ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একটা খুব প্রিয় সংজ্ঞা আছে আমার - ইঞ্জিনিয়ারিং হচ্ছে মানব জাতির সমস্যা সমাধানের জন্য পদার্থ বিজ্ঞান ব্যবহারের শিল্প [১]।
সমস্যা সমাধানের জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ার সমস্যাকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ফেলে। আসলে, যে কোন বুদ্ধিমান মানুষই সেটা করে। এরপর ছোট ছোট ভাগ গুলো সমাধান করে জোড়া লাগালেই কেল্লা ফতে।
কোন কোন প্রতিষ্ঠান আছে যারা এখনও আদ্যিকালের বিরাট বিরাট যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। বিশেষ কারনে প্রতিষ্ঠানটির নাম বলতে পারছিনা, কিন্তু বিশ্বাস করুন এরকম প্রতিষ্ঠান খোদ আমেরিকাতেই আছে যারা ৩০/৪০ বছরের পুরোনো যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। পুরোনো যন্ত্রপাতি মেইনটেনেনসের ঝক্কিও অনেক। আর যেসমস্ত কোম্পানী যন্ত্রগুলো বানিয়ে ছিল হয় তারাই বিলুপ্ত হয়ে গেছে, নতুবা তারা আর স্পেয়ার পার্টস বানায় না। প্রয়োজনের তাগিদে এই স্পেয়ার পার্টস তখন ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানকেই বানিয়ে নিতে হয়।
পুরোনো পার্টস থেকে নতুন পার্টস বানাবার সময় প্রাথমিক ভাবে যে পদ্ধতি অনুসরন করা হয়েছিল দেখা যায় সে পদ্ধতি অনুসরন করা সম্ভব নয়। উদাহরন স্বরুপ, কম্পিউটারের কেসিং ঢালাই করে তৈরী করা হয়ে থাকে। কিন্তু নতুন করে এই কেসিং বানাবার সময় ঢালাই করার উপযুক্ত প্রযুক্তি নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতের কাছে যে পদ্ধতি আছে সেটা দিয়ে জিনিসটা তৈরী করতে হবে। তাই সে সমস্ত ফিচার ঢালাই করে তৈরী করা সোজা সেটা আর সোজা নাও থাকতে পারে।
প্রাথমিক ভাবে যে পদার্থ দিয়ে পার্টটি তৈরী ছিল এখন হয়ত সেই ম্যাটেরিয়াল পাওয়াই যায় না বা পাওয়া গেলেও হাতের কাছে নেই। সুতরাং আগের চেয়ে কিছু পরিবর্তন দরকার যাতে করে নতুন ম্যাটেরিয়ালে এটা খাপ খায়। যেমন, প্লাস্টিকে তৈরী কম্পিউটার কেসিং যদি স্টিল শীট দিয়ে তৈরী করতে হয় তাহলে তার থিকনেস কম হলেও চলে।
আর অন্যান্য ফ্যাক্টর যেমন খরচ, সময় এগুলোও যত কম লাগে তত ভাল।
আমার কাজটা হল এইরকম একটা সিনারিওতে, পুরো প্রসেসটাকে অটোমেট করা। প্রথমে আমাকে একটা পার্ট দেয়া হবে, ক্যাড মডেল হিসেবে। এবং বলে দেয়া হবে কি ভাবে ম্যানুফ্যাকচার করা হয়েছিল, প্রাথমিক ম্যাটেরিয়াল কি ছিল, কি রকম লোড ছিল এর ওপর, অন্যান্য লিমিটেশন কি ইত্যাদি। আমার কাজ হবে এই সমস্ত তথ্য এনালাইজ করে আমাকে দেয়া ক্যাড মডেলের উপর ভিত্তি করে আরেকটি নতুন ক্যাড মডেলের জন্ম দেয়া যেটা এই নতুন পদ্ধতির সাথে খাপ খেতে পারে।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন পুরো কাজটা আসলে কম্পিউটারে। মূলত প্রোগামিং আর জিওমেট্রিক কারনেল নিয়ে ঘাটাঘাটি।
আমার রিসাচের্র সমস্যাটা সমাধানের জন্য মূল সমস্যাকে তিন ভাগে ভাগ করে ফেলা যায়। প্রথম ভাগ হলো তথ্য সংগ্রহ, দ্বিতীয় ভাগ হল নতুন ক্যাড মডেল তৈরী এবং তৃতীয় ভাগ হল এই নতুন মডেল কতটুকু গ্রহনযোগ্য হল, সেটা আদৌ তৈরী করা সম্ভব হবে কিনা তা যাচাই করা।
রিসাচের্র বর্তমান পর্যায়ে আমি প্রথম ভাগ নিয়ে কাজ করছি, আর আরেকটা ছেলে শেষ ভাগটায় কাজ করছে। মাঝের ভাগটা এখনও শুরু করা হয়নি।
প্রথম ভাগটার কাজটা একটু করে বলি। ধরে নেই পুরোনো যন্ত্রাংশটির ক্যাড মডেল আছে। তখন আমার প্রোগ্রামটি নিচের তথ্য গুলো সংগ্রহ করবে:
১। এর ওপর কি কি ধরনের লোড পড়বে
২। এটির আকার আকৃতির পরিবর্তন এর সাথে লাগোয়া যন্ত্র পাতির ওপর কি রকম প্রভাব ফেলবে
৩। যে ম্যাটিরিয়াল দিয়ে এটি প্রাথমিক ভাবে তৈরী ছিল তার কোন কোন গুন গুলো জরুরী
৪। এটি কি কাজে ব্যবহৃত হত
এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ শেষে এটি যাবে দ্বিতীয় ধাপে এবং সবশেষে তৃতীয় ধাপে। অবশেষে আমরা একটি উত্তর পাবো নতুন যন্ত্রাংশ কিরকম হবে সে ব্যাপারে। আর এভাবেই সম্পন্ন হবে পুরো প্রক্রিয়াটি।
কেউ কি ক্যাড ক্যাম নিয়ে কাজ করেছেন? বা রিলেটেড ফিলডে আছেন?
[১] "Engineering is the art of applying the physical sciences to the problems of mankind" (Design of Machine Elements, V. M. Faires)
(প্রথম প্রকাশ সামহোয়্যারইন ব্লগ - পর্ব ১ ২০০৬-০৫-২৫, পর্ব ২ ২০০৬-০৫-২৫)
মন্তব্য
ভারী লেখা দিলাম এট্টু।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কুনু সমস্যা নাই ... ভাল্লাগছে পড়তে ... সামনে আরও দিয়েন ...
আমি উত্সাহ বোধ করছি এরকম লেখার। আমারও শখ ছিল মনে মনে, কিন্তু একজন পথপ্রদর্শক ছাড়া পথে নামতে চাচ্ছিলাম না। আপনি সাহস জুগালেন। নিজের বিষয় নিয়ে লিখবো দেখি সময় করে। মূলত আমার বিষয়টাকে আমি নিজেই কতটা সহজ করে জানি তা আবিস্কার করার জন্য।
আপনি অত্যন্ত জটিল জিনিসকেও অনেক সহজবোধ্য করে লিখেছেন বোঝাই যাচ্ছে। এটা একটা বিশাল গুন। চালিয়ে যান।
-----------------------
এই বেশ ভাল আছি
অনেক ভারী লেখা রে ভাই।
না পইড়া ই মন্তব্য করতেছি,নাম দেইখা ই ভয় খাইছি।মন বিলা হইয়া আছে, এি শব্দ দেইখা আরও বারছে।তাই মাইনাস ৫
সময় করে পড়বো কথা দিলাম। রিসার্চ নিয়ে আমার ইন্টারেস্টটা একটু বেশি। আমি ফ্রি হলে আপনাকে জ্বালানো শুরু করবো।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
সহজ কথা যায়না বলা সহজে। তবু সবাই ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখুন। ভারী-হালকা সব কিছু। তাই পুরোনো লেখা থেকে এটা তুলে দিলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
রিসার্চ প্রপোজাল লেখার বিষয়ে কিছু লিখুন। মানে স্টেপগুলো, কিভাবে শুরু করতে হবে, কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে? সময় পেলে আমিও একটা লেখা দেবো এ নিয়ে। সেপ্টেম্বরের আগে পারবো বলে মনে হয় না।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
প্রোপোজাল লিখিনি কখনো। পেপার লিখেছি সর্বসাকুল্যে একটা। সেটা নিয়ে যাকিছু শিখেছি সেটুক নিয়ে লিখতে পারি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অন্য স্বাদের লেখা পড়ে ভালো লাগলো। এনালাইসিস এর জন্য কি কি সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন?
আমি কিন্তু এনালাইসিস করছি না। আমার কাজ মূলতঃ সফটওয়্যার ডেভলপমেন্ট - ডিজাইন অটোমেশন।
এমনিতে এনালাইসিস করতে হলে I-DEAS, Nastran, Cosmos (Solid Works), Ansys এইগুলান ব্যাবহার করি। আবার কিছু কোর্সে Abaqus এবং স্পেশালাইজড টুল যেমন OOF ও ব্যবহার করেছি। সমস্যার ধরন যাচাই করে আসলে টুল ব্যবহার করি।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমারো পড়তে ভালো লাগলো। আপডেট দিয়েন রেগুলার, তবে এইরম সহজ করে, প্যাচাইলে কিন্তু খবরাছে!
-যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ইতিহাস ভূ-গোল হয়ে যাবার গল্প মনে করে শুরু করেছিলাম (কারন আমি তো ইংজি এর মাষ্টার!), পরে দেখি না ইতিহাস ইতিহাসই আছে।
আমার বোধ্যগম্য করে লেখার জন্য ধন্যবাদ বস।
সংজ্ঞাটির কিছু অংশের ব্যাপারে দ্বিমত আছে।
পদার্থ ছাড়াও অপদার্থের(!) ব্যবহারও কম নয় (রসায়ন, প্রাণীবিদ্যা, বাস্তুতত্ব বা Ecology ইত্যাদি) - বিমানের বডি তৈরীর সময়ও যেমন একটা খাবারের কণার জন্য এই কাঠামো ব্যকটেরিয়া দ্বারা কিভাবে ক্ষয় হতে পারে সেটা বিবেচনা করা হয় .... .... ... ইত্যাদি।
যা হোক, লেখাটা এবং প্রতিক্রিয়াগুলো দেখে ভালো লাগলো। সাথে বিজ্ঞানী.অর্গের এই প্রস্তাবটার কথাও মনে পড়ল।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
দরকারি জিনিস, আমাদের মত লেম্যানদের জন্য। এ ধরনের লিটারেচার আরো বেশি বেশি হোক।
::আহা::
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'
খুব পক্ষে আমি এরকম লেখার।
আমার বিবেচনায় ব্লগে, যেহেতু এখানে মূলত: বিভিন্ন বিষয়ের বাঙালি ছাত্রদের আনাগোণাই বেশি, এরকম লেখার আলাদা পাঠকশ্রেনী তৈরি সম্ভব। এগুলো বাণিজ্যিক লেখা না বলে সাধারণ মিডিয়ায় উপেক্ষিত। কিন্তু পিছিয়ে পড়া দেশের জন্য উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণার কথা আরো বেশি করে আলোচনা হওয়া দরকার। ব্লগ একটা বিরাট সুযোগ আমাদের মত দেশগুলোর জন্য।
ঠিক এরকম ধারণা থেকে গবেষণা বিষয়ক লেখালেখি বা সরাসরি জীবনের অভিজ্ঞতা সম্পর্ক লেখালেখির উত্সাহ আমি সবসময় দেই ব্লগারদেরকে। অরূপকে অনেক ধাক্কাধাক্কি করেছি মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানির কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখার জন্য।
আমি নিজে গবেষণার একাকীত্ব নামে কয়েক পর্ব লিখেছিলাম সামহোয়ার ইনে। তাছাড়া জ্বিনের বাদশাকে উত্সাহ দিয়েছিলাম তার পিএইচডি বিষয়ক লেখাটা নামানোর জন্য।
পরে গন্ডগোলে নিজের থিসিস নিয়েই লেখা হয়নি। আপাতত: তিনটি লেখা মাথায় আর অর্ধেক ল্যাপটপে রয়েছে। সেগুলো গেলে আবার থিসিসটার কথা ভাবতে হবে।
ধন্যবাদ। এই সময়ের বিজ্ঞানীদের চিন্তা ও আবিষ্কার-ভাবনার সাথে কিছুটা যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার কারণে।
অন্যান্যরাও নিজের দিনলিপি লিখতে পারেন। এরকম বিচিত্র বিষয় নিয়ে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার লেখাটা বিজ্ঞানী.কম-এ দেবার কথা ভাবতে পারেন। শামীম ভাই এটা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা এইধরনের উদ্দেশ্য নিয়েই যাত্রা করেছে-- নিজের গবেষণা বাংলাভাষায় সহজ সরল করে উপস্থাপন। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র না হয়েও বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে। বেশ কিছু বিষয় আসলে এরকম লে-ম্যান ভাষায় লিখে ফেলা যায়। সবাই বুঝতে পারবে কি নিয়ে কোথায় কি কাজ হচ্ছে। আরও লেখার অনুপ্ররনা পেলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
তাওয়া গরম থাকতেই পরোটা ভাজতে হয়। তাই আমার প্রস্তাবটাও নামিয়ে দিলাম এখানে (আমার ব্লগে)
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
নতুন মন্তব্য করুন