সচলায়তন ও জুবায়ের ভাই
জুবায়ের ভাইয়ের সাথে পরিচয় সামহোয়্যারইন ব্লগে। উনার প্রবাস বিশ্লেষন নিয়ে একটা লেখা পড়ি প্রথমে। পড়েই প্রথম প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল - লেখাটা এত বড় কেন? তারপর উনার উপন্যাস পোস্ট করা শুরু করলেন - পৌরুষ। প্রতি পর্ব প্রকাশ করতেন আর পড়ে আমার প্রতিক্রিয়া জানাতাম। শেষ পর্ব পড়ে জানিয়েছিলাম, আমার অতৃপ্তি থেকে গেছে।
তারপর জুবায়ের ভাইয়ের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ। আমি তখন অ্যারিজোনায় থাকি। সিঁড়ি নামে একটা বাংলা পত্রিকা বের হবে। সেটার জন্য লেখা দরকার। চাইতেই রাজি হয়ে গেলেন। উপরন্তু লুৎফর রহমান রিটন ভাইয়ের একটা ছড়া জোগাড় করে দেবেন জানালেন।
সেই থেকে তার সাথে ঘনিষ্টতা। তারপর সচলায়তন করলাম আমরা। তিনি হয়ত কখনই শক্ত মডারেশনের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু হয়ত এটার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরেই আপত্তি করেননি পরে।
কতবার এমন হয়েছে, আমি বাইরে যাচ্ছি। হঠাৎ জুবায়ের ভাইয়ের ফোন, 'মাহবুব এই কম্পুকানাকে একটু সাহায্য করো ভাই। অমুক জিনিসটা কিভাবে করে?' কিংবা একদিন ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, 'মাহবুব একটা ল্যাপটপ কিনবো, ভিসতা নেয়া ভালো হবে না এক্সপি'। আমি এক্সপি নিতে বললাম। উনি অবশ্য ভিসতাই কিনেছিলেন।
বিপদে, আপদে, ছোটো বড় গ্যাঞ্জামে কতবার তার কাছে ফোন করেছি তার ইয়ত্তা নেই। সচলায়তনে টুকটাক মনোমালিন্য হয়েছে, কেউ সচলায়তন ছেড়ে চলে গিয়েছে - আমি ফোন করেছি জুবায়ের ভাইকে। জুবায়ের ভাই হাসতেন। কখনও ডিকটেট করতেন না, কিন্তু তার বুদ্ধিদীপ্ত সাজেশনটা দিতেন। আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতাম কি করা যেতে পারে। উনি সবসময় বলতেন, "আমি রেগে গেলে কখনও কোন সিদ্ধান্ত নেই না। বিষয়টা থেকে দূরে সরে আসি। এক বা দুইদিন পর মাথা ঠান্ডা হলে পরে সিদ্ধান্ত নেই। এতে করে মাথা গরম করা কোন সিদ্ধান্ত নেবার বিপদে পড়তে হয় না।"
সচলায়তন যখন বাংলাদেশ থেকে দেখা যাচ্ছিল না, তখন আমাকে, অরূপকে ফোন করে জানালেন, 'তোমরা চিন্তা কোরো না। আমাদের বন্ধুবান্ধব আছে না! যদি সত্যি বিষয়টা ঘটে তাহলে কিছু না কিছু একটা করা যাবে। আগে বের করো সত্যি সত্যি কি ঘটেছে।' কিংবা যখন সার্ভার ডাউন হয়ে গেল, ডাটাবেইজ সমস্যার কারনে তখন জুবায়ের ভাই আমাকে সবার আগে ফোন করলেন। আমি তখন ওহায়োর উপর, ইন্ডিয়ানা থেকে পেনসিলভিনিয়া আসার পথে। আমার অনুরোধে তিনি নিজেই সার্ভারের লোকদের সাথে কথা বললেন। অরূপের সাথে কথা বললেন। এই রকম ডেডিকেটেড ছিলেন তিনি।
সচলায়তনের ইন্টারভিউ বিষয়ে উনি খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু নিজের ইন্টারভিউ দিবেন না কিছুতেই। কতবার তাকে বলেছি। কিছু একটা বলে পাশ কাটিয়ে গেছেন। যা বুঝেছি, দুর্বল ফুসফুসে তার কথা বলতে সমস্যা হত। এই কারনে তিনি সারা বিশ্বকে তার গলা শুনতে দিতে চাইতেন না।
এই ভাবে সচলায়তনের সাথে ওতপ্রোত হয়ে জড়িত থাকা জলজ্যান্ত লোকটা হঠাৎ একদিন অসুখে পড়বেন, হাসপাতালে যাবেন, তার হঠাৎ করে একদিন মারাও যাবেন সেটা কোনদিন ধারনাও করিনি। এটা তাই আমার জন্য, আমাদের জন্য একটা বিরাট শক্ ছিল। আমি প্রায় সারারাত একা জেগে বসে ছিলাম, রিটন ভাই, সুজন ভাই, হিমু কেঁদে আকুল হয়েছে। আর বাইরের লোকেরা ভেবেছে এ কুমিরের পুত্রশোক।
জুবায়ের ভাইয়ের অবদান
জুবায়ের ভাইয়ের অবদানগুলি এখনই লিখে রাখা দরকার। নইলে কালের গর্ভে হয়ত বিলীন হয়ে যাবে।
জুবায়ের ভাইয়ের প্রথম অবদান হলো নিজে সহ, প্রথম সারির বেশ কিছু সাহিত্যিককে ব্লগিংয়ের সাথে পরিচিত করা। বেশ কয়েকজন প্রথম শ্রেণীর ব্লগার তার মাধ্যমে বাংলা ব্লগিংয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।
তিনি অবলীলায় আমাদের মত তৃণমুল ব্লগারদের সাথে মিশেছেন, উপদেশ দিয়েছেন। কখনও মাত্রাতিরিক্ত অহম নিয়ে দুরে সরে থাকেননি। দলবাজী এড়িয়ে চলেছেন। আমাদের জন্য একটা স্মরনীয় উদাহরন হয়ে থেকেছেন।
(এই অংশটি আপডেট করা হবে।)
উপসংহার
সেদিন অরকুটে ঢুকলাম। সাম্প্রতিক প্রোফাইল ভিজিটরে একটা নাম জ্বলজ্বল করছে - মুহম্মদ জুবায়ের। নামটাতে ক্লীক করে দেখি স্ট্যাটাসের ঘরটিতে লেখা - "সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত - এই বোধ পিছু ছাড়ে না"।
না জুবায়ের ভাই আপনাকে আমরা কিছুতেই ভুলে যাব না, কিছুতেই না।
মন্তব্য
কেন লিখলেন এটা? এমনিতে ভালো নাই। আরো মন খারাপ করিয়ে দিলেন।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমার সচল প্রোফাইলে প্রথম যে লেখাটা প্রিয়তে নিয়েছিলাম সেটা ছিল "হাবিব বন্ধু আমার"। লেখাটা পড়ে এত ভাল লেগেছিল যে প্রিয় করেছিলাম। তখনো জানতামনা কে এই মুহম্মদ জুবায়ের। গত হওয়ার কয়েকদিন পরে বিষয়টা খেয়াল করলাম। একটা ধাক্কা লাগল মনে হলো- একটা মানুষ কয়মাস আগেও ছিলেন আর এখন নাই।
এই যাওয়া আসার মধ্যেই জীবন চলে যাচ্ছে, সবকিছু আগের মতই রয়েছে। আমি আপনি সবাই চলে যাব একসময়-- তাতে পৃথিবীর কিছুই আসবে যাবে না। তবে একএকটা মানুষের মনকে যদি একেকেটা পৃথিবী বলি, কেউ চলে গেলে মনের সেই পৃথিবিগুলি হয়তো ধ্বংস হয়।
মনটা এমনিতেই খারাপ ছিলো। আরো অনেক খারাপ করে দিলেন পোস্টটা দিয়ে... মুর্শেদ ভাই... অনেক খারাপ করে দিলেন...
মনটা আবার খারাপ করে দিলেন...
লেখাটাকে যথোপযুক্ত আপডেট করতে থাকেন।
জুবায়ের ভাইয়ের গোটা প্রোফাইলটা যেন এখান থেকে পেতে পারি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুব কষ্টকর.....
যে রাতে গুঁজেছো চুলে বেগুনি রিবন বাঁধা ভাট,
সে রাতে নরকও ছিলো প্রেমের তল্লাট।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . (আবু হাসান শাহরিয়ার)
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
আমি কাঁদি না, কান্না থেকে পালাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ভীষণ সচলায়তন-অন্তপ্রাণ ছিলো সে, এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশই নেই। আমাদের প্রায়-প্রাত্যহিক চ্যাট বা টেলিফোনে কথোপকথন ছিলো মূলত সচলায়তন-কেন্দ্রিক।
সমায়াভাবে অজস্র স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাবে, বাস্তব রূপলাভ করবে না অজস্র পরিকল্পনা - সেটা সে জানতো। এখন বুঝতে পারি, এইসব বিষয়ে কথা উঠলে সে চেপে রাখতো তার ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাস। বুঝতে দিতো না কাউকে। তারপর চিরাচরিত ঠাট্টা-মাখা কণ্ঠে বলতো, "কবে আর হবে থাকিতে জীবন!"
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
মন্তব্য নেই ।
..................
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি ভিষন দুর্ভাগা!
এমন একজন ব্যাক্তিত্বে সাথে আমি পরিচিত হতে পারিনি।
তার আগেই তিনি পৃথিবী ছাড়লেন।
জুবায়ের ভাই বেঁচে থাকুন, আমাদের সবার হৃদয়ে।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
..........
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
কতবার আমাকে সচল হতে বলেছে সে। আলসেমি আর খানিকটা কুণ্ঠার কারণে আসা হয়নি। এলাম শেষ পর্যন্ত তার অসুস্থতার সূত্র ধরেই, তানভীরের আপডেট পড়তে জন্যে আর সচলদের সাথে আপডেট শেয়ার করতে। কিন্তু ও জানল না, অবাধ্য ভাইটি শেষ পর্যন্ত তার কথা শুনেছে।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
মন্তব্য নাই।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কেন বারবার মনে করান এইসব
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
নতুন মন্তব্য করুন