সূর্যটাকে লাথি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতি। অন্ধকারে অফিসে গিয়ে ঢুকি। মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে ঘোলা দুপুরটাকে দেখি। আবার অন্ধকারে অফিস থেকে বের হই।
মাঝখানে একদিন সকালে দেখি দুই ইঞ্চি তুষার জমে আছে গাড়ির উপর। সেটা পরিষ্কার করতে গিয়ে 'জেবন বেইরে গ্যালো'। লোকে জানাল এটা নাকি সবে শুরু!
তবে তুষার পড়ার পর প্রকৃতির চেহারাই বদলে গেল। আমি এই চেহারা আগে দেখিনি। ছবিতে দেখেছি। কিন্তু সত্যিকারে দেখিনি। বসবাস করতে যেমনই লাগুক, চারিদিকে সাদা চাদর দেখতে ভালোই লাগে।
প্রকৃতির সাথে সাথে আমেরিকার অর্থনীতিও মনে হয় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে সিটি ব্যাঙ্ক তাদের সাড়ে তিন লক্ষ কর্মীর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার ছাটাই করে ফেলেছে। এই নিয়ে আমেরিকায় সবকালের সর্বাধিক লোক বেকার হয়ে পড়ল। আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাঙ্কের অবস্থাও টলোমলো। এই দুই ব্যাঙ্কেই আমার ক্রেডিট কার্ড আছে।
এর মধ্যে আমেরিকার "বিগ থ্রী" গাড়ি তৈরীর কারখানা ভিক্ষা চেয়ে বসেছে সরকারের কাছে। গতসপ্তাহে এই "বিগ থ্রী" অর্থাৎ জেনারেল মোটরস, ফোর্ড আর ক্রাইসলার সরকারের কাছে হাত পেতেছে পঁচিশ বিলিয়ন ডলার ধারের জন্য।
এই কোম্পানীগুলি বছরের পর বছর জ্বালানী-খেকো ষাঁড়ের মত বিশাল বিশাল গাড়ি বানিয়ে গছিয়েছে আমেরিকানদের কাছে। কখনও ভবিষ্যতের কথা ভাবেনি, পৃথিবীর সীমিত জ্বালানীর কথা ভাবেনি, পরিবেশের কথা ভাবেনি। কোম্পানীর হর্তাকর্তারা ধুমাধুম খরচও করেছে নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য। এমনকি গত সপ্তাহে সরকারের কাছে ভিক্ষা চাইতে গিয়েছে নিজেদের প্রাইভেট বিমানে করে, যার একবার ভ্রমনের খরচ দশ হাজার ডলার। সিইওদের বেতন বাৎসরিক কয়েক মিলিয়ন ডলার। এখন যখন জাপানী কোম্পানী নাকের ডগা দিয়ে ইফিসিয়েন্ট গাড়ি বিক্রী করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে তখন টনক নড়েছে। কয়েক মিলিয়ন কর্মীর চাকুরীর দোহাই দিয়ে ভিক্ষা চাইছে এখন।
আমেরিকার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ। খুবই খারাপ। অতি-অতি দীর্ঘস্থায়ী রিসেশন বা অর্থনৈতিক মন্দা আসছে সামনে। কিন্তু কতটা ভয়াবহ হবে কেউ জানে না। অনেকের বলছে অর্থনৈতিক স্পাইরাল ঘুর্নিচক্রে হারিয়ে যেতে পারে আমেরিকার অর্থনীতি। হাত পাতা ভিক্ষুকদের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তালিকায় ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনার মত স্টেটও আছে। কবে না চীনের কাছে আমেরিকার কোন একটা স্টেট বিক্রী করা লাগে! ভাবছি একটা ফাঁকা দেখে স্টেট কিনে বাংলাদেশের মানুষগুলোর পূর্ণবাসন করা যায় কিনা।
সমাজতন্ত্রের পতনের মত এটাই হয়ত পুঁজিবাদী সমাজের পতন। অনিয়ন্ত্রিত স্বপ্নের বুদবুদ বড় করতে করতে হঠাৎ করে ফটাশ। হুড়মুড়িয়ে পড়ল সবকিছু। আমরিকার পতন হয়ত এভাবেই আসছে।
পরিচিতদের ফোন আসা শুরু হয়েছে। চাকরী চলে গেছে, চাকরী চায়। লক্ষ লক্ষ লোক চাকরী চায়। চাকরী কোথায়? ভয়ে আছি, কবে নিজেই সেই তালিকায় না গিয়ে পড়ি! এইসব খবর শুনতে শুনতে ইদানিং আর কিছু গায়ে লাগে না। এক কান দিয়ে ঢুকাই আরেক কান দিয়ে বের করে দেই।
অফিসের কাজও বেড়েছে খুব। এইসব দিনগুলিতে একটা শীতনিদ্রা দিতে পারলে মন্দ হত না।
মন্তব্য
আশায় থাকি মৌলবাদেরও একদিন পতন হবে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
উল্টো। মৌলবাদের অবস্থা কিন্তু দিনে দিনে ভাল হচ্ছে। পাকিস্থান, আফগানিস্থানের মত জায়গায় ছেয়ে যাচ্ছে মৌলবাদীরা। সেই সাথে আমেরিকায় দিনকে দিন শক্তিশালি হচ্ছে ক্রিশ্চান মৌলবাদী। আরও অন্যান্য মৌলবাদী তো রয়েছেই।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
সেই ভয়েই তো আছি... পুজিঁবাদের পরে যদি মৌলবাদকে মেনে নিতে হয় তাইলে তো বিপদ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হায় রে 'স্বপ্নের আমেরিকা'... আর মনে হয় স্বপ্নের দেশ থাকতে পারবে না... বুশ প্রশাসন যতদিন ছিল, আমি মনেপ্রাণে চাইতাম অন্য কোন দেশ আমেরিকাকে টক্কর দিক... এখন তো মনে হচ্ছে সেইদিন চলে আসবে অচিরেই!
আশা করি, আপনি ভাল থাকবেন, কোন সমস্যা হবে না আপনার।
কেন? আপনার কোন ক্ষতি হয়েছিল?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নাহ্, সরাসরি আমার কোন ক্ষতি হয়নি, কিন্তু বুশ প্রশাসনের সময় আমেরিকার অনেক কাজ, সিদ্ধান্ত বা আগ্রাসন- ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করতাম না। তাই চাইতাম অন্য কোন দেশ আরো অনেক শক্তিশালী হোক, যাতে করে ওদের থামানো যায়। একইসাথে, এমন অনেক বিষয়ও আছে, যার কারণে আমেরিকাকে বাকি সব দেশ থেকে আলাদা করে রাখি, পছন্দও করি অনেক।
- টেনশন নিয়োও না মিয়া। যার কিছু নাই তার আছে জর্ম্মন দেশ। খালি আইয়া পড়বা বাল!
আর খালি পাইলেও আম্রিকার জমিতে বুকিং দিও না। এই শালাগো জমি কখনোই নিষ্কন্টক হইবে না। তার চাইতে চান্দে প্লট বেঁচতাছে, পারলে ঐখানে বুকিং দাও।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঠিক কইচেন মিয়াসাব , আন্নার মতো এক ই দশা আমারও।
চান্দেই যামুগা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
ভয় হয়, খুব খারাপ সময় আসছে। সবার জন্যই, তবে বিশেষ করে আমেরিকা প্রবাসীদের জন্য। যাদের গ্রীন কার্ড বা অন্যান্য স্থায়ী কাগজপত্র হয়নি তারা চাকরী হারালে বেশ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবেন... এদেশের নাগরিকরাই যেখানে চাকরী হারাচ্ছেন সকালে বিকালে। বয়স্ক লোকেরা যারা অবসর নেয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদের রিটায়ারমেণ্ট ফাণ্ডের টাকা-পয়সা হঠাৎ করে বাতাসে মিলিয়ে গেছে। কারো ৫০%, কারো আরো বেশি। টাকা না থাকলে এদেশে অবসর নেয়াটা একেবারেই আত্মহত্যার মত। বাংলাদেশের মত নিজের ছেলেমেয়েরা বা আত্মীয়-অনাত্মীয়রাতো আর কাউকে দেখবে না। একটু আগে এক বন্ধু ফোন করে জানালো, চার দিনের ব্যবধানে ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরী হারিয়েছে। যদিও দুজনে দুটো আলাদা ফার্মে কাজ করতো। নতুন বাড়ী কিনেছিলো ক'দিন অগেই। গ্রীন কার্ড না থাকায় বেকার ভাতার জন্যও আবেদন করতে পারবে না। এখন প্রতিটি চাকুরীজীবিরই আপনার মত একই ভাবনা, কখন না নিজেই ওই চাকুরী হারানোদের তালিকায় পড়ে যাই। আশা করি অন্তত: প্রবাসী বাংলাদেশীরা ভালো থাকবেন।
ভয় হয়, খুব খারাপ সময় আসছে। সবার জন্যই, তবে বিশেষ করে আমেরিকা প্রবাসীদের জন্য। যাদের গ্রীন কার্ড বা অন্যান্য স্থায়ী কাগজপত্র হয়নি তারা চাকরী হারালে বেশ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবেন... এদেশের নাগরিকরাই যেখানে চাকরী হারাচ্ছেন সকালে বিকালে। বয়স্ক লোকেরা যারা অবসর নেয়ার কথা ভাবছিলেন, তাদের রিটায়ারমেণ্ট ফাণ্ডের টাকা-পয়সা হঠাৎ করে বাতাসে মিলিয়ে গেছে। কারো ৫০%, কারো আরো বেশি। টাকা না থাকলে এদেশে অবসর নেয়াটা একেবারেই আত্মহত্যার মত। বাংলাদেশের মত নিজের ছেলেমেয়েরা বা আত্মীয়-অনাত্মীয়রাতো আর কাউকে দেখবে না। একটু আগে এক বন্ধু ফোন করে জানালো, চার দিনের ব্যবধানে ওরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরী হারিয়েছে। যদিও দুজনে দুটো আলাদা ফার্মে কাজ করতো। নতুন বাড়ী কিনেছিলো ক'দিন অগেই। গ্রীন কার্ড না থাকায় বেকার ভাতার জন্যও আবেদন করতে পারবে না। এখন প্রতিটি চাকুরীজীবিরই আপনার মত একই ভাবনা, কখন না নিজেই ওই চাকুরী হারানোদের তালিকায় পড়ে যাই। আশা করি সবাই, অন্তত: বাংলাদেশীরা ভালো থাকবেন।
এ্যামেরিকার উপড় আমার জাত ক্রোধ আছে, কারনটা ব্যাক্তিগত - শ্বশুরবাড়িগত
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
লেখাটাতে মনে হয় প্রাণ আছে; সমসাময়িক বিষয়াশয় আছে বলেই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে। বিগ-থ্রীর কানাডার অংশেও একই অবস্থা, ওরাও সরকারের কাছে হাত পাতছে বলে শোনা যাচ্ছে।
যাহোক, বরফে নতুন মনে হচ্ছে আপনাকে। স্থানভেদে বরফের রকম-ভিন্নতা হয়। তাই আপনার বরফ কেমন তা বুঝতে পারছিনা। অনেক সময় ২" বরফও ঝামেলার হতে পারে যদি ও কাচের সাথে শক্ত করে লেপ্টে থাকে। আগামী দিনগুলোতে আরো বেশি বেশি বরফ দেখবেন)-- পরিস্থিতি এবারে তেমনটাই মনে হচ্ছে।
- এবার আসলেই খবর আছে। গত তিন বছরে অন্ততঃ নভেম্বরে বরফের দেখা পাওয়া যায়নি এদিকের শহর গুলোতে। এবার প্রথম তুষারপাত ঘটলো নভেম্বরেই এবং বেশ জমকালো ভাবেই। সামনের দিনগুলো কী হবে তা খুব সহজেই অনুমেয়।
গাড়ির উইণ্ডশিল্ডে গ্লাস আইস হলে গরম পানি (কুসুম কুসুম-এর চেয়ে একটু বেশি) নিয়ে ঢেলে দেয়া যেতে পারে, ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেক সময় অবশ্য স্ক্র্যাবার দিয়েও ডলাডলি করতে হয়। তবে খুব বেশি ঝামেলার না, ঠান্ডায় সামান্য ঐটুকু করাও কষ্টকর, এই যা!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ইতিহাসের আবর্তন বলে কথা !
প্রবাসী বাঙালী ভাই-বোনদের নিয়েই ভাবনা হচ্ছে। আশা করি ভালো থাকবে তারা। এটাই কামনা।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন