু সাহিত্যে চর্চার হাত ধরে। কিন্তু মানসিকতার মিল কখনই ছিলনা। তবু অসম্ভব কিছু চোরাবালি পার হয়েছে একে অপরের কাঁধে হাত দিয়ে। সেই সুত্রেই ঘনিষ্ঠতা।

আমেরিকা আসার পরই আলীর কথাবার্তায় একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলাম। মেসেঞ্জারে কথা বার্তা হলেই সে কিভাবে বাইরে আসবে, কি করবে সেটার কথা বলত। শুরুর দিকে সেটা স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকলেও যতই সে সংসারের বাঁধনে জড়াতে লাগল ততই কথা বার্তায় একটা ডেসপারেট ব্যাপার চলে আসতে লাগল। অবশ্য এই ডেসপারেট ব্যাপারটা তার মধ্যে প্রথম থেকেই ছিল।

ঢাকায় যাবার সময় স্পেশাল কিছু মানুষের কিছু গিফটের তালিকায় ওর নামটাও ছিল। দেখা হল - কিন্তু কুশল বিনিময়ের শুরু থেকেই সে প্রমান করতে ব্যস্ত যে সে আমেরিকার একটি অফশোর কোম্পানীতে চাকুরী করছে। মাইক্রোসফটের মোস্ট ভ্যালুয়েবল পারসন হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। পুরো দুনিয়ায় মাইক্রোসফটের সলিউশন চালাতে হবে। এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বকবক শুরু করল।

প্রথম কিছুক্ষন শুনে গেলেও আর দশটা বন্ধুর মত পঁচাতে শুরু করলাম। বললাম, ব্যাটা আমেরিকা আমেরিকা করে মুখে ফ্যানা তুলে ফেললি। বিষয়টা এথিক্যাল না। কিন্তু বন্ধুত্বের সর্ম্পক নিশ্চয়ই এথিকসের বাইরেই থাকে। খানিকক্ষন পরেই আলী ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠল, "তোরা দেশে চাকরী না পেয়ে বাইরে গেছিস। বাংলাদেশ থেকে তো তোদের ভাগায় দিছি। আবার এখন বড় বড় কথা। বাপের টাকা থাকলে আমরাও যাইতে পারতাম।"

খানিকক্ষন লেগেছিল ব্যাপারটা মগজে নিতে। তারপর আর কি - সব অপ্রিয় কথার মত এটার কারনেও আর যোগাযোগ করতে ইচ্ছে হল না আলীর সাথে।

কিন্তু কথা টা কি সে ঠিক বলে নি? বাপের টাকায় আসিনি বটে, কিন্তু বাংলাদেশ কি আমাদের তাড়িয়ে দেয়নি?


মন্তব্য

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বাংলাদেশ কি আমাদের তাড়িয়ে দেয়নি?

আমি মানতে পারলাম না। দেশ কাউকে তাড়িয়ে দেয় না। আমরাই নানান কারণে তাকে ফেলে আসি। কেউ স্থায়ীভাবে, কেউ সাময়িককালের জন্য।

ভাইরে, দেশের যদি ক্ষমতা থাকতো কাউকে তাড়িয়ে দেবার, তাহলে সে সবার আগে তা প্রয়োগ করতো রাজাকার, দালাল ও দেশের অস্তিত্বের জন্য ক্ষতিকারক অন্যান্য ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

ধূপছায়া এর ছবি

সহমত@ সংসারে এক সন্ন্যাসী।

শেখ জলিল এর ছবি

ঠিক দেশ তাড়ায়নি, তাড়িয়ে দিচ্ছে দেশে নীতি-নির্ধারকগণ- যারা এই দেশের প্রিয় সন্তান এস এম মাহবুব মুর্শেদের মতো হাজারো মেধাকে ধরে রাখতে পারছে না বা চাচ্ছে না...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নজমুল আলবাব এর ছবি

না, দেশ তাড়ায়নি, আপনারাই গেছেন। তবে অনেকরে আবার তাড়ায়ও। আর অনেকরে তাড়ানোর চেস্টা করে ব্যার্থ হয়।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চাকরিবাজী রে ভাই, চাকরিবাজী। ...এখানে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার কথা আসছে কেনো?


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

তানভীর এর ছবি

দেশে যাওয়ার রাস্তা তো সবসময়ই খোলা। কিন্তু চাইলেই কি যাওয়া যায়? তেমনি চাইলে আবার দেশ থেকে বাইরেও আসা যায় না...grass is always greener on the other side

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দেশ তাড়িয়েছে বললে ভূল হবে। নিজের ইচ্ছায়ই আসা। তবে সেটার মোটিভেশন নিছক বস্তুবাদী বা টাকা পয়সার পেছনে ছোটাছুটি, এমনটাও ঠিক ছিল না। দেশে থেকে যাওয়া সহপাঠীরা এখন সব ঢাকার বড় বড় কম্পানীর হোমরা চোমরা। অন্তত বস্তুগত দিক থেকে ওরা আমার থেকে অনেক এগিয়ে, ওদের শো-শা শতগুণ বেশী। কিন্তু বিচিত্র অভিজ্ঞতা, দেশভ্রমণ, ভিন্ন সমাজ সংসার মানুষ জীবন দর্শন, ভিন্ন সংস্কৃতি - এসবকে একদম ভেতর থেকে চিনতে জানতে পারাটা মনে হয় বড় অর্জন। এসব জিনিস টাকা দিয়ে মাপবো কিভাবে?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসলে যখন দেখলাম যোগ্য মূল্য পাচ্ছি না তখন বেজায় মেজাজ খারাপ হল। চাকরীরর অফার করে হাজার দশেক বেতনে। যেখানে আইট চাকুরীতে অফার করে হাজার পনের, কিংবা ম্যানেজমেন্টে অফার করে হাজার বিশেক। ভাবলাম আরেকটা ডিগ্রী নাহলেই না। সেটা ভেবেই বাইরে আসা।

এইযে, দেশ যোগ্য মূল্য দিতে পারছে না, কিংবা এই যে শিক্ষা ব্যবস্থা মেধাবী ছাত্রদের সঠিক জায়গায় স্থাপন করতে পারছে না, কিংবা একটি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিমানের ভালো চাকুরীর যোগান দিতে পারছে না এটা কি দেশের ব্যর্থতা নয়? দেশ কি আমাদের বাইরে আসতে বাধ্য করছে না? অন্য কথায়, তাড়িয়ে দিচ্ছে না?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আমি একটু এড কর এইখানে (সদ্য দেশত্যাগী মানুষ, এখনো ভাত ছাড়া আর কিছু খাইতে পারি না ... )

সাদা চোখে দেখলে আমি দেশে অন্য অনেকের চেয়ে ভালো ছিলাম ... অন্য অনেকের চেয়ে অনেক আগে পাস করছি, পাস করার পরের দিন চাকরিতে জয়েন করছি ... এবং যদিও ভিওয়াইপিতে ধরা খাওয়ার পরে জিপি কস্ট কাটিং শুরু করছে তারপরেও আমি মাস শেষে যে টাকাটা পাইতাম সেটা বাংলাদেশের হিসাবে কোনভাবেই কম না ... দ্যাট ইজ, মামুর মত টাকা-পয়সা রিলেটেড সমস্যা আমার ছিল না ... জিপির ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্টও খুব ভালো (আমার দেখা বাংলাদেশের সেরা), সুযোগ-সুবিধাও ভালো ছিল, স্ট্যাটাসও কম ছিল না ("তুমি জিপিতে জব করো!" কতবার যে শুনছি) ...

তাহলে আসলাম কেন? ... মেইন কারণটা জব স্যাটিস্ফ্যাকশনের অভাব ... জিপি (অথবা জেনারেলি টেলিকমগুলি) টাকা দেয় অনেক, এবং বাংলাদেশের সবচে মেধাবী ছেলেমেয়েগুলিকে রিক্রুট করে ঠিকই, কিন্তু দুয়েকটা ব্যাতিক্রম বাদ দিলে যে কাজ করায় সেটা এমন কোন জটিল কাজ না ... সত্যি কথা বলতে কি, আমার দেখা টেলিকম অপারেটরের ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে অর্ধেক করে এক্সেল-ওয়ার্ড নিয়ে কাট-পেস্টের কাজ, বাকি কিছু পাব্লিক করে টেকনিশিয়ানের কাজ, কিছু পাবলিক পাব্লিক ম্যানেজারিয়াল কাজ, বাকি দুয়েকজন ভাগ্যবান করে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ ...

সো প্রাথমিক মোহ কাটার পরে দেখলাম হাতে অপশন আছে দুইটা, এক এই চাকরিতে অভ্যস্ত হওয়া, আস্তে আস্তে দুয়েকটা (তার বেশি না) প্রমোশন বাগানো, বছর বছর ইনক্রিমেন্ট, আর কোন কারণে চাকরি গেলে হা-হুতাশ ...

সেকেন্ড অপশন চাকরি ছাড়া, অন্য কিছু ধরা ... টেলিকমের উপরে ততদিনে ফেড-আপ, আর সফটোয়ারে মামুর সেই সমস্যা, টাকা নাই (আর গায়ে বুয়েটের সীলও নাই) ... জানি পরে বাড়বে, বাট জিপি যে অভ্যাস খারাপ করে দিছে এখন আর দশ হাজার টাকার চাকরি নিতেও পারি না ... আর টেলিকমে বালছাল্গিরি কইরা ততদিনে প্রোগ্রামিং নলেজেরও বারোটা বাজায়ে ফেলছি ...

তাই সবকিছু নতুন করে শুরু করার চেষ্টায় দুই মাসের ডিসিশনে দেশ ছাড়া ...

এখন কি বলবো? দেশ আমারে তাড়াইলো? নাকি আমি দেশরে?

(ভাবছিলাম এই টেলিকম ইস্যুটা নিয়া পরে বিশদ লিখব, কিন্তু আজকে মামুর পোস্টটা পইড়া ভাবলাম কিছু বল উচিৎ)

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

বেশ কয়েক বছর আগে মহাথির মোহাম্মদ একবার আমেরিকা এলেন। না, তিনি মার্কিন হর্তাকর্তা কারো সঙ্গে ফটো সেশন করতে আসেননি, সরাসরি গেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে কর্মরত মালেশীয়দের সঙ্গে মিলিত হতে। তাঁদের তিনি বললেন, তোমাদের আমি দেশে ফিরিয়ে নিতে চাই। কী কী শর্তে তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া যাবে তা আমাকে জানাও। ওই আইটি শিল্পীদের অধিকাংশই পরের কয়েক বছরের মধ্যে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি।

আমাদের দেশেও এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে আমার আশা হয়। কবে, কীভাবে এসব ভাবলে কূল-কিনারা পাওয়া যায় না ঠিকই, তবে আশাটা জাগিয়ে রাখি কোনোমতে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।