এটা পরের দিন রোববারের কাহিনী। সেদিন বেশ কয়েকটা স্পটে ঝটিকা সফর দিয়ে কেটেছে।
প্রথমে গেলাম চৌদ্দ হাজার ফিট উপরে পাইকস পীক নামে একটা পাহাড় চুড়ায়। অদ্ভুত সুন্দর জায়গাটা। কিন্তু এতো উঁচু হবার কারনে প্রচন্ড ঠান্ডা আর বৃষ্টি প্রবন। অক্সিজেনেরও অভাব বোধ করলাম আমি।
ঠান্ডার মাঝে নেমেই আমরা ভাবলাম কিছু খেয়ে নেই। কফি টফি না হলে ঠিক জমছে না। আমি আর মৌটুসী জ্যাকেট নিয়ে যাইনি। মৌটুসী রুহীর একটা চাদর জড়িয়ে নিল। আর আমি গেঞ্জির উপর একটা শার্ট পরে নিলাম। তবু ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলাম। এত উপরে যে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস নিতেও সমস্যা হচ্ছিল।
খানিকক্ষন ঘোরাঘুরি করতেই হঠাৎ তুষারবৃষ্টি শুরু হল। পাহাড়ের নীচে ৮০ ডিগ্রী ফারেহনহাইট আর উপরে তুষারবৃষ্টি! আমরা দৌড়ে গিয়ে উঠলাম গাড়িতে। তারপর ফেরার জন্য তাড়া।
সকাল বেলায় হোটেল থেকে বেরুনোর সময় গাগান লক্ষ্য করেছিল গাড়ির ফুয়েল শেষ হলো বলে। কিন্তু সে পাত্তা দেয়নি ব্যাপারটা, এখন নিচ্ছি তখন নিচ্ছি করে তেল ভরেনি ব্যাটা। তাই নীচে নামার সময় হঠাৎ করে ফুয়েল ইন্ডিকেটরে লাল আলো জ্বলে উঠল। শুরু হল আমাদের টেনশন। রাস্তা আর শেষ হয় না, তেলেরও দেখা মেলে না।
যারা গাড়ি নিয়ে খাড়া পাহাড় চড়েছেন তাদের আইডিয়া আছে নিশ্চয়ই যে পাহাড় থেকে নীচে নামার সময় ক্রমাগত ব্রেক চেপে রাখার ফলে ব্রেক প্যাড প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। শেষমেষ সেটা গলে গিয়ে ব্রেকফেইল এবং এক্সিডেন্ট পর্যন্ত হতে হয়। এরকমটা আগে একবার হয়েছিল আমাদের। তবু আমরা লক্ষ্য করিনি যে আমাদের গাড়ির ব্রেক পুড়ে গাড়ির ভিতর ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছে।
পাহাড় থেকে নামার মাঝপথে একজন পার্ক রেঞ্চার ছিলেন দাঁড়িয়ে। তিনি সব গাড়ি থামিয়ে সেগুলোর ব্রেকের তাপমাত্রা মাপছিলেন। আমাদেরটা মাপলেন - ৭৫০ ডিগ্রী সেন্টগ্রেড (নাকি ফারেনহাইট?)। জানালেন ৩৫০ ডিগ্রী হলেই নাকি সেটা সেইফ লিমিট ছাড়িয়ে যায়। সুতরাং আমাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে এক ঘন্টা রেস্ট নিতে হবে।
অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টাক্রান্ত আমি ঘুমাচ্ছিলাম। উঠে এসব শুনলাম। চুপচাপ গাড়ির ভিতর আড্ডা টাড্ডা দিয়ে দুই দফায় ঘন্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে যখন পাইকস পিক পাহাড়ের পাদেদেশে পৌছলাম তখন আমরা শিওর যে ফুয়েলের অভাবে যে কোন মুহুর্তে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে।
গাড়ি থামিয়ে এক দোকানে গেল গাগান জিজ্ঞেস করতে সবচেয়ে কাছের তেল স্টেশন কোনদিকে। মহিলা জানালেন উত্তরে ৬ মাইলের মতো যাও। গাগান কাঁদো কাঁদো ভাবে শুধায় আরো কাছে কিছু নাই, আমাদের তো গ্যাস শেষ হলো বলে। মহিলা এর মাঝেও ঠাট্টা করতে ছাড়ে না। বলে যাও তোমাদের জন্য ৫ মাইল। :|
কি আর করা ইয়া নফসী, ইয়া নফসী করতে করতে উত্তরে রওনা দিলাম। ভাগ্য ভাল বলতে হয় যে গ্যাস স্টেশন পর্যন্ত পৌছতে পারলাম আমরা। তবে গাগানকে এহেন নিবুর্দ্ধতার পরিচয় দেবার জন্য প্রচন্ড তিরস্কার করা হল।
এরপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া। খাওয়া শেষে গেলাম কেইভ অভ দ্যা উইন্ডস নামে এক জায়গায়। শুনেছিলাম এখানে নাকি অনেক পুরোনো অ্যাডভেঞ্চারাস কিছু গুহা আছে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম তেমন আকষর্ণীয় কিছু হবে না, তদুপরী অত টাকা টিকেট কেটে শুধু গুহা দেখার কোন মানে নাই। তাই খানিকক্ষণ সময় কাটিয়ে চললাম গার্ডেন অভ গডস নামে এক জায়গায়।
এই জায়গাটা সবুজ একটা বনভুমির মধ্যে বিচিত্র সব পাথর নিয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা জায়গা। বিভিন্ন পর্যায়ে ভুখন্ডে পরিবর্তনের জন্য তৈরী হয়েছে এই সৌন্দর্য্য। এব্যাপারে একটা এনিমেটেড মুভি দেখে বেশ খানিকক্ষন ছবি টবি তুলে আমরা রওনা দিলাম সেভেন ফলসের উদ্দেশ্যে।
সেভেন ফলস বা সাতটি ঝর্নাধারা শুনে মনে হতে পারে যে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন ঝর্না আছে সেখানে। কিন্তু আসলে একটি ঝর্নাই সাতবার বিভিন্ন স্টেজে পাহাড় থেকে পড়েছে বলে এটার নাম সেভেন ফলস। দেখে আমরা একটু হতাশই হলাম। ক্লান্ত ছিলাম বলে সিঁড়ি না ভেঙ্গে লিফটে করে একটা জায়গায় উঠলাম যেখান থেকে ফলস খুব ভাল দেখা যায়।
নীচ রেড ইন্ডিয়ান ড্যান্স হচ্ছিল। কিন্তু নেমে দেখতে ইচ্ছে করছিল না। সন্ধ্যে ঘনাতে ফলসটার উপর আলো ফেলে আলোকিত করা হল। সেটা দেখে, কয়েকটা ছবি তুলে ফিরতি পথে রওনা দিলাম আমরা।
শেষ কয়েকটা ঘন্টা কেটেছে অসম্ভব ব্যস্ততায়। এক ইন্ডিয়ান দোকান থেকে খাবার তুলে, ঘন্টা তিনেক ড্রাইভ করে ডেনভারে ফিরে, হোটেলে চেকইন করে, গাড়ি ফেরত দিয়ে এসে দেখি রাত তিনটা বাজে। ভোর পাঁচটায় ফ্লাইট ধরতে হবে। চোখটা কোন রকমে একটু বন্ধ করে আবার দৌড়। ফিরলাম সোমবার সকাল সকাল - ব্যস্ত ক্লান্ত এক শহরে।
মন্তব্য
ভাসায় দিমু আইজকা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ভাসান ভাসান
ছবি, বর্ণনা দুইটাই চলুক সমানে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
কত হাজার ফুট উপরে?
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জ্বী উস্তাদ ঠিকই লিখেছি, ১৪ হাজার ফুট। ভিডিও দিবো একটা সেখানে সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ওয়াও । আমি ন'হাজার পর্যন্ত উঠেছি অরুনাচলে ।
১৪ হাজার , রিয়েলি গ্রেট! অক্সিজেন সর্টেজ হবার কথা ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভিডিও জুড়ে দিলাম। খানিক পরে দেখতে পাবেন, সময় লাগে আপডেট হতে।
আসলেই অন্যরকম সুন্দর জায়গাটা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কঠিন!!!ভালো লাগল
অনেক ধন্যবাদ জলদস্যু।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দারুন লিখেছেন! ছবিগুলোও অসাধারণ সুন্দর! আর আপনাকে খুব হিংসে করতে ইচ্ছে করছে...এতো বছর পাহাড়ে, বনে-বাদাড়ে ঘুরলাম,কিন্তু আপনার মতো করে পাহাড় দেখা হলো না।...
-বিপ্লব রহমান
অনেক অনেক ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পুরোটা তুলে দিলে বিশাল হয়ে যাবে হয়ত। তবু তুলে দিবো। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ভ্রমনকাহিণীগুলো নিয়ে আলাদা ব-e খুলে ফেলুন।
ভাল বুদ্ধি। মাথায় আসেনি তো! থ্যাঙ্কু আপনাকে। অনেক অনেক পুরোনো একটা অসমাপ্ত ভ্রমন কাহিনী আছে সেটা শেষ করতে হবে আগে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নতুন মন্তব্য করুন