এই লেখাটা মিরাজকে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: শনি, ২০/০৯/২০০৮ - ১:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১৯৯২ কি ১৯৯৩ এর জানুয়ারী বা ফেব্রুয়ারী হবে। অষ্টম শ্রেনীতে উঠলাম। আব্বা বদলী হয়ে এসেছেন বন্দর নগরী চট্টগ্রামে। সঙ্গে এসেছি আমরা আমরা দুই ভাই। আম্মা বদলীর ব্যবস্থা করছেন। আমাদের ভর্তির ব্যাপারে স্কুলে স্কুলে খোঁজ চলছে। জানা গেল মুসলিম হাই স্কুলে সীট খালি আছে। আব্বা আমাদের দুভাইকে নিয়ে গিয়ে যেদিন চট্টগ্রাম পৌছলাম সেদিনই ভর্তি করে দিলেন সেখানে। শুরু হল মুসলিম হাই স্কুলে আমাদের বন্দী জীবন।

মুসলিম হাই স্কুল ছিল প্রচন্ড কড়া, রক্ষণশীল মানসিকতার একটি স্কুল। নাম শুনেই নিশ্চয়ই বুঝছেন শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য স্কুলটি। শিবির, জামাতের আড্ডাখানা। স্কুলের বিল্ডিংয়ের পাশে মসজিদ। তার নীচে কিছু শিক্ষক থাকতেন। আরো কিছু শিক্ষক কোয়োর্টার ছিল পাশে। এদের মধ্যে কিছু শিক্ষকের রসালো গল্প। টিফিন পিরিয়ডে বাধ্যতামূলক নামাজ আদায়। মাঝে মাঝে নামাজ ফাঁকি দিয়ে নিউমার্কেট ঘোরা। ধরা খেলে প্রচন্ড মার। এই নিয়েই ছিলাম মুসলিম হাই স্কুলে।

প্রথম বার্ষিক পরীক্ষার পর আমাদের জানানো হল যে একটা বিশেষ কোচিং হবে অষ্টম শ্রেনীর বৃত্তি পরীক্ষার জন্য। আব্বার আদেশে কোচিং শুরু করলাম।

জে এম সেন নামে আরেকটা স্কুল ছিল মুসলিম হাইস্কুল থেকে দশ মিনিট হাঁটা দুরত্বেই। জায়গাটার নাম পাথরঘাটা। আমরা দুই বেডরুমের একটা বাসায় ভাড়া থাকতাম জে এম সেন স্কুলের মুখোমুখি একটা বিল্ডিংয়ে।

আমার ক্লাস ছিল দুপুরে। কোচিং শুরু হত সকাল ৯টা-১০টা নাগাদ। সকালে আমি আর আম্মু একসাথে বেরিয়ে নিকটস্থ চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত যেতাম। আম্মু সেখান থেকে টেম্পো ধরে যেত অফিসে। আর আমি বাকিটা পথ হেঁটে স্কুলে পৌছে যেতাম। সকালে ব্যাগ ভর্তি করে বই পত্তর নিয়ে হাঁটা দিতাম স্কুলের দিকে। সারাদিন ক্লাস করে বাড়ি ফিরতাম সন্ধ্যায়।

কোচিং শুরুর দ্বিতীয় কি তৃতীয় দিন হবে। চৌরাস্তা ছেড়ে আগিয়ে যাচ্ছি। কোটোয়ালী থানাটা পেরিয়েছি। পেছন থেকে একটা ছেলে এসে ডাকছে। ঘুরে তাকিয়ে দেখি শ্যামলা রংয়ের হাসিমাখা চেহারার একটা ছেলে আমাকে ডাকছে। আমার মতই তার পিঠেও ব্যাগের বোঝা।

ছেলেটার নাম জানা গেল। মিরাজ। আমার নাম জানালাম। মিরাজ এ সেকশনে ক্লাস করে। কোচিংয়ের সুত্রে ক্লাসে আমাকে দেখেছে। (ক্লাসে কি আমি খুব পটপট করতাম?) সে থাকে কর্ণফুলী নদীর ওপারে। তার বাবা কাজ করেন ওয়াপদা, কর্ণফুলী বিদ্যুৎ প্রকল্পে। প্রতিদিন তাকে নদী পার হয়ে স্কুলে আসতে হয়। এজন্য রাস্তার একটা অংশ শেয়ার করতে পারি একসাথে।

আস্তে আস্তে জানা গেল মিরাজও আমার মতই নার্ডি। তিন গোয়েন্দার ফ্যান। আমার মত তিন গোয়েন্দা, কিশোর ক্ল্যাসিক, মাসুদ রানা ভেজে খেয়েছে। আমার মতই কিশোর পাছা হবার চেষ্টা করে। আমার মতই ছোট্ট মধ্যবিত্ত পরিবার। প্রতিদিন টিফিনের টাকা জমিয়ে নিউমার্কেটে যায় পুরোনো বই কিনতে। মানে যাকে বলে বন্ধু হবার জন্য একেবারে পারফেক্ট ম্যাচ!

অতি শীঘ্রই আমরা বই অদল বদল শুরু করলাম। একদিন বোধহয় আমাদের বাড়িও নিয়ে গেলাম। আরেকদিন আম্মুকে অনেক বলে কয়ে, আব্বু জানবে না দিব্যি দিয়ে রাজি করালাম মিরাজদের বাসায় যাবো বলে। মিরাজ নদী পার হয়ে এসে আমাকে ওদের বাসায় নিয়ে গেল। দারুন পরিবার। যাকে বলে বেস্ট ফ্রেন্ড প্রায় হল হল আরকি।

কিন্তু বিধিবাম! অষ্টম শ্রেণী যখন শেষ হয় হয় তখন আব্বা বললেন, এই স্কুলে থাকা চলবে না। স্কুল বদলাতে হবে। সুতরাং বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার তোড় জোড় শুরু হল। ওদিক মিরাজও জানাল তার বাবা বদলী হয়ে চলে যাবেন কুমিল্লা। কুমিল্লা জেলা স্কুলে তার ভর্তির ব্যবস্থা চলছে।

শেষদিন ক্লাসে এসে মিরাজ জানালো সে চলে যাচ্ছে। আমাদের তখন ফোন ছিল না। মিরাজও যাচ্ছে নতুন শহরে। তাই যোগাযোগ করব কিভাবে? দুই বন্ধু অনেক ভেবে চিন্তেও বের করতে পারলাম না। ক্লাসের ঘন্টা পড়ে গেল দেখে মিরাজ যেতে যেত বলে গেল সে চিঠি লিখবে। কিন্তু সে চিঠি আর কোন দিন আসেনি।

তারপর কত বসন্ত চলে গেল। আমিও কৈশোর ছাড়িয়ে যুবক হলাম। কলেজ ছাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম। দেশ ছেড়ে বৈদেশে গেলাম। খোলস ছাড়াতে ছাড়াতে বদলে গেলাম কতবার! তারপর একদিন...

তারপর একদিন ফেইসবুকে ঢুকে দেখি একটা মেসেজ,

Miraj Ahmed Chowdhury
September 18 at 12:58pm
Have u ever been in chittagong?

বন্ধু কি খবর বল? কতদিন দেখা হয়নি!

hathat_rastai.mp3


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

১৫/১৬ বছর আগের ঘটনা। ঠিকঠাক মত সব মনে পড়ল কিনা কে জানে!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

রণদীপম বসু এর ছবি

ওহ্, মন ছুঁয়ে গেলো লেখাটা। হয়তো সবার জীবনেই এরকম নস্টালজিয়ার মিষ্টি ক্ষত রয়েছে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ক্ষত গুলি শেয়ার করেন আমাদের সাথে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

আকতার আহমেদ এর ছবি

শৈশবের কতো মিরাজ যে এভাবে হারিয়ে যায় .. ফেইসবুক পর্যন্ত যাদের পৌঁছা হয়ে ওঠেনা কখনো.. চমত্কার লিখেছেন মুর্শেদ ভাই

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অনেকই হারিয়ে যায়, তাও ঠিক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

এইজন্যই ফেইসবুক এত ভালো লাগে ...

ক্লাস টুতে শেষ দেখা হওয়া মেয়েটার প্রোফাইলে এখন দেখি বরের সাথে হাসিমুখে তোলা ছবি; কিংবা ক্লাস ফাইভের জানি দোস্ত, যার সাথে একদিন না দেখা হইলেও মন খারাপ হইতো সেই ছেলেটারে এতদিন পরে আবার দেখি পরিচিত এক বড়ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ফটোতে, নাম আর চেহারা মিলায়ে হঠাত চিনে ফেলি ...

ফেইসবুক জিন্দাবাদ দেঁতো হাসি
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

তখন কেমন অনুভুতি হয়? আমার এই প্রথম এরকম একটা আদিম কালের বন্ধুকে খুঁজে পেলাম। ফেইসবুক না হলে হয়ত খুঁজেই পেতাম না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

এইরকম ঘটনা প্রথম যেবার ঘটছিল সেটা নিয়ে আমার একটা পোস্টে লিখছিলামঃ

মাঝে মাঝে আরো চমৎকার কিছু ব্যাপার ঘটে ... যেমন বাংলাদেশ নেটওয়ার্কে ঘুরতে ঘুরতে (বাংলাদেশের মেয়েরা কেন জানি প্রোফাইলের প্রাইভেসি নিয়ে সচেতন না, বেশিরভাগেরই প্রোফাইলে কোন ভেজাল ছাড়াই ঢুকে সব উল্টেপাল্টে দেখে আসা যায়, এটা কি বাঙ্গালি মেয়েদের প্রযুক্তিবিমূখতা নাকি অন্য কিছু?) হঠাৎ একটা বড় বড় চোখ কোঁকড়া চুলের মেয়েকে দেখে কেমন জানি চেনা চেনা লাগে ... নাম মিলিয়ে দেখি, ভালো নামটা কি ছিল এতদিন পরে আর মনে করতে পারি না ... চিন্তা করি, আসলেই কি সে? ... শেষমেষ যা আছে কপালে ভেবে মেসেজ পাঠাই, তুমি কি নাইন্টিন নাইন্টিতে অমুক জায়গায় থাকতা? উত্তর "না" হইলে জাস্ট ইগনোর কর ... দুই দিন পরে দেখি মেসেজ আসে "আর ইউ রিয়েলি দ্যাট ফাহিম হু ইউজড টু বি মাই নেক্সট ডোর নেইবার? আই কান্ট বিলিভ, ইট ওয়াজ সো লং এগো " ...

সেই ক্লাস ওয়ান-টুতে পাশের বাসায় থাকা একই ক্লাসে পড়া মেয়েটার সাথে আবার যোগাযোগ হইছিল ফেসবুকের কল্যাণে ... দুইজনেই প্ল্যান করছিলাম দেখা করবো, কিন্তু ওর পরীক্ষা চলতেছিল, আর আমিও বাইরে আসা নিয়া ব্যাস্ত ছিলাম তখন, দেখা আর করা হয় নাই ... ফেসবুকেই যোগাযোগ ...

সেদিন খুব অবাক হইছিলাম, কিন্তু এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি আর অবাক হই না ... পুরান অনেক বন্ধুবান্ধবকে আবার দেখি ফেসবুকে ... কারো কারো সাথে যোগাযোগ করি, কারো কারো সাথে করি না [যেগুলির সাথে বেশি খাতির ছিল না আরকি] ...

আমরা যখন স্কুল পাস করি তখন মোবাইল জিনিসটা ছিল না ... কাজেই স্কুলের যেসব পোলাপান ঢাকায় ছিল তারা ছাড়া আর কারো সাথেই যোগাযোগ ছিল না ... ফেসবুক আসায় আবার গ্রুপটা একসাথে হইছে ...

তবে এটা ঠিক, সবাইরে পাওয়া যায় না ... অনেক মিরাজ ফেসবুক পর্যন্ত পৌছায় না ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

পুতুল এর ছবি

কত বন্ধু যে এভাবে হাড়িয়ে গেছে!
আপনার লেখাটা পড়ে তাদের স্মৃতি মনের জানালায় উঁকি দিচ্ছে!
আশা করি মিরাজ এই লেখাটা পড়বে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুঁজে দেখুন ফেইসবুকে। পেলেও পেতে পারেন তাদের। আর মিরাজকে এই লেখার লিংকটা দিলাম। ব্যাটা ইউনিকোড পড়তে পারলে হয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নজমুল আলবাব এর ছবি

জয় হোক ফেইসবুক এর। (এই প্রথম সাইটটারে ভাল বল্লাম মনে হয়)

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমিও সাইটটারে তেমন ভাল পাইনা। কিন্তু এইরকম একটা শক পাবার জন্য প্রস্তুতও ছিলাম না। আমি দ্রবীভুত।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাহবুব লীলেন এর ছবি

একেবারে কামড় দেয়া একটা লেখা

০২
বয়স ছয় হবার পর থেকে আমি সব সময়ই ছিলাম কোনো না কোনো গ্রুপের সাথে
কোনো এক ফ্রেন্ড কিংবা বেস্ট ফ্রেন্ড বোধহয় কোনোকালেই ছিল না আমার কিংবা আমিও ছিলাম না কারো
আমি বরাবরই ছিলাম একপাল ফ্রেন্ডের ভেতরে

মোবইলের ফোনবুকে যাদের নম্বর তারা মাত্র সেদিনের পরিচিত

কিন্তু সেই তারা কোথায়?
হয়তো তাদেরও মোবাইল আছে
আছে ফেইসবুকে ফেইস

কিন্তু....

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ লীলেন ভাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লগইন করার কোনো ইচ্ছা ছিলো না। উকি মেরে চলে যাবো ভাবছিলাম। কিন্তু লেখাটা এত টাচি... না করে থাকতে পারলাম না।
আপনাদের জন্য শুভকামনা।

ফেইসবুকে আমার খোঁজাখুজিঁ হয় না। নইলে হয়তো আমি পেতাম।

আমার জীবনে অনেক অনেক সংগঠন থাকায় অনেক অনেক বন্ধু সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গেছে। তবে কলেজের কিছু বন্ধুকে খুব খুজিঁ... গোপালগঞ্জের সিমু... চট্টগ্রামের মিঠু...
আমার কেন জানি ধারনা রাগিব ভাই মিঠুর সন্ধান দিতে পারবে। অনেকবার ভাবছি রাগিব ভাইকে জিজ্ঞেস করবো। করা হয়নি। একদিন করবো।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আলমগীর এর ছবি

ফেইসবুকে পৌঁছায় না এমন অনেক মিরাজ আছে!
খুব মিস করলাম বন্ধুদের লেখাটা পড়ে।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হঠাৎ উপলব্ধি করলাম যারা বর্তমান বন্ধু তাদের সাথেও সর্ম্পক কেমন ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এটা সময়ের একটা কামড় মনে হয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার আনন্দ দেখে ভালো লাগছে খুব, মুর্শেদ ভাই। হাসি

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ শিমুলাপু।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

পরিবর্তনশীল এর ছবি

এই লেখাটা পড়ার পরে আমার একটা অধিকার তৈরি হলো। মিরাজের সাথে আপনার বন্ধুত্বের সবকিছু নিয়ে একটা বিশাল লেখা চাই।

মুসলিম হাই স্কুলের কথা বলতে মনে পড়ে গেল- তার একটু পাশে সেণ্ট প্লাসিডস স্কুল। কত স্মৃতি। কত।

চট্টগ্রাম আমার প্রাণের শহর। আমার শৈশবের কৈশোরের ভালোবাসার শহর।

লীলেন ভাইয়ের মত এই প্রথম ফেইসবুকের প্রশংসা করলাম। হাসি
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সেই এক বছরের বন্ধুত্বের অনেক কিছুই ঝাপসা হয়ে গেছে। তাই আর লেখার মত কিছু আছে কিনা জানিনা।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সুমন সুপান্থ এর ছবি

মুর্শেদ, আপনার লেখা পড়ে কেমন বেদনাহত হয়ে পড়লাম । এমনই এক বন্ধু কে নিয়ে লিখবো ভেবে , মাথার ভেতর অসহ্য এক যন্ত্রণা বয়ে বেড়াই কতো বছর ! শৈশবের সেই বন্ধুটা আমার দেশই ছেড়ে গেছে সেই শৈশবেই !! আর পাই নি কোথাও !
আপনার লেখা পড়ে থাকে খুব মনে পড়ছে !

---------------------------------------------------------

'...এইসব লিখি আর নাই লিখি অধিক
পাতার তবু তো প্রবাহেরই প্রতিক...'

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সুমন্দা,
লিখে ফেলুন আপনার বন্ধুকে নিয়ে নষ্টালজিয়াকথন।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

মিরাজ লেখাটা পড়েছে। কবিতাটাও। সেইসাথে নস্টালজিক কিছু মন্তব্য।
ফেইসবুকের একাউন্টটা ডিএ্যাক্টিভেটই করে দিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিলো শুধু শুধু সময় নষ্ট। তারপর এক বন্ধুর পোস্ট করা কিছু ছবি দেখতেই আবার চালু করলাম। সেদিন ঘাটতে ঘাটতে মুসলিম হাই স্কুল গ্রুপে গেলাম। দেখি পরিচিত কেউ নেই। ভারপর খুঁজতে শুরু করলাম মাহবুবকে।

আগেও খুঁজেছি। কিন্তু ঠিকানাটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। তাই আর চিঠি লেখা হয়নি। জিলা স্কুলে ভর্তি হয়ে, চট্টগ্রাম গেলাম কদিনের জন্য। একদিন তাকে খুঁজতে কলেজিয়েট স্কুলেও গিয়েছিলাম। কিন্ত মাহবুবরা তখন সবাই ঢাকা গিয়েছিলো।

তারপর ক্লাস এইটের বৃত্তির টাকা আনতে আরেক দফা যাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু বন্ধুরা কেউ তার কথা বলতে পারেনি।

স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে ভার্সিটি, তারপর চাকরি। অনেক নতুন বন্ধু, অনেক প্রিয়ও হয়ে ওঠে কেউ কেউ। কিন্তু কৈশোরের মাত্র এক বছরের বন্ধুত্বের চেহারাটা ফিকে হয়নি এতটুকুও।

তাই ফেইসবুকে একটা চেহারা দেখে আটকে গেলো চোখ। মনে হলো পেয়েছি। নিশ্চিত হতে একটা চিঠি (মেসেজ) পাঠালাম:
"তুমি কি চিটাগাং ছিলে কোনো দিন?"
সেই চিঠিই মিলিয়ে দিলো। হোক না ১৫ বছর পর!

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হেই মিরাজ! মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ফেইসবুকেই কথা হবে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

কত বন্ধু হারিয়ে গেলো।
শুভেচ্ছা।

(কিশোর পাছা?)


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

(কিশোর পাছা?)

হ, এইটা ছিল এক বন্ধুর আমারে দেয়া নিক নেইম।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি
জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আবহ সঙ্গীত মিলিয়ে এক কথায় স্মৃতির নু-ঝাল মাখা।

আমার নিখোঁজ বন্ধুদের খুঁজে চলেছি আজো। ফেসবুকেই।

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

রেনেট এর ছবি

চমতকার আনুভূতি, চমতকার পোস্ট।
কৈশোরের দুই বন্ধুকে আবার একসাথে দেখে ভালো লাগছে।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- লেখাটা পড়ে দারুণ লাগছে মা.মু। আফসোস কেবল একটাই আমার বন্ধুদের একটারেও এখনোব্দি পেলাম না যাদের সঙ্গে সেই প্রাইমারী স্কুলেই শেষ দেখা হয়েছে। মন বলে শালারা একেকটা ভালো জায়গাতেই আছে, থাকার কথা! কিন্তু পাইনা কেনো?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার লেখা। ফেইসবুক আমারও এই কারণেই ভাল লাগে। তবে অনেক বন্ধুই আছে যারা ফেইসবুক পর্যন্ত আসতে পারে না। হারিয়ে যাওয়া সেইসব বন্ধুদের খুব করে মনে পড়ছে হঠাৎ করেই!
___________________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।