মিডিয়া প্লেয়ারে একটানা গান বেজে যাচ্ছে। দরজায় খানিক খসখস শব্দ। তুমি ঘরে থাকলে ভয় পেয়ে যেতে। মনে আছে, একবার আমি শুয়ে পড়েছি, আর দরজায় শব্দ পেয়ে তুমি আমাকে জাগিয়েছো। দুজনে পা টিপে টিপে গিয়ে দেখি দরজায় বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে দিয়ে গেছে কেউ - ওটা তারই শব্দ ছিল। তারপর দুজনে আমরা কি হাসি!
তুমি নেই। এক বোধটা একটু আগেও ছিল না আমার। সারাদিন বাইরে কাজ করে এসে টিভি দেখলাম খানিকক্ষণ। শুকনো কিছু খাবার খেলাম। কম্পিউটার নিয়ে খানিকক্ষণ গুঁতোগুতি করলাম। একবারও তোমার কথা মনে হয়নি। খালি বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে তোমার ছোট পুতুলটা দেখে মনে হল তুমি নেই।
না কোন দুঃখ বোধ নেই আমার। আমিই চেয়েছিলাম তোমার থেকে আলাদা থাকতে। আমিই বলেছিলাম, তালাক, তালাক, তালাক। তুমি কেঁদেছো শুধু। তাই কোন দুঃখবোধ নেই - আছে কেবল শূণ্যতা, শূণ্যতা।
আমাদের সাত বছরের সর্ম্পক একপাশে সরিয়ে দিয়ে তুমি যখন ওই ছেলেটার সাথে জড়িয়ে পড়লে তখন কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম। তুমি বিশ্বাস করবে না জানি - কিন্তু একটু একটু করে ভাঙ্গন ধরেছিল সেই থেকেই। জানি ইয়াহু মেসেঞ্জারে গড়ে ওঠা সর্ম্পকের কোন মূল্য নেই। তবু আমার বিশ্বাস টলে উঠেছিল।
একটু একটু করে কত দুরে সরে গেলে তুমি! প্রায় রাতে ঝগড়া শুরু হত তুচ্ছ কোন বিষয় নিয়ে। শেষমেষ থামত গিয়ে সেই একই বিষয়ে। একদিন রেগে মেগে ছুরি নিয়ে ধাওয়া করলাম। বিস্ময়ে হতবিহ্বল হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে।
বললে, "আমাকে মেরে ফেলতে চাও?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ চাই। দূর হয়ে যা আমার জীবন থেকে।"
বললে, "সত্যি বলছ?"
আমি বললাম, "দূর হয়ে যা। দূর হয়ে যা আমার জীবন থেকে।"
তুমি আর কিছু বলনি। এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে চলে গেলে। আমি জানতেও চাইনি কোথায় যাচ্ছ, সেরাতে কোথায় থাকবে। পরদিন, টুটুল এসে কাপড় নিয়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করিনি কোথায় আছো, কেমন আছো। একবার ফোন করেছিলে, কেটে দিয়েছি।
তোমার সেই প্রথম দিনের কথা মনে আছে? যেদিন তুমি আমার সাথে লুকিয়ে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছিলে? "বন্ধুদের কাউকে এখন জানাতে চাইনা" - একথা বলে বলেছিলে "ডাসের সামনে থেকো সকাল ১১ টায়। দেরি করলে ঠ্যাং ভেঙ্গে দেবো।"
আমি ডাসের পিছনের দিকটায় পৌনে ১১ টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তোমার দেখা নেই। সোয়া এগারটার দিকে সামনের দিকে আসতেই দেখি তুমি দাঁড়িয়ে আছো। আমাকে দেখেই বকা শুরু করলে। আমি হেসে ফেললাম। তারপর দুজনে মিলে সংসদ ভবনে গেলাম। আমার সিগারেটের আগুন ধরিয়ে দিতে দিতে বলেছিলে, "তোমার কিন্তু এই শেষ সিগারেট। আমাদের সর্ম্পক শুরু, সিগারেটের সর্ম্পক শেষ।" অথচ নিয়তির কি পরিনতি দেখ, সিগারেটের সাথে সর্ম্পক ঠিকই আছে, তোমার সাথেই....।
আহ আবার এ সময় এই গানটা শুরু হল কেন?
"তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা,
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা।
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গে চুরে শতবার,
রয়েছ তুমি কতদূরে, আমাকে রেখে ছলনায়
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না লাগে না জোড়া"
|
তোমাকে লেখা এ চিঠির কোন শেষ নেই। খালি আছে শূণ্যতা শূণ্যতা। ভালো থেকো।
মন্তব্য
অসাধারণ।
ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।
ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সর্বাধুনিক ধরনের গল্প - সংযোজিত সঙ্গীত সহযোগে। এই বিষয়টা মজার।
গল্প জমে উঠতে উঠতে হঠাৎ শেষ হয়ে গেলো। কারণটা কি লেখকের আলস্য?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আরেকটু লিখলে হত। কিন্তু ঠিক কোন দিকে নিয়ে যাব বুঝছিলাম না। উপরন্তু রাত ৩টা বেজে গিয়েছিল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
লেখককে এই পরীক্ষাটা দিতে হয়। সম্পূর্ণ হওয়ার আগে লেখা প্রকাশ না করার ধৈর্যপরীক্ষা।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
ভালোবাসা হলো ডালচাল সহযোগে রান্না খিঁচুড়ি। নুন বেশি হলে কখনো মজা, কখনো আলুনি। কখনো ওয়ানটাইম, কখনো 'বাধ্য হয়ে' মাসের পর মাস। কখনো বিলাসী, কখনো তৃপ্ত উপবাস। আর শেষ কথা সেই নদীর ঢেউয়ের ফর্মূলা। বিগত-অনাগতের সমীকরণ। জীবনের দর্শক না হলেই হয়তো বেশি করে মরণ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
গল্পটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো তা ঠিক, কিন্তু তারপরেও ভালো।
- শামীম হক
ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
গল্পটা বেশ তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেলো। সাথের সঙ্গীতটাও শুনতে পেলাম না আমি। মনে কিছুটা অপূর্ণতা থেকে গেলো...এরই নাম বুঝি ছোটোগল্প?
...ভাল্লাগছে বেশ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আসলে মাইক্রোগল্প। ধন্যবাদ আপনাকে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
- আমি সিরিয়াস বা ললনাহীন কোন লেখা লিখলে শুনি জনগণ পড়া শেষ করে (অথবা না করেই কে জানে) উপরে গিয়ে ভালো করে দেখে এটা ধুসর গোধূলিই লিখেছে কি না!
আমার অবস্থাও সেকরম হয়ে গিয়েছিলো মিয়া। পড়ি আর বিড়বিড় করি, 'এইটা কি গল্প!' ছুরি নিয়ে ধাওয়া দেওয়ার পর্যায়ে এসে কনফার্ম হলাম, 'এইটা গল্পই।' নড়েচড়ে তৈরী হয়ে বসতেই দেখি ওমা শেষ।
কামডা কি ঠিক হইলো মাঝি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আসলে বউ গেছে ভাইয়ের বাসায় ঘুরতে। তো বিরহে কিছু লেখব ভাবলাম। তাতে রং লাগাতে এমন অবস্থা যে নিজেই আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। চাপা আর কত পিটানো যায়। শেসে ঠাস করে খতম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নাড়া দেয়া গল্প
কষ্ট দেয়া গল্প
(ক্যামেলিয়া আলম)
আহা!
সচলে এসে লেখক মুর্শেদ ভাই হারিয়েই গেলেন!!!
নতুন মন্তব্য করুন