ছোটগল্প: সানগ্লাস [পর্ব ১]

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি
লিখেছেন এস এম মাহবুব মুর্শেদ (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/১০/২০০৯ - ৯:০১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


শহরটা অদ্ভুত। পাহাড় ঘেরা হাইওয়ে থেকে ফুড়ুৎ করে এক্সিট নিয়েই ব্রিসবী শহরের মেইন স্ট্রীট। পাহাড়ে ঘেরা বলে সহজে চোখে পড়ে না।

শহরটার এই একটাই রাস্তা। বাকী সব ছোট ছোট গলি। শহরের মনুষ্য বসতি বলতে অল্প গোটা পঞ্চাশেক বাড়ি মিলে একটা কলোনী।

ব্রিসবীর প্রধান রাস্তা জুড়ে বিভিন্ন রকম চিত্রকলা, ভাস্কর্য্য, হস্তশিল্প আর অ্যান্টিকের দোকান। এই দোকানগুলিই সেই শহরের প্রধান বানিজ্যের উৎস।

"ধুর হালা এই তোর চমক?" অন্তু বুনোর দিকে তাকিয়ে ফ্যাঁচ করে উঠে। বুনো তার হলুদ দাঁতগুলো দেখায়। বুনোকে তার এক বন্ধু জানিয়েছে ফিনিক্সের দক্ষিনের দুটো শহরের কথা - ব্রিসবী আর টুম্বস্টোন। একটার চিত্রকলা আর আরেকটার ওয়েস্টার্ন সাজসজ্জ্বা নাকি সেইরকম। দুই বন্ধু তাই শহরদুটো দেখতে এসেছে।

বুনো একটু ছবি টবি পছন্দ করে। শিল্পী মানুষ, গীটার বাজায়। খাটো, ফর্সা করে একটা ছেলে। অন্তু ছেলেটা প্রায় তার উল্টো। লম্বা, একহারা গড়ন। শিল্প টিল্পের ধার ধারে না। ব্রিসবীতে এসে বুনো তাই খুশী হলেও অন্তু যারপরনাই বিরক্ত।

বুনো একটা রেড ইন্ডিয়ান স্কাল্পচার দেখছিল মনোযোগ দিয়ে। তখনই অন্তু ফ্যাঁচ করে ওঠে। বুনো হেসে বলে, "ক্যান তোর স্কালপচারগুলি ভাল্লাগতেছে না? কি অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখছিস!"

"সবই তো একই জিনিস মনে হয়। বুইড়া একটা নেটিভ অ্যামেরিকান বিভিন্ন ভঙ্গীতে বইসা আছে।"

"হে হে হে। তোরে লগে আননি ভুল হইছে। তয় তোর টুম্বস্টোন শহরটা ভাল্লাগবো। প্রমিজ।" বুনো আশ্বাস দেয়।

"তুই মনে হয় মুর্তি গুলার ভিতরে হান্দায় গেছোস। তুই দেখতে থাক আমি আশেপাশে দোকানগুলি ঘুইরা দেখি।" অন্তু বেরিয়ে যায় দোকান থেকে।

স্কাল্পচারের দোকান গুলো পাশ কাটিয়ে অন্যান্য দোকান গুলি দেখতে থাকে অন্তু। ছবির দোকানগুলি ছাড়া আরো হরেক রকম দোকান আছে শহরটায়। সেগুলি ঢুঁ মারতে থাকে অন্তু। একটা দোকানে পাথরের বিভিন্ন বস্তু দিয়ে অলঙ্কার বানিয়েছে দেখা গেল। অলঙ্কার কেনার কেউ নেই ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল বেচারা।

বিভিন্ন দোকান দেখা শেষ করে যখন বুনোর দেখা পাওয়া পাওয়া যাচ্ছে না তখন একটু বিরক্তিই লাগতে শুরু করে অন্তুর। রোদের তেজে বাইরে দাঁড়ানোও দায় হয়েছে। একটা সানগ্লাস কিনি কিনি করে কেনা হচ্ছে না অনেক দিন ধরে।

বুনো শালায় যে কোন চিপায় ঢুকছে! পকেটে পয়সা নাই কিন্তু তাতে আগ্রহের অভাব নাই। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে চোখে পড়ে ছোট্ট একটা দোকানের দিকে। "নাভাহো ম্যাজিক্যাল স্টোর এন্ড সাইকিক রিডিং শপ"। সাইনবোর্ডের উপরে একটা ডাইনীর ছবি দেয়া। সাইকিক রিডিং, মানে ভাগ্য গণনা! ইন্টারেস্টিং!!

পায় পায়ে এগিয়ে যায় অন্তু। ভিতরে কেউ নেই। ভেতরে খুব একজটিক কিছু মুখোশে ঝোলানো। বাহ সুন্দর তো, ভেবে মুখোশ তুলে তার গায়ে লেখা দাম দেখে আক্কেল গুড়ুম হবার জোগাড়। একটা মুখোশ মুখে লাগিয়ে দেখতে হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন বলে ওঠে, "ক্যান আই হেল্প ইউ?" অন্তু একটু চমকে ঘুরে দেখে এক রেড ইন্ডিয়ান বুড়ি। লম্বা নাক টা বয়সের ভারে বাঁকা হয়ে গেছে। মুচকি হাসি দিয়ে অন্তু বলে, 'নাহ আমি একটু তোমার জিনিস পত্র গুলি দেখছি'।

'কিছু পছন্দ হয়েছে?'

'নাহ। তেমন কিছু কেনার নেই। তবে যেমন রোদ বাইরে একটা সানগ্লাস পেলে মন্দ হতো না' বলে বুড়ির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে অন্তু। 'কিন্তু তোমার কাছে তো সেটা হবে না, তাই না।' অন্তু চাইছিল এমন কিছু কথা বলতে যেটা পাওয়া যাবে না বুড়ির দোকানে। তাহলে কিছু বিক্রী করার জন্য বিরক্ত করবে না আর।

অন্তুকে অবাক করে দিয়ে বুড়ি বলল, 'আমার কাছে কিছু সানগ্লাস আছে। কিন্তু তুমি কিনতে চাইবে কিনা বুঝছি না।'

একটু প্রেস্টিজে লেগে গেল অন্তুর। সানগ্লাস গুলো দেখাতে বলল বুড়িকে। বুড়ির সানগ্লাস কালেকশন মাত্র হাতে গোনা বিশ পঁচিশেক হবে। দোকানের নামের সাথে মানানসই, একজটিক গ্লাস। তবে আধুনিক ছাঁটের। বোধহয় রোডী বাইকাররা কেনে টেনে বুড়ির কাছ থেকে।

ঘাঁটতে ঘাঁটতে একটা খুব পছন্দ হয়ে গেল অন্তুর। চোখে দিয়ে দেখে পার্ফেক্ট লাগছে। বুড়িকে বলল, 'এটার দাম কত?'

বুড়ি কেমন যেন একটু অস্বস্তি করতে লাগল। বলল, 'তুমি বরং অন্যটা দেখো।'

'কেনো এটায় কি সমস্যা?'

'কোন সমস্যা নেই। তুমি অন্য কিছু নাও।'

'আরে দাম বলেই দেখো না'

'আমি আশি ডলার রাখব ভাবছিলাম। কিন্তু তোমার জন্য এপ্রোপ্রিয়েট হবে না।'

অন্তু ভাবল বুড়ি তাকে হয়ত হেয় করছে দামের জন্য। আবার চশমাটা চোখে দিয়ে আয়নার দিকে তাকালো অন্তু। বাহ্ বেশ জোশিলা তো! বুড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বুড়িকে বেশ সুন্দর সুন্দর লাগছে। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে অন্তু। রোদ্দুরটাকে কি সুন্দর মনোরম লাগছে। বাহ্ এইতো চাই!

'আমি নিচ্ছি এটা। তুমি ক্রেডিট কার্ড নাও?' বুড়িকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কিনে ফেলে সানগ্লাসটা অন্তু। তারপর বেরিয়ে পড়ে বুনোর খোঁজে।

(চলবে...)


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

অসাধারন, এমন ভাবে ঝুলায় দিলেন মুর্শেদ ভাই, রহস্য টগবগ করে ফুটতেসে। আশা করি পরের পর্ব আসবে তাড়াতাড়ি।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বিশ্বাস করেন ঝুলায় রাখার কোন ইচ্ছাই ছিল না। একটা গল্প লিখতে ৮ ঘন্টার বেশী লাগে। আমার সেই ৮ ঘন্টা বসা কখনই হবে না। তাই প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে গল্পটা লিখতে চাচ্ছি।

পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, যেভাবে শুরু করসেন, এমন গল্প পড়ার জন্যে ধৈর্য্য ধরা সার্থক, আপনে সময় নিয়া লিখেন, আপনার লেখার টানে ঘুরে ঘুরে আসব আর খুজব।

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চলুক

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ধন্যবাদ।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

একেবারে জায়গামতো থামাইছেন!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কি বলি! আমার তো এখনই বাকিটা লিখতে ইচ্ছা করতেছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

লিখা ফেলান
অনলাইনে আছি, আজকা অফিসে কাজকাম নাই চোখ টিপি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

মামুন হক এর ছবি

জমজমাট গল্পের গন্ধ পাচ্ছি! পরের পর্ব জলদি নামান হাসি

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নামাবো। ড্রাফট করে ফেলে রাখলে আর কখনই লেখা হয়না। তাই প্রকাশ করে ফেললাম। আপনাদের তাড়া খেয়ে যদি লেখাটা শেষ হয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মূলত পাঠক এর ছবি

ল্যাখেন ল্যাখেন, ক্লিফহ্যাঙ্গার ভালা পাই না এক্কেরে।

অতিথি লেখক এর ছবি

মুর্শেদ ভাই, অসাধারণ, ব্রেকটা চাপলেন এমন জায়গায় পরের পর্বের জন্য তর সইছে না। সামনে কী আছে দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ।
দলছুট।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

জট্টিল... টিপিক্যাল রহস্য/ভৌতিক গল্পের গন্ধ পাইতেসি। জমাট করেন- তারপর শেষ দেখান।

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

ওসিরিস এর ছবি

শুরুটা দুর্দান্ত হল। অপেক্ষায় থাকলাম।

***********************************************
সিগনেচার কই??? আমি ভাই শিক্ষিৎ নই। চলবে টিপসই???

এনকিদু এর ছবি

কী ভীষণ অন্যায় মন খারাপ


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ভুতুম এর ছবি

দ্রুত দিন পরের পর্ব।

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি

রেশনুভা এর ছবি

জানতাম ... মানে এমন একটা জায়গাতেই শেষ করবেন। প্রবল ধিক্কার ও তীব্র প্রতিবাদ।
তাত্তাড়ি দেন পরেরটা।

রেনেট এর ছবি

খাসা...
গল্প কি দৈনিক পাচ্ছি দেঁতো হাসি?
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

জায়গামত ব্রেক। চলুক

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

জুয়েইরিযাহ মউ এর ছবি

পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

মৃত্তিকা এর ছবি

জমেছে বেশ.........পরেরটার অপেক্ষায়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যাক, সানগ্লাস কেনার ইতিহাসটা জানা গেলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।