গলাগলি, দলাদলি এবং সফল প্রতিষ্ঠান

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শনি, ২১/০৬/২০০৮ - ১০:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১। দলবাজী শেখা
বুয়েটে যখন পড়ছি তখন আমরা সবে মাত্র উঠতি বয়সী। এক ক্লাসে সমবয়সী ৭০ জন ছেলেপিলে, এক ডিপার্টমেন্টে ১৩০, আর পুরো উইনিভার্সিটি জুড়ে প্রায় ৭৫০। দেখা গেল বিভিন্ন কম্বিনেশনে দলাদলি গড়ে উঠছে। কয়েকজন ছেলেপিলে এবং মেয়েপিলে কয়েকদিন একসাথে গলাগলি বন্ধুত্ব শেষে অনুভব করে যে তারা সবাই একটি "দলের" এবং তাদের "দলের" সবাইকে রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব।

আমি শুরু থেকেই ব্যাপারটা এভয়েড করতাম। তবু কেমনে কেমনে যেন একটা "দলের" সদস্য হয়ে গেলাম। তখন খেয়াল করেছিলাম যে এই দলাদলির কয়েকটা পর্যায় আছে:
১। পরিচয় - সবে মাত্র পরিচয়। সবাই সবার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। এই সময় অন্য দলের সাথে খুব কোন্দল হয়। কাদের দল সেরা সেটা নিয়ে একটা প্রতিযোগীতা চলে। দলের সবাই সেটা খুব এনজয় করে।

২। পার্সোনাল উপলব্ধি - দলের কারো গোপন ব্যাপার জানা। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। এসময় দলের মধ্যেই কেউ একটু বেশী কাছের এবং কেউ বেশী দূরের হয়ে যায়।

৩। কোন্দল - এ পর্যায়ে এক বা একাধিক বন্ধুর সাথে ঝগড়াঝাটি হয় এবং ক্রমান্বয়ে প্রায় পুরো দলটাই আলাদা হয়ে যায়।

৪। রিইউনিয়ন - সময় আবার ক্ষত সারিয়ে দেয়। এবং দলটা আবার একত্র হয়। কিন্তু পুরোনো সুর আর বেজে উঠে না।

মাস্টার্স করার সময় ঠিক করলাম এরকম দলবাজী বা রাজনীতি করব না। প্রথমতঃ আমি বাঙ্গালী কমিউনিটির এইসমস্ত বিষয়ে সহজে মিশতাম না। দ্বিতীয়তঃ ইউনিভার্সিটির কোন গ্রুপের সাথেও খুব বেশী মিশতাম না।

এতে লক্ষ্য করলাম আমি ওই জায়গা গুলোতে যেন থেকেও নেই। শেষ মেষ ঠিক করলাম, যে বন্ধু পেতে হলে মিশতেই হবে।

২। দলবাজী থেকে সৃষ্টি
আমি এর আগে একটি অনলাইন কমিউনিটির সদস্য ছিলাম। অনেক বেশী লোকের আনাগোনা সেই কমিউনিটিতে অবধারিত ভাবে দলাদলি হত। আমি এবং আরো কিছু সহজ সরল ব্যক্তি খুব চেষ্টা করতেন সেই সব দলাদলিতে না জড়াতে। দলাদলিতে না জড়ানো সম্ভব। কিন্তু সেক্ষেত্রে আপনাকে থাকবেন বন্ধুহীন।

শেষমেষ যখন সেখানকার পরিবেশ সত্যিই করুণ তখন একটি বিশেষ চিন্তা ধারার লোকেদের সাথে আলোচনা শেষে সেখান থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু করার চিন্তা ভাবনা করি। সেই থেকেই সচলায়তনের জন্ম।

৩। একটি সফল প্রতিষ্ঠান
আমরা দলবাজীর কুফল জানতাম বলেই সচলায়তনে দলবাজী প্রথম থেকেই বন্ধ করতে চাইছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল যেন ৪/৫ জনের একটি বিশেষ দল দানা বেঁধে না উঠে। সবাই যেন বৃহত্তর সচলায়তন পরিবারের অংশ মনে করেন নিজেকে। আমাদের ধীর সচলীকরন পদ্ধতি করাই হয়েছে যাতে নতুন সচল সচলায়তনের বৃহত্তর পরিবারে মিশতে পারেন ভালোভাবে। প্রায়ই আমাদের এক-দুজন সচল এই ব্যাপারগুলো মানতে না পেরে নানাবিধ কারন আশ্রয় করে বিদায় নেন।

কিন্তু তারপরও কি আমাদের মধ্যে সুক্ষ্ণ দলাদলী গড়ে উঠেনি? আমি তো পরিষ্কার দেখতে পাই, নারী ব্লগারদের একটি জোট, কবিদের একটি জোট, গল্প লিখিয়েদের একটি জোট গড়ে উঠেছে।

ছোটখাট দলাদলির ব্যাপারটা থাকতে পারে। নইলে মানুষ বন্ধু পাবে কিভাবে?

কিন্তু আপনাদের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, দলাদলি বা দলীয় রেষারেষি থেকে বেরিয়ে আসুন। নিজেকে বৃহত্তর অংশের একজন বলে ভাবতে শিখুন। ছোটখাট ব্যাপারগুলো ইগনোর করতে শিখলেই, আপনার কাছে থেকে বেরিয়ে আসবে অসাধারন সব সৃষ্টি।

একটি সফল ব্লগ হিসেবে সচলায়তনকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আপনার কাছে আমার এই অনুরোধটুকু থাকল।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনাদের কাছে প্রশ্ন:
১। দলবাজী কি ভালো হতে পারে? কোনো উদাহরন দিতে পারেন?
২। অফিসের দলবাজী কিভাবে তৈরী হয়? কিভাবে এড়ানো যায়?
৩। দলবাজী একটি দেশের প্রেক্ষিতে কতটা ব্যাপক এবং ভয়াবহ হতে পারে?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এনকিদু এর ছবি

১.
না । দলবাজী অনেকটা কুয়ার ব্যাং হয়ে বসে থাকার মত । পৃথিবী অনেক বড় । দলবাজদের জায়গা না ।

২.
আমার নিজের কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা বলতে পারি । আমি দেশের বাইরে কখনো কাজ করার সুযোগ পাইনি, আমার অভিজ্ঞতা দেশের ভেতরের কাজের পরিবেশের সাথে মিলবে ঠিকই, বাইরের পরিবেশের সাথে জানিনা খুব একটা মিলবে কিনা ।

কর্মক্ষেত্রে (এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও) অগ্রাধীকার, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদির পাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কিছু expectation থাকে । যখন এসব expectation বা "আশা"র সাথে বাস্তবতা মিলে না তখন আমরা একে অপরকে ঈর্ষা করতে থাকি । একধরনের হীনমন্যতাবোধ জন্ম নেয় । ধরে নিই আমার সাথে অন্যায় করা হয়েছে । খূঁজে বের করতে চেষ্টা করি আমার মত অন্য কেউ আছেন কিনা যিনি মনে করেন তার সাথেও অনুরুপ অন্যায় করা হয়েছে । খুঁজে পেলে দুই-ভাইয়ে মিলে অনেক রাজা উজির মারি । তারপর বিপ্লব করে একদিন দুনিয়াটা(অফিস) বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকি । এই ভাবে দলাদলী শুরু হয় । তারপর আমরা আমাদের আন্দোলনকে আরো বেগবান করার জন্য সমমনা আরো লোকজন জড়ো করা শুরু করি । এভাবে দলাদলী বড় আকার ধারন করতে থাকে । যথেষ্ট কোমরের জোর হয়ে গেছে মনে হয় যখন তখন অপর দলটি, যারা আমাদের থেকে অন্যায় ভাবে বেশি সুবিধা নিচ্ছে বলে আমাদের ধারনা তাদের পিছনে লেগে যাই ।

কিন্তু এতকিছু না করে আমরা যদি একবার ভাল করে নিজেদের কাজ কর্মের মানের দিকে তাকিয়ে দেখতাম তাহলে হয়ত দেখতাম তাদের কাজের ধরন এবং মান আমার থেকে অনেক ভাল । ভাল বলেই তাকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে । এটা মেনে নিতেই হবে । সে বয়সে ছোট হতে পারে । তথাকথিত ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাও হতে পারে । জৌলুসময় বিদেশী ডিগ্রি নাও থাকতে পারে । কিন্তু কর্মক্ষেত্রে সে একজন দক্ষ লোক বলেই যোগ্যতার দাম পাচ্ছে আর আমি উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য গুলোর একাধিক অর্জন করেও আগাতে পারছিনা কারন আমার কর্ম দক্ষতার অভাব । এখানে দলাদলি করার কিছু নেই । তাকে ছাড়িয়ে যেতে হলে কাজ দেখিয়েই যেতে হবে । এই বোধটা সবার ভেতর কাজ করলে মনে হয় দলাদলী হবে না ।

আসলে এই ব্যাপার গুলো অনেক জটিল হয় । অন্তত এখানে একটা মন্তব্যে বলে শেষ করার মত না । আলাদা ব্লগ পোস্টানো দরকার । এটা নিয়ে লেখার ইচ্হা আছে, দেখা যাক কবে লেখা হয় ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍
আপনার অবতাটির শানে নযুল কী, ভাই?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মাহবুব লীলেন এর ছবি

দল বলতে আগে বোঝাতাম রাজনীতির দল (যখন করতাম) আর এখন করি নাটকের দল

এই দুটোকেই আমি ভালো বলে মনে করি
(যদিও মাঝে মাঝে লোকজন আমাকে কেউ কবিদের দলে আর কেউ ফাউলদের দলে ফেলে দেয়)

০২

সচলায়তন নিয়ে সংশয়টা আমার কাছে কেমন যেন লাগছে
সচলায়তনে কি ওরকম কিছু ঘটছে কিংবা ঘটেছে?

কে জানে
আমি দৌড়ের উপরে পড়ি আর উড়ার উপরে কমেন্ট করি
যদি সত্যি ঘটে থাকে কিংবা ঘটতে যায় তবে দুঃখজনক
তখন নির্ভেজাল পড়া আর ঝেড়ে কমেন্ট করা যাবে না আর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমি কোন্দলের?! চিন্তিত

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আরিফ জেবতিক এর ছবি

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

তারা সিস্টেমে আমার বিশ্বাস নেই, আস্থাও না।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍আমি তো পরিষ্কার দেখতে পাই, নারী ব্লগারদের একটি জোট, কবিদের একটি জোট, গল্প লিখিয়েদের একটি জোট গড়ে উঠেছে।

মানতে পারলাম না। কবির সঙ্গে কবির সখ্যতা হতেই পারে, গল্পকারদের ক্ষেত্রেও তা সত্য। একজন সচলা আরেক সচলার প্রতি একটু বেশি সহানুভূতিশীল হতে পারেন। আমার কাছে তা অস্বাভাবিক মনে হয় না, মনে হয় না অশুভও।

সচলায়তনের মাধ্যমে কিছু কিছু সচলদের মধ্যে ভার্চুয়াল ঘনিষ্ঠতা গড়ে হয়তো উঠেছে (এবং তাতেও অহিতকর কিছু আমি দেখি না), কিন্তু সেটাকে আমি "দলাদলি" বা "জোট" আখ্যা দেয়ার বিরুদ্ধে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

পুরোপুরি একমত।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমাদের মাঝে দল উপদল থাকবেই। হোক প্রকাশ্যে কিংবা হোক আড়ালে। ওই যে বললেন-
উদ্ধৃতি
বন্ধু পেতে হলে মিশতেই হবে।

ভ্যাজালটা অনিচ্ছাকৃতভাবেই ঘটে যায় মিশতে গিয়ে। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু তার প্রকাশ যদি অশোভন হয় তাহলে তা সত্যিই দুঃখ জনক।

উদ্ধৃতি
একটি সফল ব্লগ হিসেবে সচলায়তনকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আপনার কাছে আমার এই অনুরোধটুকু থাকল।

আপনার অনুরোধে আশাকরি আমরা সবাই একবাক্যে সাড়া দিতে পারবো।

পোস্টের জন্য এস এম মাহবুব মুর্শেদ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

উদ্ধৃতি
আপনাদের কাছে প্রশ্ন:

১. উত্তর: দলবাজীর সুফল নেই।

২. উত্তর: অফিসের দলবাজী সুবিধার উপর নির্ভর করে। সেই ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ থাকা প্রায় অসম্ভব। আবার সব দলের সঙ্গে তাল মিলাতেও নাভিশ্বাস উঠার দশা। কম হিংস্র এমন কোনো একটি দলের সঙ্গে এই আছি আরকি ধরনের সম্পর্ক রক্ষা করা ছাড়া পথ দেখি না।

৩. দলবাজী দেশের পক্ষে ভালো-মন্দ দুটোই হতে পারে। তার আগে দেখতে হবে কোন শক্তিটি দেশের স্বার্থ নিয়ে ভাবছে। অবশ্যই দেশপ্রেমের ক্ষেত্রে ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

আলমগীর এর ছবি

দলাদলি থাকবেই। মানুষের কেমন যেন একটা বৈশিষ্ট হলো নিরাপত্তা বা কিছু লাভের আশায় জোট করা বা জোট ভাঙা। এই জোট হরেক রকম হতে পারে। দেশে হিন্দু-মুসলিম দিয়ে শুরু হয়, স্থানীয়-অস্থানীয়, ইঞ্জিনিয়ার-নন-ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসন- ননপ্রশাসন ক্যাডার, এরকম অনেক। কিছু ভাল দিক আছে, আবার কিছু শ্রেফ স্বার্থ চালিত।

সচলাদের দল গঠনের শক্তিটা আসে মনে হয় অন্য উৎস থেকে। আমরা অনেকেই বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে হুমড়ি খেয়ে পড়ি। নারী সদস্যরা প্রচুর আনসলিসিটেট মেসেজ/ইমেল পান পুরুষদের থেকে। প্লাটফর্ম হিসাবে সচলায়তনের কী করার আছে তাও জানি না।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

১। বুঝা যাচ্ছে সিরিয়াস কিছু ঘটেছে
কিন্তু মাথার উপর দিয়া যাচ্ছে

২। দলবাজি ব্যাপারটা কি জিনিস
কি তার মাহাত্ম বা কুফল তা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে
বলা আমার সম্ভব না
কারন আমি নিজে কখনো এর সাথে যুক্ত ছিলাম না
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমাকে এজন্য গালি
শুনতে হয়েছে
এবং সর্বদা সজ্ঞানে আমি দলবাজি এড়িয়ে যাই

৩। আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে আমি ১ টা বাংলা ব্লগ চিনি "সচলায়তন "
এছাড়া আরো অনেক ব্লগ আছে
অনেক সচলের ব্যক্তিগত ব্লগও আছে
কিন্তু আমার ব্লগ ঐ একটাই "সচলায়তন "

৪। একটা ব্লগ এর মাধ্যমে এত স্বল্প সময়ে এত বন্ধুত্ব বা ভার্চুয়াল ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠতে পারে তা' আমি নিজে ব্লগার না হলে বিশ্বাস করতাম না
এখানে কাউকেই (অভি -বন্যা ব্যতিত ) আমি আগে চিনতাম না
আর এখন আমি শুধু সচলদেরই চিনি আর কাউকে না
এক সময় পত্রিকায় লিখতাম নিয়মিত কিন্তু এখন আর সেখানে লেখা হয়না

৫। আমি নিজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও বিশ্বাসি

৬। সচলায়তন বন্ধুত্বপুর্ন পরিবেশে বিশ্বাসি
আর সেই বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কের নিদর্শন কিন্তু ইয়ার্কিও যেটা হরহামেশা এখানে হয়

৭। একটি সফল ব্লগ হিসেবে সচলায়তনকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমাদের কি কি করতে হবে
আমরা যে একমত বা দ্বিমত প্রকাশ করি সেটাও ত'
এক প্রকার দলবাজি
আমার কিছু লেখায় হাসান মো্রশেদ বা তার লেখায় আমার সায় প্রকাশ করি তবে কি হাসান -মানিক একজোট !

৮। এখানে ত' আমরা চিন্তা চর্চা করি
চিন্তার সাথে চিন্তার মিল দ্বন্দ্ব হতেই পারে নাকি

৯। যেমন এই ব্লগে আমি সংসারে এক সন্ন্যাসী , হাসান মো্রশেদ, আর আরিফ এর মন্তব্যের সাথে একমত
তার মানে কি আমরা চারজন একজোট!

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জানি না এই পোস্ট এর শান-এ-নযুল... কিন্তু হয়তো যতটুকু লেখা হয়েছে তারও গভীরে আছে আরো কিছু... হয়তো এখানে আছেন অনেক আকালমান্দ... তাদের হয়তো ইশারাতেই কাফি... কিন্তু আমারও আসলে মাথার উপর দিয়াই গেলো।

অন্য অনলাইন কমিউনিটির অস্থির এবং অরুচিকর দলাদলির বদৌলতেই সেদিকে এখন আর পা পরে না। এখন কেবল সচলায়তনেই আমার সব ব্লগরব্লগর। ব্যস্ততার ফাঁকে উঁকি দেওয়ার এক আকাশ... আমার সবটুকু প্রকাশের আঙিনা... সবচেয়ে স্বজন...। কারো কাছে যা বলতে পারিনি কখনও সচলায়তনে বলে ফেলতে পেরেছি অনায়াসে। বাবাকে ভালোবাসার কথা বাবাকে বলা হয়নি কখনো... সচলায়তনে জানা হয়ে গেছে। এরকমই।

অনেক সচল... সকলের সাথে পরিচয় নেই। ব্লগেও দেখা যায় না অনেককে। তবে কিছু সচলের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগটা হয়েই গেছে। কিন্তু তাই নিয়ে কখনো দলাদলির বিষয়টা মাথায় আসেনি। আপনার পোস্ট পরে বিষয়টা ভাবতেও কষ্টই হচ্ছে।
সহমত বা দ্বিমতের সাথে দলাদলির যোগ আসলে কতটুকু? আমি একই জনের এক মন্তব্যে সহমত করতে পারি আবার তারই অন্য মন্তব্যে দ্বিমতও করতে পারি, এবং করিও আসলে। মতের বিষয়টা একেবারেই কেবল মতের উপরই নির্ভর করে বোধহয়... ব্যক্তি সেখানে বড় হয়ে ওঠে না।
রেটিং এবং সেরা লেখক সেরা লেখা... এইসব প্রবর্তনের ফলে ব্যক্তি ইমেজ কিছুটা প্রভাব ফেলছে এটা আমার কয়েকবার মনে হয়েছে। কিন্তু সেটাকেও দলাদলিতে ফেলার কথা আগে ভাবিনি।

এখন একটা প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে... এই পোস্টটি কি নতুন করে দলাদলিকে উৎসাহ দিবে?

তবে তা না হউক সেটাই আশা করি। সচলায়তনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশটা খুব উপভোগ করি... তাই হয়তো এত আপন ভাবতে পারি। এটাই থাকুক অটুট।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

নজরুল এবং মানিকের কথায় আমি একমত। বিশেষত নজরুল সব শেষে যে প্রশ্নটি রেখেছে, সেটা নিয়ে। আর সন্ন্যাসীর মতোই আমিও মানতে পারলাম না এখানে দলাদলি বা জোট তৈরি হয়। ভালো লাগা থেকে অনেকে কাছাকাছি হয়, তার মানে এই না যে, তারা জোট গঠন করছে! আর অন্য ব্লগে কী হয় জানি না, জীবনে একটা ব্লগেই ঢুকেছি, সেটা সচলায়তন। এবং আশা করি সারাজীবনই থাকব। মরার আগমুহূর্ত পর্যন্ত।
নিজেকে একজন লেখক মনে করি, তাই সবার ভেতরে লেখক সত্ত্বাকে খুঁজে বেড়াই। সচলায়তনকে আমি ঠিক ব্লগও মনে করি না। এটা আমার কাছে ডানা মেলার আকাশ। আমার সৃজন আর চর্চার জায়গা।
স্বপ্ন দেখি, এই সচল থেকে বাংলাদেশের একটি নতুন লেখক প্রজন্ম বেরিয়েছে। যারা ধুয়েমুছে দিয়েছে আগের সব জিনিস। নতুন ভাষায় নতুন ধারণায় দেশবিদেশের সাহিত্যকে তুলে ধরেছে বাংলাভাষায়।
খেঁকশিয়াল কয়াইদান অনুবাদ করছেন বেশ কিছুদিন। আমি লেগে আছি তার পেছনে। স্বপ্নের স্প্রিং-চাবি ঘুরিয়ে দিয়েছি, একটা বই বের করতেই হবে! খেঁকশিয়ালের এই নিয়ে কোনো স্বপ্নও ছিল না, এখন তিনি স্বপ্ন দেখেন। এবং কয়াইদান সিরিজ যখন বই হয়ে বেরোবে, এটি হবে বাংলা ভাষার অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ জিনিস!
এখন, আমি কি সাহিত্যিকদের জোট গঠন করছি? ব্লগারদের জোটকে হটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি?
এরকম অনেক প্রশ্ন আসবে। আমি জানি না মুর্শেদ ভাই, আপনি এত কিছুর উত্তর দেয়ার জন্য প্রস্তুত কিনা। তবে আপনি যে পজিটিভ কথাটি বলতে চেয়েছেন, সেটি আমি ধরতে পেরেছি!
দলাদলির সূক্ষ্নতম ব্যাপারটি কারো মধ্যে যদি থেকেও থাকে, তাহলে সেটি থেকে বের হয়ে আসা উচিত।
তবে আপনার লেখাটি পড়ার পর থেকে কেমন ধরনের একটি বিমর্ষতা অনুভব করছি। জানি না কেন, হয়ত যে বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না, সেই বিষয়ে কথা বলার সময় আমাদের মধ্যে এরকম বিমর্ষতা ভর করে। যাই হোক, আমাদের পারস্পরিক ভালোবাসার স্রোত সবসময়েই থাকুক বেগবান, জয় হোক সচলায়তনের!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

জয় সচলায়তন

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

আকতার আহমেদ এর ছবি

ইয়াবা নিয়ে বেশ কিছুদিন হৈচৈ হলো দেশে । যার সুফল কী হয়েছে জানিনা.. মাঝখানে যেটা হয়েছে.. যারা ইয়াবা সম্পর্কে জানতো না তাদের মধ্যেও একটা আগ্রহ তৈরী হলো । আমি সবচে' বেশি স্বস্তি পাব মুর্শেদ ভাই এর এই পোষ্ট সচলে দলাদলি নিয়ে একটি বারের জন্যও না ভাবা মানুষগুলোর চিন্তাকে প্রভাবিত না করলে ।
সত্য-সুন্দরের জয় হোক
জয় হোক সচলায়তনের

নজমুল আলবাব এর ছবি
পরিবর্তনশীল এর ছবি

সহযাত্রী।

---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অমিত আহমেদ এর ছবি

একসাথে অনেকজন থাকলে কিছু মানুষের আলাদা সখ্যতা হবেই। একদৃষ্টিতে সবাইকে দেখতে পারিনা বলেই আমরা মানুষ। যে কোনো প্ল্যাটফর্মে, যে কোনো অনুষ্ঠানে, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একাধিক মানুষ থাকলেই ছোট ছোট সাবগ্রুপ তৈরি হয় এবং হবে। আমার একদঙ্গল চাচাতো-খালাতো-মামাতো-ফুপাতো ভাইবোনের সবার সাথেও আমার সমান আন্তরিকতা নেই। কেউ খুব কাছের, কেউ অতটা কাছের নয়। এটি স্বাভাবিক... এটিই মানব ধর্ম, এবং এজন্যই আমার মনে হয় না মুর্শেদ ভাই এই বিষয়টিকেই "দলাদলি" বলছেন।

"দলাদলি" বলতে আমি যা বুঝেছি তা হলো সঠিক-বেঠিক নির্বিশেষে ব্যক্তিগত কিংবা সামগ্রীক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য দলবেঁধে কাজ করা। স্বার্থ ব্যাপারটি আপেক্ষিক - অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আলোচনার কেন্দ্রে থাকার অসুস্থ মনোভাব থেকে শুরু করে কোনো বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়া - এই সবই স্বার্থ সম্পর্কিত। তবে এটি সচলায়তনে নেই বলেই আমি জানি। ব্যাপারটি আমাদের এবং সচলের ব্যক্তিত্বের সাথে মেশে না বলে এমন উদ্যোগ সফল হবে বলেও আমি মনে করি না। যদি এমন কোনো কিছু দেখা দেয় তবে কর্তৃপক্ষ তো আছেনই।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

একমত @অমিত আহমেদ

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

>আমার মনে হয় মুর্শেদ যা বলতে চেয়েছেন তা আমরা বুঝতে পেরেছি। ভাল লাগার বৃত্ত তৈরি হওয়া দোষের কিছু নয়, কিন্তু সেটা যদি দৃষ্টিকটু হয়, অন্যদের ভাল লাগার পরিবেশে ব্যাঘাত করে তবে চিন্তার বিষয়। যেহেতু কোথায় কী ঘটে তার সবটুকু জানি না, সেহেতু এ ব্যাপারটা যারা সচল বানিয়েছেন এবং নীরবে চালিয়ে নিচ্ছেন তাদের হাতেই ছেড়ে দেয়া ভাল। আমাদের কিছু করার থাকলে নিশ্চয়ই তা তাঁরা জানাবেন। এবং মাঝে মাঝে এসএমএস দিয়ে হলেও বা সন্দেশের ঘরে হলেও সেটা করা যেতে পারে। কিংবা নীড়পাতার এক কোনায় একটা নোটিশবোর্ডও ঝুলানো যেতে পারে: প্রশ্ন ও উত্তরের জন্য।

>তবে আমার অনুরোধ থাকবে, কোথাও কোনো বাষ্প বা ঘূর্ণি দাঁনা বাঁধার লক্ষণ দেখা দিলেই নিবিড় পরিচর্যায় যেন বিলম্ব না হয়। বিলম্বে বাষ্প মেঘ হয়ে যায় এবং অকাল বৃষ্টিপাত ঘটায়।

>তবে চিন্তা, ভাব বা আন্তরিকতার নৈকট্য নিয়ে মনে হয় না উদ্বেগের কিছু আছে। তবে সেটা যাতে দৃষ্টিকটু না হয়ে ওঠে, ওপরের স্বচ্ছ্যন্দ বিচরণের পরিবেশকে ব্যাহত না করে, সেটা দেখার দায়িত্বটা কিন্তু আমাদেরই বেশি, যারা লিখি পড়ি এবং মন্তব্য করি।

>তবে শতফুল ফুটতে দেয়া, একটা সাধারণ ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঝোঁক কারো মধ্যে আসতেই পারে। তা নিয়ে আলোচনা-বিতর্ক ইত্যাদিও চলা স্বাস্থ্যকর। কোন্দলটা হয় যে অশ্রদ্ধাবোধ থেকে সেটা যাতে আমরা প্রকাশ করে না ফেলি, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

>আমি দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা-বিতর্ক-পলেমিকস এর পরিসরে বেড়ে উঠেছি। সেখানে মতান্তর থেকে মন্বন্তর পর্যন্তও হয়। বিতর্কে ঝাঁঝও আসে। তবে যেখানেই অপরের মত বা যুক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা আসে, সেখানেই সমস্যা হয়। আমার নিজের ভাষাভঙ্গিমা কখনো কাউকে আহত করে থাকতে পারে, এখানে সেটার একটা আত্মসমালোচনাও করে রাখছি। পাশাপাশি এও মনে করি যে, বিতর্ক তীব্র হলেই সেটা কিন্তু কোন্দল নয়।

সচলায়তন দীর্ঘজীবী হোক, এখনকার মতো খোলা হাওয়ার পরিবেশ বজায় রেখেই তা প্রসারিত হোক। সচল আমাদেরও এবং আমরাও সচলের।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রেনেট এর ছবি

সচলায়তন একটি সুখী পরিবার বলেই আমার বিশ্বাস। আর এই পরিবারের সদস্য হতে পেরে আমি গর্ববোধ করি।
সচলে কোন ভাঙন ধরবে না, এই বিশ্বাস নিয়ে থাকতে চাই।

-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।