নিউইর্য়কে বাঙ্গালীর সংখ্যা দেখলে রীতিমত অবাক হতে হয়। সাবওয়ে, দোকান, রাস্তা ঘাট সব জায়গায় হাটতে গেলে বাঙ্গালী দেখা যায়। আমরা যেমন এখনও কাউকে বাংলায় কথা বলতে দেখলে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকাই, নিউইর্য়ক প্রবাসী বাঙ্গালী ঠিক তার উল্টো। পাত্তাই দেয় না। জানতে পারলাম এখানে জ্যাকসন হাইটসের একটা রাস্তার নাম দেয়া হয়েছে বাঙ্গালীর নামে। পুলিশ, সাবওয়ের বাস ড্রাইভার থেকে শুরু করে প্রায় সব রকম পেশায় ঢুকে গেছে বাঙ্গালীরা। রাজনৈতিক নেতারা বাঙ্গালীদের কাছে আসেন ভোটের আগে দেখা করতে।
ডিসেম্বরের ২১ থেকে ২৮ পর্যন্ত স্টেটন আইল্যান্ডে ছিলাম। আগের বার ভ্রমনের সময় দর্শনীয় যা কিছু দেখবার দেখে ফেলেছিলাম। এবারে যখন গিয়েছি তখন ফাটিয়ে তুষারপাত হয়েছে। জায়গায় জায়গায় বরফের পাহাড় জমিয়ে রাখা হয়েছে। তাই সাইট সিয়িং না করে আমাদের পরিকল্পনা হল মূলতঃ ব্রডওয়ে শো গুলি দেখা আর বাঙ্গালী রেস্টুটেন্ট গুলি ঢুঁ মারা।
যা বুঝতে পারলাম, বাঙ্গালীরা নিউইর্য়কের কয়েকটি জায়গায় বেশী আছে। জ্যাকসন হাইটস তার মধ্যে এক নম্বরে। তারপর কুইনসের জ্যামাইকা আসবে। ম্যানহাটানে ব্যবসার জন্য প্রচুর বাঙ্গালী দেখা যায়। এরা মূলতঃ ফুটপাতে রকমারী দ্রব্যাদী বিক্রী করেন। ইদানীং নাকি স্টেটন আইল্যান্ডেও প্রচুর বাঙ্গালী দেখা যাচ্ছে। সুতরাং বাঙ্গালী রেস্টুটেন্ট গুলি মূলতঃ জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ম্যানহাটান এই এলাকাগুলিতে ছড়িয়ে আছে।
সবচেয়ে পূর্বে অবস্থিত জ্যামাইকার রেস্টুরেন্টগুলি আজকে আলোচনা করা যাক। জামাইকাতে দুটা বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টের নাম শুনে গিয়েছিলাম। সাগর আর ঘরোয়া। স্টেটন আইল্যান্ড থেকে অনেক দূরে বলে একদিনই সময় পাই সেখানে যাবার। তাই শুধু ঘরোয়ার খাবার খেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
জ্যামাইকার বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট পাড়ায় যেতে হলে গ্রাউন্ড সেন্ট্রাল থেকে F ট্রেনে পারসন স্ট্রীটের পরের স্টেশন, 169 স্ট্রীটে নামতে হবে। সাবওয়ে থেকে বেরোলেই দেখতে পাবেন দোকানগুলি। যে তিনটা দোকান আমার নজর কেড়েছে সেগুলি হল 'ঢাকা সুইটমিট', 'সাগর' আর 'ঘরোয়া'। সাবওয়ে থেকে নামতেই একটা দেশী রমনীদের বিউটি পার্লার দেখা গেল। আমার স্ত্রী ঢুকে গেলেন রূপচর্চা করতে। আর আমি এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম।
ঘুরতে ঘুরতে আবিষ্কার করলাম ঢাকা সুইটমিট। ঢাকা সুইটমিটে পাতলা করে একজন ছিলেন। তিনি জানালেন মিষ্টি খাওয়া যাবে। কিন্তু ক্যাশ লাগবে। পাশের ব্যাঙ্ক থেকে ক্যাশ নিয়ে বেরিয়ে সন্দেশ আর গাজরের হালুয়া খেলাম। কি বলব, এক কথায় জোশ!! পরে আরো মিষ্টি কিনতে পারি জানিয়ে বিল পরিশোধ করে ফিরে আসলাম।
আমার স্ত্রীর বিউট পার্লার থেকে বেরুলে পরে আমরা ঠিক করলাম ঘরোয়াতে যাবো। ঘরোয়াতে বোধহয় সেদিন বাঙ্গালী কোন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। বোঝা গেল দুটা ফ্লোর আছে। দ্বিতীয় তলায় পার্টি চলে। নীচে সাধারন রেস্টুরেন্ট।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আগত বাঙ্গালী তরুনীদের দেখে আমি খুশী হয়ে গিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীর চোখ এড়াতে পারিনি। সে আমাকে খোঁচালো খানিক। আমি "আরে বুঝলা না, অনেকদিন গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান দেখিনা তো তাই তাকায় ছিলাম আরকি" ধরনের কিছু একটা বলতে চেষ্টা করলাম।
ঘরোয়ার খাবার সাজানো চাইনীজ বুফে স্টাইলে। খাবার ট্রেতে স্তুপ করা। দেখে অর্ডার করতে হয়। আবার বাংলাদেশী স্টাইলে জানাল, "বসেন নিয়া আসতেছি"। খাবার টেবিলে দেয়ার পর খেয়ে দেখলাম বেশ ভালই!
সাগর রেস্টুরেন্ট ঘরোয়ার পাশেই। সেখানে ঢোকা হয়নি সেদিন। তবে শুনেছি সেখানকার বাংলাদেশী-চাইনীজ নাকি বেশ ভাল। মনে মনে ভাবলাম পরে কোন এক দিন আসব।
ফেরার পথে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আর মিষ্টি কিনে নেয়া হল না।
মন্তব্য
ছবি থাকলে আগামী পোস্ট থেকে দিয়েন...।
সম্ভবতঃ এটিএন বাংলার সংবাদে দেখাচ্ছিলো, ম্যানহাটনের অনেক পুরনো এক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট এবারের অর্থনৈতিক মন্দায় বন্ধ হয়ে গেছে। ১৯৩৬এর মন্দার সময়ও বন্ধ করতে হয়নি। ফোনে আলাপে থাকায় নিউজটা মন দিয়ে দেখতে পারিনি।
সেদিন আসলে ছবি তোলা হয়নি। ক্যমেরা আনতেই ভুলে গিয়েছিলাম। পরের পর্বে ছবি দেবো।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নিউইর্য়কের সময়টা ভালই কেটেছিল। তবে কথা হল, মানুষ খালি সুসময়ের বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখে, সুসময়ের ছবি তুলে। তাই একজন মানুষের ব্লগ পড়লে মনে হতে পারে সুখ ছাড়া তার জীবনে আর কিছু নেই। বিষয়টা মিস লিডিং।
যেমন, আমার পুরোন গাড়ীটার খরিদ্দার গাড়ী কেনার আগেই ব্যবহার করা শুরু করেছিল। বাঙ্গালী এবং বন্ধু মানুষ বলে আমি সানন্দে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। র্দুভাগ্য বশতঃ তারা গতকাল এক এক্সিডেন্টে পড়ে। তারা সুস্থ আছে, কিন্তু গাড়ীটা বাদ। ইন্সুরেন্স বিষয়েও জটিলতা দেখা গেছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
দারুন। তথ্যসমৃদ্ধ। পিটারব্রো আর থান্ডারবে তে যখন ছিলাম কখনো রাস্তায় বাংলা শোনার সৌভাগ্য হয় নাই। টরন্টোতে তাও মাঝে মাঝে শোনা যায়। শুনলে আপনা-আপনি কান একটু খাড়া হয়ে যায়।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
জ্যাকসন হাইটসে দেখলাম বাংলায় রাস্তায় দাঁড়ায়ে ধুমসে নির্বাচনের গল্প হচ্ছে। আলাউদ্দীনে ঢুকে দেখি রীতিমত বাজার!!! মনে হয়েছে আমেরিকাতে গাড়ী পার্ক করে হাঁটতে হাঁটতে বাংলাদেশের ফার্মগেটে এসে গেছি। মাঝখানে অদৃশ্য কোন স্টার গেইট ছিল মনে হয়।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
একবার কে যেন বললো জ্যাকসন হাইটসের বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টগুলো নাকি বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টের মতোই নোংরা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ঠিক। বেশীর ভাগের অবস্থা করুণ। তবে কয়েকটা ভালো আছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আমেরিকায় ৩ ঘন্টার ঝটিকা অভিযান শেষে বাসায় ফিরে সচল খুলেই দেখি --
"নিউইর্য়কের বাঙ্গালী রেস্টুরেন্টে গুলী - ১/২"।
রেস্টুরেন্টে গুলী? কেন কোথায়, কবে?
পড়া শুরু করতেই বুঝলাম সমস্যাটা আমারই। তাছাড়া গুলীতে তো আর "১/২" জন মরেনা! আমেরিকার যাওয়ার উত্তেজনায় মনে হয় চোখে সমস্যা হয়েছিল
হা হা হা।
আমিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম!
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
গুলো দিয়ে গুলিয়ে দিলাম।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কোন এক রেস্টুরেন্টে জানি চা খাইসিলাম... খারাপ লাগে নাই... তয় নিউইয়র্ক শহরটা এক্কেরে পছন্দ হয় নাই।
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
আমারো না। ড্রাইভার গুলা বেয়াদপ। সংকীর্ণ লেইন দিয়ে এমনভাবে গাড়ি চালায় মনে হয় লাট সাহেবের বাচ্চা। ঠেলে ঠেলে অন্য লেইনে উঠায় দেয়। আর নাক ঘুরায়লেই কয় টাকা দাও। শহর নামের দুর্গম অরন্য একটা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
একমত। কেউ ছোটখাট ট্রাফিক আইন মানে না, অনেকে তো দেখলাম ইল্ড/স্টপের ও তোয়াক্কা করে না। স্টপ লাইট সবুজ হওয়ার পর আধা সেকেন্ডের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হর্ন আর খিস্তি - নিতান্তই আত্মকেন্দ্রিক ও উত্তাপহীন এক শহর।
আমি একবছর জ্যাকসন হাইটসে বসবাস করেছি। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী রেস্তোরাগুলো নিয়ে আমার কোন আবেগ বা ভালোবাসা নেই। এদের অবস্থাও বাংলাদেশের রেস্তোরাগুলোর মতই করুন। একটা অর্ডার দিয়ে তিনবার মনে করিয়ে দিতে হয়। নোংরা, বাসি খাবারে ভরা, যাচ্ছেতাই অবস্থা।
তবে "হাট বাজারের" মিষ্টি বেশ সুস্বাদু।
জ্যাকসন হাইটসের কোন স্ট্রীটে ছিলেন? হাট বাজার কোথায়?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নিউ ইয়র্ক ঘোরা হয়ে গেল বিনা পয়সায়! শুভেচ্ছা। প্রবাসজীবনের কাহিনী পড়তে ভীষণ ভালোবাসি।
নতুন মন্তব্য করুন