পিটস্‌বার্গের ধুসর পান্ডুলিপি - ০০৩

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/০৯/২০০৮ - ৯:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শীত নামছে। আবহাওয়া গ্রাফের দিকে তাকিয়ে দেখি কি করে তাপমাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে নামবে সামনের দিনগুলিতে। আজকে সকালে বেরিয়ে দেখি কুয়াশা। চারদিকে কুয়াশার নিকশ কালো চাদর। তখন বাজে সকাল ৯টা। কুয়াশা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলেও অফিসে পৌছাতে তেমন সমস্যা হল না।

ডেভলপমেন্ট সাইকেলের শেষে দিকে চলে আসছি দেখে খুব চাপ এখন। গিয়েই দেখি ম্যানেজার ইমেইল করেছে। কয়েকটা ডক্যুমেন্ট তৈরী করতে হবে। সুতরাং আগে থেকে ভেবে রাখা আজকের কাজটুকু তুলে রেখে ঝটপট ডক্যুমেন্ট তৈরীর কাজ শুরু করলাম।

ইদানীং পট করে অনেক কিছু ভুলে যাই। যেমন সেদিনই একটা স্ক্রীপ্টের উপর কাজ করছিলাম। আজকে চট করে সেটা মনে পড়ল না। আমার ম্যানেজারের ঠিকই মনে ছিল। ভেবে উদ্ধার করতে খানিক খাবি খেতে হল। বেশ লজ্জ্বাই লাগল। এ বিষয়টা পাত্তা দিয়ে ডাক্তার দেখানো উচিত কিনা ভাবছি।

দুপুরে লাইসেন্স টেস্টিংয়ের একটা কাজ শুরু করলাম। এই নিয়ে কাজটা তৃতীয়বারের মতো শুরু করেছি। শুরু করেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সবচেয়ে লেটেস্ট বিল্ড ব্রোকেন। এক ডেভলপার আবার ইমেইল করেছে সে নাকি চান্স নিয়ে একটা কোড চেকইন করেছিল। সেটাই গ্যাঞ্জামের কারন।

আমি লক্ষ্য করেছি ডেভলপাররা খুব বেশী চিন্তা না করেই ইরেসপনসিবলি বাজি ধরে। ভাবে টেস্টাররাতো আছেই টেস্ট করার জন্য। দুদিন ধরে আরো চার পাঁচজনের কয়েকঘন্টা করে সময় নষ্ট করে এখন জানালো ব্যাটা টেস্ট না করেই কোড চেকইন করেছে। "ডেভলপমেন্টের যত আগে সমস্যা সমাধান করা যায় সেটা তত সস্তায় সেরে ফেলা যায়" - কথাটা ডেভলপাররা জেনেও মানতে চায় না।

সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত্য কাজটাজ করে অফিস থেকে বেরিয়ে দেখি কুয়াশাটা এখনও ঝুলে আছে। নিষ্করূণ কুয়াশা। জীবনানন্দের একটা প্রিয় অনুসঙ্গ ছিল না? কুয়াশা খুব দুঃখী করে বুঝি? আমারও মনটা কেমন কেমন করতে লাগল। হঠাৎ করে মনে হল কিচ্ছু করা হচ্ছে না। ভেবেছিলাম আগামী হেমন্তে পিএইচডিটা শুরু করব। জিআরইটা আবার দিতে হবে। পড়তে বসা হচ্ছে না। ভাবছিলাম কফি হাইজের সেই আড্ডাটা তুলব গীটারে। বসাই হচ্ছে না। কতগুলি লেখা শুরু করে বসে আছি শেষ করা হচ্ছে না। শেকড় নামের একটা পত্রিকার কাজ শুরু করতে হবে। সেটাও করা হচ্ছে না। সচলায়তনের নতুন সার্ভারের কাজটাও মাঝপথে আটকে আছে।

সবকিছু কেমন যেন পানসে লাগে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়া। অফিস থেকে ফিরে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসা। চমৎকার কিছু মানুষের চমৎকার কিছু পোস্ট পড়া। কুৎসিত কিছু মানুষের কুৎসিত চেহারা দেখে দুঃখিত হওয়া। খাওয়া দাওয়া। ঘুমানো। তারপর আবার একই চক্র। লক্ষ্য কোটি পানসে আত্মার মিছিলে আরো একটি মুখ।


মন্তব্য

অমিত আহমেদ এর ছবি

পানসে ভাবলেই পানসে। দুনিয়া আমাদের চোখে যেমন ঠিক তেমন। লেখা ভালৈছে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অমিত আহমেদের পর্ব বন্ধ হইল কেন? জাতি জানতে চায়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

শিমুলের কাছে ব্যাংককে আমাদের ছবি আছে। ওইটা নেয়ার ট্রাই করতেছি। সে দিতে চায় না। নানান বিতং করে। নেক্সট পোস্টের সাথে ছবি দিবো।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অতিথি লেখক এর ছবি


ভেবেছিলাম আগামী হেমন্তে পিএইচডিটা শুরু করব।

...........................................................................

ভালই তো আছেন ॥ তো আবার পিএইচডি কেন ?

শুভ রহমান

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সুখে থাকলে ভুতে কিলায়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

বুঝতে পারছি দৈনন্দিনের পৌনঃপৌনিকতায় আপনি বেশ ক্লান্ত। ব্রাদার কয়েকদিন সবকিছু থেকে চোখ বুঝে অবসর নেন। দু'দিনের তো দুনিয়া!!!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বলচেন তাহলে। নিলুম কিন্তু, এই এই নিলুম।

হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধূসর মানব  [অতিথি] এর ছবি

লক্ষ্য কোটি পানসে আত্মার মিছিলে আরো একটি মুখ।

দুনিয়াটা ঘাসের মত লাগে।

আমিও সামিল মিছিলে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধূসর মানব লিখেছেন:
দুনিয়াটা ঘাসের মত লাগে।

অ্যাহেম!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মানুষের প্রথম যৌবনের যাবতীয় প্রচেষ্টার অকথিত লক্ষ্য হচ্ছে একটা নিরাপদ, নিস্তরঙ্গ, স্বচ্ছল, এক-চক্রিক জীবনে পৌঁছানো। বাংলাদেশে আমরা যাকে বলি "এষ্টাবলিশড" হওয়া। আপনি অপেক্ষাকৃত উন্নত বিশ্বে থাকায় একটু তাড়াতাড়িই "এষ্টাবলিশড" হয়ে গেছেন। তাই বাংলাদেশী রক্তে (যেখানে টাইম পিরিয়ডটা একটু লম্বা) তা এপর্যায়ে সহ্য হচ্ছে না। আরেকটু বয়স হোক, সব সহ্য হয়ে যাবে।

===============================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এস্টাবলিশড? কি জানি?

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পলাশ দত্ত এর ছবি

দুপুরে লাইসেন্স টেস্টিংয়ের একটা কাজ শুরু করলাম। এই নিয়ে কাজটা তৃতীয়বারের মতো শুরু করেছি। শুরু করেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। সবচেয়ে লেটেস্ট বিল্ড ব্রোকেন। এক ডেভলপার আবার ইমেইল করেছে সে নাকি চান্স নিয়ে একটা কোড চেকইন করেছিল। সেটাই গ্যাঞ্জামের কারন।

ভাই, মুর্খরা বোঝে না এমন জিনিস লেখেন ক্যান? ভয়-টয় পাই তো এতে।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সহজ করে লিখলাম তো। এটাই রুটি রুজির বিষয়তো তাই খানিকটা লিখতে চাই এটা নিয়ে। আমার অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। পরে নেড়ে চেড়ে দেখব কি শিখলাম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কাজের ধরন আলাদা... কিন্তু আমারও আপনার মতোই অবস্থা। কোনো কাজই করা হচ্ছে না। সব কাজ হাফডান হয়ে বসে আছে। প্রতিদিন বাড়ি ফিরে ভাবি আজকে থেকে বেদম কাজ করবো, জাস্ট এক ঘন্টা সচলায়তনটা চেক করেই সব বন্ধ... প্রতিদিন ভাবি ইন্টারনেট মোডেমটা ল্যাপটপ থেকে খুলে আলমারিতে তালা দিয়ে রাখবো। এর জ্বালায় কাজ করতে পারতেছি না কোনো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুম, নেশা ছুটাতে হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমার মনে হয় গীটারেই আছে মূল চাবিটা। টুংটাং শুরু করলেই দেখবেন পানসে ভাব আর গুমোট হাওয়া পালানোর পথ খুঁজে পাবে না। চলুক
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বসব দেখি। ধন্যবাদ আপনাকে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

তানবীরা এর ছবি

সবকিছু কেমন যেন পানসে লাগে। প্রতিদিন অফিসে যাওয়া। অফিস থেকে ফিরে আবার ল্যাপটপ নিয়ে বসা। চমৎকার কিছু মানুষের চমৎকার কিছু পোস্ট পড়া। কুৎসিত কিছু মানুষের কুৎসিত চেহারা দেখে দুঃখিত হওয়া। খাওয়া দাওয়া। ঘুমানো। তারপর আবার একই চক্র। লক্ষ্য কোটি পানসে আত্মার মিছিলে আরো একটি মুখ।

শীতের শুরুতে আমার এই ফীলিংটা খুব বেশী হয়। মন খারাপ লাগতে থাকে, লেথ আর্জি লাগতে থাকে তারপর লুজার ফীলিং থেকে মেজাজ খারাপ হতে থাকে। কিছুই ভালো লাগে না।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হুম শীতের কারনেই মনে হয় এমনটা হচ্ছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুব সহজ-সুন্দর লেখা, এমন লেখা পড়তেও আরাম। শীতের শুরুতে মনে হয় অনুভূতিগুলো এমনিতেই কিছুটা আরষ্ঠ থাকে। আর আমাকেও প্রতি শীতের শুরুতেই কেমন যেন বিষন্নতায় পেয়ে বসে।

জিআরই দেব দেব এমনটা আমিও ভাবছি সেই কবে থেকেই! কিন্তু আলসেমি করে পড়াই হয় না! আপনি আবার দিবেন যে, আগেরবার স্কোর কেমন ছিল? হাসি
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

রানা মেহের এর ছবি

আসলেই তাই।
শীতকালটাই দায়ী সবকিছুর জন্য।
আপনার এখনো পিএইচডি করার তেল আছে?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

পথ ভোলা পথিক এর ছবি

কোম্পনি চকুরিতে কি চাপ বেশী যে লেখা পরাতে মন দিতে চাইচেন?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

না, ফরচুনেটলী আমাদের কোম্পানী আমেরিকার এই দুঃসময়েও ভালো করছে। উপরন্তু আমিও ভালো করছি এখানে। পিএইচডি করা দরকার কারন:

১। উচ্চতর ডিগ্রী সবসময় খরচটা ফিরিয়ে দেয়। সুতরাং বয়স থাকতে এটা করে ফেলা ভালো।

২। পিএইচডি শেখায় কিভাবে সমস্যা বের করে নিয়ে আসতে হয়। একজন লোক সবকিছু ঠিকঠাক চলছে ধরে নেবে, একজন ডক্টরেট সেটাকে উন্নত করার সম্ভাব্য সমাধান বের করে ফেলবে। আমি সেখানাটায় যেতে চাই।

৩। আমাদের কোম্পানী পড়াশুনার টাকা দিয়ে দেয়। কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটিও ঘরের কাছে। সুতরাং চাকুরী করতে করতে পিএইচডিটা আগিয়ে রাখা সহজ হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পথ ভোলা পথিক এর ছবি

তবে করে ফেলেন না কেন?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

এই পর্ব আগে পড়ছিলাম, কমেন্ট করি নাই।
ভালো লাগতেছে ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।