নিউইয়র্কের বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট গুলো - ৩/৩

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: রবি, ২৫/০১/২০০৯ - ৮:২৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(আগের পর্বের পর)

জ্যাকসন হাইটসের 73 থেকে 74 স্ট্রীটে অবস্থিত বাংলাদেশী দোকানগুলি নিউইয়র্ককে বাংলাদেশীদের কাছে একটা বিশেষ মহিমা দিয়েছে। 74th স্ট্রীটে ঢুকলে আপনি আবিষ্কার করবেন যে অদৃশ্য স্টারগেইট জাতীয় কোন গেইট পার হয়ে আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে হঠাৎ ঢাকার ফার্মগেটে পৌছে গেছেন। লোকেরা জটলা করে বাংলায় আড্ডা দিচ্ছে। রাস্তা ঘাট বাংলাদেশের মতই সংর্কীণ আর নোংরা। দোকান পাট বাংলায় নামকরন করা। আমেরিকার ব্যস্ততম শহরে হঠাৎ বাংলাদেশ।

auto

আমি আর আমার স্ত্রী প্রথমদিনই ঠিক করলাম এখানে যাবো। সেদিন গুগেনহাইম নামের একটা আর্ট মিউজিয়াম দেখতে গিয়েছিলাম। মর্ডান আর্ট যেন এক্সট্রিম পার্ভারশনে পৌছে গেছে! যাকগে সে অন্য প্রসঙ্গ। গুগেনহাইম হল সেন্ট্রাল পার্কের মাঝ বরাবর। সেখান থেকে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল তারপর F বা V ট্রেইন ধরে 74th স্ট্রীটে জ্যাকসন হাইটের আগের স্টেশনে নামবেন। সাবওয়ে থেকে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামলেই ফার্মগেট, থুক্কু জ্যাকসন হাইটসের বাঙ্গালী পাড়া।

প্রথমদিন সাবওয়েতে ম্যাপ দেখে আন্দাজ করলাম 84th স্ট্রীটের কাছে জ্যাকসন হাইটস নামের স্টেশনে নামতে হবে। আসলে নামতে হত 74th স্ট্রীটের কাছে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে তাই অনেকক্ষণ হাঁঠতে হল মূল জ্যকসন হাইটসে পৌছতে। সেদিনকার মত চুড়ি আর কিছু সিডি কিনে বিদায় নিতে হল।

আসল খাওয়া দাওয়া এবং কেনাকাটা হল ফিরে আসার আগের দিন, শনিবার। এদিন গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। 74th স্ট্রীটের থেকে খানিক দূরে পার্ক করে হেটে চলে আসলাম। আমাদের একটা জামা সেলাই করতে দিতে হবে। দেশের ছোট খাট টেইলার্সের মত দেখি অনেকগুলা আছে। একটা ১০ ডলারে সেলাই করে দিবে বলে রাজি হলে পরে আমরা তাকে জামাটা দিয়ে হাঁটতে বেরোলাম।

আমার স্ত্রী এক জায়গায় কিছু চুঁড়ি দেখতে দাঁড়িয়েছে। দেখি এক সেমি চাইনীজ-আমেরিকান এসে ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দীতে বলছে, "আপ হিন্দী সামাজটে হে?" আমি বললাম, "হাঁ, বাট ইটস নট মাই ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজ"। সে বলে, "আপ বাংলাদেশশে হে?" আমি সম্মতি জানাতেই সে বলে, "কেমোন আচেন?" বলে হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিলো। খ্রীষ্টান ধর্ম প্রচার। আমাদের চুঁড়ি দেখাচ্ছিল যে দোকানদার সে আমার বিস্মিত মুখ দেখে বলল, ভাই এরা ধর্ম প্রচার করে, চিন্তার কিছু নাই।

ঘুরতে ঘুরতে গেলাম অবকাশ নামের এক সিডি দোকানে। সুলভে সাম্প্রতিক সিডির সম্ভার দেখে অবাক আমরা ধুমসে সিডি কিনতে লাগলাম। প্রায় ২০-২৫টা বিভিন্ন নাটক, ঈদের অনুষ্ঠানের ডিভিডি কিনে দুহাত ভরে নিয়ে বেরুলাম।

আমাদের কিছু কাবাব কিনে নেবার কথা ছিল। তাই কাবাব কিং নামের এক দোকানে বিহারী কাবাবের অর্ডার দিলাম। দোকানটা সম্ভবতঃ পাকিস্থানীদের। ক্রেতা যেন ফেটে পড়ছে সেখানে। দেখলাম পাকিস্থানী বা ভারতীয়রা রান্নার জায়গাটায়। তবে পরিবেশনে সম্ভবতঃ সব বাংলাদেশীরা। বাসায় নিয়ে গিয়ে খাবার পর এদের কাবাবটা আসলেই ভাল লেগেছিল। আমার মনে হয় জ্যাকসন হাইটসে আসলে এই জায়গাটা মিস করাটা ঠিক হবে না।

কাবাব কিনে আমরা গেলাম আলাউদ্দীন সুইটমিটসে। পরিকল্পনা হল কিছু মিষ্টান্ন কিনে নেবার। গিয়ে দেখি মিষ্টির পাশাপাশি হালিম, বাংলাদেশী-থাই স্যুপ বিক্রী হচ্ছে। আর দোকানের পিছনের দিকে জটলা পাকিয়ে ফাটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে বাংলাদেশীরা। নির্বাচনী আড্ডা। আমাদের খুব ইচ্ছে হল হালিম আর থাই স্যুপ খাবার। দুজনে দুবাটি করে কিনে দেখি এক গাদা খাবার। খেয়ে শেষ করতে পারিনা। তাছাড়া অতটা মজাও লাগল না। হালিম বেঁধে নিলাম ঘরে খাব বলে। মিষ্টি, বিরিয়ানী প্যাকেট করে নিয়ে নিলাম।

জ্যাকসন হাইটসে আসলে আলাউদ্দীন সুইটমিটসে মনে হয় যেতে পারেন। মিষ্টি গুলো ভালই ছিল। খাবার গুলো মোটামুটি। আর দলবেঁধে আসলে তো আড্ডার দেবার ব্যবস্থা আছেই।

নিউইয়র্কে আমাদের বাংলাদেশী খানাপিনা মোটামুটি এখানেই শেষ। এছাড়া আমরা এবারে মূলতঃ লায়ন কিং মিউজিক্যাল আর স্টম্প শো দুটো দেখেছি। আমার স্ত্রীর চাচার বাসায়ও প্রচুর আড্ডা হয়েছে। দুই সন্ধ্যায় তো বেশ গান বাজনাও হল, চাচার চিলেকোঠার ট্রায়াঙ্গল মিউজিক লাউঞ্জে। সেসব নিয়ে হয়ত আরেকটা পোস্ট হোলেও হোতে পারে। তবে বাঙ্গালী রেস্টুরেন্ট নিয়ে পোস্ট এখানেই সমাপ্তি।

(সমাপ্ত)


মন্তব্য

পলাশ দত্ত এর ছবি

মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের দোকানপাটের- বিশেষ ক'রে খাবারের দোকানের- নাম ক্রমশ ইংরেজি হয়ে যাচ্ছে।

আর ওইখানে বাংলাদেশি বইপত্রের কোনো দোকান নাই?

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বইপত্রের দোকান আছে কিন্তু ভাল করে দেখা হয়নি। মনে হয়েছে প্রচলিত বইগুলি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ভাল কিছু বা মনমত কিছু হয়ত মিলবে না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মাল্যবান এর ছবি

"আর ওইখানে বাংলাদেশি বইপত্রের কোনো দোকান নাই?"

মাহবুব মুর্শেদ যে 74th street স্টেশনে নামবার কথা বলেছেন ঠিক তার দোরগোড়ায় আছে মুক্তধারা নামের একটি বই-গানের সিডি-ডিভিডির দোকান। সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠলে দেখতে পাবেন শেল্ফে শেল্ফে রাখা আছে বাংলাদেশের হুমায়ুন আর মিলনের বই আর আছে ভারতীয় বই এবং দুদেশেরই ম্যাগাজিন।
ক্যাশ কাউন্টারের পেছনেই দেখবেন বাংলাদেশী বিভিন্ন নাটকের ডিভিডি কপি করার প্রচুর সরঞ্জাম। ব্যাপকহারে ডিভিডি কপি করা হচ্ছে।
এছাড়াও বিভিন্ন দোকান আছে বই-পত্র বিক্রি করে অন্যান্য অনেককিছুর সাথে।
মাহবুব মোর্শেদ তাঁর চোখ দিয়ে দেখা কিছু লিখবেন আশা করছি।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমার ভাল করে দেখা হয়নি বইপত্রের দোকান। বরং আপনিই কিছু লিখুন না এই বিষয়ে!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

স্বপ্নাহত এর ছবি

এই কাবাব কিং এর এড ই মনে হয় এনটিভিতে দেয় সকালের দিকে। ছুটবেলায় যখন টিভি দেখার অভ্যাস ছিল তখন দেখতাম। দেঁতো হাসি

আমি মোটেও ভোজন রসিক নই। তবে এই লেখাটা চেখে দেখতে ভালই লাগলো।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এডটা কি এনটিভি বাংলাদেশে দেয়? লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এনকিদু এর ছবি

অনেকদিন আগে ডিসকভারি চ্যানেল সম্ভবত এই জায়গাটাই দেখেছিলাম । প্রতিবেদক এই কথা সেই কথা বলতে বলতে আলাউদ্দিনের দোকানের মধ্যে ঢুকে পড়লেন । তাকে দোকানদার একটা বরফী সাধল । ভদ্রলোক বরফী খেয়ে এমন মুখভঙ্গী করলেন যেন অমৃত ।

ঠিক সেই সময় কানে ভেসে এল, "বিশ টাকা বিশ টাকা বিশ টাকা" । আমি তো অবাক । বাঙ্গালি মহাসাগর পার হয়ে ভীনদেশে গিয়ে মিষ্টির দোকান দিয়েছে - তাই দেখেই আমি কম অবাক হইনি । এখন আমাকে পুরোপুরি পাগল বানানর জন্য তারা বিদেশের মাটিতে বিশ টাকা দামের মলমের ক্যানভাসিং করছে !

একটু পর খেয়াল করলাম বিশ টাকা বিশ টাকা ধ্বনিটা একটু বেশিই বাস্তব মনে হচ্ছে । উঠে এসে ঘরের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি বাসার সামনে দিয়ে মলমের ক্যানভাসারার হেঁটে যাচ্ছে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

অমিত আহমেদ এর ছবি

হাসতে হাসতে গড়াগড়ি দিলাম মিয়া... হা হা হা গড়াগড়ি দিয়া হাসি


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হো হো হো

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

আমাদের টরন্টোতে এতো কিছু নাই। ড্যানফোর্থে সামান্য কিছু রেস্তোরা আছে। পুরো টরন্টো খুঁজে একটা মোটে বাংলা বই এর দোকান খুঁজে একটা বের করেছি, এতো দাম যে হাত দেয়া যায় না। তবে ড্যানফোর্থের লাইব্রেরিতে বাংলা বই আছে জেনে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো।

তবে আফসোস নাই... আগে যে দু'টো শহরে ছিলাম তার একটাতে মোটে একটা ভারতীয় রেস্তোরা ছিলো, আরেকটাতে আমি চলে আসার পরে একটা হয়েছে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বিদেশে যে এরকম বাংলাদেশ থাকতে পারে সে ধারনা আমার ছিলো না। শুনছিলাম লণ্ডনে এরকম একটা এলাকা আছে।

আমার বিদেশের অভিজ্ঞতা কম। ভারত আর সিঙ্গাপুর ছাড়া আর কিছু নাই।
সিঙ্গাপুরে সেরাঙ্গুনে গিয়া তাই অবাক হইছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো এক হোটেলের নাম রাধুনী!!! ভিতের গিয়া দেখি থরে থরে সাজানো দেশি খাবার। গরুর মাংসটা যেন বলতেছে 'খা নজরুল আমারে খা'। দোকানদার কালোমতো এক লোক। আমি ঠিক বুইঝা উঠতে পারতেছিলাম না তার সঙ্গে বাংলা বলবো না ইংরেজি বলবো। আমার এই দ্বিধা থরথরতা দেখে সে খাস বাংলায় বললো 'ভাত খাইবেন্নি?'
আহ্... ইচ্ছামতো খাইলাম কাঁচামরিচ ডইলা... বের হয়ে এক দোকান থেকে পান কিনে খেলাম, তারপর কিনলাম দেশি খবরের কাগজ।

আর পরদিনই অভিজাত পাড়া ছেড়ে আমি সেরাঙ্গুনের এক হোটেলে আবাস গাড়লাম।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানবীরা এর ছবি

'খা নজরুল আমারে খা'।

হাহাহাহা।

মুর্শেদ ভাই, রবীন্দ্র সরোবরে আইসা কাবাব খাবেন, জীবনে অন্য কাবাব মুখে রুচবে না।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।