হুট করেই পাজল মিলতে শুরু করল। জীবনটাই বোধহয় এইরকম। একটা বিরাট পাজল। এড়ানোর উপায় নেই। সমাধান করতেই হবে। যত অসম্ভবই মনে হোক একদিন তার সমাধানও বের হয়ে যাবে।
গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার অটোডেস্ক, স্যান রাফায়েল, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোন এল। এক মাস ধরে ঝুলতে থাকা চাকরীটা হঠাৎ বরফযুগে প্রবেশ করেছে। আমেরিকার অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নিরাপদ অবস্থানে যেতে এই ব্যবস্থা নিয়েছে তারা। কি আর করা, মনের দুঃখে ব্লগই লিখে ফেললাম একটা।
পরের সোমবার ছিল চমক। অ্যানসিস, ক্যাননসবার্গ, পেনসিলভেনিয়া তে অন-সাইট ইন্টারভিউ হয়ছিল একটা। সেখান থেকে ফোন আসল - জব অফার। কিন্তু ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়। সুতরাং বললাম অফার লেটার পাঠাও। বুধবার অফার লেটার পাঠালে পরে আশ্বস্ত হলাম।
কয়েকটা ব্যাপার মনে খচখচ করতে থাকলেও কোনও উপায় নেই আপাতত। প্রথমতঃ চাকুরীটা সফটওয়্যার টেস্টিং, আমি চেয়েছিলাম সফটওয়্যার ডেভলপমেন্টে যেতে। দ্বিতীয়তঃ স্যালারী খুব কম! তৃতীয়তঃ অফার লেটারে দেখি আমার ম্যানেজার হবে আরেক পাকিস্থানি! এই পাকি-ফাকিগুলার কবল থেকে যে কবে বের হব!
কিন্তু হাতে যেহেতু আর কোন অপশন নেই, তাই জয়েন করব বলে সিদ্ধান্ত জানিয়ে ফেললাম আজ। এখনও একটা সিগনেচার বাকি আছে আমার প্রফেসরের কাছ থেকে, কিন্তু সেটা পেয়ে যাবো আশা করা যায়।
এদিকে আমার স্ত্রী চাকুরী পেয়ে বসে আছে মাস দেড়েক হল। সে চলে যাবে কলম্বাস, ইন্ডিয়ানা। এই মুর্হুতে খানিক বিচ্ছেদ মেনে নিতেই হচ্ছে। শিঘ্রী যে কোন এক জায়গায় চাকুরী খুঁজে নিতে হবে। তদুপরী সাড়ে তিনশ মাইল দুরত্ব, হপ্তা হপ্তায় খেপ দেয়া কোন ব্যাপারই না।
তার চেয়ে বড় দুঃখের কথা হল অ্যারিজোনা ছেড়ে যেতে হবে! তিন বছর ধরে এখানে থাকলেও, গত বছর থেকে বিভিন্ন কালচারাল ব্যাপার স্যাপারে জড়িয়ে ছিলাম। কখনো মনে হয় নি যে আমরা বাংলাদেশে নেই। সবাই এতো আপন করে নিয়েছিল যে বন্ধু বান্ধব, পরিবারের কাউকে মিস করিনি তেমন একটা। হঠাৎ করে যখন অনুভব করলাম খুব খারাপ লাগা শুরু হল।
এই শুক্রবার রাতে দাওয়াত দিলেন আমাদের ইউনিভার্সিটিতে গণিতের প্রফেসর ফিরোজ ভাই। তার বাসায় গিয়ে দেখি নাটকের লোকজন, আমার ব্যান্ডের পোলাপাইন সবাই হাজির। আমি ভাবলাম ঘটনা কি! এতো লোকের একসাথে এখানে! চমক আরো অপেক্ষা করছিল।
আমাদের অবাক করে দিয়ে ফেয়ারওয়েল কেক কাটা হল। বাংলাদেশ থিয়েটার অফ অ্যরিজোনার জাভেদ ভাই, ভাস্কর ভাই বক্তব্য দিয়ে বসলেন। সেই সঙ্গে অ্যারিজোনা স্টেইট ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাসোশিয়েনের ফিরোজ ভাই, মুনীর ভাইও দেখি বক্তব্য দিয়ে ফেললেন। সেই সঙ্গে আবার ক্রেস্ট!!
আমার আর মৌটুসীর তো 'হে ধরনী দ্বিধা হও' অবস্থা। অপ্রস্তুত হয়ে কি বলব খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এতো ভালোবাসার যে যোগ্য আমরা নই, সেটা এতো গুলো সহৃদয় মানুষের মুখের উপর কিভাবে বলি?
রবিবার রাতে আরো আমাদের পক্ষ থেকে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছিলাম। দাওয়াত শেষে সবাই যখন বলছিল, ভালো থেকো, আবার দেখা হবে হয়ত - তখন ভাঙ্গন শুরু হয়েছে আমার মধ্যে। আমেরিকায় আসার পরের প্রথম রুম মেট আবীর যখন জড়িয়ে ধরল তখন কোত্থেকে যেন এক দানা বালি চোখে পড়ল। আহারে বালি আর সময় পেলি না!
চলে যাচ্ছি - ফিনিক্স থেকে পিটসবার্গ। ফেলে যাচ্ছি এক ঝাঁক প্রিয় মুখ, একটি নাটকের দল, একটি ভাঙ্গা ব্যান্ড দল আর এক গুচ্ছ পালক। ফেলে যাওয়াই জীবন, ছেড়ে যাওয়াই মানুষর ধর্ম।
বিদায় অ্যারিজোনা।
মন্তব্য
বিদায় কালে মানুষের ভালোবাসা পেলেন। এই আনন্দ আশা করি ভুলিয়ে দেবে আপনার দুঃখ।
---------------------------------
এসো খেলি নতুন এক খেলা
দু'দলের হেরে যাবার প্রতিযোগিতা...
শুভকামনা রইলো ...
...................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
কবে যাচ্ছো? মন খারাপ করে কী হবে! নিজের দেশ ছেড়ে পরবাসী আমরা, আমাদের তো শেকড় থাকতে নেই।
মঙ্গল হোক।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
ঠিকই বলেছেন জুবায়ের ভাই।
স্ত্রী যাবে ১৫ তারিখ, আমি এপ্রোক্সিমেটলি ২২ তারিখ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
- অনুভূতিটাই কেমন অন্যরকম তাইনা মা.মু? কখনো খুব ভোরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিংবা বড় কাঁচের জানালার এপাশে দাঁড়িয়ে যখন ভাবো এইখানে সব কিছুই এভাবে থাকবে, কেবল থাকবো না আমি! কেমন দুমড়ে মুচড়ে যায় না?
মায়ার মুখের বাঁধনগুলো একটু শক্তই হয়। আর সবচাইতে শক্তা যেটা তা হলো বাস্তবতা। "আবার দেখা হবে হয়তো"- এই কথাটা বাস্তবতা আর নিজের মনের কথার মিশেল। ব্যস্ততম জীবনে দেখা হওয়ার সুযোগটা একদমই কম, এমনও হবে এই মুখগুলোর অনেকের সঙ্গেই এই তোমার শেষ দেখা। আর কোনোদিনই দেখা হবে না, ভাবলেই কেমন ভেঙে যায় ভেতরটা!
নতুন জায়গাতেও অনেক বন্ধুবান্ধব পেয়ে যাবে। তখন দেখবে পুরাতন ঐ মুখগুলো নিজে থেকেই ঝাপসা হয়ে গেছে, মজার ব্যাপারটা ওখানেই।
আর পাকি শালারে নিয়ে টেনশন করো না। তোমার প্রফেসরের মতো যদি হয়, তাহলে একদিন তার ঘরে ঢুকে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঠাশঠুশ কয়েকটা লাগাবা বেপরোয়া। তারপর জানালা খুলে দিয়ে বলবা 'তো আজকে উঠি স্যার। আমাকে সবসময়ই আপনার সার্ভিসে পাবেন, যেকোন সময়!'
ভালো কথা, লাগানোর সময় কানের কাছে একটা মন্ত্র পড়ে দিটে ভুলে যেও না, "তর মায়রে বাপ, এই চটকানার কথা যদি এই ঘরের বাইরে যায় তাইলে তোর গোয়ায় রেলগাড়ি- মনে রাখিস"।
আর বউয়ের কথা মনে হলে, ডেট্রয়েট তো দেখি কাছেই আছে। ওখানে গিয়ে একটু ঘুরাঘুরি করবা।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
গোধূলির স্টাইলই আলাদা! পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আচ্ছা আপনার এই পাকিস্তানি বসকে নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?
বাই দ্য ওয়ে কেউ যদি বাংলা ব্লগ পড়ে বসরে বা ওখানকার কাউরে জানায় দিতো?
পিটসবার্গ থেকে কলম্বাসের ৩৫০ মাইল রাস্তাটা নিশ্চয়ই আপনার মুখস্থ হয়ে গেছে? ওটা নিয়ে একটা দারুণ লেখা দেন না! দরকার হলে ব্লু হাইওয়েস দেখে নেন একটু!
ধূ. গো. র মন্তব্যে (বিপ্লব)
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মনটাই ভাল হয়ে গেল এই সুখবর দেখে! অভিনন্দন রইলো। মাঝামাঝি কোথাও আস্তানা গড়ুন। ৩৫০ মাইল কম ঝক্কি না কিন্তু!
শুভকামনা রইল। ভাবলাম অবশেষে বাসার পাশে একজন বন্ধু পাওয়া যাবে। কিন্তু শালার অর্থনীতি!!
যাই হোক, মোটুসির আশেপাশেই থাকবা। সেটাই এখন দরকার।
আর ফিনিক্স এর চুল্লি থেকে পিটসবার্গের ডিপফ্রিজে কেমন দিন কাটছে, আমাদের জানায়ো।
আরিজোনায় বাঙলা সংগঠনের কার্যক্রমের বিবরণ পেয়েছি আপনার বিভিন্ন পোস্টে। ভালো লেগেছিলো খুব।
প্রবাসে আপন হয়ে আসা মানুষগুলোকে ছেড়ে আবার নতুন যাত্রা, শুভ হোক, আনন্দময় হোক; এ কামনা করছি।
পরমকরুণাময় আপনাকে নিরাপদে রাখুন, যাবতীয় অকল্যাণ এবং পাকি-কীট থেকে।
শুভ হোক নবযাত্রা
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
গুড লাক
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
কনগ্রাটস দোস্ত। গুড লাক টু বি কন্টিনিউড
চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়! যাক, খুবই ভালো খবর - ওয়েল ডান, গুড লাক!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
অভিনন্দন। আশা করছি পিটসবার্গ আর কলম্বাস, মানে বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি, দুই জায়গাতেই আবার নতুন করে সুমেরীয় সভ্যতা গড়ে তুলতে পারবে। তোমার পাকি প্রফের জন্য জানাই আন্তরিক পাছায়লাত্থি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
শুভকামনা।।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
শুভ কামনা রইল নতুন জায়গা ও নতুন চাকুরীর জন্য। আশা করি পির্টবার্গে ভালো কাটবে আপনার অন্তত ঐখানের পরিবেশ আগের মতো দুষিত নাই...
ভালো থাকেন
কল্পনা আক্তার
..............................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাচেঁনা
শুভ হোক নবযাত্রা
====
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
কোন কায়দায় পাকিরে ওভারটেক কইরা সিগনালে ফালাইয়া সোজা টান দাও....তোমার হইবো....শুভ যাত্রা তো বটেই!
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
সুমন,
যতদিন "সচল" থাকব - তোমাকে সব সময় মনে পড়বে। আর "সিঁড়ি" র এবারের সংখ্যার দিকে চোখ পড়লেই তোমার চেহারাটা ভেসে উঠবে। ফিনিক্সের দরজা তোমাদের দুজনের জন্য সবসময়ই খোলা। সুযোগ পেলে চিন্তা করে দেখ। আর বাংলাদেশ থিয়েটার অব অ্যারিজোনা তোমাদেরকে সত্যিই খুব মিস করবে - এবং এর কার্যক্রমের সাথে তোমরা দূরে বসেও সম্পৃক্ত হতে পারলে ধন্য মনে করবে।
সবসময় শুভকামনা রইল।
_______________________
শেখ ফেরদৌস শামস (ভাস্কর)
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"
____________________________
শেখ ফেরদৌস শামস ভাস্কর
"আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।"
দুনিয়াটা গোল! গীতিকবি হচ্ছেন আমার সহপাঠী শেখ আরিফ শামস (নির্ঝর)-এর ভ্রাতা!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
শুভকামনা।
এক ভাড়া বাড়ি ছেড়ে আরেক ভাড়া বাড়িতে যাবার কথা উঠলেই আমার মনটা খারাপ হয়ে যায়, আর আপনার তো শহর/প্রদেশ বদল!
শুভকামনা রইলো।
ভালো কথা, আপনার কাছে রিচার্ড ডকিন্সের লেকচার বিষয়ক একটা লেখা পাওনা আছে কিন্তু! সময়, সুযোগ, ইচ্ছে আর মুডের সম্মিলন হলে লিখে ফেলবেন, আশা করছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনিও আমার থেকে দূরে চলে গেলেন। আমেরিকার পূর্ব আর পশ্চিমে এত দূরত্ব ... !!
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
যাত্রা শুভ হোক।
..নতুন জায়গাও ধীরে ধীরে প্রিয় হয়ে উঠবে আশা করি..
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
নতুন মন্তব্য করুন